পাণ্ডবের চীন দর্শন-১৩

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি
লিখেছেন ষষ্ঠ পাণ্ডব (তারিখ: বুধ, ১৭/০৮/২০১১ - ১:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাদা সাপ, কালসাপ

যারা উপকথা পড়তে ভালোবাসেন বা এই ব্যাপারে কিঞ্চিত খোঁজ-খবর রাখেন তারা চীনা উপকথার সাদা সাপের গল্পটা জানেন। আমি গল্পটার পুনরাবৃত্তি করতে চাইনা। সেই গল্পের ঘটনা চীনের কোথায় ঘটেছিলো সেটা নিয়ে নানা মত আছে। এক পক্ষের মতে ঘটনা মিঙ শাসনামলে ঝেজিয়াঙ প্রদেশের রাজধানী হাঙচৌ-এর শী হু বা পশ্চিম হ্রদ এলাকার লেইফেঙ মন্দিরে ঘটেছিলো। আরেক পক্ষের মতে ঘটনা চিঙ শাসনামলে জিয়াঙসু প্রদেশের ঝেনজিয়াঙ শহরের কাছের জিনশান মন্দিরে ঘটেছিলো। পশ্চিম হ্রদ আর তার আশেপাশের সব মন্দির, খোদাই চিত্র সম্বলিত গুহা, স্তুপ দেখার সুযোগ হয়েছিলো ২০০১ সালে। আর জিনশান মন্দিরে যাবার সুযোগ আসে ২০১১ সালে। শ্বেত সর্পিনীর দুই তীর্থ দেখতে আমার দশ বছর লেগে গেলেও এই দশ বছরে গণচীনের এখানে সেখানে ভালোবাসা আর ত্যাগের মহিমায় পূর্ণ সাদা সাপের দেখা পেয়েছি বিস্তর। দুঃখজনক হলেও সত্য, তার সাথে কালসাপের দেখাও পেয়েছি অনেক।

কয়েক বছর ধরে দুনিয়া জুড়ে চলতে থাকা অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা গণচীনেও লেগেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়তে বাড়তে আকাশ ছোঁয়া হলে; বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যয় নাগালের বাইরে চলে গেলে দরিদ্র মানুষের নৈতিকতার মান নামতে থাকে। এই অবস্থায় তাদের দোষ দেয়া চলে না। আগের এক পর্বে গণচীনের ট্যাক্সি ড্রাইভারদের সুখ্যাতি করেছি। তাদের বদনাম করার মতো অবস্থা এখনো দেখিনি, তবে মন্দার ধাক্কায় তাদের সেবার অবনতিটা চোখে পড়ার মতো হয়েছে। আগে ট্যাক্সিতে উঠে শুধু জায়গার নাম বললেই হতো - ট্যাক্সি সোজা গন্তব্যে চলে যেতো আর আপনি মিটার অনুযায়ী ভাড়া চুকিয়ে দিতেন। আর এখন ট্যাক্সিতে উঠে গন্তব্যের নাম বললে ড্রাইভার আপনার সাথে ভাড়া নিয়ে দরাদরি শুরু করে দেবেন। আজকাল ছোট বা বড় যে কোনো শহরে ট্যাক্সি ড্রাইভারেরা মিটার অনুযায়ী ভাড়া নিতে নিতান্ত অনিচ্ছুক। তবে দরাদরির সময়ও এরা আপনাকে নতুন বা বিদেশী পেয়ে আমাদের ট্যাক্সি ড্রাইভারদের মতো দশগুণ দাম চাইবেন না, উচিত ভাড়ার চেয়ে কিছু বেশি চাইবেন কেবল। তারা আপনাকে ঠিক জায়গাতে নামিয়ে দেবেন; তারা আপনার টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেবার চেষ্টাও করবেন না; বরং আপনার ব্যাগটা তিনি সাবধানে একটু এগিয়ে দেবেন। ট্যাক্সি ড্রাইভারদের আপাতত নির্দোষ এই অবনতিকে আমি কিছুটা ক্ষমার চোখে দেখলেও সাদা সাপকে সরিয়ে কালসাপের এগিয়ে আসার ক্ষীণ শব্দটাও কিন্তু শোনা যায়। পাবলিক ট্রানসপোর্ট ব্যবস্থার ক্রমাগত উন্নতি ও সহজলভ্যতা ট্যাক্সি ব্যবসাতে তার বর্তমান অবস্থার সাপেক্ষে বিপর্যয় ডেকে আনাটাই স্বাভাবিক। কে জানে দশ বছর পর এই সেক্টরে হয়তো কালসাপ ফণা তুলে দাঁড়াবে।

২০০৭ সাল থেকে গণচীনে দ্রুত গতির রেল ব্যবস্থার সূচনা হয়। এখন পূর্ব চীন সাগরের উপকূলের প্রদেশগুলো এই রেল ব্যবস্থার আওতায় চলে এসেছে। ফলে অনেক বেশি দূরের জায়গায় যাতায়ত বেশ সহজ, সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী হয়েছে। ট্রেন স্টেশনগুলো যথেষ্ট ঝকঝকে তকতকে; স্টেশনের শৌচাগারগুলো পরিষ্কার; অপেক্ষা করার জায়গাগুলো দোকান দিয়ে ভরে ফেলা হয়নি; স্টেশনের কর্মীরা বেশ তৎপর; ট্রেনগুলোও মোটামুটি সময় মেনেই চলাচল করে। স্টেশন বা ট্রেনের ভেতরে চীনা আর ইংরেজী ভাষায় ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। সাথে সাথে ডিসপ্লে বোর্ডগুলোতেও এই দুই ভাষায় বিজ্ঞপ্তি জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে দেশী বা বিদেশী যাত্রী কারো কোনো অসুবিধা হবার কথা নয়। প্লাটফর্মে দাগ কেটে লিখে রাখা আছে কতো নাম্বার কোচ কোথায় থামবে। ট্রেনও ঠিক ঠিক সেই জায়গাতেই থামছে। তাই দুই মিনিটেই সবার ওঠা নামা সহজেই সম্ভব হচ্ছে। ট্রেনের ভেতরে পরিস্কার টয়লেট, খাবার জন্য ঠান্ডা পানি আর গরম পানির ব্যবস্থা, ডাইনিং কার, টেলিভিশন, ইলেকট্রিক প্লাগপয়েন্ট ছাড়াও আছেন বিমানবালাদের মতো স্মার্ট-সুবেশী রেলবালারা। এক যাত্রায় ট্রেনে উঠতেই একজন রেলবালা ইংরেজীতে জানতে চাইলেন আমি কোথায় যাবো। গন্তব্যের নাম শুনে বলে দিলেন কতগুলো স্টেশন পরে ঠিক কতোটার সময় সেখানে পৌঁছাবো। আরেকবার গন্তব্যে নামার সময় কাছিয়ে আসলে আমি নামার উদ্যোগ করতে এক রেলবালা আমাকে থামালেন। চীনা ভাষায় কিছু বলে আমাকে নিবৃত্ত করতে চাইলে আমি ইংরেজীতে বললাম যে আমি চীনা ভাষা জানি না। সাথে সাথে তিনি তার মোবাইল ফোনে ট্রানস্লেটর খুলে একটু খুটখাট করে ইংরেজীতে লেখা দেখালেন - “ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বিলম্বে যাচ্ছে, আপনার গন্তব্য আসতে আরো পনের মিনিট লাগবে”।

