১.
তারেক মাসুদের মৃত্যুর পর সড়ক দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে প্রত্রপত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। টেলিভিশনে প্রচুর কথা বলা হয়েছে। ঘরে বাইরে অফিসে আদালতে বাসে কারে পার্কে ফুটপাতে ফুচকা চায়ের দোকানে, কথা-কথা। প্রচুর শব্দ ব্যবহৃত হয়ে গেছে। যারা দেশসমাজভাবনায় বিভোর, তাঁরা বোধকরি কলম ঘষে কলাম লিখতে গিয়ে সবচেয়ে বেশী সবচেয়ে ভারসম্পন্ন কথাগুলো বলে ফেলেছেন।
সম্প্রতি, পর পর দুদিন, দেশের দুজন অতি জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব জনাব মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং জনাব আবদুল্লাহ্ আবু সায়ীদ এই আপাতত জ্বলন্ত প্রসঙ্গে দুটি লেখা প্রকাশ করেছেন দৈনিক প্রথম আলোর পাতায়। এখন আমি, দেশের অতি তুচ্ছ নগণ্য সাধারণ একজন নাগরিকও বলতে এসেছি।
তার আগে বলে নিই- আমি মনে করি ‘তাঁদের’ বলা এবং আমার মতো সাধারণ আমাদের বলা- এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য থাকা উচিত। আমাদের বলায় কিছু আসবে যাবে না, আমাদের কিছু করবার সামর্থ্য-ক্ষমতা নেই। তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ঠিক উল্টো।
২.
লেখক, পদার্থবিদ, শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর সাম্প্রতিক লেখায় বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি নিজে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছেন। তাঁর কাছের মানুষেরা বাস মাইক্রোবাসে রক্তাক্ত হয়েছেন। কেউ কেউ প্রাণ হারিয়েছেন। একজন সহকর্মী দুর্ঘটনার মধ্য থেকেই তাঁকে ফোন করে রক্তলাশের মর্মান্তিক বাস্তবতা শুনিয়েছেন। এবং প্রতিবারই সড়ক দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে লিখতে উদ্যত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরক্ষণে ভেবেছেন, লিখে কি হবে? মিরসরাইয়ে ট্রাক উল্টে ৪০ জনের বেশী বাচ্চা মারা গেলে, টিভি নেই তাই ফুটফুটে বাচ্চাগুলোর নিথর দেহ দেখে অস্থির হতে হচ্ছে না- এই ভেবে তিনি স্থির হন। তারেক মাসুদের মৃত্যুতে বিপর্যস্ত তিনি খবরের কাগজগুলো না পড়ে ভাঁজ করে সরিয়ে রাখেন। এবং এরপর তিনি, পরিবর্তন কি হবে না? পরিবর্তন কি হবে না?- এই প্রশ্ন দিগ্বিদিক ছড়িয়ে দেন। আমার আফসোস হয়, কারণ আমার মনে হয়, টিভি দেখলে এবং খবরের কাগজ পড়লে, মৃতবিকৃত মানুষ, লাশের লাশ লাশ গন্ধ কাগজ টিভি থেকে বের হয়ে এসে উনাকে এতো প্রচণ্ড ধাক্কা দিতো যে উনি কেবল লিখে আর প্রশ্ন ছুঁড়েই ক্ষান্ত হতেন না। উনার ভেতরটা ক্ষোভ দুঃখ ক্রোধে এতো উত্তপ্ত হয়ে উঠতো যে উনি কলম ছেড়ে রাস্তায় নেমে কিছু একটা করে ফেলবার কথা ভাবতেন।
সড়ক দুর্ঘটনার মর্মন্তুদ প্রভাব বর্ণনা করে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন- মানবিক বিপর্যয়ের কথাটি কি কেউ ভেবে দেখবে না? সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিকারে প্রতিবাদে ইলিয়াস কাঞ্চনের আন্দোলন, তারানা হালিমের অনশনের হুমকি প্রদানের উদাহরণ টেনে তিনি জিজ্ঞেস করেছেন- অন্যেরা কোথায়? আমি ভাবি, উনি কাদের কথা বলছেন? আমার কথা? আমি এইখানে, আমি ঢাকায়, আমি নাখালপাড়ায়। উনি বলে দিক, আমি, ২১ বছরের এক অতি অগুরুত্বপূর্ণ সাধারণ নাগরিক একা একা কিভাবে কার্যকরী কিছু একটা করতে পারি? কিংবা করবার কথা ভাবতে পারি? দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষেরাও আমার মতোই অগুরুত্বপূর্ণ সাধারণ একা। আমরা বিচ্ছিন্ন। আমরা এভাবে কিছু করতে পারবো না। আমাদেরকে একত্র হতে হবে। আমি একজন ‘সাধারণ নাগরিক’ কখনো ‘দেশের মানুষ’ একত্র করতে পারবো না। আমার মতো অন্য আমিরাও পারবে না। দেশের মানুষকে একত্র করতে পারবেন এমন তাঁরা, যাঁদের মুখ মানুষের চেনা। যাঁদের মানুষ নিরপেক্ষ মানবতাবাদী শিক্ষিত মানুষ বলে জানে। যাঁরা জনপ্রিয়। ইলিয়াস কাঞ্চন আর ‘নায়ক’ নন, তারানা হালিমও জনপ্রিয় মুখ নন। আমি নিশ্চিতভাবেই নুন্যতম জনপ্রিয়ও নই। এমনকি যেই সৈয়দ আবুল মকসুদ গত ২৪ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবি জনতার সভায় সভাপতিত্ব করেছেন এবং ঈদের দিন শহীদ মিনারে প্রতিবাদী অবস্থান ধর্মঘট ও অনশন পালনের ঘোষণা দিয়েছেন, সেই তিনিও সাধারণ মানুষের, সর্বস্তরের মানুষের কাছে তুলনামূলকভাবে ততটা জনপ্রিয় মুখ নন। তাঁরা চাইলে বিশালসংখ্যক সচেতন মানুষকে একত্র করতে পারবেন, কিন্তু দেশের মানুষকে একত্র করা বলতে যা বোঝায় তা তাঁরা করতে পারবেন বলে আমি মনে করি না। এক্ষেত্রে উনারা অনেক বেশী সফল হবেন। হ্যাঁ, উনারা। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং আবদুল্লাহ্ আবু সায়ীদ। তাঁদের সকলে ‘স্যার’ বলে ডাকে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল তরুণদের মধ্যে অবিশ্বাস্যরকম জনপ্রিয়। বয়স্কদের মধ্যেও কম নন। অপরদিকে শিক্ষক হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহন করেছেন এবং অধ্যাপক হিশেবে কিংবদন্তীতুল্য- আবদুল্লাহ্ আবু সায়ীদ। এমনটা উইকিপিডিয়ায় বলা আছে। এমনটা শুনতেও পাওয়া যায়। তাঁরা কোন আন্দোলনের ডাক দিলে ‘দেশের মানুষ’ তাঁদের সাথে যোগ দেবে এমনটা ধারণা করা যায়।
তাই তাঁরা শুধু মাত্র কলম চালিয়ে- কোনও মন্ত্রীকে লক্কড়ঝক্কড় মাইক্রোবাসে বসিয়ে ঢাকা-সিলেট আনা-নেওয়ার কথা কিংবা নুন্যতম এসএসসি পাশ চালক এবং বিএ পাস বাস চালক নিয়োগের( যা এই দেশে কোনওরকম সামাজিক প্রতিবাদ প্রতিরোধ ছাড়া আগামী দু’এক দশকের মধ্যেও বাস্তবায়ন করা কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে নিরাপদভাবেই প্রশ্ন তোলা যায়) মতো নিরর্থক কথাবার্তা বলবেন- এমনটা গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁদেরকে তাঁদের তুলনামূলক নিরাপত্ত্বার বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আসতে হবে, যেমনটা একাত্তরে মা-বাব-স্ত্রী-সন্তান-সীমানার ওপারে গিয়ে জীবন বাঁচানো ত্যাগ করে অস্ত্র হাতে বাংলার মাটিতে নামা মুক্তিযোদ্ধারা করেছিলেন। আন্দোলনে নেমে নিজ জীবন হুমকির মুখে ফেলে তাঁদেরকে নিজেদের কাছে প্রমাণ করতে হবে তাঁরা অত্যন্ত কার্যকরী এবং সঠিক কাজটিই করছেন। তাঁদেরকে মাঠে নেমে আমাদেরকে ডাকতে হবে, দেশের মানুষকে একত্র করবার প্রক্রিয়ার সূচনা করতে হবে।
৩.
সম্প্রতি কোথাও পড়েছিলাম, সিলেট শহরে প্রতি শুক্রবার শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হবে। আয়োজকেরা সকলের কাছে দেশের অন্যান্য জায়গায়ও এমন কর্মসূচী গ্রহণ করবার আবেদন জানিয়েছেন। আমাদের এমনটাই প্রয়োজন। আমরা একটা ঘটনা নিয়ে একবার ভাবি, একবার কথা বলি। তারপর অন্য ঘটনায় চলে যাই আগেরটা ভুলে গিয়ে। এই প্রক্রিয়ায় সঅবটা ভুলে যাই আমরা। এভাবে আমরা ওয়ান্স ইজ নেভার এর ফাঁদে পড়ে গেছি। আমাদেরকে প্রতিবাদের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে হবে, প্রতিনিয়ত। আমরা বছরে ৩৬৫ দিন, অধিবর্ষে ৩৬৬ দিন প্রতিবাদ করবো। আমাদের নেতৃত্বের দরকার। আমাদের সংগঠকের প্রয়োজন। তাই জাফর ইকবাল আবু সায়ীদের মতো মানুষেরা শুধু অকার্যকর লেখা লিখে যাবেন আর তাঁদের মূল সামর্থ্য, প্রভাব ব্যবহার না করে নিষ্ক্রিয় থাকবেন- এমনটা গ্রহণযোগ্য নয়।
তাঁদেরকে পত্রিকায় হালকা কলাম লেখা থেকে বিরত থেকে তাঁদের পরিচিত, তাঁদের মতো সকল মানবতাবাদী সমাজসচেতন দেশপ্রেমী মানুষদের একত্র করতে হবে। তাঁরা আমাদেরকে ডাক দিলে আমরা এসে ট্রাফিক আইন মানানোর জন্য জোড় করে পুলিশকে হাইওয়েতে নামিয়ে দেবো। একটা দুর্ঘটনা হলেই আমরা একযোগে বাস-মালিক বাস-ড্রাইভার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, সবার বিরুদ্ধে মামলা করবো। আমরা দু’একদিনের জন্য জেগে না থেকে সারা বছর জেগে থাকবো, প্রতিরোধ জারি থাকবে। কিন্তু, সেই আগের কথা- আমাদের নেতৃত্ব দরকার আমাদের সংগঠক দরকার। আমাদের এমন মানুষ দরকার যারা এই দলে নেই, যারা ওই দলেও নেই, যারা আমাদের দলে- মানুষের দলে। আমাদের আপনাদেরকে দরকার।
তাঁদের খুব কাছের মানুষেরা মারা গেছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। জাফর ইকবাল তাঁর লেখার শেষে তারেক মাসুদ ক্যাথরিন মাসুদ এবং তাঁদের ছোট্ট বাচ্চাটার কথা লিখেছেন প্রবল আবেগ নিয়ে। আমরা ন্যায্য ভাবেই আশা করতে পারি তাঁরা শুধুমাত্র লেখালেখি করে বহুলাংশে নিষ্ক্রিয় থেকে তাঁদের প্রিয় সেইসব মানুষের স্মৃতিকে অপমান করবেন না। জাফর ইকবাল চান তারেক মাসুদের ছোট্ট শিশুটি বড় হলে তাকে বলতে- তার বাবার মৃত্যুতে দেশের মানুষ খুব খেপে গিয়ে দেশটাকে বদলে দিয়েছিলো। হ্যাঁ, আমরা খেপে আছি। হ্যাঁ, আমরা দেশটাকে বদলাতে চাই। আপনারা মাঠে নামুন, আমাদের ডাকুন, সময় আর স্থান- আমরা আসবো।
৪.
