ঈশ্বর সপ্তাহে একদিন ছুটি কাটাইয়া থাকেন। বাকি ছয়দিন হুলুস্থুলু অফিস করেন। সারা ব্রহ্মাণ্ডের কার্যাদি সাধন করিয়া বেড়াইতে হয়। কোন ছায়াপথে কোন নক্ষত্রকে ঘিরিয়া কোন গ্রহ লাট খাইতে খাইতে নিজের উপগ্রহসমূহকে ঘুরাইয়া মারিবে, তাহা পদে পদে নির্ধারণ করিয়া দেন। কোন ব্যাং কোন দাদুরীর সহিত সঙ্গম করিয়া কোন পাতার নিচে ডিম্ব পাহারায় নিযুক্ত হইবে, তাহাও তাকেই বাছিয়া দিতে হয়। পান হইতে চুন খসিলেই সব আউলাইয়া যাইবে।
কিন্তু ছয়দিন অফিস করিয়া ঈশ্বরের পোষায় না। তিনি দীর্ঘদিন যাবত হলিডে কাটান না। লোকে ছুটিতে কক্সবাজার যায়, ব্যাংকক যায়, ফুকেট যায়, বিচিত্র সব মাসাজ উপভোগ করিয়া চনমনা হইয়া বাটী ফেরে, আর তিনি বসিয়া বসিয়া জগতসংসারের সুতার গিটঠু পাকাইতেছেন আর ছাড়াইতেছেন। কোনো বিনোদন নাই।
ঈশ্বর স্থির করিলেন, তিনিও হলিডে মারিবেন এক চক্কর। ব্যাংককে গিয়া উপর্যুপরি ফূর্তি মারিবেন। ফূর্তির চোটে বুড়া হাড্ডিতে চোট পাইলে বুমরুনগ্রাদে চিকিৎসা করাইয়া আসিবেন।
ঈশ্বর আনমনে একটি গামছায় প্রয়োজনীয় টুকিটাকি ভরিতে ভরিতে মোবাইল মারিয়া গিবরিলকে তলব করিলেন। গিবরিল আসিয়া সেলাম ঠুকিল।
একটি নিমের ডাল, আধা শিশি খাঁটি সর্ষপতৈল, কয়েকটি কানকাঠি, মেষচর্মের কনডম প্রভৃতি কাজের জিনিস গামছায় পুঁটুলি বাঁধিতে বাঁধিতে ঈশ্বর কহিলেন, "তা গিবরিল, ডাইনোসরগুলি কেমন আছে?"
গিবরিল কহিল, "তারা আনন্দে আছে জাঁহাপন। কেহ পানিতে সাঁতার কাটিতেছে, কেহ আকাশে উড়িতেছে, বাকিরা জমিনেই দাপাদাপি করিয়া অস্থির।"
ঈশ্বর খুশি খুশি গলায় কহিলেন, "বিস্তর বিবর্তন ঘটিতেছে শুনিলাম?"
গিবরিল কহিল, "হাঁ। বিবর্তিত হইয়া তাহারা পৃথিবীর তাবত ফুটাফাটা দখল করিয়া বসিয়াছে।"
ঈশ্বর কহিলেন, "গুড! ভারি কাজের জিনিস এই বিবর্তন! যাই হউক, আমি একটু হলিডে মারিয়া আসি। তোমরা নন্দন কাননকে দেখিয়া শুনিয়া রাখো। গণ্ডগোল করিও না। আর আদম কোনরূপ বেচাল ঘটাইলেই তাহার কানশা বরাবর একটি প্রকাণ্ড থাবড়া মারিয়া বসাইয়া দিবে ... হতভাগা একখানা!"
গিবরিল ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া কহিল, "আপনি হলিডেতে গেলে জগত সংসার চালাইবে কে?"
ঈশ্বর কহিলেন, "কেন, শাজাহানিল?"
গিবরিল আঁতকাইয়া উঠিয়া কহিল, "শাজাহানিল কি জগতসংসার চালাইতে পারিবে? উহার কি লাইসেন্স আছে?"
