বিষণ্ণতার শহরে এসে
হ্যামিলনের মনে হলো একবার বাজালেই বাঁশি
বিষণ্নতা সব ঝাঁপ দেবে নদীতে,
মনে হলো নতুন এক সুর তুললেই
এক লহমায় শহরে চমকাবে আনন্দের কিংখাব।
হ্যামিলন, বিষণ্নতা কোন শৌখিন আলোয়ান নয়,
যে ছুড়ে ফেলে দেয়া যায়,
বিষণ্নতা আমাদের শখ বা রোগ নয়,
বিষণ্নতা আমাদের সহচর, নিত্য প্রেম,
বিষণ্নতা আমরা আমাদের বুকে পুষি,
চোখে পুষি, পুষি আমাদের স্বপ্নে।
আমাদের মানিব্যাগ খুলে দ্যাখো,
দেখবে বিষণ্নতার নোট সব – দশ, বিশ, ত্রিশ,
আমাদের স্কুলে যাও,
দেখবে শিশুরা সব লাল, নীল রং এ আঁকছে,
গোল, চারকোনা নানানরকম বিষণ্নতা।
আমাদের ঘুমে বিষণ্নতা, আমাদের স্বপ্নে বিষন্নতা,
আমাদের হাসিতে বিষণ্নতা, আমাদের বিষণ্নতায় বিষণ্নতা।
আমাদের বুঝি বহু পাপ,
আনন্দ তাই আমাদের দিয়েছে নির্বাসন,
আমরা কি চাইলেই হতে পারি সুর্যমুখী,
রংধনু রং, হাল্কা পাখায় চঞ্চল প্রজাপতি,
আমাদের তাই বিষণ্নতার সাথেই ঘর সংসার,
জীবনযাপন, প্রেম-ভালোবাসা-সহবাস।
বহু লোকালয় ঘুরে বুঝি বিষণ্ণতা এ শহরে তাই স্থায়ী হয়,
এখানে বিষণ্নতার ট্রাফিক, এখানে বিষণ্নতার সড়ক,
এখানে বিষণ্নতার সাথে প্রেম হয় বিষণ্নতার,
এখানে বেলা ডুবে গ্যালে বিষণ্নতা, এখানে চরাচর জোস্ন্যায় ভেসে গ্যালে বিষণ্নতা,
এখানে কবিরা ল্যাখে বিষণ্নতার স্তুতি সব,
এ এক দুঃখশহর হ্যামিলন, এখানে আনন্দের কোন স্থান নেই
এখানে বসন্তও গায় বিষণ্নতার গান।
তুমি বরং বাঁশিতে বিষণ্নতার সুর তোলো,
সুর তোলো বেহাগের, দ্যাখবে ক্যামন ভীড় করে সব,
ক্যামন ভারী হয়ে ওঠে বাতাস, আর পাখীরা ডেকে ফেরে বিবাগী সাথীকে,
গর্ভবতী মেঘেরা ঝরায় কান্না, ঝাউবনে খেলে দীর্ঘশ্বাস।
সকলেই সুখী হতে পারেনা হ্যামিলন, কারো কারো নিয়তি বিষণ্নতার,
কোন কোন শহর আনন্দের স্পর্শে বিপন্ন বোধ করে,
নিজের চির চেনা অনুভব হারিয়ে স্পষ্ট উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে,
সামষ্টিক শোকস্বপ্ন শেকড় গাড়ে একদম নগরের বুকের ভেতর।
তুমি বরং ফিরে যাও সুখী মানুষের আনন্দ কোলাহলে
ফিরে গিয়ে সুখী মানুষদের বলো,
আছে এক অচিন শহর, বুকে তার বরফ জমাট বিষণ্নতা।
মন্তব্য
অসাধারণ কবিতা পড়ার পর কী বলা উচিত---আমার জানা নেই
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
ধন্যবাদ আশফাক, এক্টা বিষণ্নতা পর্ব চলছে এখন।
অনেক দিন থেকেই বিষণ্ণতায় ডুবে কাল কাটছে আমার । কবিতাটি সেই বিষণ্ণতা অনেকটা দূর করে দিলো যে ! সুন্দর কবিতার জয় হোক ।
বিষণ্নতা কোন ভালো কথা নয়, তবু কি আর করা। কবিতা ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
এত সুন্দর! এত সুন্দর! থামিয়ে দেবার মত, চুপ করিয়ে দেবার মত সুন্দর।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
আরেকটা কথা, হ্যামিলন শহরটার নাম, আপনি কবিতায় বংশীবাদক এর নাম হিসেবে ব্যাবহার করেছেন।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
এটা বেশ বড় ভুল হয়ে গ্যাছে। বাশিওয়ালা যোগ করলে মনে হয় কবিতার সুর কেটে যাবে এখন, কিন্তু হ্যামিলন তো সত্যিই শহরের নাম! বেশ বিপদে পড়া গ্যালো।
গভীর বোধসম্পন্ন কবিতা!!! অনন্য মুগ্ধ করলো, কবি!!! বিষণ্ণ শহরটাও কেবলি বিষণ্ণ কামনা করে..............
_____________________
Give Her Freedom!
ঢাকার কথা মনে পড়ে? ঢাকা কি বিষণ্ন শহর?
প্রতিদিন তো এই শহরটাকেই ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছি,
সে আরো জীর্ণ আরো ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছে,
তার হৃদয়ে গভীর বিষণ্ণতার দাগ!!!
_____________________
Give Her Freedom!
আমারও বাঁশি বাজাতে ইচ্ছে করছে কবি।
কবির সুমনের গানের একটা লাইন মনে পড়ে গেলো - "বাসুরিয়া বাজাও বাঁশি দেখিনা তোমায় , গেঁয়ো সুর ভেসে বেরায় শহুরে হাওয়ায় । "
একটা টুকরো মুগ্ধতা রেখে গেলাম লালান ভাই।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কোথায় রয়েছে, কোথায় রয়েছে কার জিম্মায় তা জানা হয় নি
জানি না কিছু
জানি শুধু এ জীবনে বেশি দেখা হবে না
কিছু আফসোস হয় তবু দুচোখ ভরে আমি দেখছি তোমায়
তুমি তুমি তুমি তোমাকে দেখার ছবি এই
জীবনের সেরা ছবি আমাদের চোখে থাকবে
আমাদের জগত , আমাদের জগত সকলেরই ইতিহাস
তোমার নয়নে খুঁজি সব মানুষের উচ্ছাস ..
হ্যামিলন নামটা ঠিক হয় নি, ওটা বাশিওয়ালা হতে পারে।
বিষন্নতা আমরা আমাদের চোখে পুষি, বুকে পুষি, পুষি আমাদের স্বপ্নে...
বিষন্নতা ছাড়া জীবনধারণ এক ধরণের অত্যাচার...।
বরাবরের মতই চিন্তাজাগানিয়া।
----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand
বিষণ্নতার এক্টা সাতকাহন হতে পারে। পারেনা?
'কেউ জানেনা একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বেড়ায়-
কোনো বিষন্ন ক্যাসেটেও এতো বেদনার সংগ্রহ নেই আর,
পাতায় পাতায় চোখের জল সেখানে লিপিবদ্ধ আর মনোবেদনা সেই এপিকের ট্রাজিক মলাট......
মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস, এতো দীর্ঘশ্বাস, কে জানতো!'
#মানুষের বুকে এতো দীর্ঘশ্বাস : মহাদেব সাহা
মুগ্ধতা....
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ, আর অই কবিতাটা লিঙ্ক করে দিন, আমরা বিষণ্ন লোকজন পড়ি।
খুব খুব খুব ..................
আপনার কবিতার জন্যে অপেক্ষা করি। আর ভালো লাগছে এই দেখে যে, পাঠকের মুগ্ধতার জবাবে লেখকও প্রত্যুত্তর দিচ্ছে। অধিকাংশ সময় লেখকের নীরবতা (তা যে কারণেই হোক না কেন) উন্নাসিকতা বলে বোধ হয়।
কবিতায় কিছু শব্দ আপনি অন্যভাবে লিখেন, যেমন 'গ্যালো', 'ক্যামন'... । এই শব্দগুলো দেখে একটু হোঁচট খেতে হয়। কিন্তু 'দ্যাখো' শব্দটা খারাপ লাগছে না, কেননা এর উচ্চারণ সংবৃত/ বিবৃত দুভাবেই হতে পারে, এবং উচ্চারণভেদে অর্থও বদলে যায়।
ভাইরে, মোটেও উন্নাসিকতা নয়, অমন স্পর্ধাই রাখিনা। সময়াভাব এক্টা কারণ। ইন্টারনেটের প্রবেশ সুবিধা অন্য কারণ। এখন থেকে চেষ্টা করবো, তবু মাফ চাইছি।
গ্যালো/ক্যামন এগুলো মানায় না? ভাববো এবার থেকে। ধন্যবাদ।
কবি, জানি ব্যস্ততায় হয় না অনেক কিছুই চেলেও.........তবু যদি কিছু সময় বের করতে পারেন খুব ভালো হয়, কারণ আমাদের যে প্রিয় কবির প্রতিমন্তব্য পড়তেও দারুণ লাগে!!!
আর গ্যালো/ক্যামন ব্যবহারে কোন সমস্যা নাই, নিশ্চিন্তে উপযুক্ত জায়গায় ব্যবহার করতে পারেন, যেমনটি করে আসছেন.....!!!
প্রতিটা মানুষেরই কখনো না কখনো মনে হয় সে নিজেই একটা বিষণ্নতার শহর,ঘর-বাড়ি সবকিছুই। নিজের দর্পণেই তো মানুষ জগৎ দেখে তাই অন্য-অচেনা সেই ঘোর থেকে সে বাইরে আসার চেষ্টা করে প্রাণপণ। কবিতাটা ভালো লেগেছে।
বিষণ্নতার শহর, আমার ধারণা আমরা সেই শহরেরই নাগরিক। ভার্চুয়াল শহর হতে পারে সেটা। ধন্যবাদ।
কী ব্যাপার বস্, মন খারাপ? আপনার মন খারাপ হলে যদি এমন কবিতা মেলে তাহলে স্বার্থপরের মতো ভাবি, না হয় আরো দু'দিন বিষণ্ন থাকলেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মন খারাপের দিন চলছে। নাকি সেই বয়সেই আছি?
কী সুন্দর!
ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।
ধন্যবাদ।
কবিতা এত বেশি ভাবালো যে এই কটি মামুলি কথা না লিখে পারলাম না।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
দারুণ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমার কিছুই ভাল লাগেনা। কিছুই না।
এখানে বিষন্নতার সাথে প্রেম হয় বিষন্নতার...
চমৎকার!
সুমিমা ইয়াসমিন
এমন বুক ভারী করা বিষন্নতার কবিতা কবে পড়েছি মনে নেই। অসাধারণ
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
কি দারুণ কবিতা, মাসুদ সজীব ভাইকে বিশাল ধন্যবাদ।
ইনি আর লেখেন না কেন? ঐদিকে কায়কাউসের ছেলেরা সব দখল করে নিচ্ছে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা পান্ডবদার প্রাপ্য, উনিই এমন একজন কবির কবিতা পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন শিশিরকনার পোষ্টে কবির প্রোফাইলি লিংক দিয়ে। কেন লেখেন না এটা আসলে বিরাট একটা প্রশ্ন। পান্ডবদাকে অনুরোধ করি “কবি” কে আবার সচলে লেখার অনুরোধ করতে।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
নতুন মন্তব্য করুন