প্রায় যুগ আগে। এনডিসি ক্যান্টিনে বসে স্প্রাইট সহযোগে খাশির প্যাটিস চিবুচ্ছি। ক্লাসের বেঞ্চসঙ্গী একটা বই ঠেলে দিলো। কলেজ লাইব্রেরির বই, বোর্ড বাঁধাই, প্রচ্ছদের কোনো বালাই নাই। নিউজপ্রিন্ট ছাপা। পড়া শুরু করলাম। রিসেসের পরের তিনটে পিরিয়ড ওটা নিয়েই থাকলাম। শেষ করতে পারিনি। ফেরৎ দেয়ার শেষদিন ছিলো, তাই ওটা ফেরৎ গ্যালো লাইব্রেরিতে।
বহু বছর চলে গেলো এর পরে। বইটার নাম ভুলে গিয়েছি, প্রধান চরিত্রটির নাম ও। তবে সেই চরিত্রটির অদ্ভুত রকমের দৃঢ়তার ব্যাপারটি মনে আছে। এটাও মনে আছে যে রিসেসের পরের পিরিয়ড ছিলো ইংরেজি, শিক্ষক ছিলেন টেরেন্স। এবং আমি ক্লাস বাদ দিয়ে একটা বই পড়ছিলাম।আমি আবার স্বভাবে চরমরকমের ভুলোমনা। পড়ুয়া মানুষজন আশেপাশে রয়েছে আমার, তাদের কাউকেও সেই বই নিয়ে কিছু জিজ্ঞাস করা হয়ে উঠেনি। তবে একদিন হঠাৎ, জিজ্ঞেস করলাম নজু ভাইকে। এবং খুশিতে দাত বের হয়ে গ্যালো পুরা। তিনি এমন কোনো গল্প নাকি জন্মেও পড়েননি! যাক, একটা জিনিস পাইলাম, যেটা ইনি পড়েননাই! কিন্তু কে বলতে পারে এটার কথা; ঘটনার সামান্য বিবরন ছাড়া কিছুই মনে নেই!
বইমেলা ২০১১। মুক্তধারা তাদের পূর্বপ্রকাশিত ও গোডাউনকৃত বহু বই জিভে জল আনা দামে বিক্রি করছিলো। এমনই এক দিনে ষষ্ঠ পাণ্ডবদাকে বললাম দুঃখের কথা। নাম-ধাম কিছুই মনে নাই, খালি সামান্য কাহিনী মনে আছে। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে তিনি আমায় বইটার বয়ান করতে বললেন।
যদ্দুর মনে আছে ঘটনাটা এরকম, বাবার চাকুরীর জন্যে খুলনায় থাকে এক ছেলে। সৎ বাবা শেষ জীবনে ঘুষ খেতে গিয়ে ধরা পড়ে চাকুরিচ্যূত। রাজনীতিতে মাত্র ঢুকছিলো, কিন্তু এ ঘটনায় রাজনীতির ময়দান ত্যাগ করে। বাবার বদলীর চাকুরী সুবাদে সিলেটে যখন ছিলো, তখন এক পিওন তাদের ফাই-ফরমাশ খাটতো। সেই পিওনের লন্ডন সাফল্য তাকেও লন্ডন যেতে আগ্রহী করে। এবং বিলেত থেকে সে বিশিষ্ট নাগরিক হয়ে বাংলাদেশে ফেরৎ আসে।
'বইটার নাম যমনিস সংবাদ। প্রকাশক মুক্তধারা। লেখক মিরজা আব্দুল হাই। খুব কম বই লিখেছিলেন তিনি। এর মধ্যে এটা একটা। খুব ভালো বই।'
'ঠিক ঠিক! আর যদ্দুর মনে পড়ছে, বইটার প্রধান চরিত্রটা ক্যান জানি দেশের এক বিখ্যাত সাংবাদিকের সাথে মিলে যায়।'
'তার নাম আজিজ রেহমান। তবে কাজে খুব একটা মিল পাওয়া যায়নি।'
গেলাম মুক্তধারা। বইটা নেই। স্টকে থাকতে পারে, তবে সম্ভাবনা কম। দাদাকে প্রায় হাতে পায়ে ধরে বললাম খোঁজ নিতে।
পরেরদিন যেতে পারিনি বইমেলায়। নজু ভাইকে বললাম একটু খোঁজ নেন। ভদ্রলোক খোঁজ নিয়ে ফোন দিলেন যে দুই কপি আছে মাত্র। কিন্তু স্টলের দাদা এটা তাকে দিবেন না। কারন আরেকজন বুকিং দিয়ে গেছে। ওটা মেটানোতো কোনো ব্যাপারই না।
এরপরে বেশ কয়েকদিন পরে বইটা হাতে এলো। বাড়ি আনলাম। বনফুল পড়েছি, তাই না পড়ে রেখে দিলাম।
খুব কম বই পড়েছি। যত পড়েছি, তার চেয়ে বেশি ভুলে গেছি বোধহয়। তাই সাহস করে একদিন ধরে ফেললাম। তারপর বেশ কিছুদিন আগে বইটা দ্বিতীয়বারের মত পড়লাম। বনফুলের কথা সবসময় মানা যায় না। আর তিনি সবসময় সত্য হন না।
মন্তব্য
কিরে শরীর খারাপ নাকি? ব্লগ লিখলি হঠাৎ?