ঈশ্বর কহিলেন, "আহা, হিংসুক প্রবৃত্তি দূর কর গিবরিল। শাজাহানিল আমার মহল্লার স্বর্গদূত, উহাকে বিলক্ষণ চিনি।"
গিবরিল ভ্যানভ্যান করিতে লাগিল, "শাজাহানিল তো আনপড় একখানা! ও চালাইবে জগতসংসার?"
ঈশ্বর কহিলেন, "শোনো, এত লেখাপড়া দিয়া কী হইবে? তাছাড়া শাজাহানিল সিগনাল চিনে, গবাদি ও ছাগাদি পশুও চিনে, আদম আর ঈভকেও চিনে অল্পবিস্তর। দুশ্চিন্তা করিও না। উহাকে লাইসেন্স দিয়া গেলাম।"
ঈশ্বর কাঁধে পুঁটুলি ঝুলাইয়া ব্যাংকক অভিমুখে যাত্রা শুরু করিলেন।
শাজাহানিল হাসিমুখে জগত সংসারের দায়িত্ব গ্রহণ করিল।
সে পঁয়ষট্টি মিলিয়ন বৎসর আগের কথা।
মন্তব্য
মুখা ইজ ব্যাক!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
কিন্তু মাঝের ছয়টা আদমচরিত গেল কই? শাজাহানিলকেই কি ছয়শো কোটি টাকার হিসাব করিতে ধরিব?
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
উরেস্লা! চরম হৈছে!
আদমচরিত অনেকদিন আগে পর্থম চোখে পড়ছিলো। এ্যাদ্দিন বাদে আবার দেখলাম আর মুগ্ধ হৈলাম। বাকিগুলা সার্চায়ালামু খুব শীঘ্র।
কোপাকুপি পোস্ট হইসে । শাজাহানিল মনে হয় শুধু গবাদি আর ছাগাদি পশুই চিনে
এই তাইলে ডাইনোসর বিলুপ্তির কারন?
মারাত্মক !
মুখফোড় রক্স!!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
চ্রম হইছে...বিয়াফক বিনুদন।
এ হাসনাত
ইহা একটা 'রোজা-রমজান স্পেশাল' পোস্ট হইয়াছে। বেশ সংযমী আর অমায়িক ভাষা, যদিও লেখাটা খাসা। পাঁচ তারা দাগায়া গেলাম, রমজানের কল্যাণে যাহা সত্তর গুণ বৃদ্ধি পাইয়া (৫x৭০) সাড়ে তিনশত তারায় পরিণত হইয়াছে। গুনিয়া লইবেন।।
জটিল।
আপনার লেখা তাহলে পেলাম। সচলে লেখালেখি শুরুর আগে যাদের নিয়মিত পাঠক ছিলাম, তাদের মধ্যে এপনি একজন!!! অথচ লেখালেখি শুরুর পর আপনার পোস্ট পাই নি, আজ পেলাম!!! যথারীতি !!!
মাঝের ছ'টি পোস্ট কোথায়? পড়তে চাই!!!
_____________________
Give Her Freedom!
ওয়েলকাম ব্যাক। কিন্তু ঠিক মুখফোড়-পর্যায়ে জমে নাই।
খাসা হয়েচে...
অতিশয় অনন্দিত। ধন্যবাদ!
এহ! মোক্ষম হইসে!
চরম
চরম
বুখে আয় বাবুল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
দূর্দান্ত!!!!!
জটিল
মুখা ইজ ব্যাক!
ঠিক "আদমচরিত" স্কেলে জমলো না ...
তবে ...
অনেকে ব্যাপারটা হয়তো নাও ধরতে পারতে পারে, পঁয়ষট্টি মিলিয়ন বছর আগের সেই গণবিলুপ্তির (মাস-এক্সটিংশন) কথা না জানলে। ডায়নসর জাতির মহাপ্রয়াণের মূলে তাহলে এই।
ভাল্লাগসে।
নতুন মন্তব্য করুন