এ ও সে ও ০২ : জোনাকি পোকারা এই শহরে ফেরে না

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: সোম, ১৯/০৯/২০১১ - ৯:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বড় হয়ে যাওয়া মানেই কি চলে যাওয়া?
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে জানা অজানা দেখা অদেখা সহস্র সীমানা পেরিয়ে অন্য সীমানায় পাড়ি জমানো...
কতভাবেইতো মানুষ চলে যাচ্ছে, সবসময়। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। এক মন থেকে আরেক মনে। এক সত্য থেকে অন্য সত্যে।
বিনুদির কথা মনে পড়ে।
সকাল আটটার রোদে উঠোনটা টলটল করছে। আকাশটা একদম আকাশী। বাবার হাতে পেপারটা হাওয়ার তালে তালে দুলছে। কোথা থেকে যে হাওয়াগুলো আসে? বিনুদিটা বলে - আকাশটা যেখানে মাটিতে মিশেছে সেখান থেকে সমুদ্র শুরু। সেই সমুদ্রের পাড় ঘেষে ম¯ত একটা হাওয়ার কল আছে- ওখানে নাকি বাক্স বাক্স হাওয়া তৈরী হয়। সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে দেশ বিদেশ থেকে সব জাহাজ আসে। সেই বাক্সভর্তি হাওয়া নিয়ে ওরা ওদের দেশে ফিরে যাবে। কত দূর সেটা ? জিজ্ঞেস করলে, ঠোঁট উল্টিয়ে বিনুদি বলে - বেশি দূরে না- যাবি নাকি?
আমি মাথা নাড়ি।
রাতে ঘুমুতে যাওয়ার সময় চোখে দৈত্যের মত চেহারার বিশাল বিশাল সব জাহাজ ভিড় করে। ঘুম আসে না। শুয়ে শুয়ে ফিসফিস করে বিনুদির সাথে সমুদ্র দেখতে যাওয়ার ফিকির খুঁজি। কিন্তু যাওয়া আর হয় না। বাবার চোখ এড়িয়ে কোথাও যাবার জো নেই। শুধু মনে মনে ভাবি - একদিন যাবো, ঠিক ঠিক যাবো। বিনুদিও ভাবনায় তাল দেয়।
কিন্তু কোন ফন্দি ফিকিরেই কাজ হয় না। দিনগুলো শুধু উড়ে চলে। এক দুপুরে দস্যূটা এসে বিনুদিকে নিয়ে কোথায় যে চলে গেল।
বিনুদির দস্যূটা মাথায় তালগাছের সমান লম্বা। আর গায়ের রং দুধে আলতায় জড়ানো - একদম মেয়েদের মতো- ফর্সা ফর্সা। দুই হাতে দুই হাড়ি ভর্তি রস নিয়ে দস্যূটা দাঁড়িয়ে আছে - তাতে টইটুম্বুর মিষ্টিগুলো লুটোপুটি খাচ্ছে। গম্ভীর মুখের আড়ালে ইয়া গোফের মধ্যে দিয়ে এক চিলতে হাসি উঁকি দিচ্ছে। আর তাকে ঘিরে সবার কেবল হৈ হৈ, রঙ ছিটাছিটি। উৎসবের হুল্লোড়ের মধ্যে কাঁদতে কাঁদতে বিনুদি শশুরবাড়ি চলে গেলে বাড়িটা ভরদুপুরে গল্পের বই এর মতো ... করমচা গাছের মতো একা একা পড়ে থাকে।
কোনকিচ্ছু করার থাকে না। সময়গুলো থমকে থাকে। রান্নাঘরে হুলোবেড়ালটা পর্যন্ত মুখ গম্ভীর করে আড়মোড়া ভাঙ্গে। আমি কয়েকটা কাগজের ঠোঙা সরিয়ে - ফু দিয়ে হাওয়া ভর্তি করি। মনে মনে ভাবি, হাওয়া ভর্তি ঠোঙাগুলো সেইসব বিশাল জাহাজগুলোর একটাতে রেখে আসবো। ওরা নেবে না ? নিশ্চয় নেবে। পাজড়ছেঁড়া বাতাসগুলো জাহাজে চেপে দূর কোন অচিন বন্দরে চলে যাবে - ভেনিস নাকি? বুকখানা ধড়াস করে লাফিয়ে ওঠে। আমি আমার শরীর জুড়ে টের পাই - আমার এই পাজড়ছেঁড়া বাতাসগুলো ভেনিস শহরের রাস্তায় বয়ে যাচ্ছে। হলুদ মলাটের সেই মার্চেন্ট অব ভেনিস বইটা রানু চলে যাওয়ার সময় আমাকে দিয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে শহরটা আমার প্রিয় একটা জায়গা। সুযোগ পেলেই আমি ভেনিস শহরের ঘুরে বেড়াই। রানুর ছায়া আবছাভাবে মনে পড়ে। এইসব আগডুম বাগডুম ভাবতে ভাবতে সময় কাটাই আর বুকের ভেতরটা খামচে ধরে ..
বিনুদিটা কেন শশুরবাড়ি চলে গেল- শশুর বাড়িটা কেমন বাড়ি? ? চারদিক খাঁ খাঁ করে।
সেই খাঁ খাঁ শূন্যতা আমার সাথে সাথে বড় হয়। সেই শূন্যতা বুকে ধরে আমি ছুটে বেড়াই। কাউকে কিছু বলতে পারি না। কেউই আমাকে কিছু বলতে পারে না। মা’র কথা মনে হয়।
মানুষ মারা গেলে কোথায় যায়?
গুঁটি গুঁটি পায়ে ছোট্ট বাবু সোনা হেঁটে বেড়ায় আর এই কথা জিজ্ঞাসা করে। সবার মতই আমারও একটা নাম ছিল। কিন্তু মা আমাকে কক্ষনো সে নামে ডাকতো না। ছোট্ট বাবুসোনা, ছোট্ট বাবুসোনা - কোথায় গেলে তুমি?- চিৎকার করে করে মা আমাকে খুঁজতো।
বড় ভাইয়া কোথা থেকে এসে ছোঁ মেরে কোলে তুলে নেয়। আমি আবার বলি, মানুষ মারা গেলে কোথায় যায়, বল না? মাথায় হাত বুলিয়ে বড়ভাইয়া বলে - মানুষ মরে গেলে জোনাকি পোকা হয়ে যায়।
জোনাকি পোকা- আমি জোনাকি পোকা দেখবো। আমি গো ধরি। ভাইয়া আমাকে বুকে চেপে ধরে।
নানু বাড়ির সবুজ ছোট্ট শহরের পাশ দিয়ে রূপালী রঙের একটা নদী তির তির করে বয়ে গেছে। সেই নদীর উপরে - রঙধনুর মতো একটা উচুঁ ব্রীজ দাঁড়িয়ে থাকে। সেই ব্রীজের উপরে ‘ছোট্টবেলার আমি’ বড় ভাইয়ার হাত ধরে দাঁড়িয়ে নিচে বিরাট বিরাট কালো রঙ করা নৌকা দেখে।
এত্ত বড় নৌকা-!
আমি বড় ভাইয়ার দিকে তাকাই।
বড়ভাইয়া সিগারেট ধরায়। সিগারেট থেকে একটা সাদা ধোঁয়া উড়ে উড়ে মেঘের দেশে যায়। ‘ছোট্ট আমি’ জানে, এ কথা বাসায় বলতে হয় না। ‘ছোট্ট আমি’ মুখ দিয়ে বিচিত্র সব শব্দ করে আর হাওয়ায় ভাইয়ার চুল ওড়ে। নিচে নদী তির তির বয়ে যায়।
‘ছোট্ট আমি’র আনন্দ ধরে না : কোথায় যায় এই নৌকা- সমুদ্দুরে?
হু -
সমুদ্র মানে সেই অচিন দেশ। গল্পের বইয়ের রঙিন পাতায় দেখা ছবি মনে পড়ে ছোট্ট বাবুসোনার। একটা ম¯ত পাল তোলা জাহাজ নীল নীল ঢেউ এ দুলতে দুলতে যাচ্ছে।
জোনাকির কথা তখন ‘ছোট্ট আমি’ বেমালুম ভুলে গেছে। ওর চোখে তখন বড় বড় দাড়, নৌকার ফুলে ওঠা পাল, মাঝিমাল্লার ছুটোছুটি।
এমন করে বিকেলটা সন্ধ্যার ভেতর ডুবে যায়।
আলো নিভে আসতেই কোথা থেকে যে আসে এত জোনাকি, প্রথমে একটা দুটো তারপর থোকায় থোকায়... বাবুপাড়ার ব্রীজটা যেন আকাশেরও উপরে, নিচে লক্ষ লক্ষ জোনাকি খালি জ্বলছে আর নিভে গিয়ে আবার জ্বলছে.. তারাদের মতো।
মায়ের মুখ মনে পড়ে তখন। ছোট্ট আমি - মায়ের বাবুসোনা হয়ে যায়। মনের মধ্যে মাকে ডাকে সে। কিন্তু এত জোনাকির মধ্যে কোনটা যে মা, সেটা বুঝতে পারে না বাবুসোনা। কেবল অন্ধকারে শীত শীত লাগে আর একটু একটু ভয় লাগে। ভাইয়ার হাত জোরে চেপে ধরে সে। ফিসফিস করে বলে- বাড়ি যাবো।
জোনাকি দেখবি না...?
বাবুসোনা জোরে কেঁদে ওঠে - না, সে জোনাকি দেখবে না।
ছোট্ট বাবুসোনা কি আর আগে জানতো- জোনাকি মানে অন্ধকার।
ভাইয়া তাকে আঁকড়ে ধরে শহরের আলোর দিকে হেঁটে চলে ।
পেছনে অন্ধকারে উড়ে বেড়ায় লক্ষ লক্ষ জোনাকির দল। ওরা কখনও শহরে আসে না।
মা’-ও না। কেবল মনের মধ্যে মা আমার জন্য জেগে থাকে।
এই শহরে - নাগরিক কেতাদুরস্ত চাকচিক্যের ভেতর দিয়ে যখন হেঁটে যাই তখন মানুষের গায়ে মাখা কত রকমের সুগন্ধি নির্যাস, কত ধরনের সৌরভে নাক ভেসে যায়। তখন - চারপাশের সব মানুষগুলো- আশ্চর্য ম্যাজিকের মত বাতাসে মিলিয়ে যায়, কোথাও আর কাউকে খুঁজে পাই না। ছোট্টবেলায় মার মুখে শোনা রূপকথার রাক্ষসও এখানে মানুষের খোজে এসে কোন মানুষের গন্ধ পায় না। আমিও না। আমি কেবল আমার ভেতরে ডুবে গিয়ে মায়ের ঘ্রাণ পাই। ইচ্ছে করে মায়ের সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু কিছইু বলতে পারি না। মনে মনে মাকে আঁকড়ে ধরে শুধু কাঁদতে থাকি। আমার ভেতরে কষ্ট জঁমাট বাঁধে। কেন মাকে কিছু বলতে পারি না? ... কত কথা জমে থাকে মনের মধ্যে, তবু কাউকে কিছু বলতে পারি না?
সব সন্তানেরাই নয়টা মাস মায়ের গর্ভের ওমের ভেতরে লুকিয়ে এই পৃথিবীতে আসার জন্য অপেক্ষা করে । তখন নাকি মায়েরা তাদের সন্তানদের পৃথিবী নিয়ে অনেক গল্প বলেন। কত কত গল্প। সেই গল্প পৃথিবীর আর কেউ শুনতে পায় না। শুধু তার সেই সন্তানই এই গল্পকথাগুলো শুনতে পায়। সেইসব কথার ভেতর দিয়েই সন্তানের মধ্যে কথারা জন্ম নেয়। সন্তানেরা কথা বলতে শেখে। এই পৃথিবীতে সে বড় হয়।
আমি মনের ভেতরে ডুবে গিয়ে মায়ের পেটের মধ্যে আমার বেড়ে ওঠার স্মৃতি খোঁজার চেষ্টা করি। কার কাছ থেকে শুনেছি - মনের মধ্যে কেউ যদি ডুবে যেতে পারে তবে সে সব ষ্মৃতি খূজে পাবে। মন তার অবচেতন অংশে সব কিছু সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে। সেখানে কোন কিছুই হারায় না।
আমি মনের ভেতরে ডুব দেই। গভীর থেকে আরো গভীরে। কালো একটা অন্ধকার। কিন্তু আমরা পৃথিবীর যেই অন্ধকার চিনি -এটা সেই চেনা অন্ধকার নয়। একটু আলাদা। একটু অন্যরকম। এটা মাতৃগর্ভের অন্ধকার। অন্ধকার ঠিকই- কিন্তু একটা আলোর মত। আমার মনে পড়ে গ্যোটের কথাটা। সেই যে মৃত্যুকে সামনে দেখে তিনি চিৎকার করে উঠেছিলেন - আলো আলো বলে। তবে কি মৃত্যুও একটা অন্য মাতৃগর্ভের সূচনা? কি জানি। আমি এই আলোর মত জ্বলজ্বলে অন্ধকারের মধ্যে অপেক্ষা করি।
আমি অপেক্ষা করি।
কখন যে মা আমাকে গল্প শোনাতে আসবে...
কিন্তু মা আমাকে কোন গল্প বলতে আসে না।
শুধু থমকে থাকা নীরবতা চারিদিক থেকে ঘিরে থাকে।
আজব এক শূন্যতা।
আমার ভয় লাগে। খুব ভয় লাগে।
মা তুমি কোথায়? আমি চিৎকার করে মাকে খুঁজি।
চারিদিকে অন্ধকার। মা তুমি কোথায়। আমি ফিসফিস করি। কান্নার মত গলা শোনায়।
চুপ। যুদ্ধ হচ্ছে। মায়ের ফিসফিসে গলা শুনি- ওরা শুনতে পেলে তোকে এই পৃথিবীতে আসতে দেবে না।
তারপর আবার সব চুপচাপ। সব চুপচাপ। সব চুপচাপ।
আমিও ভয়ে বোবার মত -বধিরের মত - অন্ধের মত জড়বস্তু হয়ে পড়ে থাকি।
অনাগত সন্তানকে যেসব কথা বলার ছিল সেসব কথা মা আমাকে আর বলে না। তাই মার সেইসব না বলা কথা আমার আর শোনা হয় না। মায়ের সেই সব না বলা কথা বুকের মধ্যে একটা শূন্যতা তৈরী করে।
ছোটবেলা থেকে এর শুরু। বাথরুমে গেলেই চিন্তাটা পেয়ে বসতো।
মাথার মধ্যে কে জানি ফিসফিস করে বলে উঠতো- ‘তুমি কি জানো- তোমার যে আসলে ভাষা নেই।’
ওর কথার ধরন শুনে আমি ভয় পাই- কিন্তু স্বীকার করি না।- কী বলছো তুমি? পাগলের মতো।
তোমারতো সত্যি ভাষা নেই। তোমার কথা হয় না। তুমি কথা জানো না।
আমি চিৎকার করে উঠি - না, আমি কথা জানি, আমি কথা বলতে পারি। এই যে দেখো, আমি কথা বলছি ...কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হয় না। মগজের মধ্যে নীরব চিৎকারের শব্দ কেবল প্রতিধ্বনি তোলে।
সে এবার হাসে। তার মসৃন সাদা দাঁতগুলো জ্যোৎøা ভেঁজা নেকড়ের মত ঝঁকমকিয়ে ওঠে।
তুমি যখন মায়ের পেটের মধ্যে ছিলে, মা তোমার সাথে কোন কথা বলেন নি। এই জন্য - তুমি শুনতে শেখো নি, বুঝতে শেখো নি, বলতে শেখো নি। তোমার কোন ভাষা নেই।
আমি কষ্টে ফেটে পড়তে চাই। পারি না। আমার অসহায় মুখ দেখে সে মজা পায় খুব। ওর কন্ঠস্বর জুড়ে সেই মজা ঢাকঢোল ঝাঝর হয়ে বাজতে থাকে।
তোমার যখন জন্ম হচ্ছিল, তুমি যখন তোমার মায়ের পেটে ছিলে - যুদ্ধের কারণে তোমার মা তোমার সাথে কথা বলে নি। তাই তুমি কথাও শেখো নি। ভাষাও শেখ নি। তুমি ভাবছো, তুমি কথা বলছো। কিন্তু আসলে ওটা কোন কথাই হয় না। তুমি যখন বলো - আমার ক্ষুধা লেগেছে, আমাকে ভাত দাও- কেউ কিচ্ছু বোঝে না। কিন্তু তাও সবাই তোমাকে ভাত দেয়। কী করে ওরা তোমাকে বুঝতে পারে জানো? ওরা তোমাকে একটু ভালবাসে বলে, তোমাকে একটু স্নেহ করে বলে তোমার চোখ-মুখ দেখে তোমার কিছু কিছু চাহিদার কথা বুঝতে পারে। তোমার প্রয়োজনটুকু অনুমান করে নিতে পারে। বাচ্চাদের কান্না শুনে যেমন করে বড়রা বোঝে- বাচ্চারা কী চায়। ততটুকুই। এর বেশি কিছু না।
কিন্তু আমিতো শিশু নই। তাহলে কী আমি নির্বোধ? শব্দবোধহীন একজন মানুষ? আমার মতো যাদের জন্ম যুদ্ধের সময়, কিন্তু মাতৃজঠরের অন্ধকার যাদের যুদ্ধস্মৃতি থেকে আড়াল করে রেখেছে - তারা কী সবাই আমার মতো? আমি সবার চোখের মধ্যে এই উত্তর খুঁজে বেড়াই কিন্তু বিভ্রান্তির একটা কালো ছায়া শুধু পড়ে থাকে। আমি কিছু বুঝতে পারি না।
এইসব ভাবনা একটা দম আটকানো গুমোট ভাব দিয়ে শুরু হতো। তারপর বাড়তে বাড়তে এত ভারী হয়ে উঠতো যে চারদিকের নিঃস্তব্ধতা ভেঙ্গে হটাৎ পাগলের মত চিৎকার করে গান গেয়ে উঠতে, গান গাওয়া থামিয়ে একপর্যায়ে কথা বলতে শুরু করতে .. সবাইকে জানাতে চাইতে যে তুমি কথা বলতে পারো .. অন্যের কথাটা তুমি বোঝো। কিন্তু তোমার কাছে যা ছিল তোমার অস্তিত্বের ঘোষণা তা তো আবোল তাবোল কথার মতো বাথরুমের গা ধোওয়া জলের সাথে ধুয়ে গেছে।
নিজের সাথে নিজেই কথা বলার চেষ্টা করতে করতে আমি চুপচাপ বসে থাকি। একটা অসহায় একাকীত্ব আমাকে ঘিরে থাকে। এমন সময় কোথা থেকে একটা জোঁনাকী পোকা উড়ে আসে। আমি মুখ ফুলিয়ে থাকি। জোনাকি পোকাটা ঠিক আমার উল্টোদিকে বসে জ্বলে, জ্বলে আর জ্বলে।
জোনাকি পোকাটা কি কিছু বলতে চায়?
আমি জোনাকি পোকাটার দিকে তাকিয়ে থাকি। জোনাকি পোকাটা কিছু বলে না। সেও আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর চোখদুটোকে ¯েœহ জড়ানো মনে হয়। মায়ের চোখজোড়াতে এইরকম মায়া ছিল। মাথার মধ্যে চিন চিন করে ওঠে। ভাইয়ার কথা মনে হয়। মানুষ মরে গেলে জোনাকি পোকা হয়ে যায়- ও বলতো। এই জোনাকি পোকাটি কী আমার মা? জোনাকি পোকাটার দিকে ভাল করে তাকাই। সে যেন আমাকে ডাকছে। আমি জোনাকি পোকাটার কাছে গিয়ে নিচু স্বরে ‘মা’ বলে ডাকি। বুকের মধ্যে খালি ভয় -আর কেউ যদি আমার ডাক শুনে চলে আসে, তখন মা যদি উড়ে যায়।
আমি স্পষ্ট দেখতে পাই জোনাকি পোকাটার ঐ ছোট্ট মুখটায় কেমন হাসি ফুটে ওঠে। আদুরে গলায় বলে
: কী রে?
: মা, তুমি আমাকে কথা শেখাও নি কেন মা?
আমার গলায় অভিমান ঝরে।
: আমি যে এখন কথা বলতে পারি না।
: কে বলেছে তুই কথা বলতে পারিস না?
শব্দ গুলো মায়ের কোমল হাত হয়ে আমার মাথার এলামেলো চুলগুলো ঠিক করে দেয়। আমি মাকে জড়িয়ে ধরি।
: আমি জানি মা। আমি যখন তোমার মধ্যে ছিলাম - তখন আমার সঙ্গে তুমি কথা বলো নি - এই কারণেই তো মা আমি কথা বলতে পারি না। কেউ আমাকে বোঝে না।
: তখনতো যুদ্ধ ছিল রে। তখনতো কারোরই একার কোন কথা ছিল না। নিজের কথা ছিল সবার কথা, আর সবার কথা ছিল নিজের কথা। কী করে জানবো, সবাই সেইসব কথা এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবে? তোর আর সেই সব কথা শোনা হবে না।
: কোন সব কথা মা -
আমি মায়ের মুখটাকে চেয়ে চেয়ে দেখি। কেমন জানি অসহায় লাগে মাকে।
: এই যে যুদ্ধ - কখনও যুদ্ধ ভুলে যাব না। যুদ্ধকে ভুলে যেতে হয় না। যুদ্ধ ভুলে গেলে- কেন যুদ্ধ হয় এটা আমরা ভুলে যাব। তখন বারবার যুদ্ধের কারণ ফিরে আসবে। বারবার যুদ্ধ শুরু হবে। যুদ্ধ থামবে তারপর আবার শুরু হবে - তারপর আবার- আবার বারবার ...
কথাগুলো বলতে বলতে মা জ্বলতে নিভতে শুরু করে। তার এই নেভা আর জ্বলা দেখে মনে হয় - তার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি কিছু বুঝতে না পারা অবোধ শিশুর মত মার দিকে তাকিয়ে থাকি। একসময় মার কষ্টটা বুকের মধ্যে খামচে ধরে। মনে হয় চিৎকার করে বলি - মা, তুমি কষ্ট পেও না, আমি ভাল আছি- খুব ভাল আছি। এইতো সেদিন একটা প্লেন মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। ছোট্ট একটা প্লেন। একটা ছেলে দুহাতে প্লেনটাকে জড়িয়ে ছিল । আমি ওকে হাত নাড়তেই আমার দিকে তাকিয়ে সে মিষ্টি করে হেসেছে জানো। তারপর ঐ যে আমগাছটা, তুমি লাগিয়েছিলে না- ওখানে এখন সোনালী মুকুল এসেছে। প্লেনটা সেই সোনালী মুকুলের আড়ালে উড়ে চলে গেল। কিন্তু জানো মা, যাকেই আমি এই কথা বলি কেউ বিশ্বাস করে না। কেমন অবিশ্বাসী চোখে আমার দিকে তাকায়। আমার খুব রাগ হয়। আমি বড় হলে এ শহরে থাকবো না। ঠিক ঠিক চলে যাবো। তুমি কিন্তু না করতে পারবে না মা।
ঠোঁটজোড়া কেঁপে ওঠে শুধু, কিছুই বলতে পারি না। নির্বাক দৃষ্টির সামনে দিয়ে মা উড়ে উড়ে আকাশ দিয়ে কোথায় জানি চলে যায়। কেবল আকাশ জুড়ে জ্বলজ্বলে রূপোলী তারাগুলো দেখে মনে হয় সেগুলো মা আমার জন্য রেখে গেছেন। এইসব তারাগুলোর মিটমিটে আলোয় চোখের সামনে এই শহরের সবকিছু যুদ্ধক্ষেত্রের মত পড়ে থাকে।
কড়া, মেটে আর জান্তব ... মোস্তাক চাচার মত।
মোস্তাক চাচা।
লোকটা কীভাবে যে পাখি মারত! ও বন্দুক হাতে হেঁটে যেত বিলের ধারটায়, ওখানে অনেক পাখি থাকে। পাখিরা এখানে ওখানে বসে আছে .. সে কাছে গিয়ে ছেলেবেলার মত হুস হুস করে উঠতো। পাখিরাও তার হুস হুস শুনে পাখা ঝাপটিয়ে উড়ে যেত, যেন তারাও এই দুষ্টুমীর খেলায় যোগ দিয়েছে। কিন্তু পাখিরা যেই আকাশে ডানা মেলে ধরতো এক মুহূর্তে তার চেহারাটা পাল্টে যেত। আলগোছে রাখা বন্দুকটা হাতে উঠে আসতো - শূন্যে উড়ে যাওয়া পাখির দিকে গুলি ছুড়ে দিত ঠা ঠা ঠা। ঠাঠা.. ঠা ঠা ঠা .. ঠা ঠা। পাখিগুলো বুকের কাছে লাল রঙ মেখে আকাশ থেকে খসে পড়তো। কি ভয়ংকর.. বেয়াদপ, আস্ত একটা বেয়াদপ লোকটা।
এখন আমার মোশতাক নামের সব মানুষদের এরকম মনে হয়। মীরজাফরের মত।
একটা ছবি চোখে ভেসে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর পাশে বসে আছেন খন্দকার মোস্তাক আহমেদ। ঝুকে পড়ে বঙ্গবন্ধুর কানে কানে কি জানি বলছেন। মাথায় কিস্তিটুপি পড়া মোস্তাকের চেহারাটা সস্তা সিনেমার কুচক্রী খলনায়কের মত মনে হয়। নিশ্চয় কোন ষড়যন্ত্র পাকানোর জন্য কানকথা পাড়ছে। বঙ্গবন্ধুর উপর রাগ হয়। কেন যে বঙ্গবন্ধু এই লোকটাকে এত গুরুত্ব দিতেন! এই সব লোকের কারণেই দেশটার এই দশা!
মায়ের কথাগুলো মনে পড়ে। অতীতের বিস্মৃতি ভবিষ্যতকে কুয়াশার হীম চাদরে ঢাকে। ছেড়া কাপড়ে এই শীতে বেঁচে থাকাও কষ্ট। ইতিহাসের আগুনের খোজে কাঁপতে কাঁপতে বের হই। ইতিহাস মানেই - বই এর পাতার মলিন অক্ষর। সেই অক্ষরে মুখ ডুবিয়ে দেখি - রবারের ঘষাঘষিতে কিছু অক্ষর ঝাপসা হয়ে গেছে। পড়া যায় না। কিছু অক্ষরের উপর আবার কাটাকুটি করে অন্য অক্ষর বসানো হয়েছে। তালগোল পাকিয়ে ওঠে সবকিছু। ঠিক বুঝতে পারি না - কোনটা সত্যি। এই যে আমি- সেই আমি কোথা থেকে কেমন করে এসেছি- তার কোথায় যে কী শেকড় - কিচ্ছু বোঝা যায় না। নিজেকে অন্ধ অন্ধ মনে হয়। অন্ধত্বই ভাল - ফিসফিস করে বর্তমান এসে বলে যায়। অতীত মানে মৃত। পেছনে তাকানো মানে এই ধাবমান মুহূর্ত থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা। সামনে চোখ রাখো, আর এগিয়ে যাও- বিজ্ঞাপনের বুদ্ধিমান ঝাঝালো ভাষা বর্তমানের কণ্ঠে ঝকমকিয়ে ওঠে। কী যে করবো - কিছুই বুঝতে পারি না। বোকার মত বসে বসে তারার আলো গায়ে মেখে আকাশের দিকে তাকাই। অসংখ্য ঝিকিমিকি তারা সারা আকাশ জুড়ে জ্বলছে। ঐ আকাশের কোনকিছুই বর্তমান নয়। হাজার লক্ষ কোটি বছর আগের তারা আমরা আকাশ জুড়ে দেখছি। এমনকি যাদের দেখছি তাদের কেউ কেউ এখন আর বেঁচেই নেই। মৃত তারা- তবু এখনও আলো দিয়ে যাচ্ছে। এইসব তারার আলোয় মায়ের গন্ধ লুকিয়ে আছে মনে হয়। দাদুর ডাক। মাটির ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রতœতাত্বিক ঐশ্বর্য্যরে মতো। আমাকে ডাকে ওরা। নিজেকে বোকা বোকা মনে হয়। বোকামীর মধ্যে শিশু লুকিয়ে থাকে। ইতিহাসশূন্য বর্তমানের ভেতর দিয়ে বোকা শিশুর মত হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে চলি। সামনে অন্ধকার। মার্তৃগর্ভের মত। মনটা জেগে ওঠে। কানদুটো খাড়া হয়ে ওঠে। ইতিহাসের গহ্বর থেকে যদি কোন শব্দ ধরা পড়ে। নিঃস্তব্ধতা ঝরিয়ে টুপ টাপ টুপ টাপ- কিছুক্ষণ পর পর ক্ষীণ শব্দ বেজে ওঠে। শিশিরের শব্দের মতন । কিসের শব্দ ওটা? চিৎকার করে উঠি, - ‘কেউ কি আছো ওখানে- কেউ?’


মন্তব্য

অতিথি লেখকঃ অতীত এর ছবি

অনুভূতিগুলোর বিচ্ছিন্ন কিন্তু চিরাচরিত বিন্যাস। পড়ে ভালো লাগলো। চলুক

অতীত

হেমন্তের ঘ্রাণ এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু চলুক চলুক চলুক দুর্দান্ত !!! কেমন যেন মন খারাপ হয়ে গেল !! মন খারাপ মন খারাপ

তিথীডোর এর ছবি

ইয়ে, জোনাকি হবে বানানটা। ইয়ে, মানে...

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

কর্ণজয় এর ছবি

ধন্যবাদ তিথীডোর...
এক্ষুনি শিরোনামের বানানটা ঠিক করছি...
ভেতরের বানানগুলো পরে ঠিক করে নেবো...
ছুটতে হচ্ছে...

তিথীডোর এর ছবি

কিঞ্চিৎ বিলম্বে ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

তারেক অণু এর ছবি

উপমাগুলো দারুণ লেগেছে- ভরদুপুরে গল্পের বইয়ের মত একা ! চমৎকার ।

নিটোল. এর ছবি

দারূণ! দারূণ! হাততালি

নজমুল আলবাব এর ছবি

চমৎকার।

দিহান এর ছবি

বড় হওয়া মানেই চলে যাওয়া...অনেক ভালো লাগলো।

ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

উপমার বিন্যাসে মুগ্ধ! হাসি

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

ফাহিম হাসান এর ছবি

নির্বিচারে পাখি মারা খারাপ। যারা পাখি মারে, আমি তাদের পছন্দ করি না।

লাবন্যপ্রভা এর ছবি

এতো বড় বর্ণনাও বিরক্তি ধরাতে পারলো না ... অবিচ্ছিন্ন মনমুগ্ধকর ধারাবাহিক বর্ণনা। চলুক

রিশাদ ময়ূখ এর ছবি

উপমা, উপস্থাপনায় ভালো লাগা। ভালো থাকুন

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

মুগ্ধতা। একজন একজন প্রিয় মানুষকে ছুঁয়ে যাবার কথাগুলো পড়ে সত্যি চমৎকৃত। চলুক

তাপস শর্মা এর ছবি

ভীষণ ভাবে ছুঁয়ে গেলো।

মর্ম এর ছবি

চমৎকার চমৎকার লেখা! পরে ভাল লাগল খুব।

সবচেয়ে ভাল লাগল 'আমি'থেকে 'ছোট্ট আমি'-কে আলাদা করে দেখানোটা। পরের লেখার প্রত্যাশায় রইলাম! চলুক

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

মর্ম এর ছবি

চমৎকার চমৎকার লেখা! পড়ে ভাল লাগল খুব।

সবচেয়ে ভাল লাগল 'আমি'থেকে 'ছোট্ট আমি'-কে আলাদা করে দেখানোটা। পরের লেখার প্রত্যাশায় রইলাম! চলুক

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

খুব ভালো লাগলো।

আশালতা এর ছবি

খুব বেশিরকমের সুন্দর লেখা। চলুক

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

তানিম এহসান এর ছবি

হাসি

বন্দনা কবীর এর ছবি

আপনার লেখাটা পড়তে পড়তে কেমন যেন আবার স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লাম। চোখ ঝাপ্সাও হল।
কেন যে...

আসলেই... বড় হওয়া মানেই কি চলে যাওয়া?!!

সৈয়দ আফসার এর ছবি

মানুষ মারা গেলে কোথায় যায়?

মানুষ মরে গেলে জোনাকি পোকা হয়ে যায়।

চারপাশের সব মানুষগুলো- আশ্চর্য ম্যাজিকের মত বাতাসে মিলিয়ে যায়।

তুমি কি জানো- তোমার যে আসলে ভাষা নেই।

উত্তম জাঝা!

কথার বিচ্ছুরণসহ অন্তর্লীন বেদনাকে নিরবিচ্ছন্ন প্রতীকী দিয়ে নিজসত্তার
সাথে যে দ্বিরালাপ, পাঠক হিসেবে এই নাদানকেও খনন করেছে।
যদিও কিছু বানান ও শব্দবুননে পাঠানুভব ধাক্কা লেগেছে। লইজ্জা লাগে
ভালো থাকুন।

__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!

ফাহিম হাসান এর ছবি

লেখার উচ্ছ্বাসটুকু স্পর্শ করল।

লেখায় কিছু জায়াগায় এখনো জোনাকি বানান ভুল রয়ে গিয়েছে

কল্যাণF এর ছবি

অসাধারন, বেশি ভাল লেগেছে মা'র সাথে কথা বলার অংশটা গুরু গুরু , কিন্তু শেষে ০২ কেন?

কর্ণজয় এর ছবি

জোনাকি বানানটা ঠিক করলাম... কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছিল জোনাকিতে একটা ‌'চন্দবিন্দু' থাকলে মজা হতো...

০২- এটা আসলে এ ও সে ও নামের একটা ধারাবাহিক গুচ্ছচিন্তাকথার .. ২য় ভাগ। এর প্রথম ভাগ ছিল রঙের পৃথিবী। এটা ঠিকঠাক বসানো হয় নি... বসিয়ে দিচ্ছি...

আমরা যখন লিখি তখন আসলে কিছু বলি..
আমরা যখন বলি অপর প্রান্তে কেউ থাকে...
আমরা তাদের সেই চোখের দিকে তাকাই...
আমরা তাকে তাকে বুঝে নেই বুকের গভীরে...
আমরা আবার বলতে শুরু করি...।

আমার খুব ভাল লাগছে...
আমি অনেক জোড়া চোখকে টের পেয়েছি...
আমি অনুভব করছি...
আপনাদের সবার সঙ্গে আমি বসে আছি...

সুমন তুরহান এর ছবি

কর্ণজয়'দা, আজ আপনার অনেকগুলো লেখা পড়লাম। আপনি খুব ভালো লেখেন। এটিও চমৎকার লাগলো।

-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।