তারপর... আর কি, এভাবেই আমার প্রথম বারের মতো ধর্ম ধর্ষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হল।
তখন সত্যিই বোঝার মতো বয়সে ছিলাম না । আজ আমার জীবনের অর্ধ-শতবর্ষের হাফ টাইম পেরিয়ে এসে বিষয় গুলো আমাকে ঘৃনার অকুল সমুদ্রে বিসর্জন দিয়ে দেয়। আজ ভাবলে সত্যিই শরীরে জ্বালা ধরে যায়, কি করে সাহানারা মাসি (আমাদের দুধ দিতেন) বছরের পর বছর দুধ বিক্রি করতে এসে আমাদের বাড়ির দাওয়ায় বসেই কাটিয়ে গেছেন। আমাকে খুব ভালোবাসতেন তিনি। প্রায় সময়ই আসার সময় কিছু একটা কোচায় করে নিয়ে আসতেন। সব সময় খেতে পারতাম না। তবে লুকিয়ে বহুবার খেয়েছি। আজও ভাবি পাশের গ্রামের মজুমদার বাড়ির মেজ ছেলেটির কথা। মুসলিম মেয়েকে ভালোবাসার কিমত তাকে দিতে হয়েছিলো জীবন দিয়ে।
এই রকম আর কত ঘটনা আর বলবো। এই স্মৃতি। না ঠিক স্মৃতি নয়, আমার এক বন্ধুর ভাষায় স্মৃতিবিষ। এই বিষ আমার সারা মনে যে ক্ষত এঁকে দিয়েছে তার বিন্যাস বিস্তৃত। তবুও বহু ভালোবাসার পরশ হৃদয়কে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে চলে যায়। আজ আমরা বাংলায়ও দুই বাঙলা। একটা এপার, আরেকটা ওপার। একটার নাম প্রথম ভুবন, আরেকটার নাম দ্বিতীয় ভুবন। দুই জায়গায় দুই প্রকার মানুষ সংখ্যালঘু। এপারে লুঙ্গির দল সংখ্যালঘু, ওপারে ধুতির দল সংখ্যালঘু। অতপরঃ......... । কামান দাগা শুরু ......
এভাবেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয় কতশত নিষ্পাপ। জাতের অনলে ব্রাত্য মানবতা। আমার পূর্ববর্তী পোস্টটা ফেসবুকে দেখে একজন ব্যক্তি মন্তব্য করেছিলেন যে “ধর্ম নিয়ে কোনো আলোচনায় যাওয়ার আগে, প্রত্যেকের উচিত তার নিজের ভাষায় নিজের জাতধর্মগ্রন্থটি কমপক্ষে ছয় মাস পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়া।” একটি কথাই শুধু বলবো – ‘জাতধর্মগ্রন্থ’, তাই তো। বেশীদিন নয়, ৫-৬ বছর আগের কথা, আমার ছোটো ভাই স্কুল থকে ফিরেছে কোন একটা ঈদের আগের দিন, বোধ হয় পরের দিনের স্কুল বন্ধের কথা শুনে এসেছে। সে এসেই মাকে জড়িয়ে ধরে বলল – মা,কাল আমাদের বাড়িতে হবেনা? মা তাকে জিজ্ঞাসা করলো, কি ? সে বলল- ঈদ। আমি সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম, কিছু মুখ দিয়ে ফুটছিল না। আমি নিজে সামনে থেকে দেখিনি তবে নিশ্চয়ই ওই ঘরেরও কোনো ছোট্ট মিয়া তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরে দুর্গা পূজার কথা বলেছে কোনদিন। সেই আম্মুর মুখ আর আমার মায়ের মুখ কি আলাদা ছিলো......
কই সাহেব, আরেকবার কন জাতধর্মগ্রন্থের কথা !