আন্না হাজারে ভারত কাঁপিয়ে দিয়েছেন। ৭৪ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ টানা ১২ দিন না খেয়ে ছিলেন। প্রতিজ্ঞা ছিলো প্রয়োজনে আমৃত্যু অনশনের।
সাম্প্রতিক ভারতীয় দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের মূল ভাগের নেতৃত্ব দিয়েছেন এই গান্ধীবাদী নেতা। তাঁর সাথে যোগ দিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক স্তরের লক্ষ লক্ষ মানুষ, সারা ভারত জুড়ে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী ভারতীয়রাও যোগদান করেছে আন্দোলনে। এমনকি অনলাইনেও সচল হয়েছে লক্ষাধিক ভারতীয়। অংশগ্রহণ করেছে তরুণেরাও। জনতা আন্না হাজারের নেতৃত্বে কোনওরকম রাজনৈতিক প্রভাব হতে মুক্ত থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। তাদের প্রতিবাদ সমাবেশে কোনও রাজনীতিবিদের প্রবেশাধিকার ছিলো না। যারা এসেছিলো, তাদের জনতা ‘তাড়িয়েছে’। আন্না হাজারে সরকারকে বলেছেন একথা ভুলে যেতে যে তারা প্রভু। তারা প্রভু নয়, জনতা প্রভু।
আমার মতে এই আন্দোলনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিলো ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া। অতর্কিত লাগাতার কঠোর প্রতিবাদের কারণে তারা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলো এবং মরিয়া হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ভুল করেছে। দিল্লীর রামলীলা ময়দানে মধ্যরাতে প্রতিবাদের জন্য সমবেত ঘুমন্ত জনতার উপর পুলিশ লেলিয়ে দেয় তারা। টিয়ার গ্যাস-লাঠিচার্জ। পুরো আন্দোলনের সময়টা জুড়ে সরকার ব্যাপক ধরপাকড় করে। তারা কিরণ বেদীর মতো সমাজকর্মী, প্রাক্তন আইন মন্ত্রী শান্তি ভূষণ থেকে শুরু করে আন্না হাজারেকেও গ্রেপ্তার করে। এসবকিছু দুটি জিনিস প্রমাণ করে। প্রথমটি হলো, সরকার আন্দোলনটিকে নিজ অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ হিশেবে বিবেচনা করেছিলো। এবং দ্বিতীয়টি হলো, তার মানে আন্দোলনটি সঠিক পথেই ছিলো। আন্দোলনের ফলাফলও তা-ই বলে। যদিও এখনই শেষ কথা নয়। কিন্তু আন্না হাজারে জাগ্রত, জেগে গেছে জনতাও।
এই আন্দোলন কিসের বিরুদ্ধে? সরকারের দুর্নীতি, পুলিশের দুর্নীতি, বিচারবিভাগীয় দুর্নীতি, কর্পোরেট দুর্নীতি, নির্বাচন সংক্রান্ত দুর্নীতি, প্রশাসনিক লাল-ফিতা, ক্লেপ্টোক্রেসি- সর্বোপরি সকল রকম দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিলো এই আন্দোলন। আমাদের দেশ কি এই খেলায় খুব পিছিয়ে? আমরাই কি সাম্প্রতিক কালে সর্বাধিক সংখ্যক দুর্নীতি-কাপ জয়ী নই? তাহলে পাশের দেশেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে এতো বিশাল ও প্রভাবশালী একটি আন্দোলন চলাকালীন অবস্থায় এর রেশ আমাদের গায়ে এসে পড়লো না কেনো? সম্প্রতি ঈদের দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান ধর্মঘট এবং অনশনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সৈয়দ আবুল মকসুদ কে লক্ষ্য করে বলেছেন উনি চাইলেই শহীদ মিনারে ঈদ করে আন্না হাজারে হতে পারবেন না। বাস্তবতা হলো, এই প্রতিবাদ একটি দিন হবে, তা-ও ঈদের দিন, যেদিন অধিকাংশ মানুষ নিজেকে, নিজ নিজ পরিবার নিয়েই ব্যাস্ত থাকবে।
আমরা জাতিগত ভাবে যথেষ্ট অন্ধকারে ডুবে আছি। আমাদের মানুষেরা খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। সমাজতাত্বিক সেইমুর মার্টিন লিপসেট বলেছেন- অতি দারিদ্র্য পরিবর্তনের শক্তি ও চাহিদা শুষে নেয়, অতি-স্বচ্ছলতা বিপ্লব-বিদ্রোহকে করে দেয় অপ্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশে এই দুইয়ের মাঝখানটায় যারা আছে তারা খুব দ্রুত কেবলমাত্র নিজেকে নিয়ে ভাবতে শিখছে। দেশের দুরবস্থা আর নিজ অস্তিত্ব রক্ষার ঘাত-প্রতিঘাতের ফলস্বরূপ তারা প্রচণ্ডরকম আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর, ভোগবাদী এবং দেশসমাজ সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়ছে। তারা