ট্রেনের প্রসঙ্গ আসায় অত্যন্ত কুণ্ঠার সাথে একটা বিষয়ে বলি। আমি বাংলাদেশ ও ভারতের ট্রেনে দেখেছি ট্রেনের টয়লেটের কমোড বা প্যানের নিচটা ফাঁকা। অর্থাৎ টয়লেট ব্যবহারকারী মল-মুত্র যা ত্যাগ করছেন তা সরাসরি রেল লাইনের উপরে পড়ছে এবং যথাযথ ফ্ল্যাশ করার ব্যবস্থা নেই। ফলে দুই/একজন ব্যবহার করার পরই টয়লেট ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। চীনের ট্রেনের ব্যবস্থাটা এমন নয়, সেখানে কমোড বা প্যান একটা ট্যাঙ্কের সাথে যুক্ত, ফ্ল্যাশ করার ব্যবস্থাও আছে। ফলে সহজেই ফ্ল্যাশ করে টয়লেট পরিষ্কার রাখা যায় আর রেল লাইনও নোংরা হচ্ছে না। গোটা দেশের রেল লাইনকে তা টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত হোক অথবা কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত হোক সেটাকে এই খোলা নর্দমা বানানোর দুর্বুদ্ধি যে কাদের মাথায় এসেছিল সেটা ভেবে পাই না।

চীনের ট্রেন লাইনগুলো বেশিরভাগ জায়গায় একটু এলিভেটেড। তাছাড়া কোথাও তা মাটির ভেতরে ঢুকে গেছে, কোথাও আবার নদী বা পাহাড়ের উপরে উঠে গেছে। পথে কোথাও লেভেল ক্রসিং দেখিনি, তাই দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমেছে। এরপরও সব সময় দুর্ঘটনা ঠেকিয়ে রাখা যায় না। ২০১১ সালের জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ওয়েনচৌ-এর কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহজনিত সমস্যার জন্য পথিমধ্যে থেমে থাকা এক ট্রেনকে পেছন থেকে আড়াইশ’ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি বেগে আর একটা ট্রেন এসে ধাক্কা দেয়। এই দ্বিতীয় ট্রেনটার নাম D3115। এই একই নামের ট্রেনে একই পথে দুর্ঘটনাটির ঠিক দশ দিনের মাথায় আমি ভ্রমণ করেছি। তখনো মানুষের মনে দুর্ঘটনার স্মৃতি তাজা এবং ট্রেনে আলোচনার অন্যতম বিষয়ও এটা। ঐ দুর্ঘটনায় ট্রেন দুটোর ইঞ্জিন আর সামনের দিকের কোচগুলো দুমড়ে যায়, পেছনের কোচগুলোর কয়েকটা লাইন থেকে নেমে শূন্যে ঝুলতে থাকে। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ জন। দুর্ঘটনার খবরও প্রচার মাধ্যমে সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী আসে। কিন্তু ইন্টারনেটে এই ঘটনা নিয়ে ভিডিও, ছবি আর খবর চলে আসায় বিশ্বব্যাপী চীনাদের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া হয় অন্য রকম। চীনে ফেসবুক, গুগল প্লাস বা অর্কুটের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্ক; ইউটিউব, ডেইলিমোশানের মতো ভিডিও নেটওয়ার্ক; টুইটারের মতো মাইক্রোব্লগ; ফ্লিকারের মতো ফটোব্লগ সবই নিষিদ্ধ। তাই ব্যক্তিগত মেইল, এখনো নিষিদ্ধ হয়নি এমন ব্লগ, মাইক্রোব্লগ, ফটোব্লগে ভিডিও, ছবি আর খবরের শেয়ারিং চলতে থাকে। মিডিয়ার এই কঠোর নিয়ন্ত্রণকে পাশ কাটিয়ে সত্যকে জানানোর জন্য সাধারণ মানুষের যে বহুমূখী প্রচেষ্টা তাতে আমি সাদা সাপের ঝিলিক দেখতে পাই।

মধ্যত্রিশের নারী লিয়াঙ একটা কারখানার রপ্তানী বিভাগে কাজ করেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে, দুপুর বা সন্ধ্যার খাবারের সময় তার সাথে চীনের জনজীবন নিয়ে কথা হয়। লিয়াঙ তার সাড়ে তিন বছর বয়সী কন্যাকে একটা সাধারণ মানের প্রাইভেট স্কুলে প্রি-স্কুল পর্যায়ের ক্লাশে পড়তে পাঠিয়েছেন। কন্যার স্কুলের বার্ষিক ব্যয় প্রায় তিন হাজার মার্কিন ডলার। ব্যয়ের অঙ্ক শুনে আমি আঁতকে উঠি, জিজ্ঞেস করি সরকারী স্কুলের ব্যয় কেমন? জানা যায় সরকারী স্কুলের মান খুবই খারাপ, তাই ব্যয় সাশ্রয়ী হলেও পিতা-মাতার নূন্যতম সামর্থ থাকলে তারা সন্তানদের সরকারী স্কুলে পাঠাতে চান না। ঊচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যয়ভারটা তাহলে কোথায় গিয়ে ঠেক্‌ছে? আমি ভাবি, তাহলে গণচীনের গ্রামগুলিতে বা পশ্চাতপদ প্রদেশগুলোতে শিক্ষার অবস্থা কী? তাহলে মানসম্পন্ন শিক্ষা কি গণচীনে এখন সুযোগে পরিণত হয়েছে, অধিকার নয়! আরো জানতে পারলাম যে, গ্রীষ্মকালে বা শীতকালে স্কুল একটু লম্বা সময়ের জন্য ছুটি হলে সেসময় ইংরেজী বা গণিতের মতো বিষয় পড়ানোর জন্য রাতারাতি কোচিং সেন্টার গড়ে ওঠে। তাদের ব্যবসা জমজমাট। সেসব কোচিং সেন্টারের ফি’ও অনেক চড়া। এই ক্ষেত্রে আমি কালসাপের ফোঁস ফোঁসানি শুনতে পাই।

