মৃত্যুর সাথে বসবাস!

স্বপ্নহারা এর ছবি
লিখেছেন স্বপ্নহারা (তারিখ: রবি, ১৪/০৮/২০১১ - ৫:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“The world suffers a lot. Not because of the violence of bad people, but because of the silence of good people!”
- Napoleon

বলতে পারেন, পৃথিবীর কোন দেশে মানুষের জীবনের মূল্য সবচেয়ে কম?

বলতে পারেন, যুদ্ধকালীন বা সংকটগ্রস্থ অবস্থায় না থাকা সত্ত্বেও কোন দেশটিতে বসবাস করা একটি মাইনফিল্ডে বসবাসের চেয়েও ভয়ংকর?

কোন দেশটির প্রতিটি মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অন্য কারো হাতে জিম্মি?

কোন দেশটিতে বেঁচে থাকাটাই একটা চরমতম সৌভাগ্য আর বিস্ময়ের ব্যাপার?

কোন দেশটিতে গণদুর্ঘটনার কারণে কেউ মৃত্যুবরণ করলে সেই দেশের সরকার মৃত ব্যক্তির পরিবারকে একটি ছাগল অথবা কিছু অর্থ দিয়ে সেই জীবনের দাম শোধ করে?

পৃথিবীর কোন দেশে দুয়েকটি যানবাহনের গায়ে "স্রষ্টার/আল্লাহর নামে চলিলাম" লেখা থাকলেও আসলে প্রতিটি যানবাহনই আক্ষরিক অর্থে দৈবের ভরসায় চলে?

কোন দেশটির সরকার প্রতিনিয়ত ওঠ-বস করে তার দলের অঙ্গসংগঠন, ছাত্রসংগঠন, সিন্ডিকেট, আর পরিবহন মালিকদের কথায়?

কোন দেশটিতে প্রতি ৪৫ মিনিটে একটি মানুষ (দিনে ৩২ জন!!!!) মৃত্যুবরণ করে সড়ক দুর্ঘটনায়?

কোন দেশটিতে গাড়ির স্টিয়ারিং-য়ে হাত দিয়ে ড্রাইভারের সিটে বসতে পারলেই গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাওয়া যায়? গাড়ি চালাতে কোন শিক্ষার দরকার হয়না!?

কোন দেশে সরকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ম্যাগনেটিক ট্রেন, এয়ারপোর্ট বানানোর প্ল্যান করে কিন্তু সারা দেশ ভর্তি ভাঙ্গা-হাঁটু সমান গর্তে ভরা-এক লেনের রাস্তা ঠিক করার কথা চিন্তাও করে না? অথবা কোন দেশের সরকার চিন্তা করতে থাকে পরিবহন-মালিকদের সুবিধা দিতে কিভাবে রেলওয়ে খাতকে বন্ধ করে দেওয়া যায়?

বলতে পারেন, পৃথিবীর কোন দেশটিতে মানুষ থাকেনা, থাকে মানুষরূপী পশু অথবা মানুষরূপী পাথর?

আর সেই দেশটির সম্ভবত সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ-সবচেয়ে অরাজক খাতটির নাম যোগাযোগ ও পরিবহন খাত। সেই দেশের যোগাযোগ ও পরিবহন মন্ত্রী, নৌপরিবহন মন্ত্রী, আর বিমান পরিবহন মন্ত্রীরা প্রায়ই অনেক অসাধারণ স্বপ্নের ও বাণীর জন্ম দেন।

সে দেশে এক মন্ত্রী আরেক মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন যেন বিনা পরীক্ষায় সাড়ে ২৪ হাজার লোককে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া হয়! সে দেশে ড্রাইভিং করতে কোন শিক্ষা-অভিজ্ঞতার দরকার পড়ে না! সে দেশে ড্রাইভারদের সিংহভাগই থাকে অশিক্ষিত এবং ট্রাফিক আইন সম্পর্কে বিন্দু মাত্র জ্ঞান রাখে না। সেই দেশে মানুষ যে কোন প্রকারে যত আগে সম্ভব গন্তব্যে পৌঁছানোটাকেই গুরুত্ব দেয়...জীবনের মূল্য সেখানে এক কানাকড়িও না! সেটা পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে লালবাতি জ্বলতে থাকলেও গাড়ি চলে, যদি না কোন ট্রাফিক পুলিশ তার জীবনের মায়া তুচ্ছ করে চলন্ত গাড়ির সামনে এসে হাত বাড়িয়ে দাঁড়ায়। সেটা পৃথিবীর এমন এক বিস্ময়কর দেশ যেখানে ট্রাকের চালক মোবাইলে কথা বলতে বলতে ৪৩টি নিষ্পাপ শিশুকে মেরে ফেলে!

