(১)
সে যখন বলল, ‘তোকে না পেলে এই যে আঠারো তলা বিল্ডিংটা, এর ছাদ থেকে পড়ে মরব’। উপরে চোখটা রাখতেই মনে হচ্ছিল উঁচু ভবনটার মাথাটা যেন আকাশ ছুঁয়েছে। কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে প্রশ্ন করলাম, ‘আমার জন্য মরতে পারবি তুই?’ উত্তরে সে বলেছিল যে এর চেয়ে বেশী করার থাকলে তাই করবে। একটা অন্ধকার পাক খেয়ে গেল মনে তাকে ছাড়া আমার পৃথিবীর কথা ভেবে। ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে বললাম,‘ তুই মরে গেলে কি আমি বেঁচে থাকবো? আমিও চলে যাব এক সাথে’। অজানা আশংকায় হাতটা চেপে ধরে সে আমার। তারপর অনেকক্ষন দু’জনের কোন কথা হয়নি। বৃষ্টির ফোটা গায়ে পড়তেই সম্ভিত ফিরে আসে দু’জনেরই। রিকসার হুডটা মাথার উপর তুলে দিতে বাধ্য হলাম। পলিথিনে মোরা আমরা দু’জন যেন একটা ছোট ঘরে বন্ধী। প্রবল বৃষ্টি ভাসিয়ে নিচ্ছে আমাদের চারদিক। দিনটার কথা মনে আছে খুব। এখন থেকে তের বছর আগের এক ২৫ শে শ্রাবন দুপুরবেলা।
বৃষ্টির ঝাটকা আরো আরো কাছে এনে দেয় আমাদের দুজনকে। রিক্সা এগিয়ে চলে শহরের খালি রাস্তাটা ধরে।তারপর আর বৃষ্টির কথা মনে ছিলনা কারোই। রিক্সার বাকী সময়টা চলে গেছে অন্য এক পৃথিবীর সময়ে। তার বাসার কাছাকাছি আসতেই হুঁশ হয় দুজনের। এতক্ষনে বৃষ্টিটা ধরে এসেছে। ‘ প্লিজ নাম, বাসার কাছকাছি এসে গেছি, কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হবে’ বলে চট করে আমার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয় সে। তাকে চিরতরে হারানোর অশংকায় আমিও ছেড়ে দেই সহসা কিন্তু আবদার ধরি তার সাথে আর একটু যাবার জন্য। ফেলেনি সে আমার আবদার, ওদের বাসার সামনের মোড়টা পর্যন্ত গিয়েছিলাম সেদিন। রিক্সা থেকে নামার সময় শুধু চোখ চোখ রেখে বলেছিল, ‘ভালো থাকিস। আই লাভ ইউ’। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাসায় ফিরেছিলাম সেদিন বুকের মধ্যে শুধুই একটা অনুরনন নিয়ে। রিক্সায় ওর শেষ কথাটার অনুরনন।
(২)
ভার্সিটি বন্ধ। তার সাথে কথা হয়না আজ তের দিন। হবেই বা কি করে বাসায় যে কোন ফোন নেই আমাদের। মোবাইল ফোন তখন অনেক বড় ব্যাপার। টাকাওয়ালা দু-এক জনের কাছে আছে ফিলিপস্ ডিগা সেট। সেট আর সিম মিলে লাগে হাজার কুড়ি আর মিনিট দশ টাকা। তাদের বাসায় ল্যান্ড ফোন আছে। দোকান থেকে ফোন করা যায় কিন্তু তার নিষেধ। ফোন করতে হবে আবার তার পাশের বাসায় টুনটুনের কাছে। টুনটুন গিয়ে চুপিচুপি খবর দেবার আসবে সে। করেছিলামও দুই দিন। টুনটুন ফিরে এসে বলেছিল আপু তো বাসায় নেই। যেদিন তাকে পেলাম ফোনে কথা হয়েছিল খুব কম, শুধু বলল, ‘কথা আছে তোর সাথে। আমি টুনটুনকে নিয়ে আসছি তোদের বাসার কাছের মাঠটার কাছে, ওখানে অপেক্ষা কর’। সে এসেছিল ঘন্টা দুই পরে। গিয়ে বসেছিলাম আমরা মাঠটার সাথে লাগোয়া স্কুলটার সিঁড়িটাতে। কোন ভনিতা ছাড়াই বলল, ‘ আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছেনা। মা জেনে গেছে। তার কাছে আমি প্রমিজ করেছি’। আমার সারা দুনিয়াটা অন্ধকার মেঘে ঢেকে গেল। কিছুই উত্তর দিতে পারিনি তাকে, শুধু গড়িয়ে পড়েছিল কয়েক ফোটা অশ্রু। কোন এক বিষন্ন দুপুরে তাকে বলেছিলাম, ‘যেদিন আমাকে আর ভাল লাগবেনা, কোন ছল চাতুরি করবিনা। সোজা বলে দিবি। আমি চলে যাব আমার পথে’। কথাটা স্বরণ করিয়ে দিল সে। সেই সাথে বলল, ‘তাছাড়া তোকে আমার আর ভালও লাগেনা’। মেনে নিলাম তার কথা। ভাল না লাগলেতো আর কারো ঘাড়ের উপর ভুত হয়ে চেপে থাকা না! বললাম, ’ঠিক আছে, যখন মুক্তি চাইছিস, তাই দিলাম’।
(৩)
কিচ্ছু ভাল লাগেনা আমার। মাঠে মন দিলাম আবার। আমি তো হতে চেয়েছিলাম ক্রিকেটার। তুই এসে বাধ সাধলি। খেলতে যাই। পারিনা। মন টেকেনা। শেষে শিঁকে তুলে রাখলাম খেলাটা। বাসার পেছনের বড় মাঠটাতে গিয়ে বসে থাকি একা নির্জনে। ভাল লাগেনা এখানেও। বন্ধুরা বলে, ‘ভড়ং ধরছে, মাইর দিলে ঠিক হয়ে যাবে।’ বন্ধুদের ইয়ার্কী আর অপমানেও ঠিক হইনা। কেমন দ্রুত বদলে যেতে লাগল মানসপট। বিষন্ন এক পৃথিবী গ্রাস করে নেয় আমাকে। বাসার সবাই বোঝে কিছু একটা হয়েছে, আন্দাজ করতে চায় কিন্তু ধরতে পারেনা। পড়ায় মন দিতে চাইলাম। হয়না। হাতে উঠে আসে বনলতা সেন। ঠিকরে কান্না আসে, বের হয়ে আসি বাসা থেকে। বসে থাকি নির্জন রাতে ভুতুরে মাঠটাতে। ক্লাসে যাওয়া প্রায় বন্ধ। ডিপার্টমেন্টের বন্ধুদের সাথে আর হয়ে ওঠেনা সেই আগের আড্ডা।
অপু একদিন বলে, ‘চল আমার সাথে। আমরা রাতে বাস্কেটবল খেলি মেডিকেল কলেজের গ্রাউন্ডটাতে। বেশ আলো আছে। ক্রিকেটও খেলি মাঝে মাঝে। গেলাম। মজা পেলাম বেশ। ওরা ফান্টা খায়। কয়েকজন আছে বেশ ধনীর ছেলে। দিনে চার-পাঁচশো টাকা খরচ করে। গাড়ীতে ওরা রেস করে। হঠাৎ ব্রেক করে মানুষকে ভড়কে দেয়। ওদের চকচকে রঙ্গিন জীবনে আমি তার শুন্যতা পুরনে তৎপর হলাম। তাও থেকে যায় বুকের ভেতরের তোলপাড়টা যখনই একা হই।
আমার পাড়ার বন্ধুরা মেনে নেয়না আমার চকচকে নতুন বন্ধুদের। ওদের অনেক অভিমান আমার ওপর। দেখা হলেই দু-চারটা কথা শুনিয়ে দেয়। এখন যে আমার পুরোটা সময়ই কেড়ে নিয়েছে আমার শ্রেয়তর স্মার্ট বন্ধুরা! এখন আমি ওদের সাথে মাঝে মাঝে ওগুলো খাই। বেশী খেতে পারিনা। আমি নতুন তাই ওরা লোড কম দেয়। তাও এখন হাফ খেতে পারি। প্রথমে কয়েক কাক দিয়ে শুরু করেছিলাম, তারপর কোয়াটার, তারপর হাফ। বেশ ভালোই লাগে জিনিষটা। খেয়ে কিছুক্ষন পর এককাপ চা, আর পরপর কয়েকটা সিগারেট খেয়ে ফেলা যায় অনায়াসে। সন্ধ্যার পর এখন প্রতিদিনই খাওয়া হয়। মার থেকে পঞ্চাশ-একশ এখন জোর করেই নিয়ে নেই। মা বোঝেন কোথায় একটা গন্ডগোল হচ্ছে। একদিন স্বপ্নে দেখেন যে তার ছেলে কি যেন খায়। মা বলে ফেলেন তার দুঃস্বপ্নের কথা। ধমক দিয়ে থামিয়ে দেই তাকে। বলি আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা তোমার। মার সন্দেহ যায়না। মনে মনে বলেন, ‘কয়দিনে ছেলেটা কেমন যেন বদলে গেল’।
(৪)
এখন আমার পুরো একটা লাগে। বাবা রিটায়ার্ড করেছেন এর মধ্যে। মাও আর টাকার যোগান দিতে পারেননা। আমার নতুন বন্ধুদের কাছেও আমার কদর কমতে কমতে ম্লান হতে বসেছে। আমার কাছে টাকা থাকলে ওরা থাকে আর না থাকলে নিজেদের ব্যবস্থা করে কেটে পড়ে। এখন আর কেউ বাস্কেটবল আর ক্রিকেট খেলেনা মেডিকেল কলেজের বাষ্কেটবল গ্রাউন্ডে। আড্ডাটা এখন চা দোকানে আর সেটার পেছনের কানা গলিটায়। ফেন্সির সাথে এখন সিদ্ধিটাও যোগ হয়েছে। বেশ ভাল লাগে। দুনিয়া জুড়ে ঘোর লেগে থাকে সারাক্ষন।
আজকাল ইনিভার্সিটিতে একটা দলের সাথে জড়িত হয়েছি। বেশ ভাল লাগে। টাকা পয়সা আর মার কাছ থেকে নিতে হয়না। বাসাটা ছেড়ে হলে থাকি এখন, যদিও আমি হলের আবাসিক ছাত্রনা। পার্টির ছেলেদের আবাসিক হবার দরকার নেই। বাসা থেকে ঘোর আপত্তি তুলেছিল সবাই হলে থাকার ব্যাপারে। পরিক্ষার আগে হলে থাকলে ভাল পড়ালেখা হয় এই অজুহাতে অনেক বিতর্কের পর পার পেয়েছি। মাঝে মাঝে বাসায় যাই। মা টাকা দিলে নেই না দিলে নেই না। কোন চাপাচাপি নেই। আমার দিনকাল এখন ভালোই যাচ্ছে।
মাঝে মাঝে তার সাথে দেখা হয়ে যায় ক্যাম্পাসে। আমাকে দেখলে ঘৃনায় মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়। কিন্তু তার পরও আমি জানি সে আমাকে ঠিকই দেখে লুকিয়ে লুকিয়ে দুর থেকে। এটা আমার চোখ এড়িয়ে যায়নি। অনেক দিনই চেখে চোখ পড়ে গেছে। চোখ ঘুরিয়ে চলে গেছে দেখার পর। আচ্ছা, কি দেখে ও আমার দিকে এভাবে? হয়ত আমাকে এখন খুব অচেনা লাগে তার। এমন আমাকে আগে দেখেনি ও। বেশ কয়েক বছর ধরেই সে চিনে আমাকে। সেই কলেজের প্রথম বর্ষ থেকে। সম্ভবত, মেলাতে পারেনা আগের আমার সাথে এই আমাকে।
মাঝে মাঝে মনে হয়, সে আামাকে সেই আগের মতই ভালবাসে। নাহলে এভাবে আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখবে কেন? একদিন জানতে পারলাম সে আমার সব খবরই রাখে। সেও খুব একা হয়ে গেছে ক্যাম্পাসে। বন্ধুদের মাঝে আগের মত সেই চঞ্চল মেয়েটি নাকি এখন আর নেই। আমার যেসব সঙ্গী তার ক্লাসে পড়ে তাদের কাছ থেকে কিছু কিছু খবর পাই। তার ক্লাসের ছেলেদের সাথে ভাল খাতির রাখার চেষ্টা করি শুধুমাত্র তার খবর পাবার জন্য। মাঝে মাঝে ভাবি যে ওকে গিযে বলি, চলো আবার সব নতুন করে শুরু করি। আর বলা হয়না। মনে হয় বারবার, সে তো বলেই দিয়েছে যে তার আর আমাকে ভাল লাগেনা। তাছাড়া আমাকে দেখলে ও কেমন করে যেন তাকায়। মনে হয়, আমাকে অনেক ঘৃনাই করে। তখন ভুলে যেতে চাই তার কথা, যে আমাকে ভালবাসেনা বলেছে তার কথা। মাঝে মাঝে তার দু-একজন বন্ধুর সাথে দেখা হলে তাদের বন্ধুদের খবর নিতে চেষ্টা করি। মনে হয় যেন ভয় পায় আমাকে ছেলেমেয়েগুলো। দু-একটা কথা বলে কেটে পড়তে চায়। বুঝি আমাকে ওরা এখন ভয় পায়। ওরা কোন ঝামেলায় জড়াতে চায়না নিজেদের।