এখন শুধুমাত্র শিক্ষা ব্যাতীত বাকী মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণের উন্নত থেকে উন্নততর উপায় খুঁজতে ব্যাস্ত। তাই বলা যায় পরিবর্তনের সূচনা করতে গিয়ে আমরা যে দেরী করছি, যে প্রতিটি মুহূর্ত হারাচ্ছি এবং এর ফলে যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি- তা অপূরণীয়। আমারা শুধু ভেবে বলে লিখে বসে থাকবো, তাতে কিছু হবে না। আমাদেরকে এখনই দেশের মানুষকে বাজিয়ে দেখে নিশ্চিত হতে হবে ৫২-৬৯-৭১-৯০ এর পুনরাবৃত্তি সম্ভব কিনা। দেখতে হবে তারা ইতমধ্যেই সম্পূর্ণ আত্মমগ্ন হয়ে পড়েছে, নাকি কিছুটা মানবিকতা এবং প্রাসঙ্গিক সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ তাদের মধ্যে বাকী রয়ে গেছে। আমাদেরকে খুব দ্রুত পরিবর্তন প্রক্রিয়ার সূচনা করতে হবে। সচল করতে হবে একটি অনির্দিষ্টকালীন বিপ্লব।
তবে এর জন্য- সেই শুরুর কথায় ফিরে যাই- নেতৃত্বের প্রয়োজন। জাফর ইকবাল, আবু সায়ীদের মতো আপনারা যারা দেশের মানুষকে একত্র করতে পারবেন, তারা একত্র হন। এবং এই অন্ধকার অবস্থার আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে আপনাদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেবার আহ্বান জানান দেশের মানুষের প্রতি। সময় এবং স্থান।
যদি আমরা আসি, আলোর আগে ফিরবো না। যদি না আসি, আপনারা ফিরে যাবেন না।
*
মনোজ
*
(আমার উপায় জানা নেই, তাই অনুরোধ করবো- যদি সম্ভব হয় কেউ অনুগ্রহ করে এই লেখাটি জাফর ইকবাল এবং আবু সায়ীদের কাছে পৌছে দেবেন।)
মন্তব্য
যে দু'জন প্রবাদপ্রতীম মানূষের কথা এখানে লেখক বলেছেন তাদের প্রতি মানূষের প্রচুর দাবী আছে। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না তারা এই মুহূর্তে যে কাজগুলো করে যাচ্ছেন তার এক শতাংশ কাজ দেশের ক'জন মানুষ করছে?? কোনো কিছু হলেই আমরা জাফর ইকবালের দিকে তাকিয়ে থাকব-উনি কিছু বলবেন এই আশায়- এটা তো সমাজের সুস্থতার লক্ষণ নয়। উনি যে কাজ করতে চান, উনি যে কাজে অভিজ্ঞ তা উনাকে করতে দিন। জোর করে উনাকে আন্না হাজারে বানানোর প্রয়োজন ত আমি দেখছি না। আবদুল্লাহ আবু সাইদ তিরিশ বছর ধরে বই নিয়ে যে আন্দোলন করে যাচ্ছেন তার কাছাকাছিও যেতে পারেননি আন্না হাজারে। এখন কি আমরা তাকে বলব- বহুদিন ত বই নিয়ে আছেন এবার রাস্তায় আসুন??? অনার্য সঙ্গীত এই বিষয়ে একটি লেখা লিখেছিলেন কিছুদিন আগে। উনাদের প্রতি আমাদের এমন আকাঙ্ক্ষাই প্রকাশ করে যে আমাদের কারও সামনে থাকার সাহস নেই। ওনাদের পেছনে থাকতে পারলেই খুশি!
ঘরের দরজা ভাঙ্গা রেখে আপনি যতোই অন্দরের শ্রীবৃদ্ধি করুন না কেন- তা নিরর্থক। আপনার ঘর অবধারিতভাবে ডাকাতি হয়ে যাবে। তাঁরা দুজন অনেক কিছু করে ফেলেছেন, হতে পারে, কিন্তু মূল সমস্যার সমাধান না করে ওসব করা সিসিফাসের পাথর ঠেলার মতই নিরর্থক। যখন মূল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তখন ওসব কর্ম অবশ্যই মহৎ বলে গণ্য হবে। জাফর ইকবাল উনার লেখায় অন্যদের এমন সবকিছু করবার আহ্বান জানাচ্ছেন, যা উনি নিজেই সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী ভাবে করতে পারেন, কিন্তু করছেন না। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
"আবদুল্লাহ আবু সাইদ তিরিশ বছর ধরে বই নিয়ে যে আন্দোলন করে যাচ্ছেন ..." - তাতে হয়েছে কি? বাংলাদেশে তাতে উল্লেখযোগ্য-গুরুত্বপূর্ণ কি পরিবর্তন সাধিত হয়েছে? আমার জানা না থাকতে পারে, অনুগ্রহ করে জানান।
এখানে কাউকে আন্না হাজারে হতে বলা হচ্ছে না, এখানে সমধর্মী কর্মকাণ্ড শুরু করবার আবেদন জানানো হচ্ছে।
আমার জাফর ইকবাল কে দরকার হতো না, আমার নিজের কিছু করবার সাহস আছে, আমি কারো পেছনে পেছনে থাকতেও চাই না। কিন্তু বাস্তবতা এই যে আমি জাফর ইকবাল নই। আমি শাহবাগের মোড়ে দাড়িয়ে মাইকিং করে আন্দোলনের ডাক দিলে লোকে সর্বোচ্চ বলবে, এই পাগল কোথা হতে আমদানী হলো?
