• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

অস্তায়মান

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২৩/০৯/২০১১ - ৮:২৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এপ্রিল, মধ্য দুপুর। গনগনে আগুন ঢালছে চৈত্র মাসের সূর্য। আমি আর আরো ছয়জন অপেক্ষা করছি। কোথায় যেন শুনেছিলাম, অপেক্ষা করার মত যন্ত্রণা নাকি আর কোন কিছুতেই নেই। আর যদি কিসের জন্য অপেক্ষা, তা না জানা থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। আমি যন্ত্রণা বোধ করছি না। আমি জানি কিসের জন্য আমার অপেক্ষা। আমাদের। বদির চিপ দিয়ে এক ফোঁটা ঘাম বেয়ে নামছে। আমি পুর্ণ মনযোগ দিয়ে শুধু ঐ বিন্দুটা দেখছি। এমন একটা ফিগার যেন কি একটা শব্দ দিয়ে প্রকাশ করে। ও আচ্ছা - বর্তুলাকার। একটু বিরক্ত লাগছে এখন। চোখ সরিয়ে নিলাম। হাতঘড়িটা একবার দেখলাম। চোখ ওঠাতেই দেখলাম, আসছে ওরা। বিশাল একটা মিছিল। কয়েক হাজার এর নিচে হবে না। ভাল। যত লোক। তত সুবিধা। আমি দেয়ালে একটা চাপর দিলে সবাই ফিরে তাকালো। আমরা অ্যামেচার নই। আলাদা করে কাউকে কিছু বলার দরকার হয় না। পুরো ব্যপারটা বোঝানো আছে। পজিশন। পয়েন্ট অফ এন্ট্রি। অ্যাঙ্গেল। এক্সিট স্ট্র্যাটেজি। ডাম্পিং এরিয়া। সব কিছু বেলাল ভাই গতকাল সন্ধ্যায় ছবি এঁকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। সেই ছবি মনের মধ্যে গাঁথা।

চোখের ইশারায় বদি, নূর আর একজন, যাকে আমি চিনি না, রাস্তা পার হয়ে ওইদিকে চলে গেলো। আমি আর তাপস, আর একজন, যাকে আমি চিনি না, এদিকে রয়ে গেলাম। আমি চিনি না, কিন্তু বেলাল ভাই এর বাছাই, আমার না বলার কিছু নেই। কাদের পয়েন্টে। কাদেরের কাঁধে একটা ঝোলা। আমাদের এক্সিট স্ট্র্যাটেজি। ব্যপারটা খুব সিম্পল। ওরা আসবে। মিছিল এই ব্লক পার করতে লাগবে বড়জোর মিনিট পাঁচেক। দ্বিতীয় মিনিটে নূর, বদি ওরা এঙ্গেজ করবে। আমাদের ডেডবডি লাগবে। আহত করে লাভ নেই। "ড্রপ ডেড" - বেলাল ভাই এর ভাষায়। তখন আমরা তিনজন কভার দিব আর যদি পারি, আরো কিছু যদি ডেডবডি পারি, ফেলবো। সবাই পালানো শুরু করলে কাদের ওর ঝোলা ফেলে দিবে। খুব সাধারন একটা এক্সপ্লোসিভ আছে ওতে। কিন্তু বিকট শব্দ করে। এর মধ্যে গলি দিয়ে আমরা হাওয়া। গাড়ি রেডিই থাকবে। সোজা সাপ্টা। ওদের মিছিলে কেউ কিছু ক্যারি করবে না। শিওর। আগে থেকে জানা আছে। আমরা রেডি। এমন কিছু না যা আগে কখনও করি নি। আমরা অ্যামেচার নই। প্রফেশনাল।

মিছিলটা আসছে। আমি এই পাশে গলির দোকানে একটা সিগারেটের দোকানে গিয়ে দাঁড়ালাম। বাকিদের সাথে পজিশন ঠিক করে নিলাম। মিছিলের প্রথম লাইনটা আমাদের পার হয়ে গেল। লাল একটা ব্যানার। এই সময় আমার সবসময় একটা সমস্যা হয়। চোখ কুঁচকে আসে। ফালতু একটা সমস্যা। থার্ড ইয়ারে অপটিক্স ক্লাসে স্যার বলতেন, মানুষের চোখ খুবই সফেস্টিকেটেড একটা ক্যামেরা। ফোকাসিং এর ব্যপারে এই দুটো জিনিসের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আমি পুরো মিছিলটা এক সাথে ফোকাসে নিয়ে আসলাম। আস্তে আস্তে আমার চোখ ঠিক হয়ে আসলো।

