পরিক্রমাঃ দ্য ট্রাভেলগ [সপ্তম পর্ব]

ওডিন এর ছবি
লিখেছেন ওডিন (তারিখ: রবি, ২৮/০৮/২০১১ - ৭:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"The quickest way to learn about a new place is to know what it dreams of."
-Stephen King

ঢাকা বা এইরকম বড় শহরের সমস্যা হলো রাতের আকাশ কখনো পুরোপুরি অন্ধকার হয় না, একটা আবছা ঘোলাটে আলো সবসময়েই থাকে। যদ্দুর মনে হয় বাতাসে মিশে থাকা ধূলোর জন্য, যেইটা রাতের শহরের আলোকে আটকে রাখে। অ্যামবিয়েন্ট লাইট আরকি। আর এর জন্য খালি চোখে একটা তারাও দেখা যায় না, আকাশ পরিষ্কার থাকলেও। আর আকাশের অনন্ত নক্ষত্ররাজী তো অনেক পরের একটা ব্যপার।

গঙ্গোত্রী, কেদারনাথ বা এইরকম হিমালয়ের এই অংশের উঁচু জায়গার বাতাস আর ওপরের আকাশ, দুইটাই অস্বাভাবিক পরিষ্কার। তাই নক্ষত্রের আলো বলে যে একটা জিনিস আছে-এইটা এখানে এসেই প্রথম বুঝতে পারছি। অবশ্য যাঁরা গ্রামে বা ছোট মফস্বল শহরে বড় হয়েছেন, তাঁদের কাছে হয়তো এইটা খুব বড় কোন ঘটনা না, কিন্তু আমার মতো শহুরে ভূতের জন্য এইটা আসলেই অনেক ইন্টারেসটিং একটা ব্যপার ছিলো। সত্যি বলতে কি আমি একেবারে হা করে আকাশ দেখতাম সেই সময়টায়। ঠান্ডায় জমে যাওয়া নিঃশ্বাসে চশমার কাঁচ ঝাপসা হয়ে যেতো, টিশার্টে সেইটা মুছে নিয়ে আবার হা করে আকাশ দেখাদেখি চলতো।

সেই রাতেও নক্ষত্রদর্শন পুরোদমে চলছিলো। আর মনে মনে নিজেকে বকাবকি করছিলাম জ্যোতির্বিজ্ঞানে আমার শূন্য জ্ঞানের জন্য। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সেই গান-আরতি-পূজোর শব্দভরা উঠোনে বসেই ঘুমিয়ে পড়লাম। আর স্বপ্নে দেখলাম যে আমি সন্ধ্যায় দেখা সরু গলিগুলোর মধ্যে হেঁটে বেড়াচ্ছি, তারপরে একসময় গোলকধাঁধার মধ্যে হারিয়ে গেলাম। অনেকক্ষন পরে এসে পড়লাম একটা কানাগলিতে, যার শেষ মাথায় একটা দরজা, দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকেই দেখি মেডিকেল কলেজের ফিজিওলজি ক্লাশ হচ্ছে আর ক্লাশ নিচ্ছেন আমাদের ফিজিওলজির প্রফেসর মেজবুন ম্যাডাম। মাসলের ফিজিওলিজি পড়ানো হচ্ছে। অনেক ভেবেচিন্তে ক্লাশের পেছনদিকে বসলাম, বন্ধু মোটকু জাহিদের পাশে, ওর খাতা থেকে একটা পাতা ছিঁড়ে নিয়ে লেকচার টুকতে লাগলাম, তারপরে ম্যাডামের নাকিসুরের একঘেঁয়ে পড়ানো শুনতে শুনতে ঝিমানো শুরু করলাম। হঠাৎ শুনি মেজবুন ম্যাডাম আমার কাঁধ ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলছেন, -তুঁমিই ছেঁলেএএ আঁমাকে বঁলোওঁও- ফ্র্যাঁঙ্ক স্টাঁর্লিং'স লঁ' কিঁ জিঁনিস? মন খারাপ

এইসময় আমারও ঘুম ভেঙ্গে গেলো। দেখি সাধুবাবা আমার কাঁধ ঝাকাচ্ছেন। ওনার ধ্যান করা শেষ, রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। এই জায়গার হিসেবে সেটা অনেক রাত, আর ঠান্ডায় তো আছেই। আমিও বুঝতে পারলাম, শীতে একেবারে হাত পা অসাড় হয়ে গেছে। পাশের মাটির হাঁড়ির আগুনে হাত পা সেঁকে গরম করে নেয়া হলো। তারপরে একটা ছোট্ট রেস্টুরেন্টে ভেজিটেবল স্যুপ আর জিলিপি দিয়ে আজবরকমের একটা ডিনার সেরে মুদির দোকানের ওপর দোতলায় আমাদের সেই থাকার জায়গায় ফেরত গেলাম। তারপরে জ্যাকেটের হুড চোখ পর্যন্ত টেনে ঘুমোনোর চেষ্টা করলাম। আর অল্প পরেই আরেকটা স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। এইবার দেখলাম বিশাল একটা কড়ায় গোবদা সাইজের জিলিপি ভাজা হচ্ছে। আর যিনি ভাজছেন তিনি হলেন হাজারখানিক পিটপিটে চোখ আর রোমশ পাওয়ালা একটা মাকড়শা! আরো অনেক কিছু মনে হয় ছিলো, কিন্তু সকালবেলা উঠে সেগুলো আর মনে পড়লো না। বুঝলাম, কেদারনাথ খুবই সাইকোলজিকালি অ্যাকটিভ একটা জায়গা, অবশ্য উচ্চতা আর অক্সিজেনের স্বল্পতাও এর কারন হতে পারে। কারন একই রাতে এতো আজব সব স্বপ্ন একই সাথে নিকট অতীতে দেখেছি কিনা মনে পড়লো না।

শাস্ত্রমতে কোন তীর্থস্থানে গেলে তিন রাত্তির বাস করার নিয়ম। শাস্ত্রটাস্ত্র তেমন না মানলেও আমার এই কাজটা করতে কোনওরকম আপত্তিই ছিলো না। কাছাকাছি খুবই ইন্টারেস্টিং কিছু জায়গা আছে। মন্দাকীনির উৎস পর্যন্ত যাওয়া না গেলেও ওর হিমবাহের 'স্নাউট'টা পর্যন্ত নাকি যাওয়া যায়। আর কয়েকটা হাই অলটিচিউড লেকও আছে আশেপাশে, যেমন চোদ্দ হাজার ফিট ওপরের গান্ধী সরোবর। আর আট কিলোমিটার দূরে বাসুকি তাল নামে নাকি অপার্থিবরকমের সুন্দর একটা লেকও আছে। । কিন্তু আবারো অর্থনৈতিক গিয়ানজাম, আর সময়ের ব্যপারটাও ভেবে দেখতে হবে। করুন মুখে বাস্তবতা মেনে নিতে হলো, একটু পরেই আবার রওনা। তবে তার আগেই যদ্দুর সম্ভব আশপাশটা দেখে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে।