জনপ্রিয়তা উনাদের প্রধানতম শক্তি। এবং আমি শুধু উনাদের কাছেই দাবি রাখছি না, আমার দাবি উনাদের মতো সকলের কাছেই, যাদের 'দেশের মানুষ' কে একত্র করবার সামর্থ্য আছে।
আপনি নিজের যোগ্যতা দিয়ে প্রতিবাদের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করুন। তাহলে লোকে অবশ্যই আপনার কথা শুনবে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আপনি মনে হয়- আমরা যে দেরী করছি, যে প্রতিটি মুহূর্ত হারাচ্ছি এবং এর ফলে যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি- এই অংশটা বুঝে উঠতে পারেননি। আমি যতো বড় তালেবর-ই হই না কেনো, রাতারাতি আমি নিজ যোগ্যতা দিয়ে প্রতিবাদের প্লাটফর্ম তৈরী করতে পারি না।
ভাল লেগেছে
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
নিটোলের সাথে সহমত
আন্না হাজারেকে নিয়েও কিন্তু অনেক সমালোচনা হয়েছে; আপনার ব্যাখ্যা আমার কাছে ভালো লেগেছে, ছুয়ে গেছে আবেগটুকু! আপনি এখানে যাদের কথাই বলেছেন, তাদের যারা মেনে নেবেননা তাদের কাছে আমার অনুরোধ - আপনারা তাহলে আমাদের বলুন কার কথা রেকমেন্ড করছেন আপনি! ওনাদের মেনে না নিয়ে, আরো কোন ব্যক্তির কথা যদি কেউ বলে তবে তারাও আসুক!
দূর থেকে “এ ভালোনা, সে ভালোনা“ বলে বলে আমরা কাউকেই ঠিকমতো মাঠে নামতে দেইনা। আনু মুহম্মদ স্যারকে নিয়ে অনেকের অনেক প্রশ্ন, কিন্তু কথা হচেছ তবুওতো তারা কিছু করছেন যেটা আমি আপনি করছিনা। তেমনি জাফর ইকবাল স্যারকে নিয়ে কিছুদিন আলোচনা হলো! এইসব ‘যুক্তি-তক্কো’ করে আমরা সবাইকে একসাথে হওয়া থেকে বিরত রেখে দিচ্ছি! না হচ্ছে ঘরকা, না ঘটকা!
দেশের সিনিয়র সিটিজেন যারা, তাদের উচিত তাদের মত করে সবকিছু নিয়ে এগুনো, আপনার একসাথে হওন, একা একা কেউ কিছু করতে পারবেননা, নিজ থেকে অন্যের সাথে যোগাযোগ করুন - আপনাদের মধ্যেও খুব ভাব আছে, বড় বড় কথা আছে - এইসব আমরা দেখেছি কিন্তু দয়া করে এইসব বন্ধ করে একটু সাধারণ মানুষ হন, এতো অসাধারণের দরকার নেই বাংলাদেশের, বাংলাদেশের এখন সহজভাবে বোঝে, ‘কমন সেন্স’ কাজ করে এমন মানুষ দরকার!
আপনাদের দেখে দেখে আমাদের মধ্যেও এখন ধারা-উপধারা; ফায়দা লুটছে লুটেরারা! মানুষের হাড়মাংস এক হয়ে যাওয়া দেখেনা যারা, আমাদের মধ্যে এইরকম তাদের উচিত ‘পর্যটক’ না সেজে সত্যিকারের ভাবে দেখতে যাওয়া - তাহলে আর ’অমুক’ ’তমুক’ করার চাইতে বরং আমরা আমাদের অমুকতমুকদের কাঠের তক্তায় ঠেকে যাওয়া পাছা নড়াতে পারবো। ওনারা ভদ্র হয়ে গেছেন, আমরা ভদ্রতার কথাবার্তা একটু কম বললে পরে যদি ওনারা ভদ্রতা ছেড়ে আঙুল উচিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। ঠোট নাড়ানাড়ি, কলম নাচানাচি অনেক হয়েছে - এইভাবে করে কিছুদিন পরপর একটা নাচ উঠে তারপর আবার ঠান্ডা - আপনারা আপনাদের পরবর্তী প্রজন্মকে কি শিক্ষা দিচ্ছেন! আমরাই বা কেমন - য’ারে পাই তারে ছুই’!
মোটামুটিভাবে এই আকালের দিনে বৃহত্তর পথের জন্য এখন পর্যন্ত মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে, পরিচিত কাউকে জায়গা দিতে আপত্তি কেন আমাদের? আগেই পোস্টার ছাপিয়ে নেতা তৈরী করার দরকার কি?
হ্যা, আমরা জামাতের সাথে একসাথে চলা মেনে নেবনা, আমরা আরো মেনে নেবনা যাদের চেহারায় লেজুরবৃত্তির ছাপ পড়ে গেছে - আরো হয়তো অনেকের অনেক মত থাকতে পারে। কিন্তু এই মত নিয়ে ঝগড়াঝাটি আর ভালো লাগেনা!
এত প্যাচ-ঘোচ নিয়ে কোনদিন পরিবর্তন আসেনা, আমাদের পেটে পেটে আসলেই জিলাপির প্যাচ আছে কিন্তু প্যাচের কথা শুনতে মানা!
আমার দুই পয়সা:
১। পোস্টের শিরোনামে কমা ব্যবহার করা মনে হয় দরকার ছিল না।
২। আপনার চিন্তার ধরনটা প্যাসিভ - যা ব্যক্তিগতভাবে আমি ছন্দ করি না। ব্লগে লিখে কী হবে, কলমে কী হবে - এ জাতীয় প্রশ্ন অর্থহীন। কারণ উত্তর পাওয়ার আশায় কেউ এই প্রশ্নগুলো করে না, এগুলো স্রেফ খেদোক্তি। অলংকার জাতীয় এ ধরনের প্রশ্ন খালি কথার প্যাঁচ লাগায়।
৩। যে যার প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতিবাদ করবে। গায়ক গানের মাধ্যমে, শিল্পী তার তুলিতে, লেখক তার লেখার মাধ্যমে প্রতিবাদ করবেন। যাদের একাধিক পরিচয় আছে তারা যেই মাধ্যমে স্বচ্ছন্দ্যবোধ করবেন সেই মাধ্যমে প্রতিবাদ করবেন। আপনি কোন যুক্তিতে জাফর ইকবাল বা আবু সায়ীদের লেখাকে অকার্যকর বললেন স্পষ্ট নয়।
৪। আন্না হাজারে নিয়ে অনিন্দ্য'র লেখা পড়ুন। খালি গান্ধীবাদী মানুষ নয়, আন্নার পিছনে বিজেপিও ব্যাকাপ দিয়েছে। এছাড়াও লোকপাল বিল নিয়ে তেহেলকার ভিডিও দেখেন। অনশনের মাধ্যমে প্রতিবাদ মানেই হিরোইক কিছু না।
৫। আমি পত্রিকায় লেখাকে "হালকা কলাম"/অকার্যকর বলার পক্ষপাতী নই। প্রিন্ট মিডিয়া এখনো অনেক প্রভাব বিস্তারকারী, দেশের অনেক অঞ্চলে যেখানে ইন্টারনেট নাই, ইলেক্ট্রিসিটি নাই সেখানে পত্রিকাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। গুরুতপুর্ণ অনেক বিষয়ে কলাম মানুষকে চিন্তাসূত্রের যোগান দেয়। সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে সেই সূত্রকে কাজে লাগানোর দায়িত্ব আপনার, আমার সবার।
হতে পারে আমরা সাধারণ নাগরিক, কিন্তু তাই বলে আমাদের গুরুত্ব কম না। নিজের সামর্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরী
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
আচ্ছা ঠিক আছে, আমরা অতি গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক। তাহলে আমরা এখনও কিছু করি নি কেনো? এখনও কিছু হচ্ছে না কেনো? নাকি দেশের অবস্থা এখনও ততটা খারাপ হয়নি, আরও খারাপ হলে তারপরে আমরা অতি গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকেরা আমাদের সামর্থ্য দিয়ে অনেক বেশী বেশী কিছু করে ফেলবো?
একাত্তরে সাধারণ মানুষেরা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছে, তারা কিন্তু বিচ্ছিন্ন ভাবে নিজ নিজ সামর্থ্য ব্যবহার করে যুদ্ধ করেই সব করে ফেলেনি, তাদেরকে সংগঠিত করা হয়েছে, সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে, সেক্টর কমাণ্ডার ছিলো, দলনেতা ছিলো, নেতৃত্ব ছিলো।
আন্না হাজেরে কে নিয়ে আমি বিশ্লষণে যাই নি, কারণ আমি বলি নি যে তিনি যা করেছেন আমাদের হুবহু তা-ই করতে হবে। আমি শুধু মূল ধারণা টা, প্রতিবাদ প্রতিরোধের ধারণা টা ব্যবহার করতে বলেছি। আমরা আমাদের নিজেদের বোধ বুদ্ধি দিয়েই পরিচালিত হবো, নিজেদের মতো করে কাজ করবো। আমরা তো আর হিন্দি সিনেমা নকলের মতো, হিন্দি আন্দোলন নকল করতে যাবো না!
জাফর ইকবাল আবু সায়ীদের লেখা নয় শুধু, সকল লেখালেখিই বহুলাংশে অকার্যকর, কারণ এতো এতো লেখালেখির পরও এমন কিছু হয়ে যায় নি, এমন কোন বড় পরিবর্তন হয় নি। তাই বলে আমি লেখা বন্ধ করে দিতে বলছি না, আমি শুধু পাশাপাশি আসলেই বাস্তবধর্মী এবং ফোর্সফুল কিছু একটা করবার কথা বলছি।
ব্যাক্তিগতভাবে আমারো মনে হয় যে আমাদের আর কথা না বলে কাজ করা উচিত। কিন্তু এজন্য জাফর ইকবাল কিংবা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদদের দিকে তাকিয়ে থাকা বা তারা কেন নিজেরা আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে না এজাতীয় প্রশ্ন করাকে কোনমতেই সমর্থন করিনা। কেননা উনারা ইতোমধ্যেই যা করেছেন তার এক শতাংশও যদি করতে পারি তাহলেও নিজেকে ধন্য মনে করব।
কোন আন্দোলন শুরু করতে হলে আমাদেরকেই করতে হবে, আমরা, সাধারণ মানুষেরাই কিন্তু ভাষা আন্দোলনে, স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমাদের মধ্য থেকেই নেতা বের হয়ে যাবে। কিন্তু জাস্ট শুরুটা করতে হবে। একবার শুরু করতে পারলেই সব গড়গড়িয়ে চলবে।
তাই আসুন অন্য কেন করল না এটা না বলে নিজেরা শুরু করি।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
আমি যা বলতে চাইছিলাম ফাহিম হাসান সেইটা অনেক গুছিয়ে বলে দিয়েছেন বলে আর দ্বিতীয়বার বলতে চাইছি না। শুধু এইটুকু বলতে আসা, জাফর স্যার বা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের ক্ষমতা বা অক্ষমতা, দেশের কোন ইস্যু নিয়ে তাদের সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তা---এইসব নিয়ে চুল চেরা বিচার বিশ্লেষন বা বাহাস করাটা কোন কাজের কথা নয়।
সবাইকে সবার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।
দিনের শেষে আপনি যেমন মানুষ, উনারাও এরচেয়ে বেশি কিছু নন। আপনার মতই সীমাবদ্ধতা নিয়ে তাদের দিন গুজরান করতে হয়। নিজের প্রতি আপনি যতটুকু মমত্ব পোষন করেন উনারাও আপনার কাছ থেকে তারচেয়ে কম কিছু নিশ্চয়ই আশা করেন না। 'উনারা জনপ্রিয়' আর আপনি নন, আপনার কথা লোকে শুনবে না--এই সব হল চমৎকার রকমের খোঁড়া যুক্তি! তাছাড়া বহুল ব্যবহারে জীর্ণ প্রায়। জনপ্রিয় মানুষের অপেক্ষায় না থেকে নিজে কাজে নামুন।
আপনার খিদে পেলে নিশ্চয়ই অপেক্ষা করেন না কখন জাফর স্যার বা সায়ীদ স্যার পত্রিকায় কলাম লিখে আপনাকে রাঁধতে বলবেন---!!