(৫)
তারপর আরো কয়েকটা বছর কেটে গেছে ক্যাম্পাসে। আমি আর দ্বিতীয় বর্ষের গন্ডি পার হতে পারিনি। এখন আমার বড় বড় গোফ। সবাই সালাম দেয়। ব্যাচমেটরাও তুই, তুমি না আপনি বলবে এ নিয়ে দ্বিধায় থাকে। আমার চোখ থেকে সানগ্লাস সরে না দিনের বেলা। সরবে কি করে চোখটা যে অস্বাভাবিক রকম লাল থাকে সবসময়। রাতে একটা সাদা পাওয়ারলেস গ্লাস ব্যবহার করি চোখকে ঢাকতে। তখন চেহারায় একটা শয়তান শয়তান ভাব ফুটে ওঠে। বাসায় যাইনা কয়েক মাস। বাসার সবাইও কেমন যেন ভয় পায় আমাকে। মা ছাড়া সবাই এড়িয়ে চলে। মা শুধু কিছুক্ষন কাঁদেন আর বলতে থাকেন, ‘আমার সবচেয়ে মেধাবী ছেলেটা এমন হয়ে গেলি কেন? তোকে নিয়ে যে সবচেয়ে বেশী আশা করেছিলাম? লোকে এগুলো কি বলে তোকে নিয়ে?’ আমি উত্তর দেইনা। মার সাথে মিথ্যে কথা বলতে ইচ্ছে করেনা। দ্রুত চলে আসি বাসা থেকে। মা অনেক আকুতি করতে থাকেন ভাতটা অন্তত খেয়ে যেতে। আমি ভ্রুক্ষেপ করি না সেদিকে। দ্রুত প্রস্থান করি।
সে এখন এমবিএ তে পড়ে। খুব বেশী হলে আর এক বছর থাকবে এ ক্যাম্পাসে। মাঝে মাঝে সবার কাছে থেকে ভীতিকর এই আমি হারিয়ে যাই অন্য ভুবনে। ভাবি ও চলে গেলে কি আর আসবেনা এই ক্যাম্পাসে? ওকে না দেখলে যে আমি পাগল হয়ে যাব?
এখনও সে আমাকে দেখে দুর থেকে। আগের মত ঘৃনার চোখেনা। সে আমাকে ভয় পায় আর দশজনের মত। শুধু কি ভয়ই পায়? জানি না। হয়ত এক চিলতে ভালবাসা ওর কোথায় লুকিয়ে আছে।
(৬)
এর কিছুদিন পরেই আমি এরেষ্ট হয়ে যাই। আামদের দলের দুটো গ্রুপের বন্দুক যুদ্ধে দুইজন ছাত্র মারা যায়। এরপর হল রেইডে আমি একটা কাটা রাইফেল সহ এরেষ্ট হই। ডাবল মাডার আর আরম্স কেসে পাঁচ বছরেরও বেশী সময় ধরে জেল খাটছি। পার্টি আমার জন্য কিছু করেনি। এরেষ্ট হবার পর অস্বীকার করেছে আমাকে তাদের কর্মী হিসেবে। আমার দরিদ্র বাবারও সামর্থ নেই যে ভাল লইয়ার রেখে আমার জামিন করাবেন। তাছাড়া ভালোইতো আছি। বের হয়ে তো আবার সেই র্যা বের হাতে মরতে হবে ক্রস ফায়ারে অথবা অন্য গ্রুপের হাতে। আমারতো আর সার্টিফিকেট নেই যে এখান থেকে বের হয়ে কিছু করে খাব। আবার ফিরে যেতে হবে সেই পুরোনো পেশায়। তারচেয়ে এখানে থাকাই ভাল।
তার বিয়ে হয়ে গেছে বছর তিনেক আগে তারই এক ক্লাসমেটের সাথে। ভালোই আছে। একটা ছেলে হয়েছে। শুনেছি আমি এরেষ্ট হবার পর সে আর ক্যাম্পাসে আসেনি। চুপি চুপি এসে শুধু পরিক্ষা দিয়ে গিয়েছিল।
সাইফ জুয়েল
মন্তব্য
জানি না গল্পটা পড়ে কেন কাঁদলাম!