সে দেশে রাজধানী শহরের পাশের শহর (বিভাগীয় শহর) যেটি মাত্র দেড়শ কিলোমিটার দূরে, সেই শহরে যাওয়ার কোন উপায় থাকে না! মনে হতে পারে, নিশ্চয়ই সে পাশের শহরটি আরব্য রজনীর উপন্যাসে বর্ণিত কোন দুর্গম শহর! কিন্তু না, আসলে সেখানে যাওয়ার কোন রাস্তা আর অবশিষ্ট নেই! আর রেলপথ? সেটিও বন্ধ! এখন বন্ধ উত্তরের সাথে ১২ জেলার যোগাযোগ ও পরিবহন!!!!!!! আর আজকে আরও একটি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ জন!

সেই দেশটির যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে। কারণ একটাই, সে দেশের মাথা যারা তাদের সীমাহীন দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি! সে দেশের মন্ত্রীরা পরিবেশ-জনপদ ধ্বংস করে বিমানবন্দর বানানোর স্বপ্ন দেখেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বানানোর স্বপ্ন দেখেন, স্কাইট্রেন বানানোর স্বপ্ন দেখেন, ম্যাগনে্টিক হাই-স্পিড ট্রেনের স্বপ্ন দেখেন...আর হিসেব করতে থাকেন কোনটাতে তাদের কত লাভ হবে...কত সম্পদ তাদের ব্যাংকে জমা হবে...কত সম্পদ অন্যান্য মন্ত্রী আমলারা পাবেন...কত সম্পদ দলের লোকজন পাবেন! হিসাব করেন কত সম্পদ হলে তাদের কারও সন্তান সে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যকে অজস্রবার ধর্ষণ করতে পারবে কিংবা অনেকগুলো মানুষ হত্যা করলেও কোন শাস্তি হবেনা!

কী ভয়ংকর দুর্ভাগ্য সেই দেশের মানুষের! এত উন্নত একটি দেশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হয়, হাইরাইজ বিল্ডিং হয়...অথচ কোথাও একটি রাস্তাও চলার উপযোগী থাকেনা...কোমর বা হাঁটু সমান খানা-খন্দে প্রতিটি রাস্তা ভরা থাকে। একটি রাস্তাও নিরাপদ থাকেনা! সেই দেশের রাস্তায় কোন স্পিড লিমিট থাকেনা! বাঁক বা ক্রসিং এর কোন সাইন থাকেনা! থাকেনা ওভারটেক বন্ধ করার কোন উপায়! সেই দেশে কেউ ট্রাফিক আইন মানার প্রয়োজন বোধ করে না! সেই দেশে ড্রাইভাররা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বা মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালায়! রাস্তায় চলার জন্য কোন লেন থাকেনা! এমনকী "হাইওয়ে" নামধারী রাস্তাগুলোও কোথাও কোথাও এক লেন বা দুই লেনের হয়ে থাকে!

সেই দেশে অনেক কষ্টে অনেক অপেক্ষার পর অনেক ঋণ নিয়ে একটি সেতু বানানো হয় যেটি চালুর চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই ফাটল ধরার কারণে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়তে থাকে। সে দেশে সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তাদের বাড়ি-গাড়ি-ফ্ল্যাটের অভাব থাকেনা...সে দেশের এমনই একজনের জবানীতে, "আরে ১৭ কিলোমিটার রাস্তা, দুই দিক থেইকা ৬ ইঞ্চি কইরা কম করলে আর ১২ ইঞ্চির জায়গায় ৬ ইঞ্চি লেয়ার দিলে আমার বসুন্ধরার বাড়িটা শুরু কইরা কমপ্লিট হইয়া যাইবো"!

সেই দেশটির বিমান পরিবহনের যে সংস্থাটি আছে সেটি হজ্ব যাত্রীদের জন্য ভাড়া নেয় অতি পুরাতন এবং চরমভাবে অনিরাপদ "কাবো" বিমান সংস্থার বিমান! কারণ? সবার পকেটে কিছু না আসলে সেই দেশে কোন কাজ হয়না...তাই জীবনের নিরাপত্তা সেখানে বইয়ে পড়া বুলি, বাস্তবে তা অস্তিত্বহীন।

সেই দেশে কোন সরকারই দেশের পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদেরকে শাসনের আওতায় আনতে পা্রে না। কিছুতেই মালিক বা চালক, কাউকেই সহজে শাস্তি দেয়া সম্ভব হয়না, কোন রকম আইনই তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনা! সেই দেশে কোন চালকের কারণে দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে আর সেই চালক ধরা পড়লে শাস্তি কত বছর জানেন? সর্বোচ্চ তিন বছর- তাও যদি চালক ধরা পড়ে (যার সম্ভাবনা ১% এরও কম)। সেই দেশে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি শিশু গাড়ির তলায় চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ করলে, চালক পালটা হুমকি দেয় এই বলে যে, "তার মালিক অনেক ক্ষমতাবান! কেউ তার কিছু করতে পারবে না!"

সেই দেশে ট্রাফিক পুলিশ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় সরকারী দলের নেতা-কর্মী, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় সাংসদ, এর সাথে যুক্ত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, সচিব, এমনকি মন্ত্রী-সেনাবাহিনী পর্যন্ত সবাই দুর্নীতির চক্রে জড়িত। সবার লাভের ব্যবস্থা হয় এমন কিছু ছাড়া যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে কোন কাজ হবার নয়! সেই দেশের সরকার যদি কখনো সদিচ্ছা দেখায়ও, শক্তহাতে কিছু করতে গেলেই পরিবহন সমিতি ট্রাক/বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়! জাতিগতভাবে যতই বিভেদে ভরা থাক, দুর্নীতি করার জন্য এরা সবাই "রসুন"! সবাই একসাথে এরা দুর্নীতি করে! এরা নিজেরাই ভীষণ শক্তিশালী একটা দল, যাদের কাছে সরকার জিম্মি, নাগরিকরা তো বটেই।

সেই দেশটি খুব দুর্ভাগা কারণ প্রতিনিয়ত দেশটি তার অসংখ্য সন্তানকে হারায় সড়ক দুর্ঘটনায়! সেই দেশের মানুষ আসলে, হয় পাথর নাহয় পশু! তাই খুব একটা গায়ে লাগেনা কারো। দুইদিন যায়, সবাই সব ভুলে আবার বেঁচে থাকার সংগ্রাম করতে থাকে। সড়কপথে নিরাপত্তা সেখানে চরমতম বিলাসিতা, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি সেই দেশে সুখ-স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়! কারণ সেই দেশের সাধারণ মানুষ, "গরীবের মধ্যে আরো বেশি গরীব, ছোটলোকের মধ্যে আরো বেশি ছোটলোক"। তাদের হেলিকপ্টার নেই, তাদের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তা বন্ধ করে, তোরণ বানিয়ে দুই পাশে শিশুরা রোদে-পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে বাধ্য হয়ে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেনা!

অবশ্য সেই দেশের মানুষ অপেক্ষায় আছে, কবে সেই দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রী রাস্তাঘাট কতটা অপ্রয়োজনীয় সেবিষয়ে বক্তব্য দিয়ে প্রতিটি ঘরে ঘরে এয়ারপোর্ট-হেলিপ্যাড বানানোর স্বপ্ন দেখাবেন!

কিন্তু সেই দুর্ভাগা দেশটির হাতে গোনা কিছু সুসন্তান আছে...যারা নক্ষত্র হয়ে সেই দেশের আকাশে সর্বক্ষণ আলো দিয়ে যায়। আর নানা দুর্ঘটনায় সেই নক্ষত্রগুলো একটা একটা করে নিভে যায়! গতকাল সেই দেশটি হারালো তার দেশের দুটি বিশাল জ্বলজ্বলে নক্ষত্রকে। সেই দুটি নক্ষত্রকে হারানোর পেছনে দায় কার?