ভবিষ্যতে আরেকটু দায়িত্ত্বশীল লেখা আশা করছি আপনার কাছ থেকে।
শুভেচ্ছা রইল।
সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, আপনার এই বক্তব্য মানলে, মানতে হবে -
এতোদিন ধরে ...
১. আমরা জনগণেরা নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। তার মানে আমাদের দ্বারা সম্ভব নয।
কিংবা
১. আমরা জনগণেরা নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করছি না, কারণ আমারা দেশের ব্যপারে নয়, শুধু নিজের ব্যপারেই আগ্রহী।
কিংবা
১. আমরা জনগণেরা নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করছি না, কারণ দেশের অবস্থা এখনও তেমন খারাপ হয়নি। আরও খারাপ হোক, আমরা নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ শুরু করবো।
তা ভাই কি করলেন একটু বিস্তারিত বলেন। শুনে বুঝার চেষ্টা করি, ভুলটা কোথায় হইল
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
ভাইরে, আপনি আমার এতো সহজ হাইপোথেসিসটাই বুঝতে পারলেন না, এখন তো আপনাকে ক্লাস ফাইভের সরল অংক বুঝানোর আগেও আমি আতংকিত হবো! .....
আমি দাবি করি নাই যে আমরা অনেক কিছু করে ফেলেছি, তারপরও কিছু হচ্ছে না কেনো। আমি বলেছি যদি এটা মেনে নিই যে- "সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করলেই সব ঠিক হয় যাবে" ... তাহলে তিনটা'র কোন একটা সত্য হবে। .....মানে আমার তিনটা পয়েন্টের কোন একটাও বাস্তব সত্য নয়, যদি আগের কথাটা মেনে নিই, তাহলে তিনটার কোনও একটা বাস্তব হলেও হতে পারে
ভাইজান, হাইপোথিসিস যদি ক্লাস ফাইভের পোলারে বুঝাইতে যান, তাহলে তো বিপদ হবারই কথা। তারপরেও আমার মত নাদান ভুদাই লোকজনের জন্যে সহজ কইরা বলেন, আপনে নিজের জায়গায় থাইকা কি করলেন সেইটা! সেইটা না কইয়া ত্যানা প্যাঁচানি উত্তর দিতেছেন। নাহয় আইজকা একটা ক্লাস ফাইভের পুলাপাইনরে একটু বুঝাইলেন।
আর আরেকটা কথা কই, বাচ্চাকাচ্চাদের কিছু বুঝানো বড়দের চেয়ে অনেক কঠিন, কামটা কখনো করেছেন বইলা মনে হয় না, নয় ছয় বুঝানোর কথা কই না, ঠিক কইরা সরল অংক বুঝাইতে চাইলে ঘাম বাইর হইয়া যাবে। তাই আরেকবার চেষ্টা করেন
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
দেখে ভালো লাগছে যে, অনেক প্রাজ্ঞ পাঠকেরা মনোজের মত 'আসেন জাফর ইকবাল, কইরা দ্যান' না বলে 'এসো নিজেরা করি' মন্ত্রে বিশ্বাসী। যারা তারপরেও গাইগুই করছিল, তাদের অনিকেতদা 'ক্ষুধা পেলে জাফর ইকবাল তো আর রান্না করে দেননা' উক্তির মাধ্যমে বিষয়টাকে একেবারে জলের মত পরিষ্কার করে দিয়েছেন। সত্যিই তো, খাওয়ার বেলায় তো আমি নিজেই হাঁড়ি কড়াই নিয়ে ময়দানে নেমে পড়ি।
তবে ব্যাপার হচ্ছে, নিজের ক্ষুধা মেটানোর জন্যে আমি নিজেই যথেষ্ট। ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণ সামাজিক আন্দোলন নয়, যদ্দিন না রাজা বলছেন, যা আইজ থিকা তোগো ব্যাকতের খাওন বন।
জাতি হিসেবে আমরা অত্যন্ত তেজস্বি, এবং হিটলারের চেয়ে বেশি আক্রোশ আমরা অনুভব করি আমার দুশ টাকা গাপ করে দেয়া পকেটমারটার উপর। প্রতিদিনের ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার খবর আমরা সকালে চায়ের সাথে উদরে চালান করে দিই, কেননা যিনি মরিয়াছেন, তিনি আমার চাচাতো শ্যালকের আপন প্রতিবেশীর পুরান প্রেমিক।
জাফর ইকবাল, আবু সায়ীদের কলাম পড়ে আমি, এবং আন্দাজ করতে পারি আরো অনেকেই, হাতে কিল মেরে বলেছে 'হ'। আজকে এদের কেউ একজন আন্না হাজারে হয়ে উঠুক; আমি, এবং আন্দাজ করতে পারি আরো অনেকেই তার পেছনে দাঁড়িয়ে বলবে, 'হ'।
আরেকটা উপায় আছে। আমি নিজেই ন্যাতা হওয়ার চেষ্টা করতে পারি। বেশি না, বছর দশেকের মামলা। তদ্দিনে আরো কয়েকটা পুরান প্রেমিক মরুক।
শেষকথাঃ নেতা বিহনে আমজনতা নড়ে না। অবশ্য ব্যাপারটা যদি হাটুরে মাইর হয়, তবে কথা আলাদা।
