"লিনাক্স ডে - ২০১১" - বাংলাদেশ, কুড়ি বছর পূর্তির উৎসব আয়োজন

শামীম এর ছবি
লিখেছেন শামীম (তারিখ: রবি, ২১/০৮/২০১১ - ১০:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লিনুস টোরভাল্ড নামক একজন দুষ্টু ছাত্র সেই সময়ে জানতো না যে তার এই দুষ্টামীর ফলে বৈপ্লবিক কিছু ঘটে যাবে ২০ বছর পর। সে এটাও জানতো না যে 'ফাউন্ডেশন ফর ওপেন সোর্স সলিউশনস বাংলাদেশ' নামে একটি দুষ্টু সংগঠন ২০১১ সালে তার দুষ্টামীর জন্মদিন পালন করার নিয়ত করবে। ঐ দুষ্টু লোকটি আরও জানতো না যে সেই জন্মদিন আবার রোজা রমজানের দিনে পড়বে। জানলে নিশ্চয়ই ঈদের পরের কোন তারিখে সেই দুষ্টামি রিলিজ দিত। অবশ্য তাতেও শেষরক্ষা হত না, কারণ কোনো না কোনো বছর সেটা রোজা রমজানের দিনে পড়তোই, কারণ আরবী চন্দ্রবর্ষ ধরে যেই ক্যালেন্ডার সেটা প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের চেয়ে সাধারণত ১১ দিন কম থাকে - তাই প্রতিবছরই রোজা বা ঈদগুলো ১১ দিন করে এগিয়ে আসে।

দুষ্টু ছাত্রটি তার স্যারের দেয়া অপারেটিং সিস্টেমের কার্নেল নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল। এ আর এমন কি! .... এরকম অসন্তুষ্ট তো আমরা হর-হামেশাই হই। স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যারদের দেয়া বাঁশগুলো রাখার মত জায়গা থাকে না; তা-ও ভদ্রতা করে হাসিমুখে নিয়ে ফেলি। কিন্তু এই দুষ্টু ছাত্র করলো কি, সেটা নিতে রাজি হল না। শুধু নারাজি হল তা-ই না, ব্যাটা নিজেই একটা কার্নেল লিখে ফেললো। লেখার পার্টটা আমরা সবাই কম বেশি পারি, কিন্তু এটা একটা কার্নেল, যা কিনা অপারেটিং সিস্টেমের প্রাণ ভোমরা। ঐ দুষ্টু ছাত্র অবশ্য এই অপারেটিং সিস্টেম নিয়েই লেখাপড়া করতেছিলো - তাই হয়তো এরকম দুষ্টামি করা ওর জন্য সহজ হয়ে গিয়েছিল। হুহ্ ... ... নাইলে আমিও ঐ রকম কিছু একটা কইরে ফেলতাম। তবে চরম দুত্তু লিনুস সেই সুযোগও দিতে চায় নাই অন্যদের -- তাই তার লেখা সেই কার্নেলটা সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিল।

উন্মুক্ত কার্নেল পেয়ে দুনিয়ার অন্য দুষ্টু আর বোকাগুলো করলো কি, সেটাকেই আরো শক্তিশালী করার জন্য এইটা সেইটা কোডিং যোগ করতে লাগলো। ফলে সেই কার্নেলটা আস্তে আস্তে শয়তানের মত শক্তিশালী হয়ে উঠলো। পরবর্তীতে সেটা নিয়ে লুকজন সার্ভারের ব্যবসা করে রমরমা হইলো -- দুনিয়ায় এখনো বেশিরভাগ ইন্টারনেট সার্ভার লিনুস দুষ্টুর সেই শয়তান সিস্টেম, যেটার নাম লিনাক্স, দিয়ে চলে। পরে আরো কিছু খারাপ লোক এইটা দিয়ে ডেস্কটপও সহজ করে বানিয়ে ফেললো ... ....

উফ্ ....টাইপ করতে করতে হাত ব্যাথা হয়ে গেছে। যাই, চা খেয়ে আসি .... ওহহো কেমনে কি! রোজা রমজান বলে কথা! -- চা খাওয়াও যাবে না এখন। বাকী কাহিনী জানতে চাইলে অনুষ্ঠানে আইসেন। এইবার ঘটনাটা এবার একটু অফিসিয়াল ভাষায় দেই:

====
"লিনাক্স ডে - ২০১১" - বাংলাদেশ, কুড়ি বছর পূর্তির উৎসব আয়োজন।

১৯৯১ সালের ২৫শে আগস্ট, হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তির এক ছাত্র লিনুস টরভ্যাল্ডস ঘোষনা দেন উন্মুক্ত সোর্স ভিত্তিক কার্নেল “লিনাক্স” রিলিজের। সেই থেকে আজ অবধি লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম সারা বিশ্বের সার্ভারের জগৎটা দাপিয়েই বেড়াচ্ছে। কিন্তু লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমগুলো এখন আর শুধুই সার্ভারের জগতেই সীমাবদ্ধ নয়। এই বিষয়টা প্রযুক্তিপ্রেমী সব বাংলাদেশী কে জানাতে, বোঝাতে এবং ডেক্সটপ দুনিয়ায় লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমের বীরত্বপূর্ণ সাফল্য গাঁথার কিছু ইতিহাস সবার সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে ফাউন্ডেশন ফর ওপেন সোর্স সলিউশনস বাংলাদেশ (Foundation for Open Source Solutions Bangladesh) বা সংক্ষেপে এফওএসএস বাংলাদেশ (FOSS Bangladesh) এবছরে লিনাক্সের ২০ তম জন্মবার্ষিকীতে “লিনাক্স ডে – ২০১১” উদযাপন করতে যাচ্ছে। আপনি যদি প্রযুক্তিপ্রেমী হোন এবং লিনাক্স সম্পর্কে জানতে আগ্রহী থাকেন তো চলে আসুন আমাদের এ আয়োজনে।

আয়োজনের তারিখ ও সময়: ২৫ শে আগস্ট, ২০১১ইং, বৃস্পতিবার। সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে এ আয়োজন।

আয়োজন স্থল: ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র বা টিএসসি (লবি ও গেমস রুম), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আয়োজনের বিস্তারিত সূচী:

১। সকাল ১০টায় ব্যানার-ফেস্টুন সহ পদযাত্রা/শোভাযাত্রা শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে থেকে শুরু হয়ে, রাজু ভাস্কর্য, শহীদ মিনার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি’র পাখি চত্বরে এসে শেষ হবে।

২। সকাল সাড়ে দশটা থেকে শুরু হয়ে দিনব্যাপী টিএসসির করিডোর আর লবিতে বিভিন্ন ধরনের লিনাক্স ডিস্ট্রোর ইতিহাস আর চিত্রসহ ডঙ্গল, ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে প্রদর্শনী চলবে এবং এ আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

৩। আরো থাকছে ওপেন সোর্স এবং লিনাক্স নিয়ে আমাদের এবং দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংগঠনের সেবামূলক কাজকর্মের ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী, দিনব্যাপী।

৪। বিকাল ৪টা থেকে শুরু হবে আমন্ত্রিত অতিথি ও দশর্কদের মাঝে মত বিনিময় এবং আলোচনা অনুষ্ঠান।

৫। এছাড়াও আয়োজনস্থলে বিভিন্ন জনপ্রিয় লিনাক্স ডিস্ট্রোগুলোর পেনড্রাইভ বা পছন্দের মিডিয়াতে অথবা সিডি/ডিভিডিতে বিতরনের ব্যবস্থা থাকবে।
====

আপনি আসতেছেন এইটা আগে থেকেই জানাতে চাইলে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন এখানে ক্লিক করে

ঐদিন টিএসসি বন্ধ থাকে। তাই ইফতার করতে চাইলে আশেপাশের ডাস ও অন্যান্য জায়গায় যেতে হতে পারে।


মন্তব্য

আশিকুর_নূর এর ছবি

জটিল লিখেছেন। ডেস্কটপের পাতিহাঁস দিয়ে কিছু লিখেছেন নাক আগে?

মাসুদুল বারী  এর ছবি

দুষ্টু ছেলের কাহিনীটা দারুন ভাবে আগ্রহ সৃষ্টি করেসে, অন্ততঃ আমার কাছে হাসি

শামীম এর ছবি

না ভাই, ঐদিকের কথা জানতে অভ্রনীল ভাইরে এলেম দিতে বলতে পারেন। নিজেও লিখে ফেলতে পারেন। উইকিতে ইংরেজিতে আছে অনেকটাই -- ওটাও বাংলা করে ফেলতে পারেন। তারপর ওটা উইকিতে যোগ করার কাজ নিজে বা অন্য উইকিপিডিয়ানরা করে দিতে পারবে।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

রিং এর ছবি

ঝাক্কাস! দারুন লিখেছেন শামীম ভাই। আমি আসবো ঐ দিন সব দুষ্টুদের সাথে দুষ্টামি করতে।

নিশাচর নাইম এর ছবি

আমিও আসতেছি। ইয়েস বাঘ মামা, ইয়েস!!!

অপছন্দনীয় এর ছবি

ল্যাপটপে শুধু ওপেন সোর্স সফটওয়্যার থাকলে সেটার মান নিয়ে সন্দেহ তৈরী হয় - এটা "ডিজিটাল জ্ঞান"...

সুতরাং, এইসব বাদ দিয়ে দলে দলে লিনাক্সকে না বলুন...

(আমি যেহেতু মূর্খ নন-ডিজিটাইজড মানুষ, দেশে থাকলে অবশ্যই উপস্থিত থাকতাম - শুভকামনা থাকলো)

শামীম এর ছবি

digiটাল কাগুরা হাচা কইসেরে ভাই ... ... এছাড়া এন্টিভাইরাস কোম্পানীগুলোরও খেয়ে পড়ে বাঁচার অধিকার আছে ... ... কাজেই say নো টু লিনাক্স।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

শুভকামনা রইল।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

শুভেচ্ছা।

নুরুজ্জামান মিলন এর ছবি

চমৎকার লিখেছেন।

শামীম এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই।

মুঠোফোনের অ্যানড্রয়েডের কথা তো লিখিই নাই।

গল্পটা এমন:
মেয়ের কর্কশ কন্ঠের জন্য বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙ্গে যায়। তাই পরের সম্বন্ধ আসার সময় পরামর্শ দেয়া হল যে, অতিথিদের সামনে নো কথাবার্তা। মেয়ের রান্না খেয়ে অতিথিরা খুব প্রশংসা করছে --- এই শুনে আর থাকতে না পেরে মেয়ে বলে উঠলো "লবণ তো দেং-এ নাই" (=লবন তো দেই-ই নাই, তাতেই এই অবস্থা)

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

কেউ একজন এর ছবি

সবসময়ই শুনতাম সব সার্ভারেই নাকি খালি লিনাক্স চলে। কামলাদিতে এসে দেখি সব জায়গায় চলে এইচ.পি ইউ.এক্স, ওরাকলের সোলারিস এমন সব ইউনিক্স। আমি যে লিনাক্স পছন্দ করি না তা নয়। কিন্তু সবাই এই কথাটা বলে কেন বুঝি না।

শামীম এর ছবি

এই জন্য বলে:
http://en.wikipedia.org/wiki/Usage_share_of_operating_systems

হাসি

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

কেউ একজন এর ছবি

শামীম ভাই আপনার লিংকের জন্য ধন্যবাদ। আপনার লিংক থেকেই কপি করছি।

however it only includes servers publicly accessible on Internet and does not reperesent server marktshare on servers within business and government organizations where most servers are being used.

আমি ওয়েব, মেইল বা ডি.এন.এস সার্ভারের কথা বলিনি আসলে। আমি বলছিলাম ইন্ডাস্ট্রীতে যেগুলা ব্যাবহার করা হয় সেগুলার কথা। publicly accessible server এ যে লিনাক্স ব্যাবহার হবে এইটা বুঝাই যায়। কিন্তু টেলকো বা ব্যাঙ্কে কিন্তু ব্যবহার হয় না। এইটার একটা জরিপ করলে লিনাক্স পিছায় ইউনিক্স আগায় আসবে বলে আমার ধারনা।

ধন্যাবাদ।

শামীম এর ছবি

একটু ঘাটাঘাটি করে দেখলাম .... ঠিকই বলেছেন। বিনামূল্যের জিনিষে মানুষ এখনও ভরসা করতে পারে না। কোন সিস্টেমের পেছনে একটা কর্পোরেট থাকলে তখন অন্য কর্পোরেটগুলো সাপোর্টের ব্যাপারে একটু নিশ্চিন্ত বোধ করে -- এটা একটা মূল কারণ। আর ইউনিক্স থেকেই বাকীগুলোর উৎপত্তি -- কাজেই যারা একবার ঐ সিস্টেমে গিয়েছে তারা পরিবর্তন করে নতুন সিস্টেমে আসবে এটা খুব বেশি ঘটে না -- কারণ তখন আগের জ্ঞান রিনিউ করা লাগবে, হয়তো আগের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজেই সেখানে বাতিলের খাতায় চলে যাবে।

তারপরেও দেখেন নিচের ছবিটা পুরাতন প্রেডিকশন হলেও বেশ ইন্টারেস্টিং .... ছবিতে ক্লিক করলে মূল পাতায় যেতে পারবেন।

কিছুদিন হল লিনাক্স ডেস্কটপের পেছনে কর্পোরেট সাপোর্ট বেড়েছে -- ফলাফল হল আমি এখানে লিনাক্স ব্যবহার করে লিখছি। যা হোক, আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ - এটার সূত্র ধরে আরো কিছু লেখাপড়া করা হল মন খারাপ

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

জেড, এম, মেহেদী হাসান এর ছবি

সর্বস্তরের জনগনের জন্য একটা সহজ বোধগম্য একটা লেখা।

রিপন মজুমদার এর ছবি

গুগল প্লাসের শেয়ার দেখে ঢুকলাম। লিনাক্স ডে- নিয়ে বিজ্ঞপ্তি কত জনে কত জায়গায় শেয়ার করলো (আমি নিজেও করেছি নাগরিকে) বিজ্ঞপ্তিরও যে এতো সুন্দর ভূমিকা হয়- এই প্রথম জানলাম।

এক লহমা এর ছবি

শামীম-ভাই, সচলে আপনাদের কয়েকজনের পুরান লেখাগুলি পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে বছর দুয়েক আগে বাতিল করা ভিস্তা-ওয়ালা কম্পিউটারটা এক চিপা থেকে টেনে বার করে হার্ড ড্রাইভ লেপে পুছে পরিস্কার করে উবুন্টু চালু করে ল্যাম্প বসিয়ে দিলাম। তারপরে আবার সেটা মুছে ফেলে মিন্ট-সিনামন ভরেছি। মজাই মজা। এবারে ল্যাম্প ভরার আগে ওপেন এস এস এইচ নিয়ে কিছু খেলাধূলা করব কিনা এখনো মনস্থির করে উঠতে পারিনি। দেখা যাক মন কদ্দুর কি চায়! দেঁতো হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।