জানালা দিয়ে কালো অন্ধকারের দিকে চেয়ে দু’চোখ ভরে পানি আসে অমির। খুব ইচ্ছে করে আকাশকে সব কথা বলে দিতে। তার নিজের ভেতরের কথাগুলো,হাজার চেষ্টা করেও কাউকে কখনো বলতে পারেনি যেগুলো, কিংবা বলা যায়, কখন কেউ শুনতে চায়নি যেগুলো।হয়ত আকাশও শুনতে চাইবেনা,বিরক্ত হবে...একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে, এসব ভেবেই কখনো বলা হয়নি কাউকে। হয়ত কোনদিন আর বাইরে বেরোবেনা কথাগুলো, ভেতরে থাকতে থাকতেই মরে যাবে একসময়।
সরে এসে এবার আয়নায় নিজের দিকে তাকায় অমি, চিরপরিচিত হাসিটা দেয়, আর চেনা গলায় হাজারবার বলা সেই কথাটা বলে,ধুর বোকা মেয়ে!তোমাকে সবাই কত শক্ত মেয়ে হিসেবে জানে,তোমার মত মেয়ের কি কাঁদতে হয়?বন্ধুরা দেখলে কত অবাক হবে ভাব তো!
বিছানায় শুয়ে আজ সারাদিন ভাবা প্রশ্নটা আবার ভাবে সে, সে কি আকাশকে ভালোবাসে? প্রশ্নটার উত্তর খোঁজার আগেই শত যুক্তি মাথায় এসে ভিড় জমায়। ভালোবাসা, একটা সম্পর্ক...মা বাবা কি কখনও মেনে নেবে? হয়ত নেবে, মন থেকে কি নেবে? কেন যেন মাকে কষ্ট দিতে একদম ইচ্ছে হয়না তার। আর সে ভালোমতই জানে, আকাশ যতই ভালো ছেলে হোক না কেন, একটা সম্পর্কের খবরে মা কষ্ট পাবেই! মার ধারণা একটু সেকেলে, তাছাড়া তাঁর মনে ভয়, অমি হয়ত এসবে মনযোগ দিলে পড়ায় মনযোগ কমে যাবে...আর তাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের যে পড়াশুনা ছাড়া গতি নেই সেটা তো মার বলে দিতে হবেনা,অমি নিজেই বোঝে। জীবনের অসংখ্য ভালো-খারাপ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে অন্য অনেকের চেয়ে বেশিই বোঝে সে এগুলো। এজন্যই হয়ত কখনও আবেগাপ্লুত হয়ে সিদ্ধান্ত নেবার আগে দশবার যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করেছে সে।
যুক্তি মা-বাবার মধ্যে দিয়েই শেষ না, সমস্যা তার নিজের মধ্যেও আছে। নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে রাখার প্রবণতা...তার স্কুল-কলেজের বন্ধুরা ভালো করেই জেনে গেছে,সে কারো সাথে সম্পর্ক করার মেয়ে না, তাকে খানিকটা আলাদা চোখে দেখে অনেকেই, ব্যাপারটা এক ধরনের আনন্দ দেয় তাকে।আনন্দটা সহজে বিসর্জন দিতে ইচ্ছে করে না।আপনমনে হাসে অমি,কে জানে ওরা কি ভাবে তাকে নিয়ে...কিন্তু সে জানে সে তো ওদের চেয়ে ভাল মানুষ না।হ্যাঁ, সে মন থেকে কখনও তাগিদ অনুভব করেনি কারো সাথে সম্পর্ক করার, কিন্তু যদি তাগিদ আসতও, তারপরও সে পারতনা, তার সাহসের বড় অভাব।
একটা একটা কথা দিয়ে দাড়িপাল্লার দুটো পাশ ভরতে থাকে অমি। একপাশে আকাশ, অন্যপাশে...অন্যপাশে একাকীত্ব। একপাশে আবেগ, অন্যপাশে যুক্তি। একপাশে মন,অন্যপাশে মস্তিষ্ক। একটা সময় আকাশের চেয়ে অনেক ভারি হয়ে ওঠে একাকীত্ব...মা-বাবার ভালবাসা, তাদের লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে থাকা, কিছু বন্ধু-কাজিনদের চোখে একটু ভালো হয়ে থাকা, সবচেয়ে বড় কথা নিজের মত থাকার জীবনটা অনেক লোভনীয় মনে হয়।
আবেগটা বেড়ে ওঠার আগেই মারা পড়ে...বেশ মজা লাগে অমির।এরকম রাত জীবনে প্রথম না...এরকম অনেকবার নিজেকে প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছে অমি,কোন জীবনটা বেশি চায় সে? জবাব একই এসেছে। কেন? তার আবেগ কম?নাকি, সে কখনও কাউকে ভালোবাসতে পারেনি?কে জানে! প্রসঙ্গটা এখানেই শেষ করে অমি, থাক। ভালোবাসা যদি থেকেও থাকে মনের ভেতর বেঁচে থাক। সেটা বাইরে এনে কি লাভ! সে তার জগতে থাকুক, আকাশ অন্য কাউকে নিয়ে ভালো থাকুক...সব আগের মত সুন্দর থাক।
একটা দীর্ঘশ্বাসের সাথে সব ঝেড়ে ফেলতে চায় অমি, যেমনটি ফেলেছিল অয়ন কিংবা ধ্রুবর বেলায়। অনুভূতিগুলো চেপে রেখে রোজকার মুখোশটা পরে নেয় সে, কান্নার স্মৃতিগুলো মুছে ফেলে দৃঢ়তা দিয়ে, কেউ জানবেনা এই রাতটার কথা...
নিজেকে কষ্ট দেবার, ইচ্ছে করে নিজেকে একা করবার বিকৃত আনন্দটা ক্ষণে ক্ষণে উপভোগ করে সে...অন্তত বাইরের সবাইকে এটুকুই বুঝিয়ে দেয়, নিজের জীবনটা তার কাছে দারুন উপভোগ্য কিছু! কিন্তু মনের ভেতরে যা চলে............
সেটার খবর আমিও রাখি না। সেটুকু অমির একান্তই গোপন।
দ্বিতীয় সুবর্ণরেখা
মন্তব্য
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
গোপন দীর্ঘশ্বাস...
হুমমম !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
"আকাশ" হয়ত কখনই বিরক্ত হতো না, হয়ত সে সবকিছু শুনতেই চেয়েছিল আর মেনে নিতেও। "আকাশ" হয়ত তার অমিকে প্রচন্ড ভালবাসতো, আজও বাসে, এখনও। এটি যদি শুধুই অণুগল্প হয়ে থাকে তাহলে অবশ্য কিছু বলার নেই। এটি কি শুধুই অণুগল্প?
এটা কোনএকসময় আমার নিজের চিন্তাই ছিল.........আকাশ হয়ত চাইত......আমিই পারতাম না!
আকাশ হয়ত এখনো চায়, শুধু আগের মতো করে আর বলতে পারে না। হয়ত তো সে কাঁদে। প্রতিদিন। আমি জানি না আপনি কে। তবে আমারো অমি আছে। ঠিক এই নামেই আমি তাকে ডেকেছি ভালবেসে। হয়ত আপনার জন্য সে অপেক্ষা করছে, যেমনটা আমি আমার অমির জন্য করছি। তাকে আমার বলতে ইচ্ছে করছে, "তুমি তো আমায় ভাল চেনো, তুমি ছাড়া কোনো গান ভাবতেও পারি না তা জেনো"। হয়ত সেও আপনাকে এটাই বলতে চাচ্ছে। শুধু শুনতে চাওয়ার অপেক্ষা।
দারুণ সাবলীল লেখা। আরও চমৎকার গল্প আশা করি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
ঝরঝরে প্রকাশ!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
শুকনো ফুলের জন্যে জায়গা থাকে না আর টবে,
অসুখ জড়িয়ে বুকে আমাকে আড়ালে যেতে হবে।
-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী
নতুন মন্তব্য করুন