বাদলের কথা
হাবিব ভাইকে আমরা সবাই খুব পছন্দ করতাম। অন্তত তার মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
মাঝেমধ্যে সন্দেহ হয়, হাবিব ভাইয়ের এই পাগলাটে স্বভাব উত্তরাধিকারসূত্রে বিলুও খানিকটা পেয়েছে। আজ সকালে সন্দেহটা আবার একটু পানি পেয়েছে হালে। নির্বিকার নিরুত্তেজিত গলায় ছোকরা ফোন করে বলে, "বাদল মামা, বাসায় চলে আসো। বাবা মনে হয় মারা গেছে।"
কত বয়স বিলুর? কুড়ি? একুশ? এই বয়সের একটা ছেলের গলায় কোনো দুঃখের ছাপ নাই, অস্থিরতার আভাস নাই, যেন দুধ টকে গেছে, এমনভাবে নিজের বাবার মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে বেড়াচ্ছে মানুষকে? আর "মনে হয় মারা গেছে" মানে কী? তোর বাপ মরে গেছে কি মরে নাই, তুই নিশ্চিত জানিস না?
কিংবা কে জানে, হয়তো বিলুর পক্ষে এটাই স্বাভাবিক। যে ছেলে জীবনে দশ-বারোবার মাত্র দেখেছে নিজের বাবাকে, তার হয়তো এমন নিস্পৃহ থাকাই স্বাভাবিক। হয়তো বিলু ফোন সেরে আবার শুয়ে পড়েছে কাঁথামুড়ি দিয়ে, নয়তো বন্ধুদের সাথে ফোনে আড্ডা মারছে, বলছে, "ওহ বাই দ্য ওয়ে, দোস্ত, বাবা মনে হয় মারা গেছে। এনিওয়ে, তারপর কী হলো শোন ...।"
যত দিন যাচ্ছে, কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে ছেলেমেয়েগুলো।
খবরটা পাওয়ার পর প্রথমেই আতাহার ভাইয়ের মোবাইলে একটা কল দিলাম। হাবিব ভাই ফোন ব্যবহার করেন না --- করতেন না --- তার সাথে কোনো জরুরি কাজে যোগাযোগ করতে গেলে আতাহার ভাইকেই কল দেয়া দস্তুর। আতাহার ভাই হাবিব ভাইয়ের ঐ পোড়ো বাড়ির ম্যানেজার, খুবই বিটকেলে স্বভাবের লোক, এবং মনে মনে যা আশা করেছিলাম, সেটাই সত্য হলো, মোবাইল বন্ধ। এক মহিলা বিরক্তিকর একঘেয়ে গলায় বলে যাচ্ছে, এই মুহূর্তে মোবাইলে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না ...। আমি এ পর্যন্ত কখনও আতাহার ভাইকে ফোন করে পাইনি। উনি নাকি মাঝেমধ্যে বুবুকে নিজ থেকে ফোন করে কুশল বিনিময় করেন।
হাবিব ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ কীভাবে আসতে পারে, এ প্রশ্নটা মাথায় এসেছিলো, কিন্তু উত্তরটা আমার জানা। বুবুকে তবুও ফোন করে জানতে চাইলাম, "চিঠি এসেছে কোনো?"
বুবু একটু ধরা গলায় শুধু বললো, "হ্যাঁ ... তুই একটু তাড়াতাড়ি আয়। আমাদের যেতে হবে ওর ওখানে।"
দাদা দেশে নেই, তাকে একটা ইমেইল করে জানাতে হলো খবরটা। অফিসে কয়েকটা কল করে আমাদের তাজমহল রোডের বাড়িতে চলে এলাম। একসময় আমাদের বাড়ি গমগম করতো মানুষজনের ভিড়ে, এখন সেটা একেবারে নিঝুম হয়ে পড়ে আছে। বিলুই দরজা খুলে দিলো, তার চোখেমুখে কোনো বাড়তি অভিব্যক্তি নাই।
বুবু ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো, চোখ দু'টো ফোলা ফোলা। "খবর কী তোদের? মিলি কেমন আছে?"
বুবু এতগুলি বছরেও পাল্টায়নি। হাবিব ভাই মারা গেছেন, কোথায় আমরা ওকে সান্ত্বনা দেবো সবাই মিলে, সেই সুযোগটাও সে দিচ্ছে না। বিলু হয়তো বুবুর কাছ থেকেই এই সংযত স্বভাব পেয়েছে। কিন্তু তাই বলে একটুও দুঃখ পাবে না?
বিলু ডাইনিং টেবিলে ফিরে গিয়ে আবার চায়ের কাপ নিয়ে বসলো। আমি বুবুর দিকে ফিরে বললাম, "কী লেখা চিঠিতে?"
বুবু একটু চুপ করে থেকে বললো, "অনেক কথা ... সব জানতে হবে না তোর। কিন্তু আমাদের দ্রুত যেতে হবে ওখানে।"
প্রায় কুড়ি বছর আগের একটা দৃশ্য আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন বাবা, দাদা, বুবু, বুবুর কোলে ছোট্ট বিলু, আর হাবিব ভাই অস্থির হয়ে পায়চারি করছেন, বিড়বিড় করে বলছেন, "বিপদ, ভীষণ বিপদ, আমাকে চলে যেতে হবে!"
আমি বিলুর কান বাঁচিয়ে নিচু গলায় বললাম, "কোনো তাবিজ এসেছে?"
বুবু নিজের গলায় ঝোলানো একটা তাবিজ শাড়ির আড়াল থেকে বার করে দেখালো। "দুটো। আমার আর বিলুর জন্য। সারাক্ষণ পরে থাকতে বলেছে।"
বুবুর মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে আমার অসহায় লাগে। বুবু স্কুলে মেয়েদের ফিজিক্স পড়ায়, কেমিস্ট্রি পড়ায়, অঙ্ক করায়, আর এখন ওকে এই গাবদা তাবিজ গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হচ্ছে, এমনকি বিলুর গলাতেও ঝুলিয়ে দিতে হয়েছে, হাবিব ভাইয়ের প্রায় উন্মাদ কাণ্ডকারখানার জের টেনে।
কিন্তু উন্মাদই বা বলি কী করে?
