হেমিংওয়ের কিউবা

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: সোম, ০৫/০৯/২০১১ - ২:৪৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আর্নেস্ট হেমিংওয়ে- মহাকালের বুকে অমর, অব্যয়, অক্ষয় হয়ে আলো ছড়ানো এক লেখক। কেবলই কি একজন কালজয়ী লেখক হেমিংওয়ে না সেই সাথে সাথে উঠে আসে তার সৈনিক পরিচয়টিও? অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষটির দুর্দমনীয় শিকারের নেশা? সাগরের সাথে যুদ্ধ করে বড় মাছ শিকারের প্রতি তার প্রগাঢ় ভালবাসা? কিংবদন্তীতুল্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও?

সেই সাথে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা ছুয়ে ছেনে লেখনীর পরশ পাথর দিয়ে পাঠকদের পাতে তুলে দিতেন এমন এক জগৎ যা চিরকাল আমাদের এক অজানা পৃথিবীর গান শোনায়। সেই অদেখা জগতে আমরা কেবল হেমিংওয়ের বইয়ের মাধ্যমেই খানিকটে দুঃসাহসিক উঁকি দিতে পারি- বিশ্বযুদ্ধের রণাঙ্গনে, আফ্রিকার উম্মুক্ত প্রান্তরে, প্রেইরির বুনো বাতাসে, মুষ্টিযুদ্ধের রিঙে, ইতালির থমকে থাকা কোন শহরে, কিউবার উপকূলে চোরাচালানকারীর কারবারে, ক্যারিবিয় সাগরের সাথে জীবনের জন্য প্রতিনিয়ত ঝুঝে চলা বুড়ো জেলের নৌকায়। আকন্ঠ ভাললাগার মুগ্ধতায় ডুবেও সেই পৃথিবীটাকে আমরা কোনদিনই ছুতে পারি না, হেমিংওয়ের একান্ত বাস্তবসম্মত বর্ণনা আর নিরেট ভাষা আমাদের সেই দেখা আলো না দেখা রূপের কাছে নিয়ে যায় বটে কিন্তু আটপৌরে জীবনে অভ্যস্ত আমাদের বিশ্বাস হয় না এমন কিছু ঘটা আদৌ সম্ভব কি!

সম্ভব না হোক, যে মানুষটি বহু দূরের সেই জগতগুলোর হদিস আমাদের এনে দিলেন তার স্মৃতিকে তো অন্তত ছোঁয়া যায়। যার সাহিত্য সারা বিশ্বে মানুষের জীবন সংগ্রামের জয়গান গেয়ে যাচ্ছে আজো অবিরাম ভাবে, তার পদক্ষেপতো অনুসরণ করা সম্ভব। এমন আশা প্রথম মনে আস্তানা গেড়েছিল স্টকহোমের নোবেল প্রাইজ জাদুঘরের রেকর্ড কক্ষে এই প্রবাদ প্রতিম লেখকের সংরক্ষিত বলিষ্ঠ কণ্ঠের সাক্ষাৎকার শুনে, পরবর্তীতে প্যারিসের কিলোমিটার জিরোতে অবস্থিত শেক্সপীয়ার অ্যান্ড কোং বইয়ের দোকানে যার আড্ডা ও সাহচর্য তাকে লেখক হতে মূল প্রেরণা জুগিয়ে ছিল, ভেনিসে গ্র্যান্ড চ্যানেল পারের হোটেলে। এমনি এক পথ পরিক্রমার শেষে নিজেকে অবাক হয়ে আবিষ্কার করি কোহিমার নামের এক ছোট্ট গ্রামে। ক্যারিবিয়ান সাগরের সুনীল জলরাশি আলতো পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে কোহিমারের সৈকতে, সাগরের দিকে কামান তাক করে আছে গত তিনশ বছর ধরে স্প্যানিশদের গড়া এক পাথর দুর্গ, তার ঠিক পাশেই বিশ্বের প্রথম হেমিংওয়ে প্লাজা বা হেমিংওয়ে ভক্তদের তীর্থস্থান। চারপাশে স্তম্ভ ঘেরা জায়গাটির কেন্দ্র বিন্দুতে হেমিংওয়ের আবক্ষ ধাতব ভাস্কর্য।

IMG_7013
IMG_7050

এই ধীবরপল্লীটি বড় প্রিয় ছিল হেমিংওয়ের, সুযোগ পেলেই থাকতে যেতেন সেখানে, মিশতেন সাধারণ জেলেদের সাথে। মাছ শিকারে যেয়ে যেমন প্রায়ই সফল হতেন দৈত্যাকৃতী মাছ বড়শীতে বিঁধাতে, তেমনি জেলেদের কাছ থেকে শুনতেন তাদের সংগ্রামময় জীবনের ঘটনাবলী। তাদের জীবন থেকেই ধারণা নিয়ে লিখেছিলেন জগৎ কাঁপানো সাহিত্যকীর্তি দ্য ওল্ডম্যান অ্যান্ড দ্য সী । যে বইটি তাকে পুলিৎজার পুরস্কারের সাথে সাথে নোবেল পুরষ্কার এনে দেয়। নোবেল পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত সমস্ত অর্থই হেমিংওয়ে এই গ্রামের জেলেদের জীবন উন্নয়নের জন্য ব্যয় করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর কোহিমারের জেলেরা নিজ নিজ নৌকার প্রপেলার থেকে সীসা কুঁদে বাহির করে এই ভাস্কর্যটি গড়ে অম্লান করে রেখেছে তাদের চিরবন্ধুর স্মৃতি। তাদের কাছে হেমিংওয়ের নাম ছিল পাপা।