কান্না করার মানে হয়না। এটা শ্রেফ একটা গল্পই। তবে হ্যাঁ, আমাদের সময় বাস্তবে এমন হয়েছে, এমন গল্প অনেক দেখানো যাবে।
আমরা ৭০ দশকের মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত প্রজন্ম - প্রেম নয় এর চেয়েও বহুদূর অবোধ কোন কারনে অনেক অসংখ্য মানুষকে এইভাবে হারিয়ে যেতে দেখেছি । ৮০’র দশকে হেরোইন এনেছিলো সরকারী মদদপুষ্ট মাফিয়ারা, তারপর এনেছিলো প্যাথেড্রিন, মরফিন। ৯০’র দশক আমাদের উপহার দিয়েছে ফেন্সিডিল, এখন ইয়াবা। ইয়াবা প্রমোট করা হয় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে, পত্রিকায় আমরা যখন পড়েছি ইয়াবার গডফাদারদের ধরা হয়েছে তখন খুশী হয়েছিলাম - পরে জানতে পারলাম সেই ধরাধরি ছিলো ”মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি”, একদল মানুষের হাত থেকে আরেকদল মানুষ পুরো মার্কেট কন্ট্রোল নিয়ে নিয়েছে - কি অসাধারণ মেধাবী লোকজন দেশকে পঙ্গু করার দায়ীত্ব নিয়েছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে আর্মড ফোর্স থেকে আসা নব্য রিঙলিডাররা, তৎকালীন দেশী মাফিয়াদের সাথে মিলে যেয়ে তারা এখন প্রবল পরাশক্তি! । তারা দেশের বাইরে বসে চালিয়ে যাচ্ছে সব, শুনতে পাই আর্ন্তজাতিক মাফিয়া গ্রুপের সাথে তাদের নিয়মিত দেখা হয় নেপালে, সিঙ্গাপুরে, দুবাই আর ইসতানবুলে! কতদূর এগিয়ে গেছে দেশের সূর্যসন্তানরা!আর মরে যাচ্ছে, মরে গেছে প্রজন্মের অসাধারণ মেধাবী-অভিমানী সন্তানেরা। আমরা বেচে গেছি শুধুমাত্র নেশা করে অপরাধবোধের কারণে!
আমি তাদের কথা বলছি যারা জন্মের পরপর নেশাদ্রব্য চোখে দেখেনি, যাদের কোনদিন নেশা-নির্ভর হওয়ার কথা ছিলোনা, যারা জন্মের পর মুক্ত আকাশকে ভালোবাসতে শিখেছিলো, কবিতা পড়েছিলো, গান গেয়েছিলো। এ দায় সবার! যারা নেশা -নির্ভরতায় বেচে আছে তাদের দূর থেকে ঘৃণা করে এ দায় আমরা এড়াতে পারবোনা, কাল আমাদের সন্তান এ পথ বেছে নেবে, দারুন সহজ করে দেয়া হয়েছে এ পথ বেছে নেয়া, দারুন সহজ - যারা এটা জানেনা, বোঝেনা তাদের বোঝাটা খুব দরকার।
আমার গ্রামের, সেখানে যেয়ে দেখেছি যারা ক্রিকেট, ফুটবল খেলতো তারা এখন ঝিমোয় - সেখানেও সহজলভ্য ফেন্সিডিল, ইয়াবা। যারা প্রতিবাদ করতে গেছে তারা ক্ষমতাসীন মাদকব্যবসায়ীদের হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে শুয়ে থেকে শুনেছে পুলিশ তাদের নামে চুরির মামলা দিয়েছে!