"চিঠিটা কি নষ্ট করে ফেলেছো?" জানতে চাইলাম। একটা কাগজপোড়া গন্ধ ভেসে আসছে রান্নাঘর থেকে।
বুবু মাথা ঝাঁকালো, "সেরকমই করতে বলেছে।"
একেই বোধহয় বলে দেজা ভু। কিশোর বয়সে দেখা কুড়ি বছর আগের দৃশ্যে ফিরে গেলাম আবার। বাবা বিস্মিত হয়ে বলছেন, "কে পাঠালো তোমাকে চিঠি?" হাবিব ভাই পায়চারি থামিয়ে বাবার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলছেন, "বাবা আমি আপনাকে পরে সব বুঝিয়ে বলবো। এখন আমাদের সবারই ভীষণ বিপদ। আমাকে যত দ্রুত সম্ভব আব্বার কাছে যেতে হবে।"
বিলুর কথা শুনে আমি আবার বর্তমানে ফিরে এলাম, "চা খাবে মামা?"
এগিয়ে সোফার ওপর ধপ করে বসে পড়ে বললাম, "দে এক কাপ।"
বুবু বললো, "আমার ঘরে গিয়ে দেখে আয় কী অবস্থা।"
সোফা ছেড়ে উঠে বুবুর ঘরে ঢুকলাম। একটা বিটকেলে গন্ধ গোটা ঘরে, মুরগির চামড়া থেকে পশম পুড়িয়ে সরানোর সময় যেমন গন্ধ ছড়ায়, তেমন। বুবুর ঘরের মেঝেতে একটা কুটকুটে কালো ক্রসচিহ্ন। সেটা থেকেই ছড়াচ্ছে গন্ধটা।
ব্যাপারটা নতুন। হাবিব ভাই যখন নিজের বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন সারা জীবনের জন্যে, তখন এমন কিছু দেখিনি আমরা। শুধু একটা পার্সেল এসেছিলো, আর একটা চিঠি, যেটা হাবিব ভাই আমাদের সবার সামনেই ম্যাচ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছিলেন, আর একটা হাড়ের টুকরো এসেছিলো কেবল। হাড়ের টুকরোটা হাবিব ভাই বুবুর ঘরের জানালার শিকের সাথে সুতো বেঁধে রেখে গিয়েছিলেন। দাদা খুব জেদ করে সেটা খুলতে গিয়েছিলো, বাবা থামিয়েছিলেন দাদাকে।
হাবিব ভাইকে সেদিন পাগলের মতোই দেখাচ্ছিলো। বাকিটা জীবন তিনি তার আচরণ দিয়ে সেদিনের ধারণাটাই পোক্ত করে গেলেন শুধু।
বুবুর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আবার ড্রয়িংরুমে বসলাম। হাবিব ভাই চমৎকার একজন মানুষ ছিলেন। স্বল্পবাক, কিন্তু খুব রসিক, মাঝেমধ্যে হুটহাট কয়েক লাইন গান গেয়ে সবাইকে চমকে দিতেন, বেশিরভাগ সময়ই একটা বই নিয়ে বসে বা শুয়ে থাকতেন। সরকারী চাকরি করতেন, বুবুকে নিয়ে একেবারে আক্ষরিক অর্থেই অজ পাড়াগাঁয়ের সরকারি কোয়ার্টারে ছিলেন কয়েক বছর, ঢাকায় এলে উঠতেন আমাদের বাড়িতেই।
আমরা সবাই জানতাম, হাবিব ভাইয়ের বাবা মা কেউ বেঁচে নেই। কুড়ি বছর আগে তিনি যেদিন ভোরবেলা জেগে উঠে চিৎকার করে উঠলেন, সেদিন আমরা সবাই খুব অবাক হয়েছিলাম। বাবার মুখটা মনে পড়ে, হাঁ করে তাকিয়ে ছিলেন তিনি হাবিব ভাইয়ের দিকে। "বাবা মারা গেছেন মানে? তোমার বাবা বেঁচে ছিলেন? কোথায় উনি? কী হয়েছে? কে খবর দিলো?"
বিলু একটা পিরিচে করে এক কাপ চা দিয়ে গেলো। বাসায় কাজের লোক আসে দেরি করে, সকালে বুবু আর বিলুকেই নাস্তা বানানোর কাজ করতে হয়। ছেলেটা অন্তত চা বানাতে না পেরে চায়ের অভাবে মরবে না।
"তুই ঠিক আছিস তো?" প্রশ্নটা আমার কানেই বেখাপ্পা শোনায়। বিলু কাঁধ ঝাঁকায়, "হ্যাঁ! ইটস অল দ্য সেইম মামা ... তুমি তো জানোই। বাবার সাথে আমার শেষ কথা হয়েছে পাঁচ বছর আগে। তার আগে কথা হয়েছিলো আরো পাঁচ বছর আগে। হি ইজ আ স্ট্রেইঞ্জার টু মি ... সরি, হি ওয়াজ।"
বিলুর শেষ কথাটা কানে বাজতে থাকে। হাবিব ভাই এখন পাস্ট টেন্সের মক্কেল হয়ে গেছেন।
বাবা মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত বুবুকে পীড়াপীড়ি করে গেছেন, আবার বিয়ে করতে। বুবু শোনেনি। হাবিব ভাই মাঝে মধ্যে চিঠি পাঠাতেন, সে চিঠিতে কী লেখা ছিলো আমাদের জানার সুযোগ হয়নি। আমাদের সবাইকে চমকে দিয়ে ছয় সাত বছর পর হাবিব ভাই একদিন বাসায় এসে হাজির। সাথে একটা প্রকাণ্ড চামড়ার ট্রাঙ্ক। পরিষ্কার মনে আছে আমার, দাদা প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়েছিলো হাবিব ভাইয়ের ওপর। বাবা তখন আর বেঁচে নেই। হাবিব ভাই যতক্ষণ ছিলেন বাসায়, একটা কথা বলেননি। শুধু বুবুকে আড়ালে ডেকে নিয়ে কয়েক মিনিট কথা বলে চুপচাপ চলে গিয়েছিলেন।
সেই চামড়ার ট্রাঙ্কে কী ছিলো, সেটাও আমরা জানতে পারিনি। বুবুর ঘরে সেটা তালা মারা পড়ে ছিলো বহুদিন। কয়েক বছর আগে বোধহয় বুবু ওটা ফেলে দিয়েছে।
বিলু একটু বড় হওয়ার পর বুবু আর বিলুকে একবার ঐ জঙ্গুলে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন হাবিব ভাই। বিলু ফিরে এসে শুধু ভুতুড়ে সব গল্প শোনাতো, "জানো মামা, বাবা একটা বিরাআআট ক্যাসলে থাকে! ওখানে কারেন্ট নাই, রাতের বেলা মশাল জ্বালাতে হয়! ইয়া বড় বড় বাদুড় আছে ওখানে, আর সাপ! আর বাড়ির ভিতরটা একদম ঠাণ্ডাআআআ!"
