শ্যাজাঁ ডি'কান

অন্যকেউ এর ছবি
লিখেছেন অন্যকেউ [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১৮/০৯/২০১১ - ৭:৫৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সে অনেককাল আগের কথা।
পুরানো আমল।
সেই আমলে ফ্রাঁমানি নামে এক দেশ ছিলো। ডিউক শ্যাজাঁ ডি'কান, নাহিউকা প্রভিন্সের শাসক, আমাদের এই কাহিনির দ্বিতীয় প্রধান চরিত্র। প্রথমজন? সে সময়মতো এসে পড়বে, চিন্তা নাই। তবে সে ঠিক মানুষ নয়, এই যা।

যাই হোক। আমাদের এই ডি'কান পরিবার, বংশানুক্রমে রাজপরিবারের বড়ই ঘনিষ্ঠ। শ্যাজাঁ ডি'কানকে রাণীমা নিজের মেয়েজামাইয়ের মতোই স্নেহ করেন। তাদের মাঝে এক স্বর্গীয় স্নেহমধুর সম্পর্ক। সময়ে অসময়েই শ্যাজাঁ রাণীমাকে স্মরণ করেন। নাহিউকার কলাটা মূলোটা প্রায়ই উপঢৌকন যায় রাণীমার অন্দরে।

গতকাল শ্যাজাঁর দূত এসেছিলো রাজ অন্দরে। তার আগমনসংবাদ দিয়ে গিয়েছে। আর আজ সকালবেলাতেই নাহিউকার বরকন্দাজদল সহ শ্যাজাঁ পৌঁছে গেছেন রাজপ্রাসাদের দুয়ারে। তড়িঘড়ি করে অন্দর দরবারে এসে পড়লেন তিনি। রাণীমাও খুব দেরি করেন নাই। তাড়াহুড়োর বহর দেখে অভিজ্ঞ চোখ জরুরত বুঝতে ভুল করতে পারে না।

শ্যাজাঁ দরবারে মিনিট দশেক অপেক্ষা করতে না করতেই বেশ অধৈর্য হয়ে উঠছিলেন। তবু অভিজাত পরিবারে শিক্ষিত মানুষ; রাণীমার আগমনে সেটা চেপে রেখে মুখজোড়া হাসি ফুটিয়ে তুলতে বেশি বেগ পেতে হল না। ওয়াটারলিলি খোদাই করা রাজসিক আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন শ্যাজাঁ।
-"ফ্রাঁমানি চিরকাল বেঁচেবর্তে থাক।"
-"বোসো শ্যাজাঁ। কেমন আছো?"

রাণীমা বসার পরে শ্যাজাঁও আসন গ্রহণ করলেন।
-"আপনার আশির্বাদে ভালোই আছি রাণীমা।"

রাণীমা ঠোঁটে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে স্নেহধন্য ডিউকের আপাদমস্তক চোখ বুলোলেন।
-"মুটিয়ে যাচ্ছো বেশ। নাহিউকা তবে ভালোই চলছে, তাই না?"
-"আপনার আশির্বাদ!"
-"তার পরে? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে টগবগ করছো ভেতরে ভেতরে। কী সমাচার?"

শ্যাজাঁর গুম্ফশোভিত প্যাঁচামুখ আজ হাসিতে উদ্ভাসিত।
-"আপনার কাছে লুকোনোর কিছুই নেই। আসলেই আমি খুব উত্তেজিত। একটা দুর্ধর্ষ যুগান্তকারী বুদ্ধি এসেছে মাথায়। গত সপ্তাহটা পুরোটা এই নিয়ে ভেবেছি। এখন আপনার সদয় দৃষ্টির গোচরে আনার সময় হয়েছে।"
রাণীমা বাধা না দিয়ে স্মিত মুখে শুনতে লাগলেন।
-"আমাদের দেশে, ভেবে দেখুন, গত দু'দশকে ক-তোগুলো স্কুল স্থাপিত হয়েছে। দেশে শিক্ষার প্রসার বেশ বেগবান। সবার মধ্যেই দারুন উৎসাহ।
এখন, এই যে এতো বড়ো একটা শিক্ষাখাত, এখানে কতো শ্রমশক্তি খরচ হয়ে যাচ্ছে ভাবুন। তরুন সমাজকে শিক্ষিত করে তোলার কোনও বিকল্প নাই। কিন্তু এদেরকে শেখানোর জন্য এতো এতো শিক্ষক যে পরিশ্রম করে চলেছে, এটা কি সত্যিই প্রযোজনীয় কী না এটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।"

-"ওউ! থামো থামো!"
রাণীমার মুখের হাসি মুছে সেখানে নিখাদ বিস্ময়।
-"দুটা ব্যাপার। এক, তুমি রাজপ্রশাসক, শিক্ষাখাত নিয়ে তুমি এতো ব্যস্ত কেন? আর দুই, শিক্ষকই যদি না থাকে, শেখাবে টা কে?!"

-"বলছি রাণীমা। সবকিছুই বলছি এক এক করে।
আপনার প্রথম কথার উত্তরে বলি, প্রশাসক বলে দেশের উন্নতির জন্য আরও কিছু ভাবনা যদি আসে, সেটা ভাববো না এটা তো হতে পারে না মা। দেশের কথা চিন্তা করি আমি, শুধু নিজের প্রভিন্স না, গোটা দেশের কথা ভাবতে আমার বুকটা আনচান করে। দেশের কথা ভাবতে ভাবতে আমার চোখ ভিজে যায়। আমাদের এই সুমহান দেশে..."
-"উফফ! থামো! জনসভা পেয়েছো নাকি?!"
-" ইয়ে! যাই হোক! দ্বিতীয় যেটা বললেন, সেখানেই আসলে মূল কথা।
আপনাকে যেটা বলছিলাম, শিক্ষাখাতকে বেগবান করার জন্য এই যে এতোগুলো স্কুলে এতো এতো শিক্ষক কাজ করে চলেছে, এরা যদি স্কুলে পড়ে না থেকে খামার আর কারখানায় কাজ করতো, কতো ভালো হতো চিন্তা করেই দেখুন। এই শিক্ষিত শ্রমশক্তি যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি, ফ্রাঁমানি আরও কতো উন্নত হয়ে উঠতো বলুন! আর শিক্ষকেরা এখন যে কাজটা করছে, শেখাচ্ছে, এই কাজটা ঠিক কেমনতরো? খুব একটেরে কাজ নয়? কোনও পরিবর্তন নেই; সবসময় একই জিনিস শিখিয়েই যাচ্ছে, শিখিয়েই যাচ্ছে, শিখিয়েই যাচ্ছে। পুরোটাই যান্ত্রিক। এই যান্ত্রিক পদ্ধতিটা, আমরা যদি মানুষ ছাড়াই চালাতে পারি, তাহলেই তো বাজিমাত!"
শ্যাজাঁ স্মিত মুখে একটু বিরতি নেন। রাণীমার মুখের হাঁ-য় রসগোল্লা আঁটে।

-"শিক্ষিত মানুষ ছাড়া শিক্ষা কিভাবে চলবে? ড্রাইভার ছাড়া কি গাড়ি চলে??"

-"পুরোটা শুনুনই না আগে! আসল বুদ্ধিটা বলি। এখানে যদি মানুষদের প্রতিস্থাপিত করতে হয়, তাহলে কী উপায়? এমন কিছু আমাদের প্রয়োজন, যারা হাত দিয়ে লেখালেখি করতে পারবে, দেয়ালে আঁক কাটতে পারবে। শিক্ষার্থীরা সেসব আঁক দেখে দেখে সবই শিখে যাবে।"

-"কিন্তু মানুষ ছাড়া তুমি হাত পাবে কোথায় শ্যাজাঁ? মানুষ ছাড়া আর হাত আছে কার?"

-"কেন? বাঁদর!"

-"বাঁদর!!"

-"অবশ্যই।" শ্যাজাঁর মুখে পাঞ্চলাইন চালানোর বিমলিন হাসি।

-"কিন্তু বাঁদর..

-"অসুবিধেটা কোথায় মা? বাঁদরের হাত আছে, চক-ডাস্টার-দেয়াল সবই চেনে, দেয়ালে আঁক কষতে শিখিয়ে দিলেই তো হয়!"

_____
অন্যকেউ


মন্তব্য

guest_writer এর ছবি

হাততালি

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বাঁদরগুলোর লেখাপড়া পঞ্চম শ্রেণী ইস্তক হলেই চলবে। এর বেশি শেখালে মুশকিল হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

বেশি শেখালে উট-গরু-ছাগল চিনতে পারবে না, যত কম শেখে ততই মঙ্গল। ন্যাশনাল সিকিউরিটির লোকজন পঞ্চম শ্রেণী উত্তীর্ণ এটাও অবশ্য সোয়াস্তির ব্যাপার!

অতিথি_পদ্মজা এর ছবি

ফিরে চল মূলে!

আমরা গাধা তাই নাকের ডগায় ঝুলিয়ে মূলা বাজায় রাজা তালি।

লেখা দারুণ। গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

মন্তব্যটা আরও দারুণ। ধন্যবাদ। হাসি

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

পরিব্রাজকের পদধূলি পেয়ে অনেক খুশি। হাসি

দ্যা রিডার এর ছবি

হো হো হো

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

হাসি

রিশাদ_ ময়ূখ এর ছবি

স্যাটায়ার ভালো হইসে। শিরোনাম দেখে বুঝতে পারি নাই এইদিকে আসবে

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

ধন্যবাদ ময়ূখ।
মহাপুরুষের নামটা ছাড়া অন্য কিছু শিরোনাম দিতে পারলাম না। চোখ টিপি

কল্যাণF এর ছবি

হো হো হো হাততালি

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

কল্যাণF এর কল্যাণ হোক। হাসি

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

শ্যাজা ডি'কান......... গড়াগড়ি দিয়া হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

শ্যাজা না, শ্যাজা না, শ্যাজাঁ! বুঝতে হবে! চোখ টিপি

তানিম এহসান এর ছবি

জটিল হইছে, জটিলস্য জটিল - অসাধারণ, সিম্পলি আউটষ্ট্যান্ডিং! শ্যাজাঁ ডি’ কান - রগড়টা বুঝতে পারার পর আপনার উপর ভক্তির পরিমান বাড়লো আরো; সচল জীবনে দ্বিতীয়বারের মত এই ইমোটা ব্যবহার করলাম =))। সাধুবাদ আপনাকে।

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

আপনাকে একগাদা আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- । লেখা যা-ই হোক, ভালোলাগা শুনতে বড়ই ভালো পাই। দেঁতো হাসি

রায়হান আবীর এর ছবি

মারাত্মক! দুর্দান্তিস গড়াগড়ি দিয়া হাসি

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

অনেকগুলা আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- , আবীর! হাসি

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি দারুণ লিখেছেন মশাই।


_____________________
Give Her Freedom!

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

ধন্যবাদ মৃত্যুময় ঈষৎ। হাসি

কাপুরুষ যোদ্ধা এর ছবি

ভালইসসে......ভালইসসে......... চলুক

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

ধন্যবাদ ভ্রাত। হাসি
আপনার নামটা দেখে একটা প্যারোডি মনে পড়লো...
'..লড়ে যায় কাপুরুষ
ভয়ে কাঁপে বীর!' চোখ টিপি

মধ্য প্রজন্ম এর ছবি

আমার ত মনে হয় যে ওই ২৪০০০ লোকও অন্তত চক্ষুলজ্জায় এখন এই মুহূর্তে আর লাইসেন্স চায় না। কিন্তু মন্ত্রীমশায় তাদের দিয়ে গাড়ি চালিয়েই ছাড়বেন।

ভদ্রলোকের এক জবান বলে কথা।

তাছাড়া তাঁর দিকটাও ত আমাদের ভাবতে হবে। তিনি সংগঠনের প্রধাণ হয়ে যদি মন্ত্রীত্ববলে এই কটা লোকের উপকার না করতে পারেন তবে কি চলবে? আঃহাঃ আপ্নারা এত অবুঝ কেন? ইজ্জতের সওয়াল।

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

ডিউককে আমরা তো আর দশহাজার করে টাকা দেই না। যারা দেয় তাদের প্রতি মহানের একটা কর্তব্য তো থেকেই যায়। চোখ টিপি

কর্ণজয় এর ছবি

বেশ... বেশ..

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

ধন্যবাদ কর্ণজয়। হাসি

অতিথি লেখকঃ অতীত এর ছবি

হো হো হো হো হো হো হো হো হো কিন্তু পরের অংশ কই??? ফ্রামানির শিক্ষককুল পরে কিডা হইলো??? চিন্তিত

অতীত

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

আর কারা হবে? বাঁদররা মহানন্দে আমজনতাকে 'শিক্ষা' দিয়ে চলেছে। আশপাশে জঙধরা রেসিঙ কারগুলা দেখেন না??

নীল এর ছবি

হেহ!! যার পছন্দ তার স্বজাতি!! রেগে টং

হটাৎ করে শেষ হয়ে গেল মনে হচ্ছে! আরেকটু মডিফাই করবেন নাকি একটি উত্তম উত্তম জাঝা! সহকারে!???

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

ইচ্ছা করেই হঠাৎ শেষ করেছি। গল্পটা যখন মাথার ভেতরে লিখছিলাম তখন এর চেয়ে বেশ খানিক লম্বাচওড়া ছিলো। এইটুকু লেখার পর মনে হোল মেসেজটা এতেই ভালোভাবে গুঁতো দিতে পারবে। হাসি

অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-হাসি

নীল এর ছবি

হেহে, হনুমান শিক্ষা প্রদানে তার স্বজাতিকেই পছন্দ করিবে!! রেগে টং

লেখার শেষটা অসম্পূর্ণ লাগছে, আরেকটু মডিফাই করবেন উত্তম জাঝা! সহকারে??

অমিতাভ এর ছবি

যা বাপ হাসাইতে পারলি... ঠ্যাং খা... হো হো হো

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

বচ্চন ভাই! আমি তো ভাবলাম এবার আপনার চোখ এড়িয়ে গিয়েছি। দেঁতো হাসি

আমি বত্রিশ দন্ত বিকশিত করে ঠ্যাং খেলুম, আপনিও কুয়ায় ঝাঁপ দেন। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।