IMG_7009

বেজায় গরম পড়েছে, আগস্ট কিউবার উষ্ণতম মাস। কোহিমারের সমস্ত অধিবাসী ব্যস্ত সাগর তীরের ঠাণ্ডা হাওয়ায় শরীর জুড়াতে না হয় সাগর সঙ্গমে সাতারে। তাদেরই একজনের কাছে পেলাম এই গ্রামের হেমিংওয়ের প্রিয় পানশালা ল্য তেরেজার হদিশ।

IMG_6986

সাগর কোল ঘেঁষেই তৈরি এই পানশালাটিতে হেমিংওয়ে কোহিমারে আসলে যেতেনই প্রতিদিন। এখন সেই পাব-রেস্তোরাটির সব দেয়ালেই লেখকের স্মৃতি বিজড়িত ছবি, চিত্রকর্ম বা ভাস্কর্যের অবস্থান। এক কোণে দেখি তার পায়ের একজোড়া ছাপ সযত্নে সংরক্ষিত।

IMG_6954

পানীয় রসিকদের জন্য পানশালাটির তালিকায় আছে পাপা ডোবলে- রাম, লেমোনেড, বরফের সমন্বয়ে তৈরি হেমিংওয়ের প্রিয় পানীয়। জানা গেল বেশ চড়া দামে বিকোই তা।

IMG_6957

ল্য তেরেজার সাগরপারের জানালাটি দিয়ে আদিগন্ত বিস্তৃত ঘন ফেনিল সমুদ্র দেখা যায়, চোখে পড়ল বড় পানকৌড়িদের বিশাল ঝাক আর বিশালকায় বাদামী পেলিক্যানের মাছ ধরার চেষ্টা। এমন স্মৃতি ফ্রেমবন্দী করার আশায় জানালার কাছে যেতেই দেখা এক বুড়ো জেলের সাথে, রীতিমত জাল ঝাকিয়ে মৎস্য শিকাররত। প্রথমেই মনে হল এও হয়ত পর্যটকদের মনোরঞ্জনের এক ফন্দী, পরে শুনি এই খানে অনেকেই চেষ্টা করে জোয়ারের জলে সমুদ্রগর্ভ থেকে রূপোলী ফসল তুলে নিতে।

IMG_6970

রেস্তোরার দেয়ালে অসংখ্য সাদা কালো আলোকচিত্রের মাঝে গুটিকয়েক পেইন্টিংও উঁকি দিচ্ছে, তাদের একটা হেমিংওয়ের ব্যক্তিগত নৌকার পিলারের ২০ বছরেরও বেশী ফার্স্ট মেটের দায়িত্ব পালন করা ক্যাপ্টেন গ্রেগরি ফুয়েন্তসের।

IMG_6962

অনেকের মতেই হেমিংওয়ের দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সীর সেই ওল্ড ম্যান সান্তিয়াগো আসলে এই ক্যাপ্টেনই। সারা জীবন দেদারসে সিগার ফুঁকেও ১০৪ বছর দিব্যি সুস্থ অবস্থায় এই কোহিমারে অতিবাহিত করার পরে ২০০২ সালে এই ভুবনের মায়া ত্যাগ করেন। সেই সময় পর্যন্ত কোহিমারের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিলেন আজব বুড়ো, হেমিংওয়ের ব্যক্তিগত জগৎ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী জানা মানুষ। যদিও তিনি কোনদিনই দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী পড়েন নি, এই ব্যপারে তার নির্লিপ্ত মন্তব্য ছিল – আমি তো এদের মাঝেই থাকি, সেই গল্পের অভিজ্ঞতার মাঝেই আমাদের জীবন, নতুন করে আর পড়ার কি আছে!

ফেরার পথে সেই ক্যাপ্টেনের বাড়ীর দরজায় থামা হল কিছুক্ষণ।

IMG_6987
IMG_7000

যদিও হেমিংওয়ে কোন সময়ই বলেন নি যে কোন ব্যক্তিবিশেষের ঘটনা নিয়ে তিনি সেই অমর বুড়ো জেলের চরিত্র সৃষ্টি করেছেন, তারপরও হেমিংওয়েবোদ্ধাদের মতে ক্যাপ্টেন ফুয়েন্তেস নন, সেই আজব বুড়ো সান্তিয়াগোর মূল ঘটনা নায়ক ছিলেন পিলারের প্রথম ফার্স্ট মেট কার্লোস গুতিয়েরেজ। এর বেশী আর কিছু জানা যায় না কিন্তু দীর্ঘ জীবনের কারণেই হয়ত পর্যটকরা মনে করতে চাইতেন ক্যাপ্টেন গ্রেগরীও ফুয়েন্তেসই সেই সান্তিয়াগো, মনে আত্নপ্রসাদ নিয়ে ফিরতেন জীবন সংগ্রামে নুয়ে না পড়া প্রিয় উপন্যাসের চরিত্র এক আশাবাদী চিরতরুণকে চর্মচক্ষে দেখে।

এরপরের গন্তব্য ছিল ওল্ড হাভানার এক কোনায় বিখ্যাত হোটেল অ্যাম্বোস মুন্ডোস। হোটেলটি আন্তর্জাতিক ভাবে বিখ্যাত কারণ এই হোটেলেরই ৫১১ নম্বর কক্ষে ৭টি বছর ছিলেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে! ৫তলার এই কক্ষটি বেছে নেবার মূল কারণ ছিল সেখান থেকে পুরনো হাভানা চমৎকার দৃশ্য চোখে পড়ে। জমজমাট হোটেলের লবিতে দেয়াল জুড়ে কিংবদন্তির লেখকের নানা আলোকচিত্র।

IMG_6896

৫১১ নম্বর কক্ষটি আজ জাদুঘর। তালাবদ্ধ থাকে তা, কেবল মাত্র হেমিংওয়ে তীর্থ যাত্রীদের দর্শনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। আসবাবপত্র
তেমনটাই রাখা আছে যেমন ছিল হেমিংওয়ের সময়ে।

IMG_4806
IMG_4780

এক আলমারিতে বিশ্বের নানা ভাষায় অনুদিত তার বইগুলি (পরের বার আসলে বাংলা অনুবাদ সাথে নিয়ে আসতে হবে! )। কোণায় বিছানার উপরে তার উপরে ছাপা নানা পত্রিকার সমারোহ, পাশে আদ্যিকালের টেলিফোন। দেয়ালে মুষ্টিযুদ্ধ ও নিসর্গের চিত্রকর্মের সাথে সাথে নানা স্মৃতিময় আলোক চিত্র। এক পাশে আফ্রিকা থেকে আনা নানারকম বল্লমের সংগ্রহ, সেই সাথে অবশ্যম্ভাবী ভাবে মাছ ধরা বড়শিরও।

IMG_4781
IMG_4784

ঘরের মূল আকর্ষণ এর ঠিক মাঝখানে, তারই ব্যবহৃত চেয়ার-টেবিলের উপর রাখা টাইপ রাইটার, যা দিয়ে এই হোটেল কক্ষে বসেই তিনি রচনা শুরু করেছিলেন স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ নিয়ে তার অমর ক্ল্যাসিক FOR WHOM THE BELL TOLLS. টাইপরাইটারের সাথে তার হাতে লেখা উপন্যাসটির একটি পাতাও আছে, নানা যাচাই-বাছাইএর নকশায় ভরা।IMG_4785

জানালায় দাড়াতেই চোখে পড়ল ওল্ড হাভানার জীবন ও দৃশ্য, যার প্রেমে পড়ে কালজয়ী লেখক এক মাঝারি আকৃতির ঘরেই কাটিয়ে ছিলেন এতগুলো বছর।

IMG_4789

এরপরপরই তার জীবনের আবার সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের মত আসে নব রমণীর প্রেম, মার্থা গেলহর্ন নামের আমেরিকান সাংবাদিকের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন হেমিংওয়ে( মার্থা ছিলেন তার ৩য় স্ত্রী)। তারপরপরই মার্থা জানায় এই হোটেলঘরে সংসার করা তার পক্ষে সম্ভব নয়, খুজতে হবে নতুন আশ্রয়। তবে তাই হোক!

হাভানার পনের মাইল দূরে ফিনকা ভিগিয়া নামের এক খামার বাড়ী ভাড়া করলেন নতুন সংসার পাতবার আশায়, ১৯৩৯ সালে। পরের বছর বাড়ীটি এতোটাই ভাল লাগল মিয়া-বিবির কিনেই নিলেন তারা সারা জীবনের জন্য। ১৯৪৫ সালে তাদের ডিভোর্স হয়ে গেলেও জীবনের ২১টি বছর এখানে কাটান লেখক, ১৯৬০ সাল পর্যন্ত। কিউবান সরকার অনেক আগেই জাদুঘরে পরিণত করেছে ফিনকা ভিগিয়াকে। সেটিই এবারের হেমিংওয়ে পরিক্রমায় আমাদের শেষ গন্তব্য।

IMG_4615

হাভানায় চলমান অ্যাণ্টিক গাড়ীর অভাব নেই, এখনে রাস্তায় যেগুলো বহাল তবিয়তে চলছে তা অনায়াসে অন্য যে কোন দেশের কালেক্টরস আইটেম হতে পারে। অধিকাংশই পঞ্চাশের দশকের বিশালাকায় চার চক্রযান। এমন একটাই চেপে পৌঁছানো গেলে ফিনকা ভিগিয়া। চমৎকার সবুজ বাগানের মাঝে সফেদ স্নিগ্ধ স্থাপনা, সুরকি বিছানো পথ চলে গেছে পেছনের বারান্দা পর্যন্ত, আরেকটা পিচ ঢালা পথ মূল গেছে মূল ফটক দিয়ে খানিকটা ঘুরে সিংহ দরজা পর্যন্ত। বিশাল এলাকা জুড়ে নানা গাছের সমাহার, বাঁশ ঝাড় থেকে শুরু করে অর্কিড কি নেই সেখানে। বাগানের এক প্রান্তে আলাদা করে রাখা আছে লেখকের বিখ্যাত নৌকা পিলার।

IMG_4711

পিলারের ইতিহাসও কম রোমাঞ্চ জাগানিয়া নয়, ১৯৩৪ সালে এই নৌকাটি কেনেন আজীবন মাছ শিকারের ভক্ত হেমিংওয়ে।ক্যারিবিয়ার নানা অঞ্চলে বিশালাকার মাছ শিকার করেন এর সাহায্যে। ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কিউবার জলসীমানায় জার্মান সাবমেরিন চিহ্নিত করার কাজ চালায় পিলার। অধিকাংশ সময়েই এর ক্যাপ্টেন ছিলেন গ্রেগ্ররী ফুয়েন্তেস। উইলে পিলারকে ফুয়েন্তেসের কাছেই সমর্পণ করে যান হেমিংওয়ে। জানা যায় হেমিংওয়ের মৃত্যুর পর অনেকেই পিলারে চেপে মাছ ধরতে যাবার জন্য মোটা টাকা সাধতে থাকে ফুয়েন্তেসকে, কিন্তু তার মন সায় দেয় না এতে। শেষে ফিদেল ক্যাস্ট্রোর কাছে ধর্না দেন তিনি, জানান সবচেয়ে খুশী হবেন পিলারকে হেমিংওয়ের বাড়ীতে নিয়ে গেলেই। ফিদেলের সাথে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল হেমিংওয়ের( সিয়েরা মায়েস্ত্রে পর্বতে গেরিলা অভিযান চলাকালীন সময়ে ফিদেলের বেড টাইম পড়ার বই ছিল ফর হুম দ্য বেল টোলস) , বন্ধুর স্মৃতি রক্ষার্থে ফিদেলের তত্বাবধানে পিলারের শেষ আবাসস্থান হয় ফিনকা ভিগিয়া যা লেখক দিয়ে গিয়েছিলেন কিউবার জনগণকে।

IMG_4619

মজবুত নৌকাটি আছে যথাযথ অবস্থায়, যেখানে কোন অবস্থাতেই জুতো পায়ে উঠতেন না হেমিংওয়ে। চোখে পড়ে ক্যাপ্টেনের হুইল আর মাছ শিকারির বসার চেয়ার। কিউবাতে বলা হত, সকালে হেমিংওয়ে টাইপ রাইটারের সাথে যুদ্ধ করেন আর বিকেলে পিলারে চেপে সমুদ্রের মাছদের সাথে!

IMG_4713

পিলারের পাশেই এক ছোট কবরস্থান, যেখানে আছে তাদের পোষা চারটি কুকুরের নামসহ সমাধি ফলক( বেড়াল পোষারও সাংঘাতিক বাতিক ছিল হেমিংওয়ের, এই বাড়ীতে ক্রস ব্রিডিং এর মাধ্যমে নতুন প্রজাতির বেড়াল সৃষ্টিরও চেষ্টা চালান তিনি, এক পর্যায়ে তো এখানে ৫৭টি বেড়াল ছিল)।

IMG_4706

পাশেই বিখ্যাত সুইমিং পুল যেখানে একদা ভুবন কাঁপানো হলিউড অভিনেত্রী আভা গার্ডনার জন্মদিনের পোশাকে সাঁতার কেটেছিলেন, এখানে আরো জড়িয়ে আছে ক্যারি গ্রান্টসহ হেমিংওয়ের আরো কজন মহারথী চিত্রতারকা বন্ধুর স্মৃতি। জানা গেল ৫টি ভাষায় খুব ভাল দখল ছিল তার, অনর্গল বলতে পারতেন স্প্যানিশ, ইতালিয়ান, জার্মান, ফরাসী আর মাতৃভাষা ইংরেজি!

ফিনকা ভিগিয়ার সংগ্রহ এতই মূল্যবান আর ব্যপক যে খোয়া যাবার ও ক্ষতি হবার ভয়ে সেই বাড়ীর ভিতরে কোন দর্শনার্থীর প্রবেশাধিকার নেই! তাদের অধিকার কেবল মাত্র বিশালকার দরজা ও জানালাগুলো দিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিবেশীর ন্যায় উঁকি মেরে দেখবার, অবশ্য তাতেই পুরোটা দেখা হয়ে যায়( সেই কারণেই বৃষ্টির দিনে বা সময়ে এটি খোলা হয় না !)। বাড়ীটি ঠিক তেমনি সাজানো আছে যেমনটা ছিল ১৯৬০ সালে যখন হেমিংওয়ে কিউবা ত্যাগ করেন।

অনেকগুলো ঘর। আলোবাতাস খেলছে সর্বদাই। বিশাল প্রশস্ত বসার ঘরের এক পাশে শোবার ঘর, আছে অতিথি কক্ষ, খাবার ঘর। প্রতিটি ঘরে আছে বই ! হাজার হাজার বই। সেই সাথে ম্যাগাজিন। জানা গেল কম পক্ষে নয় হাজার বই আছে এই বাড়ীতে। আর সেই সাথে প্রায় প্রতিটি ঘরের দেয়ালেই আছে শিকারি হেমিংওয়ের আফ্রিকার থেকে আনা নিজস্ব শিকারের নিদর্শন- নানা জাতের হরিণ, অ্যান্টিলোপ, বুনো মহিষ, চিতা, সিংহ কি নেই সেখানে! সেই সাথে ষাঁড়ের লড়াইয়ের নানা স্মারক, বিশালাকার বিজ্ঞাপন। আছে ফরমালিনে সংরক্ষিত কিছু জীব। আর তার পছন্দের পানীয়গুলোর বোতল।

IMG_4648
IMG_4659
IMG_4668
IMG_4644
IMG_4670
IMG_4622

বাড়ীর বাথরুমটিও কম আকর্ষণীয় নয়, এই খানেও আছে তিন তাক বই। তবে দর্শনার্থীরা খুব খুঁটিয়ে লক্ষ করেন কমোডের পাশেই দেয়ালে হেমিংওয়ের নিজে হাতে লেখা এমন কিছু যা পৃথিবীর কোন পত্রিকায় লেখা হিসেবে ছাপা হয় নি- এটি তার কয়েক বছর ধরে প্রতিদিনকার ওজন !

IMG_4653
IMG_4654

কি এমন আকর্ষণ ব্যক্তি হেমিংওয়ের যা প্রতিদিন আকৃষ্ট করে লাখো লাখো মানুষকে? এর উত্তর মনে হয় লুকিয়ে আছে তার সাহিত্যকর্মের ভিতরেই। তার রচিত চরিত্রগুলোর মতই ছিলেন তিনি একরোখা, লড়াকু, উল্লাসপ্রিয়, জীবনের সবকটি রঙ আদুল গায়ে মেখে নিতে চাওয়া এক মানুষ যার মন্ত্র ছিল- শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হাল ছেড় না। শারীরিক ও মানসিক ভাবে বারংবার নানা কারণে ভেঙ্গে পড়া মানুষটি ফিরে এসেছেন বারবার প্রবল বিক্রমে, মেতে উঠেছেন নব সৃষ্টির উম্মাদনায়। তার ব্যক্তিজীবন আর সাহিত্যকর্ম যৌথ ভাবে মিলেই না তৈরি হয়েছে হেমিংওয়ে নামের কিংবদন্তীর। হয়ত পাঠকেরা সেই অতিমানবের জীবন কেমন ছিল এই কৌতুহল থেকেই যান এই সব হেমিংওয়ে তীর্থ দর্শনে।

IMG_6959

বাড়ীর পাশেই আলাদা বেশ উঁচু একটা টাওয়ার, যার উপরে হেমিংওয়ের একান্ত ব্যক্তিগত চিলেকোঠা। হয়ত একান্ত চিন্তা-ভাবনা ও লেখার সময় সেখানে কাটাতেন তিনি, অথবা খুব গরমের সময়ে, সেই চিলেকোঠা থেকে দেখা যায় সুনীল সাগর আর দূরের মোহময়ী হাভানা শহর। সেইখানেও বেশ কিছু বই আর সদ্য বধকৃত চিতার সাথে শিকারি-লেখকের এক পেইন্টিং।

IMG_4681

ছোট্ট ঘরে একটাই টেবিল, উপরে তার ব্যবহৃত রয়্যাল টাইপ রাইটার

IMG_4697

বারান্দা থেকে সবুজ পাহাড় আর নীল সমুদ্রের মাঝের হাভানা দেখা যাচ্ছে।

IMG_4687

ভাবছি, কিউবা ছেড়ে হেমিংওয়ে আমেরিকা চলে যান ১৯৬০ সালে, পরেই বছরেই নানা হতাশায় আত্নহনন করেন। কে জানে, হয়ত এই আলোকময় দ্বীপে যেখানে জীবনের অধিকাংশ সময় ভালোবেসে কাটিয়েছিলেন হয়ত এখানে থাকলে আরো অনেক বছর সংগ্রামময় জীবন কাটিয়েই আমাদের দিতেন অমর সব সাহিত্যমালা।


মন্তব্য

The Reader এর ছবি

যথারীতি চমৎকার । হাসি উত্তম জাঝা! চলুক

তারেক অণু এর ছবি
ফাহিম হাসান এর ছবি

আরে, দারুণ। ট্রফি মুন্ডুগুলো ভাল লাগে নাই, তবে আলমারি ভর্তি বই দেখে চমৎকৃত।

কিউবা নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা জানতে চাই- কী দেখলে, কেমন লাগল। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে একটা বিস্তারিত পোস্ট দেন।