লিয়াঙের এক বন্ধু তাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলেন - সে কি একজন দুস্থ নারীকে সাহায্য করতে পারবে কিনা। বন্ধুটি জানায়, সে এক দোকানে খাবার কিনতে গেলে ঐ নারীটির সাথে দেখা হয়। নারীটি কিছু জামা-কাপড় কেনার জন্য তার কাছে অর্থ সাহায্য প্রার্থনা করেন। জানা যায় ঐ নারী বেকার, তার স্বামীও বেকার এবং মাতাল। তাছাড়া স্বামীপ্রবর প্রায়ই তাকে মারধোর করে থাকে। মারধোরের খবর পুলিশ জানলে স্বামীটিকে হয়তো জেল খাটতে হবে। তখন স্ত্রীটিকেই আবার দৌড়াদৌড়ি করে তাকে ছাড়াতে হবে। তাই নিরব পারিবারিক নির্যাতন চলতে থাকে। লিয়াঙ তাদের জন্য কিছু টাকা পাঠান, তবে সবাই জানেন এটা সমাধান নয়। মন্দা কালে বেকার পরিবারগুলোকে মাসিক সহায়তা দেবার সরকারী উদ্যোগ সম্ভবত অপ্রতুল। তাছাড়া বিকল্প কর্মসংস্থানের চেষ্টা করার বদলে ভিক্ষাবৃত্তির চেষ্টা, রাষ্ট্রের এই ব্যাপারে নতুন উদ্যোগ গ্রহন না করা এবং নিরব পারিবারিক নির্যাতনের কথায় আমি কালসাপের গর্জন শুনতে পাই।

গত কয়েক বছরে গণচীনের সমৃদ্ধ প্রদেশ ও শহরগুলোতে জমি ও ফ্ল্যাটের মূল্য জোরেশোরে বাড়ছে। এই মূল্যবৃদ্ধি এখন অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষদের মধ্যে জমির চাইতে তৈরি ফ্ল্যাটবাড়িতে আগ্রহ বেশি। কিন্তু নির্মাণ শ্রমিকের ঘাটতির দরুণ নির্মাণ ব্যয় দিন দিন বেড়ে চলেছে। ত্রিশের নিচে বয়স এমন যুবকরা এখন আর নির্মাণ কাজের মতো শারিরীক পরিশ্রম করতে নারাজ। তারা অফিসের ভেতর চেয়ারে বসে করতে হয় এমন কাজের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। তাই নির্মাণ শ্রমিকের দিনমজুরী বাড়লেও শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। এই ঘাটতি হয়তো অপেক্ষাকৃত দরিদ্র প্রদেশগুলো থেকে শ্রমিক এনে মেটানো হবে। তবে আরো বিশ-ত্রিশ বছরের মধ্যে গণচীনকে হয়তো বাইরে থেকে এধরনের শ্রমিক আমদানী করতে হবে। অন্তত দেড় বিলিয়ন লোকের দেশ কোনো পর্যায়ে শ্রমিক আমদানী করার অবস্থায় যেতে থাকার এই প্রবনতাটি শুভ কিনা আমি ঠিক বুঝতে পারি না। একটা সাপ আবছা দেখতে পাই, তবে সেটা সাদা সাপ নাকি কালসাপ ঠিক বুঝতে পারি না।

মধ্য-কুড়ির কন্যা কাই কারখানায় কাজের পাশাপাশি কমিউনিস্ট পার্টির যুব শাখার কর্মী হিসাবে নিজ কারখানা ও আশে-পাশের এলাকায় পার্টির কাজ করেন। পরিহাসচ্ছলে আমি তাকে বলি, “আজ থেকে চল্লিশ বা পঞ্চাশ বছর পর তোমাকে কি চীনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে পাবো”?
কাই হেসে বলেন, “সেটা হওয়া কি খুব ভালো ব্যাপার”?
- কেন নয়?
- দেখো চীনের কেন্দ্রে যারা আছেন তারা নিঃসন্দেহে চমৎকার মানুষ। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্বের সবাই ভালো নন্‌। পত্রপত্রিকায় তুমি প্রায়ই বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতির কথা জানতে পারবে।
- হ্যাঁ, আমি একবার টেলিভিশনে দেখেছি দুর্নীতির দায়ে পুলিশের এক কর্তার মৃত্যুদন্ড হতে।
- শুধু পুলিশই না। স্থানীয় পর্যায়ের সরকারী অফিসগুলোতে দেখবে লোকজন এমনিতে কাজ করতেই চায় না। সারা দিন ধরে তারা খবরের কাগজ পড়ে, ফোনে কথা বলে আর নিজেদের মধ্য গল্পগুজব করে। এর মধ্যে চা পান আর ধুমপান তো লেগেই আছে।
চীনের সরকারী অফিসের চিত্র জানতে পেরে আমি অবাক হইনা। আমাদের দেশে এমন দৃশ্য আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি; আমাদের পৌত্র-প্রপৌত্ররাও তাদের আমৃত্যু এই দৃশ্য দেখে যাবে। কে জানে দুনিয়াভর সরকারী অফিসের চিত্রটা হয়তো কম-বেশি এরকমই! দুর্নীতির গল্পগুলোও হয়তো একই রকম।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য বের হওয়া কন্যা সিশি স্বাভাবিকভাবেই ছটফটে, প্রাণচঞ্চল। কাজের মাঝে মাঝেই প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক নানা প্রশ্ন করে। একবার তার প্রশ্ন,
- পাণ্ডব, তুমি কি ভারতীয় মুভি দেখেছো?
বুঝলাম সে হিন্দী ছবির কথা বোঝাচ্ছে।
- হ্যাঁ, অনেক দেখেছি।
- আমিও অনেক দেখেছি, ইংরেজী বা চীনা ভাষায়। সেখানে কিছু কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী আমার খুব পছন্দ, কিন্তু তাদের নাম বলতে পারবো না।
- তুমি মুভির নাম বলো, আমি অভিনেতা-অভিনেত্রীর নাম জানিয়ে দেবার চেষ্টা করছি।
- মুভিগুলোর মূল নাম আমি জানি না, চীনা নাম জানি।
- তাহলে একটু একটু করে কাহিনী বলো, তাহলে হয়তো কোনো কোনোটার নাম বলতে পারবো।
সিশি কাহিনী বলতে থাকে আর আমি সেখান থেকে কিছু কিছু মুভির নাম উদ্ধার করি। ইন্টারনেট থেকে আমি সেসব মুভির পোস্টার দেখাই আর সে সেখান থেকে তার পছন্দের অভিনেতা-অভিনেত্রীকে দেখায়। এভাবে তার পছন্দের তালিকায় যোগ হয় আমির খান, শাহরুখ খান, কারিনা কাপুর, জিয়া খান আর ইন্দিরা ভার্মার নাম। হঠাৎ সে বলে, “তুমি দেখেছো ভারতের সব অভিনেত্রীরই চুল লম্বা, চোখ বড় বড়”। পরে আমার পরিবার আর বন্ধু-বান্ধবদের ছবি দেখতে দেখতে সে মন খারাপের সুরে বলে, “তোমাদের দেশের মেয়েদেরও তো দেখি চুল লম্বা আর চোখ বড় বড়”! সিশি কে কী বলবো আমি বুঝে পাই না।

প্রত্যেক জাতির মানুষ তাদের নিজস্ব নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সৌন্দর্য খুঁজে পান। তাই অন্য জাতির মানুষের চোখে তাদের সৌন্দর্য পুরোপুরি ধরা না পড়লেও তাদের চোখে নিজেদের সৌন্দর্যটা ঠিকই ধরা পড়ে। চীনের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী হানদের চোখ ছোট হয়, চুল কালো রঙের হয়। এটা নিয়ে কোন চীনাকে কখনো আফসোস করতে শুনিনি। কিন্তু পত্রিকায়, টেলিভিশনে বা বিলবোর্ডে রঙ ফর্সাকারী ক্রিম; চুলের রঙ বদলানোর ডাই এমন সব পণ্যের বিজ্ঞাপনের বহর দেখলে ধারণা হয় যে তাদের কারো কারো মধ্যে গায়ের বর্ণ, চোখের আকার-আকৃতি, চুলের রঙ এগুলো নিয়ে যে বিস্তর ক্ষোভ আছে। দৈহিক নানা পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন রকমের যন্ত্রপাতির ব্যবহার আর নানা রকমের শল্যচিকিৎসার প্রচারণাও এখানে আছে। বোঝা যায় এসবের বাজারটাও কম নয়। তাই নারীর জন্য অবমাননাকর ও বুর্জোয়াঁ সংস্কৃতি বলে বিবেচিত বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার উপর থেকে ৫৪ বছরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ২০০৩ সালে গনণচীন নিজেই হোস্ট হয়ে বসে। ২০০৪ সালে “মিস প্লাস্টিক সার্জারি” প্রতিযোগীতার এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের সেরা সুন্দরীর মুকুটও একজন চীনা নারীর মাথায় ওঠে। প্লাস্টিক সার্জারী করে নিজস্ব নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য লুপ্ত করে সুন্দরী হবার প্রবল চেষ্টা আজকের চীনে তাই নতুন কিছু না। রাস্তা-ঘাটে তাই হরহামেশা সোনালী বা লাল রঙা চুলের চীনা তরুণ-তরুণীর দেখা মেলে। নিজেদের সৌন্দর্য নিয়ে এই আফসোসটি তৈরি করার অবদান পুরোপুরিই আগে বলা ঐসব পণ্যের উৎপাদকদের। এটি কোনো শুভ লক্ষণ নয়। তরুণ-যুবারা যদি তাদের আয়ের বড় অংশ নিয়মিতভাবে চুল রঙ করতে, রঙ ফর্সা করতে বা কসমেটিক সার্জারী করতে ব্যয় করে ফেলে তাহলে তারা নিশ্চিতভাবেই অভাবে পড়বে। আর অভাবে স্বভাব নষ্ট এ’কথা কে না জানে। বাংলাদেশ-ভারতের মেয়েদের চোখ আর চুল নিয়ে সিশির আফসোস শুনলে, রাস্তায় সোনালী চুলো চীনা তরুণ-তরুণী দেখলে বা চীনা টেলিভিশনে ঐসব পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখলে আমি কালসাপের লেজ নাড়ানোই দেখতে পাই।

কারখানাতে পণ্যের কার্টনের গায়ে “হনুমান” নামের ব্রান্ড দেখে আমি উঈ স্যুনকে জিজ্ঞেস করি,
- তোমরা ভারতেও রফতানী করছো নাকি?
- নাতো! কিন্তু এ’কথা জিজ্ঞেস করছো কেনো?
- না “হনুমান” ব্রান্ডের পণ্য ভারতে চলার কথা, নয়তো ইন্দোনেশিয়ায়।
- ঠিক! এগুলো ইন্দোনেশিয়ার বাজারের জন্যই, কিন্তু তুমি বুঝলে কী করে?
- হনুমান একজন ভারতীয় দেবতা, ইন্দোনেশিয়াতেও সে ব্যাপক পরিচিত। ব্যাপক ক্ষমতাসম্পন্ন একজন বানর, অনেকটা চীনের স্যুন উখোঙ-এর মতো।
আমার মুখে স্যুন উখোঙের কথা শুনে উঈ স্যুনের মুখ হাঁ হয়ে গেলো। অবাক কণ্ঠে বললো,
- তুমি স্যুন উখোঙের কথা জানলে কী করে? জানো, আমার পারিবারিক পদবীও স্যুন!
- সে অনেক লম্বা কথা। এক কালে গণচীনের সরকার তৃতীয় দুনিয়ার মানুষদের কাছে, বিশেষত সেসব দেশের ছোটদের কাছে চীনের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির কথা তুলে ধরার জন্য তাদের ভাষায় সুন্দর সুন্দর বই বের করতো। স্যুন উখোঙকে সেভাবে চিনি। শুধু তাই নয়, ওভাবে ল্যু স্যুন, লি বাই, দু ফু’র লেখা পড়তে পেয়েছি। ক্যুঙ ফু চি আর লাও চে’র দর্শনের কথা শুনেছি। সুয়াঙ চ্যুয়ান আর ফা শিয়েনের আমাদের দেশ ভ্রমণের কথা জেনেছি।
চীনা সাহিত্যের সাবেক ছাত্র উঈ স্যুনের বিস্ময়ের ঘোর কাটেনা,
- তুমি ল্যু স্যুনের লেখা পড়েছো?
- শুধু পড়িনি, তাঁর চার-পাঁচটা ছোট ছোট লেখা ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদও করেছি।
- দেখো ল্যু স্যুন কতো বড় মাপের সাহিত্যিক অথচ উনি নোবেল প্রাইজ পেলেন না। পেলেন কিনা গাও শিঙজিয়ান!
- এতে কিছু যায় আসে না। যারা ল্যু স্যুন পড়েছেন তারা সবাই জানেন উনি কতো মহান সাহিত্যিক। তবে দুঃখের কথা কী জানো? গণচীন সরকার অনেক দিন হয় অন্য ভাষায় চীনা সাহিত্য প্রকাশের কাজটি বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের মতো অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশের মানুষদের নিয়ে তাদের ভাবার সময়-সুযোগ বোধহয় আর নেই।

উঈ স্যুন চুপ করে থাকেন। তৃতীয় দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষদের জন্য ভালোবাসা আর ত্যাগের জন্য যে সাদা সাপেরা চীনের ক্ষমতায় ছিলেন তারা বোধহয় আর নেই। হয়তো তারা অনির্দিষ্ট কালের জন্য লেই ফেঙ বা জিনশানের মন্দিরের কুয়াতে আটকা পড়ে গেছেন। চীনের চারদিকে এখন দ্রুত টাকা কামাতে ও ক্ষমতা পেতে আগ্রহী শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান ঘটছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পার্টি ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় তাদের অংশগ্রহন বাড়ছে। কর্পোরেট-বুর্জোয়াঁ চরিত্রের সাথে চীনের ঐতিহ্যবাহী সামন্ততন্ত্রের মিশেল দেয়া এই শ্রেনীটির মাঝে সাদা সাপের গুণগুলো নেই। তাদের মাঝে কী আছে সে কথা নাহয় আরেকদিন বলা যাবে।