একটা সেকশান পার হয়ে গেল। এই সেকশানে সবাই আস্তে আস্তে হাঁটছে। আমি তিন লাইন পরের একটা লোককে স্পট করলাম। লোকটা লুঙ্গি পরা, বয়স মধ্য-তিরিশ। পান চাবাচ্ছে। শার্টের হাতায় ময়লা। আমি আমার কোমড়ে হাত দিয়ে রাখলাম। দ্বিতীয় মিনিট। টাশ্ করে একটা শব্দ রাস্তার ওই পাড় থেকে আসলো। এই শব্দটার অপেক্ষায় ছিলাম। রেসের স্টার্টিং ফায়ারের মত। আমি আমার ৯ মি.মি. ব্রাউনিংটা টেনে বের করলাম। ক্যাচ ফেলাই ছিলো। পান খাওয়া লোকটার বুকে দুই রাউন্ড ফায়ার করলাম। পিক আর রক্তের অদ্ভুত কম্বিনেশন। আগে খেয়াল করিনি। ফিরে তাকালাম। আর একজনকে স্পট করলাম। ট্রিগারে চাপ দিব, এমন সময় আমার কানের পাশ দিয়ে শিস কেটে কি যেন একটা চলে গেল। আমি শিউরে উঠলাম। গাধাগুলা এইদিকে ফায়ার করছে কেন? এ্যাঙ্গেল তো পুরা ভুল। একটু মাঝের দিকে সরে গেলাম। টাশ্ টাশ্ শব্দ আসছে। থামাথামি নেই। মাঝের দিকে এখন একটু ফাঁকা। লোকজন দৌড়ানো শুরু করেছে। আমি ফাঁকা জায়গায় আসতেই নূরকে দেখলাম। অস্থির। বিভ্রান্ত। ব্যপার কি? ও ও আমাকে দেখলো। "জুয়েল ভাই..." - এইটুকু বলার পরই ব্যপারটা ঘটলো। আমি নূর এর মাথার বাম দিকের ফুঁটোটা দেখলাম না। কিন্তু ওর মাথার ডান দিক দিয়ে রক্ত আর খুলি ফোয়ারার মত বেরিয়ে যাওয়া দেখলাম। এই সময় আমি ঘুরে তাকাতেই দেখলাম তাপস মাটিতে পড়ে আছে। লাল শার্টের রঙটা আগের চেয়ে অনেক গাঢ় দেখালো। বেলাল ভাই তাহলে ভুল ছিল। ওদের মিছিলে আর্মস আছে। আমি এলোপাথারি ফায়ার করতে করতে ওই দোকানের দিকে গেলাম। যাদের চিনি না সেই লোক দুটোকে দেখলাম না...

এক...

কে যেন হাতুড়ি দিয়ে আমার বাম কাঁধে একটা বাড়ি দিল। পুরোপুরি অবশ হয়ে গেল জায়গাটা। একটা গালি বকে উঠার পরই হঠাৎ জ্ব্বালাপোড়া অনুভব করলাম। হাত দিতেই ভেজা লাগলো। হাতটা চোখের সামনে আনতেই রক্ত দেখলাম। হঠাৎ এক ধাক্কায় আমি কেন যেন আমার ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ারে চলে গেলাম। তখন মাত্র হলে সিট পেয়েছি। বড় ভাইদের সাথে থাকি। প্রতিদিন নতুন কিছু শিখি। ঢাকা আসার বছর দেড়েক হয়ে যাবার পরও ঢাকা আমার কাছে তখনও একটা গোলকধাঁধাঁ। বিকালের দিকে ঘুরে ঘুরে বেড়াই। রাতে হলের ছাদে আড্ডা বসে। ভাইদের সঙ্গ আমার খুব ভাল লাগতো। সিরাজ, কবির, রুম্মান ভাই, যাযাবর শফি ভাই আর প্রেমিক নাদিম ভাই। মাঝে মাঝে গান শুনতাম। শফি ভাইয়ের অদ্ভুত গানের গলা ছিলো। একদিন সবাই মিলে গেলাম একুশের বই মেলায়। ভাইয়েরা দল বেঁধে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে রক্ত দিলো। আমিও সাহস করে দিতে গেলাম। ভয়ে আমার মুখ শুকিয়ে আসছিলো। একজন ইন্টার্ন ডক্টর আপু আমার হাতে সিরিঞ্জ পুশ করে আমার হাতটা তার হাতে নিয়ে গল্প করতে লাগলেন আমার ভয় কাটানোর জন্য। ফলাফল হল উল্টা। আমি ঘামতে শুরু করলাম। মনে হলো একযুগ পর আপুটা বললো, "শেষ! দেখবেন?" আমি বললাম, "দেখবো"। সেই প্রথম আমি আমার এত রক্ত একবারে আমার নিজের শরীরের বাইরে দেখলাম। লাল। টকটকে। স্কারলেট কারসনের পাপড়ির মতন। ভাইয়ারা আমাকে বাইরে আসা মাত্র পচানো শুরু করলো। আমি একবার পিছনে না তাকিয়ে পারলাম না। কিন্তু আমার কেন যেন আপুটার চেহারা এখন কোনভাবেই মনে আসছে না। আমি আমার হাতের দিকে তাকালাম। আমার রক্ত এখন কালো! কেন যেন অবাক হলাম একটু। একটু পিছিয়ে আসলাম। আমি তখনও দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ কে যেন ধাক্কা দিলো। হাতে ব্যথা পেয়ে অন্ধ হয়ে গেলাম যেন। ঠিক তখনই আবার ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম।

আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম মঞ্চের পাশে। উনি উপরে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। উনার কথা শুনতে ভাল লাগতো আমার সবসময়। আজকেও শুনছিলাম। মন্ত্রমুগ্ধের মত। হাজার তালির শব্দে আমার নেশা টুটে গেলো। উনি নেমে আসছেন। আমি কেন যেন নিচু হয়ে উনার পায়ে ছুঁয়ে সালাম করে ফেললাম। আমাকে কে একজন শক্ত করে চেপে ধরলো। উনি হাত তুলে বললেন, "থামো!" আমার হাতের বাঁধন শিথিল হয়ে আসলো। উনি আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললেন, "কে বাবা! তোমার নাম কি?" আমার গায়ে বিদ্যুৎ খেলে গেল। হুবহু আমার আম্মার চেহারা! আমার আম্মার গলার স্বর!...

দুই...

তলপেটের ডানদিক দিয়ে কে একজন একটা ছোরা ঢুকিয়ে দিলো। কুৎসিত একটা ব্যথা। এই ব্যথার সাথে আমার পরিচয় আছে। কিন্তু আজকে একটু অন্যরকম লাগছে, ব্যথাটা পিঠের দিকেও ছড়িয়ে গেল। আর আমার আশেপাশে ছোরা মারার মত রেঞ্জে কেউ নেই। আরে! ফাজলামো নাকি! হঠাৎ বুঝলাম, আমার আর একটা গুলি লেগেছে। এক্সিট ঊন্ড আছে। প্রচন্ড ব্যথা। গলা দিয়ে একটা কাতরানি বের হয়ে আসলো। একটু ঘুরতেই আমি বদিকে দেখলাম। মাটিতে শুয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে। শান্ত। স্থির। নিথর।

নারায়নগঞ্জে আমি আর বদি একই কলেজে পড়তাম। বদের হাড্ডি হবার জন্য ওর নাম আর চরিত্র খুব মানাতো। যতরকম কুকর্ম ছিলো, সব কিছুতে সবার সাথী ছিল বদি। মোল্লাবাড়ির ছোট ছেলেকে মারধর বা তারই বোনের সাথে গোপন অভিসার, এইসব ছিলো তার নিত্যদিনের কাজকর্ম। খুব চঞ্চল আর বদরাগী ছিল। একই ভার্সিটিতে পড়লেও আমাদের ডিপার্টমেন্ট ছিল আলাদা। তাই আস্তে আস্তে দূরত্ব তৈরী হওয়া ছিলো স্বাভাবিক। আমরা আবার একসাথে হই ফাইনাল ইয়ারে। তখন আমরা একই দল এর ছায়ায়। একই নেত্রী আমাদের মা। একই বিশ্বাস আমাদের মনে। আমরা দেশটাকে নতুন করে দাঁড় করাবো। তিন বছর পর আমাদের স্কোয়াডে ওর জায়গা হলো। ও প্রথম শুট করে আমার ব্রাউনিংটা দিয়ে। হাতেখড়ি। ব্যপ্টিসম অফ ফায়ার। ওর মা শেষবার গ্রামে আমাকে বলেছিলেন ওকে যেন আমি দেখে রাখি। এত বড় দামড়া ছেলেকে দেখে রাখতে হবে? হাহাহাহা! আর বদি ততদিনে অন্যান্য অনেক লোককে দেখে রাখতে শিখে গেছে। ততদিনে বদি আর অ্যামেচার নয়। প্রফেশনাল। ওর মা পান খেতে খেতে কান্নাকাটি করতেন, বদি বাড়ি আসে না দেখে। আচ্ছা, আম্মা কি পান খেত? আমার কিছুতেই মনে পড়লো না। এই কয়েক বছর মা বলতে আমি অন্য একজনকে চিনি। তিনি শান্ত। ধীর। সোনালি ফ্রেমের চশমা পরেন। উনি নিজ হাতে আমার হাত থেকে রক্ত ধুয়ে দেন। আমার না। অন্য কারো। এ সময় আমার মন থেকে সব পাপ মুছে যায়। মায়ের জন্য এতটুকু করতে পারবো না? আলবৎ পারবো। মা হাসেন। হাসিটা খুব চেনা লাগে। ঠিক আমার আম্মার মত। কিন্তু আমার আম্মা কি পান খেত? আমি মনে করতে পারলাম না...