দেখা গেলো শুধু মন্দাকীনীর গ্লেসিয়ারটা দেখতে গেলে দেড় থেকে দুই ঘন্টা ট্রেক করতে হবে, সবমিলিয়ে ঘন্টাচারেকের ব্যপার। কিন্তু বেলা বারোটার মধ্যে গৌরিকুন্ডে ফেরত না গেলে ট্রান্সপোর্টের একটা ঝামেলা হবে। তাই আমরা দুঃখের সাথে আমাদের প্ল্যানের আরো কাটছাঁট করলাম। তার মানে বলতে গেলে প্ল্যানের আর কিছুই থাকল না। সাতটা ধুন্ধুমার সাইজের সিঙ্গারা (এরা বলে সমোসা! ক্যান কি জানি?) টমেটো কেচাপ দিয়ে খেয়ে মনের দুঃখটাকে কোনমতে চাপা দিলাম। আমি সবসময়েই খেয়াল করেছি, মুড এলিভেট করার জন্য খাওয়াদাওয়ার কোন বিকল্প নাই। এরপর শেষবারের মতো শহরটা একটু চক্কর দিয়ে, আর সাধুবাবার সামান্য কেনাকাটার পরে ফেরার জন্য হাঁটা শুরু হলো।

গতকালের ট্রেইল ধরেই রিভার্স হাটা, একেবারে মর্ত্যে অবতরণ যাকে বলে। তবে যা ভেবেছিলাম তার থেকে বেশ কঠিনই হলো কাজটা। চড়াই ভাঙ্গার কষ্ট আছে ঠিকই, কিন্তু ব্যপারটা বিপজ্জনক না, নামতে গিয়ে প্রতি পদক্ষেপেই পা পিছলানোর একটা ভয় থেকে যায়। আর গলা বরফ-কাদা-ঘোড়ার ইয়ের বিপজ্জনক মিকশ্চার তো আছেই। সবকিছু মিলিয়ে চোদ্দ কিলোমিটার পথে ফেরত আসতেই ঘন্টাতিনেক লেগে গেলো। মাঝে অবশ্য থেকে থেমে ছবি তোলা, চা খাওয়া আর জুতোর মেরামতির জন্য সময় ব্যয় হয়েছে।

গৌরিকুন্ডে পৌঁছেই আবার দৌড়! দোকান থেকে কেনা স্নিকার্স দিয়ে আলট্রা লাইট লাঞ্চ করেই আবার যাত্রা শুরু। পরের গন্তব্য যোশিমঠ হয় বদ্রীনাথ। আলভোলা শিবের আস্তানা থেকে সদাসিরিয়াস লর্ড বিষ্ণুর কর্পোরেট হেডকোয়ার্টারে। আর পথে যেখানে রাত হবে সেইখানেই কাত হতে হবে।

দেখা গেলো কাত হওয়ার সেই জায়গাটা হলো তিলওয়াড়া বলে একটা ছোট্ট গ্রাম, অগস্ত্যমুনি শহরটার একটু আগে। এইখানে একটা সরকারি রেস্ট হাউজ আছে, একেবারে মন্দাকিনীর পাশেই। আরো হয়তো এগোনো যেতো, কিন্তু এই অঞ্চলের প্রাত্যহিক বৈকালিক বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় আমরা এইখানেই রাতে থাকার ঠিক করলাম। দুর্দান্ত একটা শাওয়ারের পর নদীর ধারের টেবিলে বসে একেবারে ঔপনিবেশিক কায়দায় বৈকালিক চা খাওয়া হলো। আমরা দুইজনেই একমত হলাম যে গত দুইদিনের ধকলের পর এইটুকু বিলাসিতা আমরা ডিজার্ভ করি।

চা খাওয়ার পরে একটা ছোট্ট ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে গেলাম অগস্ত্যমুনিতে অগস্ত্য নামের ঋষির আশ্রম দেখতে। এমনিতে এই ভদ্রলোককে আমার বেশ পছন্দ। দুর্বাসার মতো পাজিটাইপের না হলেও ভদ্রলোক 'আ রিয়েল টাফ ড্যুড' যাকে বলে, ঝামেলাবাজ দেবতাদেরও অভিশাপটাপ দিয়ে দৌড়ের ওপর রাখতেন। আর সূর্যের সাথে তার গিয়ানজামের কথা, আর এর ফলে উদ্ভূত 'অগস্ত্য যাত্রা'র ব্যপারটা আশা করি সবাই জানেন।

ফিরতে ফিরতেই সন্ধ্যা আর ঘুমোনোর আগে বাকি সময়টা কাটলো কেয়ারটেকার কাম বাবুর্চির সাথে অত্র অঞ্চলের প্রাক্তন মানুষখেকোদের ব্যপারে আলাপ করে।

পরদিন সকালে আবারো বৃষ্টি, কিন্তু সেইটা মাথায় নিয়েই আবার যাত্রা শুরু। হরিদ্বার থেকে শ্রীনগর-দেবপ্রয়াগ- রুদ্রপ্রয়াগ- কর্ণপ্রয়াগ হয়ে যোশিমঠ পর্যন্ত রাস্তাটা ন্যাশনাল হাইওয়ের অংশ, এইটাই সরাসরি বদ্রীনাথ পর্যন্ত চলে গেছে, তাই বৃষ্টি থাকলেও আমাদের যেতে খুব একটা সমস্যা হলো না। তবে সমস্যা যে কিছু হয় নাই তা না, যতোই ন্যাশনাল হাইওয়ে হোক, মাঝে মাঝেই সরু রাস্তার পাশের হাজারখানিক ফুট গভীর খাদ আমার মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো। আমার সহযাত্রীর অবশ্য কোন সমস্যা হয়নি, কারন উনি প্রায় পুরোটা সময়েই চোখের ওপর মাফলার মুড়ি দিয়ে 'সমাধিস্থ' অবস্থায় ছিলেন, আর থেকে থেকে জিজ্ঞেস করছিলেন আমরা গন্তব্যে এসেছি কি না।

!

দুপুরের একটু আগে আমরা এসে পৌঁছলাম কর্ণপ্রয়াগে। কর্ণ এইখানেই অলকানন্দার তীরে বসে তপস্যা করে ইন্দ্রের কাছ থেকে কবচ আর কুন্ডল আদায় করেছিলেন। এই জিনিসগুলোর জন্য তিনি ছিলেন অজেয়। কিন্তু উনি আবার কেউ কিছু চাইলে তাকে না করতেন না, তাই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে কৃষ্ণ এক বুড়োর ছদ্মবেশে এসে ছেলেকে সুস্থ করার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে কবচ আর কুন্ডলদুটো নিয়ে যান। কর্ণ ঠিকই জানতেন কাকে তিনি কি দিচ্ছেন, যার মূল্য হয়তো তাঁকে তাঁর জীবন দিয়েই দিতে হবে। কিন্তু বিইং দ্য ব্যাডঅ্যাস আলট্রা টাফ গাই হি ইজ, উনি ঠিকই দিয়ে দিলেন। তখন কৃষ্ণ ভয়াবহ ইমপ্রেসড হয়ে তাঁকে অনুরোধ করলেন পান্ডবদের পক্ষে যোগ দেয়ার জন্যে, কারন প্র্যাকটিকালি তিনি ছিলেন তাঁদের বড় ভাই, কুন্তির বড় ছেলে। কিন্তু কর্ণ প্রত্যাখান করলেন ঘৃণাভরে। যারা তাঁকে জন্মের পরেই ত্যাগ করেছে, সারথির ছেলে বলে অপমান করেছে, তাদের সাথে যোগ দেয়া সম্ভব নয়। তিনি তো অকৃতজ্ঞ নন, কৌরবেরা তাঁকে বুকে তুলে নিয়েছে, তিনি এখন তাদের সেনাধ্যক্ষ! নিজের স্বজনরা তাঁকে ত্যাগ করলেও তিনি তো তাঁর দুঃসময়ের সঙ্গীদের ত্যাগ করতে পারেন না। এতো দিন কোথায় ছিলো ওরা?

