মরে গিয়ে নিজেকে দেখতে পাই। মানুষের কিল লাথির তখনো বিরাম নাই। ওদের কাছে আমার মৃত্যুর সংবাদ হয়তো পৌঁছে নাই। তবে মারের চোট আস্তে আস্তে কমে আসে। একজন পা দিয়ে আমার শরীর উলটে বোঝার চেষ্টা করে বেঁচে আছি কিনা। ইট হাতের লোকটার শান্তশিষ্ট চেহারা। খুব মনোযোগে খুঁটিয়ে আমার মাথার দিকে তাকায়। ইট তখনো হাতে।
লোকজন বুঝতে পারে- মারা গেছি। পুলিশের ভ্যানে বসে পুলিশগুলো বসে বসে পাবলিকের মার উপভোগ করছিল এতোক্ষণ। খানিক বাদে এক দারোগা আস্তে করে নামে। পা দিয়ে শরীরটাকে বোঝার চেষ্টা করে। হাসেও একটু। মরার পরেও আমার সব মনে আছে। এই জায়গাটা কোম্পানীগঞ্জ। জেলা নোয়াখালি। আমার নাম মিলন। শামছুদ্দিন মিলন। বাড়ি চরফকিরা গ্রামে। আব্বা সৌদিতে লেবারি করে। কষ্টমষ্ট করে লাখখানেক ওপরে টাকা পাঠিয়েছে এই কিছুদিন আগে। একটা জমির কেনার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। আমার পকেটে টাকা ছিল হাজার চৌদ্দের মতো। রেজিস্ট্রির জন্য আম্মা এই টাকা আমার হাতে দিয়েছে বুধবার সকালে। লোকজন যখন আমাকে ডাকাত সন্দেহে আটকায় আমার পকেটের টাকাটা তাদের সন্দেহ আরো বাড়ায়। আমার কথা কেউ বিশ্বাস করে না। পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার সময় আমি খুব কাঁদতে থাকি। কিন্তু পুলিশ যখন আমাকে লোকজনের হাতে মারার জন্য ছেড়ে দেয়। ভয়টা কেন জানি একটু করে কমে। কিন্তু লোকজনের এতো এতো মারে ঠিকমতো ভয় পাবার বা কাঁদার সুযোগ পর্যন্ত হয় না। ব্যথা, কষ্ট ও রক্তের স্রোতে দ্রুত, অতি দ্রুত আমি মৃত হয়ে পড়ি।
রাস্তায় আমি মানে আমার লাশ এখনো পড়ে। মাছি এসে রক্তের ওপর বসে। ডেয়ো পিঁপড়েরা কি খবর পেয়েছে? একটা কুকুর এসে কিছু রক্ত চেটে যায়। শুয়ে শুয়ে লুঙ্গি, স্যান্ডেল, খালি পা এসব দেখতে থাকি। গরম পিচ আমার শরীরের মাংসকে আস্তে আস্তে ঝলসাতে থাকে। আচ্ছা, দূরে কেউ কি কাঁদছে? কান খাড়া করে শুনতে গিয়ে শুনতে পাই হাসির শব্দ। লোকজনের ফিসফিস। কেউ কি দীর্ঘশ্বাস ফেলছে? না, ভালো করে শুনলে বোঝা যায় ওটা আত্মতৃপ্তির শ্বাস। একজনও কেউ কাঁদবে না বা দীর্ঘশ্বাস ফেলবে না বুঝে কষ্ট হয়। তবে আম্মা কাঁদবে। ভাই-বোনেরাও। আব্বা অতো গরমে কাজ করতে গিয়ে কান্নার চেষ্টা করবে কিনা বুঝতে পারিনা।
মরার আগের জীবন নিয়ে বেশিদূর ভাবতে পারি না। এতো তাড়াতাড়ি মরে যাবো- কখনো ভাবি নাই। এতো আকস্মিক মৃত্যু নিয়ে কি করবো সেটা ভালো করে ভাবার চেষ্টা করলে সব ফাঁকা হয়ে যায়। আমার লাশ শেষ পর্যন্ত আবার পুলিশের ভ্যানে গিয়ে ওঠে। এবার আর ভয় পাই না। পুলিশের বুটের তলায় লেগে থাকা থিকথিকে ময়লা দেখতে দেখতে একটা কোথাও এগোতে থাকি।
মন্তব্য
