নতুন মিস

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৬/০৯/২০১১ - ৯:১১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পাকা রাস্তার পাশেই স্কুল। বাজার থেকে একটু দূরে। দোতলা বিল্ডিং। সামনে বিশাল মাঠ। মাঠে অবশ্য খেলা হয় না। ভাড়া দেওয়া। সপ্তাহে দুইদিন হাট বসে। স্কুলে মোট চারজন শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক খুব একটা ক্লাস নিতে পারেন না। যেদিন ঢোকেন, সারা স্কুলে খবর হয়ে যায়। বের হওয়ার সময় বলেন, একটু ওষুধ দিয়ে গেলাম। যখন লাগবে আবার আসব।

বাকি তিনজন প্রধান শিক্ষককে মান্য করেই চলেন। মার খেতে একদম ভালো লাগে না কারও। এই নিয়ে কেউ কিছু বলেও না। যেন মার খাওয়ার জন্যেই জন্মেছে ওরা! এই স্কুলে কোন মজা নেই।

কয়দিন হল একজন নতুন মিস এসেছেন। মিসের নাম নাকি পুতুল। প্রধান শিক্ষকের মুখে শুনে ফিক করে হেসে দিয়েছিল কয়েকজন। মিসও হেসেছিলেন। প্রধান শিক্ষক অবশ্য খুব রেগে গিয়েছিলেন। এসব বেয়াদবি তিনি একেবারেই সহ্য করেন না।

পরদিন নতুন মিস ক্লাস নিতে এলেন। সবাই জড়সড় হয়ে বসে আছে। মিসের চোখের দিকে তাকাতেও ভয় পাচ্ছে। মিস খুব অবাক হলেন। বুঝতে পারছেন না কী করবেন। বোর্ডে একটা স্মাইলি আঁকলেন। তারপর বললেন, সবাই এরকম করে হাস তো।

সবাই হাসল, কিন্তু মিসের মনের মতো হল না। বললেন, তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর।
সবাই চুপ। শাহিন হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। বলল, মিস, আপনার নাম পুতুল কেন?
পুতুল নাম রেখেছে, তাই পুতুল।
বড় মানুষের নাম কি কখনও পুতুল হয় নাকি? শাহিনের মনে এখনও বিস্ময়!
আমি কী এতো বড় ছিলাম? তোমাদের মতোই ছোট ছিলাম। হঠাৎ বড় হয়ে গেলাম। নামটাও আমার পিছ ছাড়ল না।- মিসের দুষ্টুমিমাখা উত্তর শুনে হো হো করে হেসে উঠল সবাই।

পুতুল মিস ছেলে-মেয়েদের সাথে খেলা করেন। মারেন না, বকেন না। অবশ্য বেশি দুষ্টুমি করলে একটু একটু বকেন। নতুন নতুন গল্প শোনান, কৌতুক শোনান। সবাই খুব পছন্দ করে ফেলেছে মিসকে। ছেলে-মেয়েরা নাম দিয়েছে,'নতুন মিস'।

প্রধান শিক্ষক একদিন ক্লাসে এসে জানতে চাইলেন নতুন মিস কেমন। ছেলে-মেয়েরা খুব আগ্রহের সাথে বলল- খুউউউব ভালো।
কেন ভালো?- কারণ জানতে চাইলেন তিনি।
শাহীন : আমাদের মারে না তাই।
পাপ্পু : মজার মজার গল্প শোনায়।
রাজিয়া : আমাদের সাথে খেলা করে।
রফিক : পড়া না পারলে হেসে হেসে বুঝিয়ে দেয়।
দেবু : রোজ শাড়ি পড়ে আসে।
সাগর : মিস লাল টিপ পড়লে খুব সুন্দর লাগে।
তুলি : মিসের পড়া মুখস্ত করতে হয় না। এমনিতেই মুখস্ত হয়ে যায়।

পটাপট বলে গেল ছেলে-মেয়েরা। যেন সাহস বেড়ে গেছে অনেক। প্রধান শিক্ষক খুশি হলেন না মোটেই। যাওয়ার আগে জ্ঞান দিয়ে গেলেন, শুধু খেলাধুলা করলে তো আর পরীক্ষায় পাশ জুটবে না। ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে।

পুতুল মিস আজ বাংলা পড়াবেন। কাজী নজরুল ইসলামের সংকল্প কবিতা। কিন্তু ক্লাসে এসে বই খুলতে বললেন না কাউকে। নিজেও খুললেন না। কী পড়াবেন তাও কাউকে বললেন না। তার বদলে গল্প শুরু করে দিলেন। সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কেউ স্বপ্ন দেখ? সবাই চুপ। এবার অবাক হয়ে বললেন, তোমরা কেউ-ই স্বপ্ন দেখ না? আমি তো রোজই দেখি!
মিস আমি কালই একটা স্বপ্ন দেখেছি।- পাপ্পু মুখ খুলল।
বাহ! গুড! এখন তাহলে পাপ্পুর স্বপ্নটা আমরা শুনি?
'জি মিস' বলে ঘাড় নাড়ল সবাই।
পাপ্পু শুরু করল-
আমি বাবার সাথে কুষ্টিয়া যাচ্ছি রেলগাড়িতে চড়ে। হঠাৎ দেখি গাড়িটা লাইন দিয়ে যাচ্ছে না। মাঠের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে.....
সবাই হো হো করে হেসে উঠল। মিস ইশারায় চুপ থাকতে বললেন। পাপ্পু লজ্জা পেয়ে গেল। আর বলতে চায় না। মিস বললেন, ঠিক আছে, এবার শুরু কর।

….. মাঠের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি। সামনে দেখি নদী। আমাদের গড়াই নদী কি না চিনতে পারিনি। দেখি নদীর উপর দিয়ে উড়তে উড়তে আকাশে উঠে যাচ্ছি। বাবা আর আমার সাথে নেই। আমিই চালাচ্ছি গাড়ি। মেঘের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ একটা পাহাড়ের সাথে ধাক্কা খেলাম। দেখি নিচে পড়ে যাচ্ছি। মাটিতে পড়ার আগেই ঘুম ভেঙে গেল। বিছানার উপর লাফিয়ে উঠেছিলাম!

মিস হাততালি দিয়ে বললেন, বাপ রে বাপ! এ তো বিশাল ব্যাপার! খুব সুন্দর স্বপ্ন। এবার কে বলবে?

এবার রাজিয়া উঠে দাঁড়াল- আমি ভূতের স্বপ্ন দেখেছি। আমাদের বাড়ির পিছনের বাঁশ বাগানে খেলছি। কোথা থেকে এক বুড়ি এসে আমাকে ডাকল। আমিও তার সাথে চলে গেলাম। আমার হাত ধরে একটা গাছে উঠে পড়ল। দেখি আমাদের পাড়ার বলাইকে গলা টিপে ধরে রেখেছে একজন। ও খুব ছটফট করছে। চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। খুব ভয় পেয়ে গেছি। আমি খুব কাঁদছি। বলছি, আমাকে ছেড়ে দাও। বুড়ি রাগ করে আমাকে ধাক্কা মারল। ঘুম ভাঙলে দেখি আমি হাঁপাচ্ছি। ঘেমে ভিজে গেছি।

এবার সবাই হাততালি দিল। মিস বললেন, তোমরা কেউ একই স্বপ্ন বারবার দেখ? এবার সবাই চুপ।
আমি কিন্তু দেখি।
কীসের স্বপ্ন মিস?- রাজিয়া জানতে চাইল।
ঐ যে ডালিম কুমার। ডালিম কুমার পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে এসে আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমি আর ডালিম কুমার আকাশে উড়ে যাচ্ছি। সে কথা থাক। আচ্ছা, তোমরা তো ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখ। জেগে থেকেও কিন্তু স্বপ্ন দেখা যায়!

সবাই মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে। এইটা আবার কী স্বপ্ন- যেন এই প্রশ্নই সবার মনে।
মিস বললেন, এই যেমন কোন কিছু করার স্বপ্ন। কোন কিছু হওয়ার স্বপ্ন। মনে মনে ঠিক করা- আমি এটা করেই ছাড়ব। এরকম কেউ ভাব না?
এবার তুলি বলল, মিস, আমাকে সবাই বলে তুলি দিয়ে তো ছবি আঁকে। তুই ছবি আঁকতে পারিস? আমি ছবি আঁকা শিখতে চাই।
আমি ঢাকায় বেড়াতে যেতে চাই।- পাপ্পু বলল।
আমি প্লেনে চড়তে চাই।- এটা শাহিনের স্বপ্ন।
আমি বড় হয়ে আপনার মতো মিস হতে চাই।- রাজিয়া বলেই একটু লজ্জা পেয়ে গেল।
এই তো! এটাই তো চাচ্ছিলাম! এটাই তো সংকল্প।- মিস দুই হাত উপরে তুলে যেন লাফিয়ে উঠলেন।

এবার বোর্ডে লিখলেন কবিতার নাম, 'সংকল্প'।
পাপ্পু বললেন, মিস আপনি কতো মজা করে পড়ান! আর কেউ তো এভাবে পড়ায় না?
- আমি নতুন তো, তাই। আমি তো জানি না কীভাবে পড়াতে হয়। তাই নিজের মতো করেই পড়াই। এটাকে পড়ানো না বলে খেলা করাও বলতে পার। কিছুদিন পরই ট্রেনিংয়ে যাব। ফিরে এসে আর এরকম করে পড়াব না। একবার ট্রেনিংয়ে গেলেই সব শিখে যাব।
- মিস, আপনাদের ট্রেনিংয়ে কি মারে?
- না তো? মারবে কেন?
- তাহলে অন্য সবাই মারে কেন? হেড স্যার তো হেব্বি মারে!
- স্যার নিশ্চয়ই তোমাদের অনেক ভালোবাসেন।
- আপনার মতো কেউ না। আমাদের স্কুল থেকে আপনি কোনদিন যাবেন না।

স্কুলের ছেলে-মেয়েরা এখন একটু একটু হাসতে শিখেছে। অবশ্য শুধু পুতুল মিসের ক্লাসে। অন্যরা ব্যাপারটাকে মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না। ক্লাসে কেউ একটু দুষ্টুমি করলেই খোঁচা মারেন, কি রে, নতুন মিসকে পেয়ে মাথায় উঠে যাচ্ছিস মনে হয়?

আজ সকালে বৃষ্টি নামল হঠাৎ। স্কুলে আসার পথে অনেক ছেলে-মেয়ে একেবারে ভিজে গেছে। ওদের দেখে খুব মায়া হল পুতুল মিসের। প্রধান শিক্ষককে গিয়ে বললেন, আজ ওদের ছুটি দিয়ে দিলে হয় না, স্যার?
স্কুলটা কি আপনার ইচ্ছায় চলে?
না স্যার, আমি ঠিক........
তাহলে গিয়ে নিজের কাজ করুন।

নতুন মিসের খুব মন খারাপ হয়ে গেল। ক্লাসে গিয়েও ভালো লাগল না। ছেলে-মেয়েরাও অবাক হয়ে গেল খুব। মিস নিজেকে সামলে নিলেন। ইচ্ছে করেই কৌতুক শোনানো শুরু করলেন। সারা ক্লাস হাসিতে ফেটে পড়ছে যেন।

সে হাসি থামতে অবশ্য বেশি সময় লাগল না। প্রধান শিক্ষক বেত নিয়ে ঢুকলেন ক্লাসে। সবাইকে হাত পাততে বললেন। সপাং সপাং বেত চালিয়ে গেলেন কচি হাতের উপর দিয়ে। মহৎ কাজটি শেষ হলে নতুন মিসকে বললেন, নতুন চাকরি তো। কয়দিন গেলেই নিয়ম-কানুন সব বুঝে যাবেন। মনে রাখবেন, বাচ্চারা আপনার জন্যেই মার খেল।

একদিন শোনা গেল, নতুন মিস এখান থেকে চলে যাচ্ছেন। ছেলে-মেয়েরা খবর পাওয়ামাত্র কাঁদতে শুরু করল। মিসকে জড়িয়ে ধরে ভীষণ কাঁদল কয়েকজন। মিসও যেন ভেঙে পড়লেন। এই কচিকচি মুখ মুখগুলো ছেড়ে কীভাবে যাবেন তিনি?