জুয়েল মন ভরলোনা, এখানে বিচ্ছেদ কিংবা প্রেমটাকে বড় করে দেখানো হয়েছে - ঠিক আছে কিন্তু প্রেমে ব্যার্থ হয়ে এইভাবে দেবদাস হয়ে যাওয়ার জায়গাটায় আমার কোনদিন ভালো লাগেনা (এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত)। আমি, আপনি যা দেখেছি আজ অবধি, তাতে জীবনের অংককে কোনভাবেই সরল বলে দেখানো যাবেনা।
আপনার সামর্থ্য আছে, সামগ্রিকতার জায়গাটায় আলো ফেলুননা, চিত্রটাকে উঠিয়ে আনুন। ব্যাপক চাপাবাজী করে ফেললাম মনে হচ্ছে!! শুভেচ্ছা,
তানিম ভাই, আমাদের সময়ে অনেক মেধাবীই গাধার মত নষ্ট হয়ে গেছে এমন প্রেমের ক্ষপ্পরে পড়ে। গাধা বলাটাও ঠিক হচ্ছেনা, কেননা সদ্য কৈশোরোত্তিন্নো ছেলেমেয়েদের জন্য আবেগ নিয়ন্ত্রন করাটা অনেক কঠিন। এখানে আসলে একজন কৈশোরোত্তিন্নো তরুনের নষ্ট হয়ে যাবার গল্প তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এমন আমি অনেককে দেখেছি। তাই এই গল্পটা লেখার তাগিদ অনুভব করলাম।
তা-ও ভালো ব্যাপারটা গল্প।
তবে "তোমাকে আর ভালো লাগছে না", "আমি মার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি" ধরনের লোকজনকে সামনাসামনি দেখেছি। কিছু মা-বাবা যেমন মনে করেন পৃথিবীতে জন্ম দিয়েছেন বলে সন্তানের মাথাটা কিনে ফেলেছেন, তেমনি কিছু মেরুদন্ডহীন লোকজনের নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা না থাকায় বাবা মায়ের অযৌক্তিক কথা শুনতে গিয়ে অন্যের জীবনের বারোটা বাজাতেও বাধে না।
এই ধরনের মা-বাবা এবং যে সন্তানরা তাদের কথা মেনে নেয় তাদের বৈশিষ্ট্যটা খুব সহজ, নিজেদের বাদে পৃথিবীর আর কারো জীবনের প্রতি এদের সামান্যতম সম্মানবোধ নেই - এবং এই দিকের বিচারে একজন ভাড়াটে খুনীর সাথে আমি এইসব লোকজনের কোন পার্থক্য দেখি না।
লেখা চালিয়ে যান
ধন্যবাদ অপছন্দনীয়। আসলে একটা বয়স থাকে যখন ছেলেমেয়েরা প্রেমের ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস থাকে। কেননা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তখন তাদের মনকে প্রথমবারের মত কারো জন্য গভীর আবেগপ্রবন করে তোলে। অনেকেই কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা। তখন অনেকেই বিপথগামী হয়ে যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই বাবা-মার কথার বাইরে যাবার মত স্বাধিনতা থাকেনা।
নব্বই দশকের পারফেক্ট প্রেমের গল্প, এই গল্প এই সময়েও কেউ লিখে জানা ছিল না ৷ প্রথম দশ লাইন পড়ার পরই বুঝেছি কি ঘটতে যাচ্ছে, শেষ লাইনে এসে প্রায় দাড়ি কমা সহ মিলে গেছে ৷ যারা এইভাবে জীবন নষ্ট করে তাদের এমন হওআই উচিত, এমন জীবনই তাদের প্রাপ্য, এদের দেখে আমার করুনাও হয়না ৷ এরা পারে শুধু ফ্যাচফ্যাচ করে কাদতে আর নিজের গল্প বলে সহানুভুতি আদায় করতে, যখন সহানুভুতি দেখাতে গিয়ে ওই মেয়েটার কেউ চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে তখন এই দেবদাস গুলো আত্নতৃপ্তি লাভ করে...আমিই ঠিক, যত দোষ ওই মেয়েটার...
ফালতু পাঠক, এলার্জি থাকতেই পারে কোন বিষয়ের প্রতি। তার মানে কোন কন্টেন্টকে বাদ দিয়ে গল্প লিখতে হবে এমন কোন কথা নেই। নব্বইয়ের দশকের প্রেমের গল্প যে এখন লেখা যাবেনা তাওনা।
আর এখানে মেয়েটার উপর দোষ চাপানো হলো কোথায়। একটু ওভার নারীবাদী হয়ে গেলেনা এক্ষেত্রে? যাক তাও গল্পটা যে আপনাকে বেশ ভাবিয়েছে তাই বা কম কি?
