বর্শার আগায় প্রতিপক্ষের মুন্ডু গেঁথে নিয়ে বিজয় মিছিল কিংবা স্টেডিয়ামে দুজন গ্ল্যাডিয়েটরের অস্ত্র হাতে মরনযুদ্ধকে ঘিরে গ্যালারীভর্তি দর্শকের প্রবল উল্লাসের দিন, মানুষ আমরা পিছনে ফেলে এসেছি বহু আগে ।মানুষ এখন আর শিকারী প্রানী নয়, সৃষ্টিশীল অস্তিত্ব। যে মানুষ মহাশূন্যে ছুটে যায়, কবিতা লিখতে জানে,সবধরনের রোগব্যাধির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয় সে মানুষকে আর নৃশংসতা মানায়না। আর এই ভূ-খন্ডের আমরা ও পরাধীন নেই অনেক বছর।যে মানুষদের নিজেদের অর্জিত দেশ আছে, নিজেদের সরকার নির্বাচনের অধিকার আছে সেই স্বাধীন দেশের মানুষদের আচরনে ও প্রতিক্রিয়ায় পরিশীলিত থাকা কাংখিত।
অথচ আমাদের দিনগুলো, রাতগুলো ক্রমাগত গ্রাস হচ্ছে ভয়াবহ নৃশংসতায়। খুব বেশী অতীতচারী হওয়া প্রয়োজন নেই, আমাদের যাপিত সময়ই ক্রমশঃ নৃশংস থেকে নৃশংসতর। নিরপরাধ কলেজ ছাত্রকে লিমনকে গুলী করে পঙ্গু করে দেয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কাদেরকে বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার করে চাপাতি দিয়ে কোপানো, শবেবরাতের রাতে মিথ্যে সন্দেহে ছয়জন তরুনকে পিটিয়ে হত্যা আর অতি সম্প্রতি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে গনপিটুনীর শিকার হয়ে নিহত আরেক কিশোর।কিশোর মিলনকে পুলিশের গাড়ী থেকে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে ঘাতকদের হাতে,ইটের আঘাতে যারা থেঁতলে দিচ্ছে তার মাথা, এই দৃশ্য ভিডিও করছে যারা তারা ও মানুষ!
রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভুত হত্যা চলছে কয়েক বছর থেকে।বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি স্বত্বে ও এই হত্যা বন্ধ হয়নি বলেই বিনাবিচারে হত্যার মত নৃশংসতা ছড়িয়ে পড়ছে এখন সামাজিক বিন্যাসে। আর এই সব নৃশংসতার প্রতিকারে কোন উদ্যোগ নেয়ার বদলে আমাদেরই নির্বাচিত সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী যখন ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন তখন আমরা ক্ষুব্দ হই।
আমাদের কোথাও কোন নিরাপত্তা নেই। আমাদের অমল শিশুরা খুন হয়ে যাচ্ছে সড়কে, সড়ক দূর্ঘটনার নামে হত্যা করা হচ্ছে আমাদের সৃষ্টিশীল মানুষদের। এরকম পরিস্থিতিতে যখন সংবাদ পাওয়া যায় আরেক মন্ত্রীর সুপারিশে বিনা পরীক্ষায় কয়েক হাজার চালককে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে তখন আমাদের নিজেদের বুঝাপড়ার কোন বিকল্প থাকেনা।
আমরা চলমান এসব নৃশংসতার অবসান চাই। সবধরনের বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ড বন্ধ হোক, বন্ধ হোক নৃশংসতার সামাজিকায়ন,সড়ক নিরাপদ হোক, মৃত্যুমিছিল থামুক এবার।এ সরকার যদি আমাদের নির্বাচিত হয়ে থাকে, এই রাষ্ট্র যদি মানুষের হয়ে থাকে তবে দানবীয় নৃশংসতার বন্ধের জন্য সরকারকে এখনই কাজ শুরু করতে হবে। নিজেদের ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটা সুস্থ,স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য এর কোন বিকল্প নেই।
এইসব দাবী নিয়ে আমরা নাগরিকেরা একত্র হতে চাই,সবধরনের নৃশংসতার বিরুদ্ধে আমাদের সুস্পষ্ট অবস্থান জানাতে চাই।
সস্তার কাগজে ছাপানো লিফলেটে নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে দেয়া এইসব শব্দ ও বাক্য সন্নিহিত ছিলো, ছিলো প্ল্যাকার্ডে নিজেদের হাতে লেখা শ্লোগান- 'বাংলার মন্ত্রীরা বড় সদাশয়/ সমবেদনার কালেও তাদের মুখে হাসি রয়', 'ক্রসফায়ার, গনপিটুনী ও সড়ক দুর্ঘটনার নামে হত্যাকান্ড বন্ধ হোক', 'অপমৃত্যুর ভয়কেই এখন জীবন মনে হয়', 'সালিশের নামে নারীর উপর সহিংসতা বন্ধ হোক', 'লিমন, মিলন,কাদের-শিকার হলো কাদের?', নিজেদের মুখ কালো কাপড়ে বেঁধে নজরুল চত্বরকে ঘিরে দাঁড়িয়েছিলাম সিলেটে বসবাসরত আমরা ক'জন সহনাগরিক। উৎসুক দর্শনার্থীদের হাতে লিফলেট ধরিয়ে দেয়া হচ্ছিলো, লিফলেট ছুঁড়ে দেয়া হলো এমনকি র্যাবের একটি গাড়ীতে ও !
