সফল রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সুবিধা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে। ভালো ভালো সুবিধাও দেয়। নাগরিকেরা সুবিধার বিপরীতে কফ থুথু টিস্যুতে গুঁজে রাখে। ময়লা ময়লার বাক্সে ফেলে। একঘেয়ে জীবনযাপনে অভ্যস্ত লোকজনকে রাষ্ট্র নিয়ে এর বেশি ভাবিত হতে হয় না।
ব্যর্থ রাষ্ট্র নিজেকে ব্যর্থ বলে দাবী করে না। একজন ব্যর্থ মানুষ যেমন নিজেকে ব্যর্থ বলে না অনেকটা সেইরকম। সফল রাষ্ট্র কোনো একসময় একটু কম কম সফল রাষ্ট্রকে ব্যর্থ বলে ঘোষণা দেয়। ব্যর্থ রাষ্ট্রের লোকজন তখন দেশটিকে আরো ঘৃণা করতে থাকে। রাস্তায় থুথু ছুঁড়ে মারার সময় ভেতরটা নিংড়ে আরো গাঢ় করে ছুঁড়ে। ময়লা ফেলে ময়লার বাক্স ছাড়া অন্যান্য সব জায়গায়। যা কিছু সুন্দর সেটাকেও বীভৎস করার চেষ্টা করতে থাকে। যারা সুযোগ পায় সফল দেশে পালানোর চেষ্টা করে। এদের কেউকেউ তৃপ্তির ঢেকুর তুলে দেশের ব্যর্থতার সাথে এটাসেটামিক্স করে গালগল্প করে।
তবে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র বুঝতে পারে- ব্যর্থতার তকমটা আসলে আরোপিত। সফল রাষ্ট্রগুলোর সফল হতে গেলে কিছু রাষ্ট্রের ব্যর্থ হওয়া লাগে। তাই সে ব্যর্থ। তার অর্থনীতি দাঁড়াতে পারেনি, এর কারণ দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শোষণ। উচ্চসুদে ঋণ গ্রহণে বাধ্য করানোয় দারিদ্র্য কমানো সম্ভব হয়নি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বাড়ানোর পরোক্ষ পরামর্শ হজম করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। মানুষ মাত্রই লোভী। তাদের শেখানোর ব্যবস্থা হয়েছে- গ্রীড ইজ গুড। ক্ষমতা মানেই দুর্নীতির অফুরান সম্ভাবনা- এটা গরীব বা তথাকথিত ব্যর্থ রাষ্ট্রের লোকজন ভালোমতোই টের পেয়ে গেছে। এসব বদলানো কষ্টের, তবে অসাধ্যের কিছু না। ব্যর্থ রাষ্ট্রটি কিছুটা তোড়জোড় শুরু করে অবস্থা পাল্টানোর। ঋণ নেয়া বন্ধ করা, মহা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া, নাগরিক আচরণ সম্পর্কে আইনপ্রয়োগ সহ বেশ কিছু ব্যবস্থা নেয়ায় কিছু জায়গায় ভালো সাফল্য আসে। এর মধ্যে সফল রাষ্ট্রগুলো ঐ ব্যর্থ রাষ্ট্রকে অন্য একটা গোত্রে ঢুকিয়ে দেয়। সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রের তালিকায়। ব্যর্থ রাষ্ট্রটি সব ছেড়ে তখন যুদ্ধপ্রস্তুতি নেয়া শুরু করে।
শীলা মূলত এইসব ভাবে। ক্লাসের একটা অ্যাসাইনমেন্টের জন্য একটা পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনও তৈরি করে। আর ফাইনাল এডিটের সময় শেষ কয়েকটা স্লাইড মুছে দিয়ে ব্যর্থ রাষ্ট্রের ব্যর্থতার দায় রাষ্ট্রটির ব্যক্তিগত ঘাড়েই চাপায়।
মন্তব্য
বাহ ... শেষে চমক টা অভাবনীয় ছিল আমার জন্য ।
টুকুন গল্পটা ভাল লাগল শুভাশীষ'দা। বিশেষ করে তিন নাম্বার প্যারাটা পড়ে মজা লাগল। ডিপেন্ডেসি থিউরি বলে একটা জিনিস আমাদের একদা এক শিক্ষক পড়িয়েছিলেন। চল্লিশ মিনিট নানা আগডুম বাগডুম আর নানা থিউরিস্টের কথা বলেও জিনিসটা আমাদের ক্লিয়ার করে শিক্ষক বুঝাতে পারে্ন নাই, পরে বই পড়ে বুঝছিলাম ঘটনা কী। আমি আমার সেই শিক্ষকের জায়গায় থাকলে ছাত্র ছাত্রীদের প্রথমে এই গল্পটা পড়তে দিতাম। কারণ এই গল্পের তিন নাম্বার প্যারাটা ডিপেন্ডেন্সি থিউরির মূল কথাটা বলে দিয়েছে
