প্রতি বছরই সাক্ষরতা দিবসে পুরনো বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে- বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার আসলে কতো? সাক্ষরতা হারের হিসাব পাওয়া যায় মূলত তিন ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে- সরকারি (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ইত্যাদি), বেসরকারি (ঢাকা আহসানিয়া মিশন, গণসাক্ষরতা অভিযান ইত্যাদি) এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা (ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, ইউনেস্কো, আইএলও ইত্যাদি)। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মাঝে মাঝেই সাক্ষরতার হার নিয়ে জরিপ চালায় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত সেকেন্ডারি তথ্য হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে সাক্ষরতার হার নির্ধারণ করার চেষ্টা চালায়। মজার ব্যাপার হলো, সাক্ষরতার হার নিয়ে সরকারি, বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার ফলাফলের মিল তো পাওয়াই যায় না; বরং একই ধরনের কর্তৃপক্ষের (যেমন- সরকারি) আওতায় একাধিক প্রতিষ্ঠানের ফলাফলের মধ্যেও বেশ বড়সড় পার্থক্য দেখা যায়। সে কারণে এই মুহূর্তে দ্বিধাহীন মনে বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার কতো- এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া মুশকিল। বাংলাদেশ সরকারের আজকের ঘোষণা অনুসারে, বর্তমানে বাংলাদেশের ৫৩ শতাংশ মানুষ সাক্ষর।
সাক্ষরতা হারের বিভ্রান্তির সাথে নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নটির যোগসূত্র আলোচনা করার আগে বর্তমানে সাক্ষরতা বলতে আসলে কী বুঝায় তা নিয়ে কয়েকটি লাইন লেখা যেতে পারে। কারণ অনেককেই ‘‘সাক্ষরতার হার’’ এবং ‘‘শিক্ষিতের হার’’ শব্দগুলোকে গুলিয়ে ফেলতে দেখা যায়। এমনকি শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের অনেকের মধ্যেও এই বিভ্রান্তি দেখা যায়। অন্যদিকে, সাক্ষরতার সংজ্ঞা সময়ে সময়ে পাল্টায়; ফলে এই মুহূর্তে আসলে সাক্ষরতা বলতে কী বোঝানো হয়, সেটিও জানা না থাকতে পারে। প্রকৃতপক্ষে কোনো দেশেই ‘শিক্ষিতের হার’ বা ‘শিক্ষার হার’ নির্ণয় করা হয় না। কারণ শিক্ষা একটি চলমান বিষয় এবং মানুষের শিক্ষা সাক্ষরতার ওপর নির্ভরশীল নয়। শিক্ষার সংজ্ঞা নির্ধারিত হয় কনটেক্সট বা প্রেক্ষাপট-ভিত্তিক এবং একজন নিরক্ষর মানুষ একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে যথাযোগ্য শিক্ষিত হতে পারেন। সাক্ষরতার সাথে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার একটি যোগসূত্র অবশ্যই রয়েছে, তবে এই যোগসূত্রটি সবসময় কার্যকর নাও হতে পারে।
অপরদিকে সাক্ষরতার যে সংজ্ঞা, সেটি একসময় প্রেক্ষাপট-নির্ভর থাকলেও বর্তমানে অধিকাংশ দেশই ইউনেস্কো-প্রদত্ত সাক্ষরতার সংজ্ঞা ব্যবহার করে থাকে। সাক্ষরতার ক্ষেত্রে এটি একটি ন্যূনতম সংজ্ঞা এবং অনেক উন্নত দেশ এর চেয়েও কঠিন সংজ্ঞায় নিজ দেশের সাক্ষরতাকে চিহ্নিত করতে পারে। দেশে দেশে সাক্ষরতার সংজ্ঞা অনেক আগে থেকে প্রচলিত থাকলেও ১৯৬৭ সালে ইউনেস্কো প্রথম সাক্ষরতার সংজ্ঞা চিহ্নিত করে এবং পরবর্তী সময়ে প্রতি দশকেই এই সংজ্ঞার রূপ পাল্টেছে। একসময় কেউ নাম লিখতে পারলেই তাকে সাক্ষর বলা হতো, কিন্তু বর্তমানে সাক্ষর হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য অন্তত তিনটি শর্ত মানতে হয়- ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে, সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে এবং দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ হিসাব-নিকাশ করতে পারবে। এই প্রত্যেকটি কাজই হবে ব্যক্তির প্রাত্যহিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত। সারা বিশ্বে বর্তমানে এই সংজ্ঞাকেই ভিত্তি করে সাক্ষরতার হিসাবনিকাশ করা হয়। ১৯৯৩ সালে ইউনেস্কো এই সংজ্ঞাটি নির্ধারণ করে; তবে বর্তমানে এটিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। অনেক আন্তর্জাতিক ফোরাম বা কনফারেন্স থেকে সাক্ষরতার সংজ্ঞা নতুনভাবে নির্ধারণের কথা বলা হচ্ছে যেখানে সাক্ষরতা সরাসরি ব্যক্তির জীবনমাত্রা পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত হবে।