ছবি ও লেখার মাঝে একটু ফাঁকা রাখলে পড়তে সুবিধা হয়।

তারেক অণু এর ছবি

ট্রফি মুন্ডুগুলো আমারও ভাল লাগে নাই, কিন্তু আমাদের লেখক ছিলেন আপাদমস্তক শিকারি! কি করব!!
আরো কিছু বিষয় নিয়ে লেখা জমে আছে, শেষ করে কিউবার সার্বিক অবস্থা নিয়ে একটা বড় লেখায় হাত দিব, তবে বিষয়টাও বেশ জটিল।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আমিও ফাহিমের কথাটাই বলতে যাচ্ছিলাম, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আপনার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ নিয়ে একটা বিস্তারিত পোস্টের অপেক্ষায় থাকলাম। আর ভিসা, ট্যুরিজম এগুলোর ক্ষেত্রে কী রকম ব্যবস্থা? সবার জন্যে কি সমানভাবে উন্মুক্ত বা সহজ ব্যাপারটা? আপনাদের ইওরোপ থেকে যাবার জন্যে ভিসা জোগাড় করতে সমস্য হয়েছিল কোন... ইত্যাদি, ইত্যাদি... হাসি

আর বর্ণনার সাথে ছবি দেখতে খুব ভালো লেগেছে। ছবিগুলো এসেছেও দারুণ! আসলে জায়গাগুলো আর আবহাওয়াও দারুণ মনে হয়, তবুও আপনার ছবির প্রশংসা করতেই হয়। আচ্ছা ফ্লিকারের ছবি আপের সমস্যার কী সমাধান করলেন? প্রো-অ্যাকাউন্টে চলে গেছেন কি?
ওজনের তালিকার ছবিটা খুবই ইন্টারেস্টিং লেগেছে, পুরা ব্যাপারটাই, দেয়ালে নোট করে রাখা! দেঁতো হাসি
আর বাগানে নৌকার ছবিটা আমাকে অন্য একটা কথা মনে করিয়ে দিলো, বছর চারেক আগে শিল্পী এস এম সুলতানের নড়াইলের বাড়ির বাগানে তাঁর নৌকাটা এভাবেই রাখা ছিল নদীর ধারে...

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তারেক অণু এর ছবি

অ্যাম্বাসি থেকে বলে ছিল ভ্যালিড পাসপোর্ট থাকলেই তারা ৩০ দিনের ভিসা দেবে, সেটাকে কিউবা যাবার পর আরো ৩০ দিন বাড়ানো যায়। লিখব, আসলে এটি ছিল খুব অন্য ধরনের অভিজ্ঞতা, তাই একটু গুছিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে।

ফ্লিকারে তো বলল প্রতি মাসে জায়গা এক্সটেন্ড করে !

আব্দুর রহমান এর ছবি

লা জওয়াব

------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল

তারেক অণু এর ছবি
পাগল মন এর ছবি

যথারীতি অসাধারণ ছবি আর লেখা তারেক ভাই।

হেমিংওয়ে সম্পর্কে আমার খুব একটা পড়াশুনা নেই, আপনার লেখা থেকে অনেক কিছু জানলাম আর ওর লেখা পড়ার আগ্রহ বোধ করছি। (ওল্ড ম্যান এন্ড দা সী অবশ্য পাঠ্য ছিল, তখনি পড়েছি কিন্তু ইংরেজী পড়ার ব্যাপারে অনীহা থাকায় আর বেশি দূর এগোইনি মন খারাপ )

ফাহিম ভাইয়ের সাথে আমিও দাবি জানাচ্ছি কিউবা নিয়ে একটা লেখা দেন তাড়াতাড়ি।
ভাল থাকবেন।

------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।

তারেক অণু এর ছবি

ওর ছোট গল্পগুলো পড়ে দেখতে পারেন। ভাল লাগবে আশা করি। কিউবার বিভিন্ন জায়গা নিয়ে লিখছি, শেষ করি, তারপর সমগ্র কিউবা নিয়ে লিখব। ভাল থাকবেন।

কল্যাণF এর ছবি

ইটা রাইখ্যা গেলাম... রাখলাম, আসতেছি আবার

কল্যাণF এর ছবি

আণু খুব ভালো লাগছে পড়তে। ছবি গুলোও মারাত্মক, ঘরে বসে কিউবা ভ্রমণ করানোর জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- চলুক

কল্যাণF এর ছবি

তোমার নামের বানান ভূল করে ফেলেছি, দুঃখিত।

তারেক অণু এর ছবি

মস্করা করেন না দাদা, ঘরে বসায় গুল্লি মেরে বৌদিকে ম্যানেজ করে ডিসেম্বরে যোগ দেন দলে, পুরো ল্যাতিন আর মধ্য আমেরিকা ভাজা ভাজা করা হবে। এখনো সময় আছে, চলে আসেন সাথে।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বাঘের বাচ্চা

সোজা প্রিয়তে।

তারেক অণু এর ছবি
নজমুল আলবাব এর ছবি

খুব দ্রুত প্রেমে পড়ে যাবার মতো একটা জীবন তাঁর। আপনি লিখলেনও অনেক যত্নে। এতটাই যখন এলেন, তখন শেষ সময়টা নিয়েও লিখুন। শেষ বছরটা কেমন কাটলো তাঁর?