এইসব খবর পুরোটা পড়তে পারি না। ভিডিও শেয়ার করেছে অনেকে। দেখে বিশ্বাস হয় না মানুষ এমন উন্মত্তের মত আচরণ করতে পারে। নির্মমতার কোন বৈশ্বিক স্কেইল নাই। থাকলে আশরাফুল মাখলুকাত, এই মানুষ, সবার উপরে থাকত কোন সন্দেহ ছাড়াই।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
খুবই নির্মম সত্য
অধিকাংশ পুলিশের মনুষ্যত্ব কতখানি সেটা মনে হয় সবারই জানা আছে। সেই সাথে যখন দেখি একটা দেশের কিছু সাধারণ মানুষ নির্বিকারভাবে এরকম একটা হত্যাকান্ড ঘটাতে পারে তখন দেশের বর্তমান আর ভবিষ্যত কী আছে আর কী হচ্ছে সেটা আর ভাবতে চাই না।
এত নীতিগত অধঃপতন ঘটছে চারদিকে । মিলনের মৃত্যু যেন মানুষ হিসেবে আমার অস্তিত্ব/ পরিচয় কে প্রশ্নের মুখে দাড় করিয়ে দিল ।
লেখার জন্য আপনাকে
বাধ্য করলেন। জানতে চাই না এইসব। তারপরও বাধ্য করলেন।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ক্যান জানতে চান না ক্যান? জানতে হইবো, নিজেরে জিগাইতে হইবো, ওই লোকগুলার জায়গায় আমি থাকলে কি একই কাজ করতাম কি না।
-মেফিস্টো
পুরোটা পড়তে পারলাম না..........
........................
আজকাল কোন বোধ কাজ করে না, জম্বি হয়ে পড়ি যতবার মিলন-কাদের-ছয়ছাত্রের সামনে এসে দাঁড়াই, নিজেকেই গালি দেই, আমি কিছু করতে পারছি না বলে!!!! এত অক্ষমতা কেন!!!!
_____________________
Give Her Freedom!
ওলি, আমরা সম্ভবত সবদিক থেকে অক্ষম জাতিতে পরিনত হতে চলেছি। এইসব অক্ষমতা ক্রমাগত আমাদের সম্ভাবনার দিকগুলোকে আড়ালে ঠেলে দিচ্ছে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
খুব নির্মম সত্য বলেছেন তাজদা।
_____________________
Give Her Freedom!
School headmaster beaten to death in Narsingdi
_____________________
Give Her Freedom!
খুব সাবলীল বর্ণনা। তবে, বর্ণনার সাথে খানিকটা বিশ্লেষণ যুক্ত হলে গল্পটা আরও গভীর হতে পারতো। সেই সুযোগও ছিল এই কাহিনীতে।
....
ভিডিও দেখিনি, দেখতে চাইনা। খবরের কাগজ পড়িনি, পড়তে চাইনা। মিলনকে বাঁচাতে পারিনি, বাঁচাতে চাইও না মনে হয়।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ভাবতে খুব ভয় হয়, নিজের বেলাতেও না আবার এমন হয়
বাকহীন......
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
মানুষের প্রাণ এতো মূল্যহীন!
একটা প্রাসঙ্গিক চিন্তা। পুলিশের ট্রেনিং-এর কারিকুলামে কী থাকে? এই কারিকুলাম কারা তৈরি করেন? কনটেন্টগুলো, ইন্সট্রাকশনগুলো কারা লেখেন? ট্রেনিংগুলো কারা নেন? তাদের যোগ্যতাই বা কী? তারচেয়ে বড় প্রশ্ন পুলিশ বাহিনীর কর্মকাণ্ডের পিছনে কোন দর্শনটা কাজ করে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পড়া ও মন্তব্য করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন