সেটা ছিল আমার পঞ্চম জন্মদিন, বড় চাচা আমার জন্য চারটা ছবি সহ রূপকথার বই কিনে আনলেন। ছুটির দুপুরে বারান্দায় বসে খুব কস্টে বানান করে করে বইগুলি পড়তাম। আমি ছিলাম বাবাদের ছয় ভাইদের যৌথ পরিবারের প্রথম সন্তান। দুপুরবেলা খাবার পর ছানাপোনাসহ আর সবাই যখন ঘুমাত, আমার কাজ ছিল আস্তে করে দরজা খুলে বাইরে চলে যাওয়া, না হলে রান্নাঘরের ভাতের হাঁড়ি থেকে ভাত নিয়ে কাঁক আর বিড়ালের মধ্যাহ্ন ভোজনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
এই সমস্ত যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে মা আমাকে ডে শিফট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। তাই ছুটির দুপুরগুলিতে মহাবিরক্ত হয়ে বইগুলি নাড়াচাড়া শুরু করি।
কিছুদিন পর চাচা আরও কিছু বই এনে ধরিয়ে দিলেন। এগুলির মধ্যে দুটি ইংরেজি ফেইরি টেলস এর বই ছিল, “দা ফ্রগ প্রিনসেস” এবং “দা বিউটি এন্ড দা বিস্ট”। অদ্ভুত সুন্দর ছবি ছিল বইগুলিতে। ততদিনে সবার বোঝা হয়ে গেছে এমন কিছু বই এনে দিলে দুপুরটা অন্তত আমার অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
সেবার স্কুলের বইমেলা থেকে কিনেছিলাম চাইনিজ রূপান্তরিত রূপকথা আর সুকুমার রায়ের ছড়া, যেটা আমার খুব প্রিয় বইগুলির মধ্যে একটা। বাবা একুশে বইমেলা থেকে কিনে দিলেন আরব্য রজনী আর সোভিয়াত ইউনিয়নের রূপকথার বাংলা রূপান্তর। ধীরে ধীরে বইগুলিতে ছবির পরিমান কমতে থাকে। এরপর কিনে দেয়া হল হুমায়ুন আহমেদের “বোতল ভুত”, একটু ভিন্ন মাত্রার যোগ হল।
ক্লাস থ্রিতে কিভাবে যেন তিন গোয়েন্দার সাথে পরিচয়ে হল এবং আমার গোয়েন্দা জীবনের শুরু এইভাবেই। প্রতিমাসে ২০ তারিখের আগে টিফিনের পয়সা থেকে সেই ২৫ টাকা জমাতেই হবে আর বইটা হাতে পেয়ে এক নিঃশ্বাসে শেষ না করা পর্যন্ত শান্তি নেই। এর সাথে যুক্ত হতে থাকে অন্যান্য গোয়েন্দা রা, সেবাপ্রকাশনীর অন্য কিশোর থ্রিলার, গোয়েন্দা রাজু থেকে শুরু করে ফেলুদা, কাকাবাবু, শীর্ষেন্দুর বনি, গৌরের কবচ, শার্লক হোমস কেউ ই বাদ গেল না। অবশ্য শার্লক হোমস ভদ্রলোক কে আমার তেমন পছন্দ ছিল না, কারন আমি রহস্যের কুল কিনারা পাবার আগেই সে সমাধান করে ফেলত। আমাকে ভাবার সুযোগ খুব একটা দিত না। এর সাথে তিন গোয়েন্দার ভাবার্থ যেসব বইগুলি থেকে নেয়া হত “হার্ডই বয়েস”, “নান্সি দ্রিউ” এসব বইগুলিও কৌতূহল বশত নিলখেত থেকে জোগাড় করে ফেলি।প্রায় রাতেই স্বপ্নে আমি রহস্যের সমাধান করে ফেলতাম। পাটি গণিতের চেয়ে ওসব সমাধান করতে আমার আগ্রহ বেশি ছিল।
কমিকস আমি কখনই তেমন পরিনি, কিন্তু টিনটিন নামের সেই তরুন রিপোর্টারের সঙ্গ আমার দারুন প্রিয় ছিল। সাথে জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশানের কথা না বললেই না। তখন অবশ্য আমি নভোচারী।
ক্লাস এইটে হাতে আসল “গর্ভধারিণী” এবং মোটামটি শিওর হয়ে গেলাম আমি আসলে জয়ীতা। দু একজন বন্ধুবান্ধব মিলে বাড়ি ছাড়ার প্ল্যান ও ফাইনাল করেছিলাম, এর সাথে রেসাল্ট খারাপ হবার কারন ও ছিল। এরপর “সেই সময়”, “প্রথম আলো” এসব বইগুলিও পড়ে ফেললাম এস এস সির পর। সাত কাহন পড়েছি কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে, যে বইটার প্রভাব আমার ব্যক্তিগত জিবনে অনেক বেশি।
