চণ্ডীশিরা: প্রথম পর্ব

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: বুধ, ০৭/০৯/২০১১ - ৩:০১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রবির কথা

১.
ইউনি বন্ধ। রাতে একটু দেরিতে ঘুমাই। এক বাক্স ডিভিডি নিয়ে এসেছি হাফিজের কাছ থেকে, রাত জেগে সিনেমা দেখি। কালকে দেখলাম লেট দ্য রাইট ওয়ান ইন। গায়ের লোম বসার চান্সই পাচ্ছিলো না। ইচ্ছা ছিলো বেলা একটার দিকে ঘুম থেকে উঠে একেবারে দুপুরের খাবার খাবো, গোসল না করেই। বিলু ছাগলটা সেই ইচ্ছার গোড়ায় পানি ঢেলে দিলো সকাল আটটার দিকে।

তিন ঘন্টা ঘুমানোর পর কোনো পাষণ্ড এসে একটা মানুষকে জাগিয়ে তুললে সেই ব্যাটা পাষণ্ডকে গুলি করে মারা উচিত। মোবাইল হাতে নিয়ে মনে মনে একটা ঝাড়ি তৈরি করছিলাম। বিলু, ইউ ইডিয়েট, জন্ডিসরোগী বলদ, কী চাস তুই এই সাত সকালে? কোনো কথা শুনতে চাই না শালা, তোর বাপ মরলেও আমার কিছু করার নাই। গো অ্যান্ড রট ইন হেল।

বিলু ফোনের ওপাশ থেকে ইমার্জেন্সি ইমার্জেন্সি গলায় বললো, "রবি, জলদি বাসায় আয়। আমি একলা ম্যানেজ করতে পারছি না, তোকে দরকার। কুইক।"

জন্ডিসরোগী বলদ পর্যন্ত যেতে পারলাম, বিলু ওপাশ থেকে ফিনাইলের গন্ধ ছড়িয়ে দিলো আমার ঘরে, "দোস্ত, বাবা মনে হয় মারা গেছে। তুই আয়। নাফিসা আর জয়াকেও ডাক।"

ফোন কেটে গেলো, থতমত খেয়ে চুপচাপ শুয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। খাইসে, সত্যি সত্যিই বিলুর বাবা মারা গেছেন? যদি তাই হয়ে থাকে, ও "মনে হয়" বলছে কেন? মারা গেছেন নাকি মারা যান নাই? নাকি মারা যাওয়ার পথে?

বিশ্ববিদ্যালয় যখন বন্ধ থাকে, সকাল আটটা বাজে কাজের ছেলেটাও ঘুমায়। তাকে সাড়ে আটটার দিকে বহু কষ্টে ঠেলেঠুলে তুলতে হয়। বাবা অফিসে গিয়ে নাস্তা করে বহুদিন ধরে, মা-ও আমার তাড়া না থাকলে দেরিতে ওঠে। আমার গোটা দুনিয়া এখন ঘুমাতে চাইছে, শুধু বিলুর বাবাটা বোকার মতো মরে গিয়ে সব কিছু পয়মাল করে দিলেন।

বহুকষ্টে বিছানা ছেড়ে উঠে টলতে টলতে ড্রয়িংরুম পর্যন্ত গেলাম। ওখানেই তোষক পেতে ঘুমায় একরাম। গিয়ে দেখি সে হাসিহাসি মুখে ফোঁসফোঁস করে ঘুমাচ্ছে। রাত একটা পর্যন্ত জেগে টিভিতে টক শো দ্যাখে হতভাগা।

"একরাম! পাছা তোলো মহারাজ! এককাপ চা দিও আমাকে! কুইক কুইক!" একটা ছোটোখাটো হুঙ্কার দিয়ে টয়লেটে ঢুকে গেলাম। কষ্ট করে হলেও হাগতে হবে। নাহলে আজকে সারাদিনে আর পেট সাফা করার সুযোগ না-ও মিলতে পারে। বিলুর বাড়িতে নিশ্চয়ই প্রচুর কাজ।

কেউ মারা গেলে কী করতে হয়, পরিষ্কার ধারণা নেই আমার। লাশের গোসল দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়, জানাজা পড়তে হয়, তারপর লাশ নিয়ে গোরস্থানে রওনা দিতে হয়। কাফনের কাপড়, খাটিয়া এইসব ম্যানেজ করতে হয়। আগরবাতিও কিনতে হবে। আর কিছু কি বাদ পড়ে গ্যালো? বিলুর বদমেজাজী হোঁৎকা মামাটা কি গাইড করতে পারবে না? না পারলে এই ব্যাপারে এক্সপার্ট কাউকে তলব করতে হবে। কিন্তু বিলু কেন বললো, ওর "মনে হয়" ওর বাবা মারা গেছে? বিলুরা থাকে মোহাম্মদপুর, আর শেষবিদায় স্টোরগুলি সব কাঁটাবনে। মোহাম্মদপুর থেকে কাঁটাবনে গিয়ে সদাই করে ফিরতে ফিরতেই তো বিলুর বাবার লাশ পঁচে গন্ধ ছুটবে। ফিনাইল ... ফিনাইলও কিনতে হবে। কিন্তু লাশটা এখন কোথায়? নাফিসা আর জয়াকেই বা ডাকলো কেন বিলু? ওরা গিয়ে কী করবে? কোনো খাওয়াদাওয়ার ব্যাপার আছে নাকি?

নাম্বার টু করতে গেলে বুদ্ধি খুলে যায় সবারই। নিউটন আপেল গাছের নিচে বসে মহাকর্ষ আবিষ্কার করে ফেলেছে বলে সকলেই কত কথা বলে, কিন্তু নিউটন বাবাজি আপেল গাছের নিচে কী করতে বসেছিলেন, সে ব্যাপারে সব কুতুবই নীরব। নিউটনের আমলে বাড়িঘরের ভেতরে পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা যে অতিশয় জঘন্য ছিলো সে তো জানা কথা। খোলা আকাশের নিচে দখিনা বাতাসে দুদণ্ড ইয়ে করতে গিয়েই যে নিউটন টের পেলেন, কিছু জিনিস সবসময়ই নিচের দিকে নামে, সেটা নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করে না। কেন রে ভাই? নিউটন বলে কি মানুষ নয়?

"একরাম! চা হলো?" আরেকটা হাঁক দিয়ে একরামের কাজেকর্মে একটু গতি আনার চেষ্টা করি। মা শোবার ঘর থেকে পাল্টা হাঁক ছাড়ে বিরক্ত হয়ে, "কী হলো? সাত সকালে চিল্লাচ্ছিস কেন গরুর মতো?"

"পরিস্থিতি ভালো না মা!" ফ্লাশ করে বেসিনের ট্যাপ খুলি। "বিলুর বাবা মনে হয় মারা গেছেন!"

মা একটু চুপ করে যায়। আমি হাত ধুয়ে ব্রাশে পেস্ট মাখাই।

মা উঠে এসে বলেন, "মনে হয় মানে কী? মারা গেছেন নাকি হাসপাতালে আছেন?"

আমি দাঁত মাজতে মাজতেই হাসি। "জানি না মা। বিলু যা বললো, সেটাই রিপিট করলাম। হাসপাতালেই আছেন মনে হয়। আজকাল হাসপাতালে কেউ গেলে আর জীবিত ফেরে না।"

মা বললেন, "আমি ফোন করছি দাঁড়া।"

আমি ঘ্যাঁচাঘ্যাঁচ দাঁত মেজে যাই। আমি নিশ্চিত, ফোনটা বিলুই ধরবে, ধরে একই কথা বলবে। "হ্যাঁ আন্টি, বাবা মনে হয় মারা গেছেন। হ্যাঁ আন্টি, আমি মনে হয় রবিকে আসতে বলেছিলাম। হ্যাঁ আন্টি, সূর্য মনে হয় পূর্ব দিকেই ওঠে। হ্যাঁ আন্টি, আমি মনে হয় একটা আপাদমস্তক বোকাচ্চো--।"

জিভ কেটে কুলকুচি করি।

মা এসে দরজায় ধাক্কা দিলো, "য়্যাই, বিলু তোকে জলদি যেতে বলছে। ওর বাবা মনে হয় মারা গেছেন!"

মুখ ধুতে ধুতে বললাম, "জানি মা। আমাকে মনে হয় যেতে হবে। আর একরামকে মনে হয় চা বানাতে বলেছিলাম। "

মা গজগজ করতে থাকে, কী নিয়ে কে জানে!

ঘর ছেড়ে বেরিয়ে দেখি একরাম চোখ ডলতে ডলতে মাত্র রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে। ব্যাটা টক শো দেখে দেখে বিরাট বুদ্ধিজীবী হয়ে গেছে। সেদিন রাতে টিভি বন্ধ করে চোখ রাঙিয়ে তাকে শুতে যেতে বললাম, ব্যাটা মুখ কালো করে বলে, দাদা, দ্যাশে মনে হয় আবার একখান সাংবিধানিক সংকট লাগতে আছে! ... রোসো বেআক্কেল, সাংবিধানিক সংকট তোমার ইয়ে দিয়ে ... "কী রে একরাম, চা দিবি কি না বল!"

"আইতে আছে!" একরাম হেঁড়ে গলায় বলে। এহ, চা তো না, মালগাড়ির ইনজিন, আইতে আছে!

ঘরে গিয়ে জামাকাপড় পরতে পরতে নাফিসাকে ফোন দিলাম। নাফিসার এখন টার্মের শেষ দিক, হাবিজাবি অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। সেও বোধহয় নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে।

আমার পিলে কাঁপিয়ে ফোন ধরলেন নাফিসার মা। "হেলু, হেলু, হেলু, হেলু ...!"

"আন্টি, আসসালামু আলাইকুম!" যতটুকু সম্ভব তাজিমের সাথে বললাম। "আমি রবি, নাফিসার বন্ধু। নাফিসা কি আছে?"

আন্টি এইবার বরফের মতো গলায় বললেন, "কুন রবি?"

একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই। কীভাবে বোঝাই কোন রবি? নাফিসার কয়টা বন্ধু আছে রবি নামে? "ইয়ে, আন্টি, আমি ওর বন্ধু রবি। ইকোনমিক্সে পড়ি ...।"

আন্টি এইবার খোদ অ্যান্টার্কটিকার কিনারা থেকে বরফ আমদানি করেন, যেমন ঠাণ্ডা তেমন চোখা, "তুমরা এই ইয়ারদুস্তরা মিল্লা নাফিসার পড়াশুনা সব গুল্লায় ফালাইতেছ! তুমাদের জন্যি নাফিসা কেলাশ টেষ্টে দশে দুই পায়! তুমরা আমার মাইয়াটারে আর কত জ্বালাইবা? ঢাকা শহরে কি জ্বালানির জন্যি আর কুন মাইয়া চিন না তুমরা?"

এ কী হুজ্জতে পড়লাম! নাফিসার মোবাইল আন্টির হাতে ক্যান গেলো, ক্যান ক্যান ক্যান? তাহলে কি নাফিসাও টয়লেটে, বিলুর বাসায় যাওয়ার প্রিপারেশন নিচ্ছে? আর ক্লাস টেস্টে ও দশে দুই পায় এইটা কি আমার দোষ?

মিনমিন করে বলি, "সরি আন্টি, এখন থেকে নাফিসাকে বেশি বেশি করে পড়তে বলবো, ফোনটা একটু দিবেন?"

আন্টি অ্যান্টার্কটিকার প্রান্ত থেকে ক্রমশ মেরুর দিকে এগোতে থাকেন, যেখানে বরফ আরো বেশি ঠাণ্ডা, শক্ত, আর জোরালো ঝোড়ো হাওয়াবাতাসও চালায়। "তুমার মা কুথায়?"

এইবার ফোন রেখে দিই। নাফিসার মা যদি আমার মাকে চিবি দিয়ে ধরেন, ক্যান নাফিসা ক্লাস টেস্টে দশে দুই পেলো? মা কী বলবে? থাক বাবা, নাফিসা জাহান্নামে যাক। জ্বালানির জন্যি ঢাকা শহরে এখন বাকি থাকে জয়া।

জয়া ফোন ধরার পর তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি মেয়ে বলে মনে হয়, যে কখনও মায়ের কিংবা বাপের কব্জায় ফোন রেখে যায় না। জয়ার বাপটা আবার বিরাট মাসলম্যান, সকালবেলা খালি গায়ে ডাম্বেল নিয়ে ব্যায়ামট্যায়াম করে, পানিতে ভিজিয়ে আদাকুচি দিয়ে বুট খায়, কোনো কারণে জয়া ক্লাস টেস্টে দশে দুই পেলে তো সেই লোক বাড়িতে এসে পিটিয়ে লম্বা করে দিয়ে যাবে।

"কী রে, তুই এত সকালে কী চাস?" জয়া হাই তুলতে তুলতে বলে।

"বিলুর বাবা মনে হয় মারা গেছেন।" আমি বেশি ভূমিকা করি না। "বিলুদের বাসায় যেতে হবে।"

জয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, "মনে হয় মারা গেছেন? তুই শিওর না? হাসপাতালে নাকি?"

আমি বললাম, "বিলু যা বললো, আমি সেটাই জানালাম। ওর কাছে মনে হচ্ছে ওর বাবা মারা গেছে, কিন্তু বিস্তারিত কিছুই জানি না। তুই আর নাফিসা চলে যা বিলুর বাসায়, আমি আসছি।"

জয়া জিভ দিয়ে ছিক শব্দ করে বললো, "এহ, একটু সমস্যা আছে। নাফিসাকে ফোন করা বারণ। ওর মা ওর ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে। নেটের লাইনও কেটে দিয়েছে মনে হয়। ও এখন পুরাই বন্দী মুরগি। ভুলেও ফোন করিস না।"

একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো না চাইতেই। "টু লেইট। তোকে ফোন করার আগেই আমার উপর দিয়ে এক রাউণ্ড গেছে। নাফিসা নাকি ক্লাস টেস্টে দশে দুই পেয়েছে। আমি যদি আগে জানতাম ঐটা আমার দোষ, তাহলে ...।"

"আচ্ছা তুই যা। আমিও যাচ্ছি। বাই।" জয়া খট করে ফোন কেটে দেয়। মনে হয় ওর মুশকো বাপ এসে তদন্ত করছে, ঘটনা কী।

ডাইনিং রুমে এসে দেখি একরাম চায়ের কাপ পিরিচ দিয়ে ঢেকে টেবিলের পাশে মেঝেতে বসে পেপার পড়ছে। আমাকে দেখে সে বললো, "দাদা, চা! দ্যাশের অবস্থা খুব খারাব গো দাদা, আইজকা মৌলভিবাজারে দুইখান গলাকাডা লাশ পাওয়া গেছে!"

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে প্রথমেই যে কথাটা মাথায় এলো, সেটা হচ্ছে, এই দুইটার একটা আবার বিলুর বাবার লাশ না তো?

বিলুকে আমরা সবাই কমবেশি খুব ভালোবাসি, ও আমার স্কুলের বন্ধু, কিন্তু ওর বাবাকে কখনও দেখিনি। ভদ্রলোক সিলেটের দিকে কোনো এক গ্রামে একা একা থাকেন। বিলুর মা আর বিলু থাকে বিলুদের নানাবাড়িতে। আন্টি খুবই মিষ্টি একজন মানুষ, দুনিয়ার সবচেয়ে বড় পাষণ্ডটাও হয়তো আন্টিকে আর বিলুকে ফেলে রেখে একা জঙ্গলে পড়ে থাকতে চাইবে না, কিন্তু বিলুর বাবা এই কাজটা বহু বছর ধরে করে আসছেন। চার পাঁচ বছর পর পর তিনি একবার করে শ্বশুরবাড়িতে হাজিরা দেন, দু'তিনদিন থেকে আবার ফিরে যান নিজের গ্রামের বাড়িতে। বিলু একবারই তার বাবাকে দেখতে গিয়েছিলো, ফিরে এসে চোখ বড়বড় করে বলেছিলো, খুব ভয়ঙ্কর জায়গা রে, বাপরে বাপ, বাবা কী করে থাকে ওখানে!

বিলুর বাবার একটা ছবি আছে ওদের ঘরে, সেটাতে একজন লম্বা, রোগা, চশমাপরা হাসিখুশি মানুষকে আন্টির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, তোমার বাবা কী করে, বিলু মিনমিন করে বলে, উনি ডাক্তার, কিন্তু আমার কাছে এসে একদিন বিলু নিচু গলায় বলেছিলো, আই থিঙ্ক হি ইজ আ উইচ ডক্টর!

চায়ের কাপটা শেষ করে হাঁক ছেড়ে বলি, "মা গেলাম!"

মা শোবার ঘর থেকে বলেন, "দুপুরে খেয়ে নিস কিছু। ওদের বাড়িতে কিন্তু রান্নাবান্নার হাঙ্গামা হবে না। অবস্থা বেশি খারাপ দেখলে ফোন করে দিস, আমি দরকার হলে কিছু রেঁধে পাঠিয়ে দেবো নাহয়।"

আমি মানিব্যাগ বার করে ভেতরের গ্লোবাল ইকোনমিক ক্রাইসিসের প্রতিবিম্ব দেখতে দেখতে ভাবলাম, মা বিলুর মাকে মোটেও চেনেন না। আমি ঠিক জানি, গিয়ে দেখবো, আন্টি শান্ত মুখে এক কাপ চা আর পিরিচভর্তি ফ্রুট কেক নিয়ে এসে বলছেন, "কেমন আছো রবি? মা ভালো আছেন? বাবা?"

২.
"জ্বি আন্টি, মা ভালো আছেন। বাবাও ভালো।" আমি শুকনো মুখে একটা কেক তুলে কামড় দিলাম।

ভেবেছিলাম গোটা বাড়ি ভর্তি লোকজন গিজগিজ করবে, কিন্তু আমি আর অচেনা এক ভদ্রলোক ছাড়া কাউকেই দেখলাম না। ভদ্রলোক বেশ অস্থির হয়ে আছেন, ঘন ঘন এক পায়ের ওপর আরেক পা তুলে বসছেন, গলা খাঁকরাচ্ছেন, বিড়বিড় করে কী যেন বলছেন, আর মাঝেমধ্যে চমকে উঠে চায়ের কাপে ফড়াৎ করে চুমুক দিয়ে বলছেন, আহ!

আন্টিকে দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেছে। আন্টিকে মাঝেমধ্যে বিষণ্ণ মুখে দেখেছি বটে, কিন্তু আজ দেখে মনে হলো, উনি একা একা বেশ কিছুক্ষণ কেঁদেছেন, চোখের নিচে কালো ছাপ পড়ে গেছে। কোথায় কোন পাহাড়ের জঙ্গলে বছরের পর বছর হাপিস হয়ে থাকেন বিলুর বাবা, কিন্তু আন্টি ঠিকই হয়তো খুব ভালোবাসেন তাঁকে।

বিলু টয়লেট থেকে বেরিয়ে এলো, তার চেহারা নির্বিকার। আমাকে দেখে বললো, "কী রে, নাফিসা আর জয়া কই?"

আমি সংক্ষেপে শুধু বললাম, "আসবে। কী অবস্থা তোর?"

বিলু ধপ করে সোফায় বসে পড়ে হাতে মুখ ঘষে বললো, "অবস্থা ভালো না। অ্যাপারেন্টলি, বাবা আর বেঁচে নেই।"

আন্টি পাশের ঘরের দিকে এগোতে এগোতে বললেন, "অ্যাপারেন্টলি নয় বিলু, তোমার বাবা আর বেঁচে নেই।"

আমি ফিসফিস করে বললাম, "কী হয়েছে?"

বিলু কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে বললো, "মমম ... উইয়ার্ড স্টাফ। মন দিয়ে শোন। আজ ভোরবেলা আমাদের বাসায় ... একটা পার্সেল আর একটা চিঠি এসেছে। পার্সেলটাতে কী আছে আমি এখনও জানি না, চিঠিটাতে কী আছে সেটাও মা আমাকে সব খুলে বলছে না। কিন্তু চিঠিটা বাবার লেখা। চিঠির বক্তব্য আমি পুরোটা জানি না, কিন্তু মা বলছে, একমাত্র যদি বাবা মারা যায়, তবেই এ চিঠিটা ডেলিভার করা হয়ে থাকবে।"

আমি ঘাবড়ে গিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিলাম, "কে পাঠিয়েছে চিঠি ... আর পার্সেল?"

বিলু আড়চোখে অচেনা ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো, "এটা হচ্ছে মোস্ট উইয়ার্ড পার্ট। চিঠি আর পার্সেল মায়ের ঘরের টেবিলের ওপর রেখে গেছে কেউ।"

আমি এত চমকে উঠলাম যে আমার হাত থেকে চা ছলকে পড়লো ডাইনিং টেবিলের ওপর। "মানে?!"

বিলু কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো, "আমি জানি না দোস্ত ... ফ্র্যাঙ্কলি স্পিকিং, মায়ের ঘরে বাইরের কারো পক্ষে দরজা বা জানালা না ভেঙে ঢোকা সম্ভব না।"

আন্টি পাশের ঘর থেকে বললেন, "বিলু, রবিকে আমার ঘরটা দেখিয়ে নিয়ে এসো।"

বিলু চোখের ইশারায় আমাকে আন্টির ঘরের দিকে যেতে বললো। আমি কড়া এক চুমুকে চায়ের কাপের বাকিটা শেষ করে উঠে দাঁড়ালাম, অচেনা ভদ্রলোক রক্তচক্ষু মেলে আমার দিকে তাকিয়ে নিজের কাপে একটা নিঃশব্দ চুমুক দিলেন, বাবা রে বাবা, পুরাই সাইলেন্সার লাগানো চিতাবাঘ!

আন্টির শোবার ঘরে ঢোকার পর কেন যেন প্রবল অস্বস্তিতে শরীরটা কুঁকড়ে গেলো। কয়েক সেকেণ্ড পর ব্যাপারটা ধরতে পারলাম। একটা খুব মৃদু চামড়াপোড়া গন্ধ ছড়িয়ে আছে ঘরে। গন্ধটা পুরোপুরি পোড়া চামড়ারও নয়, কিন্তু চট করে মাথা ধরিয়ে দেয়।

বিলু আমার নাকের দিকেই তাকিয়ে ছিলো, আমার প্রতিক্রিয়া দেখে ফিসফিস করে বললো, "কোনো বিদঘুটে গন্ধ পাচ্ছিস?"

আমি মাথা ঝাঁকালাম। "হ!"

বিলুর মুখটা একটু পাংশু হয়ে গেলো, ও এবার ঘরের এক কোণার দিকে আঙুল তুলে বললো, "ওখানে দ্যাখ।"

আমি একটু এগিয়ে গিয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম আবার।

ঘরের মেঝেটা মোজাইক করা, কিন্তু গাঢ় কালো রঙে সেখানে কেউ একটা ঢ্যাঁড়া কেটে রেখে গেছে। একটা মোটা কালো দাগের ওপর কোণাকুণি কাটা একটা সরু কালো দাগ। এবং নিশ্চিতভাবেই গন্ধটা আসছে এই ঢ্যাঁড়া থেকেই, কাছে যেতেই একটু তীব্র হয়ে উঠেছে সেটা।

"কী এটা?" ফিসফিস করে জানতে চাইলাম।

বিলু মাথা চুলকে বললো, "আমি ঠিক শিওর না ... সম্ভবত অ্যাটেনড্যান্স শিট সাইন করে যাওয়ার মতো একটা কিছু।"

"মানে?" বুঝলাম না আগামাথা কিছুই। "কীসের অ্যাটেনড্যান্স শিট?"