এইরকম নির্বোধ ও মেরুদণ্ডহীন প্রেমিকা, আর ততোধিক নির্বোধ ও মেরুদণ্ডহীন প্রেমিকের ভগ্নহৃদয়ের কাহিনী শুনতে শুনতে শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গেছি। তবে করার কিছু নেই, এরা সংখ্যায় প্রচুর।
হুঁ, আপনার চেনা পরিচিতর মধ্যেই নিশ্চয় আছে দু'একটা
কৌস্তুভ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। তারপরও আমার মনে হয় লিখতে হবে এইসব গল্প। যৌবনের প্রথম বাতাসে যে প্রেম আসে সেটা অনেক আবেগ বহন করে। বাস্তবতা আর প্রেম বিপরিতমুখী দুই স্রোত। একটা বয়স থাকে যখন মানুষ ধাক্কা সামলাতে পারে না বা সামলানো আনেক কঠিন হয়ে পড়ে। যখন ভূল বোঝে তখন আর সময় থাকেনা। আমার মনে হয়না এটা কোন নির্বোধ প্রেমের গল্প। বরং এটা একটা বয়সের কষ্টের বোধ। আপনি ঠিকই বলেছেন এই ধরনের মানুষ সংখ্যায় প্রচুর, কেননা এরা একটা পরাধীন সমাজের অস্থির সময়ে জন্মেছিল। আমি যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ি তখন অনেককেই দেখেছি এভাবে শেষ হতে। তাই পরের প্রজন্মে বোধদয়ের জন্য হলেও এমন গল্প লেখা বা বলা বা শোনার দরকার আছে।
ফালতু পাঠককে বলছি....
আপনার কথায় বাস্তবতা আছে, কিন্তু প্রাণ নাই। আপনি টাইটানিক বোঝেনওবা, মানুষ বোঝেন না। ভালবাসারে আরেকটু বড় স্কেলে দেখলেই, আপনিও এ কথাগুলি বলতে পারতেন না। এ ছেলেটা যদি বাবা-মায়ের ডিভোর্সর কারণে এরকম করত, কিংবা দেশ স্বাধীন করার জন্য অযৌক্তিক (আপনার ভাষায়) জীবন দিয়ে দিত কেন জানি মনে হচ্ছে আপনি উল্টো কথা বলতেন। ভালবাসা এমনই, কেউ কেউ এভাবেই জেতে; বাকিরা সমাজের দাস হয়।
লেখায় ....আমি এরকম অনেকগুলো কাহিনীর সাক্ষী; পার্থক্য আমার বন্ধুগুলো মন খারাপ করে উড়াল দিছে (বিদেশ গেছে), ওদের ধরে রাখতে পারিনাই; আর ওদের প্রতিদ্বন্ধী ছিল অভিভাবকরা (প্রধানত মেয়েদের), আর্থিক সমস্যা কিংবা ধর্ম..
আজকাল প্রেম মানুষের জগতে বৈচিত্র্য আনতেই আসে বোধ হয়!!!!!!
হয়ত আপনার কথাই ঠিক ৷ তবে আপনি যে আরো দুটো পরিস্থিতির কথা বলেছেন সেখানেও যদি কেউ অহেতুক আত্নাহুতি দেয়, তবুও আমি তাকে বেকুবই বলব ৷ আমার আত্নাহুতি যদি আমার বাবা-মায়ের ডিভোর্স না ঠেকাতে পারে তবে সেই আত্নাহুতির কোনো মানে নেই, তবে ঘটনা যদি এমন হয় কেউ তার বাবা-মাকে ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলে তোমরা একসাথে থাকলে না এটা আমি সহ্য করতে পারলাম না তাই আমি চলে যাচ্ছি এবং তারপর ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে তবে আমিও তার জন্য কাঁদব, কিন্তু কেউ যদি তা না করে গাঁজা খেয়ে, পাতি মাস্তানি করে হোটেলে খেয়ে অর্ধেক বিল দিয়ে বাপ-মায়ের দোষ চাপায় তাহলে ওই ছেলের মুখে আমি জুতা মেরেও আমার জুতা ময়লা করব না ৷ (আপনার মনের দুঃখ মিটাবেন আপনি অন্য লোকের উপর অত্যাচার করে, এটা কেমন কথা?) লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকা হানাদার বাহিনীর সামনে কেউ যদি জয় বাংলা বলে চেচিয়ে উঠে তবে তাকে আমি আর যাই হোক মুক্তিযোদ্ধা বলব না, বড়জোর পাগল বলতে পারি, কিন্তু যে পাগল গায়ে বোমা বেধে পাকবাহিনীর ট্যাংকে ঝাপিয়ে পড়ে, পরিশেষে বোমাটা শুধু ট্যাংকের গায়ে আচর কেটে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করতে না পারে, তবুও আমি তার পায়ের ধুলা মাথায় মেখে ভাবব আজ আমি পবিত্র হলাম ৷ সাফল্য বা ব্যর্থতা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো আমার উদ্দেশ্য এবং কর্মে তার প্রতিফলন ৷