জায়গাটার নাম সম্ভবত চণ্ডীকদম। বুবু একবারই গিয়েছে ওখানে, তারপর আর যায়নি। বিলুও কোনো আগ্রহ দেখায়নি বাবার কাছে যেতে। হাবিব ভাইয়ের সাথেও আর দেখা বা কথা হয়নি আমাদের।
শেষ যেবার দেখলাম ওনাকে, দেখে চমকে উঠেছিলাম। এককালের সুদর্শন, সুরসিক স্বল্পবাক মানুষটা হারিয়ে গিয়েছেন, কঠোর, নির্লিপ্ত, কিছুটা নিষ্ঠুর চেহারার এক মাঝবয়েসী অচেনা লোক যেন দাঁড়িয়ে ছিলো ঘরের মাঝে। পরনেও তার অদ্ভুত পোশাক, পা পর্যন্ত ঢোলা আলখাল্লা, গলায় ঝুলছে একটা বিরাট তাবিজ, হাতে বালা। লম্বা রুক্ষ চুল মাথার পেছনে ঝুঁটি পাকানো। কেউ বলবে না, ইনি একজন ডাক্তার। যদিও শুনেছি, ওনার এলাকায় লোকে ওনাকে ডাক্তার হিসেবেই চেনে, ওনার বাড়িটাকেও সবাই ডাক্তারবাড়ি ডাকে।
হাবিব ভাইয়ের বাবাকে নিয়ে আমাদের কৌতূহল ছিলো, কিন্তু সেই কৌতূহল মেটানোর কেউ ছিলো না। বুবু হয়তো কিছু একটা জেনে থাকবে, কিন্তু বুবুও আর মুখ খোলেনি। উনি কীভাবে মারা গেলেন, আমাদের আর জানা হয়নি।
চায়ের কাপে চা একলা পড়ে ঠাণ্ডা হচ্ছিলো, এমন সময় দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো।
বিলুর বন্ধুগুলো প্রায় সবাই উদ্ভট কিসিমের। যে ছোকরা ঘরে ঢুকলো, তাকে প্রথম দর্শনেই অপছন্দ হলো আমার। শেভ না করা খোঁচা খোঁচা দাড়ি মুখে, টিংটিঙে শরীরে ঢোলা একটা টি শার্ট আর অসম্পূর্ণ প্যান্ট পরে চলে এসেছে। কী একটা কবি যেন আছে শাহবাগে, নানারকম ধুনফুন কথাবার্তা বলে বেড়ায়, তাকে দেখেছি এরকম মেয়েলি হাঁটু ছাড়ানো আধখান প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়াতে। ছোকরা ঘরে ঢুকেই বলে, "আয়্যাম সো সরি আন্টি! খুবই দুঃখজনক। কিন্তু লাশ কোথায়? দাফন হবে কোথায়?"
বুবু বেশ স্নেহের সাথেই ছোকরাকে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে বসালো। "বোসো রবি। তোমার মা কেমন আছেন? বাবা ভালো?"
বিলু টয়লেটে ছিলো, বেরিয়ে এসে ছোকরার সাথে খোশগল্প জুড়ে দিলো। তার বন্ধুও লাশ দাফন ইত্যাদির কথা ভুলে কচকচ করে কেক খেতে খেতে চায়ের কাপে ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ চুমুক দিতে লাগলো। কপাল ভালো এদের হাতে লাশ দাফনের দায়িত্ব পড়ছে না। পড়লে লাশ নিজেই হয়তো শাবল হাতে মাটি খুঁড়ে ঢুকে শুয়ে থাকতো লজ্জায়। মর্কট।
আমি উঠে গিয়ে রান্নাঘরে বুবুকে জিজ্ঞেস করলাম, "দাফনের কী হবে বুবু?"
বুবু নুডলসের প্যাকেট কেটে নুডলস বের করছিলো, আমার দিকে না তাকিয়েই বললো, "দাফন হয়ে যাবার কথা এতক্ষণে।"
আমি একটু চমকে গেলাম, "মানে? তোমাদের ছাড়াই?"
বুবুর হাতটা কিছুক্ষণের জন্যে স্থির হয়ে রইলো, তারপর আবার নুডলসের ভিড়ে ফিরে গেলো। "হ্যাঁ। সিভিল সার্জন তোর হাবিব ভাইয়ের পরিচিত, লিখেছে কিছু হলে উনি গিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট দেবেন। আতা ভাই দাফনের কাজ শেষ করবেন তারপর, আমাদের জন্য আর অপেক্ষা করবেন না।"
হাবিব ভাইয়ের ওপর হঠাৎ মেজাজটা খুব খারাপ হয়। "কোথায় হবে দাফন?"
বুবু একটা প্যানে পানি গরম দিতে দিতে বললো, "বাড়ির ভেতরেই। ওর বাবার কবর আছে ওখানে, ওর মায়ের কবরও।"
আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, "তুমি তাহলে কেন যেতে চাইছো?"
বুবু আমার দিকে ফিরে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ধরা গলায় বললো, "আমাদের অনেক বিপদ রে বাদল! কিছু জরুরি কাজ করতে হবে, ওগুলো আমাকে আর বিলুকে মিলেই করতে হবে!"