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
সব কিছুই ঠিক আছে, কিন্তু এনডিসির ক্যান্টিনে বসে স্প্রাইট দিয়ে খাসির পেটিস মনে পড়ানো, এবং সেই সূত্রে মন পোড়ানোর জন্য কষে মাইনাস
(মন্তব্যটা এডিট করে অন্য কিছু একটা লিখেছিলাম কিন্তু পরে দেখলাম মৃত্যুময় ঈষৎ ওটা কোট করেছেন, তাই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিলাম)
ঢাকায় থেকেও সেই স্বর্গীয় পেটিস খাওয়া হয়না ভাই... মাইনাস শিরোধার্য
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
খুব ঠিক কথা!!!
তবে বেশি দিন হয় নাই ঐদিনগুলো বিগত, মাত্র অর্ধযুগ। রিসেসের পর আমাদেরও ইংলিশ থাকতো, ক্লাশ নিতো জে.কে.(জাহাঙ্গীর কবির) স্যার, এই রকম বিচিত্র ক্লাশ জীব্বনেও পাই নাই!!!
_____________________
Give Her Freedom!
আপনার অর্ধযুগ, আমার প্রায় পূর্ণযুগ - বুড়ো হয়ে গেলাম...
জে.কে. (যদিও ছাত্রদের মধ্যে ইনি অন্য এক নামে পরিচিত, শালীনতা রক্ষার্থে আর সেটা বললাম না) কি এখনো ওনার সেই হাই ফ্রিকোয়েন্সি ওয়ার্ড লিস্ট ধরিয়ে দেন? আমাদের সময়ে একবার গ্রুপ ফাইভে ওই হাই ফ্রিকোয়েন্সি ওয়ার্ড উচ্চারণ করতে গিয়ে সামনে লাগানো নকল দাঁত ছুটে পড়ে গিয়েছিলো... আল্ট্রাসোনিক সাউন্ডের ধাক্কা সইতে পারেনি আর কি!
জে.কে. হাই ফ্রিকোয়েন্সি ওয়ার্ড লিস্ট ধরিয়ে দিত? কই না তো? মৃত্যুময় ঈষৎ, তোমার কিছু মনে পড়ে?
আমি তো ওনার ফ্যান ছিলাম। এমন স্মার্ট লোক!
স্যারকে পাগল বলবা না কেউ, আমি কষ্ট পাই!!
বাই দ্য ওয়ে, এনডিসির অনেক টিচারেরই গাড়ি ছিল, জে.কে. স্যারেরও ছিল, কিন্তু সব গাড়ির মধ্যে শুধু উনার গাড়িটাই কেন লাল রঙের ছিল, খোদাই জানে
এত তাড়াতাড়ি বুড়ো ভাবলে চলে নাকি!!! বুড়ো হতে এখনও ঢের দশক দশক বাকী আছে!!!
পছন্দনীয় ভাই, আমাদের ব্যাচে 'জে.কে.' নামটারই চল ছিল, ক্লাশে উনার সামনেই জে.কে. জে.কে. তারস্বরে চিৎকার হইতো। তবে উনার আচরণ মনে হয় সারা জীবনই অপরিবর্তনীয় আছে, বিচিত্র কাজ কারবার, এমনই সচেতন স্যার ছিলেন যে ছেলেপেলে সামনের দরজা দিয়েও পালাতে পারতো, লাগাতার হৈচৈ হট্টগোল, একজনকে এবসেন্ট করতে গিয়ে অনেককে এবসেন্ট করানো, আরো কতকিছু, তবে মানুষটা ছিলেন সাদা মনের। উনি যতদিন ছিলেন পুরো ক্লাশের গড় মার্ক থাকতো ৯০ এর উপরে, একি রিএরেন্জের অনেক সিকুয়েন্সকেই ভুলিয়ে ভালিয়ে শুদ্ধ করিয়ে নেওয়া যেত!!! আরো কত কী!!!!
পছন্দনীয় ভাই, আমারে ক্যান 'আপনি' বলেন, আমি কত ছোট মানুষ???
_____________________
Give Her Freedom!
অ্যাই (উচ্চারণটা খানিকটা অ্যায় এর মতো!)! ইফ ইয়উ ডোন্ট টেক দ্যা ক্লাস সিরিয়াসলি, দেন আই শ্যাল টেক ইট ভেরি সিরিয়াসলি!!!
জে,কে! জে,কে, জে,কে, জে,কে!!!!!
দোস্তো, খাশির প্যাটিসের কথা মনে করিয়ে দিয়ে জিভে জল এনে দিলে।
অনেক দিন পর লিখলে। স্টাইলটা কিন্তু বনফুলের মতই হয়েছে। শুধু পাঠকের মৃতুর স্থলে পাঠকের পুণর্জন্ম
টুইটার
বনফুল? বলছো?