সাহস করে দশ-বারজন ছেলে-মেয়ে প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকে পড়ল। শাহিন একটু সাহসী। ওই শুরু করল, স্যার, নতুন মিস চলে গেলে আমরা কেউ স্কুলে আসব না।
এটাও কি তোদের নতুন মিস শিখিয়ে দিয়েছে?
সবাই একসাথে 'না' বলে উঠল। স্কুল প্রধানের চোখ কপালে উঠে গেল।

এরপর প্রধান শিক্ষকের রুমে ঝড় বয়ে গেল। নতুন মিস মত বদলে ফেলেছেন। জিদ করেই। স্কুলটাকে বদলে তবে যাবেন।

সারা স্কুলে হৈ হুল্লোড় পড়ে গেল। নতুন মিস যাচ্ছেন না স্কুল ছেড়ে।

স্কুলে আবার হাসি ফিরে এল। স্কুল মাঠেও আর হাট বসে না। ওটা এখন খেলার মাঠ। এ যেন এক নতুন সকাল।

.......................................................................................................................................
দেবানন্দ ভূমিপুত্র


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এটা ছাড়া নীচের চারটা লেখা আপনার। আর লেখা আছে কি?

http://www.sachalayatan.com/node/40862
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/40465
http://www.sachalayatan.com/node/40883
http://www.sachalayatan.com/node/40910

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

সরি, আর নেই। আপনি দেখি খুঁজে খুঁজে সবগুলো বের করেছেন! ওগুলো চলে তো? অনেক ধন্যবাদ, মুর্শেদ ভাই।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ঠিকাছে। এইরকম মজার মজার গল্প লিখতে থাকুন। হাসি

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

ঠিক আছে। চেষ্টা করে যাব। সতত শুভকামনা।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

পুতুলের মতো শিক্ষকের স্বপ্নে এবং সংকল্পে যেনো গড়ে ওঠে দেশের প্রতিটা বিদ্যালয়।

ভালো লিখেছেন দেবানন্দ।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

আমিও সেই স্বপ্ন দেখি। দেশ অনেক এগিয়েছে। স্কুলেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু শারীরিক নির্যাতন এখনও বিদায় হয়নি। অনেক ধন্যবাদ, ভাইজান। ভালো থাকুন।

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

আপনি সবগুলো পড়েছেন? কেমন লাগলো জানালেন না তো? অনেক অনেক ধন্যবাদ, ভাইজান।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

অসাধারণ স্বপ্ন-জাগানিয়া লেখা! এমনসব শুভ্র স্বপ্নে যেন ভরে যায় আমাদের আগামীর বাগান!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

মন ভরে গেল! সেই দিনের অপেক্ষায় আমরা সবাই। শুভকামনা অবিরাম। ভালো থাকুন।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

সচলায়তনে ছোটদের জন্যে লেখা খুব কম আসে, আপনি ইতিমধ্যেই দুইটা দিয়েছেন দেখে ভালো লাগছে। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

তবে আমার কাছে এই গল্পটা আগেরটার মত অত ভালো লাগেনি। ছোটদের জন্যে, বিশেষ করে কোন নির্দিষ্ট বয়সসীমার জন্যে লিখতে হলে কিছু বিষয়ে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া দরকার মনে হয়, যেমন যারা পড়বে, মানে যাদের জন্যে লেখা, তারা জিনিসিটা পড়তে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে কিনা, নিজেকে ঐ পরিস্থিতিতে মেলাতে পারছে কিনা। একটা লেখা আমার কাছে তখনই বেশি আকর্ষণীয় যখন আমি নিজে গল্পের মধ্যে ঢুকে পড়ি, মানে পাপ্পু, রাজিয়াদের স্কুলটা আমার স্কুল হয়ে যায়।
এইভাবে কল্পনা করতে গিয়ে পাঠক হিসেবে আমার কাছে দুই একটা বিষয় একটু চোখে লেগেছে তা লেখকের কাছে পাঠক হিসেবে সেটা তুলে ধরতে চাই,

* একটা জরুরি বিষয় হলো গল্পটা কে বলছে? স্কুলের একটা বাচ্চা, হতে পারে পাপ্পু, রাজিয়াদের ক্লাসেরই কেউ, বা অন্য ক্লাসের আরেকজন যে পাপ্পুদেরকে দেখছে, বড় কেউ যে স্কুলের ঘটনা একটা মুভির মতন বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছে আর পাঠককে বর্ণনা করছে। যদি বাচ্চাদের কেউ হয় (আর পুরো গল্পে আমার সেই অনুভূতিই বেশি হয়েছে যে স্কুলের একটা ছাত্র/ছাত্রী কী ঘটছে তা বলছে)। এখন যে স্কুলের বাচ্চারা প্রধান শিক্ষক টার্মটা ব্যবহার করে তারা কিন্তু আমার দেখা মতে মিস টার্মটা ব্যবহার করে না, আমি বেশিরভাগের কথা বলছি, ব্যতিক্রম থাকতেই পারে, তবে গল্পের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে বেশিরভাগের সাথে মিললেই মনে হয়? হেডস্যার বললে সেই স্কুলে মিস, আর প্রধান শিক্ষক-বললে সাথে আপা বেশি মানায় মনে হয় আমার কাছে।

* বাচ্চাদেরকে স্কুলে শাস্তি দেবার বিরুদ্ধে এখন সবাই অনেক সোচ্চার, আইনও আছে সম্ভবত (আমি বিস্তারিত জানি না, মাফ করবেন), তবে পুতুল মিস-এর স্কুলের শিক্ষিকা হতে হলে এগুলো জানবারই কথা, একজন চমৎকার প্রগতিশীল শিক্ষিকা হিসেবে আরকি। আর তাঁকে ঐ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সেইরূপ ব্যবস্থা নিতে দেখলে স্কুল পড়ুয়া একজন পাঠক হিসেবে আমি বেশি জোশ অনুভব করতাম। মিস-এর উপরে এই জন্যে রাগ হয়েছে একটু।
আর বড় পাঠক হিসেবে ভাবলে বলি, নিজে অন্যায় সহ্য করলে বাচ্চাদেরকে আপা কীভাবে শেখাবেন?

* পরে অবশ্য স্কুলে অনেক কিছু ঠিক হয়ে এসেছিল বোঝা যায়, শেষের অংশে, কিন্তু কেমন করে হলো তা যেন খুব দ্রুত স্কিপ করে গেলেন। মিস অন্যায় অপমানে বিদায় না নিয়ে, ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রত্যয় নিয়ে থেকে গেলেন, অন্য শিক্ষকদেরকেও মোটিভেট করলেন, এগুলো আরেকটু গুছিয়ে শেষ করলে ভালো লাগতো।
বিশেষ করে শেষের লাইনটা -

স্কুলে আবার হাসি ফিরে এল। ... এ যেন এক নতুন সকাল।

এই দুই লাইন পড়লে মনে হয় একই দিনের কথা, মানে মিস যেদিন চলে গেলেননা, সেদিনের গল্প।

আবার এই দুই লাইনের মাঝেই হুট করে

স্কুলের মাঠেও আর হাট বসে না। ওটা এখন খেলার মাঠ।

এই দুই লাইন ঢুকে কেমন যেন গুলিয়ে দিল। এইটা হতে তো একটু সময় নেবার কথা, তাই না?

(আর বাই দ্য ওয়ে, দুই দিন হাট বসতো, বাকি দিন গুলোতে কী হতো এইটা কৌতুহলী পাঠক মন জানতে চাইছে)।

* মিসের নিজের 'ডালিম কুমার' স্বপ্ন বাচ্চাদেরকে বলার ব্যাপারটা অবশ্য আমার কাছে অপ্রাসঙ্গিক লেগেছে। এই স্বপ্নের কথা মনে হয় বন্ধুদের কাছে বলার কথা, বাচ্চাদের শিক্ষিকা হিসেবে তাদেরকে হয়তো তার নিজের অন্য কোন স্বপ্নের গল্প শুনতে অনেক বেশি ভালো লাগতো, যেমন তিনি স্বপ্ন দেখেন একদিন বাংলাদেশের সব বাচ্চারা খেতে পাবে, স্কুলে যাবে, ভালো মানুষ হিসেবে বড় হয়ে উঠবে- এমন কিছু, যেটা বাচ্চাদেরকে ইন্সপায়ার করবে।

এবার ভালো লাগাটুকুও বলি,
ছোটদের জন্যে লিখেছেন, এইটা দেখেই ভালো লেগেছে। আগের গল্পটা বেশ ভালো লেগেছে। আর এই গল্পে যে ক্লাসের সবার নিজেদের স্বপ্নের বিবরণ, সেইটা বেশ ইন্টারেস্টিং হয়েছে। কথোপকথন, মানে ডায়ালগ বেশ ভালো লেগেছে। হাসি

নিজেকে একজন বিজ্ঞ লেখক মনে করে জ্ঞান দিচ্ছি এমন ভাববেন না প্লিজ। আপনাকে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেবার কোন ইচ্ছা একদম নেই। আমি শুধু পাঠক হিসেবে নিজেকে কল্পনা করে ঐ স্কুলে পৌঁছে গিয়ে যা ভালো বুঝিনি, বা ভালো লাগেনি তা অনেস্টলি বললাম।
আশা করবো আরও লিখবেন, ছোটদের জন্যে অবশ্যই লিখবেন। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

আমি অভিভূত আপনার বিশ্লেষণ পেয়ে। দারুণ কিছু পয়েন্ট তুলে ধরেছেন। অনেক জায়গায় আমার কনফিউশনও দূর হল। আমারও মনে হচ্ছিল, শেষ করাটা একটু তাড়াহুড়ো হয়ে গেছে। আর হেডস্যার লিখে কেটে আবার লিখেছি প্রধান শিক্ষক। পাপ্পুকে কেন্দ্রীয় চরিত্র এবং গল্পের কথক হিসেবে শুরু করে আবার ব্যাক গিয়ারে চলে এসেছি। মাথায় ছিল গ্রাম এবং খুব ছোট শহরের ছেলে-মেয়েরা একটু শহুরে ছোঁয়া আছে এমন জায়গায় স্কুলটা সেট করতে। ব্যালেন্স করাটা পারফেক্ট হয়নি। আপনার পরামর্শগুলো ভীষণ কাজে লাগবে আমার। সচলে সদস্য নই বলে এডিট করতে পারছি না। নইলে ঠিক করেই দিতাম। অ.......নে.......ক ভালো থাকুন। চলুক

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

চলুক

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। সতত শুভকামনা।

গেরিলা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ পড়া ও মন্তব্যের জন্যে। কিছু লিখলে উপকৃত হতাম। অনেক ভালো থাকুন।

যুমার এর ছবি

আপনার গল্পটা ভালো লেগেছে,অনেকটা রূপকথার মত।
যাযাবর ব্যাকপ্যাকারের সাথে আমি সহমত।
গল্পের বুননটা আরো বাস্তবসম্মত হত লেখার সময় যদি ঐ বিষয়গুলোতে একটু খেয়াল রাখতেন।
ছোটদের একটা স্কুলে পড়াই বলে ওদের চিন্তা-ভাবনা-বিশ্লেষণগুলো পর্যবেক্ষণ করি যা প্রতিনিয়তই
আমাকে বিস্মিত ও অবাক করে।
সবচেয়ে কষ্টের কথা হল -আমাদের দেশে আপনার গল্পের পুতুল মিসের মত শিক্ষকের অভাব শুধু
ছোটদের স্কুলগুলোতে নয় বড়দের ইউনিগুলোতেও প্রকট।
আমি স্বপ্ন দেখি বাস্তবিক অর্থেই আমাদের দেশের স্কুলগুলো 'বাচ্চাদের দ্বিতীয় বাড়ি' হবে।
আরো লিখুন।
ভালো থাকবেন।

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

আমাদের কর্মক্ষেত্র তাহলে একই ধরণের। আমি শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করি। প্রশিক্ষক বলতে পারেন। অনেককিছু দেখে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। অনেকেই এখনও বিশ্বাস করে, না মারলে কাজ হয় না। জ্ঞানীরা যা বলেন, তা না বুঝেই বলেন। আমিও স্বপ্ন দেখি আপনার মতোই। একদিন তা সত্যি হতেই হবে।

আশফাক আহমেদ এর ছবি

সুন্দর স্বপ্নময় লেখা
চলুক

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, ভাইজান। তবে নেগেটিভ সমালোচনা করার পূর্ণ স্বাধীনতা আপনাকে দিলাম। প্লিজ লিখবেন। অনেক আমোদে থাকুন।

বাউন্ডুলে এর ছবি

বাংলাদেশের প্রতিটি বিদ্যালয় এরকম পুতুলময় শ্রদ্ধা হয়ে উঠুক...
গল্পের পেক্ষাপট গ্রাম/ মফঃস্বলের প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রিক... কিন্তু প্রধান চরিত্রের সম্বধনিক নামটা শহুরে... একটু খাপছাড়া লাগল।
লেখককে ধন্যবাদ চলুক

