আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আমার সবচেয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার কথা , নিঃসন্দেহে সেটি ছিল বাবার মৃতদেহ ঘরে এসে পৌছানোর অপেক্ষা । রাত প্রায় আড়াইটার কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে যদি বুঝতে পারেন, আপনার বাবা যাকে খুব সাধারন এবং আপাতঃদৃষ্টিতে নিরিহ একটা পেটব্যথার জন্য হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল তিনি আর নেই , তখন কেমন লাগে ? আমাকে অবশ্য সরাসরি খবরটা দেওয়া হয়নি। রাত আড়াইটায় ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার বোন কাদতে কাদতে বলছে ড্রয়িং রুম থেকে সবাই চেয়ার টেবিল সরিয়ে নিচ্ছে ! আমি বুঝে গেলাম কি হয়েছে ! তখন আমার যে অনুভুতিটা হয়েছিল সেটা ছিল প্রচন্ড ভয় ! আমার মনে আছে আমার কোন কান্না পাচ্ছিল না ! আমি তখন এইচ এস সি তে দারুন একটা গোল্লা মেরে কোন রকমে একটা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি , আমি তখন নতুন "বড় হয়েছি" তাই সহজে কাদিনা ! মনের মধ্যে প্রচন্ড একটা ভয় নিয়ে আমি অপেক্ষায় ছিলাম ! তবুও আমার নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় ! আমি ঐ এম্বুলেন্সে অথবা হাসপাতালে ছিলাম না , ছিলেন আমার মা আর বড় ভাই , ভয়াবহ একটা সময় পার করেছেন তারা! সেইদিন আমি অনেককিছু জেনেছিলাম ,জেনেছিলাম করুণার দৃষ্টিতে কেউ তাকালে কেমন লাগে ,জেনেছিলাম অপেক্ষা কতটা ভয়ানক হয় , আমি সেইদিন আরও জেনেছিলাম মৃত-মানুষের কপাল কেমন অলৌকিক রকম ঠান্ডা থাকে ! বিশ্বাস করুন , আপনি মোটেও প্রস্তুত থাকবেননা সেই ভয়ধরানো ঠান্ডা-হিম একটা কপালের জন্য ! আমি কামু নই তাই দ্যা আউটসাইডারের মতন পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিতে পারছি না কিন্তু চেষ্টা করতে ক্ষতি কি ? সকালে বড় আপা ঢাকা থেকে এসে পৌছালেন সাথে আমার ৪বছরের ভাগনে । বাবার লাশটা তখন ড্রইং রুমের মেঝেতে পাটির উপর রাখা আছে । আমার ভাগনেকে কোল থেকে নামানোর সাথে সাথে সে বাবার লাশের দিকে "নানা ভাই" বলে ছুটে গেল এবং তখন খুবই বিচিত্র কোন কারনে সে মাঝপথেই থেমে গেল একবার তার নানার মুখের দিকে একবার তার মার দিকে তাকিয়ে সে অজানা কোন ভয়ে আবার দৌড়ে তার মায়ের দিকে ফিরে গেল ! কেন সেদিন সে তার পরিচিত নানা ভাইকে এইভাবে ভয় পেয়েছিল তা আমি এখনও কোনভাবেই বুঝতে পারিনা ! তবে কি বাচ্চারাও জীবিত আর মৃতের মাঝে পার্থক্য করতে পারে ?
(ব্লগারঃ হেমন্তের ঘ্রাণ)
মন্তব্য
আমার অপেক্ষা ছিল ১০ দিনের
:(
........................
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমার নানার হাত আমার হাতে ছিলো যখন তার হৃদপিন্ড থেমে যায়! বিশ্বাস করুন, আমি খুব খুব খুব প্রার্থনা করছিলাম যেন তাইই হয়! প্রিয় কারও মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করা খুবই কষ্টকর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
নতুন মন্তব্য করুন