"আমি আসি তাহলে সাথে।" বুবুকে বিলুর সাথে ঐ পোড়ো জঙ্গুলে বাড়িতে যেতে দিতে ইচ্ছা করে না আমার। "আমার অফিসে কয়েকজন খুব কাজের লোক আছে, তাদেরও সাথে নিয়ে যেতে পারি।"
বুবু মাথা নাড়ে। "নাহ, তুই ভাবিস না। লোকলস্কর নিয়ে করার মতো কাজ নয় এগুলো ... এগুলো অন্যরকম ঝামেলা। আমি কোনো সাহায্য লাগলে ফোন করবো তোকে, তখন পারলে চটজলদি এলেই হবে।"
আমি বুবুকে আর ঘাঁটাই না। বুবু খুব ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়, খামাখা তর্ক করে কী লাভ?
রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে বুবুর ঘরে ঢুকে দেখি, বিলু আর তার নচ্ছাড় দোস্ত রবি আয়নার সামনে ঝুঁকে আছে। রবির গলায় বিলুর তাবিজ, সেটা পরে সে ঘুরে ফিরে নিজেকে দেখছে। বিলু আবার তারপর তাবিজ খুলে নিজের গলায় পরে এদিক ওদিক ঘুরে আয়নায় দেখছে নিজেকে।
এদের সমস্যাটা কী? এটা কি ফ্যাশন করার সময়, নাকি ফ্যাশন করার জিনিস? ছেলেরা কেউ তাবিজ পরে ফ্যাশন করে? দেশটার হচ্ছেটা কী?
কলিং বেল বেজে উঠলো আবার, বুবু রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে দরজা খুলে দিচ্ছে, শুনতে পেলাম।
বিলু আয়নায় আমাকে দেখে এগিয়ে এলো, "মামা, একটু তাবিজটা পরে দ্যাখো।"
আমি কটমটিয়ে বিলুর দিকে তাকিয়ে বললাম, "বিলু, বিটলামি করিস না। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে শেখ। তোকে এখন বুবুর সাথে চণ্ডীকদম যেতে হবে। জিনিসপত্র গোছগাছ কর। কুইক। আর এই তাবিজ নিয়ে তামাশা মারবি না রাস্কেল!"
বিলু হাত নেড়ে বললো, "না মামা, বুঝতে পারছো না ... খুবই আজব ব্যাপার ঘটছে, তুমি একটু এই তাবিজটা পরে দ্যাখো।"
বুবু শুনলাম বলছেন, "কেমন আছো জয়া? মা কেমন আছেন?"
পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি বিরাট চশমা পরা জ্ঞানী চেহারার এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে। আমাকে দেখে কাঁচুমাচু হয়ে সে বললো, "হ্যাঁ মাসিমা, মা ভালো আছেন। আপনি কি রান্না করছেন এখন? ... আপনি একটু বিশ্রাম নিন, আমি দেখছি রান্নাঘরে কী কাজ ...।"
বিলু আমাকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে বললো, "জয়া এসে গেছিস? রেডি হ, আমাদের হবিগঞ্জ যেতে হবে।"
জয়া নামের মেয়েটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বুবুর দিকে ফিরে বললো, "এখন? কিন্তু ... আমাকে তো বাসায় বলতে হবে মাসিমা ... ।"
বুবু এগিয়ে এসে কড়া গলায় বললো, "বিলু, আমাদের কিন্তু অনেক ঝামেলা ওখানে। এই বিপদে তোমার বন্ধুদের টেনো না। আমি নিষেধ করছি।"
বিলু মাথা নাড়লো। "মা, ঐ বাড়িতে আমি একবার গিয়েছি। ওখানে আতা কাকা আর পরানদা ছাড়া আর কেউ থাকে না, আমি জানি। তুমি আর আমি ওখানে গিয়ে থাকলে আমরা একজন আরেকজনকে ফ্রিক আউট করবো, এটা তুমিও ভালো করে জানো। আর আমার বন্ধুরা যদি আমার বিপদেই পাশে না থাকে, তাহলে ভালো সময়ে ওদের দরকার নেই আমার। রবি জয়া নাফিসা ওরা সবাই যাবে আমাদের সাথে।"
বুবু একটু বিভ্রান্ত হয়ে আমার দিকে তাকালেন, আমি গলা খাঁকরে বললাম, "বিলু, ব্যাপারটা বোধহয় একটু কনফিডেনশিয়াল ...।"
বিলু আমার দিকে না ফিরেই বললো, "হোক কনফিডেনশিয়াল। আমি ঐ ভুতুড়ে বাড়িতে একা একা মায়ের সাথে থাকতে পারবো না। মা-ও পারবে না একা আমার সাথে থাকতে। উই নিড কম্প্যানি। দরকার হলে তুমিও চলো।"
বুবু হাল ছেড়ে দিয়ে বললো, "আচ্ছা ঠিকাছে, কিন্তু বাদলের যেতে হবে না। ওর মেজাজের ধাত আছে, ওখানে গেলে আতা ভাইয়ের সাথে ওর লেগে যাবে। রবি, জয়া, তোমরা কি যেতে চাও? বাড়িতে জানিয়েছো?"
বিলু জয়ার দিকে ফিরে বললো, "নাফিসা কোথায়?"
জয়া বললো, "নাফিসার সাথে কথা বলা মানা এখন। ওর সামনে পরীক্ষা। ও বাদ। আমি তাহলে বাবার পারমিশন চেয়ে দেখি।"
রবি এসে ফিসফিস করে আমাকে বললো, "ইয়ে, মামা, বিলুর এই তাবিজটার একটা উইয়ার্ড পাওয়ার আছে। এটা পরলে আর ঐ বিশ্রী চামড়াপোড়া গন্ধটা পাওয়া যায় না!"
আমি রবির দিকে ফিরে কটমটিয়ে তাকিয়ে বললাম, "কোন গন্ধ? আমি তো কোনো গন্ধ পাচ্ছি না!"
রবি নাক কুঁচকে বাতাস শুঁকে একটু থতমত খেয়ে বললো, "কিন্তু ছিলো তো! বিশ্রী একটা চামড়াপোড়া গন্ধ ছিলো আন্টির ঘরে! আপনি শুঁকে দ্যাখেননি? ঐ যে মেঝের এক্স মার্কস দ্য স্পটের কাছে ...?"
বুবুর ঘরে একটা বিশ্রী গন্ধ ছিলো, যেটা মাথা ধরিয়ে দেয়, সেটা এখন আর পাচ্ছি না। আমি রবিকে আর পাত্তা না দিয়ে বুবুকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, "কিন্তু বুবু, তুমি কি একা পারবে ওখানে সব ম্যানেজ করতে? আবার নিয়ে যাচ্ছো তিনটা বাচ্চাকে?"
বিলু হেঁড়ে গলায় বললো, "কাম অন মামা! আমরা বাচ্চা নই!"
বুবু রান্নাঘরে ফিরে যেতে যেতে বললেন, "আতা ভাই আছে, সমস্যা হবে না। তোর গাড়িটা আমাদের বাহুবল পর্যন্ত লিফট দিতে পারলেই হবে।"
আমি বললাম, "রফিক তোমাদের সঙ্গেই থাকতে পারে ... কোনো কারণে মুভ করতে হলে গাড়িটা কাজে আসবে।"
বুবু রান্নাঘর থেকে বললো, "না, বাইরের লোক ওখানে গেলে ... সমস্যা করবে। তুই তো জানিস, জায়গাটা ঠিক ... স্বাভাবিক না! আমাদের বাহুবলে নামিয়ে রফিক না কী যেন বললি, ওটাই তো ড্রাইভারের নাম? আমাদের বাহুবলে নামিয়ে ও ফিরে আসুক। আতা ভাই ওখানে রিসিভ করবে আমাদের।"
জয়া নিচু গলায় কথা বলছিলো মোবাইলে, এবার সে রান্নাঘরে গিয়ে বুবুকে বললো, "মাসিমা, বাবা কথা বলবেন আপনার সাথে।"
রবি বিলুকে বললো, "আমার মাথার কাছে কিছু দেখতে পাচ্ছিস না?"
বিলু রবির মাথার ওপর তাকিয়ে বললো, "উঁহু। শুধু আমার মাথার ওপর, তাও আয়নায় দেখি শুধু।"
রবি বললো, "আয় জয়াকে দিয়ে টেস্ট করে দেখি।"
বিলু আমার দিকে ফিরে আবার বললো, "মামা, একটা এক্সপেরিমেন্ট করছি, তুমি একটু পরো না তাবিজটা।"
আমি বিরক্ত হয়ে বুবুর ঘরে ঢুকলাম। ছেলেটা ম্যাচিওর্ড হবে কবে? বাপ মরে পড়ে আছে সেই কোন এক পাহাড়ের জঙ্গলে, সে ইয়ার দোস্ত নিয়ে আড্ডা মারতে যাচ্ছে! কোনো দায়িত্বজ্ঞান আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। বুবু বিলুকে নিয়ে সামনে অনেক সমস্যায় পড়বে, সন্দেহ নেই।
বিলু এবার জয়ার হাত ধরে টানতে টানতে ঘরে ঢুকলো, "কোনো গন্ধ পাচ্ছিস?"
জয়া মেয়েটাকে দেখলেই মনে হয় সে তার স্কুলে ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিলো। চশমার আড়ালে তার চোখ দেখে বোঝা যায়, মেয়েটার মাথায় অনেক বুদ্ধি, রবির মত গর্দভ না। সে নাক টেনে বাতাস শুঁকে বললো, "হ্যাঁ, একটা ফুলের গন্ধ!"
আমি নিজের অজান্তেই বুক ভরে শ্বাস নিলাম। কোনো ফুলের গন্ধ পেলাম না, আর সেই বিটকেলে গন্ধটাও গায়েব।
রবি কুঁইকুঁই করে বললো, "আমি ফুলের গন্ধ পেয়েছিলাম, যখন তাবিজটা পরেছিলাম। ওটা খুললেই সেই বোঁটকা গন্ধটা পাই।"
জয়া বললো, "কোন বোঁটকা গন্ধ?"
রবি বললো, "ছিলো একটা বাজে গন্ধ, এখন আর নেই।"
বিলু আয়নার দিকে ফিরে নিজের গলা থেকে তাবিজটা ধীরে ধীরে খুলে জয়ার গলায় পরিয়ে দিয়ে বললো, "এবার?"
জয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মেয়েটার চেহারায় কোনো ভাবান্তর নেই। "উঁহু! ঐ একই ফুলের গন্ধ।"
বিলু আয়নার দিকে চোখমুখ কুঁচকে তাকিয়ে কী যেন দেখলো, তারপর রবির দিকে ফিরে অবাক গলায় বললো, "নেই! এখন আর নেই!"
রবি ছাগল ছাগল চোখে তাকিয়ে রইলো বিলুর দিকে।
বিলু জয়ার কাছ থেকে তাবিজটা নিয়ে আবার নিজের গলায় পরে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "তুমি কি ফুলের গন্ধ পাচ্ছো মামা?"
আমি মাথা নাড়লাম। বিলুর এই ছেলেমানুষি খেলায় তাল দিতে ইচ্ছা করছে না, তবু বললাম, "আমি কোনো বিশেষ গন্ধ পাচ্ছি না।"
জয়া রবির দিকে তাকিয়ে বললো, "সকালে দাঁত মেজে এসেছিলি?"
রবি চটে গিয়ে বললো, "তুই মামাকে জিজ্ঞেস করে দ্যাখ! সবাই ঐ বাজে গন্ধটা পেয়েছে!"
জয়া আর আমাকে কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো। বুবু রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে মোবাইলটা জয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, "আমরা যাওয়ার সময় তোমাদের বাসা হয়ে যাবো। রেখাদির সাথে কথা হলো, উনি তোমার ব্যাগ গুছিয়ে রাখবেন, শুধু এক দৌড় দিয়ে নিয়ে এলেই হবে। আর রবি ... তোমার মাকে বলেছো, যাচ্ছো যে?"
রবি হুড়োহুড়ি করে নিজের মোবাইল বার করে কল করতে লাগলো। বিলু তার নিজের ঘরে ঢুকে আলমারির দরজা খুলে হাঁটকাচ্ছে, শব্দ পাচ্ছি। জয়া ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে চোখ বুঁজে মোবাইলে বিড়বিড় করে কী যেন বলছে। বিলু হেঁকে জিজ্ঞেস করলো, "রবি, আমি তাহলে কয়েকটা এক্সট্রা প্যান্ট আর গেঞ্জি নিচ্ছি। আমার প্যান্ট তো তোর ফিট হবে, হবে না?"
রবি ঘুরে কী বললো, আমি আর শুনতে পেলাম না, কারণ বুবুর ঘরে দাঁড়িয়ে পরিষ্কার অনুভব করলাম, আমাকে পাশ কাটিয়ে একটা কিছু ঘরে ঢুকে পড়েছে, আর সেইসাথে সেই বিচ্ছিরি, চামড়া আর পশমপোড়া গন্ধটা সেই আগের মতোই মৃদু অথচ চেতনাগ্রাসী মাত্রা নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে।
[তৃতীয় পর্ব সামনে কোনো এক সময় আসবে। নাছোড়বান্দা পাঠক (এবং পাঠিকা) হয়ে সঙ্গে থাকুন।]
মন্তব্য
বাহ! এত জলদি! সুস্থ হয়ে গেছেন?
পেরথম!
চা খেতে খেতে পড়লাম। খুব ভালো লেগেছে। পরের পর্বএর জন্য অপেক্ষায় থাকলাম। 'দাদা' পড়ে মনে হচ্ছিল বড় ভাই, পরে এক সময় মনে হোল বাবার বাবা। বড় ভাই তো বোঝানো হচ্ছে, তাই না?
অসংগতির কথা বললেন যেহেতু, রবিকে দেখে বিলুর মায়ের ডায়ালগে দুই পর্বে সামান্য পার্থক্য আছে।
প্রথম পর্বে কিন্তু বিলুর মায়ের কোনো সংলাপ নেই, বরং বিলুর মা কী বলতে পারেন, সে ব্যাপারে রবির অনুমানের কথা বলা আছে। দুটোর মধ্যে সামান্য পার্থক্য তো থাকবেই।
আসলেই, আমারই ভুল।
নাছোড়বান্দা পাঠক হয়ে গুছিয়ে বসলাম...
ফুশ করে হাওয়াই মেঠাই এর মতো শেষ হয়ে গেলো যে। পরেরটা চাই জলদি
গল্পটার প্লট ফাস্ট পেজে যাচ্ছে , ১ম পর্ব পড়ে একটু হ্যারি পটার থিম পেয়েছি ( রহস্যময় পার্সেল ডেলিভারি ) , জয়ার চশমা পড়া , মামার তাকে বুদ্ধিমতি মনে হওয়া এই সব গল্পে একটা নারড চরিত্র থাকতে হয় জয়া হবে সেই নারড এরকমটাই মনে হচ্ছে ।
গল্পে আপনি“ ক্যাসেল” কথাটার উল্লেখ করেছেন, কিন্তু ইউরোপের পটভূমিতে পাথুরে ক্যাসেল জিনিসটা যতোটা মানানসই লাগে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঠিক ততোটা যায় কি ?
যদিও আমি সচলায়তনের ব্লগার নই তারপরেও আমি আপনার লেখার একজন বড় ভক্ত উপরের কমেনটা লেখার
পর আমার তৎক্ষণাৎ মাথায় আসা ভাবনা,
আপনি খুবই মনোযোগী পাঠক, আপনার চোখে ধূলো দিতে গিয়ে আমার অনেক খাটনি যাবে ... পরের পর্বগুলোতে আপনার প্রশ্নের উত্তর আসবে আশা করি।
তবে আমি গল্পটা অনেকের চোখ দিয়ে দেখাবো। একই জিনিস অনেকের চোখে অনেক রকম, তাই বাদলের কাছে যেটা পোড়ো বাড়ি, সেটা বিলুর কাছে ক্যাসল মনে হতে পারে, বিলুর মায়ের কাছে সেটা খুব ফাঁকা, নিঃসঙ্গতা জাগানো বাড়ি মনে হবে হয়তো, জয়া কিংবা রবির চোখে সেটা হবে একটা ইন্টারেস্টিং জায়গা, আতাহারের চোখে আবার আরেক রকম, এবং আরো যেসব চরিত্র এখনও গল্পে ঢোকার জন্যে ওঁত পেতে আছে, তাদের চোখে আবার অন্য অনেক রকম। তাই ডিটেইলিং, নেরেশন, ডিকশন আর পেইস, সবই ঘন ঘন পাল্টাবে। মোনোটোনিটা এতে কাটবে কিছুটা, আশা করি। সঙ্গে থাকুন ।
এতো তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় পর্ব!
হিমুর অ্যাকাউন্ট হ্যাক হইলো নাকি?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কালকে পড়ে কমেন্ট করি নি, আপনার চা খেয়ে আসতে কত দেরি, সেই আড়ড়ড়জে রহস্যের মত এটাও ঝুলে থাকে নাকি সেই চিন্তা করে। আজকেই দ্বিতীয় পর্ব পেয়ে তাই নজরুল ভাইয়ের মত ভাবছি আসলেও অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলো নাকি।
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
পাবলিক অ্যামন বদ ... চাহিবামাত্র আরেক পিস লিখে পোস্টায় দিলাম তবুও খালি পুরান পাপের হালখাতা টাইনা বাইর করে!
ঠিক! আপনি তাই ৩য় পর্ব দিয়ে পাবলিকের মুখবন্ধ করে দেন!
ইয়ে মানে না, হিমু ভাই আপ্নে কত্ত ভালা। তাত্তাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন। আর তারপর গল্পগুলো ...
___________________
রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি
নাছোড়বান্দা পাঠক হয়ে সঙ্গে আছি।
নাছোড়বান্দা পাঠিকা।
বাদল মামাটা ভোগাবে মনে হচ্ছে, কবচ ছাড়া একা একা ওই রুমে দাঁড়ায় থাকে কোন গর্ধব!
বিলুর মা একটা সুইটহার্ট
গল্প ভালো পেইসে আগাচ্ছে, তবে গল্পটা পুরোটা বলা শেষ হলে এডিট করতে হবে। এখন আপনার মাথা থেকে গল্প নামানোতে আপনি ব্যাস্ত তো, পরে আরো আটোসাঁটো করা যাবে।
পরের পর্ব শিজ্ঞির শিজ্ঞির!!! কোন বিতং করা চলবে না!!! [এই লাইনটা হুংকার হিসেবে বিবেচ্য]
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
যুত করে বসিলাম।
পরের পর্বের অপেক্ষায় ...
জমে উঠেছে। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা থাকল।
--------------------------------------------------------
সব অভিমান আকাশের চেনা চেনা
সবার জন্য সুদিন কি আসবেনা
উত্তর চেয়ে আকাশ পেতেছে কান
আমিও বেধেছি আমার প্রেমের গান
লেখা ভালো লাগতেসে, তবে রহস্য-রোমাঞ্চ-হরর গল্প আসলে ভাগে ভাগে পড়ে পোষায় না, আর তার চেয়েও বড় সমস্যা হইলো পরের পর্ব আসতে আসতে অনেক সময় চরিত্রের নাম-ধাম-পরিচয় মাথার মধ্যে প্যাঁচ লেগে যায়।
তবুও হরর বলে কথা, চলতে থাকুক। তবে একটা আবদার, দয়া করে শেষে ওই জয়া কিংবা অন্য কোন বিজ্ঞানমনস্ক পাকনা পোলাপানরে দিয়া এইটা প্রমাণ করায়েন না যে সবই আসলে ভ্রান্ত ধারমা- বাস্তবের দুনিয়াতে তো বিজ্ঞানের যন্ত্রণায় ভূত-প্রেত-রহস্য বইলা কিছু থাকতেসে না, অন্তত গল্পের দুনিয়াতে রাখেন
অলমিতি বিস্তারেণ
নাহ, এইটা পুরাই প্রেত-পিশাচ-জোকারনায়েকের জগত, বিজ্ঞান এইখানে পর্যাপ্ত ভাত না পেয়ে ফিফি করে কাঁদে।
যাক! চিত্ত ঠাণ্ডা হইলো আশ্বাসে...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আমি ম্যাংগো পাঠক।
আমার চরম লাগিচ্ছে।
হিমু ভাই রকস।
হিমু ভাই বেশী দেরী করলে লেট হয়ে যাবে।কাহিনী ভুইল্লা যাইতে পারি।
অপেক্ষায় থাকলাম।
সালমান খানের মাসল ভালই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গল্প দৌড়াক!
চিন্তা করছি কোন ভাবে "বডিগার্ড"-এর কাহিনী এইগল্পে ইমপোর্ট করা যায়না
বিরতির আগে ৫টা গান, বিরতির পরে আরো ৫টা
হিম্ভাই, ৩য় পর্বের জন্য গান রচনা শুরু করে দেন
২য় পার্টকে যথারীতি
*** আমার ধারনা ধুগো'দা হিম্ভাই-এর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে পোস্ট করছে - হিম্ভাই-এর চা বিরতি এত দ্রুত শেষ হয়ে গেল?
ধারাবাহিকভাবে পড়ে যাচ্ছি। লিখতে থাকুন।
একটু প্রাসঙ্গিক একটা কথা বলতে চাই,কিছুদিন আগে রিমোট ঘোরাতে ঘোরাতে ডিডি বাংলায় একটা গান শুনেছিলাম, "কি ঘোর তমসি নিশা, নয়নে আনিলো মোহ, এ জীবন নিরব নিঝুম, এতো কোলাহলে প্রভূ ভাঙিলো না ঘুম!" গান টা পরে অনেক খুঁজেছি কোথাও পাইনি। আপনি গান করেন/শোনেন বলে জানি। আপনি , কিংবা পাঠককূলের কেউ যদি এই গানটা খুঁজে পান, আর লিংক দিতে পারেন, খুব বাধিত হবো।
আপনার লেখা বহুল পঠিত, তাই ভাবলাম মাথার ভেতরে ক্রমাগত বাজতে থাকা গানের হাত থেকে রেহাই পেতে এই উপায় নেই। আবারো দুঃখিত এরকম একটা লেখার মাঝে অপ্রাসঙ্গিক গান টা টেনে আনার জন্য।
ভালো থাকবেন। সব অসুস্থতা দূর হয়ে যাক!
ধন্যবাদ। গানের ব্যাপারে কোনো সাহায্য করতে পারলাম না, দুঃখিত, অন্য কেউ হয়তো পারবেন।
দোয়াদরুদে এত্তো দ্রুত ভালু হয়া যাবেন বুঝি নাই।
একদিনের মাঝে পরের পর্ব আসলো তাও প্রথমে স্টোরী ধরতে সমস্যা হচ্ছিলো। এধরণের গল্প পড়ার সময় পড়া হয় অতিদ্রুত তাই মনে রাখা সমস্যা। কে হাবিব, কে বাদল ভুলে যাবার আগেই পরের পর্বগুলো লিখুন। এডিটিং পরে করবেন, এখন একটানা লিখে যান।
একটানা লিখতে গেলে কয়েকটা পিশাচ পালতে হবে আগে।
আমারে দত্তক ল।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আজকাল এই ধরনের লেখা আর তেমন একটা দেখিনা। আগে যা'ও কিছু পেতাম সেগুলোর প্রায় সবগুলোই ছিলো অনুবাদ। আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। তাড়াতাড়ি পরের পর্ব ছাড়েন।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
তৃতীয় পর্ব জলদি চাইইইইইই! আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন।
------------------------------------------------------------------
It is impossible to be a mathematician without being a poet in soul.
সুন্দরী লাস্যময়ী ভাম্পায়ার নাই বদ্দা ?? পুরান সিন্দুক ??
এই পর্ব এতো দ্রুত পামু আশা করি নাই বস, পরের্টার জন্যে তাই একেবারে পপকর্ণ নিয়া বসতে যাইতেসি। জলদি আনেন ...
হিম্ভাই,
চামড়ার ট্রাঙ্ক জিনিষটা কি? গ্যালারীতে পপ্পন লইয়া বইলাম। পরের পর্বের অপেক্ষায়...
আমিতো ভাবছিলাম চা খাইতে যাইয়া আর ফেরত আইবেন্না! গল্প ভালই লাগতেছে। তয় সবজান্তা যা বল্লো এইসব হড়ড় গল্প ভাগে ভাগে ভাল্লাগে না
---------------------
আমার ফ্লিকার
তাপ্পর তাপ্পর ?
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
উফফ! বাথরুম শেষ কইরা তাত্তাড়ি আসেন মিয়া! এমন টাইমে কেউ বাথরুমে যায়?
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
বহুত লেইখ্যা লাইছস। এইবার বছর খানেকের লাইগ্যা তোর এই চণ্ডীশিরারে ঘুম পাড়ায়া রাখতে পারোস হাইয়েস্ট রুম অফ দ্য টলেস্ট টাওয়ারে। কোনো দিন কোনো ডানাকাটা পরী আইসা তোরে এইটা শেষ করার তাগিদ দিলে পরে আবার ভাইবা দেখিস।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আপনি এরকম উস্কানীমূলক কথা বললেন কেন?
আপ্নের চা খাওয়া এত দ্রুত হয়ে গেলো? আয় হায়! তারমানে এর পরের পর্ব আর আসবেনানে...
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
জমতেছে...
অপেক্ষায়...
দিনের বেলা ছাড়া পড়তেসি না
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
এইরকম অত্যাচার মানি না মানব না। দৈনিক সকালে একটা আর বিকালে একটা করে নতুন পর্ব চাই, চাই চাই চাই চাই আর নাইলে হিমু ভাই এর ফাঁসি চাই (ওই যে ঠ্যাঙ্গে ফাঁসি দিয়া টাইনা আনা থিওরি, কপি রাইটঃ অনার্য সঙ্গীত)
দারুন আবহ তৈরী হয়ে গেছে, আপনার এই “হড়ড়” উপন্যাস হড়হড় করে আগাক, নইলে জমান্তিস ভাবটা থাকবেনা! চালু!
ও ভাই কি করলেন, এইটা একটা কাম হইল? কই গেলেন? তাড়াতাড়ি আসেন।
চন্ডীশিরা কবে শেষ করবেন? প্লীজ তাড়াতাড়ি দেন, অপার হয়ে বসে আছি
৩য় পর্ব ?
বেচান হয়ে বসে আছি দাদা।। আর কত দেরি?
ও হিমু ভাই ১ মাস ১৩ দিন হইল
উঁহু, কথা ছিল, লেখককে গুঁতোন চলবে না। কাজেই নো মোর কান্নাকাটি !
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আরে ছি ছি আশাদি কি যে বলেন, গুতাইলাম কই, কথার বরখেলাপ হয়ে যাবে না তাতে? খালি একটু মনে টনে করাইয়া দেয়া এই আরকি।
(অটঃ আপনি আর আমি কইষ্যা ঝগড়া করি আসেন, টপিকঃ গুতাইছি নাকি গুতাই নাই )
আরে দূর। আমি ঝগড়া ঝাঁটির পাবলিকই না। কোনকিছু মনমত না হলে দে ধমাধম ধাপুস ধুপুস করে দু চারখানা দিয়ে বা খেয়ে ফিঁচ ফিঁচ করার পক্ষপাতী।
আর এত ভাবছেন কেন, হিম্ভাই ভারী ভালো লোক, পরের পর্ব এই তো দিলেন বলে। ধজ্জি ধরেন। [ চামে মাস্কা লাগায় দিলাম। দেখা যাক কাজ হয় কিনা ]
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
মাস্কায় কাজ না হলে জানায়েন। বলে যাব হিমু খারাপ লোক। একটা না একটায় তো কাজ হবেই! -রু
বাপ্রে আশাদি বলেন কি, অ-নে-ক ছুডু কালে আমার বোনের সাথে যখন মারামারি করতাম আস্তে মারতাম যদি বোনের বেশি ব্যাথা লেগে যায়? আর এই মহৎ চিন্তার বদলে নিজে কিল-খামছি-চুল টানা খাইয়া পুরা ভুত হইয়া যাইতাম । এখন চালাক হয়া গেছি, আর কিলাকিলির মধ্যে নাই। মুখেমুখে যদ্দুর পারা যায় আরকি ।
কিন্তু ঘটনা হইল হিম্ভাইতো এই ব্যাপারে সাড়াশব্দ করতেছে না, খালি পিছলাইয়া যাইতাছে, এদিকে আর এক পোস্টে দেখলাম কইছে চন্ডীশিরা নাকি মিডিয়ার অপপ্রচার, আবার খিয়াল কইরা দেখেন দেড়শ পৃষ্ঠার একটা সাইন্স ফিকশন ই-বুকের ওয়াদা কিন্তু এখনো ডিউ আছে।
আসেন আমরা লেখতে থাকি। লেখক মাঝেমধ্যে আইসা দেইখা যাইবো নে কী লেখতেসি
মিয়াও
ও হিমু ভাই ৮ মাস ৫ দিন হইছে
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
হুমায়ূনের ক্যানসার হাসপাতাল যেদিন চালু হবে, সেদিন আমার চণ্ডীশিরাও বাংলার পিসিতে পিসিতে পাওয়া যাবে রে ভাইডি।
ভাইরে এইটা একটা কথা কইলেন? এই ধরেন ছূডু করে ৩ নাম্বার পর্বটা দিয়ে শুরুই করেন না আবার আস্তে ধীরে, দেখবেন কত শান্তি লাগতেছে। আপনার পিলিজ লাগে হিম্ভাই।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ও হিম্ভাই দুই বছর আঠার দিন হইছে
চা খাওয়া হইলো???
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
হিম্ভাই, আপনে কো????
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
এই জন্যই আমি উপন্যাসের পর্ব টর্ব দেখলে দূরে দূরে থাকি!!!! তারপরও ক্যান যে পড়লাম?!!!
এমন হাত পা বাইন্ধা পায়ের তলায় পাখির পালক দিয়া সুড়সুড়ি দিলে হয়???!!!
সুবোধ অবোধ
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
৩ বৎসর ৮ মাস ৯ দিন
প্রাসঙ্গিক লিংকঃ টিপিবার জন্য নহে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
১। ১৮৩,৬৮৬,৪০০ সেকেন্ড
২। ৩,০৬১,৪৪০ মিনিট
৩। ৫১,০২৪ ঘন্টা
৪। ২১২৬ দিন
৫। ৩০৩ সপ্তা ৫ দিন
৬। ৫ বছর ৯ মাস ২৬ দিন
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
নতুন মন্তব্য করুন