অনেক দিন ধরে দেখছি সচলে কোন রেসিপি দিচ্ছেনা। বুঝতে পারছি এবার আমাকে হাল ধরতে হবে।গত জুলাইতে ইতালির ফ্লোরেন্সে থেকে আসার পর দেখি আমার সব জিন্স কেমন জানি টাইট লাগছে। আজব তো!কোন ওয়াশিং মশিনে দেইনি। তারপরও এই দশা।ওয়েট মাপতে যেয়ে দেখি মেশিনে অনেক বেশী দেখাচ্ছে। নির্ঘাত যন্ত্রের গোলমাল। নিন্দুকেরা কিন্তু সেই কথা বিবেচনা করেনা। এম্নকি আমার সুপারভাইজার তারমধ্যে একজন। বলেন এই কষ্ট কোথাও রাখি। পণ কল্রাম আর কোন চিনি খাবোনা কফিতে। তেতো কফির স্বাদে আমার মাথা থেকে বিজ্ঞান পালিয়ে পালি সাহিত্য চলে আসছে।
তারপর এই মাসের শুরুর দিকের কথা। সুপার শপে যেয়ে একি গাজরে ব্যাপক ছাড়। এক প্যাকেট কিনলে আরেক প্যাকেট ফ্রী দেওয়ার মত অবস্থা। জানেন তো বঙ্গ সন্তান কোন কিছু মুফতে পেলে আর ছাড়ে না, সে আলকাতরা হোক আর গাজর হোক। অনেক দিন গাজরের হালুয়া না খাওয়া হতাশ মনটা যেন বিক্ষুব্দ হয়ে উঠল। আর কি আর করা। জিন্স আবার কেনা যাবে। কিন্ত হালুয়া না খেয়ে চিকন হওয়ার মাঝে কোন সুখ নেই।
২ কেজি গাজর কিনে বাড়ী চলে আসলাম। গাজর তো এনেছি কিন্ত হালুয়া তো কখনো বানাই নাই। যাই হোক তারপর নিজের উদ্ভাবনী রেসিপিতে বানালাম সেই কালজয়ী গাজর কাব্য মানে গাজরের হালুয়া।
যেভাবে বানাবেন, আগেই বলে দিচ্ছি, আপুরা আমার থেকে অনেক ভাল হালুয়া বানাতে পারেন। কিন্ত সেই রেসিপি যদি ন্যাচারে প্রকাশ হয় তাহলে আমার এইটা জার্নাল অব মার্সিয়ান ফুড এ প্রকাশ হবে পিয়ার রিভিও ছাড়া। এই রেসিপি মেহনতী গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টদের জন্য। যারা একটু দেশি স্বাদের জন্য শত কিমি পাড়ি দিতে পারে।প্রথমে গাজরগুলোকে ধুয়ে peel করে নিন।
তারপর সবচেয়ে ক্লান্তিকর কাজ। যাদের গ্রেটার আছে , তাদের তো মজা। আর আমার করিডরে কোন গ্রেটার নেই। তাই গ্রেট করতে থাকুন। গ্রেট করা হয়েছে?
এবার তাহলে একটা ফ্রাইপ্যানে ৫ টেবিল চামচ বাটার দিন, আর চুলাটা ২ পয়েন্টে দিয়ে হাল্কা আঁচে বাটার গলতে দিন।
তারপর আস্তে আস্তে গ্রেট করা গাজরগুলো বসিয়ে দিন। ১০ মিনিট পর দেখবেন আস্তে আস্তে পানি বের হয়ে আসছে।চিন্তা করার কিছু নেই। এবার দুধ ৪০০ মিলি, এলাচ দানা ২/৩ টা, দারুচিনি গুড়ো অথবা ডাল, যেটা আপনার ভাঁড়ারে আছে দিয়ে দিন। ভুর ভুর করে একটা মিষ্টি গন্ধ আসছে, এইতো কে বলেছে পিএইচডি ছাত্ররা রাধতে জানেনা?সেই মর্কট কোথায়?
এরপর আসুন চিনির ব্যাপার। এই জায়গাতে আপনার পছন্দমত optimize করে নিন।তারপর নাড়তে থাকুন, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার হাত না খুলে আস্তে চায়।খেয়াল রাখবেন নিচে যেন না লেগে যায়। আমি চিনি দিয়েছি ১.৫ কফি কাপ ভরে।ইতালীয়ান কফি নয়, স্কান্ডনেভিয়ান কফি কাপ। এক ঘন্টা ধরে আস্তে আস্তে নাড়তে থাকুন। আমি জানি একবার try করার পর আপনি হালুয়া আর সহজে খেতে চাইবেননা।দেখতে দেখতে পানি শুকিয়ে আসছে। চিনি পরখ করে দেখুন।আরো লাগবে? লাগলে নামানোর আগে দিয়ে দিন। কারণ পরে দিলে কিন্ত চিনি আর গলবেনা। একটু বাদশাহী স্বাদ আনতে চাইলে,almond,pistachio, resin দিয়ে দিন।
দরাজ হস্তে দিতে থাকুন।তারপর যখন দেখবেন পানি একদম শুকিয়ে গেছে,এরপর নামিয়ে ফেলুন। একটা পাই ডিশে ঢেলে ফেলুন।
তারপর ২ ঘণ্টা পর যেমন ইচ্ছা কেটে খেয়ে ফেলুন। আর আমার ঠিকানাতে ২ পিস পাঠিয়ে দিলে পেটেন্ট ত্যাগ করে দেব।
আরিফিন সন্ধি
মন্তব্য
রমজান মাসের সকাল বেলা এইটা কি করলেন???
