লোডশেডিং ও ডিজিটাল বাংলাদেশ পরস্পরবিরোধী দু’টি শব্দ। এই ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রত্যেক ডিজিট সচল রাখার জন্য চায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। কিন্তু চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বিদ্যুৎ উৎপাদন বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান আন্তরায়। আশার কথা যে, পেছনের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২ জুলাই ১১ আমরা পাঁচ হাজার পঁচিশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পেরেছি যা কিনা এ পর্যন্ত দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ইতিহাসে সর্বোচচ রেকর্ড। যদিও দেশের বর্তমান চাহিদা, সাত হাজার পঞ্চাশ মেগাওয়াট (বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়-সম্পর্কীয় সংসদীয় কমিটির ভাষ্যমতে) এর তুলনায় অনেক কম। ফলে আপাততঃ লোডশেডিং কে স্বীকার করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
তবে, এই রেকর্ড পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাধারন মানুষ কি ভাবে উপকৃত হচ্ছ, কি ভাবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছে অর্থাৎ দৈনিক কত ঘনটা বা কত মিনিট আধিক বিদ্যুৎ পাচ্ছে সর্বশেষ ভোক্তা, সেটাই মূল বিষয়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিতরনের ক্ষেত্রে যে নীতিমালা-ই অনুসরণ করুক না কেন তা হতে হবে যৌক্তিক, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ। দৈনিক প্রথম আলো-সংবাদপত্রে (০৪-০৮- ২০১১) প্রকাশিত রিপোর্ট আনুযায়ী বর্তমান গ্রাহক প্রতি চাহিদা ১০ কিলোওয়াট এর আধিক অথচ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিতরন করছে, গ্রাহক প্রতি চাহিদা ২ থেকে ৩ কিলোওয়াট যা কিনা ১০ বছর আগের তথ্যের উপর ভিত্তি করে। স্থান ভেদে বিদ্যুৎ সরবরাহ ভিন্ন হতে পারে। যেমন শুধু ঢাকাতেই বিদ্যুৎচাহিদা প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট।
আকস্মিক এবং অনিদিষ্ট সময়ের জন্য লোডশেডিং দৈনন্দিন জীবনকে যেমন ক্রমশ দুর্বিষহ করে তুলছে তেমন বিদ্যুৎ-নির্ভর বিভিন্ন উন্নয়নশীল কাজ চরমভাবে ব্যাহত করছে। লোডশেডিং- এর অসহনীয় যন্ত্রনায় বিদ্যুতের দাবিতে পিডিবি অফিস ঘেরাও, ভাংচুর, অবরোধ এর মত অনাকাঙ্খিত ঘটনাও কেমন যেন সহ্য হয়ে গেছে। না, রাজনিতি-র রঙে এর ব্যাখ্যা দিতে বা খুজতে চাই না। দেশের সর্বস্তরে - বিভাগীয়, জেলা, থানা এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ে যেখানে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের অবকাঠামো বর্তমান, সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণ করার সময়পযোগী ও সুনিদিষ্ট নীতিমালা গঠন করা একান্ত প্রয়োজন। যা হবে সামগ্রিক ভাবে পারস্পরিক দায়িত্ববোধের ফসল এবং জবাবদীহি-নির্ভর। ঢাকা কিছু বিচ্ছিন্ন এলাকাসহ তৃতীয় বিশ্বের অনেক শহরই বিভিন্ন পন্থা বা নির্দেশনা অবলম্বন করার নজির পাওয়া যায়। লোডশেডিং যেহেতু বাদ দেয়া সম্ভব না, সেহেতু সুসংগত ভাবে, পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে দৈনন্দিন জীবনের সাথে অন্তর্ভুক্ত করাই, ঐ পন্থাগুলোর একটা উদ্দেশ্য। একটু ঝালাই করে পন্থাগুলোকে নিম্নোক্তভাবে সাজিয়েও বলা যায়।
১। অঞ্চল/ওয়ার্ড এর চাহিদা এবং উৎপাদিত বিদ্যুতের নিশ্চিত সরবরাহ অনুযায়ী দৈনিক বিদ্যুৎ বিতরণের মোট সময় (ঘণ্টা) নির্ধারণ। যেমন, ‘ক’ শহরের ‘খ’ ওয়ার্ডে দৈনিক ১৯ ঘণ্টা বিদ্যুতের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ সম্ভব। অর্থাৎ দৈনিক ৫ ঘণ্টা হবে লোডশেডিং।
২। নিরবিচ্ছিন্নবিদ্যুৎ সরবরাহ এর মোট সময় এবং লোডশেডিং-সময় এর সর্বত্তম সমন্বয়ে দৈনিক বিদ্যুৎ-সময়সূচী এবং লোডশেডিং-সময়সূচী গঠন, যা দিন-সপ্তাহ-মাস অনুযায়ী পরিবরতনযোগ্য। যেমন, ‘খ’ ওয়ার্ডে শুক্রবার বা ছুটির দিন ব্যতিত দৈনিক লোডশেডিং থাকবে সকাল ১০টা-১২ টা, দুপুর ২টা-৩টা, সন্ধ্যা ৬টা -৭টাএবং রাত ১১টা-১২টা (মোট ৫ ঘণ্টা)। অঞ্চল ভেদে, পিক-অফপিক লোড, এস এস সি পরীক্ষা, বিশ্বকাপ, রমজান মাস, অনেক কারনে এই সময়সূচী পরিবর্তন হতে পারে।
৩। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ১-নং (দিনে মোট কত ঘণ্টা লোডশেডিং থাকবে) ও ২ নং (দিনে কখন কখন লোডশেডিং হবে এবং কতক্ষণ থাকবে) সাধারণ জনগণ (নিদিষ্টওয়ার্ড এর বাসিন্দা) কে পূর্বে অবহিতকরন। প্রতি সপ্তাহের বা মাসের লোডশেডিং সময়সূচী আঞ্চলিক সংবাদপত্র/মিডিয়া, বিদ্যুৎ অফিস, কমিশনার এর কার্যালয় এর মাধ্যমে ঐ সপ্তাহের বা মাসের আগেই বিতরন এবং জনগনকে অবহিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদেরকে অধিক দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে। সর্বশেষ ভোক্তা যাতে প্রত্যেকে তাদের নিজেদের কাজ বিদ্যুতের সরবরাহ অনুযায়ী গুছিয়ে নেয়ার সুযোগ পায়।
উপরোক্ত পন্থা বা সদৃশ যে কোন নীতিমালা গঠন করার জন্য প্রয়োজন দায়িত্ববোধ আর সর্বোত্তম সেবার দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি। জাতীয় পর্যায়ে চরম বিদ্যুৎ ঘাটতি আর ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুৎ প্রাপ্তিতে চরম অনিশ্চয়তায় আমরা দিশাহারা। তিনহাজার মেগাওয়াটবিদ্যুৎ রাতারাতি জাতীয় গ্রিডে যোগ করে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে না পারলেও ভোক্তা পর্যায়ে খুব সহজেই বিদ্যুৎ সরবরাহের অনিশ্চয়তা দূর করা সম্ভব, যদি আমরা সত্যিকার অর্থে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করি। লোডশেডিং আমাদের গলার মালা, আপাততঃ তাকে মানতে আপত্তি নেই, কিন্তু অপ্রত্যাশিত ও অনিদিষ্ট সময়ের জন্য লোডশেডিং! একেবারেই কাম্য নয়।
dhar
মন্তব্য
ধর, আপনার প্রস্তাবগুলো বাস্তবসন্মত। আশ্চর্য কি জানেন, আমি একসময় পৃথিবীর সবথেকে দরিদ্র একটা মধ্য আফ্রিকান দেশে থাকতাম। আমার ৮ মাসের অবস্থানকালে সেখানে মাত্র দুই দিন লোডশেডিং ছিলো। এবং দুই বারই ওরা ১৫ দিন আগে লিখিত নোটিশ সার্ভ করেছিলো বাসায় বাসায়।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন