প্রথম পর্ব > দ্বিতীয় পর্ব > তৃতীয় পর্ব > চতুর্থ পর্ব > পঞ্চম পর্ব > ষষ্ঠ পর্ব > সপ্তম পর্ব > অষ্টম পর্ব > নবম পর্ব
আমার নানা যখন ঢাকায় বেড়াতে আসতেন, তখন আমাদের নিয়ে তিনি রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ভেতরে প্রতিদিন প্রাতঃভ্রমণে যেতেন। মাঠটায় বার দুয়েক চক্কর দিয়ে আমরা এসে দাঁড়াতাম পেছনে আস্তাবলের সামনের যে রাস্তাটা ছিলো সেখানে। ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম সকালের কুচকাওয়াচের জন্য সহিসরা ঘোড়াগুলিকে তৈরি করছে। গা ব্রাশ করা, লেজ আঁচড়ানো, ঘাড়ের কেশর আঁচড়ানো, লাগাম পরানো আরো কতো কিছু যে করতো তারা ঘোড়াগুলিকে নিয়ে। কবে থেকে ওখানে যাওয়া শুরু করেছিলাম, ঠিক মনে করতে পারবো না; তবে জ্ঞান হবার পর থেকেই পুলিশ লাইনের ভেতর চরে বেড়াতাম। তাই জায়গাটা ছিলো আমার যেমন চেনা তেমনি প্রিয়।
পুলিশ লাইনের মাঝখান দিয়ে একটা রাস্তা সোজা গিয়ে শান্তিনগরে মিশেছে। আরো শর্ট-কাট করতে চাইলে প্রধান হলুদ দালানটি ছেড়ে কিছুদূর গিয়ে, ডান দিকে বাঁক নিয়ে, ঘোড়ার আস্তাবলের পেছন দিয়ে, সোজা শান্তিনগরের মোড়ের পাশে, মনির মটরর্সের পাশের গলিটায় পৌঁছানো যেতো। আস্তাবলের পেছনে ছিলো গুদামঘর আর ছোট ছোট ছাড়া-ছাড়া স্টোররুমের মতো কিছু ঘর। আস্তাবলের সামনের রাস্তাটার দু’ধারে ছিলো নানা ধরনের ফলের গাছ। আম, কাঠাল, লিচু বাদেও ছিলো পেয়ারা , জাম্বুরা, সারি সারি কালোজাম আর জামরুলের গাছ। মাঝে মাঝে ঝাউ গাছের মতো করে কাটা করেঞ্জা আর সবেদার গাছ। লাল-সবুজে মেশানো করেঞ্জার ফলে ছেয়ে থাকতো করেঞ্জার গাছগুলি। আর ফুল! সে কথা আর নাই বা বললাম। ফুলের বাগানে ‘দয়া করিয়া ফুল ছিঁড়িবেন না’ সাইনবোর্ড লাগানো থাকলেও ফলের বিষয়ে কোনো সর্তকবাণী ছিলো না। সুতরাং নিজের মনে করেই কোঁচড় ভরে ফল পেড়ে নিয়ে আসতাম ওখান থেকে।
সে সময় ঠিক কে যে ডাঃ ফরিদার ক্লিনিকে ছিলো আমি কিছুতেই মনে করতে পারলাম না। মনে হয় নতুন চাচী। তখন ডাঃ ফরিদার ক্লিনিক ছিলো শান্তিনগরের মোড়ের কাছে একটা লাল রঙের তিন তলা বাড়িতে। আর ঠিক তার পাশেই একটা একতলা হলুদ বাড়িতে তিনি নিজেও থাকতেন।