সেই দেশের যোগাযোগমন্ত্রী সেই নক্ষত্রদের নিভে যাওয়ার দায় এড়ানঃ "তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি একটি বাসের পেছনে পেছনে যাচ্ছিল। বাসটিকে ওভারটেক করার সময় বিপরীত দিক থেকে আরেকটি বাস আসলে সংঘর্ষ হয়। এভাবে ওভারটেক করা ঠিক হয়নি। রাস্তা বা সিগনালের কারণেও এ দুর্ঘটনা ঘটেনি।" অথচ রাস্তা যদি দুই লেনের হতো, বা দুর্নীতি না করে যদি সঠিকভাবে রাস্তায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হতো তাহলে যে সেই নক্ষত্রদের নিভে যেতে হতো না, সেটা সেই দেশের মন্ত্রীরা জানেন কিন্তু বোঝেন না!

সেই দেশের সকল দেশবাসী শোকে মূহ্যমান...এই নক্ষত্রদের যে তারা আর ফিরে পাবেনা। তাদের দেয়া আলোর আভায় আর কেউ আলোকিত হবে না! দেশটির কত বড় ক্ষতি হয়ে গেল সেটা স্বপ্নেও কল্পনা করা যায় না। তারা যে শুধু নক্ষত্র ছিলেন না, ছিলেন মুখোশহীন অসাধারণ ভাল মানুষও! ছিলেন আন্তর্জাতিক ভাবে সমাদৃত ব্যক্তিত্বও!

আজ সেই দেশটির মানুষ কান্না থামাতে পারছে না, কিন্তু আগামীকালই আবার তারা ভুলে যাবে এই শোকের মাতম...আবারও হয়তো হারাবে আরও কিছু নক্ষত্রকে...নিজেদের অসহায়ত্ব-পঙ্গুত্ব-পাথর হয়ে যাওয়ার কারণে...আর কিছু অমানুষ পশুর পাশবিক লোভের কারণে। এ এক অন্তহীন গোলোকধাঁধা!

সেই দেশটির মানুষ মাছ খেতে খুব পছন্দ করে। কিন্তু সেই দেশ নামক বড় মাছটির মাথাটাই সবসময় পচে যায়...আর মাথা পচে গেলে পুরো মাছে সেই পচন ছড়িয়ে পড়ে! সে মাছ আর ব্যবহারযোগ্য বা খাওয়ার যোগ্য থাকেনা! আর বারবার তাই দেশটির বেঁচে থাকা কিছু মানুষ যাদের হয়তো কোনদিন নক্ষত্রে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তারা পালিয়ে যায়...তারা বাঁচতে চায় শুধু এই বলে, "চল যাব তোকে নিয়ে, এই নরকের অনেক দূরে!"


মন্তব্য

তাসনীম এর ছবি

সেই দেশটা দিনে দিনে ব্যর্থ রাষ্ট্রের খাতায় নাম লেখাচ্ছে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

স্বাধীন এর ছবি

দেশ এই নষ্টাদের দ্বারা আরো নষ্ট হওয়ার আগেই সাধারণ মানুষকে এখন সংঘবদ্ধ হতে হবে। তিউনিসিয়া-মিসরের মানুষ যদি জেঁগে উঠতে পারে তবে বাংলাদেশের মানুষ কেন পারবে না? আমার মতে ব্লগ/ফেইসবুক সব কিছুর সাহায্যে মানুষকে একত্রিত করার সময় এখন এসেছে। সাধারণের মানুষের দরকার হাসিনা/খালেদা ও তার গ্যাং ছেড়ে নিজেরাই একটি দলের নীচে একত্রিত হওয়া। নিজেরাই নিজেদের জন্য একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা। দেশের রাজনীতির বর্তমান যা অবস্থা তাতে একটি তৃতীয় শক্তির দলের বিশেষ প্রয়োজন। জনগণের সামনে একটি বিকল্প দিতে হবে। সেই বিকল্প যদি বর্তমান যুব সমাজ না গড়তে পারি তবে সেটা কে গড়বে?

মৃত্যুময়-ঈষৎ এর ছবি

চলুক পূর্ণ সহমত, স্বাধীনদা।

সেই বিকল্প যদি বর্তমান যুব সমাজ না গড়তে পারি তবে সেটা কে গড়বে?

