গত ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে রাগবি বিশ্বকাপ। মোট ২০টি দল চারটি পুলে বিভক্ত হয়ে লড়াই করছে একে অপরের সাথে। যদিও মাত্র কয়েকটা দল বাদে বাকি দলগুলো মাত্র একটা করে ম্যাচ খেলেছে, কিন্তু তাতেই উত্তেজনার পারদ উঠে পড়েছে অনেক উপরে।
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ান দক্ষিন আফ্রিকার সাথে ওয়েলস-এর ম্যাচটা শেষ হয়েছিল ১৭-১৬ পয়েন্টে অর্থাৎ ওয়েলস মাত্র এক পয়েন্টের জন্যে পরাজিত হয়। অথচ ওয়েলসকে একটা নিশ্চিত গোল থেকে রেফারী বঞ্চিত করেছে যা টিভি রেফারীকে দিলে পরিষ্কার হয়ে যেত। এই গোলটি হলে ওয়েলস পেত আরো তিন পয়েন্ট যা তাদের জয়কে নিশ্চিত করতো অনায়াসে। কিন্তু রেফারীর একগুঁয়ে আচরণের কারণে শেষ পর্যন্ত তা হয় নি। এটা নিয়ে ওয়েলস রাগবির সর্বোচ্চ সংস্থা IRB -এর কাছে দেন-দরবার করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত সহানুভূতি ছাড়া আর কিছুই জোটে নি।
অন্যদিকে ইংল্যান্ডের সাথে আর্জেন্টিনার ম্যাচটা হয়ে উঠেছিল দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এই দুই বৈরী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ম্যাচে ৭০ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনা এগিয়ে থেকেও শেষ ১০ মিনিটে হেরে যায় ইংল্যান্ডের কাছে। এবারের বিশ্বকাপ শুরু আগে আগে ইংল্যান্ডের প্রস্তুতি ছিল অসাধারণ। কিছুদিন আগে লন্ডন ছিলাম সপ্তাহ খানেক। তখন দেখেছিলাম ইংলিশ পত্রিকাগুলো প্রতিদিন বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে দাবি করছে এবারের ইংল্যান্ড দল তাদের হারানো গৌরব ফিরে পেতে যাচ্ছে। কিন্তু আর্জেন্টিনার সাথে তাদের প্রথম ম্যাচ দেখে তেমনটা মনে হলো না। তবে এবারের আসরের হটফেভারিট নিউজিল্যান্ডের শুরুটা ছিল উড়ন্ত। তারা ৪১-১০ পয়েন্টে টোঙ্গোকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছে। স্কটল্যান্ডও রোমানিয়ার বিরুদ্ধে দারুণ সূচনা করেছে। একই সাথে ফ্রান্সের সূচনা জাপানের সাথে ছিল নজর কাড়া।
এত এত খবরের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে খবর সেটা একটু আগে ঘটে গিয়েছে। আরেক হটফেভারিট অস্ট্রেলিয়াকে আয়ারল্যান্ড হারিয়ে দিয়েছে ১৫-৬ পয়েন্টে। আয়ারল্যান্ডের ডেডবল স্পেশালিস্ট আছে দুজন – স্যাক্সটন এবং ও'গারা। কিন্তু ম্যাচে জায়গা পায় তাদের একজনই। ফলে তাদের মধ্যে সব সময় একটা প্রতিযোগিতা লেগে থাকে। আজকের ম্যাচে কোচ তাদের দুজনকেই খেলালো এবং পুরো ১৫ পয়েন্টই এনে দিল তারা দুজন। হয়তো আগামী ম্যাচগুলোয় আইরিশদের গেইমপ্ল্যান এমনই থাকবে।
এবার সম্ভাব্য কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট সম্পর্কে ধারণা করা যাক। তার আগে বর্তমান অফিশিয়াল রাগবি Ranking টা তুলে ধরি, তাহলে দলগুলোর শক্তি সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হবে। ১. নিউজিল্যান্ড, ২. অস্ট্রেলিয়া, ৩. দক্ষিন আফ্রিকা, ৪. ইংল্যান্ড, ৫. ফ্রান্স, ৬. ওয়েলস, ৭. স্কটল্যান্ড, ৮. আয়ারল্যান্ড, ৯. আর্জেন্টিনা, ১০. সামোয়া।
পুল-এ থেকে শুরু করছি। যেহেতু এই পুলে নিউজিল্যান্ড রয়েছে তাই সম্ভাব্য পুল চ্যাম্পিয়ান নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। তবুও অতি আশাবাদীরা চোখ রাখতে পারেন ২৪ সেপ্টেম্বরের নিউজিল্যান্ড বনাম ফ্রান্স ম্যাচের দিকে। ঐদিনই মূলতঃ নির্ধারিত হয়ে যাবে পুল চ্যাম্পিয়ান এবং রানার্স আপ। পুল-বি থেকে কে চ্যাম্পিয়ান হতে যাচ্ছে সেটা বলা খুবই কঠিন। ১ অক্টোবর ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের ম্যাচের বিজয়ী হবে এতটুকু অনুমান করে নেয়া যায় যদি না আর্জেন্টিনা বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটিয়ে বসে। আর যদি ঘটিয়েই বসে, তাহলে নিশ্চিত ভাবে পুলটা চরম জমজমাট হয়ে যাবে। তবে হিসেবের সুবিধার জন্যে শক্তিমত্তার ক্রম অনুসারে আমরা ধরে নেই ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ান এবং স্কটল্যান্ড রানার্স আপ হবে। পুল-সি থেকে অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ান হবার পূর্ণ নিশ্চয়তা থাকার পরও আজকের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে গিয়ে সেই অবস্থান প্রায় হারিয়ে ফেলেছে। এই পুল থেকে অন্য যে দলটা আয়ারল্যান্ডকে হারালেও হারাতে পারতো, তারা ছিল যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু তাদের ইতিমধ্যে আয়ারল্যান্ড হারিয়ে দিয়েছে। ফলে পচা শামুকে পা না কাটলে এই পুল থেকে আয়ারল্যান্ড চ্যাম্পিয়ান এবং অস্ট্রেলিয়া রানার্স আপ হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ পুল, অর্থাৎ পুল-ডি থেকে দক্ষিন আফ্রিকা চ্যাম্পিয়ান এবং ওয়েলস রানার্স আপ হবে মোটামোটি নিশ্চিত।
এরকম যদি হয় অবস্থা তাহলে কোয়ার্টার ফাইনালগুলো হবে অনেকটা এমন:
প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল: আয়ারল্যান্ড বনাম ওয়েলস। (সম্ভাব্য বিজয়ী আয়ারল্যান্ড)
দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনাল: ইংল্যান্ড বনাম ফ্রান্স (সম্ভাব্য বিজয়ী? বলা মুশকিল!)
তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনাল: দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম অস্ট্রেলিয়া (সম্ভাব্য বিজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা)
চতুর্থ কোয়ার্টার ফাইনাল: নিউজিল্যান্ড বনাম স্কটল্যান্ড। (সম্ভাব্য বিজয়ী? নিশ্চিত ভাবে নিউজিল্যান্ড)
এভাবে যদি শেষ হয় কোয়ার্টার ফাইনাল, তাহলে সেমিফাইনাল দুটো হবে এমন:
প্রথম সেমিফাইনাল: আয়ারল্যান্ড বনাম ইংল্যান্ড অথবা ফ্রান্স (সম্ভাব্য বিজয়ী? যে কেউ জয়ী হতে পারে এই ম্যাচে।)
দ্বিতীয় সেমিফাইনাল: দক্ষিণ আফ্রিকা বনান নিউজিল্যান্ড ( ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ান দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে হোস্ট নিউজিল্যান্ড – এটাই মূলতঃ এবারের বিশ্বকাপের ফাইনাল। এখানে যে জয়ী হবে সেই জিতে নেবে এবারের বিশ্বকাপ। আমার ধারণা সেটা হতে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ড।)
ফাইনাল: নিউজিল্যান্ড বনাম আয়ারল্যান্ড/ইংল্যান্ড/ফ্রান্স (বিজয়ী? নিউজিল্যান্ড।)
এই হচ্ছে আমার অনুমান। যদি আপনার ভিন্ন কোন মত থাকে, তাহলে প্রকাশ করুন কমেন্টে এবং এগিয়ে নিন আলোচনা। চলতে থাকুক বিশ্বকাপ রাগবি, চলতে থাকুক আমাদের আড্ডা।
অনুমানের সচিত্র ছক:
মন্তব্য
রাগবি খেলাটা খুব একটা বুঝি না। কয়েকবার দেখেছি, খুব একটা মনে ধরল না। কিছু লোক মাঠে ধাক্কাধাক্কি করে বেড়াচ্ছে-এ দৃশ্য আমার তেমন একটা দৃষ্টিসুখকর মনে হয়নি। কিন্তু পরে জেনেছি রাগবি অনেক জনপ্রিয় একটা খেলা এবং পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রচলিত।
যদিও রাগবি দলগুলো সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই, তারপরও আপনার পুরো প্রচেষ্টা ভালো লেগেছে। আড্ডা চলুক।
রাগবি সম্পর্কে আমারও তেমন একটা ধারণা ছিল না। ২০০৭ সনে আয়ারল্যান্ড যাবার পর রাগবির নিয়মকানুন বুঝতে শিখি এবং তখন থেকেই আমি এই খেলার ফ্যান। খেলাটা ফুটবলের মতই দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ।
পোস্টটা পড়ার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।
টুইটার
রাগবি ফুটবলের পর এই বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা।
হ্যা, ফুটবলের পরপরই রাগবি বিশ্বের জনপ্রিয়তম খেলা। শুধু তাই নয়, এর সাথে উপমহাদেশের ঐতিহ্যগত সম্পর্কও রয়েছে। রাগবির সবচেয়ে পুরোনো দুই প্রতিপক্ষ তথা ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড এর মধ্যে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হওয়া বহু বছরের পুরোনো ম্যাচ (এবং সেটার ট্রফির) নাম ক্যালকাটা কাপ[১]। যদিও পরে রাগবি আমাদের এদিকে আর জনপ্রিয় হয় নি।
[১] http://en.wikipedia.org/wiki/Calcutta_Cup
টুইটার
আমাদের এখানে (নিউজিল্যান্ড) সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা রাগবি। আর এবছর ওয়ার্ল্ডকাপের হোস্ট হওয়ার কারনে ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ। গত কয়েক বছরে আমাকেও বেশ পেয়ে বসেছে এই খেলা। ছোটবেলা থেকেই ব্যক্তিগত ভাবে আমার ফুটবেলই ভক্তি, আর ক্রিকেটের প্রতি এক ধরনের অনাসক্তি । আর এখন তো কোন কথাই নেই। এবং আপনার মত আমরাও এখানে গড়পড়তা এমনটাই অনুমান করছিলাম সবাই। গতকাল অষ্ট্রেলিয়া - সাউথআফ্রিকা খেলার সময় আমরা সবাই সাউথআফ্রিকার সমর্থক ছিলাম। অল্-ব্লাকস সমর্থকদের ৯৫% ই এ্যন্টি অষ্ট্রেলিয়া । আয়ারল্যান্ডও আমার অন্যতম প্রিয় দল। এখন দেখা যাক আগামি সপ্তায় অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যন্ডের খেলায় কি হয়!! নিউজিল্যন্ডের জন্য এই ওয়ার্ল্ডকাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন এবং একই সাথে “ঐতিহাসিক” একটা খেলা হবে এটা। আমি থাকি ওয়েলিংটনে, নিউজিল্যন্ডের রাজধানি - কালচারাল সেন্টার, আর ট্যুরিষ্টদের প্রধান আকর্ষন। এখানে গত দু’দিন ধরে সিবিডি’র কাছের বিচের পাশের (Waterfront and Courtney place) রেষ্টুরেন্ট-পাব এলাকার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে রাগবি ফ্যানদের আনন্দ-ফুর্তির জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে সিটি কাউন্সিল। রাগবি ওয়ার্ল্ডকাপ-কে কেন্দ্র করে আয়োজন হয়েছে কার্নিভ্যাল-ফেস্টিভ্যল আর কনসার্ট। গতকাল রাতে আমার তোলা কয়েকটা ছবিও দিয়ে দিলাম
মানুষের আনন্দ দেখতে ভালো লাগে।
আপনার ছবিগুলো দেখে ভালো লাগলো
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড খেলাটা নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক একটা ম্যাচ হবে। আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত যে এই ম্যাচ জিতবে, সেই ট্রফি জিতবে। ফ্রান্স বা ওয়েলস এর ট্রফি জেতার মত ক্ষমতা নেই।
পুনশ্চ: ছবিগুলো এই মাত্র দেখলাম। ভালো লাগলো। শেয়ার করার জন্যে ধন্যবাদ।
টুইটার
গতকাল রাতে চ্যানেল ঘুরাতে ঘুরাতে হঠাৎ দেখলাম আয়ারল্যান্ড বনাম ওয়েলস্ এর খেলাটা রিপ্লে করছে।আগে কখনো দেখা হয়নি খেলাটা। তবে গতকালকে খুব মজা পেয়েছি। খেলাটাতে প্রাণ আছে বলতে হবে।নিয়ম গুলো ততটা বুঝছিলাম না। খেলাটার নিয়মের কোন ভাল লিঙ্ক থাকলে শেয়ার করবেন প্লিজ।
আপনার লেখাটা পড়ে সেমিফাইনাল, ফাইনাল দেখার আগ্রহ আরও বেড়ে গেল।
আপনি যে খেলাটা দেখেছেন, সেটা আমার হৃদয় ভেঙ্গে দিল! আয়ারল্যান্ড খুব বাজে ভাবে হেরে গেছে। যাইহোক, খেলায় হার-জিত থাকবেই। ....নিয়ম-কানুন নিয়ে আমি একটা পোস্ট লিখছি। লেখা শেষ হলে সচলে পেয়ে যাবেন
টুইটার
নতুন মন্তব্য করুন