আমার (এবং আরো অনেকের মতেই) মহাভারতের সবচে' ট্র্যাজিক চরিত্র কর্ণ। নিয়তি সবসময়েই তাঁর সাথে পরিহাস করেছে, এমনকি সব শেষ হবার সময়েও। কাদায় তাঁর রথের চাকা আটকে যায়, সেইটা ছাড়ানোর সময় অর্জুন তাঁকে আক্রমণ করেন। নিরস্ত্র অবস্থায় তিনি মারা যান।

karnaprayag

এমনিতে কর্ণপ্রয়াগে সেইরকম দেখার কিছু নেই। পাহাড়ের ঢালে একটা ছোট্ট জায়গা, শহর বললে একটু বেশিই বলা হয়। তবে এর গুরুত্ব অন্যখানে, গাড়োয়াল আর কুমায়ুনের জাংশন হিসেবে। কর্ণপ্রয়াগ থেকেই একটা রাস্তা চলে গেছে বাগেশ্বর আলমোড়া হয়ে পিথোরাগড় এর দিকে। পরিক্রমার মহাপরিকল্পনা না থাকলে আমরা ওইদিক দিয়েই একেবারে কাঠগোদাম পর্যন্ত চলে যেতাম। কিন্তু এইবার সেইদিক দেখা বাদ থাকলো।

পিপলকোটি হয়ে যোশীমঠ পৌঁছলাম দুপুর দুইটার দিকে। তারপরে আমরা পড়লাম যোশীমঠের বিখ্যাত ট্রাফিক জ্যামে। জ্যামের কারণ, এইখান থেকে গোবিন্দঘাট পর্যন্ত ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক, আর একদিকের ট্রাফিক ছাড়া হচ্ছে দুই ঘন্টা পরপর। ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যেই ছাতা নিয়ে শহর দেখতে বের হলাম।

১৭৫ মিটার উঁচু যোশীমঠের এখনকার আকর্ষন গুরু শঙ্করাচার্যের করা মঠটা হলেও এর মূল ব্যপার ছিলো কুয়ারি পাস আর নিতি পাস নামের দুইটা গিরিপিথ হয়ে তিব্বতের কৈলাস-মানস সরোবর যাবার রাস্তা। তীর্থযাত্রীরা ছাড়াও দক্ষিন তিব্বতের সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের অনেকগুলো ট্রেড রুটের একটা ছিলো এই পথেই। হাজারখানিক বছর ধরে চালু থাকলেও ষাটের দশক থেকেই এই পথ বন্ধ, যেমন বন্ধ হয়ে আছে বাংলাদেশের উত্তরে কালিম্পং-সিকিম থেকে নাথু লা হয়ে পথ, আর পশ্চিমে কাশ্মীরের শ্রীনগর থেকে কারগিল-লেহ হয়ে যাওয়া পথটা। আর এইজন্যেই মনে হয় যোশীমঠের আগের মতো সেই রমরমা ভাব আর নেই। তবে একটা বেশ বড় ক্যান্টনমেন্ট আছে। সামরিক উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। আর এইজন্যে এইদিকের রাস্তাও মনে হয় অপেক্ষাকৃত ভালো।

চলা শুরু করার পরে আবার থামতে হলো একটু দূর গিয়েই, গোবিন্দঘাটে। এর মধ্যে অবশ্য আমরা প্রায় হাজারখানিক মিটার উঠে এসেছি, ততক্ষণে বৃষ্টি কমে গেছে, কিন্তু হঠাৎ করে ঠান্ডা কনকনে বাতাস বওয়া শুরু করলো। আবার অপেক্ষা, তবে এইবার ঠান্ডা আর বৃষ্টির চোটে গাড়ি থেকেই নামা গেলো না। বামদিকেই অলকানন্দা, মাঝে মাঝে অনেক জায়গাতেই জমে একেবারে শক্ত হয়ে সুন্দর সাঁকোর মতন করে ফেলেছে। লোকজন দিব্যি এর ওপর দিয়ে হাঁটাহাটি করছে। গোবিন্দঘাট থেকে ডানদিকের পথ দেড়দিনের ট্রেকিং এর পর চলে গেছে ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্সে, সেইটা ফেরার পথে দেখে আসবো- মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম। যথারীতি এইটাও দেখে আসা হয় নাই।

frozen alkananda

অনেক চড়াই আর অনেকগুলো হেয়ারপিন বেন্ড পেরিয়ে বদ্রীনাথ ভ্যালিতে আমরা যখন ঢুকলাম, তখন বিকেলের শেষ। মেঘ-বৃষ্টি-কনকনে হাওয়া-লো ভিজিবিলিটি, সব মিলিয়ে দুর্দান্ত অ্যাডভেঞ্চারপূর্ণ একটা আবহাওয়া। ভয় যে লাগছিলো না তা অবশ্য না। কিন্তু বাতাসে অক্সিজেন কম থাকলে ব্রেইনের অ্যাকটিভিটি এমনিতেই কমে যায়, তাই মনে হয় মগজে ভয় জিনিসটা ঠিকমতো তৈরী হচ্ছিলো না। হাসি

the road

সাড়ে পাঁচটার দিকে কুয়াশা বৃষ্টি মেঘ এইসব মায়াবী আর বিপদজনক জিনিসপত্রের মাঝখান দিয়ে শহরটা আবছাভাবে দেখতে পেলাম।

first glimpse of cloud covered badrinath

৩২০০ মিটার উঁচুতে বদ্রীনাথ বিখ্যাত বিষ্ণুর মন্দিরের জন্য। আর এর সাথে সেই প্রাক্তন ট্রেইডরুটের ব্যপারটা মিলে শহরটাকে বেশ জমজমাট করে ফেলেছে। অলকানন্দার দুইপাশেই ছড়ানো শহর। বামদিকে পুল পার হয়ে মন্দির, আর এর পাশ ঘিরে পুরোনো শহর, আর ডানদিকে শহরের নতুন অংশ, থাকার জায়গা, বাজার, বাসস্ট্যান্ড এইসব। আমরা আপাতত ডানদিকের পথই ধরলাম, আগে থাকার জায়গা খুঁজে বের করা। সাধুবাবার কল্যাণে আমরা আগের থেকেই বালানন্দস্বামী আশ্রম বলে একটা জায়গায় কথা বলে রেখেছিলাম। এই বালানন্দস্বামী ভদ্রলোক আবার আমাদের ঢাকার শাহবাগের আনন্দময়ী আশ্রমের (রমনা কালীমন্দির আরকি) সাধু ছিলেন। উনি এখন না থাকলেও তাঁর এক শিষ্য এইখানে আছেন, প্রথমেই আমরা অফিসঘরে গেলাম তাঁর সাথে দেখা করতে। উনি আবার আমাদের কথা শুনে রীতিমতো নস্টালজিক হয়ে পড়লেন। চুয়ান্ন সাল পর্যন্ত নাকি উনি রমনায় ছিলেন। আমাদের আবার পুরোনো অ্যালবাম খুলে রমনার শাদাকালো ছবি দেখালেন। একবার যেতে চান, সেইকথাও জানালেন। আর তাঁর লোকেদের হুকুম দিলেন আমাদের ভালো দেখে ঘর দেয়ার জন্য। 'রানিং হট ওয়াটার' সহ।

যা বুঝলাম এই আশ্রমটা তিনটে আলাদা আলাদা উইং এর যোগফল। আলাদা তিনটে সময়ে বানানো। সামনের অংশটা একেবারে পুরোনো, সেই পৌরাণিক যুগেরই হবে। পাথরের ভেজা ভেজা দেয়াল, নিচু ছাত আর দরজা। কোনো জানালা নেই। আর পরের অংশটা আমাদের শাঁখারি বাজারের বাড়িগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। ছোট ছোট পড়া ইঁটের বানানো। আর সবচে' পেছনের পাহাড়ের গায়ে লাগোয়া অংশটাই অপেক্ষাকৃত নতুন, পঞ্চাশ ষাটের দশকের কনস্ট্রাকশান, এরই আবার তিনটা সাব উইং আছে- তিনটা আলাদা আলাদা সিঁড়ি নিয়ে। সবকিছু দেখে মনে হলো একেবারে হগওয়ার্টস স্কুল অফ উইচক্রাফট অ্যান্ড উইজার্ড্রি! সিঁড়িগুলো এক্ষণি নড়েচড়ে নিজেদের রিঅ্যারেঞ্জ করা শুরু করবে।

তবে আমরা ঘরটা পেলাম দুর্দান্ত! পাঁচ কি ছয় তলা সেইটা ঠিক বুঝতে পারলাম না, কারন পাহাড়ের ঢালে বানানো বাড়িতে এইসব তলাটলার হিসাব একটু বিভ্রান্তিকর। কিন্তু দারুণ একটা ভিউসহ! এখন মেঘ আর কুয়াশায় ঢাকা থাকলেও বুঝতে পারছিলাম নদীর ওপারেই পুরোনো শহরটা একেবারে বিছিয়ে আছে। আমার সবচে পছন্দ হলো বাথরুমটা। আর 'রানিং হট ওয়াটার' এর মাজেজা এইবার বুঝতে পারলাম। এক লোক দৌড়ে গিয়ে বালতিতে গরম পানি এনে দেবে! হাসি

হট ওয়াটারে একটা মারদাঙ্গা হট শাওয়ারের পর আমরা অলকানন্দার ওপরের পুল পেরিয়ে যাচ্ছিলাম মন্দির দর্শনে। কিন্তু পুলে ওঠার আগে ঠিক পাশেই একটা 'চাইনিজ রেস্টুরেন্ট' চোখে পড়লো! গঙ্গোত্রীতে পিজার দোকানের পরে এইবার আরেকটা স্বর্গীয় দৃশ্য অবলোকন করা গেলো। আমি ভয়ে ভয়ে সাধুবাবাকে বললাম, 'মহারাজ, ইয়ে মানে দেবতার পূজার আগে পেটপূজাটা, ইয়ে মানে বোঝেনই তো...' উনিও দেখি কতক্ষন নীমিলিত নয়নে ভেবে বললেন' আচ্ছা চলো। '

চাইনিজ জিনিসটা নিরামিষ হলেও খেতে ছিলো দুর্ধর্ষ! পেটদেবতার পূজো শেষ করে এরপরে আমরা গেলাম মূলদেবতা দর্শনে। একটা হট ওয়াটার স্প্রিং এর ওপরে মন্দিরটা কে বানিয়েছিলেন এইটা জানা যায় না, তবে পৌরাণিক যুগ থেকেই লোকজন এইখানে আসছেন। আর অষ্টম শতকে শঙ্করাচার্য এইটাকে মেরামত করে নিয়মিত পূজা চালু করেছিলেন। এগারো শতকের দিকে এখনকার টেম্পল কমপ্লেক্সটা বানানো হয়। আর আঠারো শতকের দিকে বরফ ধস আর ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলে জয়পুরের মহারাজা এইটা সংস্কার করেন, বাইরের রঙচঙ্গে প্রবেশপথও সেইসময়েই বানানো। ভেতরে মূল মন্দিরের ধাঁচটা অনেকটা কেদারের মনিরের আদলেই করা। তবে ভেতরের বিগ্রহ একেবারে অন্যরকম। চতুর্ভুজ বিষ্ণু পদ্মাসনে বসে আছেন। ভাব অনেকটা বোধিসত্বের মতো, আর এইজন্যেই মনে হয় বুদ্ধের অনুসারিরা এইখানে তাকে বোধিসত্ব হিসেবে মনে করেন।

ঘুরোঘুরি করে আমরা তাড়াতাড়িই ফেরার পথ ধরলাম, কারন ঠান্ডায় আমাদের জমে যাওয়ার মতো অবস্থা। রাতের বেলাও খুব সুবিধে করতে পারলাম না, শীত, তারপরে অল্প শ্বাসকষ্ট। লাভের মধ্যে যেইটা হলো, বারান্দা থেকেই চমৎকার একটা ভোর দেখতে পেলাম।

dawn

রোদ ওঠার পর ঠান্ডাটা একটু কমতেই বের হয়ে পড়লাম। কালকের মেঘ-কুয়াশা ইত্যাদি হাবিজাবির কিচ্ছু নেই, চমৎকার ঝকঝকে একটা দিন।

badrinath

শহর নর আর নারায়ণ, এই দুইটা পর্বতের ঠিক মাঝখানে। বিশাল দুটো চূড়ো থেকে নাকি শীতের সময় প্রায়ই বরফ ধসে পুরোনো শহরটাকে ঢেকে ফেলে, গরমের শুরুতে আবার বরফ সরানো হয়। তবে নতুন শহরটাতে
এইরকম ঝামেলা হয় না। অনেকে নাকি শীতের সময়েও থেকে যায়, রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও।

nar
নর

narayan
নারায়ণ

taken from the restaurant!
পুরোনো শহরে ঢোকার আগে, রাতের সেই রেস্তোঁরার জানালা থেকে

.
অলকানন্দার পুলের ওপর দাঁড়িয়েও কিছুক্ষন প্রাতঃকালীন পর্বতবায়ু সেবন করা হলো

তারপরে আরেকবার মন্দির দর্শন
the temple

মন্দির দেখে কিছুক্ষন পুরোনো শহরে হেটে বেড়ালাম। জায়গাটা অনেকটা হরিদ্বার আর কেদারনাথের মাঝামাঝি অবস্থায় মনে হলো। উচ্চতা বা আবহাওয়া আবার কেদারনাথে মতো, কিন্তু হরিদ্বারের মতো ধর্মশালা আর আশ্রম আর সাধুদের আড্ডা উচ্চতা বা আবহাওয়া আবার কেদারনাথে মতো, কিন্তু বেশ গিয়ানজামপূর্ণ। সরাসরি বাসের পথ হওয়াই মনে হয় এর কারণ, লোকজন পায়ে না হেঁটেই চলে আসে। বাজারে বেশ কয়েকটা তিব্বতি দোকান দেখা গেলো। ইয়াকের পশমের একটা টুপি আমি পনেরো রুপিতে কিনে ফেললাম। আর দুইশ রুপিতে একটা নকল নর্থফেইস এর ডাফেল ব্যাগ! মনে ক্ষীণ আশা, ফেরার পথে কলকাতায় কলেজ স্ট্রিট আর পার্ক স্ট্রিইটের অক্সফোর্ড থেকে ব্যাগভর্তি বই কিনে নিয়ে যাব। এই ইচ্ছেটা অবশ্য আংশিক পূরণ হয়েছিলো।

