সময় নদীর পাড়ে দাড়িয়ে অদ্ভতসব ভাবনা ঘিরে ধরে। কতো দীর্ঘ সময় মানুষেরা হেটেছে। সেই কেনিয়ার ওমা নদীর তীর থেকে ভারতের শিপ্রানদী হয়ে মেঘনার অববাহিকায়। প্রায় ২০ লাখ বছরের পরিভ্রমণ। এগুলো ভাবলে এক ধরনের আচ্ছন্নতা ঘিরে রাখে। সেই ঘোরে আমি শীতলক্ষ্যা হয়ে পদ্মামেঘনার সঙ্গমস্থলের দিকে যেতে থাকি। ক্রমশ এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে উপনীত হই। গভীরভাবে তাকানোর চেষ্টা করি জীবন ও জগতের দিকে।
কখনো কখনো কিছু তথ্য বা আবিষ্কার আমাদের অবাক করে। কিন্তু তা বৈজ্ঞানিক সত্য। একটু সূক্ষতা নিয়ে তাকলে তা স্পষ্টভাবে দেখতে পাই। ২০ লাখ বছরের সেই অভিযাত্রায় নারীরাই এগিয়ে –
কেননা প্রচলিত আছে নারী আবদ্ধ থেকেছে রান্নাঘরে। আর পুরুষ চষে বেড়িয়েছে সারাবিশ্ব। কিন্তু জিনতত্ত্বের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে এর সম্পূর্ণ বিপরীত কথা। সুদীর্ঘ সময়ের ব্যাপ্তিতে দেখলে নারীরাই পুরুষের চেয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করেছে। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক পপুলেশন জেনেটিসিস্ট মার্ক সিয়েলস্টাড বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ডিএনএ শৃঙ্খল পরীক্ষা করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। মানবদেহে মা ও বাবার দিক থেকে আসা ক্রমোজমের শৃঙ্খল পরীক্ষা করেছেন তিনি। ছেলেসন্তানরা বাবার কাছ থেকে পায় ওয়াই ক্রমোজমটি। মায়ের দিক থেকে অবিকৃতভাবে সন্তানে প্রবাহিত হয় মাইটোকন্ড্রিয়ায় অবিস্থত ক্রমোজম। এখানে উল্লেখ করা যায়, দেহকোষে মাইটোকন্ড্রিয়ার রয়েছে নিজস্ব একগুচ্ছ ক্রমোজম। কিন্তু শুক্রাণু মাইটোকন্ড্রিয়া বহন করে না। ফলে নিষিক্ত জাইগোটে যেসব মাইটোকন্ড্রিয়ার ক্রমোজম থাকে, তা শুধু মায়ের দিক থেকেই আসে। বিশ্বময় নারী ও পুরুষের জিনবিন্যাস পরীক্ষায় নামলেন সিয়েলস্টাড। ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার ৫৪ জাতির নারী-পুরুষের মাইটোকন্ড্রিয়াল এবং ওয়াই ক্রমোজমের জিনের বিন্যাস পরীক্ষা করে দেখতে লাগলেন। দেখা গেল মেয়েদের দিক থেকে প্রবাহিত জিনের বিন্যাস বিশ্বে প্রায় একই রকম। বোঝা গেল মেয়েরা বিশ্বে চলাফেরা করেছে। কিন্তু পুরুষদের থেকে আসা জিনের বিন্যাস পরীক্ষা করে পাওয়া গেল ভিন্ন চিত্র। মায়ের দিক থেকে আসা বিশ্বের দূর-দূরান্তের জাতিগোষ্ঠীগুলো একটি আরেকটির অনুরূপ প্রায় ৮০/৮৫ শতাংশ। কিন্তু পিতার দিক থেকে আসা ওয়াই ক্রমোজমের ব্যাপারটি ঠিক উল্টো ক্রমোজমের সম্ভাব্য বিন্যাসগুলোর মাত্র ৩৫ শতাংশ উপস্থিতি। নেচার জার্নালে একটি সঙখ্যায় প্রকাশিত গবেষণাটি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে, ইতিহাসজুড়ে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি বিশ্বময় ঘুরেছে। কথাটি অবিশ্বাস্য শোনালেও সমাজতাত্ত্বিক দিক থেকে দেখলে খুব অসম্ভব মনে হবে না। এটাও সাইকোহিস্ট্রির একটা বিষয় হতে পারে। এ বিষয়ে পরে আবার আলোচনায় আসা যাবে।
আসিফ
বিজ্ঞান বক্তা
ডিসকাশন প্রজেক্ট
মন্তব্য
মন ভরলো না। সত্যি বলতে কি, ঠিকমতো বুঝতেও পারিনি। আরেকটু বিশদ বর্ণনা দেওয়া কি সম্ভব? সমাজতাত্ত্বিক দিকটা কোনভাবেই বুঝতে পারলাম না।
দারুণ আসিফ ভাই। তবে তর্কের অবকাশ আছে বলে মনে হয়। পেপারটা না পড়ে মন্তব্য করতে চাইনা। লিঙ্কটা দেবেন?
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
লেখাটা হুট করে শেষ হয়ে গেল!
তবে ফাইন্ডিংসটা ইন্টারেস্টিং।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
আসিফ ভাই, ইন্টারেস্টিং টপিক, কিন্তু আপনি আরেকটু বিশদ আলোচনায় যেতে পারতেন। ব্যাপারটা ধরতে পারলাম, কিন্তু সত্যি বলতে কি, পুরোটা ঠিক আত্নস্থ করতে পারিনি। আশায় রইলাম।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
এভাবে গাছে উঠিয়ে লুঙ্গী কেড়ে নিলেন?? ... আরেকটু খুলে বলুন না।
কিলিয়ার হইনাই ভাই, আরও ডিটেইলস জানতে মুঞ্চায়।
আপনি কি ১৯৯৮ সালের "Genetic evidence for a higher female migration rate in humans" - এই নেচার পেপারটার কথা বলছেন?
আমরা যখন ডেমোগ্রাফি পড়তে ঢুকলাম, প্রফেসর প্রশ্ন করেছিলেন, 'বল দেখি, পৃথিবীর ইতিহাসে, মাইগ্রেশনের সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর কী?' আমরা কেউ বলেছিলাম খরা, কেউ বন্যা, কেউ যুদ্ধবিগ্রহ। তখন প্রফেসর বলেছিলেন - 'না, বিয়ে'। আমরা অবাক হয়ে বললাম, কেন কেন? উনি বললেন, 'ভেবে দেখ, পিতৃতান্ত্রিক সমাজে, বিয়ের পর মেয়েরা স্বামীর বাড়িতে আসে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই। কখনও একই গ্রামে, কখনও বহু দূর থেকে। মানবসমাজের প্রায় অর্ধেক যারা, নারীজাতি, তাদের বেশিরভাগই এই জিনিস করে চলেছে, বহুকাল ধরে।'
সিএলস্তাড এবং ক্যাভালি-স্ফোর্জা (যিনি পপুলেশন জেনেটিক্সে খুবই বিখ্যাত, এবং বেশ বিতর্কিত) তাঁদের প্রাপ্ত এই ফিমেল মাইগ্রেশনের উচ্চ হারকে এই কারণটা দিয়েই ব্যাখ্যা করেছেন। এবং সেটা যৌক্তিকও মনে হয়। আপনি তাঁদের অবজার্ভেশনের কথাটা তুলেছেন, কিন্তু এই মূল ব্যাখ্যাটাই বাদ দিয়ে গেছেন। পাঠকেরা তাই ধোঁয়াশায় রয়েছে।
আরেকটু খুলে বলেন।
বিয়ের কারণে যাত্রা - সে তো অনুগমন। ব্যাটা ছেলে যে সনাতন অর্থে এক্সপ্লোর করে তার সাথে তাত্ত্বিক পার্থক্য আছে না? নতুন ভূমি সন্ধান, শিকার ইত্যাদি অভিগমনের সাথে তুলনা করলে নারীর যাত্রার ইফেক্ট তো কম হওয়ার কথা।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
তা ঠিক, কিন্তু নতুন জায়গা এক্সপ্লোর করা হচ্ছে, নাকি পুরোনো জায়গাতেই নতুন লোক আসছে, এসবের পার্থক্য করতে পারা মুশকিল। স্রেফ কার ডিএনএ কত দূর গেছে, (কত ভেরিয়েশন, মিক্সচার এসেছে তাতে), সেটুকু বোঝা যেতে পারে।
বিয়ে অনুগমন বলে বটে, কিন্তু গমন-টা একপেশে, কারণ পুরুষ তো গমন করে না। সে তো বাসা থেকে গিয়ে বিয়ে করে (বা হরণ করে) নিয়ে চলে আসে। গমন করে কেবল মেয়েই। তাই হরেগড়ে তাদের জিনই বেশি দূর যাতায়াত করে।
এই ছেলেটির এতো বুদ্ধি ঘটে!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
হঠাৎ শুরু হয়ে হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেল
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু। তবে অনেক সংক্ষিপ্ত হওয়ায় বেশি বুঝা গেলো না। নারীদের মাইগ্রেশন বেশি হওয়ার কারণগুলো কী কী হতে পারে (কৌস্তুভ একটা বলেছেন) সেটা যদি একটু বলতেন!
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু। তবে অনেক সংক্ষিপ্ত হওয়ায় বেশি বুঝা গেলো না। নারীদের মাইগ্রেশন বেশি হওয়ার কারণগুলো কী কী হতে পারে (কৌস্তুভ একটা বলেছেন) সেটা যদি একটু বলতেন!
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ভালো লাগলো। চিন্তা ধারায় স্বচ্ছতা আছে। তবে আরেকটু বিশদ ভাবে আলোচনা করলে ভাল হবে।
[u][u][u][u][u][u][u][u][u][u][/u][/u][/u][/u][/u][/u][/u][/u][/u][/u]
আমার
“সব অভিমান আকাশের চেনা চেনা
সবার জন্য সুদিন কি আসবেনা
উত্তর চেয়ে আকাশ পেতেছে কান
আমিও বেধেছি আমার প্রেমের গান।”
বিজ্ঞানের আলোচনাটুকু বেশ ভালো লাগলো, পরবর্তী পর্বে সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষন জানার অপেক্ষায় রইলাম।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
আসিফ ভাই, আরেকটু বড়ো করলে ভালো হতো। আপনার লেখা ত এতটুকু পড়েই মন ভরবে না!
দারুণ লাগলো, চিন্তার খোরাক পেলাম!!! ব্যাখ্যা করলে ভালো হত!!!
_____________________
Give Her Freedom!
ইন্টারেস্টিং। আশা করি আরো বিশ্লেষন পাবো আপনার কাছ থেকে।
-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী
লেখার মূল ভাবটার সাথে একমত হতে পারলাম না। লেখক কথানুযায়ী, শুক্রাণু মাইটোকন্ড্রিয়া বহন করে না। কাজেই অপত্য(ছেলে/মেয়ে) কেবল মায়ের মাইটোকন্ড্রিয়াতে থাকা জিন কপি করে। এখন, একটা নতুন শিশুর ক্ষেত্রে, মেয়ে শিশু হলে সে মায়ের জিনের কাছাকাছি জিন বহন করবে; অন্যদিকে ছেলে শিশু তার পিতার জিন থেকে ভিন্নতর জিন বহন করবে, কারন পিতার জিনের সরাসরি ইম্প্রেশন সে পাচ্ছে না। বাহিত ডিএনএ-গুলা যতখানি নির্দেশ স্মরণ করতে পারে, তার সাথে মায়ের জিন মিলিয়ে নতুন জিন আসবে। এখানে মেয়েদের বেশি ভ্রমণের সাক্ষ্য পেলাম না। পশু, সম্পদ আর নারীদের অপহরণ করে নেওয়াটা আগে সাধারণ ছিলো, তবে এই জিন-বৈশিষ্ট্য সেটাকেই সমর্থন করছে এমন বোধ করি না।
সাইকোহিস্ট্রি নামটা আজিমভের সূত্রে যেরকম একটা ধারণা দেয়, সেখানে এই পোস্টের নামে এটার ব্যবহারটা আমাকে দ্বিধান্বিত করছে।
মানুষদের মধ্যে একমাত্র প্রোডাক্টিভ ইউনিট হচ্ছে নারী। আর এই পয়েন্টটা আমার মনে হচ্ছে বিয়ে থেকে এগিয়ে থাকার কথা। বিয়েটাতো অনেক পরে এসেছে। আদিম মানব সমাজে যেখানে বিয়ের ব্যাপারটা ছিলো না এবং নারীরা ছিলো তাদের দলের প্রধান তখন যে কোনো মাইগ্রেশনে তারাই অগ্রগামী ছিলো এবং বাকি পুরুষ তাকে অনুসরন করতো।
চমৎকার চিন্তার খোরাক পেলাম। ধন্যবাদ।
চমৎকার পয়েন্ট, অমিতাভ ভাই। তবে আমি প্রাথমিক নারীপ্রধান সমাজকাঠামো(সত্যি বলতে, সমাজের ধারণা)র আগে, বিবর্তনের মূল থেকে কোনও ব্যাখ্যা আছে কী না তাতে আগ্রহী।
কিছু রেফারেন্স দেন ভাই।
কৌস্তুভ দা
আমি এই ব্যাপারে কোনো গবেষনাধর্মী জার্নাল এখনো পড়িনি। যা জেনেছি রাহুল সাংকৃত্যায়নের কিছু বই আর কিছু বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা বই থেকে। তাই ওভাবে রেফারেন্স দিতে পারবো না। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাবো কিছু জানলে আপনাদের জানাতে।
ভাই, রেফারেন্স ছাড়া তো আপনিই বলুন আর ডকিন্স বলুন সেই থিয়োরি মেনে নিতে অস্বস্তি লাগে। আসলে আপনার সঙ্গে সহমত হবার আগে বিস্তারিত জানতে চাইছি।
"বিয়েটাতো অনেক পরে এসেছে। আদিম মানব সমাজে যেখানে বিয়ের ব্যাপারটা ছিলো না"
দেখুন, বিয়ে ব্যাপারটাকে একটা আচার-অনুষ্ঠান নয়, স্রেফ নারী-পুরুষের (অন্তত কিছুদিনের জন্য) স্থায়ী জোটবদ্ধ হওয়া বোঝাতে চেয়েছি। সেটা আদিম মানুষের এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীতে হানা দিয়ে তাদের মেয়েদের তুলে ধরে নিয়ে এসে নিজেদের গোষ্ঠীভুক্ত করে নিজেদের সন্তানের মা বানিয়ে ফেললেও। আপনি আমার পয়েন্টটা ধরতে পারেন নি মনে হয়।
পাকনামি করার দরকার নাই, তাও করলাম। আফ্রিকা থেকে মানুষের পুরো পৃথিবীতে যাত্রা নিয়ে স্পেন্সার ওয়েলস এর একটা ডকু আছে। আগ্রহীরা দেখে নিতে পারেন।
ইউটিউব লিংক দিয়ে দিচ্ছি।
http://www.youtube.com/watch?v=T87GgyCqB4o&feature=player_embedded
আপনার লেখা ভাল লেগেছে। এর আগের লেখাটাও খুঁজে পড়েছি। কিন্তু একটা বিষয় খুব খারাপ লেগেছে -
আপনি কারো মন্তব্যের কোন জবাব দেন না। আপনি কি এতই ব্যস্ত যে ফেব্রুয়ারি মাসের পোস্টেরও উত্তর দেওয়ার সময় পান না? এই লেখাতেও কোন মন্তব্য নেই। এতে করে পাঠকের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ পায়।
আশা করছি আরেকটু বিস্তারিত লিখবেন ও পাঠকের সাথে আলোচনায় অংশ নিবেন।
শুভেচ্ছা।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
সহমত।
যা লিখেছেন দায়বদ্ধতা নিয়েই লিখেছেন। ভাল লাগল।
নতুন মন্তব্য করুন