এখানে বলে রাখা দরকার, সরকার কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান কিন্তু প্রতি বছরই জরিপ চালিয়ে সাক্ষরতার হার নির্ধারণ করে না। সাধারণত আদমশুমারির সময় যে তথ্য নেওয়া হয়, তার ওপর ভিত্তি করে দেশের সাক্ষরতার হার নির্ধারণ করা হয় এবং প্রতি বছর কী হারে মানুষ সাক্ষর হতে পারে, সেই ধারণার (হিসাবনিকাশের ভিত্তিতে) ওপর পরবর্তী বছরগুলোর সাক্ষরতার হার নির্ধারণ করা হয়। যেহেতু আদমশুমারিতে তুলনামূলকভাবে অধিকাংশ মানুষের তথ্য আনা যায়, তাই সাক্ষরতা হার জানার ক্ষেত্রে এই তথ্যকে ব্যাপকভাবে নির্ভরযোগ্য বলে ধরা হয়। তবে কোনো নির্দিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে মাঝে মাঝে প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ চালিয়ে থাকে, এবং সরকারের হিসাবনিকাশের সাথে ওই জরিপের সামঞ্জস্য থাকলে সরকার সেই সেই তথ্যকেও গ্রহণ করতে পারে। বাংলাদেশের সাক্ষরতা-বিষয়ক অনেক কর্মকাণ্ডই ২০০১ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুসারে করা হয়েছিল। ২০১১ সালে যে আদমশুমারি হয়েছে, সেটির তথ্য পেতে হয়তো আরো কিছুটা দেরি হবে; এবং এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সাক্ষরতা আসলেই ৫৩ শতাংশ কিনা তাও আদমশুমারির তথ্য আসলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আরেকটি মজার ব্যাপার হলো, প্রচলিত যে পদ্ধতিতে সাক্ষরতার হার নির্ধারণ করা হয়, সেটিকে অনেকেই যথাযথ পদ্ধতি বলে মনে করেন না। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে সাক্ষরতার হার নির্ধারণ করা হয় ব্যক্তিপ্রদত্ত-মূল্যায়নের (Self-reported) ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু গবেষণা থেকে দেখা গেছে, এই পদ্ধতিতে সাক্ষরতার হার নির্ধারণে ঝুঁকির পরিমাণ বেশ বেশি। অপরদিকে নির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে সাক্ষরতার হার নির্ধারণ করলে তখন তা অনেক নিচে নেমে যায়। ১৯৮৫ সালে লেসোথোতে ব্যক্তিপ্রদত্ত-মূল্যায়ন অনুসারে সাক্ষরতার হার ছিল ৬০%-৯০% (একাধিক সংস্থার একাধিক হিসাব), কিন্তু যখনই সাক্ষরতার সংজ্ঞা অনুসারে ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হলো তখন সেটি নেমে এসেছিল ৪৬ শতাংশে। ২০০৪ সালে ভুটানে সাক্ষরতার হার ছিল ৫০ শতাংশেরও বেশি এবং লাওসে ছিল ৫৫ শতাংশ। পরীক্ষার পর দেখা গেছে, ভূটানে সে বছর প্রকৃত সাক্ষরতা ছিল ৩৮ শতাংশ এবং লাওসে ২৭ শতাংশ। এডুকেশন ওয়াচ-এর ২০০২ সালের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে সে বছর সাক্ষরতার পরিমাণ ছিল ৪৭ শতাংশ (পুরুষ ৫০.৪ শতাংশ ও নারী ৪৩.৯ শতাংশ) যা পরীক্ষার পর ৪১.৪ শতাংশে (পুরুষ ৪৭.৬ শতাংশ ও নারী ৩৫.৬ শতাংশ অর্থাৎ মোট পার্থক্য ৫.৬ শতাংশ) নেমে আসে। পার্থক্যটি পুরুষদের (পার্থক্য ২.৮ শতাংশ) তুলনায় নারীদের (পার্থক্য ৮.৩ শতাংশ) মধ্যে বেশি দেখা গেছে। এই পার্থক্য বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় (৬.১ শতাংশ) শহরের (৩.০ শতাংশ) চেয়ে বেশি দেখা গেছে। ব্যক্তিপ্রদত্ত-উমূল্যায়ন এবং পরীক্ষার (Self-reported vs. tested literacy) এই পার্থক্যের কারণে বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার যেটি দাবি করা হচ্ছে, সত্যিকার অর্থে সেই পরিমাণ সাক্ষর মানুষ আছে কিনা তা নিয়েও চাইলেই প্রশ্ন তোলা যায়।
বিষয়টি হয়তো শুনতে অবাক লাগবে, কিন্তু দুঃখজনক তথ্য হলো, এডুকেশন ওয়াচের একই জরিপ থেকে দেখা গেছে, যারা প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেছে কিন্তু পরবর্তীতে কোনো কারণে মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হতে পারে নি, তাদের ৩৫.৬% মানুষ পরবর্তী সময়ে সাক্ষরতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে নি। অর্থাৎ তারা অসাক্ষর। এখন একজন পঞ্চম শ্রেণী পাশ একজনকে সাক্ষর কিনা জিজ্ঞাসা করলে সহজেই উত্তর আসবে যে তিনি সাক্ষর; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি নিরক্ষরও হতে পারেন। দেখা গেছে, যাদের অন্ততপক্ষে ৬-৭ বছর বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদের ৮০ শতাংশ একটি নির্দিষ্ট সময় পর তাদের সাক্ষরতার অবস্থা ধরে রাখতে সক্ষম। এই লেখার শুরুতে শিক্ষার সাথে সাক্ষরতার সম্পর্ক যে নাও থাকতে পারে, এই তথ্য সেটি প্রমাণ করে দেয়। প্রশ্ন হলো, যেখানে পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণী পাশ করা একজন ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট সময় পর পড়ালেখা পুরোপুরি ভুলে যাচ্ছে, সেখানে সাক্ষরতার যে হার সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, সেটির নির্ভরযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা কতোটুকু?
এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আগে দেখে নেয় যাক বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার আসলেই ৫৩ শতাংশ কিনা? আজ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের আলোচনা বা প্রকাশনায় বাংলাদেশের সাক্ষরতা নিয়ে সরকারিভাবেই তিন ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রথমত, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. আফছারুল আমীন এক বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের বর্তমান সাক্ষরতার হার ৫৮ শতাংশ। কীসের ভিত্তিতে তিনি এ দাবি করছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি গত বছরের শিশু জরিপের কথা উল্লেখ করেন, অথচ শিশু জরিপ থেকে এই তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর (DPE) মহাপরিচালক মো. আলমগীর বলেছেন বাংলাদেশের ৫৩ শতাংশ মানুষ সাক্ষর এবং এই সংখ্যাটি আজকের সাক্ষরতা দিবসের ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তৃতীয়ত, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আবদুল আওয়াল মজুমদার জানিয়েছেন দেশের সাক্ষরতার হার ৫৪ শতাংশ। লক্ষ্য করেন দেখুন, একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সচিব দুই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, কোন তথ্যটি আমরা বিশ্বাস করবো? আলোচনার খাতিরে এই লেখায় ৫৩ শতাংশকে সাক্ষরতার হার ধরে নেয়া হয়েছে।
তবে সাক্ষরতা নিয়ে তথ্যের বিভ্রান্তি কোন পর্যায়ে আছে তা আরো কয়েকটি উদাহরণ দিলে আরো পরিষ্কার হবে। ২০০৩ সালে প্রকাশিত দুটো রিপোর্টে বাংলাদেশের সাক্ষরতা সম্পর্কে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সিপিইআইএম (Compulsory Primary Education Implementation and Monitoring) সে বছর জানিয়েছিল দেশের সাক্ষরতার হার ৫৪.৮ শতাংশ। তার মানে দাড়াচ্ছে, ২০০৩ সালের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার কমে গেছে। আবার একই বছরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো তাদের হিসাবনিকাশ থেকে জানিয়েছিলো, দেশের সাক্ষরতার হার ৪৭.৫ শতাংশ। দুটো সরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে একই বছরে সাক্ষরতার হারের পার্থক্য হলো ৭ শতাংশেরও বেশি।
চলুন আরো কয়েকটি হিসাব দেখি। ইউনেস্কোর হিসাব অনুসারে দেশে বয়স্ক সাক্ষরতার হার (বয়স্ক সাক্ষরতা বলে ১৫ বছরের বেশি জনগণকে ধরা হয়) ৪১ শতাংশ (পুরুষ ৫০ শতাংশ, নারী ৪১ শতাংশ)। একই হিসাব ইউনিসেফের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ৫৫ শতাংশ; যার সাথে হিউম্যান ডেভলপমেন্ট ইনডেস্কের তথ্যের মিল রয়েছে তবে সেখানে ৭+ থেকে ১৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা অন্তর্ভুক্ত নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০০৮ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে সাক্ষরতার হার ৪৮.৮%। আর বেশি তথ্য না দিই- কিন্তু এ থেকে নিশ্চয়ই বুঝা যাচ্ছে সাক্ষরতার হার ৪১ থেকে একেবারে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত কীভাবে উঠানামা করছে?
তবে এটাও ভালো, যখন মনে হবে দেশে একসময় সাক্ষরতার হার প্রায় ৬৪% বলে দাবি করা হয়েছিল। আজ থেকে বছর পাঁচেক আগেও দেশে সাক্ষরতার হার নিদেনপক্ষে ৬০ শতাংশেরও বেশি বলে দাবি করা হতো, যদিও এই দাবির পক্ষে কোনো ধরনের কাগজপত্র পাওয়া যায় নি। প্রতিটা বছর যেত, আর এক-দুই শতাংশ করে সাক্ষর জনসংখ্যা বেড়ে যেত, কোনো ধরনের উদ্যোগ না থাকা সত্ত্বেও।
সাক্ষরতার হার এবং সাক্ষর-অবস্থা নির্ণয়ের এই বিভ্রান্তির মধ্যে আরেকটি আলোচনা বেশ জোরেশোরেই শোনা যায় যে, দেশকে ২০১৪ সালের মধ্যে নিরক্ষরতামুক্ত করা হবে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যে কয়টি কাজ করার কথা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করেছিল, দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করা তার মধ্যে একটি। সরকারের এই ঘোষণার পর স্বাভাবিকভাবেই এসব কাজের সাথে যারা জড়িত, তারা এটিকে সরকারের উচ্চাভিলাষী ঘোষণা বলেই ধরে নিয়েছিলেন (ব্যক্তিগতভাবে আমি এটিকে অসম্ভব বলে মনে করেছিলাম এবং এখনো মনে করছি)। বেশ কিছু লেখালেখিও হয়েছিল পত্রপত্রিকায়। তখন সরকারের অনেক মন্ত্রী বলেছিলেন, দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করার জন্য তাঁরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঠে নামাবেন। দেশে ছাত্রলীগের কর্মীসংখ্যা কতো তা জানা নেই, তবে সবাইকে কাজে লাগালেও ২০১৪ সালের মধ্যে এই অর্জন সম্ভব ছিল কিনা তা তলিয়ে দেখা যেতে পারে। সরকার যদি ধরেও নেয় যে, দেশের সাক্ষরতার হার সে সময় ৬৫ শতাংশ ছিল, তাহলে বর্তমান সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদে বাকি ৩৫ শতাংশকে সাক্ষর করতে হলে প্রতি বছর সাত শতাংশ হারে মানুষকে সাক্ষর করতে হতো।
প্রতি বছর কি সাত শতাংশ হারে মানুষকে সাক্ষর করা সম্ভব? ইতিহাস কী বলে? ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশে সরকারি ঘোষণা অনুসারে সাক্ষরতার হার ছিল ৩৫.৩ শতাংশ। ২০১১ সালে এসে সরকারিভাবে সাক্ষরতার হার দাবি করা হচ্ছে ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ এই ১৬ বছরে প্রতি বছর সাক্ষরতার হার বেড়েছে ১.১ শতাংশ হারে। সরকার যদি সাক্ষরতার হার বাড়াতে সমস্ত উদ্যম নিয়েও ঝাপিয়ে পড়ে তাহলেও কি সেটি তিন শতাংশের বেশি বাড়ানো সম্ভব? এখানেও তথ্যউপাত্তের আশ্রয় নিই। অনেকের হয়তো বছর দশেক আগেকার সার্বিক সাক্ষরতা আন্দোলনের (Total Literacy Movement) কথা মনে আছে। সেই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যে ছিল জেলাভিত্তিক সাক্ষরতা কর্মসূচি চালানো এবং একের পর এক জেলাকে নিরক্ষরতামুক্ত বলে ঘোষণা করা। সে সময় বেশ কয়েকটি উপজেলাকে নিরক্ষরতামুক্ত বলে ঘোষণাও করা হয়েছিল। গবেষণা থেকে দেখা গেছে, এই সার্বিক সাক্ষরতা আন্দোলন থেকে তিন বছরের বেশি সময় ধরে মাত্র ৩.৫ শতাংশ (অর্থাৎ বছর প্রতি এক শতাংশের কিছু বেশি) মানুষকে নিরক্ষরতামুক্ত করা গেছে। অপরদিকে যারা এই আন্দোলনের ফলে সাক্ষর হয়েছিলেন তাদের মাত্র ১.৩ শতাংশ মানুষ পরবর্তী সময়ে তাদের সেই সাক্ষরতা ধরে রাখতে পেরেছেন। সার্বিক সাক্ষরতা আন্দোলনের নামে সে সময় কী ধরনের কাজ করা হয়েছিল এবং কীভাবে সাক্ষরতার হার বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে, সেই ইতিহাস সম্ভবত সবার জানা- ফলে সেই আলোচনার দরকার নেই। অথচ এটি ছিল একটি বিরাট বাজেটের কর্মসূচি। এই বিরাট বাজেটের কর্মসূচির অবস্থা শেষ পর্যন্ত এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, সরকার বাধ্য হয়েছিল মাঝপথে কর্মসূচিটি বন্ধ করে দিতে।
এখন, এই অবস্থায়, ২০১৪ সালের মধ্যে দেশকে কীভাবে নিরক্ষরতামুক্ত করা সম্ভব? ২০১১ সাল শেষের পথে। বাকি থাকছে তিনটি বছর। সরকারি হিসাব অনুসারে দেশের ৪৭ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। বর্তমান সরকার তার মেয়াদের মধ্যে সবাইকে সাক্ষর করতে চাইলে প্রতি বছর প্রায় ১৬ শতাংশেরও বেশি মানুষকে সাক্ষর করতে হবে এবং সেই সাক্ষরতা অবশ্যই টেকসই হতে হবে- কারণ সাক্ষর হয়ে আবার নিরক্ষর হয়ে গেলে সরকারের নিরক্ষরতামুক্ত দেশ গড়ার কর্মসূচি তো প্রশ্নের মুখে পড়বে। এ অবস্থায় সরকারের কীভাবে এ সময়ের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করবে, তার হিসাব বের করা আমার বুদ্ধিতে কুলোয় না। সরকারের কোনো কর্মসূচি বা ঘোষণা থেকেও এ সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে কিছু বলা হচ্ছে না।
দেশকে সত্যিকার অর্থেই নিরক্ষরতামুক্ত করার দরকার আছে কিনা (এ প্রসঙ্গে ভিন্ন একটি লেখা তৈরি করার কথা ভাবছি), সে প্রশ্নও আছে। আমরা অবশ্যই চাই দেশ নিরক্ষরতার অপবাদ যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ঝেড়ে ফেলুক, কিন্তু ২০২৫ সালের আগে নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখার বাস্তবতা আছে কিনা, সে বিষয়ে আমি সন্দিহান।
(ডিসক্লেইমার: এই লেখাটি তৈরি করতে বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে। লেখায় তথ্যসূত্রের লিংক দিতে প্রচুর সময়ের দরকার হয় এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে আলসে ধরনের মানুষ বলে এই মুহূর্তে লিংক দেয়ার কাজটি করতে আলস্যবোধ করছি। তাছাড়া সব তথ্যসূত্রের লিংক নেইও আমার কাছে, ছাপানো বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে তথ্য নিতে হয়েছে। তবে পরে কোনো একসময় ওয়েবে পাওয়া যায় এমন সূত্রগুলোর লিংক জুড়ে দিব।)
পোস্ট উৎসর্গ: নজমুল আলবাব।
একইসাথে ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশিত।
মন্তব্য
খুব ভাল লাগলো লেখাটা। অনেক ইনফরমেটিভ।
সাক্ষরতার সংজ্ঞায় আরেকটি জিনিস যোগ করলে মনে হয় ভাল হত। মানে আমি যত দূর জানি আর কি। পড়তে পারবে এবং পড়ে সেটার অর্থ বুঝতে পারবে। (আরবি তো ভাই আমিও পড়তে পারি, অর্থ কি আর বুঝি?)
আপনি বলেছেন, একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে একজন ৫ম বা ৬ষ্ঠ শ্রেণী পাস ব্যক্তি পড়ালেখা ভুলে যায়। আমি বলব, নির্দিষ্ট সময় পরে না। প্রাথমিক শিক্ষার যে ৫০টি প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জনের কথা বলা হয়েছে, (সে যোগ্যতাগুলো অর্জন হলে আমরা বলতে পারবো ওর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে) এগুলো অর্জিতই হয় না। নির্দিষ্ট সময় পরে তো, দূরের কথা।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------
টাইম আউট
১. ধন্যবাদ রাজকন্যা।
২. বুঝাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেটা পরিমাপ করা হয় না। পরিমাপ করার সময় দেখা হয়- যে বাক্য দেয়া হয় ব্যক্তি সেটি পড়তে পারছে কিনা, লিখতে পারছে কিনা। তবে দিন দিন সাক্ষরতার সংজ্ঞার ডাইমেনশন বদলাচ্ছে। আশা করা যায় এই দশকের মধ্যেই এই সংজ্ঞা আবার বদলাবে।
৩. পড়ালেখার অর্থ ব্যাপক; আমি এখানে যেটা বলতে চাচ্ছি- একটা নির্দিষ্ট সময় পর পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণী পাশ অনেক ব্যক্তি পড়তে বা লিখতে লিখতে ভুলে যায়। প্রান্তিক যোগ্যতা অন্য বিষয়, সেটার সাথে এই বক্তব্যের কোনো যোগাযোগ নেই।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
হ্যাঁ, ঠিকই আছে, পড়তে পারবে। এবং পড়ার পরে সেটা বুঝতে পারাটাও যোগ্যতা। যেমন, ব্যক্তি প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে কিছু পড়লো। পড়ার পরে, সেটার তথ্যগুলো কী ছিল তা অনুধাবন পারবে। এই রকম আর কি! আর লেখার ব্যাপারে, নিজের মনের ভাবটা প্রকাশ করতে পারছে কিনা সেটাও বিবেচ্য বিষয়।
কথা সত্য।
আপনি বলতে চাচ্ছেন
।
আর আমি বলতে চাইছিলাম, আগে তো যোগ্যতাগুলো অর্জিত হবে, তারপরে না ভুলে যাওয়ার কথা! এজন্যই প্রান্তিক যোগ্যতার প্রসংগটা আমি আনলাম।
আবারও ধন্যবাদ আপনার সুন্দর লেখার জন্য।
প্রান্তিক যোগ্যতা নিয়ে আরেকটি লেখা তৈরি করার প্ল্যান করছি। এনসিটিবির এই প্রান্তিক যোগ্যতা নিয়ে কিছু কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু অবজার্ভেশন আছে। সময় পাই কি না দেখি।
আপনিও একটা লিখুন না এই বিষয়ে!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
না, ভাই। প্রান্তিক যোগ্যতা নিয়ে লেখার মত যোগ্যতা আছে বলে আমার মনে হয় না। আপনি লিখুন। আপনার লেখা থেকে যদি কিছু শিখতে পারি।
যিনি চিন্তা করেন, তিনি লিখতেও পারেন। শিক্ষা বিষয়ে আপনি যে চিন্তাভাবনা করেন, তা তো ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। সুতরাং লিখুন।
আর শেষ কথাটি কেন বললেন জানি না, তবে আমার লেখা থেকে কিছু শিখতে পারলে সেটা হবে দুর্ভাগ্যজনক।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
অনেক দিন পর লিখলেন। সময়াভাবে পুরোটা পড়তে পারি নাই। পড়া শেষ করে মন্তব্য করবো।
প্লিজ, গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনা চাই।
আর লেখাটা একটু বড়ই হয়ে গেল!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ধন্যবাদ গৌতম, বহুদিন পর আপনাকে সচলের পাতায় সক্রিয় দেখা গেলো !
আমার কাছে মনে হয় এই প্রদর্শিত সাক্ষরতার হারটা কেবল প্রদর্শনই ! বাস্তবে অনেক কম। কেননা ওই যে ভুলে যাওয়া সাক্ষরজ্ঞানের বিষয়টা বললেন, এই প্রদর্শিত তথ্যে কখনো ভুলে যাওয়ার বিষয়টাকে মনে হয় স্বীকার করা হয় না। তাই এই তথ্য কোন নীট ফলাফল নয়, বরং এটাকে 'এ পর্যন্ত' তথ্য হিসেবেই ধরে নেয়া যায়, তাও যদি এটাও সঠিক তথ্য হয়ে থাকে। যদিও এ তথ্যের স্বচ্ছতা নিয়েও আমি সন্দিহান !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণদা, বাস্তবের অবস্থা প্রদর্শনের চেয়ে কম করে হলেও ১০ শতাংশ কম। ...কিছু কিছু ক্ষেত্রে তথ্যের ব্যাপারে নিঃসন্দেহ থাকতে পারেন; বিশেষ যেখানে পরীক্ষা করে সাক্ষরতা মাপা হয়েছে, সেই তথ্যগুলো ভ্যালিড। এরকম কিছু উদ্যোগের সাথে আমি নিজেও সম্পৃক্ত ছিলাম।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
চমৎকার এই লেখাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই সমস্ত উপাত্তের অন্যান্য ফ্যাক্টরগুলো প্রকাশিত হয়না কেনো কে জানে। সাক্ষরতার সংজ্ঞা নিয়ে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু সেটা উল্ল্যেখ করতে হবে রিপোর্টের সাথে। রিপোর্টের সাথে থাকা চাই:
১। সারক্ষতার কোন সংজ্ঞা ব্যবহার করা হয়েছে এবং এই সংজ্ঞা কারা প্রস্তুত করেছে।
২। নিরূপন পদ্ধতি কি? Self reported নাকি tested
৩। স্যম্পল সাইজ কত? বায়াস সরাত কি করা হয়েছে? যেমন ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলাকার সাক্ষরতা দেখা যাবে ৯০%। সেটা নিশ্চয়ই পুরো দেশের সাক্ষরতা নির্দেশ করে না! পুরো দেশের সাক্ষরতা যাচাই করতে গেলে প্রচুর খরচ হয়ে যাবে।
৪। এই উপাত্তের এরর লিমিট কত? ডিস্ট্রিবউশন কিরকম?
অবশ্য আমার কাছে মনে হয়েছে সাক্ষরতা নির্ধারন একটা গো-নো গো গেজের মতো এক মাত্রার চলক। আসলে দেখা দরকার ওভারঅল এজ্যুকেশন কিরকম। এটা করা যেতে পারে কত বছর ধরে একজন পড়াশোনা করছে সেটা প্লট করে। দেখা যাবে এটা নরমালি ডিস্ট্রিবিউটেড।
হয়ত বিভিন্ন দেশের শিক্ষিতদের ডিস্ট্রিবিউশনগুলো তুলনা করলে দেখা যাবে ডিস্ট্রিবিউশনগুলো স্কিউড বা বাঁকা।
অনুন্নত দেশের ডিস্ট্রিবিউশনগুলো দেখা যাবে পজিটিভলি স্কিউড। অর্থাৎ অল্প শিক্ষিতের পরিমান বেশী। সেখানে উচ্চ শিক্ষিতদের ডিমান্ড বেশী।
আবার অতি উন্নত দেশের ডিস্ট্রিবিউশনগুলোতে দেখা যাবে নেগেটিভলি স্কিউড। অর্থাৎ সেখানে উচ্চ শিক্ষতদের পরিমান বেশী এবং ডিমান্ড কম।
যে দেশে নরমাল ডিস্ট্রিবিউশন স্বাভাবিক সে দেশে যতটুকু উচ্চশিক্ষিত দরকার ততটুকুই বিদ্যমান।
জানিনা বোঝাতে পারলাম কিনা।
১. চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ মুর্শেদ ভাই।
২. আসলে এই লেখাটিতে অনেক তথ্য-উপাত্ত-সূত্র ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিয়েছি- লেখাটি সহজ করার লক্ষ্যে। যে তথ্য যে রিপোর্ট থেকে নিয়েছি, সেই রিপোর্টগুলোতে কিন্তু অন্যান্য অনেক ফ্যাক্টরও উল্লেখ করা রয়েছে। অধিকাংশ রিপোর্টই ইউনেস্কো, গণসাক্ষরতা অভিযান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ব্যানবেইজের ওয়েব সাইটে পাওয়া যাবে। কিছু কিছু রিপোর্ট ওয়েবে পাওয়া যাবে না; আবার কিছু কিছু রিপোর্ট জার্নাল থেকে নেওয়া (যেগুলো গ্রাহক না হলে অ্যাকসেস করা যাবে না)।
৩. অধিকাংশ দেশই ইউনেস্কোর সাক্ষরতার সংজ্ঞা ব্যবহার করে, তবে কোনো দেশ চাইলে কিছুটা ভিন্নভাবেও সাক্ষরতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে পারে। বাংলাদেশ মূলত ইউনেস্কোর সাক্ষরতার সংজ্ঞা ব্যবহার করে। সাক্ষরতা নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে এই লিংকটি (http://www.unesco.org/education/GMR2006/full/chapt6_eng.pdf) দেখতে পারেন। আর কোন রিপোর্টে কোন সংজ্ঞা ব্যবহার করা হয়েছে, তাও রিপোর্টগুলোতে দেওয়া আছে।
৪. মূল লেখাতেই বলেছি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই Self-reported পদ্ধতি সাক্ষরতা নির্ধারণ করা হয়। Tested পদ্ধতি ব্যয়বহুল বলে এটি শুধু Self-reported-এর সঠিকতা নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সবগুলো জরিপে Self-reported পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, কেবল গণসাক্ষরতা অভিযানের একটি গবেষণায় Tested পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।
৫. স্যাম্পল সাইজ একেক রিপোর্টের জন্য একেক রকম। তবে প্রত্যেকটিতেই পরিসংখ্যানের নিয়ম মেনে স্যাম্পল সাইজ নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যখন জরিপ করে, তখন প্রতিটি জেলাকেই আলাদা আলাদা ক্লাস্টার বিবেচনা করা হয়- তার মানে প্রতিটি জেলার জন্যই আলাদা করে স্যাম্পল সাইজ নির্ধারণ করা হয়। গণসাক্ষরতা অভিযানের গবেষণায় গ্রামীণ ঢাকা, গ্রামীণ চট্টগ্রাম, গ্রামীণ রাজশাহী, গ্রামীণ সিলেট, গ্রামীণ খুলনা, গ্রামীণ বরিশাল, পৌর এলাকা এবং মিউনিসিপালিটিজ- এই ভাগগুলো ছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই যথাযথ পদ্ধতি অবলম্বন করে জরিপ করা হয়েছে। গণসাক্ষরতা অভিযানের জরিপে সম্ভবত ৪৬০০০-এর বেশি মানুষের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। সুতরাং জরিপের ফলাফলকে পুরো দেশের ফলাফল হিসেবেই দেখতে পারেন।
৬. আমি যতোগুলো রিপোর্ট দেখেছি, সেখানে এররের মাত্রা ছিল ৫%-১০%। ডিস্ট্রিবিশন কীরকম বলতে নির্দিষ্টভাবে কী বুঝাচ্ছেন বুঝতে পারি নি।
৭. শিক্ষিতের হার বলে কোনোকিছু সম্ভবত কোনো দেশে নির্ধারণ করা হয় না। আপনি এখানে নরম্যাল-পজিটিভ-নেগেটিভ ডিস্ট্রিবিউশন দিয়ে যা বুঝাতে চাচ্ছেন, সেটি সম্ভবত স্কুলিং এক্সপেরিয়েন্স। অর্থাৎ দেশের মানুষজন গড়ে কতো বছর স্কুলে গিয়েছে? যদি তাই হয়, তাহলে সেই তথ্যও আছে আমার কাছে এবং সেটা বিভাগভিত্তিক। খুঁজে দেখতে হবে।
৬.
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
আমার মতো একটা গণ্ডমূর্খরে আপনে শিক্ষা বিষয়ক পোস্ট উৎসর্গ করলেন??? আমার ভয়ানক লজ্জা লাগছে। সম্মানিত বোধ করছি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। লেখাটা অনেকদিন পরে নজরে আসলো বলে লজ্জিত। ক্ষমা করবেন।
স্বাক্ষরতার হার যেটা সরকার বলে সেটা পুরাটাই মিথ্যা। জরিপটা করে কখন? এখন পর্যন্ত আমার বাড়িতে কোন জরিপ টিমরে দেখিনি। যথেষ্ঠ উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার পাশে থেকেও যদি তেনাদের দর্শন না পাই তাহলে তেনারা প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে তথ্য জোগাড় করছেন এটা কেমনে বিশ্বাস করি?
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আপনার বাড়িতে কোনো জরিপ টিম দেখেন নি বলে জরিপ হয় না বিষয়টা কিন্তু তা না। জরিপ টিমের নিজস্ব পদ্ধতি থাকে, মেকানিজম থাকে- সেই হিসেবে আপনার বাড়ি নাও পড়তে পারে। এখানে উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা মুখ্য না। ইনফ্যাক্ট, এরকমই একটা কাজের পর আপনার সাথে দেখা হয়েছিল সিলেটে। আমি তখন হাওর এলাকা থেকে ঘুরে আসছিলাম।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
দেখলেনতো আমি কিরাম গাধা। এই সহজ বিষয়টাও বুঝি না।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আপনি আমার কাছে পেরাইভেট পড়েন। নিকোবিনার সাতকড়ার আচার হাদিয়া দিবেন।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
নতুন মন্তব্য করুন