এইখানেও তেরাত্তির থাকার সম্ভাবনা নেই, তাই প্ল্যান করা হলো এইখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরে তিব্বত সীমানের পথে শেষ হ্যাবিটেটেড জায়গা মানা গ্রাম দেখে আসা হবে, এর পাশেই আছে ব্যাস গুহা, কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ বেদব্যাস যেইখানে বসে মুখে মুখে 'মহাভারত' রচনা করেছিলেন, আর তাঁর স্টেনোগ্রাফার গণেশ একনিষ্ঠভাবে সেইটা লিখেছিলেন। এইখান থেকেই শুরু হয়েছে যাকে বলে মহাপ্রস্থানের পথ। পঞ্চপান্ডব আর দ্রৌপদি এই পথেই মহাপ্রস্থানের যাত্রা শুরু করেছিলেন। মানা গ্রাম পার হবার পরেই নাকি দ্রৌপদি পড়ে যান। তারপরে একে একে সহদেব, নকুল, অর্জুন আর ভীম। একমাত্র যুধিষ্ঠিরই সতোপন্থ তাল পেরিয়ে যেতে পারেন, যেইখান থেকেই নাকি সশরীরে তিনি স্বর্গে আরোহন করেছিলেন। মানা থেকে সাতাশ কিলোমিটার দুরে সতেরো হাজার ফিট ওপরে সেই সতোপন্থ তাল পর্যন্ত একদিন ট্রেক করে যাব, এইরকম আরেকটা প্রতিজ্ঞা করলাম।

mana

ফেরার পথে এই ভ্রমণে প্রথমবারের মতো গরমে আর পিপাসায় কাবু হয়ে গেলাম। আসলে একে তো উচ্চতা, তারপরে এইখানের আবহাওয়া তিব্বতের অনেকটা কাছাকাছি, শীতল মরু যাকে বলে। তারপরেও আস্তেধিরে হেঁটে দুপুরের আগেই বদ্রীনাথে ফেরত এলাম।

badrinath
আবার দুদ্দাড় করে ব্যাগ গুছিয়ে বাস ধরা হলো, আজকে সন্ধ্যার মধ্যে যতদূর যাওয়া যায় যেতে হবে। কিন্তু আমার যেইরকম এতো তাড়াতাড়ি যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছে ছিল না, বাবা বদ্রিবিশাল'ও মনে হয়ে সেইরকম চিন্তাভাবনা করছিলেন, ফলে বদ্রীনাথ ছাড়িয়ে একটু নামার পড়েই পাক্কা সাড়ে তিন ঘন্টার জন্য আমরা একটা হাই অ্যালটিচিউড ট্রাফিক জ্যাম এ আটকা পড়ে গেলাম। কারন আর কিছুই না, পিরিয়ডিকাল ওয়ান ওয়ে ট্রাফিকের নিয়ম ভেঙ্গে হাঁটুবাহিনির দুইটা ট্রাক ওপরে আসা শুরু করে দিয়েছে, ফলে মাঝপথে সবাই আটকা পড়েছে!

traffic jam! at 11,000 ft!

ট্রাফিক জ্যামের নানান গিয়ানজামের পর দেখা গেলো আমরা সেইদিন কর্ণপ্রয়াগের বেশি দূর আর আসতে পারলাম না। তবে গাড়োয়াল মন্ডলের গেস্ট হাউজে জায়গা পেয়ে যাওয়ায় খুব একটা অসুবিধা হয়নি। আর রাতে মন্দাকিনির স্রোতের ধারে বসে বারবিকিউ করা না গেলেও খোলা উনুনে আলু পরোটা ভেজে খাওয়াটা খুবই ইন্টারেসটিং একটা ব্যপার ছিলো।

পরদিন খুব সকালে রওনা দিয়েই দুপুরের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম দেবপ্রয়াগে, অলকানন্দা আর মন্দাকীনির কনফ্লুয়েন্সে। এইখানেই গঙ্গোত্রী থেকে আসা ভাগিরথীর সাথে মিশে নাম হয়েছে গঙ্গা। এইখানে ভাগিরথীর সবজে-নীল পানির স্রোত, আর অলকানন্দা-মন্দাকীনির ঘোলাটে পানি্র স্রোত, দুইটা আলাদা আলাদা স্রোতই একসাথে মিশে যাবার আগে অনেকক্ষন পর্যন্ত পাশাপাশি বয়ে যায়।

devprayag, confluence of bhagirathi and alkananda-mandakini

হরিদ্বার এসে পৌছলাম সন্ধ্যার পরে। এইবার আমরা ঘাঁটি গাড়লাম রামকৃষ্ণ মিশনের আশ্রমেই, আর এখনো পর্যন্ত সবচে' আজব জায়গাটায় থাকার অভিজ্ঞতা হলো। হরিদ্বারের রামকৃষ্ণ মিশন সত্যিকার অর্থে মিশন থেকে চালানো একটা হাসপাতাল। আর দেখা গেলো আমি যেই ঘরটাতে থাকবো সেইটা অনেক অনেক দিন আগে ছিলো একটা অপারেশান থিয়েটার। ওপরে অপারেশন লাইটের ফ্রেম আছে, বাথরুমের কলগুলো কনুই দিয়ে ঠেলে খোলা যায়- অপারেশান থিয়েটারের স্ক্রাব করার কলগুলোর মতো। ভেতরের ঘরে একটা জংধরা সার্জিক্যাল টেবিলও দেখা গেলো। বাথরুমে ফ্ল্যাশ করার ওভারহেড ট্যাঙ্কের গায়ে লেখা আছে লিভারপুল ১৯২১!

পরের দুইটা দিন কেটে গেলো ইতস্তত ঘুরোঘুরি করে, আরেকবার মনসা পাহাড়ে উঠে, একবারে সাতটা ঠান্ডাই এর দোকানে টানা সাত গেলাস করে লাচ্ছি খেয়ে, গঙ্গার ধারে আরতি দেখে, আর অবশ্যই পুরোনো শরটায় গভীর রাত পর্যন্ত হেঁটে। আর এর মাঝেই চলছিলো ফেরার ট্রেইন টিকেটের খোজ, যেইটা পাওয়ার কোন লক্ষণই নেই। অবশেষে তিন দিন পরে দুন এক্সপ্রেসের সেকেন্ড ক্লাসের টিকেট পাওয়া গেলো। বোঁচকাবুচকি নিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা ট্রেনে চেপে বসলাম। আর ট্রেন ছাড়ার আগেই আমি সাতশ তিরাশি নম্বর প্রতিজ্ঞাটা করলাম, দুই বছরের মধ্যেই আইতাছি!

দেখা গেলো এই ট্রেন জার্নিটা চরম বিরক্তিকর। অনেক ঘন্টা লেট করে আটত্রিশ ঘন্টা পর আমরা যখন লখনোউ স্টেশানে পৌঁছলাম, সাধুবাবাই দেখি আমার চাইতে বেশি বিরক্ত। উনি কোথায় কোথায় ফোন করে কার সাথে যেন কিসব শলাপরামর্শ করলেন। তারপরে প্রস্তাব দিলেন আসানসোল স্টেশানে নেমে যাওয়ার। সেইখানের মিশনে নাকি তাঁর সহপাঠি আছেন, মিশন হাইস্কুলের হেডসার। টিচারদের আমি বড়ই অপছন্দ করি, তারপরে এই লোক আবার হেডু, কিন্তু আমি তখন এই ঢিমেতালের ট্রেন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়তেও রাজি! তাই ভোর চারটের সময় ঘুটঘুটে অন্ধকারে আমরা বিহার-পশ্চিমবঙ্গের বর্ডারে আসানসোলে নেমে পড়লাম। অন্ধকারের মধ্যেই একটা রিকশা নিয়ে যাওয়া হলো শহরের একপ্রান্তের মিশনে, বিশাল জায়গা জুড়ে এর অবস্থান, মাঝখানে ইশকুল হস্টেল টিলা পাহাড় ফলের বাগান সবই আছে, আর যেইটা আবার একটা পরিত্যাক্ত কয়লাখনির ওপর বানানো! এর থেকে দুর্ধর্ষ আর কি হতে পারে?

ওখানে তিনদিন ছিলাম, দুর্দান্ত তিনটা দিন। কালবৈশাখির মধ্যে ক্রিকেট খেললাম, হস্টেলের পিচ্চিদের অভিনয় করা নাটক দেখলাম, ওদের সাথে যুদ্ধের মহড়া দিলাম, মাঝখানে গেলাম জামতারা নামের একটা জায়গায় ইস্কুলের পিকিনিকে- যেখানে টেম্পারেচার ছিলো পঞ্চাশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড!

সেইখান থেকে গেলাম জামশেদপুর। কেন? এমনিতেই। জামশেদপুর থেকে ট্রেনে কলকাতা ফেরার প্ল্যান। এক ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোককে পটিয়ে টাটা স্টিলের কারখানা দেখে আসা হলো। সে এক আজব কারখানা! সায়েন্স ফিকশন আর স্টিমপাঙ্ক এর হাইব্রিড একটা জগত। দারুন সাজানো শহরটায় দুইদিন হেঁটে বেড়ালাম। জামশেদপুর থেকে এক সকালে ট্রেনে করে গেলাম ঘাটশিলা, বিভূতিভূষণের বাড়ী দেখতে। সেইখান থেকে ফিরেই সেইদিন বিকেলের ট্রেনেই কলকাতা। ফেরার বাসের টিকেট কিনে ফেরার পথে পার্কস্ট্রিটের এক ঘুপচি গ্যারাজে এক বুড়োর রেকর্ড শপ আবিষ্কার করলাম। মনে হলো এই জায়গাটায় মরে পড়ে থাকলে বেশ হতো!

এইসব গল্প না হয় অন্যসময় করা যাবে। অন্য কোন দিনে। আপাতত এইখানেই থাক।

তবে এইটুকু বলা দরকার যে আমি ফিরলাম ঢাকা ছাড়ার প্রায় ছয় সপ্তাহ পরে, জুনের এক সন্ধ্যায়। বাস থেকে নেমে এইদিক সেইদিক তাকাচ্ছি, হঠাৎ করেই আমি আমার ঢাকাকে দেখতে পেলাম। ধোঁয়া ধুলো জ্যাম। হট্টগোল। আমার ঢাকা। বুঝতে পারলাম, আসলে আমার পরিক্রমা এইমাত্র শেষ হলো।

বৃত্ত সম্পূর্ণ হলো।

She said, "Where ya been?" I said, "No place special."
She said, "You look different." I said, "Well, not quite."
She said, "You been gone." I said, "That's only natural."
She said, "You gonna stay?" I said, "Yeah, I jes might."

-'Isis'- Bob Dylan


মন্তব্য

ওডিন এর ছবি

নটে গাছটা মুড়িয়ে দিলাম। আরো কত কিছু লেখার আছে দেঁতো হাসি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

নিজের ব্লগে নিজে মন্তব্যের পত্তন করলে কেম্নেকী!!! (এইটা ইটা রাখা মন্তব্য। পরে আসতেছি দেঁতো হাসি )

পরবর্তী পর্ব:
শক্ত প্রতিজ্ঞা করলাম তোমার লগে বেড়াইতে যামু। না গেলে আমার ট্রান্সফরম্যান্ট কালচারে কন্টামিনেশন হোক!

যে কোনো পর্বের শেষ হলেই কেমন মন খারাপ করা অনুভুতি হয়। বিদায়ে কখনোই অভ্যস্থ হয়ে ওঠা হয়না বোধহয়!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ওডিন এর ছবি

কিসের শ্যাষ! তোমাদের অন্তরে দাবানল জ্বালানোর জন্য ভূটানবিষয়ক লেখা আইতাছে শিজ্ঞিরই! দেঁতো হাসি খালি লাদাখ থেকে বেঁচে ফিরে নেই! ইয়ে, মানে...

আর অতি অবশ্যই যাইবা ভাই, দ্যাশে আসলে একলগে যামুনে। ইন দ্য মিনটাইম, সময় পাইলে জর্ম্মন্দেশে ঘুরাঘুরি জারি রাইখো। হাসি

তানিম এহসান এর ছবি

দারুন! দারুন বলে এর রেশটা পুরোপুরি বোঝানোও গেলোনা!

পড়তে পড়তেই কেন যেন একসময় হঠাৎ মনে পড়ে গেলো ফেলুদার কথা, বইটা কি ”এবার কান্ড কেদারনাথে”? আবার একবার মনে পড়লো জিম করবেট এর শিকার এর কথা! তার মানে ভাববেননা, মনোযোগ এর ঘাটতি ছিলো, বরং এতো বেশী মনোযোগ ছিলো যে ফেলুদা আর জিম করবেটের চিতা ফাও পাওয়া গেলো আপনার লেখা পড়ে হাসি জোশশ্ লাগলো!

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ জানবেন! হাসি

আর ইয়ে মানে এইটাতো আর সেইরকম লেখা না, করবেটের লেখার সাথে তুলনা করাই ধৃষ্টতা। কি যে দারুন লেখেন ভদ্রলোক! ওঁর একটা সঙ্কলনের দিকে কয়েকমাস ধরেই কুনজর দিয়ে রেখেছি, পয়সা জমলেই কিনে ফেলবো

তানিম এহসান এর ছবি

তুলনা করিনি, তুলনা না করারই চেষ্টা করি সবসময়! জায়গাগুলোর নাম এক লহমায় মনে করিয়ে দিলো ওদের দুইজনকে, কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যেমন এক লহমায় মনে পড়লো তেমনি এক লহমায় ভুলে গিয়ে আপনার লেখা শেষ করেছি। এখানেই আপনার সার্থকতা, তেল দিচ্ছিনা, দিতেও শিখিনি, শুধু বলতে চাইছি আপনার পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকবো হাসি

দময়ন্তী এর ছবি

লাদাখ যাচ্ছেন?

