ওপারে সন্যাসী গ্রাম। এপারে কলারণ। মাঝখানে পানঘুচি নদী। ও নদীর কুল নাই কিনারা নাই—আছে দৈরার পানি। পানি দেখলে বিশুবাবুর প্রাণ উড়ে যায়। তার এই ভয়ধরা মুখ দেখে বুড়ো মেনাজ মাঝি হাসে। বৈঠা হালকা মেরে বলে, আপনের বাড়ি কনে?
–ফরিদপুর।
–হেইয়াতো মোগো আত্মীয় লাগে। ফরিদপুইরা লোকে মোগো দ্যাশে ধান কাডতি আইত। তাগো কাচিতে ধার পেরখর। আর?
–আর কি?
–আর শ্যাখ সাবের বাড়ি। শ্যাখ মুজিবর। পাকিস্তানীগো যম। মোগো নেতা। হ্যায় ফরিদপুরের লোক। আপনে হইলেন মোগো শেখ দাদা। ডর করেন ক্যান।
তারপর মেনাজ মাঝি বলে, সন্যাসী গ্রাম মোড়োলগঞ্জে। আর কলারণ পিরোজপুরে। বরিশাল আর বাগেরহাট। মামাতো ভাই ফুফাতো ভাই। হ্যার তুলনা নাই।
শেখ সাহেবের বাড়ির লোক বিশুবাবু ওরফে শেখদাদা পানঘুচিতে এসেছেন। কলারণের জমাদ্দার বাড়ির মেলা দেখবেন। সাংবাদিক মানুষ। পেপারে নিউজ করবেন। তাকে ইজ্জত দেওন দরকার। এই হেতু মেনাজ মাঝি নাও বেয়ে মাঝগাঙ্গে নিয়ে যায়। সেখানে পদ্মাপাপড়ির মত নৌকার সারি। মাছ ধরা চলছে। মাছের নাম রামশোচ। কমলা বর্ণ। মুখে দাঁড়ি গোঁফ আছে। এদেশে দাঁড়ি গোঁফকে শোচ বলে। মাছগুলো তাজা। এক মাঝি তার নৌকা থেকে এক খোলা মাছ তুলে তুলে দিয়েছে। বলেছে, তাজা মাছ ভাইজা খাইয়েন।
মাছ দেখে বিশুবাবু অবাক হন। এই ভ্রমণকালে মাছ দিয়ে কি করবে? তাকে দেনাজ মাঝি বলে, চিন্তা নাই। চলেন, সালাম জমাদ্দারের বাড়ি যাই। তিনি খেদমত জানেন।
জমাদ্দার বাড়ির দেষ্টে ছোটো খাটো চরভিটে। ছৈলাগাছের শ্বাসমূল হা হয়ে চর ফেলেছে। আর আছে বেতিবন। বাঁ-পাশ ঘুরে আচি খাল। খাল দিয়ে যেতে যেতে জমাদ্দারের বাড়ি।
বেতিবনে কে একজন মাঝে মাঝে মাথা তুলছে। আর মাথা নিচু করছে। মেনাজ মাঝি হেকে বলে, সেলাম আলেকুম।
বেতিবনে তিনি শুনতে পান কি পান নাই বোঝা যায় না। তার মুখ দেখা যায়। অসংখ্য রেখাচিহ্নিত। চুলে জটাজাল। চোখের দৃষ্টি অপলক ।
বেতিবনে জোয়ারের পানি ঢুকছে। কুল কুল শব্দ ভাসছে। মেনাজ মাঝি বিশুকে বলে, ওনার নাম কারবালা বিবি।
–উনি কি করেন?
–উনি কথা কন না। গাঙ্গের দিকে চাইয়া থাকেন। এই গাঙ্গপাড় ছাইড়া তিনি কোথাও যান না।
সালাম জমাদ্দার বাড়ির কান্দিতে কলাপাতা কাটছিলেন। খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন। বিশুবাবুকে যত্ন করে জলচৌকি পেতে দিলেন। হাত পাখা দিলেন। তাতে গোলাপ ফুল খাড়া। এর হাওয়া শীতল শীতল। সালাম জমাদ্দার বললেন, আইসা যখন পড়ছেন– তখন আইজ আর নিস্তার নাই। কলাপাতায় রামছোচ মাছ ভাজা হইবে। খাইয়া ধন্য ধন্য করবেন।
তার আগে ভাতর বাড়ি থেকে হুগলী ধানের মুড়ি এসেছে। রূপেশ্বর ধানের খই এসেছে। আমযতনের নারিকেল এসেছে। লগে নলেন গুড়। পাকা কাঁঠালী কলা। কালো গরু দুধ। আর গাছপাকা সফেদা। দুটো গন্ধ লেবু। সালাম জমাদ্দার বলেন, নাস্তা সারেন গো শেখ দাদা। আপনে খাইবেন বইলা শীলদিদিরে খবর দিচ্ছি। তার হাতের রান্না—বোঝলেন শেখদাদা, তুলনা নাই। ফাস্টো কেলাস।
বিশুবাবু খাবে কি—চেয়ে চেয়ে দেখেন জমাদ্দারের দোচালা টিনের ঘর। চৌদিকে বারান্দা। বারান্দার আবার বারান্দা। এই শেষ বারান্দার নাম ফইটা চাল। ঘরের সামনে উঠোন। উঠোনে কুড়হা পাখি কক কক করে। পুকুর হাঁস পাক পাক করে। একপাশের উঁচু বাঁশের আগায় বাঁধা জালালির খোপ। জালালি বাক বাকুম করে। চৌচালার মাথায় দুটো টিনের ময়ূর চক্ষু মেলে আছে। আর মাঝখানে একখানি বাঁকা চাঁদ করছে খেলা।
জমাদ্দার হাসেন। হাসতে হাসতে বিশুবাবুকে বলেন, শেখ দাদা ঘাবড়াইয়েন না। এই চাঁদ আসমানের চান্দ না। হ্যার চাইয়াও প্রেখর। রাইত আহুক—কেরমে কেরমে পাইবেন টের। বিশ্বাস রাইখেন—কলারণের কেউ মিছা কথা কয় না। সদা সইত্য বলে। এই চান্দনি পশরে দুলদুল আইবে।
বিশুবাবু জিজ্ঞেস করেন, দুল দুল কেডা?
উত্তরে সালাম জমাদ্দার বলেন, দুলদুল ঘোড়া। হযরত ইমাম হোসেনের ঘোড়া। ফোরাতকুলে করে বাস। অখন মাঝে মাঝে পানঘুচি পানঘুচি গাঙ্গের পাড়ে আইয়া পড়ে। ঘাস খায়। এই ঘাসের তুল্য তাগদ—আর কোনো ঘাসে নাই।
এই বাড়ির কাছারী ঘরে একখানি চিত্র বাঁধানো আছে। চিত্রখানি মলিন। বহু পুরাতন। কাপড়ের পরে রঙিন সুতোয়া বোনা। একটি ঘোড়ার চিত্র। ঘোড়া ছুটিতেছে। ঘোড়ার ল্যাঞ্জা তোলা। সারা গায়ে তীর বেঁধা। রক্ত ঝরছে। নিচে লেখা—
আসমান জমিন কাঁদে হায় হায় হায়।
কার খুনে খুন ঝরে—দুল দুল যায়।।
দুলদুলের চিত্রটি দেখিয়ে বিশুবাবুকে সালাম জমাদ্দার বলেন, আমার দাদীজান সাহারাবানু এই চিত্রটা খাড়ছিলেন। আমার বাপজান বাঁধাইয়া আনছেলেন। বড় পবিত্র চিত্র।
দুলদুলের চিত্রটিতে ধুলো পড়েছে। গামছা দিয়ে ডলে ডলে ধুলোসাফ করেন জমাদ্দার। চিত্রের নিচে লেখা আছে, আদর্শ চিত্র বাঁধাই। পো: নারায়ণ বসু। দড়াটানা খেয়াঘাট। বাগেরহাট। ১৯৪৭ সাল। সালাম জমাদ্দার বলেন, এলাকার প্রখ্যাত গায়ক মেনাজ ফকির আইজ কারবালার পালা গাইবেন। তার জারীর তুলনা নাই। তার গুরুর নাম মরহুম সুনীল সাধু।
দুলদুলের চিত্রের নিচে পালঙ্কে বিশুবাবুর জন্য বিছানা পেতে সালাম জমাদ্দার বেরিয়ে গেছেন। তার মেলা কাজ। মেহমানদারির খাসির হদিস করতে হবে।
কাছারী ঘরের বেড়ার গায়ে একখানি তক্তা বাঁধা। সেখানে কাপড়ে পেচানো দুটে বই। বিশুবাবু পেচানো কাপড় খুলে দেখলেন—পয়লা বই. পবিত্র কোরআন শরীফ। দুসরা. বিষাদ সিন্ধু। প্রণেতা : মীর মশাররফ হোসেন। মহানবী হযরত মহম্মদের (সঃ) এর দৌহিত্রদ্বয় হযরত হাসান (রঃ) ও হযরত হোসেন (রঃ) এর চরম বিয়োগান্তক পরিণতি নিয়ে মীর মশাররফ হোসেনের অমর উপন্যাস “বিষাদ সিন্ধু”।. একদিকে হাসান-হোসেন। অন্যদিকে এজিদ। এজিদ দামেস্কের নিষ্কণ্টক খলিফা হতে চায়। মহানবীর নাতিদ্বয় হাসান-হোসেন তার পথের কাঁটা। এই কাঁটা তুলতে এজিদ হোসেনের বড় ভাই হাসানকে বিষ খাইয়ে মেরেছে। ছোটো ভাই হোসেনকে প্রথমে মদিনা ছাড়া করেছে। পরে কুফা নগরীতে ডেকে পাঠিয়েছে। ফোরাত নদীর কুলে কারবালার মাঠে হাসানকে খুন করেছে। এই খুনের ঘটনা নিয়ে বইটির তিনটি পর্ব – “মহরম পর্ব, “উদ্ধার পর্ব”, ও “এজিদ বধ পর্ব” প্রকাশিত হয় যথাক্রমে ১৮৮৫, ১৮৮৭ ও ১৮৯১ ইং সালে।
মহরম পর্বঃ চতুর্বিংশ প্রবাহ /১
হোসেন সপরিবারে ষষ্টি সহস্র সৈন্য লইয়া নির্বিঘ্নে কুফায় যাইতেছেন। কিন্তু কতদিন যাইতেছেন, কুফার পথের কোন চিহ্নই দেখিতে পাইতেছেন না। একদিন হোসেনের অশ্বপদ মৃত্তিকায় দাবিয়া গেল। ঘোড়ার পায়ের খুর মৃত্তিকা মধ্যে প্রবেশ করিয়া যাইতে লাগিল, কারণ কি? এইরূপ কেন হইল? কারণ অনুসন্ধান করিতে করিতে হঠাৎ প্রভু মোহাম্মদের ভবিষ্যৎ বাণী হোসেনের মনে পড়িল। নির্ভীক হৃদয়ে ভয়ের সঞ্চার হইল, অঙ্গ শিহরিয়া উঠিল। হোসেন গণনা করিয়া দেখিলেন, আজ মহরম মাসের ৮ম তারিখ। তাহাতে আরো ভয়ে ভয়ে অশ্বে কশাঘাত করিয়া কিঞ্চিৎ অগ্রে গিয়া দেখিলেন যে, এক পার্শ্বে ঘোর অরণ্য, সম্মুখে বিস্তৃত প্রান্তর। চক্ষুনির্দিষ্ট সীমামধ্যে মানবপ্রকৃতি-জীবজন্তুর নামমাত্র নাই। আতপতাপ নিবারণোপযোগী কোনপ্রকার বৃক্ষও নাই, কেবলই প্রান্তর-মহাপ্রান্তর। প্রান্তর-সীমা যেন গগনের সহিত সংলগ্ন হইয়া ধূ-ধূ করিতেছে। চতুর্দিকে যেন প্রকৃতির স্বাভাবিক স্বরে আক্ষেপ-হায়! হায়! শব্দ উত্থিত হইয়া নিদারুণ দুঃখ প্রকাশ করিতেছে। জনপ্রাণীর নামমাত্র নাই, কে কোথা হইতে শব্দ করিতেছে তাহাও জানিবার উপায় নাই। বোধ হইল যেন শূন্যপথে শতসহস্র মুখে, ‘হায়! হায়!’ শব্দে চতুর্দিক আকুল করিয়া তুলিয়াছে।...
শিবির নির্মাণ করিবার কাষ্ঠস্তম্ভ সংগ্রহ করিতে এবং রন্ধনোপযোগী কাষ্ঠ আহরণ করিতে যাহারা বনমধ্যে প্রবেশ করিয়াছিল, শোণিতাক্ত কুঠার হস্তে অত্যন্ত বিষাদিত চিত্তে বাষ্পাকুললোচনে তাহারা হোসেনের নিকট ফিরিয়া আসিয়া বলিতে লাগিল “হজরত! এমন অদ্ভুত ব্যাপার আমরা কোন স্থানেই দেখি নাই, কোন দিন কাহারো মুখে শুনিয়ো নাই। কী আশ্চর্য! এমন আশ্চর্য ঘটনা জগতে কোন স্থানে ঘটিয়াছে কি-না তাহাও সন্দেহ। আমরা বনে নানা প্রকার কাষ্ঠসংগ্রহ করিতে গিয়াছিলাম; যে বৃক্ষের যে স্থানে কুঠারঘাত করিলাম, সেই বৃক্ষেই অজস্র শোণিত চিহ্ন দেখিয়া ভয় হইল। ভয়ে ভয়ে ফিরিয়া আসিলাম। এই দেখুন! আমাদের সকলের কুঠারে সদ্যশোণিতচিহ্ন বিদ্যমান রহিয়াছে।”
হোসেন কুঠারসংযুক্ত শোণিত দর্শনে বলিতে লাগিলেন, “নিশ্চয়ই এ-ই কারবালা! তোমরা সকলে এই স্থানে ‘শহীদ’ স্বর্গসুখ ভোগ করিবে, তাহারই লক্ষণ ঈশ্বর এই শোণিত চিহ্নে দেখাইতেছেন।‘’
এইটুকু পড়ে বিশুবাবু তাকিয়ে দেখলেন জমাদ্দারের পুকুরে দুটো হাঁস গুঁই সাপ দেখে ভীত হয়েছে। তারা পাক পাক করে ডাকছে। শেখ দাদা বিষাদসিন্ধুর পাতা উল্টাতে উল্টাতে বেড়ায় টানানো সাহারাবানুর দুলদুলের চিত্রটি দেখছেন। এর মধ্যে শিলদিদি এসে পড়েছেন। পাকা চুল। তার পরনে থান কাপড়। গলায় আইচার মালা। সঙ্গে চুকাই শাকের পাতা। জমাদ্দারের বিবি হাড়ি কুড়ে বের করে দেন। বটি পেতে মাছ কুটতে বসেছে দুইজন।
কান্দির পাড়ে খাসি জবেহ হচ্ছে। জবেহ করার সময় বলছে, বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর। হে পরওয়ার দিগার, তুমি একে হালাল করে দাও।
দুটো ছেলে এসে উঠোনে তাপ্পমারা সামিয়ানা টানিয়ে দিয়েছে। এক কোনে লেখা—নবতারা সংঘ, কলারণ, সন ১৯৭১।. ছেলে দুটো নবতারা সংঘের ভলান্টিয়ার।
এর মধ্যে শেখ দাদা বিষাদ সিন্ধুর প্রবাহ চতুদর্শ প্রবাহ শেষ করে ফেলেছেন। লেখা আছে–
‘’যে সকল ক্রীতদাস হোসেনের সঙ্গে ছিল, তাহারা কয়েকজন একত্রিত হইয়া ফোরাতের অন্বেষণে বহির্গত হইয়াছিল; ম্লানমুখে ফিরিয়া আসিয়া সকাতরে ইমামের নিকট বলিতে লাগিল, “বাদশাহ নামদার! আমরা ফোরাত নদীর অন্বেষণে বহির্গত হইয়াছিলাম। পূর্ব-উত্তর প্রদক্ষিণ করিয়া শেষে পশ্চিমদিকে গিয়া দেখিতে পাইলাম যে, ফোরাত নদী কুলকুল রবে দক্ষিণবাহিনী হইয়া প্রবাহিত হইতেছে। জলের নির্মলতার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া জলপানেচ্ছা আরো চতুর্গুণরূপে বলবতী হইল, কিন্তু নদীতীরে অসংখ্য সৈন্য সশস্ত্রে শ্রেণীবদ্ধ হইয়া অতি সতর্কতার সহিত নদীর জল রক্ষা করিতেছে। যতদূর দৃষ্টির ক্ষমতা হইল, দেখিলাম এমন কোন স্থানই নাই যে, নির্বিঘ্নে একবিন্দু জল লইয়া পিপাসা নিবৃত্তি করা যায়। আমরা সৈন্যদিগকে কিছু না বলিয়া যেমন নদীতীরে যাইতে অগ্রসর হইয়াছি, তাহারা অমনই অতি কর্কশ বাক্যে বিশেষ অপমানের সহিত আমাদিগকে বিতাড়িত করিয়া দিয়া বলিল, “মহারাজ এজিদের আজ্ঞায় ফোরাত নদীকূল রক্ষিত হইতেছে, এই রক্ষক বীরগণের একটি প্রাণ বাঁচিয়া থাকিতে এক বিন্দু জল কেহ লইতে পারিবে না। আমাদের মস্তকের শোণিত ভূতলে প্রবাহিত না হইলে ফোরাত প্রবাহে কাহাকেও হস্তক্ষেপ করিতে দিব না। জল লইয়া পিপাসা নিবৃত্তি করা তো অনেক দূরের কথা। এবারে ফোরাতকূল চক্ষে দেখিয়া ইহজীবন সার্থক করিয়া গেলে,-যাও; ভবিষ্যতে এদিকে আসিলে আমাদের দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত থাকিতে হইবে। নদীর তীরে এক পদও অগ্রসর হইতে দিব না। এই সুতীক্ষ্ণ শর তোমাদের পিপাসা শান্তি করিবে। প্রাণ বাঁচাইয়া ফিরিয়া যাও। নিশ্চয় জানিয়ো, ফোরাতের সুস্নিগ্ধ বারি তোমাদের কাহারো ভাগ্যে নাই।“
ছায়া ঘনানোর আগেই এ পাড়া থেকে ওপাড়া থেকে লোকজন জমাদ্দারের বাড়িতে এসে গেছে। মেহমান শেখ দাদার সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে। ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বর মানিক মুন্সী পকেট থেকে এক বাক্স স্টার সিগারেট এগিয়ে ধরলেন। বললেন, গদিনশীন কদম পীর সাবকে খবর দেওন হইছে। তিনি আইতে পারবেন না। পত্তাশীর বড় মসজিদে এতেকাপে আছেন। ইশারায় দোয়া করছেন। তিনি জৌলুসে পীর। শুনে সবাই বলল, আমীন আমীন।
একটি ঘটি গরম কুড়মুড় ভাজার দোকান বসেছে। জিলেপি ভাজার জন্য চুলা তৈরী হচ্ছে। নাগোরদোলার খুঁটি গাড়া হয়েছে। স্নো, পাউডার, চুরি, ফিতের দোকান বসেছে সজিনাগাছের গোড়ায়। সফেদা তলায় শাহী পানের বোঁচকা খোলা হয়েছে।
কলাপাতায় রানশোচ মাছ ভাজি করছে শীলাদিদি। তার সুঘ্রাণ আসছে। হাড়িতে টগবট করে ফুটছে মন্তেশ্বর চালের ভাত। উঠোনে যাদুকর কাশেম মোল্লা নামে একজন লম্বা চওড়া লোক তাসের খেলা দেখাচ্ছেন। লোকটি গৌরনদীর দি দি লক্ষণ দাসের সার্কাস পার্টির ঘোড়ার সহিস ছিলেন। তার গলায় দুটো মেডেল ঝোলানো। কাশেম মোল্লা কিছু যাদু বিদ্যাও জানেন। সময় পেলে রাক্ষস সেজে দেখাবেন। তারপর সহি কারবালা পালা হবে। মেনাজ ফকিরের আসতে একটু সময় লাগছে। এর মধ্যে খাসির গোস্ত ড্যাগে চড়ছে। মসলার খুশবু বের হচ্ছে।
এর মধ্যে মেনাজ ফকির এসেছেন। তার আসল বাড়ি শরণখোলা। ঘরজামাই হেতু কলারণের পূবের পাড়ায় ভিটা। লম্বা চওড়া মানুষটি। একটু শুকনো কিসিমের। মাথায় ঝাকড়া চুল। কানে একটা দুল আছে। হাতে চামর। পরণে রং-বেরঙের তাপ্পিমারা আলখাল্লা। পায়ে একজোড়া রাবারের পাম্প সু।
আসরে নেমেই তিনি মুসলমান ভাইগো সালাম এবং হিন্দু ভাইগো আদাব জানালেন। গলাটা বিশুবাবুর চেনা চেনা মনে হল। কিন্তু পোষাক-আষাকের ভেতর থেকে চেনা মুশকিল। মেনাজ ফকিরের হাতে দোতরা টুংটাং করে ওঠে। পায়ে নূপুর। পালা কারবালা।
ফোরাতের কুলে হযরত ইমাম হোসেনের নটি রাত কেটে গেছে। সকলে পানি তেষ্টায় কাতর। বিবি সাহারাবানু ইমাম হোসেনের কাছে দুধের শিশুকে নিয়ে এলেন। তার বুকের দুধও শুকিয়ে গেছে। ছেলেটি মরমর। বলছেন, প্রভু, আমরা মরি মরি, এই শিশুটিকে বাঁচান। আপনি ফোরাতের কুলে যান। পানি নিয়ে আসেন।
ফোরাত নদীর কুল এজিদে সৈন্যরা পাহারা দিচ্ছে। হোসেনকে পেলে বধ করবে। ছাড়াছাড়ি নেই।
ইমাম হোসেন তৃষ্ণার্ত দুধের শিশুকে নিয়ে প্রিয় ঘোড়া দুলদুলে চড়ে বসেছেন। দুলদুল হাওয়ার বেগে ফোরাতের কুলে এসে গেছে। তিনি দুলদুলের পিঠ থেকে নেমেছেন। সৈন্যদের মিনতি করে বলছেন, এই শিশুটিকে পানি দাও। একে বাঁচতে দাও।
এজিদের সৈন্যদল হযরত ইমাম হোসেনকে দেখে হাহা করে হেসে উঠেছে। তারা পানির বদলে হাসতে হাসতে একটি তীর ছুড়ে মেরেছে। তীরটি হোসেনের কোলের মাসুম শিশুটির বুক ভেদ করে চলে গেছে। রক্ত ঝরে পড়ছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ্ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন এবং তাঁর পরিবারকে তাঁর মৃত্যুর ক্ষতি ও শোক কাটিয়ে ওঠার সামর্থ দান করুন। আমীন!!
মেনাজ ফকির গেয়ে উঠেছেন—
শিশুটির মুখে কোনো নাই আর বানী।
খুনে ভাইসা যাইতাছে ফোরাতেরও পানি।।
কহ কহ আসমান জমিন ও চান তারা।
কিবা দোষে মাসুম শিশু হৈল পরান হারা।।
আসর স্তব্ধ প্রায়। কারো কণ্ঠে বাক্য নাই। কারো চক্ষে জল। কেউ একজন কেঁদে উঠতে যাবে—তার আগে মেনাজ ফকির বলে ওঠেন, কেউ কাইন্দো না। কারবালা আমাগোও আছে।
–কারবালা কোথায়?
–আমাগো সামনে। কলারণের কারবালা।
উঠোন ভর্তি মানুষ। চারিদিকে গাছ। উপরে আসমান। চাঁদ ওঠেনি। সন্ধ্যাতারা ফিক ফিক করে জ্বলছে। এর মধ্যে পানঘুচির পাড় থেকে কারবালা বিবি এসে দাঁড়িয়েছেন। হযরত ইমাম হোসেনের মৃত শিশুর শোকে কাতর হেতু কেউ তাকে খেয়াল করেনি। তার হাতে এক থাল রামশোচ মাছ ভাজা। চোক্ষু স্থির। শূন্য চরণ। নির্বাক। সেদিকে তাকিয়ে মেনাজ ফকির গাইছেন—
কারবালা আছে জাইন্য আমাগেরি বুকে।
কারবালা বাঁইচা থাকে দুঃখে ধুকে ধুকে।।
হায় হায় হায়–
মোগো পরান পুইড়া যায়,
দুঃখ মোগো না ঘুচিলো কী করিগো উপায়।।
ধুয়া শেষ হতে না হতেই কারবালা বিবির হাত থেকে রামছোস মাছের থালটি ধপ করে নিচে পড়ে যায়। পড়ে ধুলোমাটিতে ঝনঝন করে কাঁপে। ভাজা মাছগুলো ফাল দিয়ে ওঠে। তারা শোচগুলো ঘষটে ঘষটে উঠোন থেকে চলে যায়। যাদুকর কাশেম মোল্লা শুধু একবার ওঠে আর একবার বসে। তার পকেটের যাদুর কাঠিটি ঠক ঠক করে। মেনাজ ফকিরের দোতরার টুং টাং থেমে গেছে। গলা খাকরি দিয়ে বলেন, মাফ করবেন শেখ দাদা। আর গাইতে পারমু না।
তখন মেনাজ ফকির তার মাথা থেকে ঝাকড়া পরচুলা খুলে ফেলেছেন। বিশুবাবু চিনতে পারেন—এই মেনাজ ফকির তার আজকের নৌকার মাঝি মেনাজ মাঝি।
মেনাজ ফকিরের ঘোষণা শুনে উঠোন ভরা লোক বাক্য ফিরে পায়। হায় হায় করে ওঠে। ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বর মানিক মুন্সী বলে ওঠেন, কোনোদিন কি আপনে কারবালা পালা শ্যাষ করবার পারবেন না মেনাজ চাচা?
মেনাজ মুন্সী কথা বলেন না। দোতরার তার কেটে গেছে। সেটা ঠিক করতে হবে। দপ দপ করে নবতারা সংঘের হ্যাজাক বাতি নিভে গেছে। কেউ বাতিটির দিকে এগিয়ে আসে না। মাথা নিচু করে সবাই বসে আছে। কারো মুখ দেখা যায় না। অন্ধকার। কারো পায়ের শব্দ পাওয়া যায়। তাকে দেখতে পাওয়া যায় না বলে চৌচালার টিনের ময়ূরগুলি ককক ককক করে ডেকে ওঠে। সেই বাঁকা চাঁদ জেগে ওঠে। একটা হালকা নীলাভ আলো বের করে। সে আলোয় কারবালা বিবির মুখ কুকড়ো মুকড়ো। পা ঘষটে ঘষটে তিনি উঠোন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন পানঘুচি নদীর দিকে। সেখানে চরের মধ্যে ঢুকে পড়বেন। নদীর দিকের তাকিয়ে থাকবেন। প্রতিটি ঢেউ ভালী করে দেখবেন। ঢেউয়ের সঙ্গে কিছু ভেসে এলে ছুটে যাবেন। আতিপাতি করে খুঁজে দেখবেন। আবার চরে ফিরে গিয়ে অপেক্ষা করবেন আরেকটি ঢেউয়ের সঙ্গে।
কারবালা বিবির মাথার উপরে ঘোমটা নেই। চুল খোলা। নীল আলোর মধ্যে বাড়ির নিচে মিলিয়ে গেছেন। সালাম জমাদ্দারের উঠোন থেকে তাকে আর দেখা যায় না।
২.
আসর শেষ হতে হতে রাত হয়ে গেছে। লোকজন চলে গেছে। নবতারা সংঘের ছেলেরা গোছগাছ করছে। সালাম জমাদ্দার বিশুবাবুকে বললেন, শেখ দাদা, আপনেরে আর দেরী করামু না। জ্যোৎস্না উঠতেআছে। আপনের লাইগা দুলদুল আইবে।
–দুলদুল কে?
–জাদুকর কাশেম মোল্লার ঘোড়া। দি দি লক্ষণ দাস সার্কাসের ঘোড়া। স্পেশাল ট্রেনিং প্রাপ্ত। পথঘাট চেনে। খালবিল পারাইতে পারে। আপনেরে ঠিক হাওয়ার বেগে পিরোজপুর পৌঁছায় দেবে।
বিদায়ের বেলা ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বর মানিক মুন্সী শেখ দাদাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। বলছেন, আবার আইসেন। মেনাজ ফকির আবার গাইবেন কারবালা পালা। এ জনমে শেষ হয় না এই পালা। মেনাজ ফকির বুক টান করতে গিয়ে কুঁজো হয়ে পড়ে। পায়ে জুতো নেই। বুড়ো মানুষের মতো শেখ দাদার সঙ্গে হাঁটে । নবতারা সংঘের একটা ছেলে পিছনে পিছনে আসছে। হাতে একটা টিমটিমে হারিকেন। মেহমানকে সিধে একা ছাড়তে নেই। জমাদ্দারের বাড়ি পেরিয়ে আচি খাল। তারপর পানঘুচি– বেতিবন অব্দি হাটা পথ।
এক ফাঁকে ফস করে আলম বিড়ি ধরান মেনাজ ফকির। একটু ঝুঁকে ঝুঁকে হাঁটেন। লম্বা করে বিড়ির টান মারেন। বিশুবাবুকে বলেন, শেখ দাদার জন্ম কবে?
বিশুবিবাউ উত্তর করেন, একাত্তর সাল।
–একাত্তর সাল? তাইলে তো আপনে কচি মানুষ। মোর বয়স তখন বড়জোর বাইশ তেইশ।
আবার বিড়ি টানেন মেনাজ ফকির। দোতরার ছেড়া তার ঠিক করা হয়েছে। একটু ঢিলা করে দেন। খুক খুক করে কাশেন। কাশতে কাশতে মেনাজ ফকির বলেন, আপনের বাপজানে তখন যোয়ান মানুষ। এইসব ঘটনা তিনি জানবেন। বলে—লম্বা করে ধোয়া ছাড়েন। দুটো ব্যাঙ গ্যাঙ গ্যাঙ করে ডাকে।
এর মধ্যে মেনাজ ফকির বলেন, আমি মুহাম্মদ মেনাজ ফকির। বাপের নাম মুহাম্মদ আব্দুল আলী খয়রাতি। নিবাস শরণখোলা। তখনো পুরা ফকির হইতে পারি নাই। তাজা মাঝি। গাঙ্গে গাঙ্গে নাও চালাই। আর ফাঁকে মাছ ধরি। সখে সখে গান গাই। ডরপুক নাই। এইটা একাত্তর সালে আমরা এই রকমই আছিলাম।
তখন বর্ষাকাল। খোলা নৌকা বাইয়া রওনা হইছি আন্ধারমানিক। পূব পাড়ে জুজখোলা। পশ্চিমপাড়ে আন্ধারমানিক। মাঝখানে বলেশ্বর গাঙ। এই গাঙ পার হইলে আচি খাল। সে খাল দিয়ে ঢুকলে পালপাড়া। তারপর সাহাপাড়া। বামে ঋষিপাড়া। ডানে নমো পাড়া। হ্যার মাঝে দোলখোলার মাঠ। মাঠের পরে সুনীল সাধুর বাড়ি। বিখ্যাত গায়েন। বিখ্যাত বায়েন। তার দোতরার তুলনা নাই। সুনীল সাধু আমার লাইগা দোতারা বানাইছেন। সেইটা আনতে আন্ধারমানিক যাইতেছি।
বলে থেমে গেছেন মেনাজ ফকির। গলায় শ্লেষা জমেছে। থুক করে একদলা থু থু ফেলেন। মাথার উপরে ধ্রুব তারা থির হয়ে আছে।
মেনাজ ফকির আসমান পানে তাকান। ঝি ঝি পোকা ডাকে। দুএকটা শিয়াল দূরে দুরে হাঁকে। হাঁটতে হাঁটতে আচি খালের মুখে তারা তিনজন এসে পড়েছে। খালপাড়ে গাছপালা। আর শেকড়বাকড়। ফাঁকে ফাকে সরু পথ। মেনাজ ফকির বিশুবাবুকে সতর্ক করে বলেন, দেইখা হাঁইটেন। শহুরে মানুষ আপনে, হোঁচট খাইয়েন না।
তারপর মেনাজ ফকির বলেন, আন্ধারমানিক যাইতে যাইতে বেলা পইড়া এলো। সূর্য নামে পাটে। গাঙ্গ ফাঁকা। কেউ নাই। গা ছম ছম করে। আমি মেনাজ ফকির, সত্য কইতেআছি– বলেশ্বর গাঙ্গ থেকে আঁচি খাল দিয়া ঢুকতে যামু, চাইয়া দেহি আচি খালের পানি লাল। পাড়ে আন্ধারমানিক আছেলে। এখন নাই। মাঝে মাঝে পোড়া গাছ। ঘর নাই। দোর নাই। আন্ধারমানিকের ছাই গাদা। পথে পথে মরা গরু। মরা কুকুর।
এ সময় মেনাজ ফকিরের ঘড় ঘড় করে কাশি আসে। কাশতে কাশতে মেনাজ ফকির বলেন, বোঝলেন শেখ দাদা, মানুষ নাই। লাশ। সুনীল সাধুর আন্ধারমানিক আর আন্ধারমানিক নাই– পুরা কারবালা হইয়া গেছে।
আর দাঁড়াতে পারেন না মেনাজ ফকির। হাঁটু মুড়ে বসে পড়েছেন। বসে হাঁপাতে হাঁপাতে এদিক ওদিক মাথা নাড়েন। খানিকটা জিড়িয়ে নেন। বলেন, বুড়া হইছি। যোয়ানকালের মতো তাগদ নাই। ম্যাদা মাইরা গেছি।
তখন যোয়ানকাল। ডরপুক নাই। আন্ধারমানিক গ্রামের মইদ্যে ছুইটা বেড়াই। চিক্কুর পাইড়া কই, সাধু বাবা, সাধু বাবু। আপনে কোয়ানে?
সাড়া শব্দ নাই। সন্ধ্যা নামছে। ভুতও নামছে।
তখন, বোঝলেন শেখদাদা, তখন সুনীল সাধুর বাড়ির পিছনে খস খস শব্দ ওঠে। কান খাড়া হয়ে শুনতি পাই, শিশুর গলা। আজিব কারবার। মরনের মইদ্যে শিশু হাসে।
শিশুই বটে। হোগলার ঝোঁপে শিশু। দুগগা ঠাইরেনের লাহান মায়ের কোলে টলটলে মাসুম শিশু। আর বাপটা কচুড়িপানায় মাথা ঢাইকা আছে। কচুড়ি পানার আড়াল থেইকাই কয়, মোরা নির্দুষী। আমাগো মাইরেন না।
মা-টার কপাল কাটা। রক্ত জমাট হয়ে কালা হইয়া আছে। আর শিশুটি হাত বাড়িয়ে আমার দেষ্টে ছুইটা আসতে চায়। শিশুটির মায়ের মুখ সাদা। থরথর করার শক্তিও নাই। দেইখা পরাণ উইড়া যায়। তাগো ডাইকা কই—দেরী কইরেন না। উইঠা আসেন।
তখন রাত্রি নামছে। ঘোর অন্ধকার। আমার নৌকা আচি খাল থেইকা বলেশ্বর গাঙ্গে পড়ছে। বাপো-মায়ে নৌকার পাটাতনে বইসা আছে। শিশু পোলা নিদ্রা যায়। জিগাই, বাড়ি কনে?
–ফরিদপুর। টুঙ্গিপাড়া।
–শ্যাখ মুজিবের টুঙ্গিপাড়া?
লোকটা কথা কয় না। চুপ কইরা থাকে। তার বিবিটা নেতায়ে আছে। ছপ ছপ কইরা বৈঠা চলছে। আর কোনো শব্দ নাই। ভাটা গোন লাগছে। পানি নামছে।
এর মধ্যে মিহি সুরে কান্নার আওয়াজ আসে। পানির শব্দে হা্রায়ে যায়। কান না পাতলে শোনা যায়। বিবিটা নিজের সঙ্গে কথা কইছে। নেতায়ে পড়ে বিবিটা ফুলে ফুলে কান্দছে। কইছে, শ্বশুরবাড়ি থিকা পালাইছি। বাপেরবাড়ি থিকাও পালাইছি। অখন যাই কনে? পোলাডারে বাঁচাই ক্যামনে।
বাপের কোলে তখন পোলা ঘুমায়। মিয়া বিবিটার পিঠে হাত রাখে। কয়, চুউপ। চুউপ। কিন্তু অন্ধকারে চুউপ চুউপ শব্দের বদলে শোনা যায়—হায় হায়।
বিবিটা কয়, মোরা কী খেতি করছি? কাউরি মারিও নাই। ধরিও নাই। মেলিটারি আমাগো মারতি লাগিছে। মারণ ছাড়া কি আর কিছু নাই?
–চুউপ। চুউপ।
এইটুকু বলতে গিয়ে মেনাজ ফকির মুখের কাছে হাত চাপা দিতে যায়। পারে না। বলে, শিশুকোলে মৃত্যভয়ে ভীত জননী কান্দিতেছে। আর বাপে ডরে গাছপাথর। কইছি, কাইন্দেন না মাজান। আপনেগো আর পলান লাগবে না। আমার লগে চলেন। আপনেগো লইয়া যাইতেআছি আমাগোর কলারণ গ্রামে।
বিবি কয়, সেইখানে পাকিস্তানী মেলিটারি নাই?
–নাই। সেখানে মীর কদম পীর সাহেব আছেন। তিনি বড় জৌলুসী পীর। হ্যারে মেলিটারি তো মেলিটারি, হ্যার বাপে—আইয়ুব খানেও ইজ্জত করছে। হ্যার পোলায় ইয়াহিয়া খানেও ইজ্জত করে। আসমানি বেপার। কলারণ গ্রামে মেলিটারীর ডর নাই। গরু ছাগলও নিরাপদ।
–তাইলে আমরা বাঁচুম?
–বাঁচবেন। আলবৎ বাঁচবেন। পীরে হাক্কানিয়ার ডেরায় কেউ মরে না।
এই সময় ফুটকি ফুটকি জোনাক জ্বলে গাঙ্গ পাড়ে। বর্ষাকাল। বৃষ্টি নাই। মিয়া বিবি সারাদিন হোগলা বনে পলায়ে বাঁচছে। এখন নিরাপদ ভাইবা নিন্দ যায়। আর মাসুম পোলা চুক চুক কইরা দুধ খায়। খিল খিল কইরা হাসে। বাতাতে শোনা যায়—হায় হায়।
পানঘুচি গাঙ্গে নৌকা আসতে আসতে রাত্রি ঢইলা পড়ে। এর মধ্য ভট ভট কইরা শব্দ শোনা যায়। মিয়া বিবি জাইগা ওঠে। আতঙ্কে কইয়া ওঠে—কিসের শব্দ? মেলিটারির লঞ্চ আসতেছে নাকি?
আমি মেনাজ ফকির। জেবনে মিছে কথা কওয়ার নিয়ত নাই। তাগো কই, মেলিটারির লঞ্চ পাইলেন কই। ওডা ধানকলের শব্দ।
মিয়া জিগায়, তাইলে বাঁচুম?
তাগো নিশ্চিত কইরা কই, বাঁচবেন। চিন্তা নাই। কলারণ জাইলে আর ভয় নাই।
মেনাজ ফকির বলেন, এর মধ্যে কলারণের ঠোঁটা দেখা যায়। ওপারে সন্যাসী গ্রাম। এপারে কলারণ। এইখানে আছে মীর কদম পীরের মঞ্জিল। এইখানে মানুষতো মানুষ—পশুপক্ষীও নিরাপদ। এর মধ্যে পানঘুচি নদীর মধ্যে ভট ভট শব্দ বাড়ে। আর হঠাৎ কইরা একটা সার্চ লাইট নদীর এপাড় ওপাড় আর নদীর গায়ে ঘুরতে দেখা যায়।
মিয়া দেইখা কয়, অইতো লঞ্চ। ধানকল না। মেলিটারি আইতেছে।
আমি দোয়া ইউনুস পইড়া কই, আপনি ঘাবডাইড়েন না। বৈঠা ধরেন। ঝপাঝপ কইরা বৈঠা বাইয়া লঞ্চ আসনের আগেই আচি খালে ঢুইক্যা পড়ি। হেরা আমাগো দ্যাখতে পাবে না।
তখনো শুকতারা ওঠে নাই। অন্ধকার নদীর গায়ে পাক খাচ্ছে। মিয়া সাব বিবিটাকে ঠেইলা ওঠায়। তার দিকে ঘুমন্ত পোলাটাকে আগায় দেয়।
খলখল পানঘুচি কোলে হাসে খোকা।
ধরো বউ পোলা ধরো না হইও গো বোকা।।
হাত মেইলা ধরতি গেছে পূর্ণিমারো চান।
ঠাস কইরা শব্দ হইছে স্রোতে মারে টান।।
মেনাজ ফকিরের এইটুকু শুনে নবতারা সংঘের ছেলেটা থমকে গেছে। তার হাতে ছোটো একটা ব্যাগ। ব্যাগে কিছু পাকা পাকা সফেদা। ব্যাগটি তার থেকে ফসকে পড়ে। পায়ের তলায় পড়ে সফেদা ফল ভেচকে গেছে। ছেলেটা মোনাজ ফকিরকে বলে, কী অইছে মেনাজ দাদা? গুলি হইছে?
মেনাজ ফকির হেসে ওঠে। দোতরায় টুং টাং শব্দ ওঠে। নদীর পানে তাকিয়ে বলেন, গুলি হইবে ক্যান? মেলিটারিরা পীর কদমের গ্রামে গুলি করে না।
–তাইলে কিসের শব্দ?
–পানির শব্দ। পানির মইধ্যে জননীর হাত থিকা চান্দের লাহান শিশু পোলা পইড়া গেছে।
মেনাজ ফকির হাহাকারের মত গেয়ে ওঠেন–
বাপো কান্দো মায়ে কান্দে কান্দে বৃক্ষলতা।
সে কান্দনে আসমান ফাইটা ম্যাঘ ফাতা ফাতা।।
–আর কি?
–আর আবার কিগো শেখ দাদা। হ্যার পরে আরও দুইটা শব্দ শোনা যায়। নৌকা টিলা ওঠে। পোলা ভাইসা যায় দেইখা দেইখা বাপো-মায়ে পানির মইধ্যে ঝাঁপ দিয়া পড়ছে।
লঞ্চের সার্চ লাইট ঘুইরা ঘুইরা চইলা যায়। দূরে ভট ভট শব্দ মিলায়ে যায়।
মেনাজ ফকির হাত তুলে কারবালা বিবিকে দেখিয়ে বলেন, ওই যে সেই মা জননী। পানির মধ্যে তিনি ভাইসা আইছেলেন। তার শিশু পোলাডা মরছে। পোলার বাপে মরছে। তাগো মারতে পাকিস্তানী মেলিটারীর একডাও গুলি খরচ করণ লাগে নাই।
৩.
আচি খাল ছেড়ে বিশুবাবু, মেনাজ ফকির আর নবতারা সংঘের ছেলেটি পানঘুচি নদীর পাড়ে আসে। এইটুকু পথ আসতে আসতে তাদের পা মাঝে মাঝে বালির মধ্যে ডেবে যায়। আর শোনা যায়, বাতাসে হাহাকার—হায় হায় হায়।
সেখানে দি দি লক্ষণ দাস সার্কাসের পূর্বতন ঘোড়ার সহিস যাদুকর কাশেম মোল্লা পানঘুচির জল থেকে উঠে আসে। তার হাতে সালাম জমাদ্দারের দাদীজানের আঁকা দুলদুল ঘোড়ার চিত্রটি । বিশুবাবুকে বলে, আইসেন শেখ দাদা, ঘোড়া রেডি।
বিশুবাবু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, ঘোড়া কই?
–আছে। ঘোড়া আছে। কলারণের মানুষ মিছা কয় না। বলে দুটো হাততালি দেন যাদুকর কাশেম মোল্লা। আর তখন ঘোড়ার চিঁহি চিঁহি শোনা যায়। চিত্রের ফ্রেমের ভেতর থেকে সাদা রঙের ঘোড়া বেরিয়ে আসে। তার পেছনে বেতবন। বেতবনে কারবালা বিবি। কপালে পুরনো কাটা দাগ। পানির দিকে চেয়ে আছে। পানিতে তার শিশু পুত্রটি ভেসে আসতে পারে। ফিরে আসতে পারে শিশু পুত্রটির বাবা। তারা ভেসে না পর্যন্ত চেয়ে থাকবেন।
মাথার ওপরে জমাদ্দার বাড়ির টিনের বাকা চাঁদ। আলো দিচ্ছে। আলোতে দেখা যায়—ঘোড়ার গায়ে তীর বেঁধা। রক্ত লাল।
যাদুকর কাশেম মোল্লা বিশুবাবুকে বলে, এইডার নাম দুল দুল ঘোড়া। আপনেরে হাওয়ার বেগে বাড়ি পৌঁছায় দেবে। চিন্তা নাই। বলেন , সোভানাল্লা।
মেনাজ ফকির দোতারা নাড়ে। বিড়বিড় করে বলেন, খুদা হাফিজ। খুদা হাফিজ।
মন্তব্য
আরও কয়েকবার পড়ে তারপর মন্তব্য করবো। তবে ওই এলাকার ভাষাটা একেবারেই ঠিকঠাক আসেনি। কেমন যেনো একটা জড়াখিচুড়ি ভাষা হয়ে গেছে। আমার পিতৃকূলের আদি নিবাস ভাণ্ডারিয়া এবং তৎপরবর্তীতে শরনখোলা। এজন্যে ওই এলাকার ভাষাটা একটুআধটু বুঝি।
রামচোশ নয়, ওরা ওটাকে রামচোচ বা রামচোছ বলে। ওটা তপসে মাছের ওই এলাকার নাম।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আপনার ধারণা ঠিক। ভাষাটি একটু খিচুড়ি হয়ে গেছে। এর কারণ হল--আমি নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাজ করেছি। এজন্যই আমার মধ্যে মিশেল ভাষা হয়ে যায়। তবে--বলেশ্বর নদীর পশ্চিমপাড় আর পূর্ব পাড়ের মধ্যে ভাষার বিরাট পার্থক্য আছে। বাগেরহাট আর বরিশালের ভাষার পার্থক্যটা নদীর এপার ওপার থেকেই বোঝা যায়। এই লেখাটির পটভূমি দুএলাকারই। তার সঙ্গে রয়েছে ফরিদপুরের একটি উপপর্ব।
আপনাকে এই লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
খুব ভালো লাগল। তবে প্রথম দিকে মনে হলো বর্ণনায় বাহুল্য।
এ হাসনাত।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
কিছু বুঝিনা কেন ??? । আমি কি তবে চরম উদাসের পাশাপাশি চরম বলদ ...
না গো ভাইজান তুমি বলদ না । আর কোন বলদে কয় তুমি বলদ । হা হা হা । চেষ্টা কর ঠিক বুইঝা ফেলবা।
ডাকঘর | ছবিঘর
হয়তো আমার লেখার দুর্বলতার কারণে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। এখনো সবার মতো লিখতে পারছি না। লিখতে চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
ভাল লেগেছে
ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
ভাল লেগেছে। তুলনাটা খুব ধারালো।
facebook
ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
দাদা, তিন বার পড়লাম, তারপর ভালো ভাবে অনুধাবন করলাম।
গল্প সমালোচনা কি করব দাদা। ভাল লাগার আবেশটাই রয়ে গেছে ।
অনবদ্য।
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
এ সেপ্টেম্বরের আট তারিখে মনে হল কলারণ গ্রাম নিয়ে লিখি। এ গ্রামটি খুবই অজপাড়াগাঁ। নৌকা বা হাটা পথই সার। গ্রামে কারেন্ট নাই। জল খাবার টিউকলও নাই। এই গ্রামে ধান, রবিশস্য চাষের জন্য কৃষকদের কাছে আমি যেতাম।
কলারণ গ্রামে এক লোকের ঘোড়া ছিল। তিনি ঘোড়ায় চড়ে বগার চিকিৎসা দিতেন। বেশ নামী ছিল। এই ঘোড়াটি নিয়ে ভেবেছিলাম একপাতার লেখাটি লিখব।
এসময় আমার মনে পড়ল, এ গ্রামটিতে একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনী অত্যাচার করেনি। মানুষ মারেনি। অথচ তার আগে ইন্দুরকানি, পাড়েরহাট, লক্ষ্মীদিয়া, নামাজপুর, আন্ধারমানিক, জুজখোলা গ্রামগুলোতে পাকবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। এসবগল্প এ গ্রামের মানুষই আমাকে বলেছেন। কলারণে মানুষজন আশ্রয় নিয়েছে।
এসময় ডাঃ মনোরমার কাছে কারবালার কাহিনী পেলাম। বেশ ভুলে গেয়েছিলাম। ইমাম হোসেন শিশুটিকে নিয়ে জল খাওয়াতে নিয়েছিলেন--তাকে হত্যা করল এজিদের স্যৈন্যরা। বিষাদ সিন্ধুটি পড়ার পড়ে মনে পড়ল, ডঃ রত্নেশ্বর কর্মকারের কথা। তার স্ত্রীকে দেখেছি--মানসিকভাবে কিছুটা বিষাদগ্রস্থ। কর্মকার স্যার আমাকে বলেছিলেন, একাত্তরে ওনারা নৌকায় পালাতে গিয়েছিলেন। তখন খানসেনাদের গানবোটের শব্দ শুনে ওনাদের হাত থেকে শিশু সন্তানটি নদীতে পড়ে মারা গিয়েছিল। সেই থেকে ওনার স্ত্রী বিষণ্ন। উনি বলেছিলেন, খান সেনাদের আতঙ্কেই তো আমার নিষ্পাপ শিশুটি মারা গেল। এটা কি খান সেনাদের পরোক্ষ হত্যাকাণ্ড নয়?
এসব কালে শর্মিলা বোস নামে এক মহিলা ডেড রেকনিং নামে বই টই লিখে অপপ্রচার করছেন পাকবাহিনী একাত্তরে ৩০ লক্ষ মানুষ মারে নাই। পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগটি ভুল। পাকিস্তানীরা ভাল ছিল। ইত্যাদি।
এটা নিয়ে শুভাশীষ দাশ পাল্টা লেখালেখি করছেন। আমার অগ্রজ মুক্তিযোদ্ধা এমএমআর জালাল ভাই--শর্মিলা বোসের এই মিথ্যাচার নিয়ে উত্তেজিত। তিনি বলেন, খানসেনাদের সরাসরি গুলি ছাড়াও তাড়া খাওয়া আতঙ্কিত মানুষ পথে ঘাটে জলে জঙ্গলে অনাহারে রোগে শুকে মারা গেছেন। পাক হানাদাররা গণহত্যা না চালালে এভাবে মানুষতো আতঙ্কিত হত না। এভাবে বেঘোরে মারা পড়ত না। এগুলোও পাক হানাদার বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের মধ্যে পড়ে।
এভাবেই গল্পটি আট তারিখে লেখা হল। পরেরদিন কাঠামোর মধ্যে টুকটাক সাজগোজ পরানো হয়েছে। কাল টাইপ করেছি।
হয়তো আগামীতে মাঝে মাঝে পড়ব। আবার ঠিকঠিক করব। এ গল্পটি সত্যি গল্প। অনেক সত্যি আমাদের চারিদিকে আছে। এগুলো নিয়ে লেখা দরকার।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
গল্পটা পড়ার পর, গল্পের পেছনের কথাগুলো পড়ে মন বিষণ্ণ হয়ে গেল। শর্মিলা বসুরা যতই চাক, এত সহজে ইতিহাস তারা কিংবা তাদের সাংগোপাঙ্গোরা মুছতে পারবে না।
গল্পটা খুব মনোযোগ দিয়ে প্রথম থেকে না পড়লে অনেকের ধরতে অসুবিধে হতে পারে খুব সম্ভবত ভাষার ব্যবহার একটা ফ্যাক্ট। তবে নিঃসন্দেহে গল্প বা সত্য ঘটনাটি পড়তে ভালো লেগেছে।
এইবার মন্তব্য করি। নিঃসন্দেহে 'শক্তিশালী একটা ঘটনাপুঞ্জের সংকলন' বললেই বোধ করি ভালো বলা হবে আপনার এই লেখাটিকে। বেশ ভালো লেগেছে। পাক হানাদার বাহিনীর নৃসংশতার মাল্টিডাইমেনশনাল রূপ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা আছে আপনার লেখাটিতে, এবং অনেকাংশে সার্থকও হয়েছেন। তবে রূপকের ব্যবহার বোধকরি সব পাঠককেই প্রথম পাঠে কিঞ্চিৎ বিভ্রান্তিতে ফেলেছিলো আমারই মতো। একান্ত ব্যাক্তিগত মতঃ পাঠকদের মধ্যে বোধকরি শতকরা ৯০ জন তা তারও বেশি সোজাসাপ্টা লেখনীতে স্বচ্ছন্দ। রূপক বা বিমুর্তের রহস্য ভেদ করা সকলের পক্ষেই সহজসাধ্য হয়না।
অফটপিকঃ যদি গুস্তাকী না নেন, আপনার এই লেখাটির একটি কপিপেষ্ট কি অনুগ্রহ করে আমাকে সচলমেইলে পাঠানো যাবে?
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
সচলে ইমেল করা গেল না। বলে ভেলিড রিসিপিয়েন্ট দেওয়া হয় না। আমিতো আপনার নাম দিয়েছি।
গল্পটিকে মেলোড্রামা করার চেষ্টা করা হয়নি। শুধু কারবালার মাসুম শিশু হত্যার সঙ্গে মেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। আর আমাদের বাল্যে কারবালাই তো ঘরে ঘরে বিষাদ সিন্ধুটা পঠিত হত। পড়ে সেই বেদনাটি প্রাণে জাগরুক করা হত। আমার একটা চেষ্টা থাকে লেখায় কোনো কিংবদন্তী বা মিথ ব্যবহার করা। শুধু গল্প বলার ইচ্ছে আমার নেই।
আপনাকে ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
সুন্দর গল্প।
নতুন মন্তব্য করুন