এরমধ্যেই কখন যে কোন ফাঁকে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিভুতি, শঙ্কর এরা পাঠ্য পুস্তক ছেড়ে আমার পাঠাগারে স্থান নিল তা ঠিক বলতে পারব না। এভাবে আমার জীবনে লেখকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
কিন্তু আমার করুণা হয় আজকালকার সেসব চার চোখা বাচ্চা ভয়ংকর কাচ্চা ভয়ংকরদের জন্য যারা কম্পিউটার গেমস, মুভি আর কার্টুন এ মত্ত। বইয়ের মধ্যদিয়ে যে কল্পনা রাজ্যের অসীমে উড়ে বেড়ানোর আনন্দ হয়ত এরা কখনই জানবে না। কম্পিউটার বা টিভির মনিটরে এদের কল্পনা শক্তি বাক্সবন্দী হয়ে গেছে।
বিঃ দ্রঃ- সচলে এটা আমার প্রথম লেখা, বানান ও অন্যান্য ভুলত্রুটি গুলি ক্ষমা করলে বাধিত হব।
শাব্দিক
মন্তব্য
সচলে স্বাগতম
(বানানভুলগুলো ক্ষমা করা গেলো শুধরে নেবার শর্তে সচলে প্রচুর বানানবিশারদ আছেন, সাহায্য চাইলে তাঁরা খুশি মনেই ভুলগুলো দেখিয়ে দেবেন আমি বানানবিশারদ নই, প্রচুর ভুল করি নিজেও, তবে এই ক'টা চোখে পড়লো...
কস্টে > কষ্টে, কাঁক > কাক, যন্ত্রনা > যন্ত্রণা, নিলখেত > নীলক্ষেত, পরিনি > পড়িনি, দারুন > দারুণ, জিবনে > জীবনে)
ধন্যবাদ, শর্ত মেনে নিলাম।
বানান বিশারদদের সাহায্য কিভাবে এবং কোথায় পাব জানালে বাধিত হব।
[বানানের আরো দু পয়সা--
পরিমান >পরিমাণ, তরুন >তরুণ, বিভুতি >বিভূতি, রেসাল্ট >রেজাল্ট, ভুত > ভূত, কুল > কূল, হুমায়ুন >হুমায়ূন, ফার্স্ট >ফাস্ট, মোটামটি >মোটামুটি
হাতে আসল >হাতে আসলো (আসল :এই বানান দিয়ে তো 'মূল' বা রিয়েল বোঝাবে।)
কিছু বাড়তি স্পেস আছে। যেমন, পাটি গণিত> পাটিগণিত, কল্পনা শক্তি> কল্পনাশক্তি।]
ঘাবড়াবার কিছু নেই, লিখতে লিখতে ঠিক হয়ে যাবে...
সচল পরিবারে স্বাগতম।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
তিথি থুক্কু তিথী সত্যি কিন্তু ভয় পাইয়ে দিলেন। বানান এ আমি বরাবরই কাঁচা। অচিরেই একজন বিশারদ দরকার।
এবং স্বাগতম!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
ভালই তো ... চলুক
লেখা ভালো লেগেছে। আপনি আগাথা ক্রিস্টি পড়েছেন কিনা জানিনা। না পড়া থাকলে পড়ে ফেলুন। তিন গোয়েন্দা হার্ডি বয়েজের ভাবার্থ না, রবার্ট আর্থার জুনিয়রের 'থ্রী ইনভেস্টিগেটর'-এর অনুবাদ।
বাচ্চাদের নিয়ে দুঃখ করবেন না। ওরা ওদের মত ঠিকই আনন্দে আছে। তবে কম্পিউটার গেমস আর কার্টুন সীমিত করা উচিত অন্যান্য শারীরিক কারনে।
ধন্যবাদ রু,
আগাথা ক্রিস্টি পরেছি।
থ্রি ইনভেস্টিগেটারস এর কথা মনে ছিল না। তিন গোয়েন্দা আসলেই এর ভাবার্থ। কিন্তু “হার্ডি বয়েস” আর “নান্সি ড্রিউ” এর কিছু বইয়ের কাহিনী দেখবেন হুবুহু তিন গোয়েন্দার সাথে মিলে যায়।
সচলে স্বাগতম। লিখতে থাকুন হাত খুলে, মন খুলে। শুভকামনা
আপু, আপনারা পড়লে আমি ও চেষ্টা করব।
সচলে স্বাগতম। লিখতে থাকেন হাত খুলে, আর আমরা পড়তে থাকে মন খুলে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ।
নিজের সাথে মিল পেলাম অনেকখানি। তবে এর সাথে যোগ করতে চাই একেকটা বয়সে বাবার হাত ধরে পাওয়া দৃষ্টিপাত, কড়ি দিয়ে কিনলাম, আমি বিজয় দেখেছি .......! বাবার উদ্দেশ্যে মন্তব্য করলাম, কেন যেন মনে পড়ছে।
সচলে আপনার লেখা চলুক ভাই, কত সহমর্মী পেলেন খেয়াল করেছেন? এত খ্রাপ লোকের পাল্লায় জীবনে পরি নাই আমি, এদের যন্ত্রনায় সচল ছাড়তে পারছিনা! এই রহস্য ভাঙতে পারবেন ভাই গোয়েন্দাপ্রবর?