মন্তব্য

মন_মাঝি এর ছবি

হুম! তাহলে কি দেং শিয়াও পিং (?) ও চীনের পুজিবাদ বরনের আগের অবস্থাটাই ভাল ছিল ? চীনারা কি বলে ?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চীনের যাদের সাথে কাজ করতে হয়, মিশতে হয় তাদের বেশির ভাগের বয়স চল্লিশের নিচে। তাই তুলনামূলক পর্যবেক্ষণটা জানার সুযোগ হয়নি। তবে একটা কথা বলতে পারি, চীনাদের অনুর্ধ্ব চল্লিশের এই বিশাল জনগোষ্ঠী বাইরের পৃথিবীর কথা তাদের পূর্বসূরীদের চেয়ে বেশি জানেন। তাই তারা নিজেদের অবস্থা বাইরের উন্নত পৃথিবীর সাথে তুলনা করতে ভালোবাসেন। দুনিয়ার কয়েক ডজন দেশের চেয়ে চীনের অবস্থা যে খারাপ সেটা তারা জানেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কমেন্ট এর ছবি

এ ধরণের লেখা ভালো লাগে। ধন্যবাদ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পোস্ট পড়া ও মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কমেন্ট এর ছবি

এ ধরণের লেখা ভালো লাগে। ধন্যবাদ।

দুর্দান্ত এর ছবি

পুঁটিমাছকে মিষ্টি কথা শোননোর দিন 'বাঘে খাইছে'। ও-ই-সি-ডির রুই কাতলারাই যেখানে নিজের গাঁইটের পয়সা খরচা করে শহরে শহরে কনফুসিয়াস সেন্টার খুলে সেখানে চীনচর্চা শুরু করছে, সেখানে চীনের মিঠে কথার আর কি প্রয়োজন? এশিয়া, লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকায় চীনা 'মফকম' ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে ইউনিসেফ, কেয়ার
আর অক্সফামকে।

হাওয়াই মিঠাই ছবি-বই আন্ডারডগের হাতিয়ার। চীনের আন্ডারডগত্ব ফুরিয়েছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। পুঁটিমাছকে মিষ্টি কথা শোনানোর ব্যাপারে আমার কিঞ্চিত দ্বিমত আছে। গণচীন কিন্তু ষাটের দশক থেকেই বাইরের ব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপ, সরাসরি বিপ্লব রফতানী এগুলো থেকে বিরত থেকেছে। তখন শাসনক্ষমতায় কিছু ভালো মানুষ সত্যি ছিলেন যারা বিপ্লবের হাঁটা পথে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তারা সত্যিই তৃতীয় দুনিয়ার মানুষদের ব্যাপারে তাদের কিছু করণীয় আছে বলে ভাবতেন। তারপর কী হলো সেটা সবার জানা।

২। গণচীন কিন্তু OECD-তে নেই। OECD গঠিত হয়েছিলো পুঁজিবাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এবং সম্ভাব্য জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব ঠেকানোর জন্য। তাদের চীনচর্চার পেছনে কী উদ্দেশ্য কাজ করছে সেটা খতিয়ে দেখা দরকার আছে।

৩। MOFCOM আফ্রিকায় আসলে কী করছে সেটা কী করছে সেটা আরো তিন বছর আগে এই পোস্টটাতে বলেছিলাম। আজকে সদ্য স্বাধীন দক্ষিণ সুদানের তেলের ৪০% মালিকানা গণচীনের, ৩০% ভারতের, ২৫% মালয়েশিয়ার আর ৫% দক্ষিণ সুদানের। আর কোনো ব্যাখ্যার দরকার আছে বলে মনে হয় না।

৪। এক মেরুর বিশ্বে লড়াই চালাতে গেলে কাউকে না কাউকে প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করাতে তো হবেই। তবে সে কারণে নয়; আজকে গণচীন, জাপান বা ভারত যে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা অদূর ভবিষ্যতে দুনিয়াজোড়া এশিয় শক্তিদের শক্তি প্রদর্শনের পূর্বাভাষ দেয়। নয়া ঔপনিবেশিক শক্তি হিসাবে এশিয়দের আর উপেক্ষা করার উপায় নেই। চীন, জাপান বা ভারত কেউই আর আন্ডারডগ নয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

সাদা আর কালোসাপে মিশে যাচ্ছে চীনারা। আর আমাদের তো বেশির ভাগই কালো সাপের ফণা দেখি! এবং পরিবর্তনের কোন চিহ্নও দেখি না!!! মন খারাপ

খুব সুন্দর গুছিয়ে লেখেন পাণ্ডবদা, পরের পর্বে মধ্যবিত্ত শ্রেণিটির কথা শোনার অপেক্ষায় রইলাম!!!


_____________________
Give Her Freedom!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সাদা সাপ আর কালসাপ সব জায়গাতেই আছে। তবে কারা বেশি শক্তি সঞ্চয় করছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

গণচীনের মধ্যবিত্ত শ্রেণী নিয়ে লেখার ইচ্ছা অনেকদিন ধরেই, তবে কবে শেষ করতে পারবো জানি না।

পোস্ট পড়া ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রেজ এর ছবি

আপনার চীন সম্পর্কিত প্রতিটি লেখায় গোগ্রাসে গিলি। দীর্ঘদিন ধরে চীনে প্রবাসী শিল্পী রশীদ আমিনের লেখাগুলাতেও চীন সম্পর্কিত অনেক তথ্য পাওয়া যায়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ রেজ। শিল্পী রশীদ আমিনের লেখার লিঙ্কের জন্য আবারো ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

সাম্প্রতিক চীন্দেশ ভ্রমণের খবর জানার পর থেকেই এই লেখার আশায় ছিলাম! কালোসাপ এখন অনেক স্বর্গভূমি-স্বর্ণভূমিতেই মাথা উঠিয়েছে, অবাক হই না আর।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মাঝে মাঝেই এই সিরিজটা লেখার ইচ্ছে হয়। কিছু দূর লিখিও, কিন্তু শেষ আর করতে পারি না। তাই পোস্ট করাও হয় না। এবারের ভ্রমণের পর ভাবলাম অনেক দিন তো হলো, এবার আর একটা পর্ব অন্তত শেষ করি।

নিজের দেশ ছাড়া কোনো স্বর্গভূমি বা স্বর্ণভূমি দেখার সুযোগ হয়নি এখনো। তবে জানি কালসাপ সর্বত্রই আছে। গণচীনের অনেক ক্ষেত্রের অনেক গভীরে কালসাপের বাস শুরু হয়েছে অনেক আগেই - সে খবরও জানা ছিলো। তবু কিছু কিছু ঘটনা দেখলে খারাপ লাগে। গত দশ-এগারো বছরে নিজের চোখে দেখা অধঃপতনগুলো কষ্ট দেয় - সেগুলোর কথাই বলি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফকির লালন এর ছবি

দেং ই তো সম্ভবত বলেছিলো যে বিড়াল কালো না সাদা তা দেখার দরকার নেই, ইঁদুর ধরলেই হলো। তা চীনের সমাজতন্ত্রকে আসলে জাতীয়তাবাদি মুক্তিরই একটা নিজস্ব দেশীয় ভার্শন বলা যেতে পারে কিনা সে আলোচনার সময় এসেছে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনার পর্যবেক্ষণকে অস্বীকার করার কোনো উপায় দেখছি না। তবে এই জাতীয়তাবাদ কি চীনা জাতীয়তাবাদ নাকি হান জাতীয়তাবাদ সেটা নিয়েও আলোচনার দরকার আছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দুর্দান্ত এর ছবি

নৃতত্বনির্ভর জাতীয়তার বাইরে গিয়ে জাতীয়বাদচিন্তার চেষ্টা জিনহাই আন্দোলনের সময়েই ইয়াতসেন্সুনই যা একটু করেছিল, এর পরে কেউ কি সিরিয়াসলি করেছে? শুধু তিব্বত বা ক্যান্টন বা জিঞ্ঝিয়াং মানে যেখানে হান সংখ্যালঘু (ছিল), শুধু সেখানেই 'মিঞ্জু-মিঙ্কুয়ান-মিনশেং' বা 'ঝংহুয়া মিঞ্জু' প্রয়োগ করে হানের প্রাধান্য নিশ্চিত করা হয়েছে, বাদবাকী জায়গায় হান মানেই চীন, চীন মানেই হান।

সুইশেং ঝাও এর A nation state by construction বইটিতে আধুনিক চীনের জাতীয়তাবোধের একটি দৃষ্টীভংগী পাওয়া যেতে পারে। বইটার লিঙ্ক নেই। এখানে আর এখানে তার কিছু লেখা পড়ে দেখতে পারেন।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

স্যুন চঙশানের শিনহাই আন্দোলনের দৃশ্যত লক্ষ্য চিঙ রাজতন্ত্র উৎখাত হলেও সেটা এক অর্থে মাঞ্চুদের উৎখাত করে হানদের শাসন প্রতিষ্ঠা করাও বটে। এ'কথা আন্দোলনের নেতারা প্রকাশ্যেই বলতেন। এই আন্দোলনের প্রস্তুতি পর্বে ১৮৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত "দ্য রিভাইভ চায়না সোসাইটি" তাদের সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে এ'কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলো। তার আগে বা পরে কেউই বস্তুতঃ হান জাতীয়তাবাদের বদলে চীনা জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু করেনি। এই সিরিজের পঞ্চম পর্বে আমি এটা নিয়ে বলেছি। আমি এটাকে "নৃতাত্ত্বিক সাম্রাজ্যবাদ" বলা যায় কিনা সে প্রশ্ন তুলেছি। শিনজিয়াঙ (উইগ্যুর বা পূর্ব তুর্কীস্তান), শিঝ্যাঙ (তিব্বত), নেই মঙ্গোল (বহিঃ মঙ্গোলিয়া) সব জায়গাতেই ক্রমাগত ভাবে হুই, ম্যাঙ ও ৎস্যাঙরা ক্রমাগতভাবে সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার বর্ণনা। চীনের পুরো পরিবর্তনের ব্যাপারটা ধরতে চাইছি...(চীন নিয়ে আমার একই সাথে একধরণের আকর্ষণ এবং এলার্জি আছে।) সেই মধ্যবিত্ত শ্রেণীটির ব্যাপারে পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। মধ্যবিত্ত শ্রেণীটিকে নিয়ে লেখা একটু দুরূহ, তাই অনেক দিনের চেষ্টায়ও ঐ পর্বটা আগাতে পারছে না। নিজের চোখে দেখা আর নিজের কানে শোনা বিষয়গুলোকে ইন্টারপ্রেটেশনের সময় একটু যাচাই-বাছাই করতে হয়। নয়তো ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সম্ভাবনা থাকে। এসবের জন্য আরো দেরি হচ্ছে। দেখা যাক পর্বটা আদৌ শেষ করতে পারি কিনা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

ডুল্পি ঘ্যাচাং।

অপছন্দনীয় এর ছবি

হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

অসম্ভব ভালো লাগলো লেখাটা, পাঁচতারা দাগিয়েও শান্তি পেলুম না। একটা লেখার মধ্যে অনেক তথ্যের উপস্থাপনা।

শুনেছি চিনের ভিসা পাওয়া তেমন দুরুহ কিছু না। কিন্তু ট্রাই করা হয়নি সময়ের অভাবে। আপনার লেখা চিন ভ্রমণের আগ্রহ বাড়াচ্ছে। টিকেটের পয়সা শর্ট পড়লে কিন্তু শেষমেষ আপনাকেই ধরবো বলে রাখলুম।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। আগের পর্বগুলো পড়ে দেখতে পারেন।

ইদানিং বাংলাদেশীদের জন্য চীনের ভিসা পাওয়া একটু কঠিন হয়ে গেছে, তবে কিছুই অসম্ভব নয়। সময়-সুযোগ পেলে অবশ্যই চীন ঘুরে আসবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অদ্রোহ এর ছবি

কালো সাপের ফোঁসফোঁসামিটা তাহলে একটু বেশিই শোনা যাচ্ছে...এই পর্বে ভাবনার অনেক খোরাক পেলাম।

সিরিজ চলুক...

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। সিরিজ চালানোর ইচ্ছেটা আছে সবসময়, শুধু লেখা শেষ করতে পারি না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অসাধারণ অবজারভেশন! আপনার চোখে চীন দেখে সেখানে ঘুরতে যাবার আকাঙ্ক্ষা জাগে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। সময়-সুযোগ করতে পারলে অবশ্যই চীন দেখে আসবেন। তবে চীন এতো বড় একটা দেশ, তাই সেখানে যাবার আগেই আপনাকে ঠিক করে নিতে কোথায় কোথায় যাবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

সাদা-কালোসাপের গল্প আমি জানিনা। উপকথায় আমার আগ্রহ কম বলে হয়তো।ঃ

চীনের তিন ডাইনাস্টি নিয়ে একটা লেখা লিখবেন পাণ্ডব'দা?

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

উপকথার ব্যাপারে বেশিরভাগ মানুষেরই আগ্রহ কম। সে'কথা ভেবেই গল্পটা আর বিস্তারিত বলিনি।

এই সিরিজ তো আমি যা দেখেছি সে সব নিয়ে, তাই এখানে তো সেই আলোচনার সুযোগ নেই। আর চীনের ডায়নাস্টিগুলো নিয়ে লেখার যোগ্যতা বা ক্ষমতা আমার নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

লেখাটা দারুণ লাগলো। ভঙ্গীটা চমৎকার।

শিক্ষা ব্যবস্থার যে কথা বললেন আর বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যমের নিষিদ্ধতার কথা- এই বিষয়গুলো আপনার সরাসরি দর্শন করে কী মনে হচ্ছে- চীনের সাধারণ লোকেরা কি এ নিয়ে সন্তুষ্ট ?? তারা কি কোন ধরণের পরিবর্তন চায় ?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।

শিক্ষা ব্যবস্থার এই বৈষম্য আর গণমাধ্যমে কঠোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চীনারা সন্তুষ্ট হবার কারণ নেই। তবে এটা নিয়ে তারা উচ্চকণ্ঠও নয়। কিছুটা এই ব্যবস্থায় অভ্যস্ততার দরুণ, আর কিছুটা বিকল্প সংগঠনের উপায় নেই বলে। এর একটা পরোক্ষ বহিঃপ্রকাশ দেখেছি তাদের হতাশা প্রকাশে - যখন তারা শুনেছে যে, আমাদের দেশের যে কেউ চাইলেই যে কোনো দেশে শিক্ষা লাভের জন্য, চাকুরীর জন্য বা অভিভাসনের জন্য ভিসার আবেদন করতে পারি বা ভিসা পেলে সেখানে বিনা বাধায় চলেও যেতে পারি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

বেজিং থেকে লাসা ট্রেনে ডাইরেক্ট যাওয়া যায় ? বিদেশীদের লাসা যেতে দেয় কিনা জানেন ?

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

T27 ট্রেন দিয়ে পেইচিঙ থেকে লাসা যাওয়া যায়, একদিন বিশ ঘন্টার জার্নি। আপনার পাসপোর্ট বাংলাদেশের হলে আপনাকে লাসা যেতে যথেষ্ট হ্যাপা পোহাতে হবে। বিশেষ পারমিশন দরকার হবে। ভালো হয় আগে ঢাকায় চীনা দুতাবাসে কথা বলে নিলে। ঢাকা থেকে গেলে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সে ঢাকা-কুনমিঙ-লাসা যাওয়াটা সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মুস্তাফিজ এর ছবি

৩০ তারিখ যাচ্ছি। ২/১ রাত চায়নাতে থাকব, কুনমিং কিংবা সাংহাই এখনও ঠিক করিনাই।

আমাদের এদিকে রেলের প্রবর্তন বৃটিশ আমলে, এমনকি বৃটেনে রেল চালুর আগেই ভারতে সেটা চলেছে। সেসময় হয়তো খোলা টয়লেটই বাস্তব সম্মত আধুনিক ছিলো। একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন কীনা সেই আমলের পর নুতন কোন লাইন আমরা তৈরি করতে পারিনি, অথচ চিনের বেশির ভাগ রেললাইনই ইদানীং কালের।

...........................
Every Picture Tells a Story

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বস্‌ থাকতে হলে কুনমিঙ থাকুন। স্টোন ফরেস্ট আর দিয়ানচি লেক ঘুরে আসুন। সাঙহাইয়ের উঁচা উঁচা বিল্ডিং আর ম্যাগলেভ আপনার না দেখলেও চলবে।

আপনার পর্যবেক্ষণ সঠিক। বাংলাদেশে নতুন রেল লাইন না হলেও ভারতে হয়েছে। ভারতে রেল যোগাযোগে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তবু এই ব্যাপারটির পরিবর্তন হয়নি। সমস্যাটি বোধহয় মানসিকতায়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মুস্তাফিজ এর ছবি

স্টোন ফরেস্ট আর দাইচি লেক ঘুরে দেখেছি আগেই, দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।
২০০৮ সালে আহমেদাবাদে টয়লেট ব্যবহারের সময় এক গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত ঘটে এবং টয়লেটের গর্ত দিয়ে নীচে পড়ে যায়। এই ঘটনার পর ততকালীন ভারতীয় রেল মন্ত্রি (লালু) রেলে ইকো ফ্রেন্ডলী টয়লেট বসানোর ঘোষনা দিয়েছিলেন। জানিনা ওদের ওখানে বসেছে কীনা।
ভারতে রেল বসেছে ১৮৫৩ আর আমাদের এখানে ১৮৬২ সালে। ভারত ভাগের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আমাদের দেশে নুতন কোন লাইন বসেনি শুধুমাত্র টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা পর্যন্ত ব্রডগেজ লাইনটি ছাড়া। আর আমাদের এখানে আমদানী করা সব কোচই ভারতের মাদ্রাজে তৈরী, সুতরাং ওদের টয়লেট সম্পূর্ণ পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আশা করাটাই বোকামী।

...........................
Every Picture Tells a Story

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ওসব আপনি দেখে থাকলেও কুনমিঙের ধারে কাছে চোখ মেলে দেখার মতো জিনিস আছে। আর সাঙহাই কেবল বড় শহর।

আমাদের দেশে রেল লাইনের দৈর্ঘ্য কমেছে। কারণ, অনেক লাইন বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের রেলের অবস্থা এতোটাই খারাপ যে এটাকে নিয়ে আলোচনা করেও লাভ নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

আমাদের রেলের অবস্থা এতোটাই খারাপ যে এটাকে নিয়ে আলোচনা করেও লাভ নেই।

তাও করেন। খুব জরুরি।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

guest_writer এর ছবি

আপনার পোস্টটা অসম্ভব ভালো লাগ্ল। পরের কিস্তির অপেক্কায় রইলাম।

-দহন বেলা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। পরের পর্ব কবে আসবে নিশ্চিত নই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

এমন গদ্য পড়তে ভালো লাগে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কৌস্তুভ এর ছবি

এই সিরিজটায় অনেকদিন বাদে হাত দিলেন। পর্বটা হয়েছে কিন্তু চমৎকার।

একটা প্রশ্ন, ওই মহিলার বেকার স্বামী তাকে পেটানোর দায়ে গ্রেপ্তার হলে মহিলারই লোকটাকে ছাড়িয়ে আনার কী দায় পড়েছে?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ।

আপনার প্রশ্নের উত্তরটা জানতে হলে যখন দেশে ফিরবেন তখন নিম্নবিত্ত বা স্বল্প শিক্ষিত পরিবারের কোন বিবাহিতা নারীকে এই প্রশ্নটা করবেন। ঠিক উত্তরটা পেয়ে যাবেন। এই ক্ষেত্রে ভারত বলুন, বাংলাদেশ বলুন আর গণচীনই বলুন - অবস্থার খুব বেশি পার্থক্য তৈরি হয়নি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কৌস্তুভ এর ছবি

সে তো অনেক দেরি, এখন আপনিই বুঝিয়ে দিন না...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বউয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বামীকে জেলে যেতে হলে কতগুলি ঘটনা ঘটবেঃ

১. অনেকেই বলবে, "না হয় মাতাল অবস্থায় জামাই একটু মেরেছে, তাই বলে জামাইকে পুলিশে দেবে? এখানে নিশ্চয়ই অন্য ঘটনা আছে। মেয়েটার চরিত্র মনে হয় সুবিধার না"।
২. মেয়েটা একটু সামাজিক চাপে পড়বে, বাচ্চাগুলো bullying -এর শিকার হবে।
৩. মেয়েটা একটু সামাজিক অনিরাপত্তায় পড়বে, তার ব্যাপারে অত্যুৎসাহী লোকেদের আনাগোনা বাড়বে।
৪. পুলিশ তার কাছে ঘন ঘন যাতায়ত শুরু করবে।