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
পরের মাথায় দোষ চাপানোর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল নিজের আর কোন দায়িত্ব নেয়া লাগেনা। এমনেই চালায় দেওয়া যায় আরো কয়েক দশক।
- চয়নিকা
এটাও একটা দিক। কেকিকর্বো না ভাইবা কাজ কর্লেই হয়।
রাষ্ট্রের সকল ব্যর্থতার দায়ভার ব্যক্তির। আর ব্যক্তির বাইরে রাষ্ট্র থাকলে সেইটা রাষ্ট্রের সাফল্য।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
একদম সত্যি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
পড়ার জন্য
দারুণ চমক খাইলাম শেষটায়।
মন্তব্যের জন্য
এসব সত্ত্বেও আমি আশাবাদী, অধিকাংশ রাষ্ট্রই ব্যর্থ রাষ্ট্র থাকবে না। কারণ বেশী রাষ্ট্র ব্যর্থের তালিকায় ঢুকলে সফলদেরই সমস্যা। কারণ ব্যর্থ রাষ্ট্রের সব নাগরিকই তো সফল রাষ্ট্রে যাবার চেষ্টা করবে, তাই না?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
চেষ্টা কর্লেও ঢুকতে দেবে কি?
উপসংহারটা দারুণ
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
এই গল্পের শেষ প্যারায় একটা টুইস্টের চেষ্টা আছে, যেটা অন্যান্য টুকুনগল্প গুলাতে দেখি নাই মনে হয়...
তিন নাম্বার প্যারাটা অনেকটাই সত্য
টুইস্ট তো অনেকগুলোতে থাকেই, নাকি?
মানুষ ছাড়া তো রাষ্ট্র হয় না, তাই মানুষের ব্যর্থতা রাষ্ট্রের ঘাড়ে চাপে। অথচ রাষ্ট্রের স্বতন্ত্র কোন ব্যর্থতা থাকতে পারে না। কারণ, রাষ্ট্র ভৌত সত্ত্বা নয়। শ্রেণীশোষণের মতো এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রকে শোষণ করে - কারণ, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে শ্রেণীবৈষম্য বিদ্যমান। একক রাষ্ট্র নয় বরং রাষ্ট্রগুচ্ছের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই বৈষম্য রোধ করা যেতে পারে। আঞ্চলিক সহযোগিতা এ'ধরণের প্রয়াস নয়। এককালে টিটো-সুকর্ণ-নেহেরুদের একটা প্রয়াস ছিলো - হালে পানি পায়নি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সেটাই। রাষ্ট্রের ব্যর্থতা মানেই নাগিরকদের ব্যর্থতা। গল্পে একটা দিকই আসছে, আরো নানা দিক আছে।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
গরু-ছাগল জিন্দাবাদ,
পড়ালেখা মুর্দাবাদ,
আপনাকে ধন্যবাদ!
শাজিনাইল-আবুইল্যা
জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ
দিগ্রী-লাইছেন্স-সাট্টিপিকেট
মুর্দাবাদ মুর্দাবাদ
আপনাকে ধন্যবাদ ধন্যবাদ!
পেটহীন পিঠে না খাওয়া
জিন্দাবাদ
বেল্ট-ছিরা ভুড়ি দুলায়ে
কম খাওয়ার সুপরামর্শ
জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ
খাইয়া বাঁচা মুর্দাবাদ।
আপনাকে ধইন্যবাদ!
মুর্খতা জিন্দাবাদ
পাণ্ডিত্য মুর্দাবাদ।
আপনাকে অনেক অনেক
ধন্যবাদ ধন্যবাদ!
ইন্নালিল্লাহ জিন্দাবাদ
শতায়ু হও মুর্দাবাদ,
আপনাকে শত শত
ধন্যবাদ ধন্যবাদ।
ব্যর্থতা জিন্দাবাদ
সাফল্য মুর্দাবাদ,
আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ হে
ব্যর্থ রাষ্ট্র!
হ। ব্যর্থতাই জিন্দাবাদযোগ্য।
ছড়া ভালৈছে।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
চমক ছিল। তবে পুরো পোস্টই সত্য বচন!!!!
_____________________
Give Her Freedom!
মন্তব্যের জন্য
শেষের চমকটা ভালো লাগল
এ হাসনাত
ভাল লাগল,
কিন্তু প্রশ্ন হল কেন রাষ্ট্র গুলো অন্য রাষ্ট্রের উপনিবেশ কে মেনে নেয়, কেন ব্যথতা আরোপ করতে দেয়।
একটা দুইটা কারণ তো না, হাজারটা কারণ আছে। রাজনীতিবিদদের মেরুদণ্ডের অভাব একটা মেজর কারণ।
কিছু কিছু রাষ্ট্রের ব্যার্থ রাষ্ট্র হওয়াটা তাদের সহ অনেকের জন্যে শাপে-বর। যেমন দেখুন, সোমালিয়ার নাম থেকে যদি ব্যার্থ রাষ্ট্রের লোগো উঠে যায় তবে কিন্তু শুধু সোমালিদের নয়, আরও অনেকরই অসুবিধা।
সোমালিয়া বহুকাল ধরেই রিলিফ ডিপেন্ডেন্ট রাষ্ট্র। এখানে ডিয়াসপোরাদের পাঠানো রেমিট্যান্স ছাড়া অন্য তেমন কোনও আয় নেই। ওদের গবাদীপশুর সবথেকে বড়ো বায়ার সৌদি এ্যারাবিয়া ওদের এক্সপোর্ট ব্যান করেছে। এখন ওরা যদি সাকসেসফুল রাষ্ট্র হতে শুরু করে, নির্ঘাৎ ওদের না খেয়ে মরতে হবে।
এবার আসেন একটু আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে কথা বলি। সোমালিয়ার কপাল থেকে ব্যার্থ রাষ্ট্রের তিলক উঠে গেলে জাতিসংঘ বিরাট বিপদে পড়ে যাবে। সোমালিয়ায় সাহায্য বাবদ যে বিপুল পরিমান অর্থ জাতিসংঘ উন্নত দাতা দেশগুলো থেকে সংগ্রহ করে তার বিরাট একটা অংশ ব্যায় হয় জাতিসংঘের হর্ন অব আফ্রিকা রিজিওনের ওভারহেড মিটাতে। সোমালিয়া আছে বলেই নাইরোবিতে কাঁচ ঘেরা এসি লাগনো প্রাসাদে বসে ইউএনওয়ালাদের ফুটানি চোদানো আসে। একজন প্রোগ্রাম এ্যাসিস্ট্যান্ট কালেভদ্রে ফিল্ডে গেলে তার জন্যে আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার আনতে হয়। এদের মতো এতো ইনএফিশিয়েন্ট প্রোগ্রাম ডেলিভারি আমি আর দেখিনি। একবার এক যুদ্ধোত্তর র্যাপিড ড্যামেজ এন্ড নিড এ্যাসেসমেন্ট করতে যেয়ে ইউএনএর সব নাপিতের হেগে-মুতে-পেদে মারা সারা। এই অধমকে শেষ পর্যন্ত ওটার লিড নিতে হয়েছিলো। জাতিংঘের সংগৃহীত মোট ফান্ডের সর্বোচ্চ ২০% বেনিফিশিয়ারী পর্যন্ত পৌঁছায়। আর সোমালিয়া আছে বলেই টাউট কেনিয়ানগুলোর ঘরে বসে ৫,০০০-৭,০০০ ডলারের বেতনে চাকরী জোটে। অল দ্য বুলশিট।
এখন বলেন সোমালিয়ার কপাল থেকে কেনো ব্যার্থ রাষ্ট্রের তিলক খুলে পড়েনা। যতোবারই ওটা খোলার আলামত দেখা যায়, ততোবারই ইউএন তিলকটাকে আবার সুপার গ্লু দিয়ে ঠেসে আটকে দেয়।
আপনার লেখা কিন্তু জটিল হয়েছে শুভাশীষ।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
বিস্তারিত পোস্ট দ্যান।
love the life you live. live the life you love.
নতুন মন্তব্য করুন