“জানিনা কে দিয়েছিলো পলাশকে তার ডাক নাম / জানিনা কতটা ঘন হলে মেঘ হবে ঘনশ্যাম / জানিনা কতটা কথা বলা হলে হবে কথকতা / জানিনা কি ভাবে স্রোত ভেঙে দেয় নদীর জড়তা / ...... জানিনা ফুরুবে কবে বৃথা প্রশ্নের হয়রানি। উত্তর আসবেনা, তুমি আসবেই আমি জানি।” – (কবীর সুমন)।
- কি, কেউ উত্তর জানেন কি ?এই সামান্য কিছু উত্তর,- তারপর না হয় জাতের কথা বলবেন। সৃস্টি তো একটাই...।
জাত নিয়ে বাহাস(তর্ক) করতে গিয়ে লালন ফকিরকে নিজের মাথা ফাটিয়ে ফিরতে হয়েছিলো। কারা করেছিলো এই হিংসা ? ধূতি এন্ড লুঙ্গির মৌলবাদীরা, তাই তো। ঐ নিরক্ষর মূর্খ ‘মানুষ’টা তো দুইটা জাতের কথাই বলতেন- পরুষ, আর নারী। আর আমরা শালা টোয়েন্টি ফাস্ট সেঞ্চুরির WWW ডট কম এর লেটেস্ট মা–নু–ষ এর দল কি করি? একটু নিজের পরশ পাথরে ডুব মেরে ভেবে দেখবেন(এটা অনুরুধ নয়, কত বিজ্ঞ, জ্ঞানী, দার্শনিকরা অনুরুধ করে গেছেন তাতেও কোনো কাজ হয়নি, আর আমি কোন হরিদাসপাল)!
...... এবং
কিগো ধূতি এন্ড লুঙ্গির মৌলবাদীর প্রধানেরা আমার কথা ছ্যাকা দিলো নাকি? তবে সাবধান কামড় দেওয়ার চিন্তাও মাথায় আনবানা।শালা ধূতির পেছনের গোপন অংশটায় বিষ কচু লাগিয়ে দেবো, আর শালা লুঙ্গি - লম্বা দাড়ির বাগানটা পুড়িয়ে দেবো। আমি তোমাদের চাইতেও বড় মাপের হারামি কুত্তা।
একই থালায় ভাত খাবো, আমি আর রাসেল।
হায়রে মনফকিরা তুই আরেকটু ভালোবাসা দে,
তুমি আসবেই আমি জানি। তারপর ..................
আগরতলা
আগস্ট, ১৫।২০১১
মন্তব্য
এবারেরটা একটু কম জমল। তবে চলুক।
এই অংশটা ঠিক স্পষ্ট হল না।
এই কথাটার অর্থ আর বিশেষ কিছু নয় দাদা। মৌলবাদীদের দল না হয় তাদের ধর্মীয় ভ্রষ্টাচারকে কায়েম রাখার জন্য ধর্মের তেরোটা বাজিয়ে ছেড়েছেন। কিন্তু আমারা একবিংশ শতাব্দীর তথাকথিত কোয়ালিফাইড মানুষের দল নিজেদের কতটা শৃঙ্খল মুক্ত করতে পেরেছি। যুগ যুগ ধরে বহু মনিষীরা আমাদের শুধু 'মানুষ' হতে বলে গেছেন । কিন্তু তাতেও কি কোনো কাজ হয়েছে যে আমার মতো একটা পাতি মানুষের কথায় কিছু হবে।
তাই তো আমরা আরও বেশি করে কাটাকাটিতে মেতে উঠি ।
”ফকিরি করবি ক্ষ্যাপা কোন রাগে?
আছে হিন্দু-মুসলমান দুই ভাগে”!
আগরতলার মানুষদের জন্য শুভেচ্ছা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আপনাদের অবদান ভোলার নয়!