আম্মো একদিন বসে সিকিমটা এরকম ঝপাং করে ভতাং করে দেব৷ দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

ওডিন এর ছবি

যাওয়ার চেষ্টা করবো! আগে মানালি পর্যন্ত যাই, খুব বৃষ্টি হচ্ছে ওইদিকে, রোহতাং এর আগে রাস্তা প্রায়ই বন্ধ থাকছে। আর নাহলে ঘুরে শ্রীনগর দিয়েও একটা চেষ্টা নেয়া হবে। নাহলে এদিকসেদিক ঘুরে ধর্মশালায় কয়দিন থেকে চলে আসবো ঠিক করেছি। তবে বের হচ্ছি এইটা ঠিক। হাসি

কিন্তু আপনে আমার লাদাখ যাওয়ার প্ল্যানের কথা জানলেন কিভাবে? চিন্তিত

আর লেখা শেষ করে ফেলুন দিদি, একবার বসলেই হবে। আমি আজকে দুপুরবেলা সর্ষে ইলিশ দিয়ে ভাত খেয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, যাই লিখে ফেলি। দেঁতো হাসি

ইবুকে আপনার লেখাটা দুর্দান্ত লেগেছিলো।

নিটোল. এর ছবি

এই সিরিজের লেখা গুলো পড়ে মনে হয় এখনই ব্যাগ নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি!

ওডিন এর ছবি

মুহাহাহাহা এইটাই তো চাই শয়তানী হাসি

বের হয়ে পড়েন ভাই! খাগড়াছড়ির নাফখুম ঝর্ণা দেখে আসেন। আমি ছবি দেখেই অজ্ঞান হয়ে গেছি! এতো সুন্দর একটা জায়গা! অ্যাঁ

অদ্রোহ এর ছবি

হের ওডিন, বান্দরবানের নাফাখুমকে খাগড়াছড়ি বলে চালিয়ে দেওয়ার কুমতলবকে তীব্র ধিক্কার!!!

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

ওডিন এর ছবি

লইজ্জা লাগে উপস! যাক, একবার নাফখুম গেলে আর এই ভুল হবেনা হে হাসি

তাসনীম এর ছবি

মারাত্মক লাগলো...একদিন আমিও বেরিয়ে পড়ব...মহাভারতের দেশে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

ওডিন এর ছবি

আপনার ভ্যাঙ্কুভার ভ্রমণকাহিনীর মত আরো কয়েকটা লিখে তারপরে বের হয়েন ভাই হাসি

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

কী অসাধারণ ভ্রমন পরিক্রমা! এই জগত এত সুন্দর, এত মায়াময়! আপনার ঝর্ণা কলমেও যেন রংধনুর বর্ণচ্ছটা।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ওডিন এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ রোমেল ভাই হাসি

অপছন্দনীয় এর ছবি

নাহ, এই জিনিস পড়ে আর বসে থাকা গেলো না। আজ রোববার কিন্তু ব্যাগটা ঘাড়ে করে বেরিয়েই পড়লাম, ইউনিভার্সিটিটা ঘুরে আসি...

ওডিন এর ছবি

বের হয়ে পড়াটাই হইলো আসল কথা! তা সেইটা পাশের মহল্লায় ঘুরে আসাই হোক না দেঁতো হাসি

রু (অতিথি) এর ছবি

আমি ল্যাবে পচে মরি আর আপনারা এইসব একেকটা পোস্ট দেন!!

ওডিন এর ছবি

আমার এইসব লেখা পড়ে জনমানসে একটা ভুল ধারনা হয়েছে যে আমি সারাক্ষন খুবই ফূর্তিতে ঘুরেফিরে বেড়াই। দাঁড়ান, ভাবতেছি এখন থেকে রোজনামচা লিখবো, তখন আমার অবস্থাটা বুঝতে পারবেন একটু। হাসি

কৌস্তুভ এর ছবি

আহ, কতদিন পর ওডিন্দার লেখা! লেখাটা হয়েছেও একেবারে জমে ক্ষীর!

ওডিন এর ছবি

নাকি? দেঁতো হাসি

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

অসাধারণ লাগলো ওডিনদা!!!! চলুক অনেকদিন পর লিখলেন................


_____________________
Give Her Freedom!

ওডিন এর ছবি

ধন্যবাদ পড়ার জন্য!

আসলে দোউড়ের ওপর থাকি তো, কালকে ছুটি না পেলে এইটাও মনে হয় লেখা হতো না মন খারাপ

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

শুভেচ্ছা ভাইয়া! হাসি

এত ব্যস্ততার মাঝে আসলেই লেখা মুশকিল!! তবু আমাদের, পাঠকদের, কথাটাও তো মনে রাখতে হবে। দেঁতো হাসি


_____________________
Give Her Freedom!

সবজান্তা এর ছবি

আমার মতো অহিংস, বুদ্ধবাদী লোককেও হিংসাপরায়ণ, ঈর্ষাকাতর বানায়া ফেলসে আপনার এই সিরিজ মন খারাপ

আজকে দৌড়ের উপর পইড়া গেলাম, কালকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তাই। আগামীকাল শান্তিমতো ধীরে সুস্থে, চা-পানি-কোক-গুগল-উইকি-ফ্লিকার সহযোগে পড়ার আশা রাখি। আলবিদা।

ওডিন এর ছবি

তাহলে তোমার মটো কি এখন 'ওম মণিপদ্মে হুমিসাইড'! দেঁতো হাসি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আমি বড় হৈয়া ওডিন হৈতে চাই।

ওডিন এর ছবি

আর আমি হইতে চাই শুভাশীষ দাশ! যদিও তখন নামকরা স্কলার আর অমিতপ্রতিভাবান চিত্রপরিচালকদের রোষানলে পড়ার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়

দেঁতো হাসি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

অভিযোগনামাঃ কেদারনাগ-গৌরিকুন্ড- তিলোয়াড়া- কর্ণপ্রয়াগ- যোশীমঠ- বদ্রীনাথ... বাপস, এরপরে হাল ছেড়ে দিলাম... শেষে এসে বুঝতে পাল্লাম ঘটনাটা, ফাঁকিবাজ ডাক্তার এই পর্বেই সব শেষ করে দেবার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে দেঁতো হাসি

ঐ মিয়া, মজা লন ?? শতবর্ষ পরে লিখতে বসে এইভাবে একপর্বে গাছ মুড়ায়ে দিলেন ?? সিরিয়াসলি, অনেক মজা করে পুরাটা লিখতে পারতেন। কাইন্ডা হতাশ মন খারাপ

আর এই অভিযোগের বাইরে লেখায় উত্তম জাঝা! । বিশেষ করে মাকড়শার জিলিপীভাজার কথাটায় মজা প্লাম।

... সবশেষে পাঁচতারার মাইনাস। চোখ টিপি

ওডিন এর ছবি

তা ঠিক, আরো অনেক কিছু লেখার ছিলো, বিশেষ করে ফেরাটাই ছিলো একটা আলাদা অ্যাডভেঞ্চার। কিন্তু আর টানতে ইচ্ছে করছিলো না, কতোকিছু নিয়ে লেখা বাকি আছে এখনো।

যেমন, ভুটান দেঁতো হাসি

আর ওইটা আসলেই একটা আজব স্বপ্ন ছিলো। এখনো মনে আছে! মন খারাপ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এমনিতেই মেজাজ বিলা, এই পোস্ট পড়ে এখন অসহ্য...