আমরা আর কবে ঐক্যবদ্ধ হব!!! মন খারাপ

নীড় সন্ধানী এর ছবি

সারা বিশ্বে পরিবহন একটা সেবার নাম, বাংলাদেশে পরিবহন একটা সন্ত্রাসের নাম। পরিবহন সেক্টরের জন্য কোন আইন খাটে না। গায়ের জোরই একমাত্র আইন। এদের এত শক্তিশালী হবার পেছনে অন্যতম কারণ হলো এই সেকটরের সাথে জড়িত বিশাল কর্মীবাহিনীর উপর কারো কোন নিয়ন্ত্রন না থাকা।

জনপরিবহনে এবং পন্যপরিবহনে জড়িত সকল ব্যক্তিবর্গের (মালিক এবং কর্মী) একটা তালিকা সরকারের কম্পিউটারে জমা থাকা উচিত। এটি কঠিন কোন কাজ নয়। দুর্ঘটনা ঘটিয়ে হাপিস হয়ে যাওয়া বন্ধ করতে পারলে সড়কে যান চলাচল অনেকটা নিয়ন্ত্রিত হতো।

বাস ট্রাক জাতীয় বাহনগুলোতে ড্রাইভারের স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নাই। একেকদিন একেকজন একটা গাড়ি চালনায় যুক্ত থাকে। এটা বন্ধ করতে হবে। গাড়ীর নাম্বার এবং ড্রাইভারে নাম এই দুটো পূর্বঘোষনা ছাড়া বদলাতে পারবে না কেউ। ড্রাইভার পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে নতুন ড্রাইভারের নাম সরকারের ডেটাবেজে এন্ট্রি যেন করতে হয়, এরকম একটা আইন করতে হবে।

এদেশে যে কেউ চাইলে চার ছটা চাকা লাগিয়ে একটা বাহন তৈরী করে রাস্তায় নামিয়ে দিতে পারে। সারাবিশ্বে গাড়ি হলো ভারী শিল্প। কিন্তু বাংলাদেশে এটি হস্তনির্মিত পন্য। এই জাতীয় গাড়ীর উৎপাদন করার কোন আইনগত ভিত্তি নেই। তবু সারাদেশের ৯০% গাড়ী হস্তনির্মিত। যত্রতত্র এই জাতীয় গাড়ি উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।

সুস্থ বাহন, সুস্থ চালক, সুস্থ সড়ক, এই তিনটা জিনিস সড়ক দুর্ঘটনা কমাবার একমাত্র উপায়। বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনাগুলোকে 'দুর্ঘটনা' না বলে 'খুন' বলার সময় এসে গেছে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

চলুক

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তারাপ কোয়াস এর ছবি

আসলে আমরা অপেক্ষা করছি। অনেকটা ভানুর সেই দেখি না টাইপের। সামনে আরও কেউ অকালে প্রাণ হারাবে, আমরা সমস্বরে বলবো দেখি না সরকার কি করে!


love the life you live. live the life you love.

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

মৃত্যুর সাথে বসবাস করতে করতে সবাই জম্বি হয়ে গেছি, অনিয়ম হয়ে গেছে সবচেয়ে উত্তম নিয়ম!!!!


_____________________
Give Her Freedom!

The Reader এর ছবি

পুরো দেশ টাই যেন মৃত্যুফাঁদ এ পরিনত হয়েছে । এখন শুনছি দেশের রাস্তায় মেয়াদ উত্তীর্ণ অনেক সিএনজি অটোরিক্সা চলছে যেগুলো যে কোন মুহূর্তে বিস্ফোরিত হয়ে কেড়ে নেবে আরও বহু মানুষের প্রান । হায় আমার দেশ । মন খারাপ

স্বপ্নাদিষ্ট (অতিথি) এর ছবি

হতাশা এবং ক্ষোভ চেপে রাখা অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে। গত ছয়-সাত মাসে পত্রিকা খুলে একটাও আশাবাদী হবার মত খবর চোখে পড়েনি। আমাদের দু:সময় আর কত দীর্ঘ হবে?

-স্বপ্নাদিষ্ট

====================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।'

নীল_অনুকাব্য এর ছবি

মন্ত্রিদের মতো মাল গুলোর এতোই খারাপ অবস্থা যে আল্লাহ ও এদের নিতে চায় না মন খারাপ

নীল_অনুকাব্য এর ছবি

দুঃখিত আমার করা মন্তব্যটা কি বাতিল করে দেওয়া যাবে?