বিলু চোখমুখ কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, "কেউ একজন ... বা কিছু একটা ... মায়ের ঘরে এই পার্সেল আর চিঠিটা রেখে গেছে। যাওয়ার আগে একটা সিগনেচার রেখে গেছে, যে সে এসেছিলো, কিংবা যে কাজ করতে এসেছিলো, সেটা করে গেছে।"

আমি কিছুই ধরতে পারলাম না, বোকার মতো কিছুক্ষণ ক্রসচিহ্নটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম, "তোদের বাড়িতে ভোরবেলা কাউকে না জাগিয়ে ঘরে ঢুকে এরকম একটা বিশ্রী দাগ কেটে যাওয়া কি সম্ভব? তোর মামার না লাইসেন্স করা বন্দুক আছে?"

বিলুর দাঁত আপনা থেকেই বেরিয়ে এলো।

বাইরের ঘরে শুনতে পেলাম, আন্টি বলছেন, "বাদল, আমি বিলুকে নিয়ে হবিগঞ্জ যাবো রে, তোর গাড়িটা দিতে পারবি আজকের জন্যে?"

অচেনা ভদ্রলোকের গলা শুনতে পেলাম, একেবারে তীক্ষ্ণ স্বর, "বুবু, গাড়ি আর ড্রাইভার নিচে তৈরি আছে। তেলটা শুধু নিয়ে নিতে হবে পথে কোথাও থেকে।"

বিলু আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "নাফিসা আর জয়া আসবে কখন? একটু পরই তো রওনা দিতে হবে।"

আমি বললাম, "কখন যাচ্ছিস তোরা?"

বিলু আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, ""তোরা" না, বল "আমরা"। আমরা সবাই যাচ্ছি।"

আমি থতমত খেয়ে বললাম, "আমরা মানে?"

বিলু এক নিঃশ্বাসে বললো, "আমরা মানে মা আমি তুই নাফিসা জয়া। হবিগঞ্জে বাবার ঐ ক্যাসলটাতে যাবো। ওখানে আমি আর মা একা একা গিয়ে সব ম্যানেজ করতে পারবো না, তোদের হেল্প লাগবে না?"

আমি আকাশ থেকে পড়লাম, "তাহলে আগে বলবি না বেকুব? জামাকাপড় নিতে হবে না? আগে বললে ব্যাগ গুছিয়ে আসতাম ...।"

বিলু কেমন যেন অদ্ভুত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "সমস্যা নেই। ওখানে গেলে এসবের কোনো অভাব হবে না।"

বিলুর কথার অর্থ আমি ধরতে না পারলেও ওকে আর ঘাঁটালাম না, আমার নিজের মেজাজটাই চড়ে আছে। হবিগঞ্জ যেতে হবে জানলে ল্যাপটপটা সাথে করে আনতাম অন্তত। ঐ জঙ্গলে অবশ্য ইলেকট্রিসিটি আছে কি না কে জানে?

বিলু বললো, "নাফিসাকে জানিয়েছিস? জয়াকে?"

আমি বললাম, "জয়া আসবে বললো। আর নাফিসার ফোন নাফিসার মা ধরেছে। এমন ঝাড়ি দিলো, কী বলবো। নাফিসা ক্যান ক্লাস টেস্টে দশে দুই পেলো, সেই কৈফিয়ত চেয়ে বসলেন ...।"

বিলু চোখমুখ কুঁচকে বললো, "স্ট্রেইঞ্জ!"

আমি বললাম, "স্ট্রেইঞ্জার দ্যান ফিকশন দোস্ত। কখনও শুনেছিস এমন ঝাড়ি?"

বিলু আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "ইন ফ্যাক্ট, সেইম ঝাড়িই উনি আমাকে দিয়েছেন, যখন সকালে তোকে ফোন করার আগে নাফিসাকে কল দিয়েছিলাম। আজব না?"

আমি বিলুর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। শালা বলদ বলে কী? ও নিজে ঝাড়ি খেয়েও আমাকে ঝাড়ির মুখে পাঠালো?

বিলু বললো, "আমার ধারণা আন্টি ক্লাস সিক্স থেকেই নাফিসার সব বন্ধুকে এই একই ঝাড়ি দিয়ে আসছেন। ওনার কোনো ক্রিয়েটিভ স্কিল নাই। তবে ঝাড়িটায় কাজে দেয়, তোকে স্বীকার করতেই হবে। কাজে দেয় বলেই উনি নতুন কিছু আর ভেবে বার করার ঝামেলায় যান নাই। এনিওয়ে ... একটা জিনিস দ্যাখ ...।"

বিলুর পাছায় কষে একটা লাথি মারার ইচ্ছা কোনোমতে দমন করছি, বিলু ওর গেঞ্জির নিচ থেকে আমার দেখা সবচে আজব জিনিসটা বের করলো। একটা মেডেলের মতো দেখতে জিনিস কালো সুতার মতো গিঁট দেয়া একটা কিছুর সাথে বাঁধা। মেডেলটা পুরোপুরি গোল না, ভচকানো।

"এটা কী?" আমি এক পা পিছিয়ে গিয়ে বললাম।

বিলু আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, "এটা হচ্ছে আরেকটা উইয়ার্ড স্টাফ। আজ সকালে মা আমাকে ঘুম থেকে তুলেই এটা জোর করে পরিয়ে দিয়েছে। খোলা মানা।"

আমি বললাম, "এটা কি ... সর্ট অব ... তাবিজ? কিংবা কী যেন বলে, কবচ?"

বিলু কাঁধ ঝাঁকিয়ে শুধু বললো, "সম্ভবত। কিন্তু একটা জিনিস টেস্ট করা দরকার।"

আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিলু মেডেলটা নিজের গলা থেকে খুলে আমার গলায় পরিয়ে দিয়ে বললো, "কোনো গন্ধ পাচ্ছিস?"

আমি শুধু টের পেলাম, খুব ধারালো একটা অনুভূতি আমার নাকের ভেতর দিয়ে একেবারে মাথার ভেতর পর্যন্ত বয়ে গেলো। বিশ্রী চামড়াপোড়া গন্ধটা বিলকুল গায়েব। শুধু বিশ্রী গন্ধটাই গায়েব না, একটা মৃদু বুনো ফুলের গন্ধ যেন পাক খাচ্ছে আমার চারপাশে।

বিলুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ও একমনে চেয়ে আছে আন্টির ঘরের এককোণে রাখা ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে। বিলুর মুখটা ক্রমশ ফ্যাকাশে হয়ে উঠছে দেখে আমি এগিয়ে ঝুঁকে পড়ে আয়নার দিকে তাকালাম, সেখানে দেখার মতো কিছু নেই।

পেছন ফিরে বিলুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, কাগজের মতো সাদা হয়ে উঠেছে ওর মুখ। ঘড়ঘড়ে গলায় বিলু শুধু বললো, "তাবিজটা দে! জলদি!"

[দ্বিতীয় পর্ব পরে কোন এক সময় আসবে]


মন্তব্য

তাসনীম এর ছবি

অনেকদিন পরে পুরানো হিমুকে পাওয়া গেল। দ্বিতীয় পর্বের জন্য সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ দেওয়া হলো।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

কৌস্তুভ এর ছবি

ঠিক। লম্বা লেখা, পুরোটা পরে সময় করে পড়ব, কিন্তু যা মুড পেলাম তাতে আগেকার দিনের সেই সময়ের যখন পাঠককে বসিয়ে রেখে হিমুদা চা খেতে সটকে পড়তেন সেই সময়ের আমেজ পেলাম। হাসি

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হা হা হা! এবার আর তা হতে দেয়া হবে না!!! (জোর দাবী)

মিলু এর ছবি

"পরে কোন এক সময়" মানে কি ভাই? এইডা কিছু হইল! ইয়ে, মানে...

হিমু এর ছবি

আস্ত একটা হড়ড় উপন্যাস এক বসায় লিখে ফেলার মতো শারীরিক সুস্থতা নাই রে ভাই। প্লটটা মাথায় কামড়াচ্ছিলো দেখে ইঁট রাখলাম। অসুখ সারুক, বাকিটা ধুপধাপ লিখে ফেলবো। আপাতত ধরে নেন জয়া সোবহানবাগ থেকে মোহাম্মদপুরে যাওয়ার পথে জ্যামে আটকে গেছে।

মিলু এর ছবি

বুঝিলাম হড়ড় উপন্যাস আসিবে না হড়বড় করিয়া।

আপনার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। অতঃপর হড়ড়ের হড়বড় হিল্যে হওয়ার আশায় রইলাম। দেঁতো হাসি

রু (অতিথি) এর ছবি

পাঠক কে বসিয়ে রেখে চা খাওয়ার বদভ্যাসের কথা শুনেছিলাম। এই প্রথম মনে হয় ধরা খেতে যাচ্ছি। যাই হোক, শুরুটা খুব সুন্দর, পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করে থাকব।

ahasnat এর ছবি

ওই মিয়া, ত্যাড়া হইছেন অনেক। এ্যাঁ, ২য় পর্ব কোন একসময় আসবে। আপ্নারে ১ সপ্তাহ সময় দিলাম। ১ সপ্তাহ কম মনে হইলে ৭ দিন সময়। ১ এর চেয়ে ৭ অনেক বড় সংখ্যা। এর মইধ্যে যেন ২য় পার্ট যেন আসে, নাইলে কিন্তুক মনে রাইখেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমার খালার চাচাত বোনের শালীর ছোট বোনের মামার বড় শালার বন্ধুর ভাতিজার দূর সম্পর্কের আত্মীয়।
এ হাসনাত।

পাঠক এর ছবি

"বোনের শালীর"????

@হিমু ভাই, ভালো লাগলো, চালিয়ে যান সাথে আছি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চমৎকার ...... অপেক্ষায় আছি হিমুদা

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ধুসর গোধূলি এর ছবি

তুই জয়া'র ফুন্নাম্বার আমারে দে। আমি গিয়া জয়ারে চিপাচাপা দিয়া নিয়া আসি, বেশিক্ষণ লাগবে না। তুই ল্যাখতে থাক চা টা খাওয়া ফালাইয়া!

দিগন্ত বাহার * এর ছবি

আর সক্কালবেলা সোবহানবাগ থেইকা মোহাম্মদপুর যাইতে জ্যাম, এইটা কুন বিচারের কতা না। বিহিত করেন যাতে এই গল্পটাও না ডুব দেয়...! শয়তানী হাসি

ঢাকাইয়্যা যাদুকর () এর ছবি

ওর্রে হিমুভাই ইজ ব্যাক (এন্ড ড়কস)

কুনু চিন্তা নাই - জয়া আফারে মোহাম্মদপুরে পৌঁছানোর দায় আমাগো পাঠকগো - শারীরিক সুস্থতা ফেরত পাওয়া মাত্র আপ্নে লিখা শুরু কইরেন কিন্তু ঠিকাছে? প্রমিজ??

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

দুর্দান্তিস গতিতে আগাইছে। জলদি পরের পর্ব।

যুমার এর ছবি

অপেক্ষায় আছি--

দ্রোহী এর ছবি

অ্যাতো দ্রুত লেখেন ক্যামনে?

প্লটের গায়ে ডায়লগগুলো চড়ানোর পর সাকিব খান পুরো সালমান খান বনে গেছে! চলুক

রু (অতিথি) এর ছবি

আপনি নিজেই তো সালমান খান সেজে বসে আছেন!

দ্রোহী এর ছবি

লইজ্জা লাগে

পাগল মন এর ছবি

মাত্র জমিয়ে বসে পড়তে শুরু করলাম দিলেন থামায়ে। মন খারাপ
তাড়াতাড়ি পরের পর্ব দিয়েন (তবে আগে অবশ্যই সুস্থ হোন)।

------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

চা খাওয়া দ্রুত শ্যাষ করেন! পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

---------------------
আমার ফ্লিকার

সজল(লগ ইন করলাম না) এর ছবি

বাহ, বেশ ভালো লাগলো। আমার শহরের দিকে সবাই রওয়ানা দিচ্ছে দেখে মজা পাচ্ছি।
[একজন মারা যাওয়ার পরেও সবার স্বাভাবিক আচরণ একটু হুমায়ুন আহমেদীয় মনে হচ্ছে, মানে ঘটনাটা, বর্ণনা না]

মুহিত হাসান এর ছবি

এতদিন কোথায় ছিলে ওস্তাদ! তুমি কোথায় ছিলে!

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

কয় পর্বে শেষ করবেন, এমন কোন হিসেব আগে থেকে করে রেখেছেন কি? এভাবে আটকে আটকে পড়তে ভালো লাগে না। পুরো উপন্যাসটা তৈরি হয়ে গেলে তারপর একসাথে পড়ব।
জলদি সুস্থ হয়ে উঠুন, এই কামনা করি।

অপছন্দনীয় এর ছবি

অপেক্ষায় থাকলাম...

(অফটপিকঃ তবে ঝাকানাকা আর আড়ড়ড়জে রহস্যের প্রথম পর্ব পড়েও দারুণ আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম, চা খাওয়া আর শেষ হয়নি বোধহয়...)

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

সংলাপের অকৃত্রিমতা, যুতসই উপমা, পাঠককে টান টান উত্তেজনায় ঘোরগ্রস্থ করে রাখার নিপুনতা, সবমিলিয়ে অসাধারণ!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

Russel এর ছবি

হিমু ভাইয়া, গল্প পুরো দেন আর অর্ধেকই দেন......আপ্নের লিখা পড়ার মজাই অন্যরকম।।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

শিরোনাম দেখেই বুঝেছি এটা গাছে তুলে মই কেড়ে নেয়ার ব্যাপার। যাকগে, সুস্থতাটা জরুরী। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন, চণ্ডীশিরা এক সময় নিশ্চয়ই শেষ হবে।

অটঃ আপনার প্রতিবেশী চৌধুরী সাহেব সেই যে এক মহাউপন্যাসের কয়েক পর্ব লিখে তেহারী রাঁধতে গেলেন তার একটা বিহিত পারলে করবেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

পাণ্ডব'দা, আপনার অফটপিকটারেই আমার ক্যান জানি অনটপিক মনে হচ্ছে! আমার জোর ধারণা চৌধুরী আর আজাদ— দুই প্রতিবেশী শলা করেই এই চা টা খাওয়ার প্ল্যান করে। একজন চায়ের পানি গরম দেয়, আরেকজন সেই ফাঁকে এসে একটা পোস্টে মেরে যায়! আমরা জনগণ হায় হুসেন হায় হুসেন করি, আর উক্ত দুই প্রতিবেশি বগল বাজায়ে উবু দশ বিশ গোনে! একটা লম্বা দেইখা গামছা পাইলে দুই মাথায় দুইজনরে বাইন্ধা নিয়া আসতাম চা টা খাওয়ার আসর থেকে!

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

বইসা আছি! তাত্তাড়ি খান! :|

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

রামছাগল  এর ছবি

এক নিঃশ্বাসে পড়লাম রে বাবা।

তুহিন এর ছবি

রাস্তায় এখন আর ট্রাফিক জ্যাম নাই। জয়া মোহাম্মদপুরে পৌছে গিয়েছে। ২য় পর্ব চাই খুব তাড়াতাড়ি।

জ.ই মানিক এর ছবি

লেখায় জমে গিয়ে শেষটায় এসে ব্যথায় জমাট বেঁধে গেলাম। আহারে! ...
দ্রুত সুস্থতা এবং দ্রু পরের পর্বের আশায় দিন গুজরাইতে শুরু করিলাম।

ফাহিম হাসান এর ছবি

দারুণ সংলাপ!

বন্দনা এর ছবি

আমার হৃদয় আবার বড্ডো দূর্বল, এত সাসপেন্স নিতে পারিনা, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে পরের পর্ব দেন হিমুদা, নইলে হার্টফেল করে মরলে পরে আপনি দায়ী থাকবেন কিন্তু।

অদ্রোহ এর ছবি

লিখলেন অবশেষে...

কিছু কথা ছিল, পরের পর্ব দিলে কমুনে।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

শাব্দিক এর ছবি

ঈদের সময় ঢাকার রাস্তা একেবারে ফাকা, সো ট্রাফিক জ্যামের কৈফিয়ত দিয়ে লাভ নাই।
অপেক্ষায় থাকলাম। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

মাতাল ভেঁপু এর ছবি

গল্পটার মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ ভাব আছে...... এটা ছাড়া র সব ভাল লাগছে।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

হু. আ. কৈ পাইলেন ভাই!!! আমি তো পাইলাম না!!! চিন্তিত


_____________________
Give Her Freedom!

কাঠের সেনাপতি এর ছবি

পরের পর্ব এর জন্য অপেক্ষায় বসলাম । ইটা রাইখ্যা গেলাম...

 তাপস শর্মা  এর ছবি

অকৃত্তিম। ন্যারাশানে একটা প্রচ্ছন্ন মাদকতা আছে।
চলুক
-----------------------------

pathok(sam) এর ছবি

আজকের নীড়পাতা রক্স ! অনেকগুলো ভাল লেখা! ধ ন্যবাদ হিমু ভাই সহ শুভাশীষ, দিহান, আশালতা, উদ্ভ্রান্ত পথিক, দেবানন্দ ভূমিপুত্র, রুমঝুমা সহ সবাইকে!

maisha এর ছবি

ভাল লাগল। সুস্হ হয়ে বাকিটা লিখে ফেলেন।

নিটোল. এর ছবি

তাড়াতাড়ি পরের পর্ব ছাইড়েন ভাই। আপনি এমনিতেও বেশ বিরতি দিয়ে লেখেন। অপেক্ষায় আছি।

ও হ্যাঁ, লেখা ভালো লেগেছে। সুন্দর সংলাপ।

দ্যা রিডার এর ছবি

অপেক্ষা ... অপেক্ষা ... মন খারাপ

আশালতা এর ছবি

পর্ব দেখে সকাল থেকে আশেপাশে ঘুরঘুর করছিলাম কিন্তু পড়িনি। শেষটায় আর লোভ সামলাতে না পেরে পড়েই ফেললাম এবং বুঝলাম কাজটা মোটেও ঠিক হয়নি। আমার ধৈর্য খুব কম। গল্পটা মাথায় ঢুকে গেছে, এটা থেকে বেরোতে ঝামেলা হচ্ছে। পরেরটা না পড়া পর্যন্ত প্রচণ্ড অশান্তিতে থাকতে হবে। স্বার্থপরের মত চাইছি আপনি ভালো হয়ে উঠুন, শিগগিরই। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

সুরঞ্জনা এর ছবি

আহ! রহস্য গল্প!
ভূত-প্রেত-কবচ-গলাকাটা লাশ!!! দেঁতো হাসি :D দেঁতো হাসি

মেঘ না চাইতেই মেঘালয়!! দেঁতো হাসি
শিঘ্র পরের পর্ব চাই হিম্ভাই!
হাসি

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

পরিচিতরা জানেন আমি থ্রিলারের বিশাল ভক্ত। এই প্রথম পর্বে কৌতূহল জাগানোর মতো অনেক কিছু ছিলো। রসবোধ, সংলাপ আর আধিভৌতিকতার একটা মিশেল- আগ্রহ জাগালো পরের পর্বের জন্যে।

ওয়্যারুলফ, গভীর রাতে নূপূরের শব্দ, একচক্ষু স্থানীয় ডাকাতসর্দার, পুরনো মন্দিরের মিথ- এইগুলানও চাই দেঁতো হাসি

আশা করি চায়ের গামলা নয়, কাপই হাতে আছে আপনার।

ওসিরিস এর ছবি

নিউটনের এইটা কি ব্যখ্যা দিলেন!! চউক্ষে পানি আইসা পড়লো। আর কাজটা ঠিক হইলো না, অ্যাম্নে কেউ থামায়া দ্যায়। ধুর্মিয়া।।
যাজ্ঞা, তবে আপনে কামেল মানু। ঠিক সময় গল্প ছাড়সেন। এতো এতো লুকজন মিলা আপনার স্বাস্থোদ্ধারের জন্যি আল্লাবিল্লা করলে লিচ্চয় ভালু হই যাবেন। তবে সুস্থ হয়া গপ শেষ না করলে রিভার্স দোয়াদুরুদ পড়া হইবেক এই কয়ে দিলুম।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

হ! তাপ্পর...?? পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

চরম উদাস এর ছবি

হিমুর কুনু ভরসা নাই, এর আগে এইরকম পাবলিক জমায়েত করে গল্প শুরু করে কতবার চা খাওয়ার নাম করে ভেগে গেছে। তারপরেও পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম নিয়ে বসলাম, দেখি কোথাকার কয়টা লোম খাড়ায়। দ্রুত সুস্থ হয়ে পরের অংশ নামান এই কামনা করছি।

জ়াতির বিবেক এর ছবি

প্রচন্ড আগ্রহ তৈরী হলো প্রথম পর্ব‌ পড়ে । পরবর্তী‌ পর্বে‌র অপেক্ষায় রইলাম , বেশী অপেক্ষা করাইয়েন না ।

guest_writer এর ছবি

হিমু ভাই আপনার পিলিচ লাগে সেকেন্ড পর্বটা দিয়া দেন....... ওঁয়া ওঁয়া

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চা খাওয়া শেষ হয় নাই?
অপেক্ষা করে আছি একলগে দুইটা পড়ুম বইলা

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হিমু এর ছবি

আপনাদের ফিডব্যাক পেয়ে উৎসাহিত হলাম। দ্বিতীয় পর্ব লিখলাম, আশা করি পুরোটাই আপনাদের আর আমার কমন আয়ু ফুরোনোর আগে শেষ করতে পারবো। যারা চাইছেন পুরোটা একসাথে পড়বেন, তাদের অনুরোধ করি, একটু কষ্ট করে টুকরো টুকরো পর্বগুলোই পড়ুন, আপনাদের পর্যবেক্ষণ জানান, অসঙ্গতি চোখে পড়লে ধরিয়ে দিন, তাহলে আমার কিছু সুবিধা হয়। টুকরো করে পড়ার কষ্ট কোনোক্রমেই টুকরো করে লেখার কষ্টের চেয়ে কম নয়, এ কথা জানাতে চাই।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

হরর, ধরে রাখলো, ডুবে গেলাম..............চমৎকার!!!! চলুক

স্বল্প বিরতিতেই শেষ কৈরেন............. হাসি


_____________________
Give Her Freedom!

কল্যাণF এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

যে মডু বা সচল মনের মুকুরে পাতাতে এই লেখাটি বাছাই করলেন তাদের দিলে কোন রহম নাই। ভালোই তো ছিলাম আমরা সব কিছু ভুলে। আমরা ধরে নিয়েছি সাত মন ঘি ও যোগাড় হবে না, রাধা ও নাচবে না, হিমুর ও চা খাওয়া শেষ হবে না। হৃদয় খুড়ে বেদনা কেনো জাগালেন!! (দীর্ঘশ্বাসের ইমো হবে)
---কাজী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।