আমিন আলীকে প্রতিদিন বাসা থেকে টিফিন ক্যারিয়ারে করে দুপুরের খাবার নিয়ে যেতে হতো ফরিদার ক্লিনিকে। যাতায়াতের সবচেয়ে সহজ ও আকর্ষণীয় রাস্তা ছিলো রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ভেতর দিয়ে। ২৫শে মার্চের পর আর রাজারবাগে যাওয়া হয়নি। যতো না ভয়ে, তারচেয়েও বেশি, যাবার ইচ্ছা জাগেনি। খুব পুতুলখেলার নেশা হয়েছিলো তখন। পুতুলের বিয়ে-টিয়ে নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকতাম যে রাজারবাগের জন্য সেই আগের টানটা আর অনুভব করতাম না। আমিন আলীর পকেট ভরা টসটসে জামরুল আর আশা-যাওয়ার পথে ওর দেখা নানা ধরনের গল্প আমার সেই টানটাকে জাগিয়ে তুললো।
দিনক্ষণের হিসাব ঠিক বলতে পারবো না। তবে খুব গরম ছিলো, এতো গরম যে আমার নীল ফিতের সাদা স্পঞ্জের স্যান্ডেল পীচঢালা রাস্তায় আটকিয়ে আটকিয়ে যাচ্ছিলো। এখন ঢাকা শহরের রাস্তাগুলি কেমন আমার জানা নেই। তবে তখন খুব গরমে রাস্তার পীচ গলে যেত। খাবার নিয়ে ডাঃ ফরিদার ক্লিনিকের যাবার পথে আমিন আলী বল্লো,
‘তোমারে একটা জিনিস দেখামু, কিন্তুক কাউরে কইতে পারবা না।’
এ আর নতুন কথা কী? ‘ঠিক আছে কাউকে বলবো না, দেখা।’
কিন্তু এতো সহজে আমিন আলী সন্তুষ্ট হলো না। ‘আল্লাহর কীরা কাটো।’
‘আল্লাহর কীরা।’
‘পশ্চিম দিকে ফিরা চক্কু ছোও’।
আমি একটু অবাক হলেও পশ্চিম দিকে ফিরে চোখ ছুঁলাম।
‘কও এই চক্কু দিয়া যা দেখবা, তা যদি কাউরে বলো, তাইলে তোমার দুই চক্কু অন্দা ইইয়া যাইবো’।
আমরা একসাথে অনেক কাণ্ড-কারখানা করতাম কিন্তু কখনোই এমন কসম-টসম কাটতে হয়নি। কারণ আমিন আলী ও আমার মধ্যে একটা অলিখিত চুক্তি ছিলো, আমরা আমাদের গোপন মিশনের কথা কারো কাছে প্রকাশ করবো না। ‘যা ভাগ! এতো কিছু বলতে পারবো না, চোখ তো ছুঁলাম, আবার কী’?
‘তাইলে থাউক’ বলে ও খুব গম্ভীর হয়ে গেলো।
কৌতূহল বলে কথা, কী আর করা? চোখ ছুঁয়ে কসম কাটতে হলো, কাউকে বললে আমার চোখ অন্ধ হয়ে যাবে। ‘এবার দেখা।’
‘না অহন না, আইবার সুমোয়।’
‘দেখা না, দেখা না’ করে করে ফরিদার ক্লিনিকে খাবার পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে রাজারবাগের ভেতরে ঘোড়ার আস্তাবলের পেছনে এসে দাঁড়ালাম।
‘এইহানে এটটু খাড়াও’ বলে আমিন আলী সেই স্টোররুমগুলির দিকে এগিয়ে গেলো। ও একটা ঘরের বন্ধ জানালার চৌকাঠের নিচের কাঠটা ধরে লাফ দিয়ে জানালার ওপর উঠলো, ভেতরে উকি দিয়ে কী যেন দেখলো কিছুক্ষণ। তারপর জানালাটা থেকে নেমে এসে পাশের ঘরটার দিকে এগিয়ে গেলো।
এই ঘরটা বেশ লম্বা। লাল ইট দিয়ে গাঁথা। বাইরে কোনো আস্তর নেই। সিমেন্টের ওপরে এবড়ো-খেবড়োভাবে ইটের পরে ইট বসিয়ে ঘরটা তৈরি করা হয়েছে। ওপরে ঢেউতোলা টিনের চাল হাতখানিক বের হয়ে আছে, চারিদিকে। ঘরের একপাশে একটা কাঠের দরজা, অন্য পাশে দুটো জানালা। একটা বড়, একটা ছোট। জানালা দু’টি সবুজ রঙের। দরজায় কোনো রং নেই। আমিন আলী আগের মতোই এই ঘরটাতেও উঁকি দিলো। তারপর জানালা থেকে নেমে আমার দিকে ফিরে, ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে ইশারায় বললো একদম শব্দ না করে এগিয়ে যেতে।
এবার আমি খুব ধীরে ধীরে পা টিপে টিপে এগিয়ে গেলাম। মাটি থেকে হাত খানিক উঁচু বারান্দার উপর ঘরটা। বারান্দায় উঠে আমিন আলীর মতো জানালার চৌকাঠ ধরে জানালার ওপর উঠে দাড়ালাম। বাইরে খুব রোদ, আর ভেতরে ঘোলা ঘোলা অন্ধকার! প্রথমে আমি কিছুই দেখতে পেলাম না। আস্তে আস্তে চোখে অন্ধকার সয়ে এলে চোখে পড়লো ঘরটার মেঝেতে অনেকগুলি বস্তা পড়ে আছে। আমার চোখ ঠিক কী খুঁজছিলো, আমি জানি না। হয়ত ভূত বা ঘোড়ার শরীরে মানুষের মাথা! কিন্তু যেখানে এসে আমার চোখ থমকে গেলো, সে দৃশ্য দেখবার জন্য আমি তৈরি ছিলাম না। ঘরের একপাশে একটা থাম, বাঁশও হতে পারে। তাতে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে, টিনের চাল আর ইটের দেয়ালের মাঝে যে ফাঁক ছিলো সেখান দিয়ে আড়াআড়িভাবে একখণ্ড রোদ মেয়েটার মুখে এসে পড়েছে। প্রথমেই আমার চোখ আটকালো মেয়েটার চোখের দিকে, সে তাকিয়ে ছিলো কোনাকুনি, কিন্তু মনে হয় কিছুই দেখছিলো না। বোবা দৃষ্টির কথা পরে অনেক পড়েছি। কিন্তু বোবা দৃষ্টি আসলেই যে কেমন, বাস্তবে সেদিনই প্রথম ও শেষবার তা আমি দেখেছিলাম।
তারপর আবিষ্কার করলাম মেয়েটার শরীরে কোন কাপড় নেই। এক্কেবারেই না। একটা সুতাও না। সেই প্রথম! হ্যাঁ সেই প্রথম বার। এর আগে আমি কখনো কোনো নারীকে এভাবে দেখিনি। মেয়েটা আমার বড়াপুর বয়সী হবে। ১৫-১৬ বছরের কিশোরী। ওকে আমি ভেবেছিলাম পরী! আমি কী কোনো শব্দ করেছিলাম? জানি না। আমি দেখলাম মাটিতে যে বস্তাগুলি পড়েছিলো সেগুলি নড়ছে! কোনো কোনো বস্তা উঠে বসছে! ভয়ে আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। আমি নড়তে পারছিলাম না, নিঃশ্বাস নিতেও পারছিলাম না।
কিন্তু না, সেগুলি বস্তা ছিলো না, ছিলো মানুষ! মাটিতে গুটিয়ে শুয়ে-বসে ছিলো। আরো অনেকগুলি মেয়ে! কেউ শুধু পেটিকোট পরা, কেউ লুঙ্গি পরা, কেউ শুধু একটা খাকি রঙের শার্ট পরা।
পাক-আর্মি মেয়েদের ধরে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করার মানে কী, আমি বুঝে গেলাম। আমাকে কেউ কখনো বলেনি, কিন্তু আমার চোখের ওপর থেকে একটা পর্দা সরে গেলো। বীভৎসতার রূপ নিয়ে। নর-নারীর জীবনের আর একটা অধ্যায়ের কথা আমি জেনে গেলাম, যা আমার ওই নয় বছর বয়সে জানবার কথা নয়।
এরপর যেটুকু মনে আছে, আমি দিকবিদিকশূন্য হয়ে দৌড়াতে শুরু করেছি, জানালা থেকে লাফ দিয়ে নামতে গিয়ে হয়ত পড়ে গিয়েছিলাম, আমার ডান পায়ের হাঁটু জ্বালা করছিলো, বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল নিয়ে দৌড়াতে কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু আমি দৌড়াচ্ছিলাম, একবারও পেছনে না ফিরে, একবারও না থেমে। আমিন আলী পেছন থেকে ‘সেজপা, খারাও খারাও’ করে ডেকে যাচ্ছিলো। কিন্তু আমার থামবার উপায় ছিলো না। তখনকার অনুভূতি প্রকাশ করবার মতো ভাষা আমার জানা নেই। আমার এতদিনের যাপন করা সুন্দর পৃথিবীটাকে কারা যেন এক ধাক্কায় গভীর খাদে ফেলে দিলো। আমি সেখান থেকে পালাতে চাইছিলাম। সেই বিভীষিকাময় বর্তমান থেকে নিজেকে বাঁচাতে চাইছিলাম।
কখন বাসায় এসে পৌঁছেছিলাম, মনে নেই। সে রাতে আমার জ্বর ১০৪ ছাড়িয়ে গিয়েছিলো, সবাই ভেবেছিলো ডান হাটুর গভীর ক্ষত (এতটাই কেটে গিয়েছিলো যে ভেতরের হাড় দেখা যাচ্ছিলো)। ও বা পায়ের বুড়ো আঙুলের নখ উঠে যাওয়াতেই এতো জ্বর! আমিন আলী বারে বারে স্মরণ করিয়ে দিতো ‘কাউরে কইও না, কইলে কিন্তু চক্ষু অন্দা ইইয়া যাইবো’। না, আমি কাউকেই বলিনি। চোখ অন্ধ হবার ভয় আমার ছিলো না। আমার পুরো বোধটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। আমি কী বলবো? কাকে বলবো? আমি যা দেখেছিলাম, তা ভুলে যেতে চাইছিলাম। কিন্তু পারছিলাম না। এক মুহূতের্র জন্যেও না। আমিন আলী তো জানে না, ভেতরে ভেতরে তখন আমি অনেক বড় হয়ে গেয়েছি।
অনেকদিন জ্বরে ভুগেছিলাম। দুঃস্বপ্ন দেখতাম, ওই মেয়েটা নয়, আমিই দাঁড়িয়ে আছি অনেক পাক-আর্মির মাঝখানে, আমার গায়ে কোনো কাপড় নেই। সে দুঃস্বপ্ন দেখা আমার আজও শেষ হয়নি। আমি এখনো সম্পূর্ণ বিবস্ত্র হয়ে একপাল লোকের মাঝে দাড়িয়ে থাকি লজ্জায় অপমানে মিশে যেতে যেতে। এখনো মেয়েটি আসে আমার স্বপ্নে, এসে কোনাকুনি নয় সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে থাকে সেই বোবা দৃষ্টিতে। কেন এতোগুলি বছর পরেও ওকে আমি দেখি? কেন?
মন্তব্য
আপনি এখনো দেখেন এইটাই দাগ কেটে গেলো, সবাই ভুলে যায়, আপনি ভোলেননি আপু। হয়তো অনেক কষ্ট হয়, কিন্তু আপনার ভেতরের এই বোধটুকু আমাদের আরো বেশি বোধজাত করে দিয়ে যাক। একাত্তরের মা-জননীদের রাষ্ট্র সম্মান দেয়নি, আমরা সম্মান দেইনি - এই জাতিগত লজ্জা দূর না হওয়া পর্যন্ত এই দেশের প্রকৃত মুক্তি আসবেনা। বিষয়টা ধামাচাপা দিয়ে যে পাপ আমরা করেছি তার ক্ষমা নেই। অথচ কি অসামান্য মহৎ হতে পারতো যদি তাদের প্রকৃত সম্মান দেয়া যেত, আজকে তাহলে এইমাত্রায় নারী নির্যাতনও হতোনা; এটা আমাদের পূর্বপুরুষদের ব্যার্থতা, আমাদের দায়ভার - - আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের যেন সেই দায়ভার বয়ে নিয়ে বেড়াতে না হয়।
আপনি ভালো থাকবেন, আপনার উপর শান্তিবর্ষিত হোক
আমার দেখা এতদিনের দুঃস্বপ্ন, আমি তোমাদের দিয়ে গেলাম।
--------------------------------------------------------------------------------
চোখে জল এসে গেল ।
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
--------------------------------------------------------------------------------
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
--------------------------------------------------------------------------------
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
--------------------------------------------------------------------------------
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
--------------------------------------------------------------------------------
অসাধারন লেখা
--------------------------------------------------------------------------------
এগুলোর প্রত্যক্ষদর্শী আমি নই । তবুও চিন্তা করতেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠল । .........................................................
এটা জেনে ভালো লাগলো, ঘটনাটা আপনাদের দেখাতে পেরেছি। আমি নিজে যে ভাবে দেখেছিলাম, সে ভাবে লিখতে পেরেছি কিনা, সেটা নিয়ে সন্দেহ ছিলো।
--------------------------------------------------------------------------------
চোখ ভিজে ওঠে অজানিতেই। একাত্তরের সেই মানুষদের জন্য আজ আমাদের কোন স্বান্তনাবাণী শোনাবার নাই। শুধু মনে করে রেখেছি। আর যারা ভুলে যেতে বলে, তাদের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছি বিশুদ্ধ ঘৃণা।
আমাদের স্মৃতিগুলো জেগে থাক। সবসময়।
--------------------------------------------------------------------------------
কী দুঃসহ স্মৃতি!
সুমিমা ইয়াসমিন
ধন্যবাদ।
--------------------------------------------------------------------------------
এই সিরিজটা পড়ার জন্যে আমি যে কী পরিমাণ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করি... আম্মুর গল্পগুলোর সাথে, খালাদের গল্পগুলোর সাথে মেলাই... আজকে মনে হচ্ছে আমার মা-রা কত অসীম আতঙ্কে দিন কাটাতেন, তারা পরিবার দ্বারা কত বেশি সুরক্ষিত থাকার একই সাথে কত বেশি বিপজ্জনক অবস্থানে ছিলেন পালিয়ে থাকার দিনগুলোতে, নানুর যদি সেদিন কিছু হতো নানী তাঁর মেয়েগুলোকে নিয়ে কোথায় দাঁড়াতেন, সাত থেকে এক বছরের কোলের বাচ্চাদের পাশাপাশি নিজের কিশোরী-তরুণী মেয়েদের কথা ভেবে নানীকে কী পরিমাণ আতঙ্কিত থাকতে হতো... বাংলাদেশের প্রতিটা মেয়ে, প্রতিটা মা মুক্তিযোদ্ধা।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
”বাংলাদেশের প্রতিটা মেয়ে, প্রতিটা মা মুক্তিযোদ্ধা”
"
বাংলাদেশের প্রতিটা মেয়ে, প্রতিটা মা মুক্তিযোদ্ধা।
খুব ভালো বলেছো। ভালো লাগলো।
--------------------------------------------------------------------------------
আমাদের প্রজন্মের দিন ফুরিয়ে এসেছে। আমরা ধীরে ধীরে অস্তমিত হয়ে যাচ্ছি। আমাদের সাথে সাথে যেন মুক্তিযুদ্ধের না বলা কথাগুলি অস্তমিত না হয়ে যায়, তার দায় বর্তায় তোমাদের ওপর। তোমার আম্মু ও তোমার খালার গল্পগুলি শুনে শুনে লিখে রাখা উচিত তোমার।
--------------------------------------------------------------------------------
সেই গৌরবের, কষ্টের, ভয়ের, আতঙ্কের, অনিশ্চয়তার, সংগ্রামের দিনগুলি আপনি আরেকবার দেখিয়ে দিলেন। অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ তোমাকেও।
--------------------------------------------------------------------------------
আপনার লেখা সাগ্রহে পড়ছি। এবারের লেখাটা অনবদ্য। ধন্যবাদ
--------------------------------------------------------------------------------
মনে হলো নিজের চোখেই দেখতে পেলাম... এতো গুলো মানুষের ত্যাগ কি করে সবাই ভুলে যাই সেটা ভেবে কষ্ট পাই...
না রে ভাই সবাই কি আর ভুলতে পারে?
--------------------------------------------------------------------------------
কিছু বলার ভাষা নেই। এরকম কিছু পড়ার পরে মনে হয় লেখা লেখি ছেড়ে দেই। একই সাথে প্রচণ্ড ক্রোধ আর হতাশা এসে ভর করে।
লেখা লেখি ছাড়াবেন কেন? মন খুলে লিখে যান।
--------------------------------------------------------------------------------
ভেবেছিলাম সবকয়টা পর্ব একসাথে বসে পড়বো, কিন্তু আজ 'রাজারবাগ পুলিশ লাইন' শব্দকয়টিতে চোখ আটকে গেল, তাই একটানে এই সংখ্যাটা পড়লাম।
পাকিস্তানী শব্দটাই সবচেয়ে কদর্যতম গালি মনে হয় আমার কাছে, আর আপ্রাণ চেষ্টা করবো এটা পৌঁছে দিতে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে।
love the life you live. live the life you love.
'রাজারবাগ পুলিশ লাইন' কী বিশেষ কিছু মনে করিয়ে দিলো?
--------------------------------------------------------------------------------
প্রিয় লেখা...
প্রিয় লেখা...
ই বুক হয়ে যাক।
অসহ্য এক ক্রোধ দলা পাকিয়ে ওঠে ভেতরে। সারাটা জীবন আমরা কি কেবলি নিস্ফল ক্রোধে ঢোঁড়ার মত ফুসেই যাব ?
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
"তোমাদের রক্তে এই মাটি উর্বর হয়েছে ..."
-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী
ঘটনার আকস্মিকতায় ও নিষ্ঠুরতায় আপনার বোধ অন্ধ হয়ে গিয়েছিল; তবে সে সময় ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে অনেকে নিজেদের বোধকে ইচ্ছা করেই অন্ধ করে রেখেছিলেন; সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, এখনো তারা তেমনি আছেন; তাদের বোধের বদ্ধ ঘরের কপাট এখনো শক্ত করে লাগানো!
মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী এমনিতেই আমাকে খুব টানে; কিন্তু তার সঙ্গে যদি যোগ হয় এমন অসাধারণ বর্ণনাভঙ্গি (যার মাধ্যমে পুরো ছবিকেই জীবন্ত মনে হয়), আর আবেগের ছোঁয়া, তখন মনে হয় যেন কোন মহত্তম সাহিত্য পড়ছি! আশা করি, আগামী বইমেলায় লেখাগুলি বই আকারে পাব! আমি নিশ্চিত, 'একাত্তরের দিনগুলি'র মতই এ লেখাও ঝড় তুলবে এবং শর্মিলা বোসদের অপপ্রচারের যুগে নতুন প্রজন্মকে আরো একবার আমাদের সীমাহীন আত্মত্যাগ ও গৌরবগাঁথার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে!
কী বলবো ভাবী!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
এক নিশ্বাসে সবগুলো পর্ব পড়লাম। অপূর্ব! অনেকদিন পর মনে হল পড়ার অভ্যাসটা আবার গড়ে তুলতে হবে।
নতুন মন্তব্য করুন