বাবারাই বোধহয় হাতে ধরে জীবন চলা শিখায়।
ভাই বানিয়ে ফেললেন!!!
আপনার মন্তব্য পড়ে ভাল লাগল। সব খারাপ লোক গুলির খারাপ লেখাগুলিও কেন জানি ভালই লাগছে। সচলের নেশায় পেয়েছে মনে হয়।
আমাদের একটা কমন আচরণ হলো পরবর্তী প্রজন্মরে নিয়া হতাশা করা। আমরা কী ছিলাম... মহান মহান... পরবর্তী প্রজন্ম বুঝি গোল্লায় গেলো...
আমারে নিয়া আমার বাপ চাচারা করছে, তাগোরে নিয়া তাগো বাপ চাচারা করছে
এভাবেই চলতেছে যুগ যুগান্তর...
অহেতুক
আপনার প্রজন্মে যেমন অনেক পোলাপাইনই আউটবই হাতে নিয়া দেখে নাই
আপনার পরের প্রজন্মেরও অনেকরে পাইবেন যারা আপনার চেয়ে বেশিই বই পড়ে...
আমাদের বাপ চাচাদের আক্ষেপ ছিলো তারা রাইতে শুয়া দাদী নানীর কাছে ডালিমকুমারের গল্প শুনতো, তার বদলে আমরা কাগজের বই পড়ি
আর আমাদের আক্ষেপ বই পড়া বাদ্দিয়া এখনকার পোলাপানে কম্পিউটার পড়ে...
হতাশার জন্মান্তর থামুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ঠিকই বলেছেন।
তার বাবা তার বাবা তার বাবা......কেউই সে জাল থেকে বের হয় নাই।
সেটা ছিল আমার আমার পঞ্চম জন্মদিন লাইটনটার মধ্যে একটু ইংলিশ ভাব আছে। যৌথ পরিবারের অভিজ্ঞতাগুলা আরো বলতে পারেন। আর হতাশার কিছু নাই। যা আছে তাই নিয়াই না যুদ্ধ?
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ইংলিশ ভাব আছে কিনা জানি না, কিন্তু বই পড়াটা আসলেও এভাবেই শুরু হয়। আইডিয়ার জন্য ধন্যবাদ, যৌথ পরিবারের অনেক মজার অভিজ্ঞতা আছে, চেষ্টা করব লিখতে, পারব কিনা জানি না।
ভাব ধরার জন্য না, ইমানে কইতাছি এডগার পো আর আসিমভ একটু ট্রাই মাইরেন, সাথে হ্যাগার্ড।
এইগুলি পড়ি নাই। ট্রাই মারবনে।
নানুবাসায় নানা আর মামা'র আলাদা বইয়ের কালেকশন ছিল। আর ছিল বয়সের দেয়াল। মামার বইতে এসএসসি পর্যন্ত হাত দেয়া বারণ, পুরো স্কুল লাইফ অপেক্ষায় থেকেছি কবে এসএসসি পাশ করব! নানার আলমারির ব্যাপারটাও মজার। চারটা তাক আলমারিতে, প্রতি তাকে আবার এক দুই কি তিন কলাম করে বই সাজানো। পড়ার নিয়ম খুব সোজা, প্রথম কলামের বই শেষ করার আগে দ্বিতীয় কলামের বই ধরা চলবে না। আর এক তাকের বই পড়ে শেষ করলেই কেবল পরের তাকের বই পড়া যাবে। প্রথম তাক জুড়ে ছিল রাশিয়ান বইগুলো- কী অসাধারণ সব গল্প আর ছবি!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
গল্পের বই নিয়ে স্মৃতিগুলো আরো অসাধারণ।
facebook
নতুন মন্তব্য করুন