আমার সবচাইতে প্রিয় খাবার
প্রতি জন্মদিনে আম্মু করার চেষ্টা করে
নীরা
আমার সময়তে রাত ছিল, তাই আর কি , আমারও প্রিয় খাবার ছিল এখন বানানোর কষ্ট দেখে অপ্রিয় হয়ে গেছে।
ধন্যবাদ আপনাকে
আরিফিন সন্ধি
ভাইরে আপনের তেল আছে বলতে হবে। দুই কেজি গাজরের হালুয়া বানায়ে ফেলসেন?!
আপ্নের গাজরের হালুয়ার চেহারা বেশ ভালো হইসে, খাইতেও ভালো হবে মনে হয় (হাজার হোক এত কষ্ট করে বানাইসেন )
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
ভালো হইসে মানে? পুরা বেহেশতী স্বাদ
খাইতে মন চাইলে হাত তোলেন
আরিফিন সন্ধি
আপনি তো দারুণ রাঁধুনী! বেশ সহজ রেসিপি, আর রান্নার পর চেহারাও খুলেছে সুন্দর। ধন্যবাদ শেয়ারের জন্য।
ধন্যবাদ, এখনও লাইসেন্স পাই না
ভাই, আপনি ত দেখি এক্সপার্ট রাধুনী। আমার মত আনাড়ীরা মাঝখানের ক্লান্তিকর গ্রেট করার কাজটা করেনা। তাই হয় ব্লেন্ড করে ফেলি অথবা গাজর টুকরো করে দুধে ফুটিয়ে স্মেশার দিয়ে ভর্তা করে ফেলি। তবে এই প্রসেসে কাজ শর্টকাট হলেও, আপনার গাজরের হালুয়ার মত শাহী টাইপ হবেনা লুকটা। যারা আমার মত শুধু খাওয়ার জন্য বেঁচে থাকেন, তাদের কাজ চলে যাবে। আর আমাকে কি কেউ একটু বলবেন, URL add না করে ওয়ার্ড ফাইল থেকে কিভাবে ছবি আপলোড করা যায়?
আপনি তো আমাকে দক্ষ রাধুনী বানিয়ে দিলেন আমি যখন আমার আম্মুকে এই রেসিপি খোমাখাতাতে দেখালাম, আম্মু বলে আরো মিহি করে গ্রেট করতে হবে
তবে আপনি যে way তে বানান, সেটাও ঠিক আছে, কারণ দেশে অনেকে সেভাবে বানায়। আমার স্মেশার নেই, তাই আমি এভাবে বানিয়েছি।
আর শাহী তো আমি নাম দিলাম, আপনি খেলে বলবেন সেপাই স্বাদের হয়েছে
ছবি add কররার ক্ষেত্রে আমি flicker এ অ্যাড করে তারপর html লিঙ্ক এখানে পেস্ট করেছি
আরিফিন সন্ধি
ওয়ার্ড ফাইল থেকে পারবেন না, তবে ইমেজ ফাইল থেকে পারবেন। পোস্ট করার সময় নিচে দেখবেন একটা বাটন আছে - ছবি আপলোড করুন। ওটা ব্যবহার করলে পারবেন।
সাথে এখানকার (খ) পয়েন্টটা একটু পড়ে দেখতে পারেন।
অনেক ধন্যবাদ আরেফিন আর পছন্দনীয়। দেখি একটা ছবিবহুল পোষ্ট দেয়া যায় কিনা।
ভালোইতো হইসে ভাইয়া.........মানে মনে হচ্ছে আর কি! আমার মনে পড়ে যাচ্ছে আম্মু গাজীপুর যাবার পরে আমার আর আব্বুর যৌথ প্রচেষ্টায় এই হালুয়াটা রাঁধার কথা!
ভালোই লাগছে আপনার মন্তব্য......।।মনে মনে না.........সত্যিই
আরিফিন সন্ধি
গাজরের হালুয়া খুব একটা ভালো লাগে না
তবে ইয়ে, ডালের হালুয়া হলে...
আপনার রান্নাটা বেশ সুস্বাদু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে
কন কি বস , আপনার ফেস্ট এর বর্ণনা পড়ে না এই রেসিপি লেখলাম, ভাল না হয়ে পারে
তবে সমস্যা নেই, ডাল বেটে দিলে হালুয়া বানিয়ে দেবো
আরিফিন সন্ধি
খুঁজে খুঁজে পিঁপড়ার মত খাবার এর গন্ধে এসে পড়েছি...রোজার দিনে পড়নং+দেখনং =
খাবারের চেহারা থেকেই বোঝা যাচ্ছে দারুণ হয়েছে!!! খাইতে মুঞ্চায়!!!
_____________________
Give Her Freedom!
আইসা পরেন জলদি কইরা
আরিফিন সন্ধি
ধন্যবাদ অনেক।
_____________________
Give Her Freedom!
উহু ... ঠিক মতো হয়নাই। আমি ডেজার্ট এক্সপার্ট (স্বঘোষিত ... ) , আমার মতামতকে গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। এইটা অনেকটা গাজরের আলু ভাজি হয়েছে।
১। আরেকটু ছোট সাইজ গ্রেট করতে হবে, আপনার ওই যন্ত্রের ২ নম্বর (ছোট থেকে) দিক টা দিয়ে। তাইলে গাজর গুলা আলু ভাজির মতো তাকায়ে থাকবে না, একটু ভর্তা ভর্তা হবে।
২। গুড়া দুধ দিতে হবে শেষে।
৩। ঘি, ঘি এবং ঘি। ওইসব বাটার ফাটার এ কাজ হবে না। গাজরের হালুয়াতে গাজর বাদ দিতে পারেন কিন্তু ঘি ... অসম্ভব ...
তবে হালুয়া দেখতে আলু ভাজির মতো হলেও, লেখা কিন্ত চমতকার হয়েছে ...
আরো ছোট করতে হবে সেটা জানি, ভাইজান যদি আমারে একটু গ্রেট করে দিতেন আর কি, ২ কেজি গাজর, বেশী তো আর না
গুড়ো দুধ ছিলনা, তবে দু দু বার করে তরল দুধ দিলাম তো। আপনার জগা খিচুড়ির ফল
আর ঘি?? নতুন জিন্স না কেনার জন্য চিনি খাইনা, আপনি আবার ঘি নিয়ে আসছেন, ওরে কে কোথায় আছিস??
আপনার জগা খিচুড়ির তুলনায় এ কিছু না।
আরিফিন সন্ধি
আন-সল্টেড বাটার গলীয়ে নিলে দেশী ঘি এর ফ্লেভার আসে। তাই বাটারকে ঘি বানিয়ে নিলেই হয়।
লা জওয়াব
আরিফিন সন্ধি
গুঁড়ো দুধ না থাকলে চিনির পরিমাণ একটু কমিয়ে কন্ডেন্সড মিল্ক দিন। তাতে চেহারাতে একটু চেঞ্জ আসবে আর স্বাদটাও সিরাম হবে।
অটঃ শব্দটা resin-এর বদলে raisin হবার কথা না?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ইয়াপ পান্ডবদা... স্বাদ সেইরাম করা যাবে সাম্নের বার।
আর বানান raisin সঠিক, পরে আর এডিট করতে পারিনি, মডুগ্ণ এখনও এডিট করার বোতাম বানাতে পারেন নাই। সেলুকাস
আরিফিন সন্ধি
আপনার হালুয়ার কিউবগুলো ও সুন্দর হয়েছে , যা বাটার দিয়েছেন এখান থেকেই সুগন্ধ পাচ্ছি।
খাওয়ার জন্য হাত তুললাম।
আসেন আসেন, অত দূরে থাকলে কেম্নে হবে?
আরিফিন সন্ধি
এতো ঘণ্টা পরে খেতে হলে তো খাওয়ার আগ্রহই হারিয়ে ফেলবো!
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
আরিফিন সন্ধি
লেখাটা ভালো প্লাম
আরে রায়হান ভাই মন্তব্য করছেন!!!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আপনি তো সচল celebrity
ধন্যবাদ
আরিফিন সন্ধি
আপনি ভালো লেখেন। লিখতে থাকুন।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ঝরঝরে হয়েছে লেখাটা। হালুয়াটা চোখে দেখেই ভালো লাগলো, চেখে দেখতেও নিশ্চয় সেই রকমই হবে।
লেখা ও খাওয়া অব্যাহত থাকুক।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
তাসনীম... একদম সেইরকম...
লেখা চলতে পারে, আর খাওয়ার কথা সেটা যা বলেছেন। কবে যে দেশে যেয়ে স্টার কাবাবের কাবাব, কাচ্চি আর নীলক্ষেতের তেহারী খেতে পারবো। এত দেশের খাবার খেলাম, কিন্তু এই দুটোর কোন জবাব নাই
আরিফিন সন্ধি
ভাইয়া, বুঝলাম না, আগের বার ভাইয়া শব্দটা আসেনি কেন , sorry for that
আরিফিন সন্ধি
তাসনীম ভাইয়া, এখানে ভাইয়া আসলো না কেন ?? sorry for that
লেখা ভালু হইসে, রান্ধন টা আরো ভালু পাইলাম।
হালুয়া খাই না(গিলি)
রোজাদার মানুষদের কষ্ট দিলেন!
আপনার গাজরের হালুয়ার উপরে ঠাডা পড়ুক!
ভাল লিখেছেন - নেক্সট টাইম টাকি মাছের ভর্তার রেসিপি চাই
ভাল থাকবেন
নতুন মন্তব্য করুন