অপ্রত্যাশিত জন্ম নয়, তাই বোধয় বেড়ে উঠায় আয়োজনের ত্রুটি ছিলনা কোথাও। পূর্ন স্বাধীন আর মুক্তমন তৈরির যাবতিয় চর্চার সুযোগ সেই ছোট্টটি থেকেই পাওয়া । আরও অনেকের মতোই ভুল প্রথম প্রেম এবং সঠিক সময়েই সম্মানজনক বিচ্ছেদ। জীবনের এইপর্যন্তকে আমি দীঘিযাপন হিসেবে চিহ্ণিত করি।
এরপর শহরবাস,সাথে ডানা মেলে উড়বার অজস্র ক্ষেত্র। সেই বিস্তৃতির শুরু বোধকরি পত্রিকাপাঠ দিয়েই, নানামুখি চিন্তা ধ্যান ধারনা মূল্যবোধের এক আশ্চর্য্য ভান্ডার । এদিক ওদিক লক্ষ্যহীন এলেবেলে পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই কখন যেন টের পেলাম নিজের একটা বৃত্ত তৈরি হয়ে গেছে। কোনো কারনে কোনো একদিন বৃত্তবিমুখ হতে হলে মন আইটাই করে । স্রেফ কৌতুহল বা এডভেঞ্চার আক্রান্ত হয়ে ধূম আর তরল পানাভ্যাস। সবসময় নয়, হঠাৎ কারো হাতে টাকা এলে আর অনুষঙ্গ মিললে কেবল পানোৎসব। সঙ্গীত সাহিত্য শিল্পের অবিরাম আড্ডা।
এইসবকিছুর সাথে প্রেমও এসে মিশে যায় কোনো এক ফাঁকে। সেই যুবকও ভালোবেসে ফেলে আমাদের আড্ডাঘর, তার আগমনে ঈশ্বরবিদ্রুপ নতুনতর মাত্রা পায় আমাদের।
কয়েকবছরের আড্ডা আর প্রেমযাপনশেষে অনিবার্য সিদ্ধান্ত। আমার ইচ্ছা কোর্টেই হয়ে যাক সব,খুব বেশি দরকার পড়লে একটা রেষ্টুরেন্টেরেন্টে উভয় পরিবারের গেটটুগেদার করে ফেলা যাবে সুবিধামতো ।
এই প্রথম তার অদ্ভুতুরে দৃষ্টি । বোঝানোর চেষ্টা করি, দেখো বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই নিজ চোখে দেখা সামাজিক বিয়ের সাজসজ্জা আর আনুষ্টানিকতায় কেন জানি সন্ত্রস্থ বোধ করি, টানা কয়েকদিনের জন্য আমি সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু । শুধু তা হলেও মানা যায়,এ যে প্রদর্শন! এনগেজমেন্ট অধিবাস বিয়ে বৌভাত এই চারটি অনুষ্টানে জবরজং সেজে ঠায় একটি স্টেজে বসে থাকা দিনমান, সুমুখে জনসমাগম,কেউ একদৃষ্টে চেয়ে রয়েছে, টিপ্পনি কাটছে কেউ, কেউ বলে বউ এতো হাসে কেন, কারো বুলি এমন ভারমুখ করে আছে ন্যকা, মেকাপটা বেশি হয়ে গেছে, অন্য পার্লারে গেলে আরও ভালো দেখাতো, ইত্যকার বাক্যঅত্যাচারে বধু হবার মূল্য চুকানো।
তারউপর আনুষ্টানিক বিধায়, সমবেত কান্না, পরবর্তিতে সেই কান্নার ব্যবচ্ছেদ, তৎসংশ্লিষ্ট চরিত্রপ্রতিষ্টা, কিকরে সম্ভব! না আমি পারবোনা এসবের ভেতর দিয়ে যেতে, এতো অহেতুক ভার বহনের মনোবল বা ইচ্ছা কোনোটায় নেই!
সুবর্ণা শিমু
বোধয় পুরুষটি বোঝে কিন্তু মানতে পারেনা, অকারনে কেন পরিবারকে কষ্ট দেব ? বন্ধুরাও বোঝায়, মাত্রতো চারটা দিনের চারটা অনুষ্টান, ঝিম মেরে বসে থাকবি । কি ঘটছে তা টের পেতে চেষ্টা করবিনা, ব্যস ! হুম একটা পালক ঝরিয়ে বিহঙ্গও বুঝলো খানিকটা । অতপর কয়েকটা দিন জনতার হাতে অসহায় সমর্পন।
তবে ঠিকই, চোখবুজে সময়টা পার করার পর মন্দ লাগেনা, সপ্তাহান্তের কাঙ্খিত পুরুষটি এখন নিত্যদিনের, প্রিয়স্পর্শে ম্লান হয়ে যায় পারিপার্শ্বিক মন্দলাগাগুলো।
ধীরে ধীরে দায়িত্বপ্রাপ্ত হতে হয়। টুকটাক রান্না,কারো পাতে খানিক তুলে দেওয়া, চা পরিবেশন, নানাবিধ ছুটকো আপ্যায়ন, লালনীলধূসর অথিতি আগমনে কুশল বিনিময়, কখনো মনের টানে বা পরিস্থিতির টানে । সে যাই হোক, অবহনযোগ্য নয় বরং বেশ উপভোগ্য। নতুন কিছু মানুষের সাথে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে হৃদ্যতা তৈরির এই প্রক্রিয়াটা রোমান্সকরই মনে হতে থাকে । তাছাড়া নিজের ভেতর কোন এক সুবোধ সত্তা হামেশা ঘন্টি বাজায়, আগুনসাক্ষিতে পাওয়া এই সবকিছুই তোমার, মিশে যাও আপন করো।
সবই ঠিক। মসৃনভাবে না হলেও টেনেটুনে চালিয়ে নেয়া যায়। গোল বাধেঁ কেবল ঠাকুরঘরে ! অনভ্যস্ত মনে যট্টুক সম্ভব চেষ্টা করি সকাল সন্ধ্যা পূজোঁপালন, নানাবিধ উপবাস। পার হয়ে আসা দীর্ঘ আটাশটি বছর যে বিযুক্ত ছিল এইসব থেকে, যাকে দেবতার নামে একটা দিন উপোস করতে হয়নি আজ সে....
কিন্তু এ তো কেবল চারটি দিনের আহ্নিক নয়, যৌথ সংসারে সম্মান টিকিয়ে রাখতে চাইলে দীর্ঘকাল এই ভূমিকা পালন করে যাওয়া লাগবে । ভাবতেই দমবন্ধ অনুভূতি হয়, তারে বলি আমি পারছিনা, পারতে চাইওনা, ভগবান ভক্তির ধারাবাহিক এই মিথ্যায় আমার সুস্থতা আক্রান্ত হচ্ছে ।
তো কি করার আছে ?
তুমি বলে দাও আমরা দুজনেই অবিশ্বাসী। আমাকে দিয়ে পূজোআর্চ্চা হলে তাতে তাদের ঠাকুর দেবতার অপমান ।
হায়, মাতৃভক্ত প্রিয় পুরুষটি ম্লান থেকে ম্লানতর হতে থাকে....বুঝে যাই ওর পক্ষে এই স্বীকারোক্তি সম্ভব নয়। ছুঁতে পারি ওর বেদনাবোধের মূলটা। কি আশ্চর্য্য তবু নিজের ভেতর তিতিয়ে উঠা মনের কোথাও কোমলতা টের পাইনা। টের পাই শুধু ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মেঘগুলো পুন্জিভূত হচ্ছে, নিয়ন্ত্রন কৌশল শেখা নেই, স্বতস্ফুর্ততার স্রোতে ভাসার অভ্যাস। বর্ষনগর্জন আতংকে তাই ওরচে বেশি ম্লান হতে থাকি আমি....
মন্তব্য
নাম কি ভুল জায়গায় সই করলেন?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
লেখা ভালইসে
দারুণ। বিয়ের পর মেয়েটির মানিয়ে নেওয়ার, নিতেই থাকার গল্প অনেকই পড়েছি, তবে আপনি যে আঙ্গিক থেকে গল্পটা এনেছেন সেটা অভিনব।
আর লেখিকার নামটা ভুল জায়গায় চলে গেছে।
সমুদ্রে থাকলে কিছু বড় বড় ঢেউ এর ধাক্কা তো লাগবেই
লেখা চমৎকার হয়েছে। আরও লিখুন।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
সকাল বেলা মন্তব্য করেছিলাম, আসেনি। আপনার লেখা আমার ভালো লেগেছে! লেখা চলুক!
একটানে মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। পরবর্তী লেখার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
নতুন মন্তব্য করুন