এটা বরেন্দ্র ভূমি, প্রাচীন ইতিহাস।
আর এই বুঝি বেদম মতিহার ঃ এক
দঙ্গল পা, সবুজ গালিচা বেছানো চত্বর
হেঁটে আসছে, আমিন হাদী নূরুল দীনু বুলবুল।
শিশির মাড়িয়ে আসছে, মুক্তি মিতা লীনা বেবী বেলা
আর মুন। আমাদের পলাতকা যৌবন। সকালের স্বর্ণময়
সূর্য কিরণ উদ্ভাসিত করছে এই তারুণ্যের শহর, ধীরে
ধীরে জাগ্রত হচ্ছে এক আমলকী বয়স। খুলে গেছে রবীন্দ্র
কলাভবন, নজরুল উৎসব মঞ্চ আর সব বিদ্যানিকেতনীর
দরজা। কালো ধুঁয়া, ধুলো উড়িয়ে শহর চষে ফিরছে ডাকাতের
মত বাসগুলো। এখন সিল্সিলা ক্যান্টিন, জীবন- প্যারিস রোড।
উপাচার্য ভবনের পুলটাতে বসে আছে, মধু টিটো জাকির গুলজার
বট্টু। আর কয়েকটি নবীনা ওড়ণা। হেঁটে আসছে এক দঙ্গল পা-
দুপুরের গমগমে রোদে পোড়া ঝাঁজালো মিছিল! এটি সহিদ্দুলা, পার্শ্বেই
মমতাজ। এঁরা পাশাপাশি ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, আম লিচু আর
মেহগনির মনোরম উদ্যানে ঘেরা বিরাট দেবতার মতন।
ওঁদের প্রণতি জানানো হয়নি আমার বহুকাল।
কাজলা গেটে দাঁড়িয়ে আছে কিশোরী কাতর কবি, চঞ্চল শাহ্রিয়র।
বিষয়বস'তে বৈরাগ্য, অনুরাগ নিয়ে ঝুঁকে কথা বলছে, বাংলা বিভাগের
তরুণ কবি আজাদ কামাল। ইতিহাস সমিতি থেকে বেরোতে বেরোতে ;
চশ্মা খুলে মুছতে মুছতে দীপার সাথে পা বাড়ালো অমিত পার্থ।
রাণীর সাথে টিএম সোহেল। কয়েকগাল ধুঁয়া ছুঁড়ে হাসলো
হাসেমের সিগারেটের দোকান। লিচু তলার ঘাসে গোল হয়ে
বসে আছে, ইকবাল আনোয়ার স্বপন রাহুল টিপু জিনিয়াস্-
নূপুর কামনা মাহবুব ও রেজা। বসনে-র আর দুটি প্রতিশব্দ,
এই মাত্র রিকশায় এসে নামলো ঃ হাসি (আপু ) ও
নিশীথিনীএলিজা।
ওদের আন্দোলিত হাতে
আমাকে তুমুল ডাকলো ঃ
বেদম মতিহার!
সারিসারি পায়ের শব্দ, সারিবদ্ধ রিকশা যাচ্ছে পশ্চিমে।
সমস- কৃষ্ণপাড়া থেকে বিকেলের বৃন্দাবন মেলায়।
পথে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে চিঠি লিখে ঃ
“আজ বিকেল পাঁচটায়
বোটানিক্যাল গার্ডেনে
আমি তোমার জন্য
অপেক্ষা করবো,
জরুরী কথা
আছে” -
কিশোর রিকশাওয়ালার হাতে চিঠিটি পাঠিয়ে দিয়ে,
বনদেবীদের মধ্যে সবচে বেশী হলুদআগুন আত্মসাৎ করে
সরিষা ক্ষেতের মত দাঁড়িয়ে আছে, হলুদ শাড়ীর পারভীন!
বহুবার দেবীর আঙুলের অঙ্গুরীয় হারিয়ে অহংকারে হেসেছে
কাঙাল! তাকে তোমার মনে পড়ে মতিহার? পথ নাটকের-
কাঁকঁনকে তেমন মনে পড়ে না, হারানো গেছে
বহু নাম ...
পাকা কতবেলের গন্ধ, কাঁচা আমড়া, আমলীর বাজার
ঘিরে দাঁড়াতো কাঁচাপেয়ারাগুলো! রিকশার ঝুমঝুমি,
ঝালমুড়ি- চঁটপটির- ঠুন্ ঠুনি ; কিশোর বাদামওয়ালার
হাকডাক ; কিশোরীর হাতে সাজানো ভ্রাম্যমাণ বকুল
মালার দোকান ঃ
‘ন্যান্ না-স্যার, আফাকে দেবেন ; বেশী লাইগবে না- খো,
মাত্র একটাকা।’ এসব কথা তোমার মনে আছে পারভীন?
আমার কথা তোমার মনে পড়ে মতিহার? তোমার কথা
ভাবতে ভাবতে, সবুজ ঘাসের বুক ছুঁয়ে দুরন-- ফেরারী
হলো, আমার হাতের লাল ক্রিকেট বল।
আমাদের শ্রেষ্ঠতমযৌবন!
মন্তব্য
ভাো এবং সুন্দর।
অনেক ধন্যবাদ, কুহক ...।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
কবিতাটিতে চমৎকার কিছু উপমা বিন্যাস আছে,
আছে গতিময় কিছু রূপক,
আছে প্রাণহীনতার মাঝে প্রাণসঞ্চারণের কুশলী কারুকাজ,
পাঠক, লক্ষ্য করুন, উদ্ধৃত এক নম্বর চরণটি আমাদের মাঝে একটা অভূতভাবিত চিত্রকল্প তৈরি করে। হাসেমের সিগারেটের দোকান, সেখানে হয়ত সিগারেট ফুঁকছে কয়েকজন তরুণ। তাঁদের সবাইকে নিয়ে পুরো দোকানটির মাঝে একটি সামগ্রিক অবয়ব রচনা করেন কবি। মনে হয় পুরো দোকানটিই বুঝি সিগারেট ফুঁকছে।
এমন কুশলী প্রাণসঞ্চারণ আমরা লক্ষ্য করি জীবনানন্দের কবিতায়,
পাঠক, লক্ষ্য করুন, 'কুমারী' কিম্বা 'কুমারীর দল' নয়, 'কুমারীর ভিড়'। অনন্য সাধারণ।
কবিকে অভিনন্দন!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
আপনি কী রাজশাহী ভার্সিটিতে পড়তেন?
জী! পড়তাম এক সময় ..., আপনি?
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
আমার বাবা পড়তেন । আমরা এখন রাজশাহীতেই থাকি সবাই। ক্যাম্পাসে বেড়ে উঠেছি।
রোমেল চৌধুরী,
আপনার আলোচনা আমাকে বিস্মিত করেছে, বিশেষ করে হাসেমের দোকানের
চিত্রকল্পটির (কয়েকগাল ধুঁয়া ছুঁড়ে হাসলো হাসেমের সিগারেটের দোকান)।
ভেতরে আপনি যে ভাবে প্রবেশ করেছেন, আমি নিজেও এখন
আপনার মতো করে প্রবেশ করতে পারবো কী না, বলা কঠিন, কৃতজ্ঞ কবি!
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
অসাধারণ লিখেছেন। শুধুই মুগ্ধতা। অজস্র ধন্যবাদ আপনাকে।
নতুন মন্তব্য করুন