আমিন সাহেব অনেক দিন পর বাজারে যাবেন ঠিক করলেন। কেবিনেটের ড্রয়ার খুলে একটা বান্ডিল সাফারি কোটের পকেটে পুরতে পুরতে একটু থমকে দাঁড়ান। ছাত্রাবস্থায় বিনা পয়সায় বাজার করার কথা মনে পড়ায় তার মুখের এক কোণায় একটু হাসি ফুটে উঠে, এখন নিজের একটা স্ট্যাটাস আছে, এইসব ছোটখাট মাস্তানি এখন আর তার সাথে যায় না।
রুমালে নাক চেপে মাছের অংশে গিয়ে নানান দেশী মাছ দেখতে পেয়ে তার বেশ আনন্দ হয়। বিশাল শরীর নিয়ে বোয়ালের লাফানোর সুযোগ বা পরিসর কোনটাই নেই, তাই সে নিথর শুয়ে আছে। ট্যাংরাগুলো আধমরা, কেউ কেউ মাছওয়ালার ছিটানো পানির স্পর্শে দুই-একটা লাফ দিয়েই আবার থেমে যাচ্ছে। তবে কইগুলো বেশ তাজা, টিনের চ্যাপ্টা হাড়ির অল্প পানির মাঝেই খোশমেজাজে লাফ-ঝাপ দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমিন সাহেব জিজ্ঞেস করেন, “ওই সবগুলা কত?”। কইয়ের মালিক চল্লিশ শতাংশ মার্জিন হাতে রেখে আড়াই হাজার বলতে গিয়েও সম্ভাব্য ক্রেতার মুখের জেল্লা থেকে পকেটের সামর্থ্যের একটা আন্দাজ নিয়ে আরো পাঁচশ যোগ করে তিন হাজারই চেয়ে বসে। দরদাম করে নষ্ট করার মত সময় আমিন সাহেবের হাতে নেই, তাই পকেট থেকে গুণে গুণে ছয়টা নোট বের করে দোকানীর উদ্দেশ্যে প্রায় ছুড়ে দিয়ে সাথে আসা কাজের লোককে ইশারা করেন মাছগুলো ব্যাগে পুরে নিয়ে আসতে।
আমিন সাহেবের স্ত্রী রোজিনা তাদের অবস্থার নাটকীয় উন্নতির পরে আর নিজের হাতে রান্না করেন না, তবু পুরান অভ্যাসের ফলে রান্নাঘরে গিয়ে বাজার এবং রান্নার তদারক না করলেও তার ভালো লাগে না। এতগুলো কই মাছ দেখে রোজিনা একটু বিরক্ত হন, অবশ্য পর মূহুর্তে তার মনে পড়ে এতগুলো মাছ তার নিজের কাটা লাগবে না। কিছু নিয়মিত দাম্পত্য সম্ভাষণ “তোমার আর কাণ্ডজ্ঞান হলো না” ইত্যাদি বর্ষণ করলে আমিন সাহবে অপরাধীর মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকেন। রোজিনার একটু মায়াই হয়, তারপর স্বামীর দিকে একটু মিষ্টি হেসে কাজের মেয়ে রুমির উদ্দেশ্যে হাক ছাড়েন, “রুমি বড় জালাটা এনে কইগুলো জিইয়ে রাখতো”। আমিন সাহেব কইগুলোর একটা গতি হয় দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচেন।
এইসবই সকালের কথা, বিকালে আমিন সাহেবকে হাজির হতে হয় মন্ত্রীসভার মিটিং এ। প্রধানমন্ত্রীর খুব বেশি নেক নজরে যে তিনি নেই, সেটা তিনি সহজেই বুঝতে পারেন, না হলে এমন গুরুত্বহীন মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্বে তাকে রাখার আর কি কারণ থাকতে পারে! অবশ্য একদিক দিয়ে এটা বাঁচোয়া, অন্য কলিগেরা তার সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে মাথা ঘামায় না, এত যে খারাপ সাংবাদিক, তারা পর্যন্ত তার চেহারা বিকৃত করে ছবি ছাপায় না, সুশীল সমাজের কেউ শহীদ মিনারে গিয়ে তার পদত্যাগের দাবীতে না খেয়ে মরে যাওয়ার হুমকী দেয় না।
তবে একটাই সমস্যা, মিটিং-এ কিছু না কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলতে হয়। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে কোন একটা জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ধরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে একেবারে তুলোধুনা করে ছেড়ে দেয়া। আজকে কোন ইস্যু ধরে কথা বলা যায় সেটা নিয়ে মনে মনে একটু বাজিয়ে দেখা শুরু করেন আমিন সাহেব। দ্রব্যমূল্য সবচেয়ে সহজ অপশন, কিন্তু সকালের কেনা কইয়ের দামটা আগের তুলনায় বেশি নাকি কম সেটা আর ঠিক করে উঠতে পারেন না। সন্ত্রাস বেড়ে যাওয়া নিয়েও কথা বলা যেত, কিন্তু ভাবতে ভাবতেই কুদ্দুস ভাই এই ইস্যু নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একদফা ধুয়ে দিলেন। কুদ্দুস সাহেবকে সঙ্গত দিবেন ভেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে দেখতে পান, তিনি ঢুলছেন। রাজনৈতিকদের চরিত্র নিয়ে যতই রটনা থাকুক না কেন, একজন ঘুমন্ত মন্ত্রীকে আক্রমণ করার মত নীচে আর নামতে পারলেন না তিনি।
বারবার নানা ইস্যু নিয়ে অন্যরা অন্য মন্ত্রীদের ধুয়ে দিলে একে একে সবগুলা ইস্যু তার হাতছাড়া হতে থাকলে হঠাৎ করে আমিন সাহেবের মাথায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুটা আকড়ে ধরেন। তারপর একটু কেশে গলা পরিস্কার করে তিনি বলতে শুরু করেন, “...আপনারা সবাই জানেন তরুণেরা আমাদেরকে নির্বাচিত করেছিলো ওই হায়েনাদের দোসরদের বিচার করার জন্য। কিন্তু এই চার বছরে আমরা কয়েকজন ঘৃণ্য অপরাধীকে জেলে পুরা আর একজনের বিচার শুরু করা ছাড়া কিছুই করতে পারি নি।” এইটুকু বলেই প্রধানমন্ত্রীর বিরক্ত মুখের দিকে তার চোখ পড়ে। তাই ঘাগু রাজনীতিবিদ এবার কথা ঘোরানোর জন্য একটু বিরতি নিয়ে কথা হাতড়াতে থাকেন, রোজিনার মুখ তার মনে পড়ে, আর সাথে সাথেই তিনি কথা খুঁজে পেয়ে যান।
তিনি আবার শুরু করেন, “...অবুঝ জনগণ এই নিয়ে অসন্তুষ্ট হলেও আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে আমাদেরকে আবারো ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসতে হবে। একবারেই যদি সব অপরাধীর বিচার করে ফেলি পরবর্তীতে আমরা কোন জিনিস দেখিয়ে ভোটে জিতব?”। প্রধানমন্ত্রীর কোঁচকানো মুখের রেখা সোজা হতে শুরু করলে আমিন সাহেব আত্মবিশ্বাস ফিরে পান, তিনি বলতে থাকেন, “বাজার থেকে অনেক কই কিনে আনলেই কেউ একবারে সব কই রান্না করে ফেলে না। একবারে সব কই রান্না করেতো আমাদের ফায়দা নেই। এর চেয়ে ভালো আমরা আজকে একটা কই রান্না করব, পরের দিন আরেকটা, এভাবে আমরা আমাদের সীমিত কই সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারব”। প্রধানমন্ত্রী তারিফের সাথে টেবিল চাপড়ে দিয়ে বলেন, “এইতো বুঝতে পেরেছেন। সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার এই টার্মে করে ফেললে পরের টার্মে কিসের মুলা ঝুলাবেন গাধাদের সামনে?”।
মন্ত্রীসভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় তাদের অমূল্য কইগুলোকে নিরাপদে জিইয়ে রাখার জন্য একটা বিশেষ কারাগার বানানো হবে।
মন্তব্য
ঐ লোক কি "নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি"? তাঁরা নিজেরা বাজারে গিয়ে কই মাছ কেনেন নাকি?
কোন এক পাতি মন্ত্রী, ছাত্র অবস্থায় মাস্তানি করে মাগনা বাজার করত, তার মানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়ার সম্ভাবনা ভালো
তারা নিজেরা প্রায় কখনোই বাজারে যাবেন না; কিন্তু, অনেক দিন পর একবারতো যেতে পারেনই
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
হুম, কৌস্তুভদার মত আমারো একই প্রশ্ন।
গল্পটা মনে হয় সজলদা দৌড়ের উপর (চ্যাপেল হিলের স্লোপ বরাবর) লিখেছেন!
কৌস্তুভ আর অপছন্দনীয় গুলিয়ে ফেলেছ
প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি দেখো। তবে দৌড়ের উপর বা স্থির হয়ে লেখার ব্যাপার না আসলে, গল্প লিখতে পারি না, মানে আমার আসে না। তাও লিখে ফেললাম, সমালোচনা থেকে শেখা যাবে ভেবে
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
হ, ব্যাবাক দুঃখু পাইলাম, আমার সঙ্গে বাস্তবজগতের লুল্পুরুষকে গুলিয়ে ফেলতে দেখে...
কে কারে কী কয়!!!
বুঝলাম! এই গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে জনগণ দুইজনকেই চিনতে পারলো। একজন বাস্তব জগতের, আরেকজন ভার্চুয়াল জগতের লুলপুরুষ।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
বাহ, বেশ মজাদার!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ রোমেল ভাই
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
লেখায় ঠিক সজল সজল ভাবটি আসেনি। তবে আমার ভালোই লেগেছে।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
সব সময় নিজস্ব প্যাঁচাল পাড়তে ইচ্ছা করলো না আর কি
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
লেখা ভাল্লাগছে। কিন্তু কোন কই ভাজা এই টার্মে পাওয়া যাবে বলে তো মনে হচ্ছে না।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ধন্যবাদ ফাহিম । আমারো যথেষ্ট সন্দেহ আছে, দেখা যাক!
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
লেখাটা সজলের চেয়ে হিমুর স্টাইলের কাছাকাছি লাগছে। তবে ভালই হয়েছে।
ধন্যবাদ
কারো স্টাইলের সাথে মিলে যাওয়া দুঃখজনক বাজে লেখার চেয়েও বেশি ভয় পাই এই ব্যপারটাকে
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
লেখার ধাঁচ একটু অন্যরকম মনে হলো।
গল্পপ্রচেষ্টা চলুক।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ, চেষ্টা জারি থাকবে।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ভালো লেগেছে।তবে কই মাছ একটাও এই টার্মে ভাজা হবে কিনা সন্দেহ!
আর ভাজা খাওয়ার আশাটা অনেকটা বেশীই মনে হয় যেখানে সবগুলো কই ধরাই হয়নি।
ধন্যবাদ। আমরা চাপ না দিলে ধরা পড়া কই মাছগুলোও আবার নদীতে ফিরে যাবে, ভাজা হওয়া দূরে থাক।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আআআর কই , আআর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ...
আমাদের সচেতন হওয়া দরকার, তখন নিশ্চয় হবে।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
অন্যকিছু জানি না। কৈ নিয়ে যা করেছেন, খুব ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ দেবানন্দ। আপনার লাস্টনেমটা ইন্টারেস্টিং
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
কথা সত্য!!! মুলা ঝুলিয়েই রাখবে...........
_____________________
Give Her Freedom!
নতুন মন্তব্য করুন