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

পরিবহন শ্রমিক এবং মালিকদের কাছে দেশবাসী তো বটেই প্রশাসন নিজের কারণেই জিম্মি। আইনের প্রয়োগ করতে হলে, কোন ঘাতক চালককে ধরতে বা শাস্তি দিতে হলে যে পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেটা করতে না দিয়ে পরিবহন ধর্মঘট করা হবে। পুরা দেশ অচল করে দেয়া হবে সর্বসম্মতিক্রমে, যেমনটা প্রায় হয়েই আছে এখন এমুহূর্তে! কারা ঠেকাবে? আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত ভিত্তিতে পরিবহনের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে, শহরের মধ্যে, বাইরে, হাইওয়েতে। ছোট শহরগুলোতে যে নতুন ব্যাটারি চালিত ইলেক্ট্রিক গাড়িগুলো চলছে, তারাও নিয়মিত চাঁদা দেয়। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের তাই রাইট আছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে ব্যাকাপ পাবার, তাইনা?

আমার দেখা মতে দেশের নামকরা গুণীব্যাক্তিদের মাঝে, সেলেব্রেটি/মিডিয়া পার্সোনালিটির মাঝে এক চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনই গত দু'দশক ধরে 'নিরাপদ রাস্তার' দাবীতে সোচ্চার হয়ে আছেন। হয়তো তাঁর জড়িত হবার কারণটা ব্যক্তিগত বলেই। আমাদের নিজেদের মানুষ খুন না হলে আমাদের যায় আসে না, আমরা নিজেদের মানুষদের খুনও অবশ্য দ্রুতই ভুলে যাই, এত বেশি খুনোখুনির মাঝে আরেকটা মৃত্যুতে কিছু যায় আসেনা তেমন, সাময়িক হাহাকার বাদে।

আজকে অনলাইন হয়েই দেখলাম আমাদের সুযোগ্য নৌ-পরিবহনমন্ত্রী আবার মুখ খুলেছেন -

দেশের বাবা-মা'রাই মাফ করে দিয়েছেন, তার উপরে আমি আপনি বলার কে!! ট্রাক-বাস চালাবে অল্প বয়সী হেল্পার, লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভার, ফিটনেস ছাড়া গাড়ি চলবে হাইওয়ে ধরে তুমুল বেগে, বৃষ্টিতে পিছল রাস্তায়, সাইনবোর্ড বিহীন বাঁকে, ট্রাফিক বা ড্রাইভিং রুলস না জেনে, জ্যামে আটকে থাকা সময় মোকাবেলায়। যাত্রীরা নিশ্চিন্তে চোখ বুজে প্রতিদিন যাত্রা করবেন, আর কী করার আছে, তাঁদেরকে ঠিক সময়ে, নিরাপদে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে, নিরাপদে পৌঁছুনোর ব্যবস্থা কি সরকার দেবে, দিচ্ছে?

রাস্তা তৈরির, মেরামতের ঠিকাদারী পাওয়া প্রতিষ্ঠান অনন্তকাল ধরে সরকারী টাকা লুটে কাজ শেষ করবে, করবে না, বাজেভাবে কাজ কোন এক আমলে শেষ করবে। কে ধরবে? এলজিইডি আর রোডস এন্ড হাইওয়েসের ইঞ্জিনিয়াররা? কেন ধরবে? তাদের ঈদের বোনাস লাগে না?

আমাদের যোগাযোগমন্ত্রীর কন্যা 'মেহেরজানাপা' দেশের ইতিহাস বিকৃতি করে সিনেমা বানায়ে নিজে নিজেই 'ডাউনলোডেবল' পদক নেবেন, সেই রকম ট্যালেন্টেড পরিবার থেকেই না আমরা নিজেদের 'জনপ্রতিনিধি' নেতা, মন্ত্রী নির্বাচিত করি। সব দোষ আসলে আমাদের। আমরাই রাস্তা নিরাপদ রাখছি না, কম খাচ্ছি না, উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। সব দোষ সাধারণের।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অরুপ এর ছবি

ছাই থেকে যে ফিনিক্স পাখির জন্ম হবে সে উপায়ও নাই........

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।