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

গ্রাম আর শহরের মেলবন্ধন ঘটানোর ইচ্ছে ছিল। হয়নি সেটা। এডিট করতেই হবে। অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে। সতত শুভ হোক পথ চলা।

guesr_writer rajkonya এর ছবি

মিসকে নিশ্চয়ই প্রধান শিক্ষক ছাড়াও অভিভাবকদের অনেক অভিযোগ শুনতে হয়। কারণ দেখতে, পাচ্ছি, তিনি কিছুই পড়ান না। শুধু গল্পগুজবই করেন। একটা প্রশ্নের উত্তরও তিনি নোট (যেটা সবচেয়ে দরকার!!!!) করে দেন না। বাচ্চারা পড়বে কীভাবে? পরীক্ষায় ভাল নম্বর পাবে কীভাবে?
ফাঁকিবাজ মিস।

গল্পের মিসেরাই এমন হয়। সত্যি সত্যি এমন মিস হতে চাওয়া বিরাট হাঙ্গামা। মন খারাপ(

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

মজা পেলাম আপনার মন্তব্য পড়ে। এমন মিস কেউ কেউ আছেন কিন্তু। তারা ভীষণ নন্দিত এবং নিন্দিত। নিন্দাটুকু হজম করতে পারলেই আর হাঙ্গামা থাকে না। অনেক ভালো থাকুন।

অপছন্দনীয় এর ছবি

চলুক

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

ইয়েস বাঘ মামা, ইয়েস!!!

ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

চলুক চলুক চলুক

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, বরকন্দাজ ভাই। শুভকামনা অবিরাম।

তিথীডোর এর ছবি

কী মায়া লাগল পড়তে.. চলুক
আশা করছি ছোটদের জন্যে আরও লিখবেন। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

শুনে খুশি হলাম, আপু। চেষ্টা তো আছেই। এমন উৎসাহ পেলে আগ্রহ আরও বাড়বে। অনেক ভালো থাকুন।

pathok (sam) এর ছবি

ভাল লাগল---

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

ভালো লাগলো জেনে। আশা রাখি সাথে থাকবেন। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

বন্দনা এর ছবি

খুব ভালো লাগলো। জানিনা বাচ্চা বাচ্চা চেহারা গুলো দেখার পর শিক্ষকেরা এত কঠোর হন কিভাবে। পেপারে মাঝে যখন খুব শিক্ষক এর হাতে ছাত্রছাত্রী নির্যাতনের কথা পড়তাম, খুব মন খারাপ লাগতো। আপনার লিখার মত যদি এমন হোত কতইনা ভালো হোত।

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

আমার তো এই শিক্ষকদের নিয়েই কারবার। উনাদের যুক্তি- আমাদের জায়গায় আসলে আপনিও একই কাজ করবেন। আমি তা কোনদিনই বিশ্বাস করি না। ক্লাসে নিয়ন্ত্রণের দরকার একটু হয়ই। েসটা করার অনেক উপায় আছে। যারা কোনটাই জানেন না বা মানেন না, তারাই বেত ধরেন। এদের বিরুদ্ধে বেত ধরতে পারলে শিক্ষাটা বোধহয় ভালোভাবেই দেওয়া যেত। যদিও সেটা পারা যাবে না। অনেক ভালো থাকুন।

মর্ম এর ছবি

ছোটদের জন্য লেখাটা বেশ কঠিন একটা কাজ, আবার বেশ সহজ-ও। কিন্তু সে যা-ই হোক ওদের জন্য বা ওদের নিয়ে লিখতে যে আনন্দ লাগে তা কিন্তু সহজে আর কিছুর সাথে তুলনীয় নয়। ছোট বলেই হয়তো ওদের জন্য ভাল লেখার পরিমাণ কম, অথচ সেজন্যই আবার ওদের জন্য অনেক লেখা হওয়া জরুরি।

আপনি শুরু করেছেন, সামনের দিনগুলোতে যখন আরো আরো লিখবেন তখন ছোটদের ভুলে যাবেন না, এ আশা রইল। শুভেচ্ছা। চলুক

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

আপনার কথা রাখতেই হবে। কারণ ওটা আমারও কথা। ছোটদের জন্যে লেখাটা আসলেই কঠিন। ওদের জায়গায় গিয়ে ভাবা সহজ নয়। আবার আঁতলামীর দরকার হয় না বলে সহজও। আপনি একদম ঠিক বলেছেন। অনেক ভালো থাকুন।

মৌনকুহর এর ছবি

ছুডুদের কাহিনী ভালু পাই। আরও লিখুন। হাসি

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

তবে তাই হোক। নিশ্চয়ই আরও পাবেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।