তারেক অণু এর ছবি

এই লেখাটাই আসলে তার কিউবা অবস্থানের সময়টা ধরে রাখতে চেয়েছি। একটা লেখায় হাত দিয়েছি লেখকের প্রথম দিককার জীবন নিয়ে-

যুমার এর ছবি

ধন্যবাদ তারেক অণু,হেমিংওয়ের কিউবা ঘুরে দেখানোর জন্য।The Old Man and The Sea আজতক পড়া ইংরেজি বইগুলোর শ্রেষ্ঠ বিশেষ একটা উক্তির জন্য-"A man is not made for defeat...a man can be destroyed but not defeated."
আপনি ঘুরতে থাকেন,সাথে আমরাও আছি (দুধের স্বাদ ঘোলে মিটলেও ক্ষতি নাই!)
ভালো থাকবেন।

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ। এটা আমার সবচেয়ে প্রিয় বইগুলোর একটি। ভালো থাকুন।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

এই পোষ্টটি পড়ে যুগপৎ মন ভালো ও খারাপ দুই-ই হলো।

মন ভালো করে দিলো প্রবাদ প্রতীম হেমিংওয়ে-কে ছবিতে ও প্রাঞ্জল বর্ণনায় আরো জীয়ন্ত করে জানতে পারবার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায়। সে কৃতিত্ব পুরোটাই আপনার।

দাপ্তরিক কাজে একবার কিছুদিন আগে একবার যশোর গিয়েছিলাম। এক ফাঁকে সুযোগ মিলেছিল সাগরদাঁড়িতে যাবার। যে মহান কীর্তিমান পুরুষ বাংলা সাহিত্যকে কম করে হলেও পাঁচশো বছর এগিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, দুঃখ করে বলতে হয় তাঁর এক পাতা রচনাও আমি সেখানে সংরক্ষিত থাকতে দেখিনি। না হাতের লেখায়, না ছাপার অক্ষরে। মন খারাপ হবার কারণটা ছিল এটাই। এইখানে পাবেন মধুস্মৃতি রোমন্থনের কাহিনী

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তারেক অণু এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ রোমেল ভাই। শিলাইদহ, পতিসর যেয়েও খুব খারাপ লেগেছিল হাল অবস্থা আর সংস্কারের নামে দুর্নীতির চালচিত্র দেখে। আপনার লেখার জন্য ধন্যবাদ আবারো।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

জোশ হেভী জোশ। আপনেরে হিংসা হইতাছে ভাই। রেগে টং

তারেক অণু এর ছবি

আরে না হিংসা কিসের ! আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ

মিলু এর ছবি

ঝাঁ চকচকে সব ছবি চলুক

তারেক অণু এর ছবি

হাসি আরে এই ফিচারের অধিকাংশ ছবিই তো কোন না কোন ঘরের ভেতরের, আমার ক্লিক করা ছাড়া কিছুই করতে হয় নি।

রু (অতিথি) এর ছবি

আপনার সাথে কোনদিন দেখা হলে হ্যান্ডশেক করবো। আপাতত এতোটুকু বলে রাখি, আপনার লেখার হাত খুব ভালো।

তারেক অণু এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। অবশ্যই দেখা হবে, তবে আপাতত দূর থেকেই কোলাকুলি , শুভেচ্ছা

ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

উত্তম জাঝা!

তারেক অণু এর ছবি
মুহিত হাসান এর ছবি

কিউবা ভ্রমণ নিয়েই তো ভাই একটা বই হতে পারে হাসি

তারেক অণু এর ছবি

হুম, আপনে আছেন শুধু বই নিয়ে। তবে অন্তত আরো ৭টি ফিচার লেখার মশলা আছে-- দেখা যাক।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

যথারীতি চমৎকার অণুদা!!! চলুক


_____________________
Give Her Freedom!

তারেক অণু এর ছবি
মৌনকুহর এর ছবি

চলুক! হাসি

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

তারেক অণু এর ছবি

তথাস্ত চোখ টিপি চলুক তাহলে--

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কী আর বলবো, শুধু ছয় নম্বর ছবিটা দেখে তেষ্টা পেয়ে গেলো

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তারেক অণু এর ছবি

তা তো একটু লাগবেই, ইয়া হো হো অ্যান্ড এ বটল অফ রাম!!!

সুমন তুরহান এর ছবি

লেখা যথারীতি অসাধারণ! চলুক আমার খুব প্রিয় লেখককে নিয়ে লিখেছেন।

হেমিংওয়ের যে বইটি আমি প্রথম পড়ি সেটি ছিলো 'The sun also rises' এবং এটি এখনও আমার সবচেয়ে প্রিয় উপন্যাসগুলোর একটি। উপন্যাসটিকে বলা যেতে পারে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিলুপ্ত প্রজন্মের কাহিনী আর হেমিংওয়ে যেনো সেই বিপর্যস্ত সময়ের কথাকার। এ উপন্যাসের মুখ্য চরিত্রগুলোকে প্রথম পাঠে অদ্ভুত মনে হয়েছিলো। ষাঁড়ের লড়াইয়ে যোদ্ধা রোমারিও পেড্রো, ব্রেট অ্যাশলে নামের এক সুন্দরী যুবতী, তাদের ঘিরে ঘটনাসংঘাত - সব বর্ণিত হয়েছে জেক বার্নেসের জবানিতে। নেভি পাইলট বার্নেস ইতালীয় ফ্রন্টে ভয়ংকরভাবে আহত হয় এবং এই দুর্ঘটনায় লুপ্ত হয় তার যৌনক্ষমতা। তবুও সে ইংল্যান্ডের হাসপাতালে নার্স ব্রেট অ্যাশলের প্রেমে পড়ে। একদিকে যৌনক্ষমতাহীন পুরুষ অন্যদিকে প্রবলভাবে শরীরী কামনায় আর্ত নারী - এ দু'জনের মাঝে প্রেম। 'The sun also rises' -এ হেমিংওয়ে তুলে ধরেছেন এক খন্ডিত, বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত, উদ্দেশ্যহীন, মূল্যবোধহীন জীবনযাত্রার প্রতীকী বর্ণনা। এই উপন্যাসটি আজো আমাকে মুগ্ধ করে।

হেমিংওয়ে সত্যিকার অর্থেই একজন 'আন্তর্জাতিক' এবং 'খেয়ালি' লেখক। প্যারিস নিয়ে লেখা 'A moveable feast' এবং শেষ জীবনে লেখা 'Islands in the stream' বইদুটিতে তার অজস্র প্রমাণ ছড়িয়ে আছে। জীবনের শেষ মুহূর্তটিকেও তিনি আত্মহত্যার ঘটনা দ্বারা চুড়ান্ত নাটকীয় রূপ দিয়ে গেছেন।

-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী

তারেক অণু এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ সুমন ভাই। 'The sun also rises' সম্ভবত তার লেখা প্রথম বই, অনেক জায়গায় অবশ্য FIESTA র কথা বলা হয়। A moveable feast' খুব ভাল লেগেছিল, সেই বইয়ের দোকান নিয়ে একটা লিখা পোষ্টে দিব খুব তাড়াতাড়ি। খুব অদ্ভুত ধরনের একাকীত্বে ভোগা মানুষ ছিলেন তিনি বলেই মনে হয়েছে আমার-

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

চমৎকার একটা লেখা। উত্তম জাঝা! তো বলতেই হবে!

হেমিংওয়ে কাকুর মনে হচ্ছে কোষ্ঠ কাঠিন্যের সমস্য ছিলো। নইলে টাট্টিঘরে এত্তো এত্তো বই। আমি ব্যাক্তিগতভাবে তার জীবন নিয়ে তেমন কিছু না জানলেও তার লেখার ভক্ত।

কিউবার ভলিবল টিমের খুব ভক্ত হয়ে যাই অলিম্পিকগুলোর সময়। আর আমি মহাভক্ত মন্টেক্রিস্টোর। আগে রোজ রাতে একটা করে টানতাম। কিন্তু এখন বাদ দিয়েছি, অনেক খরুচে বলে। একেকটা বিড়ির দাম নেয় ১২-১৫ ডলার বা তারও বেশি।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তারেক অণু এর ছবি

বাথরুমে বই পড়ার মজা আলাদা, অনেকেই পড়েন কিন্তু। সময়টাও বাঁচল, উপভোগও হল !
মন্টেক্রিস্টো আর ওথেলোর পিছনের কাহিনী শুনে ছিলাম, সেই হিসেবেই গিয়েছিলাম পিনার ডেল রিও তে যেখানে কিউবার সর্বোৎকৃষ্ট তামাক উৎপন্ন হয়। সেখানেই ছিল আলেহান্দ্রো রোবাইনার ফার্ম।

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনার দেশভ্রমণকে তো ঈর্ষা করতে করতে ঈর্ষার বয়াম খালি হয়ে গেছে। আপাতত আপনার ক্যামেরাটা ঈর্ষা করছি দেঁতো হাসি

তারেক অণু এর ছবি

মস্করা কইরেন না, ক্যামেরা লেন্স আনালাম নেটের মাধ্যমে ঐ ফাজিল মার্কিন মুলুক থেকে, পরে দেখি যা দাম তার উপর ৫০ % ট্যাঁকসো !! মেজাজটা এখনো চিত্তির হয়ে আছে--

কৌস্তুভ এর ছবি

শকুনের শাপে গরু না মরুক, গরুর অন্তত পেটব্যথা হলেও তো আনন্দ! খাইছে

তারেক অণু এর ছবি

দাঁড়ান, মজা দেখাব শীতের উত্তরে এলে, পুরো জমাট হ্রদে সাতারে নিয়ে যাব ধইরা ঠুয়া দিয়া দিমু...

কড়িকাঠুরে এর ছবি

হাততালি
দ্য ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী পড়ে প্রথমেই বলেছিলাম- এমনও হয়- কেউ লিখে এরকম কোনো কাহিনী...

ঘর ভর্তি বই- দারুণ... গুরু গুরু

তারেক অণু এর ছবি

আসলেই---

যাযাবর মুরাদ এর ছবি

সব ঘরেই বই। এমনকি বাথরুমেও। মজা পাইলাম।

তারেক অণু এর ছবি

হাসি ভাল ! আমিও তাই করি

সংগীতা এর ছবি

বই আর বই। শিকারও করতেন ! ভাল লাগল লিখাটা । জানা গেল অনেক কিছু ।

তারেক অণু এর ছবি

আরও অনেক কিছুই করতেন‍! !!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।