ভালো লাগাতে পেরেছি, এটাই অনেক...
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
একটা হাফ টপিক তথ্য জানাই। মিরজা আবদুল হাই আমাদের সচল মির্জা'র চাচা। এই মির্জা লোকটা ভাগ্যবান, তার চাচা মিরজা আবদুল হাই, আর মামা মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক খ্যাত মীজানুর রহমান।
মিরজা আবদুল হাইয়ের সবগুলো লেখা সচল মির্জার কাছে থাকার কথা। লেখাগুলোকে ডিজিটালাইজড করার ব্যাপারে যদি ভেবে দেখা যায়, তাহলে ভালো হয়।
এরকম শক্তিশালী একজন লেখক আড়ালেই থেকে যাবেন, সেটা বড় দুঃখের কথা।
মির্জা ভাইকে চেপে ধরেন। লাগলে আমি পিষে ফেলবো এসে। এ লেখাগুলোর ডিজিটালাইজেশন খুব জরুরী
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
পড়তে হবে।
পড়ে ফেলুন, ঠকবেননা
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
দেড় বছর...
গুড, এইবেলা আবার ঘুম দেন ...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
আমি নিশ্চিত সিমনের একাউন্ট হ্যাক হৈছে!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধারনা ভুল
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
বইটা বাসায় ছিল। বহু বছর ধরে। দেখতে হবে আছে নাকি এখনও। পড়া হয় নি অবশ্য। লেখাটা পড়ে বই পড়ার আগ্রহ জাগল। অনেকদিন পর লিখলেন...
পড়েই দেখুন। না হলে মিস করবেন
ব্যস্ততা....
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
সিমন ভাই, সব ঠিক তো ?? কোন সমস্যা নাই তো ??
নারে, অনেক ঝামেলা। রাশি রাশি সমস্যা...
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
মিরজা আবদুল হাইয়ের আরেকটি বইয়ের কথা তোমাকে বলেছিলাম - "তোমার পতাকা"। যদি ঐসময়ে কিনে বা পড়ে না থাকো তাহলে বেশ মিস্ করেছো।
এই উপন্যাসটি প্রথম পড়ি সত্তরের দশকের শেষ বা আশির দশকের শুরুর দিকে যখন ঈদসংখ্যা বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়েছিলো। সামরিক সরকারের শাসনামল, অগণতান্ত্রিক সরকারের আমলে উপর তলায় নানা কায়দায় হরিলুট এইসবের সাথে একটা ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এই উপন্যাসটিতে আছে। সেটি এদেশে বিলুপ্তপ্রায় "অ্যাংলো ইন্ডিয়ান" সম্প্রদায়কে নিয়ে। মণিকা গনসালভেজ আর তার মায়ের চরিত্রটি এখানে চমৎকার ভাবে চিত্রায়িত হয়েছে। এর অনেক পরে শহীদুল জহিরের "মুখের দিকে দেখি" উপন্যাসে এই সম্প্রদায়কে আমরা আবার দেখতে পাই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
'তোমার পতাকা' তো আপনার সামনেই কিনেছিলাম দাদা। এক বন্ধুর কাছে ছিলো, তাই পড়া হয়নি। এমাসেই ওটা পড়ে শেষ করবো আশা রাখি, কারন ওটা হাতে পেয়েছি। ওটা পড়ে কোনো পোস্ট/ পাঠপ্রতিক্রিয়া (হয়তো) দিতে পারি সময়ে কুলোলে।
এ অংশটি সে বয়সে যে অনুভূতি দিয়েছিলো, এ বয়সে এসে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মাত্রা পেয়েছে বলতে পারি।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
। পড়ার ইচ্ছে হল।
পড়ে দেখবেন
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
হইছে কী কন তো! আপ্নে পোস্ট দিছেন! তয় আবার এখানে ওখানে কমেন্টও করতাছেন!!!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
সচলে ঢুকতে পারছি অনেকদিন পরে (মাঝে ঢুকতে পারতেছিলামনা)। তারপর লিখতে পারছি (প্ল্যাটফর্মটা যদিও অচেনা লাগতেছে)। আর কমেন্ট করতে জান বাইর হয়ে যাইতেছে, এত্তো ধীর গতি!!!!!
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
বেশতো...
উলস সেই মাটনপ্যাটিস!! তবে আমাদের সময় স্প্রাইটের বদলে ডিউ সুপারহিট! টেরেন্সের বিদায়, আমরা তাকে এবনফ নিমাই স্যারকে পাইনি। সবচেয়ে অসহ্য ছিল মারলিন ক্লারা ম্যাডামের ক্লাস- পুরো ঘুমের ওষুধ! ফার্স্ট বেঞ্চিতে সিট ছিল তাই ঘুমোবার যো ছিল না। আমাকে দিয়ে দিব্যি আহমদ শা আবদালীর রোল পাঠ করিয়ে নিল! কি দিন ছিল সেগুলো! আপনার কি ০৩ ব্যাচ?
নতুন মন্তব্য করুন