এই উদ্যোগ শুধু একদিনের জন্য নয়, প্রতি শুক্রবার নগরীর এক একটি পয়েন্টে আমরা এভাবে দাঁড়াবো কিছুসময়ের জন্য। প্রতিটি মানুষের ক্ষোভ, উদ্বেগ, দিনবদলের স্বপ্নগুলোর সম্মিলন ঘটা জরুরী।
শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, এরকম নাগরিক উদ্যোগ শুরু হতে পারে দেশের সব অঞ্চলে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো মিলে একদিন বড় ঢেউ যে উঠবেনা, এমন কি কেউ বলতে পারে?
স্বার্থান্ধ রাজনীতিবিদ, পুলিশ, আর্মি, র্যাব, ডাক্তার, গাড়িচালক, ধর্মজীবি, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী, পেশাদার খুনীদের বাইরে আমরা যারা ভুক্তভোগী নাগরিক এই রিপাবলিকের তাদের নিজেদের হাতে হাত ধরে ব্যারিকেড গড়ে না তোলা না পর্যন্ত এই দিন বদলের কোন সুযোগ নেই।
মন্তব্য
এই প্রতিবাদ সারা দেশ ব্যাপী ছড়িয়ে দিন বন্ধুরা , আমরা সিলেটে করছি... রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা...চাটগাঁয়ে আপনারা সমবেত হোন
এটা রিকাবী বাজার পয়েন্ট। এজন্যই বলি এতো চেনা চেনা লাগে কেন।
এ হাসনাত।
এ প্রতিবাদ এর সঙ্গেই আছি । ছড়িয়ে যাক সর্বত্র ।
সে আগুন ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে...
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
রিটন ভাই, আবুল নিয়ে আপনার সাম্প্রতিক ছড়রা ও ছিলো প্ল্যাকার্ডে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
চমৎকার উদ্যোগ। সফলতা কামনা করি।
BE THE CHANGE YOU WANT. রাস্তায় দাঁড়ানোর পাশাপাশি মধ্যবিত্তকে এইটা সবার আগে শিখতে হবে। নাইলে সকল বিক্ষোভ নিস্ফলতা দিবে। ফল দিবে না।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
দয়া করে জানাবেন। তথ্যের অভাবে আমার মত অনেকেই নিষ্ফল আক্রোশে হাত পা ছোড়াছুড়ি করে।
শেয়ার করলাম
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
স্বাগত উদ্যোগ । জাগুক বাংলা
স্বতস্ফুর্ত, অহিংস নাগরিক প্রতিবাদের কাছে পরাজিত হোক রাষ্ট্রীয় হিংসা আর মন্ত্রীয় মূর্খতা।
মানুষ অর্জন করে নিক তার অধিকার, আসুক সুদিন।
অহিংস প্রতিবাদে সামিল হলাম। কিন্তু আবুলদেরকে অহিংস পন্থায় শিক্ষিত করা অসম্ভব বলা চলে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
উদ্যোগ সফল হোক...
সাথেই আছি
এ আগুন ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে...
ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।
আগুনের পরশমণি ছোঁওয়াও প্রাণে...
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারলে ভাল লাগতো।
ভালো উদ্যোগ। আপনাদের সফলতা কামনা করি।
নৃশংসতার কালো স্রোত এতো তীব্র হয়ে গেছে যে, এসব উদ্যোগ খড়কুটোর চেয়ে ও নগন্য। তবু এই মুহুর্তে আমরা সামান্য মানুষেরা আর কিছু তো করতে পারছিনা।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সংহতি জানাচ্ছি।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
অসুস্থতার জন্য ব্যাতিক্রমধর্মী এই প্রতিবাদ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করতে পারি নি । সকলের উপস্থিতিতে উক্ত প্রতিবাদ কর্মসূচীটি খুব ভালো হয়েছে । এর ফলে কতৃপক্ষের টনক নড়লে এই কর্মসূচি সার্থক হবে। আমি আশা করছি , এটা শুধু সিলেট নয় সাড়া দেশ ব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে।
ধন্যবাদ
উক্ত কর্মসূচির আয়োজকরা
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ। ঢাকায় সচলের কেউ যদি এমন কিছু করেন তবে অনুগ্রহপূর্বক আমাকে যে কোন ভাবে জানালেই আমি শামিল হব।
_____________________
Give Her Freedom!
ধাপে ধাপে এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের নিজেদের...
ধাপে ধাপে এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের নিজেদের...
ধাপে ধাপে এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের নিজেদের...
আপনাদের সঙ্গে আছি।
সফল হোক
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
নতুন মন্তব্য করুন