এইসব ফালতু পোস্ট আমার মতো ঘরকুনোরা পড়ে না রেগে টং

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ওডিন এর ছবি

আপনে ঘরকুনো??? অ্যাঁ

যাই হোক আপনেরে কই, চলেন হিমালয়ে হাহাকার নাম দিয়া একটা নাটকের শ্যুটিং ফালায়া দেন। আমি নাহয় লোকেশনের ব্যপারটা দেখুমনে। হাসি

অদ্রোহ এর ছবি

ঈদের দিনের জন্য তুইলা রাখলাম, এবারের ঈদে এই পোস্টের চেয়ে ভাল ঈদসংখ্যা আর কিছু হতে পারেনা চোখ টিপি

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

ওডিন এর ছবি

ধুর মিয়া রাখো এইসব সচলফচল! ঈদ সঙ্খ্যা হইলো যুগান্তরেরটা! আমার প্রিয় কবি হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদের কবিতা ছাপা হইছে ওইখানে গুরু গুরু

মুস্তাফিজ এর ছবি

এমনিতেই মেজাজ বিলা, এই পোস্ট পড়ে এখন অসহ্য...

করবেট সাহেবকে তোমাদের কথা বলে রেখেছিলাম, তোমরা দেখা করনাই বলে উনি মন খারাপ করেছেন।
অটঃ আমি নিশ্চিত করবেট সংকলন পড়ার পর দেখা না করায় তোমারও মন খারাপ হবে।

...........................
Every Picture Tells a Story

ওডিন এর ছবি

করবেট সঙ্কলন কলাবাগানের ওয়ার্ল্ড বুক ডিস্ট্রিবিউশানে দেখেছি, এইবার কারাকোরাম দেখে ফিরে পয়সা হাতে থাকলে ওইগুলো কিনে ফেলবো।

আর বস, ভুটান নিয়ে আর লিখবেন না? মন খারাপ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. এই পর্বেই শেষ করতে হবে এমন কথা কে বলেছে? তুমি যেসব জায়গা কাভার করেছো সেসব জায়গা খুব কম বাঙালীই কাভার করেছেন। আবার যারা কাভার করেছেন তাদের মধ্যে লিখতে পারার ক্ষমতা আরো কমজনের আছে। সুতরাং তুমি ছবিসহ একটা বিস্তারিত ই-বুক লিখে ফেলো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এই দাবীতে সুর মিলাইলাম। কঠিন সহমত! আস্ত বই চাইইই!!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ওডিন এর ছবি
মহাস্থবির জাতক এর ছবি

হ। এগেন আস্কস!

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

দৌড়ের উপ্রে পড়লাম, দুর্দান্ত ... ঠান্ডা মাথায় আরেকবার পড়তে হবে

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ওডিন এর ছবি

আচ্ছা হাসি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

পড়তে পড়তে আর ছবি দেখতে দেখতে মাথা নষ্ট হয়ে গেলেও এরকম পোষ্ট পড়তে ক্লান্তি নেই। আমি যেখানে যাবার স্বপ্ন দেখতে দেখতে বুড়া হইয়া যাইতেছি, সেখানে লোকজন ঘুরে ফিরে আসতেছে, এটা কোন সুখবর নয়। তবু বলবো, এসব ভ্রমণ জারি থাকুক, এরকম পোষ্ট আসতে থাকুক।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ওডিন এর ছবি

আর স্বপ্ন দেখাটাও জারি থাকুক! স্বপ্নটাই তো আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। হাসি

নিবিড় এর ছবি

রুদ্রপ্রয়াগ, কর্ণপ্রয়াগ, বদ্রীনাথ, কেদারনাথ নামগুলা শুনেই জিম করবেটের কথা মনে পড়ে গেল। তবে উপ্রে মুস্তাফিফ ভাইয়ের কথা পড়ে মনে হল করবেট সাহেবের সাথে আপনার সন্ধি হয় নায়। যদি সত্যি সত্যি সন্ধি না হয়ে থাকে তবে আপনারে এক চাঁদের পাহাড় সমান মাইনাস শয়তানী হাসি

আর লেখা নিয়ে কিছু বলার নাই, পুরাই সিরাম হইছে পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

ওডিন এর ছবি

থ্যাঙ্কু নিবির্ভাই! দেঁতো হাসি

করবেটসমগ্র কেনার ধান্দায় আছি, অনেক দাম অবশ্য মন খারাপ

সুমন তুরহান এর ছবি

দুর্দান্ত হাসি চলুক

-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী

ওডিন এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ হাসি

সুরঞ্জনা এর ছবি

পরের পর্বঃ 'লাদাখে'
হাসি

দারুণ একটা সিরিজ পড়ার সৌভাগ্য হোলো, আরো অসংখ্য নতুন সিরিজ আসবে আমরা জানি। কিপিটাপ ব্রাদার!!

দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

ওডিন এর ছবি

অবশ্যি আসবে! মুন্সিগঞ্জ নিয়ে তো লিখেইছি ইবুকে। এরপরে নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নোয়াখালি, গাইবান্ধা তো বাকি আছে। ... এরপরে নাহয় ভুটান।

আর আগে লাদাখ থেকে তো ফিরি ... হাসি

দ্রোহী এর ছবি

ঈর্ষা প্রকাশ করার ভাষা খুঁজে পেলাম না!!!!!!!!

রায়হান আবীর এর ছবি

'ঈর্ষা প্রকাশ করা হলো'- এইটা ক্যামন? দেঁতো হাসি

ওডিন এর ছবি

একটা মানুষের পেটে আগুন ধইরা জ্বইলাপুইড়াছাড়খাড় হইতাছে- এইরকম একটা ইমো চাই দেঁতো হাসি

খেকশিয়াল এর ছবি

শেষ হইছে! এখন একলগে পড়ুম প্রথম থিকা! দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

ওডিন এর ছবি

জানায়ো কেমুন লাগলো। হাসি

আর এইটা এখন প্রমাণিত, আমারে দিয়া সাহিত্য হবেনা। আমি কাইদানটার এক পৃষ্ঠা মতন লিখে বসে আছি, আর আগাচ্ছে না। প্লট তুমারে ট্রানসফার কইরা দেই চিন্তিত

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্সে যাওয়ার ইচ্ছে আছে, চলুন ঘুরে আসি। কিন্তু, পায়ের শেকলও কম ভারি নয়, এটাই ঝালেমা।

লেখা আরো জম্পেশ হতে পারতো মনে হচ্ছে, কী যেন নেই, কী যেন নেই! যাগগে, যা পেয়েছি তাতেই দিলখুশ রাখি সাওয়ান্ত দেঁতো হাসি

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

কল্যাণF এর ছবি

আহহহ...অসাধারন, ওর্বুদ-নির্বুদ-অক্ষৌহিনি পরিমান হিংসা, বুড়োর রেকর্ড শপে কি কি দেখলেন আর কি কি বই কিনলেন লিস্টি চাই।

ঢাকাইয়্যা যাদুকর () এর ছবি

এইডা একটা কাম করলেন ওডিন'দা?!?!?!?! রেগে টং

এত্তো তাড়াতাড়ি শেষ কইরা দিলেন সিরিজটা?????!!!!!

খুব খারাপ - তার উপ্রে এই পর্বে ফাঁকিবাজি কইরা কাহিনী সংক্ষিপ্ত...

খাওন/দাওনের বর্ণনাও থিকমত দেননাই মন খারাপ

আপ্নেরে মাইনাছ, তয় পুস্টে পাঁচতারা উত্তম জাঝা!

ভাল থাকবেন!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।