দাদা, আমরা বাংলাদেশীরা ধর্মনিরপেক্ষ। এই ধর্মনিরপেক্ষ থাকার জন্য সংবিধানকে আমরা সোনার পাথরবাটি বানিয়েছি তার পরেও আমাদেরকে দুষবেন? আপনার আবেগ ভাল লাগছে। লেখা চালিয়ে যান।
মন্তব্য লিখেছি : প্রৌড়ভাবনা
প্রথম পর্বটি পড়া হয়নি। দ্বিতীয় পর্বটি আগে চোখে পড়ল। খুব ভাল লাগল এমন চক্ষুষ্মান আরও একজন মানুষের দেখা পেয়ে। এইচ জি ওয়েলসই বোধহয় বলেছিলেন, In the country of the blinds, the one-eyed man is the king. অন্ধদের দিয়ে প্রায়-পূর্ণ শুধু এই দেশ, উপমহাদেশই নয়, সারাটা পৃথিবী ; আর আপনি তাদের একজন যারা দু'চোখেই দেখতে পান। অন্ধ লোকগুলি ধর্ম ছাড়া কিছুই বোঝে না। কেবল ধর্মপুস্তকের কথা বলে, দোহাই দেয়। কেউ এসবের অসারতা-নিরর্থকতা, হাস্যকরতার কথা তুললে মারতে তেড়ে আসে, পারলে খুন করে। দেখছি তো আজ বহুদিন ধরে ব্লগে, ফেসবুকে, আরও নানান মাধ্যমে এইসব ব্যাপার। দেখে-দেখে আমি ক্লান্ত, প্রায়-হতাশ, সে কারণে নিজে লিখতে উৎসাহ পাই না। তবে আমার চোখ কেবল আপনার মতো মুক্তমনের মানুষদের খুঁজে বেড়ায়। পেলে আনন্দে ভরে ওঠে মন। এই আশাটুকু এখনও আছে যে, যাদের মন স্বচ্ছ, যাদের মনে এখনও কোনও ছাপ পড়ে যায়নি কুসংস্কারের, ধর্ম নামের বোকামিতে ভরা চিন্তার, আর যারা একটু-একটু প্রশ্ন করতে শুরু করেছে, সন্দেহ ঢুকতে শুরু বরেছে যাদের মনে মানুষের সকল আচরণ নিয়ে, তথাকথিত সৃষ্টিকর্তা ও ধর্মজাতপাত নিয়ে, তারা আপনার এ ধরনের লেখা পড়ে হয়তো আলোর দিশা পেতে পারে। আপনাকে অভিনন্দন।
প্রাণের কথা বলি যাই
মানুষের কথা বলি যাই;
জাত নাই, ওরে জাত নাই
জাত আছে একটাই, 'মানুষ' ভাই!!!!
_____________________
Give Her Freedom!
আগের পর্বটাই যা গোল বাঁধিয়েছে। সেখানে আপনি নিজস্ব অভিগ্গতার কথা লিখে আপনার জীবনের কিছু কথা শোনবার লালচ দেখিয়েছেন। এই পর্বে প্রথম প্যারার পরে গিয়ে তাই একটু পথ হারিয়েছি। পরের ক্ষেপে কিন্তু এরকম এক পা দুধে তিন পা পানি মেশালে চলবে না।
ভাল লাগছে... লেখা চলুক... আমার নিজের জীবনের কিছু অত্যন্ত তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে এই বিষয়ে তাই মনে হয় এত ভালো লাগছে... আর প্রতি পর্বের সাথে আগের পর্বের লিঙ্ক দিবেন।
কি বলবো, আমি ও নিজে ও ভুক্তভোগী। লেখা ভালো লাগছে, চলুক।
ধর্মের দাম শোধ করেছি উচ্চমুল্যে।
লোকচক্ষুর অগোচরে কত প্রাণ ধর্মের যাতাকলে পিষ্ট হয়। জীবন্মৃত হয়ে বেচে থাকে কতজন।
আমরা মুসলিম হই। হিন্দু হই। বৌদ্ধ হই।
শুধু মানুষ হওয়া আর আমাদের হয় না।
তাপস ভাই, লেখা অসাধারণ । আমার খুবই ভাল লেগেছে । কলম যেন থেমে না যায়, অনুরোধ রইল ।
নতুন মন্তব্য করুন