অনেক দিন পর যখন বৃষ্টি হলো তখন অনেক দিনের জমাট কালচে হয়ে আসা দাগ ধুয়ে গেল। কেউ টের পায়নি যদিও। কিন্তু আমি তো জানতাম! রাতের গাঢ় অন্ধকারেও আমি ঠিকই দেখতে পেতাম ঐখানে আস্তে আস্তে কালচে হয়ে আসতে থাকা দাগটা।
প্রতিদিন আমি বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতাম। প্রতিদিন আকাশের দিকে তাকিয়ে মেঘ খুঁজতাম। গভীর, জলদ মেঘ, রাগী, গর্জনশীল মেঘ, পাগল, মাতাল মেঘ। কিন্তু বৃষ্টি হলো না। প্রতিদিন ঝাঁঝালো, উজ্জ্বল রোদে একটু একটু করে প্রকট হয়ে উঠছিল দাগটা। আর আমি বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে যাচ্ছিলাম।
আমার মনে হয়েছিল, কোনো একদিন কেউ দাগটা দেখে চিৎকার করে উঠবে। ঘৃণায় নাক, চোখ, মুখ কুঁচকে প্রশ্ন করবে - কিসের দাগ এটা। তারপর সবাই চিৎকার করে প্রশ্ন করতে থাকবে, করতে থাকবে, করতেই থাকবে।
দাগটা ধুয়ে গেলেই সবকিছু মিথ্যা হয়ে যায়। কোনো প্রশ্ন থাকে না, কোনো উত্তর থাকে না। এই আমি থাকি না । আগের আমি আবার ফিরে আসতে পারি। পারি কি? অবশ্যই পারি, অবশ্যই পারি, অবশ্যই পারি, পারি, পারি, পারি...
আগের আমি আর এখনকার আমির মধ্যে ঐ দাগের লক্ষণরেখা। তাই আমি বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে যাচ্ছিলাম।
সবুজ নরম ঘাসের মধ্যে আমাকে ঠেসে ধরা হয়েছিল। আমার বাড়ির দেয়াল দেখা যাচ্ছিল। আমি হাত বাড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছিলাম। একটা অসম্ভব চেষ্টা। পরে যখন ওরা হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরলো তখন আমি অন্ধকারের মধ্যে ডুবে গেলাম।
আমি যখন উঠে বসতে পারলাম, তখন দেখলাম আমার শরীর থেকে গলগল করে বেরিয়ে আসা লালে জায়গাটা দাগে ভরে যাচ্ছে। আমি হাত দিয়ে ঘষে ঘষে ঘাসে মুছে ফেলতে চাইলাম। কিন্তু ঘাসও লাল হয়ে গেল। তখন আমি পালিয়ে আসলাম। যাতে আমাকে কেউ না দেখে। তারপর শুরু হলো আমার বৃষ্টির জন্য প্রার্থণা।
তারপর যখন অনেক দিন পর যখন বৃষ্টি হলো তখন আমি ধীরে ধীরে নেমে গেলাম প্রাচীন পুকুরের সবুজ পানিতে, সেখানে হয়তো আমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে।
মন্তব্য
ভাললাগা জানিয়ে গেলাম
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ ত্রিমাত্রিক কবি।
চমৎকার।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ
ভালো লেগেছে।সেখানে হয়ত আমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে---
খুঁজে তারে মরো মিছে----।
উঠে দাঁড়াবে না কোনদিন? খালি কি নিচেই নেমে যাবে?
অলস সময়
ভালো লেগেছে
ভালো লেগেছে। আপনার অন্য লেখাগুলো সাধারনত আরও বেশি ভালো লাগে।
আমাদের রক্তের দাগ কি তবে প্রতি নিমেষেই বেঁচে থাকে, সংক্রামিত হয় ভিন্ন ভিন্ন আধারে ?
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
অপূর্ব! অপূর্ব!
গল্প পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন