১.
ঢাকার টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ভেতরে সরু একটা রাস্তা আছে। সেই রাস্তার দুই দিকে বড় বড় সব গাছ এবং পাশেই একটা খেলার মাঠ। রাস্তার পাশে চটপটিওয়ালা, ফলবিক্রেতা আর আইসক্রিমওয়ালার হাঁকডাক আছে। মাথার উপর একটা নীল রঙের বড় আকাশও আছে। সকালে আর বিকেলে সেই রাস্তা আর মাঠ সরগরম থাকে। চোখ বুজলেই এই রকম একটা ছবি আমি আজও দেখতে পাই।
বহু বছর আগে এই দৃশ্যের ভেতর আমিও প্রবেশ করি, এক শীতের সকালবেলা। আমার পরনে ছিল ঘরে বানানো সবুজ রঙের সোয়েটার তার নিচে সাদা একটা সার্ট, নীল রঙের হাফপ্যান্ট আর পিঠে একটা ব্যাগ। আমার একটা হাত মায়ের হাত ধরে আছে...আমরা এগিয়ে চলছি যেন এক স্বপ্নময় পথ ধরে। দৃশ্যটা এখনো অমলিন আছে যদিও বাকি সবকিছুই মলিনতার গর্ভে চলে গেছে।
আমি ধীরে ধীরে সেই রাস্তাটা দিয়ে এগিয়ে চলি। রাস্তাটার শেষ মাথায় একটা গেট, সত্যিকারের গেট নয়, কাঁটাতারের বেড়া সরিয়ে তৈরি করা সরু একটা প্রবেশপথ। সেই পথ দিয়ে ঢুকলে হলুদ রঙের প্রকাণ্ড একটা ভবন চোখে পড়বে সেই সঙ্গে বিশাল একটা খেলার মাঠ। স্কুল ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে, খাঁ-খা মাঠের মাঝে শুধু নিঃসঙ্গ উড়ছে সবুজ আর লাল রঙের একটা পতাকা। আমি দুরু দুরু পায়ে প্রবেশ করি জীবনের প্রথম বিদ্যালয়ে। আমাদের সেই স্কুল ঘরে।
আজও বুড়ো হয়নি সেই স্কুলটা। কি এক যাদুমন্ত্রবলে সেখানে পা-রাখলে আমিও সময়কে অগ্রাহ্য করে উলটো পথে হাঁটতে পারি। অনায়াসে ফিরতে পারি রুহুল আমিন স্যারের ক্লাসে, অথবা হাশেম স্যারের ক্লাস থেকে পালাতে পারি, হালদার স্যারের পিলে চমকানো ধমক শুনতে পারি, মতিউল্লাহ স্যারের মার হজম করতে পারি।
২.
একটা প্রশ্ন সর্বদাই আমাকে ভাবিত করতো। আমাদের স্কুলের নাম ল্যাবরেটরি স্কুল কেন? একটু বড় হয়েই উত্তরটা পেয়ে গিয়েছিলাম, আজকে অনেক বছর দেখলাম কেউ একজন তথ্যটা উইকিতে তুলে রেখেছেন।
গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন জনাব খান মুহাম্মদ সালেক। স্কুলটি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রশিক্ষণরত শিক্ষার্থীদের প্র্যাকটিস টিচিং এর সুযোগ প্রদান করা। 'ল্যাবরেটরি স্কুল' নামকরণ সেই উদ্দেশ্যেরই প্রকাশবহ। ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ জনাব মুহম্মদ ওসমান গণির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্কুলটি স্থাপিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর প্রধান শিক্ষকসহ ১৪ জন শিক্ষককে নিয়ে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রদের ক্লাস শুরু হয়।
প্রতিবছরই একমাস আমাদের স্কুলের ক্লাস নিতেন প্রশিক্ষণরত শিক্ষকরা, আমরা ওঁদের বলতাম পিটি স্যার। ওঁরা আমাদের তোয়াজ করে রাখতেন, চকলেট আর টফিও দিতেন কেউ কেউ। কারণ উনারা ক্লাসে কি পড়াচ্ছেন সেটা পরিদর্শন করতে আসতেন ওনাদের শিক্ষকরা। আমরা ক্লাসে ঠাণ্ডা থাকলে ওনাদের পাশমার্ক সেটা। ওই একমাস বাদ দিলে বাকিটা সময় আমাদের ক্লাস নিতেন আমাদের স্কুলের শিক্ষকরাই – মার্কিন দেশের আদলে বলা যায় ওনারা সব টেনিওর্ড, সুতরাং শপাং শপাং বেতের বাড়ি মারতে একদমই কুন্ঠা করতেন না।
আমাদের পরিবার ছেলেদের অধিকাংশই ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র ছিলেন। স্কুলের প্রথম দিককার ছাত্র ছিলেন আমার ছোটমামা। উনি যেই বছর পাশ করে যান আমার বড়ভাই ঠিক সেই বছরটিতে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হন। একই সময় আমার অনেক কাজিনই পড়তেন ল্যাবরেটরি স্কুলে। আমার বড়ভাই যেই বছর পাশ করেন – ঠিক সেই বছর আমি ভর্তি হই ক্লাস ওয়ানে। আমি পাশ করে চলে আসতে আসতেই আমার ছোটমামার সন্তানরা ওই একই স্কুলে ভর্তি হয়। এভাবে জন্মলগ্ন থেকে আমরা এই স্কুলের অংশিদার। স্কুলের ইউনিফর্ম ছিল সাদা রঙের সার্ট আর নীল রঙের প্যান্ট। এই রঙের পোশাক পরা কাউকে দেখলে আজও সেই মাঠটা কথা মনে হয় – যেখানে সকাল-বিকাল ভিড় করত নীল আর সাদা রঙ, তাদের বয়স পাঁচ থেকে পনেরো, চোখে মুখে বিস্ময়মাখা।
৩.
স্কুলে থাকতে আমরা সেপ্টেম্বর মাসের তিন তারিখ একটা উৎসব করতাম। ওটার নাম ছিল "স্কুল ডে"। স্কুল ডে'র আগের সাত-আট দিন কোনো ক্লাস হতো না। প্রতিটি ক্লাসের ছেলেরা তাদের ক্লাসটরুমটাকে সাজাতো- রঙিন কাগজের শেকল, দেয়াল পত্রিকা, হাতে আঁকা ছবিতে পুরো স্কুলটাই যেন নতুন চেহারা পেয়ে যেত। স্কুল ডে'র দিন ঘোষণা করা হতো কাদের সাজ সবচেয়ে সুন্দর হয়েছে। একবার এই স্কুল ডে বন্ধ করে দেওয়ার কথা উঠলে স্যারেরা সেটার প্রতিবাদ করেন। আমি যতদিন পর্যন্ত স্কুলে থেকেছি ততদিন পর্যন্ত এই ট্র্যাডিশনটা বহাল তবিয়তেই ছিল। স্কুল ছেড়ে আসার পরে ২৫ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে, আজও সেপ্টেম্বর মাস আসলে স্কুল ডে'র কথা মনে পড়বেই। এখনকার ছেলেরা কি এই দিনটা পালন করে?
ল্যাবরেটরি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হেডমাস্টার ছিলেন খান মুহাম্মদ সালেক। আমরা স্কুলে ঢোকার অল্প কয়েকদিন আগেই উনি স্কুল থেকে বদলি হয়ে যান। ততদিনে স্কুলটা বয়েস ১৫ পেরিয়ে গেছে, উনার শ্রমে তখন ঢাকা শহরে সেরা স্কুল হিসাবে বিবেচিত হতো আমাদের সেই স্কুলটা। আজকের ল্যাবরেটরিয়ানরা কি কিংবদন্তিতুল্য সালেক স্যারের কথা জানে?
৪.
“শোন রাতে ভালো করে ঘুমাইস..." রহস্যময় হাসি এসে জুনায়েদ সন্ধ্যার পর পর বিদায় নিল। একটু খটকা নিয়েই শুতে গেলাম। রাত তিনটার সময়ে বিকট শব্দে অ্যালার্ম ঘড়িটা বেজে ওঠার পর সেই হাসির মানে বুঝতে পারলাম। বিদায় নেওয়ার আগে সে গভীর রাতে বিকট চাইনিজ অ্যালার্ম সেট করে গেছে। সকালে জুনায়েদ একগাল হেসে জিজ্ঞেস করল...কিরে ভালো ঘুম হইছে?
অঞ্জনের কাছ থেকে ধার করে এনেছি গোয়েন্দা উপন্যাস, রাত জেগে পড়ব। আয়োজন করে বইটা খুলতেই দেখলাম প্রথম পৃষ্ঠায় বড় বড় করে লেখা খুনির নাম...সেই নাম এতোবার লেখা যে ওটাকে বাদ দিয়ে বইটা পড়া সম্ভব না। ধুশ-শালা বলে বইটা ছুঁড়ে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
নাইনের হাফ-ইয়ার্লি পরীক্ষায় অঙ্ক খাতা পাওয়ার পর পাপু স্যারের কাছে অভিযোগ করল – স্যার আপনি আমাকে কম নম্বর দিয়েছেন – আমার পাওয়ার কথা ১০০ এর মধ্যে ১০ অথচ আপনি আমাকে ২ দিয়েছেন...
আজ এই ছেলেগুলোর কেউ চাকুরিজীবি, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ শিক্ষক অথবা কেউ ব্যাংকার। ওদের সাথে কদাচিৎ দেখা হয়। এই বিচ্ছু ছেলেগুলোকে এখন মানুষজন ভদ্রলোক বলে সম্বোধন করে...আমরা কতো রকম ভ্রান্ত ধারণা নিয়েই বাস করি।
স্কুল নিশ্চয়ই লেখা পড়ার জায়গা। কিন্তু এর বাইরেও স্কুল হচ্ছে বন্ধু তৈরির কারিগর। আমাদের স্কুলের তৈরি করা অনেক বন্ধুরা এখনো আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে আছে - সময়ে-অসময়ে তাদের ফোনকল আমাকে টেনে নিয়ে যায় উজানে...বহু দূরের এক উজ্জ্বল শহরে, যেখানে সকাল সাড়ে দশটায় একটা স্কুলে ক্লাস শুরু হয়। সেই ক্লাসে স্যারদের গর্জন আছে, আছে বেতের বাড়ির ভয়। সেগুলোর সাথে সাথে আছে অনবিল আনন্দের ভাণ্ডার। সেখানে মার খেয়ে মন খারাপ করলে মালুম ভাই নামের এক বুড়ো ঘন্টাবাদক গায়ে হাত বুলিয়ে শান্ত করে দেয়...সেখানে বন্ধুত্ব, অভিমান, রাগ, ক্রোধ, এক কামড় আইসক্রিম - সবই দারুণ মূল্যবান। সেখানে ক্লাস পালানো দারুণ এক অ্যাডভেঞ্চার। প্রবল বর্ষায় পানি উঠে পড়ে স্কুলের বারান্দায়...সেই স্কুলটাই তখন হয়ে যায় জলদস্যুদের জাহাজ! সেই স্কুলের গল্পগুলো আজও শেষ হয়নি।
৫.
আমাদের বাল্যবন্ধু টিপু মাস্তান হতে চেয়েছিল। বেশ চেষ্টা-টেষ্টা করে সে তা-ই হতে পেরেছিল। সেই বোকা ছেলেটা জানতো না যে রাস্তাটা প্রায়ই ওয়ান-ওয়ে রোড এবং এর শেষ মাথাটা খুব দূরে নয়। শেষবার যখন দেখা হয়, আমি বিদায় নেওয়ার সময়ে টিপুকে বলেছিলাম...ভালো থাকিস দোস্ত। টিপু স্বভাবমত জবাব দিয়েছিল...এইটাতো বড় কঠিন কাজ দিলি রে...
আজ থেকে ঠিক এগারো বছর আগে এই সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখ জেলের নির্জন সেলে তার মৃত্যু হয়। সেপ্টেম্বর মাসের তিন তারিখ ফিরে ফিরে আসে আনন্দ আর বেদনার স্মৃতি নিয়ে। হঠাৎ কেন যেন বিশালদেহী একটা বালকের মুখ মনে পড়ে - সে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে অথবা রয়ে গেছে জনান্তিকে। তাকে দেখার মতো চোখ নেই আজ।
বিদায় বন্ধু...ভালো থাকিস।
৬.
আমাদের সেই স্কুলটার আজ পঞ্চাশ বছর পূর্তি হলো। এক সময়ে পড়াশোনাতে ল্যাবরেটরি স্কুলের অনেক সুনাম ছিল। আমাদের ব্যাচেও ১২ জন ছাত্র মাধ্যমিকে স্ট্যান্ড করেছিল। খেলাধূলাতেও বেশ ভালো ছিল স্কুলটা। এখনো মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলে আমি খবরে ল্যাবরেটরি স্কুলের নাম খুঁজে বেড়াই। যেটুকু বুঝেছি যে স্কুলটার সেই সুদিন আর নেই। সেরার তালিকায় আজকাল অচেনা সব নাম। তাতে আমার কোনো ক্ষোভ নেই, আমার শৈশব আর কৈশোরের স্কুলটা এখনো আমার কাছে সবচেয়ে উঁচু। আপন গৌরব নিয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে আমার এবং আমার মতো আরও অজস্র মানুষের শৈশব আর কৈশোরের গল্পগাঁথায়। সেটা অমল ধবল অক্ষয়...তাতে চিড় ফেলতে পারেনি মহাপরিক্রমশালী সময়।
আমাদের জীবনটা সময় দিয়ে মেপে ফেলা যায় কিন্তু আমি চাই যেন আমাদের স্কুলটা যেন চির অক্ষয় থাকুক...৫০ থেকে ১০০...১৫০...অনন্তকাল সে বেঁচে থাকুক...হাজারো শিশু আর কিশোরদের প্রথম স্বপ্নভূমি হয়ে।
শুভ জন্মদিন প্রিয় ল্যাবরেটরি স্কুল, তোমার কথা এখনও নির্ভুল মনে পড়ে, বেলা এবং অবেলায়। তুমি ভালো থেকো...আমরাও ভালো আছি।
ছবিসূত্রঃ তৌসিফ সালামের ব্লগ
মন্তব্য
...
যাক, এইবার আমার ইটা কেও সরায় নাই।
চমৎকার পোস্ট। আপনার বেশীরভাগ লেখাই পাঠককে স্মৃতিকাতর করে তূলে। পড়তে পড়তে মনে হয়, একই ঘটনা আমার জীবনেও ঘটেছে একসময়। স্থান/কাল/পাত্র ভিন্ন হয়তো কিন্তু ঘটনা সবই একইরকম।
আপনি মন্তব্য এডিট করবেন দেখে আমিও ওটা নাড়াই নি।
ধন্যবাদ...স্মৃতির শহর লিখতে গিয়ে বুঝেছি যে আমাদের বাল্যকালের গল্পগুলো প্রায় একই রকম।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
খুব আবেগ ঘন একটি পোস্ট । নিজের স্কুল টির কথা মনে করিয়ে দিলেন ... লেখায়
ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
কি আর বলি! সেই বালক বেলার স্মৃতিগুলি যে কত হিরণ্ময় সকলেরই কাছে! আমি জানি আপনার মনে পড়ছে শামসুর রাহমানের সেই কবিতাটির সেই লাইন ক'খানা, যা দিয়ে শুরু হয়েছে 'আপনার স্মৃতির শহর'।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ রোমেল ভাই। লাইনগুলো আবারও উদ্ধৃত করি...শুধু এই লেখা নয়...লাইনগুলো প্রায়ই মাথায় ভিড় করে।
পাখির ডানার শব্দে সচকিত
সকালবেলার মতো আমার শৈশব
প্রত্যাবর্তনের দিকে ফেরাবে না মুখ
কস্মিনকালেও।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
কেন জানি খুব মন খারাপ হয়ে গেলো। এ লেখাটি আপনার খুব ভালো লেখাগুলোর একটি।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ধন্যবাদ সজল।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
লেখা।
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ল্যাবরেটরী স্কুল এ আমি ছিলাম '৮৯ সাল থেকে '৯৮ সাল অবধি। আপনাদের সময় আশেপাশে অব্স্থা কি ছিলো জানি না - আমরা যখন ক্লাস এইট এ উঠলাম (যে সম্য়টায় স্কুল পালানোর পালা শুরু) তখ্ন পারিপাশির্কতা বিচারে ল্যাবরেটরী স্কুল আমাদের চোখে ঢাকা শহরের শ্রেষ্ঠ স্কুল হলো। পাশেই ঢাকা কলেজের পুকুর - ক্যানটিন, ভিডিও গেম্স এর সবচেয়ে বড় মাকের্ট (চন্দ্রিমা সুপার), বলাকা - মল্লিকা সিনেমা হল, নীলখেতের বইয়ের দোকান, ঘুরে বেড়ানোর জন্য নিউ মাকের্ট - সব মিলিয়ে সে এক বেজায় অবস্থা। সেকেন্ড পিরিয়ড এর পরে ক্লাস এইট বি সেকশন এর অধের্কটাই খালি। সালাম স্যার ছিলেন, তিনি স্কুল টাইম এ এই সব কয়টা জায়্গা ঘুরে স্কুলের পোলাপানদের ধরার দায়িত্ম নিলেন (মূল কারন অবশ্য অন্যখানে - ওনার নিজের ছেলেও ধুমসে আমাদের সাথে ঘুরতো।) তবে আমাদের সম্য় অবধি রেসাল্ট বেশ ভালো ছিলো।
-মেফিস্টো
আমরা স্কুল ছেড়ে বেরিয়েছি ৮৬ সালে। আমাদের কাছে সব সময়ের জন্যই সেরা স্কুল ওটা
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
-সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। ঃ-)
-মেফিস্টো
ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
'আমি যদি হই ফুল, হই ঝুঁটি-বুলবুল হাঁস
মৌমাছি হই একরাশ,
তবে আমি উড়ে যাই, বাড়ি ছেড়ে দূরে যাই.......
ছেড়ে যাই ধারাপাত, দুপুরের ভূগোলের ক্লাস।'
#রুমির ইচ্ছা: নরেশ গুহ
চমৎকার লেখা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
০৩
তাসনীম ভাই, এখনকার ছেলেরাও সেই ঐতিহ্য সমভাবে ধরে রেখেছে।
সালেক স্যারের কথাও আমরা মনে রেখেছি, পথের পাথেয় যারা গড়ে দিয়েছেন তারা স্মৃতিতে সদা অক্ষয়!!!
০৪
আমার প্রধান বন্ধুমহলটাও স্কুলের, এখনও আমরা এক আছি। এবং ওদের সাথে আমি যতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, এরকম পৃথিবীর আর কারো সাথেই করি না!!!
০৬
ভাইয়া, প্রতি ব্যাচেই মেধার মান প্রায় ধ্রুব থাকে বলে ধরে নেওয়া যায়। নতুনরাও একি রকম রেজাল্ট করছে। ইদানিং তালিকায় প্রথমে আসতে পারছে না, কারণ মোট ছাত্র সংখ্যা কম, টেস্টে অকৃতকার্যদের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণদানে নমনীয়তাঃ ফলে কয়েকজন এসএসসিতেও অকৃতকার্য হয়। এদুটো ক্ষেত্রে আমাদের স্কুল পিছিয়ে যায়। কিন্তু মেধার মান অক্ষুণ্ণ আছে; এবং তা যে কোন পাব্লিক ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষায় ল্যাবরেটরিয়ানদের প্রতি বছরেরই সাফল্য দেখলে বোঝা যায়।
------------------------------------------------------------
আশা করছি যারা ঢাকায় আছেন, কিছুক্ষণের জন্য হলেও আমাদের পরমপ্রিয় বিদ্যালয়প্রাঙ্গণে আগামীকাল আসবেন। সবার সাথে দেখা হবে।
আমাদের শিয়রীয় বিদ্যাপীঠ দীর্ঘজীবী হোক।
আলো আরো আলোয় জীবন-দেশ-সমাজ জ্বলে উঠুক।
_____________________
Give Her Freedom!
জেনে খুব ভালো লাগলো।
স্কুলের মাঠের অনুষ্ঠানের ই-মেইল পেয়েছি। আমি আছি সাড়ে আট হাজার মাইল দূরে...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
বরিশালের উদয়ন হাই স্কুল - এভাবেই মিস করি
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
অপছন্দনীয় ভাইয়া,
আমার খুব খারাপ লাগে ইউরোপিয়ান মানের এই স্কুলটা কেন শুধু বরিশালে ? কেন ঢাকাতে হলো না?আমার জীবনের বেশ কিছুটা সময়টাতে সেখানে পড়েছি । Punctuality, discipline, Academic professionalism এ ই বিষয়গুলোর হাতেখড়ি সেখান থেকে।
এখনও মিস করে।
আরিফিন সন্ধি
পড়ার সময় এই লেখাটাকেও "স্মৃতির শহর"-এরই একটা অংশ বলেই মনে হচ্ছিল। পড়া শেষে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে রইলাম নিজেও।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ মিলু।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
স্মৃতি জাগিয়ে দিলেন।
স্কুল নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে এখন! আমার স্কুলের জন্ম অনেক অনেক আগে, সেই ১৮৭৫ সালে। ১২৫ বছর পূর্তির সময় স্কুলে পড়ি, তখন আয়োজন হয়নি কোন কিছুর। ওর ১৫০ পুরোবে ২০২৫ এ, বেঁচে থাকলে তখন নিশ্চিত করে স্কুলে ঢুঁ দিয়ে আসতে ভাল লাগবে খুব!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
ধন্যবাদ মর্ম। তোমার স্কুল কোনটা?
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আমার স্কুল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, ওখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত স্কুল, জন্ম আর এগারোটা বছর আগে হলে জেলার সবচেয়ে পুরানো স্কুল বলা যেত একে- অন্নদা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
দারুণ লেখা! কাতর করে ফেলে! চলেন একটা ৫ বছর পরের প্লান করি। সব পরবাসী সচলেরা একসঙ্গে দেশে যাব। আড্ডা দেব! যাবেন?
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
অবশ্যই যাব...আরও আগে করলে আরও ভালো।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
(গুড়)
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ভাইয়া আমি এমন একটা সময়ের ছাত্র যখন আসলেই স্কুলের নামটাকে পত্রিকায় প্রথম দিকে পাওয়া যাবেনা...তবে আমি আপনাকে বলতে পারি এই স্কুল এর ছেলেরা আপনাদের রেখে যাওয়া নামটার সুবিচার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সময় করতে পারে...কাল স্কুলে যাব আবার...আবার সেই মাঠে যাব যেই মাঠে দাপাদাপি করে বেড়ানো হইসে...আবার সেই টিফিন ঘরের পেছনের চিপা রাস্তায় যাব যেখান দিয়ে অসংখ্যাবার পালিয়েছি(বলতে দ্বিধা নেই আমি,আমরা স্কুল পালাতাম)...সেই আমার গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল এ কাল আবার যাব...আমাদের জন্য দোয়া করবেন...
একজন এই ব্যাখ্যাটা দিয়েছে - জেনে খুব ভালো লাগলো।
স্কুল পালানোর ব্যাপারটা লেখায় বাদ পড়েছে...এখন মনে পড়লো।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আমি পাঁচটা স্কুলে পড়েছি। স্মৃতিগুলো তাই ছড়ানো।
ছুয়ে গেলো আপনার কথাগুলো।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ধন্যবাদ নজমুল। আমার সৌভাগ্য যে আমি একটা স্কুল, একটা কলেজ আর মাত্র দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
এমিল ভাই,
এখন ও আপনি যদি নম্বর দেখতে পারতেন, উপরের দিকে আমাদের স্কুলের পোলাপাইন এখনও আছে।এই গ্রেডিং এর যুগে মুড়ি-মুরকি সব এক হয়ে গেছে। আপনাদের সময় ঠিক জানি না, কিন্তু আমাদের সময়ে যেমন পোলাপাইন উপরের দিকে ছিল তেমনি একেবারে নিচেও কিছু ছিল। আমাদের স্কুল তো ফার্মের মুরগি বানানোর কারখানা না যে যে কয়জন সব ক্লাস করবে আর পাস করবে তাদেরকেই পরিক্ষা দিতে দিবে। কিছু অধঃপতন হয়ত হইছে কিন্তু যতটা মনে হয় অতটা না!(আমার মতে)।আমরা এমিল ভাই, মারামারি করতে করতে বড় হইছি...তাই বাপ মার তথাকথিত আদর্শ ছেলে হওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না...হইতেও চাই না...
ধন্যবাদ শাকিল...মারামারি করতে পারে এবং ভালো ছাত্র এটা কয়টা স্কুল তৈরি করতে পারে?
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
বাহ্... ভিন্ন নামে হলেও প্রিয় স্মৃতির শহরটাই আবার যেন ফেরৎ পেলাম ! স্বাদে, আমেজে আর মেজাজে সেইরকমই। অসম্ভব উপভোগ্য!
আমার একটা জিনিষ মনে হয় মাঝে মধ্যেই, জানি না আপনার সাথে মিলবে কিনা (এই সঙ্গে আমার স্কুলস্মৃতিটাও এখানে একটুখানি ঢুকিয়ে দিলে মাইন্ড করবেন ? আপনার লেখা পড়ে লিখতে ইচ্ছা করছে - পরে সে ইচ্ছাটা আর থাকবে না) --
আমার মনে হয়, শৈশব বা ছেলেবেলার এসব মধুর মায়াবী স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলিতে বড়বেলায় এসে কখনো ফিজিকালি ফিরে যেতে নেই। অনেকসময় খুব হতাশ হতে হয়। ছোটবেলার প্রিয় স্মৃতির মায়ামেদুর যাদুবাস্তবতার জালটা অনেকসময় ছিড়ে যায়। তখন খুব খারাপ লাগে। আমার এমন হয়েছে।
আমি এইট থেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়েছি এবং হোস্টেলে থেকেছি এমন এক স্কুলে যা শহর থেকে দূরে প্রায় জনবিচ্ছিন্ন এক নির্জন স্বপ্নপুরীতে, অফুরন্ত নিষ্কলুষ প্রকৃতির লীলাভূমির মাঝে। তিন দিক থেকে পাহাড়ে ঘেরা একটা উপত্যকার মত জায়াগায় স্কুলটা। পুরো উপত্যকা আর দুটো পাহাড় স্কুলেরই সম্পত্তি - স্কুল আর একটা হোস্টেল ছাড়া আর কিছুই নেই ওখানে। পেছন দিকটা যদ্দুর মনে পড়ে প্রায় জনমানবহীন আর শুধু বন-জঙ্গলে ঢাকা আদিগন্ত-বিস্তৃত টিলা/পাহাড়ের সারি। সেই পাহাড়ে আমি হরিন দেখেছি। শিয়াল আর সম্ভবত গেছো বাঘ-টাঘও ছিল (এটা শোনা কথা)। আরো অনেক বন্যপ্রাণীও ছিল।
স্কুলের এলাকাতে (কোন দেয়াল ছিল না, তিন দিকের সবুজ পাহাড়ই বলতে গেলে দেয়াল আর সামনের দিক খোলা) ঢুকতেই প্রথমেই একটা সুবিশাল খেলার মাঠ আর তার এক পাশ কাটিয়ে ধনুকের মত বেঁকে এগিয়ে যাওয়া একটা সুদীর্ঘ ড্রাইভওয়ে। ড্রাইভওয়ের শেষ মাথায় মূল স্কুল বিল্ডিং। দোতলা স্কুল বিল্ডিংএর পেছনে সমান্তরালে দোতলা হোস্টেল, মধ্যখানে আরেকটা খেলার মাঠ যেখানে আমাদের বাস্কেটবল আর ভলিবল গ্রাউন্ড ছিল। হোস্টেলের পেছন থেকেই সেই জনমানবহীন বন-জঙ্গলে ঢাকা পাহাড়ের সারির শুরু। অন্য দুপাশেও পাহাড়।
সন্ধ্যা নামলে এক অদ্ভূত, সুদুর, অচেনা ভিনগ্রহের মত পরিবেশ সৃষ্টি হত। মনে হত সারা দুনিয়া থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন। তাতে অবশ্য তেমন অসুবিধা ছিল না, কারন ৬০-৭০ জন ছাত্র ছিল হোস্টেলে। সেইসাথে দুইজন হাউজ টিউটর তাদের কোয়ার্টারে, আর মূল স্কুল বিল্ডিং-এ প্রিন্সিপাল পরিবারসহ। অবশ্য এরপরও অত বড় আর জনবিচ্ছিন্ন জায়গাটার জন্যে এই সংখ্যাটা ছিল একেবারেই নগন্য - প্রায় অতিজাগতিক নির্জনতা আর নৈশব্দ্যের সমুদ্রে বারিবিন্দুসম।
আমাদের স্কুল ও হোস্টেল ভবনের একটা বৈশিষ্ট্য ছিল যে - দুটি ভবনই পুরোপুরি সারি-সারি পরদাবিহীন কাঁচের জানালায় ঢাকা। একটা থেকে আরেকটা খুব সামান্য ছেদ দিয়ে, এবং সবদিক থেকে - সামনে-পিছনে-সাইডে। প্রায় এ্যাকুইরিয়ামের মত অবস্থা। যাতে কোন লুকোছাপার (এবং সেই সাথে প্রাইভেসি!) বালাই না থাকে। এর অন্য ফল হলো - বাইরের প্রকৃতি ভেতরে ঢুকে যেত। অন্য ভাবে বললে, আমরা সর্বক্ষন, প্রতিটি মুহুর্ত - সেই অপার প্রকৃতির সাথেই মিলেমিশে বসবাস করতাম। প্রায় কোন আড়ালই ছিল না। ঝড়-বৃষ্টি-শিলাবৃষ্টি-কালবোশেখি যাই হোক না কেন, সেসব আমাদের চারপাশে গর্জাত আর প্রায় ছুঁয়ে যেত। একবার সারারাত ঝড়ের পর ভোরে উঠে দেখি ভেতরের এবং একদম সামনের বিশাল সবুজ স্পোর্টস গ্রাউন্ডটা একেবারে আক্ষরিক অর্থেই 'দুগ্ধফেননিভ' রূপধারন করেছে। চারিদিকটা, সুবিশাল এলাকা জুড়ে, শুধু সাদা আর সাদা - আর কোনই রঙ নেই। যেন উত্তরমেরু বা আলাস্কা/গ্রীনল্যান্ডে এসে পড়েছি। সে এক অলৌকিক দৃশ্য! সেবার সারা দেশেই অস্বাভাবিক শিলাবৃষ্টি হয়েছিল।
আর স্বাভাবিক দিনে (রাতে) থাকত তিন দিকের পাহাড় ছেয়ে যাওয়া নীলচে সবুজ ঝিকিমিকি জোনাকীর অফুরন্ত আলোকসজ্জা। সেও এক অসাধারন দৃশ্য ! যেন পুরো পাহাড় বিয়েবাড়ির সাজে সেজে বসে আছে।
সন্ধ্যের পর হোস্টেল ভবন ছেড়ে আমাদের স্কুল ভবনে গিয়ে ক্লাস রুমে বসে প্রতিদিন বাধ্যতামূলক ভাবে রাতের পড়া পড়তে হতো। আমরা একে বলতাম 'প্রেপ ক্লাস'। শীতের রাতে সোয়েটার পরেও একটু কাঁপতে কাঁপতে যখন প্রেপ ক্লাসে যেতাম, তখন ক্লাসের জানালা দিয়ে মাঝে মধ্যে ঐ জোনাকিরা ঢুকে পড়তো। হাউজ টিউটর স্যার পাহারায় না থাকলে বা একটু উঠে গেলে, আমাদের মধ্যে তখন হুড়োহুড়ি পরে যেত সে জোনাকিটাকে হাতের মুঠোয় বন্দী করে তার আলো পর্যবেক্ষন করার আনন্দে মাততে।
রাত সাড়ে নয়টায়, ডিনার শেষে একেবারে ডরমিটরিতে ফেরার পর বিছানায় যাওয়ার আগেই লাগোয়া জানালা দিয়ে চোখে পড়ত পিছন দিকে একটু সামান্য দূর থেকে শুরু হওয়া জঙ্গুলে ঘুটঘুটে অন্ধকার পাহাড়। সেইসাথে ঝিঁঝিঁ পোকা থেকে শুরু করে ছোটবড় নানান কিসিমের পশুপ্রাণীর ডাক আর অরন্যের অন্যান্য নিশীথচারী সঙ্গীতের ঐকতান।
আরো অনেক মধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই স্কুলটার সাথে।
ইটকাঠপাথরগাড়িঘোড়াভাঙারাস্তাঘামমানুষভীড়হাউকাউ-এর পেষনযন্ত্রে থাকতে থাকতে মাঝেমাঝে মন আনচান করে ঐ দিনগুলির জন্য। অথচ কি আশ্চর্য, বহু বছর পরে বড়বেলায় যখন একদিন ঐ শহরে স্টপওভার করার কারনে, কি মনে করে ছোটবেলার স্কুলটায় গেলাম -- তখন স্কুলটাকে দেখে কেন যেন ভীষন সাদামাটা মনে হলো! সেই সুর আর বাজল না মনে !!
এত হতাশ হয়েছিলাম আর দুঃখ পেয়েছিলাম সেদিন !
****************************************
আপনার মন্তব্য সবসময়েই আগ্রহ নিয়ে পড়ি। এইবারও দুর্দান্ত লাগলো স্কুলের স্মৃতিচারণ।
জানতে ইচ্ছে করছে আপনার স্কুলের নামটা আর শহরের নামটা।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল। এখন মনে হয় কলেজও যুক্ত হয়েছে নামের সাথে। ক্যান্টনমেন্ট এলাকার এক কোনায় অবস্থিত। বাই দ্য ওয়ে, উপরের মন্তব্যটা কৈশোরের স্বপ্নিল চোখ আর মন দিয়ে দেখা কিছুটা জাদুবাস্তব স্মৃতির বুড়ো বয়সের নস্টালজিয়াজাত ইন্টারপ্রিটেশন। অল্প বয়সে সবকিছুই একটু বেশি বেশি বড় আর বেশি বেশি সুন্দর আর রোমান্টিক লাগে, বেশি বয়সে ঐ স্মৃতির উপর আবার বেশ কয়েক প্রস্থ ভালবাসার রঙের প্রলেপ পড়ে। কিন্তু সেই স্মৃতির জায়গায় বড় বয়সে ফিজিকালি ফিরে গেলে অনেক সময় অল্প বয়সে ঐ "বড়" করে দেখা "খুব সুন্দর বা রোমান্টিক" জিনিষ তখন অনেক ছোট আর নিজের নস্টালজিক স্মৃতির তুলনায় অনেক কম এ্যাপিলিং লাগে। তখন মনে হয় স্মৃতি বুঝি প্রতারনা করেছে আমার সাথে। উপ্রে আমার মন্তব্যের শেষের লাইন দুটি দ্রষ্টব্য। আজব একটা ব্যাপার! যদিও বুঝি, অল্প বয়সের সেই আমি আর এই আমি - একই মানুষ আর নেই। তাই সেই দেখা আর এই দেখা কখনোই পুরোপুরি মিলবে না - যদিও দুই দেখাই আসলে সত্যি। দুটোর কোনটাই মনে হয় মিথ্যে নয়! কিন্তু একই সাথে দুটিই কিভাবে সত্যি হয়, সে এক রহস্য। মজাই লাগে ভাবতে
তবে ফিরে না যাওয়াই ভাল, স্মৃতি তাই আজীবন বেঁচে থাকুক স্মৃতিতেই। যা চলে গেছে তাতো গেছেই, যেটা আছে সেটুকু অন্তত থাকুক! আমার অন্ততঃ এইই উপলব্ধি।
****************************************
'চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজে' পড়ত আমার ছোটভাই। ক্যাম্পাস এত অদ্ভুত সুন্দর!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
TV Commercial for the 50 years Celebration : "Coming Back To Life"
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
সত্যিই বালকবেলার স্মৃতি একদম বেলজিয়াম গ্লাসের আয়নার মত, যেন সবকিছুই সচ্ছভাবে দেখা যায়। লেখাটি পড়ে আমিও স্মৃতিমেদুরতায় আক্রান্ত হলাম। অনেক বন্ধুই ধরাধাম ত্যাগ করেছে। তাদের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল। আমিও আল্লাহর কাছ থেকে দু-একটা মিসকল পেয়েছি। মনটা বিষন্ন হয়ে গেল। আপনার লেখাটি পড়ে মনে হল এটাতো আমারই স্কুল জীবনের কাহিনী (শুধু স্কুলের নামটি ভিন্ন)।ভাল লাগলো। ভাল থাকবেন।
মন্তব্য : প্রৌঢ়ভাবনা
ধন্যবাদ আপনাকে...সুস্থ থাকুন এবং ভালো থাকুন এই কামনা করছি।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আবারো টুপি খুলে কুর্নিশ
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
ধন্যবাদ আশফাক।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
স্কুলের সময়টা অনেক বড়...তাই স্মৃতির পাল্লাটাও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অঅঅনেক বেশি। ২০০৫ এএসসি র পর আর যাওয়া হয়নি, এবছর শতবর্ষপূর্ণ হল। বন্ধুরা সব এক এক জায়গায় ছড়িয়ে...কতঅঅ দিন দেখিনা...লেখাটা পড়ে মনে পড়ল- স্কুলে ঢুকতেই মাঠের মধ্যের ইয়্য়া বড় বুড়ো আম গাছটার কথা ... এসেম্বলিতে শপথ পাঠ... ছুটাছুটি-হইহুল্লোর, টিফিন ব্রেক, ব্যাক বেঞ্চ আর "কিরে? ওর সাথে কি কথা বলছছ? অ্যা?" এরউত্তরে- "না !স্যার পড়ার কথা বলছি"
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ নীরব পাঠক। কালকের রি-ইউনিয়নে যাচ্ছেন?
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আপনার কিছু কিছু লেখা পড়লে মনে হয় আমার গল্পগুলাই আরেকজন বলে যাচ্ছে, এই লেখাটাও সেরকম।
উদয়নের একজন ছাত্র (মনে মনে প্রাক্তন হইনি এখনো, সেই সম্ভাবনাও নাই) হিসাবে বছর ছয়েকের ছোট ভাইদের আন্তরিক (যতখানি হওয়া সম্ভব) শুভেচ্ছা !
ধন্যবাদ অমিত...যেটা বলেছি...স্মৃতির শহর আসলে একটাই আছে...আমরা সব্বাই সেখানে যাতায়ত করি।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আমার নিজের স্কুলের কথা মনে পড়ে গেল। জীবনের সবচেয়ে নিঃস্বার্থ বন্ধু মনে হয় এই সময়টাতেই পাওয়া যায়। খুব ভাল লাগলো লেখাটা।
পড়াচোর।
ধন্যবাদ পড়াচোর।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ইশ ! কী দারুণ !
ধন্যবাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
তাসনীম ভাই । আবেগ থেকে নিস্ক্রিমিত একটা লেখা দেখে মনটা কেমন জানি হয়ে গেল । ২ - ৩ বার পড়লাম ।
কত বন্ধু ছিলো স্কুল লাইফ এ । এমন কি প্রথম চুমুটাও সেই দিনে, উফ কি সব দস্যিপনার দিন
আর যখন বললেন
- আমার মনটা চলে গেল উড়ে বহু দূরে ।
----------------------------------------------------------------
আমার
“সব অভিমান আকাশের চেনা চেনা
সবার জন্য সুদিন কি আসবেনা
উত্তর চেয়ে আকাশ পেতেছে কান
আমিও বেধেছি আমার প্রেমের গান।”
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ তাপস শর্মা।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
, খুব টাচি রে ভাই, মনটা কোথায় হারিয়ে গেল। স্কুল আসলেই বন্ধু তৈরির কারখানা।
facebook
ধন্যবাদ তারেক।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
সকাল সকাল পুরনো বেলায় ফিরে গেলাম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
পুরানো বেলায় ঘোরাঘুরি কিন্তু বেশ দারুণ একটা ব্যাপার।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ল্যাবরেটরি স্কুল নিয়ে আমার কোণ অভিজ্ঞতা থাকার কথা নয়। তবুও একটা অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। একটা পরীক্ষাতে সিট পড়েছিল এই স্কুলে। সেই সুবাদেই এর ভেতরে প্রথম ও শেষ (এখন পর্যন্ত) প্রবেশ। প্রবেশ মুখে লেখা ছিল, ''জ্ঞান অর্জনের জন্য এসো''। আর বেরিয়ে যাবার সময় চোখে পড়ল ''সেবার জন্য বেরিয়ে যাও''। খুব ভাল লেগেছিল, দুটি কথা।
ধন্যবাদ। "জ্ঞান অর্জনের জন্য এসো" এটা আমাদের সময়ে ছিল মনে আছে - সেবার কথাটা মনে নেই। এইজন্যই হয়তো আর সেবা করা হয়ে ওঠেনি।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
চমৎকার লেখা। প্রতিবেশি হওয়াতে আরো রিলেটেড হলাম লেখাটির সঙ্গে
ধন্যবাদ রিশাদ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
সংযুক্ত ফটুকে আপনার বর্ণনামতো চটপটিওয়ালা, ফলওয়ালা আর আইস্ক্রিমওয়ালা নাই বলে 'হুদা' মাইনাস। আর ফটুকে একখানা সাদা চৌচক্রযান দেখা যাচ্ছে, কিন্তু আপনার বর্ণনায় সেইটা আসে নাই বলে 'কইষ্যা' মাইনাস। এবং, এই লেখা লিখে আমার রাস্তার ধারের চটপটি খাওয়ার চোটপাট তুলে দেওয়ার জন্য আপনাকে 'আবুল' মাইনাস।
ভাবছিলাম, বড় হয়ে ল্যাবরেটরি স্কুলে পড়ুম, এমন একটা মন্তব্য করুম। কিন্তু, এখন মাথায় খালি চটপটির ভ্যানগাড়ি ঘুরতাছে!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
তোমার বড় হওয়ার অপেক্ষায় রইলাম
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আমাদের বয়স বাড়ে স্মৃতির আমরা বাড়ি না।স্মৃতিতে আমরা সবাই আমাদের ফিরে পাই অমলিন অন্য রকম শৈশবে বা প্রথম সবকিছুতে।খুব ভালো লাগল তাসনীম ভাই।
ধন্যবাদ যুমার...স্মৃতির শহর সর্বদাই অমলিন।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
... ... এখনো পর্যন্ত আপনার সমস্ত লেখার মাঝে সবচেয়ে বেশি আবেগ আপ্লুত হয়েছিলাম টিপুর কথা জেনে। এবারও তাই, এমনকি উপন্যাসের পাতায় খুনীর নাম লিখে দেওয়াও সেই দুঃখের গুমোট ভাবটা কাটাতে পারেনি।
ভালো থাকুন, আপনার স্কুল ভালো থাকুক।
ধন্যবাদ সুহান।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
কেন যেন এই লেখাটা পড়ে আপনাকে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলতে ইচ্ছে হলো। আবেগ ক্ষমা করবেন। আমি গল্যাহাসের বাচ্চা নই অবশ্য!
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
ল্যাবরেটরি স্কুলকে যে গল্যাহাস বলা হয় এটা আমি সচল পড়ে জেনেছি - আমাদের সময় এই টার্মটা প্রচলিত ছিল না। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ মহাস্থবির - যদিও কান্না উদ্রেককারী লেখা হয়ত ভালো কিছু নয়।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
তাসনীম ভাই, আপনার এই লিখাটিও মন ছুঁয়ে গেল - মনে ভাসছে আমার স্কুলের কথা...চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল
আপনার বন্ধু টিপু সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইচ্ছে হচ্ছে - যদি সম্ভব হয় লিখুন উনাকে নিয়ে
ভাল থাকবেন।
সচলে কি কোন এক্স চট্টগ্রাম কলেজিয়েট আছেন?
ধন্যবাদ। টিপুকে নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
লেখাটার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। ল্যাবরেটরি স্কুল এ পড়তে পেরে নিজেকে মাঝেমাঝেই ভাগ্যবান মনে হয়, গর্বিত বোধ করি। এইবার এর ৫০ বছর পূর্তিতে যেতে পেরেছিলাম ভাগ্যক্রমে। খুব ভাল লাগল যেয়ে।
আসলেই স্কুল্টা বন্ধু বানানোর জায়গা।আমার স্কুল এর বন্ধুরাই এখনো আমার সব সুখ দুঃখের সঙ্গী।এর পরেও অনেকের সাথেই পরিচয় হয়েছে কিন্তু সেই সহজ সম্পর্ক টা গড়ে ওঠেনি কারোর সাথেই। মাঝেমাঝেই ইচ্ছা করে স্কুল এর দিনগুলো নিয়ে কিছু লিখি কিন্ত অলসতার কারণে আর করা হয়ে ওঠেনা। এইবার কোন এক উইকেন্ড এ করে ফেলতেই হবে...
জীবনের ভগ্নাংশ অনেকটাই ব্যবহার হয়ে গেল; বুঝলাম, হাত ফস্কে অনেক সপ্নের শব দাহ হ্য়ে গেছে।
শাফি।
নতুন মন্তব্য করুন