আপনি ঠিকই বলেছেন ভাই, মানুষ তো দূরে থাকুক, আমি টাইটানিকও বুঝিনা ৷ তবে কিনা পরাজয়ের ভয়ে যে জীবন থেকে পালায় তার জন্য আমি কোনো সহানুভুতি খুঁজে পাই না (অবশ্যই আমার সহানুভুতি, পুরো জাতির নয়, আপনি চাইলে অবশ্যই সহানুভুতি দেখাবেন)
একটা অপ্রাসঙ্গিক কথা - আমার নিজের প্রেমের বিয়ে, আর কত ঝামেলা করে যে বিয়ে করেছি সেসব বলতে গেলে রঙিন আরব্য রজনীর কাহিনী হয়ে যাবে, শুধু এতটুকু বলতে চাই সরে চার বছর ধরে বিয়ে করেছি এখনো শশুর বাড়ির ভাত খেতে কেমন লাগে ঐটা এখনো পরখ করে দেখতে পারলাম না, আমার বৌকে গত ২ মাস আগে তার বাপের বাড়ি পাঠিয়েছি অসুস্থ বাবাকে দেখতে, সেও প্রায় সওয়া চার বছর পর তার বাবা-মাকে দেখল, ফিরে এসে কান্না-কাটি তারপর আবার সব ঠিক, ঘরের কাজ করছে, রান্না-বান্না করছে, কিন্তু তাই বলে কি তার বুকের কষ্ট কমে গেছে? আমি জানি যায়নি, এসব কষ্ট কি কখনো যায়? যায় না ৷ সব কষ্ট বুকে চেপেই তো চলতে হবে, আর এটাই তো জীবন ৷ এই জীবন আমাদেরই বেছে নেয়া, যখন আমাদের সম্পর্ক নিয়ে তুমুল উত্তেজনা চলছে, মারামারি, কাটাকাটি, পরিবারের চোখ রাঙ্গানি...সবকিছুর মধ্যে মাত্র ২ মিনিট চিন্তা করে ডিসিশন নিলাম, সামনে গিয়ে বললাম... উঠ ছেড়ি তোর বিয়ে...তাই তো সে এখন আমার ঘর আলো করে আছে বুকে কষ্ট চেপে ধরেও, কারণ কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয় - এটাই তো দুনিয়ার নিয়ম ৷
বলব না বলেও বিশাল প্রেমের গল্প ফেঁদে বসেছি, এজন্য দুঃখিত ৷
যারা বলবেন সবাই তো আর একরকম না, আপনি এই পরিস্থিতিতে এটা করেছেন, আরেকজন অন্যটা করবে ৷ অবশ্যই তাই, আমিও জানি একথা ৷ এজন্যই আমার কমেন্ট শুধু আমার নিজের বিচার থেকেই করা, এটা কোনো সার্বজনীন কমেন্ট না ৷
ভাই, আপনার মন্তব্যের জবাবে শুধু একটা জায়গায় কথা বলবো - সার বেধে দাড়িয়ে থাকা হানাদার বাহিনীর সামনে যদি কেউ যেয়ে জয়বাংলা বলে চিৎকার করে উঠে, আমি তাকে শুধু মুক্তিযোদ্ধাই বলবোনা, বরং মনে করবো সে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা,
তাও ভালো এমন পার্থক্য সবাই গড়তে চায়নি, তাহলে হয়ত আজ "পাকসারজমিন সাদ বাদ" কেই জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাইতে হতো...
আপনিও ভালো থাকবেন ৷
ফালতু পাঠক ভাই, আপনার এই মন্তব্যটার অর্থ আমি বুঝতে পারিনি। আপনি কি বলতে চেয়েছেন পরিস্কারভাবে বলুন। মুক্তিযুদ্ধে একজনের শহীদের রক্ত দেয়া ফলে "পাকসারজমিন সাদ বাদ" জাতীয় সঙ্গীত হতে যাবে কেন? আমি বুঝতে পারছিনা। প্লিজ বলুন।
লেখা ভালো লেগেছে। বলার কিছু নেই, এরকম উদাহরণ অনেক দেখেছি।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন