স্মৃতিকাতরতা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১২/০৯/২০১১ - ৯:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দেশে থাকতে অনেক কিছু নিয়েই যথেষ্ট বিরক্ত ছিলাম। লোড শেডিং, জানযট, ঘিঞ্জি পরিবেশ, আর কত কিছু নিয়েই ক্ষোভ ছিল। অফিসে যাওয়ার সময় যখন ঘন্টার পর ঘন্টা জনাকীর্ণ বাসে দাড়িয়ে (কদাচিৎ বসে) মানুষের ঠেলাঠেলিতে অসহ্য গরমে ঘামাতাম, তখন মনে হত ঢাকা শহরে কেন আছি? কেন এ শহরের অস্বাভাবিক কষ্টের জীবন ছেড়ে দূরের কোন গ্রামে চলে যায় না?

কিন্তু পরক্ষণেই বাস্তবতা আমার ভাবনাকে উড়িয়ে দিত। ঢাকার বাইরে গেলে খাব কী? একারনে এবং আর কিছু উদ্দেশ্যে সবসময় দেশের বাইরে আসার একটা চিন্তা ছিল। এবং চলেও আসলাম। আজ প্রায় দুই মাস ধরে আমেরিকায় বসবাস করছি। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছি আর মাসে মাসে কিছু টাকা পাচ্ছি যা দিয়ে দিব্যি চলে যাচ্ছে। এখানে আসার পর প্রথম প্রথম খাবার খেয়ে রীতিমত ভয় পেয়েছিলাম। খাবারে কোন মসলা নেই, আধাসেদ্ধ- এগুলো মানুষ খায়! সিনিয়র ভাইয়া আর আপুরা বলত এত বাছলে হবেনা, একসময় এগুলিই খেতে হবে। যাই হোক, আমার চিন্তা ছিল রান্না করেই খাব। এখন পর্যন্ত জেদ টিকে আছে- রান্না করেই খায়। এখানে সবকিছুই নিজেকে করতে হয়- বাজার, রান্না-বান্না, কাপড়ধোয়া, ইত্যাদি। আসার আগ পর্যন্ত একাজ গুলো করেছি বলে মনে হয়না। সব কিছুর সাথে আস্তে আস্তে মানিয়ে নিচ্ছি। শুধু একটাই ক্ষোভ- মনে হয় সুন্দর অনেক অনুভূতি হারিয়ে যাবে-মানষের ভীড়ে হেঁটে যাওয়া, রাস্তার পাশে ফুটপাতে দাড়িয়ে টং-য়ের চা খাওয়া, মাঝরাতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া, ঘুরতে যাওয়া, সবাই মিলে কোন এক বন্ধুকে পচানো, আর কত কী! এখানে জীবনে কোন বৈচিত্র নেই। প্রতিদিন সকালে উঠে মাইক্রোওয়েব ওভেনে খাবার গরম করে খেয়ে, কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয়, সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে রান্না করে খেয়ে খুব সকালে উঠার চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুমাতে যেতে হয়। পরেরদিন যথারীতিই চলে যায়। এভাবে চার-পাঁচ বছর পর হয়ত একটা ডিগ্রী পাব। তারপর চাকরি, পরিবার, দায়িত্বের বোঝা। শুধু গতদিনগুলোর সেই শান্তি আর ফিরে আসবেনা। সপ্তাহান্তে রাত জেগে মুভি দেখা, অতঃপর তা নিয়ে আলোচনা, তর্ক, কার্ডখেলা, সারারাত না ঘুমিয়ে সকালবেলা খিচুড়ি-ডিম ভাজি খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দুপুর ১ টায় ঘুম থেকে উঠে চোখ মুছতে মুছতে ডাইনিংয়ে গিয়ে খেয়ে আবার ঘুম- এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে?
বাকী জীবন এসব স্মৃতিচারণ করে কাটাতে হবে- ভাবা যায়!!

-অরিত্র অরিত্র


মন্তব্য

অপছন্দনীয় এর ছবি

মন খারাপ

দাঁত সামলে - ডেন্টিস্টের দুয়ারে যদি যেতে হয় তো রান্না নয়, রীতিমত কাঁচাই খেতে হবে সব, আর কিছু করার মত পয়সা থাকবে না মন খারাপ ... (নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলা)

অরিত্র অরিত্র এর ছবি

ভালই বলেছেন অপছন্দনীয়....

পাগল মন(অফলাইন) এর ছবি

এটা কী আপনার প্রথম লেখা? হলে স্বাগতম।

এত ছোট লেখা কেন?
প্রথম প্রথম এই স্মৃতিকাতরতা থাকবেই, সময় গেলে আস্তে আস্তে কমতে থাকবে। তবে আমাদের কখনোই হয়তবা সেটা শূণ্যের কোঠায় পৌছাবে না। এই স্মৃতি নিয়েই বাঁচতে হবে সারাটা জীবন।

রিশাদ_ ময়ূখ এর ছবি

কেন, দেশে আর ফিরবেন না? আর মানুষ তো হারালেই হারানো জিনিষের মূল্য বুঝতে পারে

অরিত্র অরিত্র এর ছবি

ধন্যবাদ পাগল মন।
এটা আমার প্রথম লেখা, সামনে আর বড় করে লেখার চেষ্টা থাকবে।

শহরবালক এর ছবি

......গ্রামে যাইবেন? যান.........
আমি এক মাসের জন্য যাইয়া U টার্ন নিসি...ওখানে সবাই আওয়ামী/বিএনপি পড়ে......
নেক্সট টার্গে্ট বন-জঙ্গল......

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

টেস্ট

দ্রোহী এর ছবি

আমিও টেস্ট করি।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
ধুসর গোধূলি এর ছবি

আম্রিকা যাওয়ার আগে রান্নাবান্না, কাপড় ধোয়া যে নিজেরই করতে হয়, এটা সম্পর্কে ধারণা ছিলো না আপনার? চিন্তিত

প্রবাস জীবনের দুই মাসের মাথাতেই যখন বাকী জীবন দেশের স্মৃতিচারণ আর দারাপুত্রপরিবার নিয়ে আম্রিকায় দায়িত্ব শুরু করে দেয়ার পরিকল্পনা করে ফেলেছেন তখন বিগত দিনের শান্তিও নিশ্চিত ফিরে পাবেন। এবং ফিরে পাওয়া শান্তির পরিমান হয়তো বেশিই হবে। গরীব দেশের তুলনায় উন্নত মোড়ল দেশে শান্তির পরিমান তো বেশিই হওয়ার কথা।

আপনার লেখার প্রথম প্যারার শেষের লাইনটা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। হুমু এরশাদ বলতো না, আটষট্টি হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে! ছেলেবেলায় পল্লী উন্নয়ন রচনাগুলোতেও পড়েছি। বাংলাদেশের গ্রামগুলোকে উন্নত করতে পারলেই সারা বাংলাদেশ উন্নত হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, এই রচনাগুলো যাঁরা লিখেছেন, প্রকাশ এবং প্রচার করেছেন তাঁরা নিজেরাই পল্লী উন্নয়ন নিয়ে কতোটা আন্তরিক ছিলেন বা আছেন! থাকলে মনেহয় আম্রিকা কেনো স্বর্গে গিয়েও দুই মাস তো দূরে থাক, দুই যুগের মাথাতেও কারো সেখানে পরিবার পত্তনের সুর ভাজতে হতো না!

তারেক অণু এর ছবি

জীবনে বৈচিত্র নেই- এমনটা হবার কথা নয়। সব জায়গাতেই কিছু না কিছু আলাদা ভাবে করার থাকে, যা খুজে নিতে হয়। হয়ত সেই অভিজ্ঞতায় আপনি কোনদিন দেশে কাজে লাগাতে পারবেন

guest_writer এর ছবি

আপনিতো শুধু আপনার নিজের দিকটাই ভেবেছেন। এর সাথে দেশে থেকে যাওয়া আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন আত্মীয় স্বজনের আবেগগুলোকে যোগ করে প্লাস-মাইনাস করে হিসাব করুন। তারপর ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। জীবনটাতো আপনারই। আর একটাইতো জীবন। বিদেশবিভূঁই এ বৃদ্ধ বয়সের সমস্যাগুলোও কিন্তু প্রকট। স্বাস্থসমস্যাসহ নানা ধরনের সমস্যায় সঙ্গ দেবার জন্য কাউকে পাবেননা। সবাই ই খুব ব্যস্ত। কাউকে দোষারোপ করছিনা। আমার মন্তব্যটাকে নেতিবাচকভাবে নিবেননা। এটাই বাস্তবতা।

মন্তব্য : প্রৌঢ়ভাবনা

উচ্ছলা এর ছবি

প্রবাসী জীবনের মজাগুলো ধীরে ধীরে আপনার কাছে আসবে বলে আশা করছিঃ

দেশি মশলাদার খাবার দুর্লভ হলেও হাতের কাছেই আছে Italian, Japanese, Chinese, Mexican, French, Spanish ইত্যাদি হাজার দেশের হাজার রকম খাবার। সবকিছু একটু একটু করে চেখে দেখতে মন্দ কি? হাসি

এখানে চাইলেই রাতভর একা বা সদলবলে চাঁদনি রাতে হাঁটতে বেরুতে পারেন। বাংলাদেশী পুলিশ এসে "সন্দেহজনক গতিবিধির" কারনে আপনাকে আটক করবে না, গ্যারান্টিড দেঁতো হাসি

ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থাকতে হবে না।

জীবনের নিরাপত্তা আছে এখানে।

আর "চাকরি, পরিবার, দায়িত্ব"...এই ব্যাপারগুলো এত নেগেটিভলী না দেখাই ভাল। জীবনের এই ছক পছন্দ না হলে, নিজের মত করে তা বদলে ফেলুন।

আনন্দের, সুখের সব উপকরন আশেপাশেই ছড়ানো আছে। হাত বাড়িয়েই দেখুন ♥

স্বপ্নাদিষ্ট এর ছবি

চলুক

-স্বপ্নাদিষ্ট
==================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।

অরিত্র অরিত্র এর ছবি

সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
পাঁচটা শব্দে চারটা য-ফলা............ হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।