এতো সহজ ভাষায় বললাম, তাও কেনো বুঝলেন না, সেটা বুঝতে পারলাম না। আমি জাফর ইকবালদেরকে কিছু করে দিতে বলছি না। যা করবার আমরাই করবো। কিন্তু আমাদের বিচ্ছিন্নতা দূর করতে পারেন কেবল তাঁরা। তাই আমি শুধু আবেদন জানাচ্ছি তাঁরা আমাদেরকে একত্র করুক, আর কিছুই না।
তাঁরা শুধু ডাক দিয়ে সংগঠিত করুক, বাকী কাজ দেশের মানুষ, আপনি আমিই করবো। আশা করি এবার অন্তত কি বলছি বুঝতে পারবেন।
আপনার আবেগ বুঝতে পারছি। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বা মুহাম্মদ জাফর ইকবাল আমাদের এই ছোট দেশটার জন্য যা করেছেন তা প্রশ্নাতীত।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা করেছেন তা হলো-আপনার বা আমাদের তরুন প্রজন্মের বোধের জায়গায় কিছুটা হলেও অবদান রাখা।শাহবাগ মোড়ে দাড়িয়ে মাইকিং করলে আপনাকে সবাই পাগল ঠাওরাবে-আপনার এই ধারণাটা সঠিক নয়।কানসাটের গোলাম রব্বানীর নাম কিন্তু আমরা আগে জানতাম না।সাধারণ মানুষের মধ্যেই অসাধারণ মানুষ বাস করে কোন এক মুহূর্তের অপেক্ষায়।আমাদের এখন নিজেদের কাজ নিজেদেরই করতে হবে এবং করবই।
আরো লিখুন।
ঠিক বলেছেন। কিন্তু আপনি ব্লগ লিখে ভেগে গেলে তো হবে না! নাখালপাড়া থেকে বাংলামোটর তো খুব দূরে নয়। কাল সকালে উঠেই আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের কাছে চলে যান। ওনাকে সরাসরি আপনার বক্তব্য বুঝিয়ে বলুন। ওনার কোনো যুক্তি থাকলে তা খণ্ডন করুন। তারপর আমাদেরকে জানান কী হলো, উনি কী বললেন!
সপ্তাহান্তে একটু কষ্ট করে সিলেট গিয়ে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের সঙ্গেও কথা বলে আসুন। ওনাকেও আন্দোলনের ডাক দিতে বলুন। তারপর মানুষকে জানান কী হলো!
এনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা তো কঠিন কিছু নয়। উপায় জানা না থাকার কী আছে?
আরেকটা তথ্য: আন্না হাজারে খুব সাধারণ মানুষ ছিলেন। ভারত কাঁপিয়ে দিয়েছেন কিনা সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে যদিও, তারপরও যা করেছেন তিনি সাধারণ মানুষ থেকেই, সাধারণ একজন হয়েই করেছেন। যদি তাকে উদাহরণ হিসেবেই ধরেন, তাহলে তিনি পারলে আপনি কেন পারবেন না? আপনি কেন কেউ আন্দোলনের ডাক দেবে সেই অপেক্ষায় আছেন?!!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ঠিক, আমি অতি শীঘ্রই এটাই করবো।
এই লেখাটা পড়তে গিয়ে ডেজা ভ্যুঁ-র অনুভূতি হচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না !
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি পরিচালনা করছেন। স্যার পত্রিকাতেও লিখছেন, মিডিয়াতে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং আন্দোলনের সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সব আন্দোলন সফল না হলেও আমাদের মাঝে এখন আমাদের জাতীয় সম্পদ সম্পর্কে একটা ধারনা চলে এসেছে এবং সর্বস্তরের জনগন এ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে।
আমি লেখকের আহবানের সাথে সহমত জানাচ্ছি। তবে জাফর ইকবাল স্যার আর সাইয়ীদ স্যারকে প্রশ্নবিদ্ধও করতে চাই না। তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে যা করেছেন বা করছেন সেগুলোও প্রশ্নাতীত। আমার কাছে মনে হচ্ছে লেখকের এই আবেগের পরিপ্রেক্ষিতে শুধুমাত্র এই দুজনকে নিয়ে আমাদের পরে থাকলে চলবে না। আমাদের দেশে এরকম প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব আরোও আছেন। তারাও লিখছেন বলছেন। কিন্তু সবই কোনো না কোনো ঘটনার পর পরই হচ্ছে এবং পরে তা থেমেও যাচ্ছে। আর আমাদের সব আন্দোলনের ইচ্ছাও একসময় মিলিয়ে যাচ্ছে। একবার ভেবে দেখুন এইরকম পরিস্থিতি যদি ৭১ এর আগে হতো মানে আমাদের নেতারা যদি এরকম বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত থাকতেন তাহলে আমরা কোথায় থাকতাম। এই কথা বলা যায় ৯০ কে নিয়েও। তাহলে আমাদের আহবান হতেই পারে এমন কাউকে পাওয়া যিনি আমাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য সামনে থেকে অনুপ্রানিত করবেন।
নতুন মন্তব্য করুন