আপাততঃ এই বাহ্যিক কারণগুলো মনে পড়ছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

চলুক

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

অ-নে-ক দিন পরে!!
দারুণ লাগলো পড়তে। আমাদেরকে কিন্তু ২০০৪-এ বেইজিং এ বলেছিলো ট্যাক্সিওয়ালাদের সাথে দরদামের খেয়াল রাখতে। ট্রেইনে চড়া হয় নাই। মন খারাপ
কমুনিস্ট কেন্দ্রীয় সরকারের রীতিনীতি পুরানো চীনাদের অনেকেই ভালো পান না এইটা বলতে পারি, পারিবারিক অভিজ্ঞতা থেকে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক রিলোকেশনের জন্যে উচ্চশিক্ষিত মা-কে গ্রামে কাজ করতে পাঠানো, আর বাবাকে পোস্ট আপিসের দায়িত্ব দেয়া মানুষের সাথে আলাপ থেকে। কিন্তু চীনারা ভীষণভাবে নিজেদেরকে সবথেকে চৌকস আর সঠিক মনে করতে ভালোবাসেন, আর নিজেদের আভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে আলাপ করতে চান না বলে মনে হয়েছে দেখে এই ব্যাপারে বিশেষ আলোচনা এগুয়নি। ওদের নতুন জেনেরারেশনের মাঝেও নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাইবার আগ্রহ প্রবল মনে হয়েছে। তবে ইংরেজী জানা পিচ্চি মেয়ের কারণে আধুনিক বাবা-মা গর্বে আধ-হাত বুক ফুলিয়ে ঘুরছেন তাও দেখেছি। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। বড় শহরে বাটপার টাইপ ট্যাক্সি ড্রাইভার অনেক আগে থেকেই ছিলো। তবে আমাকে যেসব গ্রামে-গঞ্জে কাজ করতে হয় সেসব জায়গায় গত বছরও এতো খারাপ অবস্থা দেখিনি। পুরনো মানুষ বা নতুন মানুষ বলে হের-ফের নেই; কেন্দ্রিয় সরকারের কোনো নীতি কারু ব্যক্তিগত ইন্টারেস্টের বিরুদ্ধে গেলে সে ক্ষুদ্ধ হতেই পারে। দুনিয়ার বেশির ভাগ দেশের মানুষ নিজেদের কিছু কিছু ব্যাপারে অত্যন্ত উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে সেটা একেবারে irrational হয়ে যায়। আমাদের দেশের সিস্টেমের জন্য আমরা জানি বা বুঝি এমন অনেক কিছুই চীনারা জানেন না। তাই তারা সেসব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে কথা বলতে পারেন না।

ট্রেনে ওঠার জন্য প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছি। আমার সীট একেবারে শেষের দিকের কোচে, সেখানে লোকজন কম। এক বাবা সাথে আট/নয় বছরের কন্যা। বাবা কন্যাকে ঠেলছেন আমার সাথে ইংরেজীতে কথা বলার জন্য। মেয়ে মোটেই রাজী না, লজ্জায় বাবার পিছনে লুকাচ্ছে। মেয়ে যে ইংরেজী জানে সেজন্য বাবার গর্বটা বোঝা যাচ্ছিলো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ওইসব বই থেকে চীনকে কিছু কিছু জানতাম আগে
এখন আপনার বই থেকে চীনের ভক্তকে পরিণত হচ্ছি

০২

লেখাটা দুর্দান্ত আর কঠিন বিষয়কে সহজ করে উপস্থাপন করায় আপনার ক্ষমতাও

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

চীনের কিছু কিছু বিষয়ে ভক্ত না হয়ে উপায় নেই, কিছু কিছু বিষয়ে টুপিখোলা শ্রদ্ধা জানাতে হয়, আর কিছু বিষয় নিয়ে মন খারাপ হয়।

কঠিন বিষয় নিয়ে লেখার ক্ষমতা নেই। দেখে-শুনে যা বুঝি তাই লেখার চেষ্টা করি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আশালতা এর ছবি

ইশশ এই লেখা মিস করে গেছি ! সাদা-কালোসাপের গল্প আমি জানিনা। জানতে ইচ্ছে করছে। লেখা যে মারকুটে হয়েছে তা তো সবাই বলেই দিয়েছেন। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। সাদা সাপের গল্প জানতে ইন্টারনেটে একটু খুটখাট করুন, গুগল কাকা এর অনেকগুলো ভার্সান হাজির করে দেবে (লিখুন "Legend of White Snake")।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

অবশেষে পড়লাম। চমৎকার লাগলো। কোন একটা পর্বে জিও-ইকোনো-পলিটিক্যাল বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার অনুরোধ রইল। কিংবা, এর আগের কোন পর্বে আলোচনা করে থাকলে দয়া করে জানাবেন।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ধন্যবাদ। আমি আসলে নিজের চোখে দেখে, বন্ধু/সহকর্মী/পাশের জনের কাছ থেকে শুনে, মাঝে-মধ্যে চীনের টিভি দেখে বা দৈনিক পত্রিকা পড়ে যা বুঝি সেটাই লেখার চেষ্টা করি। একটু জটিল বিষয়গুলো নিয়ে চীনাদের সাথে আলাপ করতে পারি না ভাষাগত ব্যবধানের জন্য। ইংরেজী জানেন এমন দাবী করা একটা বড় অংশ চীনাদের ইংরেজীর মান আমাদের চেয়ে খারাপ। আর আমি ম্যান্ডারিন একেবারেই জানি না। এজন্য ভূ-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে সাধারণ চীনাদের মতামত আমার পক্ষে জানানো সম্ভব নয়। আর এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞের মত যদি বলেন, তাহলে নির্দ্বিধায় বলতে পারি সেই এলেম আমার নেই। কখনো সময় পেলে আগের পর্বগুলো পড়বেন, হয়তো ছিঁটে-ফোঁটা কিছু পেতেও পারেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রামগরুড় এর ছবি

পুরানো লেখা দেখি। আহ, সেই শৈশবের সুং উখং এর কথা মনে করায় দিলেন, নস্টালজিক হয়ে গেলাম। পরবর্তীতে জেনেছিলাম সুং উখং এর কাহিনী আবর্তীত হয়েছিল হিউয়েন সাং-এর (সুং উখং এর গুরু "যুয়ান-ঝাং"ই হলেন হিউয়েন সাং) ভারতীয় উপমহাদেশ ভ্রমণের উপর ভিত্তি করে। হিউয়েন সাং উত্তর বঙ্গে কিছুদিন সময়ও কাটিয়েছিলেন সেই সময় (বগুড়া আর নওগাঁ এলাকায়) -- এসব জেনে আপ্লুত হইতাম (আমিও উত্তরবঙ্গেরই কিনা, হে হে)।

-- রামগরূড়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।