তিন...

কি সব যেন চিন্তা করতে করতে আধা পাক ঘুরে গিয়েছিলাম। না। আমি তখনও পড়ে যাই নি। একটা কোন যেন মেডিক্যাল জার্নালে পড়েছিলাম, মানুষের চিন্তা নাকি ১৬০ মাইল ছোটে প্রতি ঘন্টায়। এত কিছু মনের মধ্যে বয়ে যেতে যেতে আমি বুকে খুব বড় একটা আঘাত অনুভব করলাম। কানে হাড় ভাঙ্গার শব্দ আসলো। আমার মনে পড়লো আমার নিজের গ্রামের কথা। গাছ থেকে নিচে নামার সময় আমার বাম পায়ের হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিলো। কড়াৎ করে একটা শব্দ হয়। ভয়াবহ। কারা যেন সব আমাকে ধরাধরি করে বাসায় নিয়ে আসলো। এরপর আমার চিন্তা ভাসাভাসা হয়ে আসলো। আমি সাদা শাড়ি দেখলাম। কার হাতে যেন কড়াইয়ের কালি দেখলাম। কিন্তু মুখ দেখতে পেলাম না। আমার চিন্তা আবার কোথায় যেন চলে গেল। একটা খাট। আমার হাতে টপটপ করে কয়েক ফোঁটা পানি পরলো। উষ্ণ। আমার ঘরের চালে ফুঁটো ছিলো। কিন্তু বৃষ্টি তো হিম শীতল। কার ফিসফিসানিতে জেগে উঠলাম। আম্মা সূরা পড়ছে। কিন্তু মুখ দেখতে পেলাম না। গলার স্বর বুঝতে পারলাম না। আম্মা! আমি কি তোকে ভুলে গেছি?

আমি নিচে পড়ে গেলাম। অবশেষে। আমার ব্রাউনিংটা হাত থেকে ছুটে গেলো। রাস্তার অ্যাসফল্টে আমার মাথা ঠুকে গেলো। সর্ষে ফুল দেখলাম আমি। হাজার না। লক্ষ। লক্ষ না। কোটি। কোটি না। আরো বেশি। আমার পৌঁছাতে দেরী হয়ে গিয়েছিলো। শেখের জমির এক কোনায় ও দাঁড়িয়ে ছিলো। গোধূলি। আকাশে মেঘ। কিন্তু ওই মেঘ চিরে ফেরেশতারা তাদের সোনালি তলোয়ারে শান দেয়। আর সেদিকে ফিরে। সে। একা। আমি পাশে গিয়ে দাঁড়াই। কোন কথা হয় না। অথবা আমার মনে পড়ে না। আমি শুধু বলি। আমি ফিরে আসবো। ও আমার হাত ধরে। আমার হাতে টপটপ করে কয়েক ফোঁটা পানি পরলো। উষ্ণ। আকাশে মেঘ ছিলো। কিন্তু বৃষ্টি তো হিম শীতল। আমি মুখ তুলে ওর দিকে তাকালাম। কিন্তু মুখ দেখতে পেলাম না। গলার স্বর বুঝতে পারলাম না। নাম মনে করতে পারলাম না। এই! আমি কি তোমাকে ভুলে গেছি?

আমার রক্তে কয়েকটা বুদবুদ উঠলো। ফুসফুসে লেগেছে গুলিটা। এই জন্যই কি এত কষ্ট? নাকি আরো কিছু? বুদবুদ্গুলো ফুটে গেলে রাস্তার ওই পাড়ে একটা পোস্টারে আমার চোখ আটকে গেলো। আমার নেত্রী। শান্ত। ধীর। সোনালি ফ্রেমের চশমা পরা। কিন্তু আমি আমার মায়ের সাথে তুলনা পাই না। আর আমি কিসের সাথে তুলনা করছি? আম্মা! আমি তোকে দেখতে পাচ্ছি না! আমি কি তোকে ভুলে গেছি? আশে পাশে চেয়ে দেখলাম। চমকে ওঠার শক্তি থাকলে হয়ত উঠতাম। রাস্তা ফাঁকা। একদম ফাঁকা। আমি। বদি। তাপস। একটু দূরে নূর। আর কেউ নেই। ওই লোক দুজন গায়েব। আমরা শুধু ৪টা ডেড বডি। ড্রপ ডেড। আমি অবিশ্বাস নিয়ে নেত্রীর দিকে তাকাই। নেত্রী আমার চোখে চোখ রেখে হাসলেন। আমি শিউরে উঠলাম। আমার আম্মা এভাবে হাসে না। এতোগুলি বছর পর পার্থক্যগুলো খুব স্পষ্ট হয়ে দেখা দিচ্ছে। আম্মা সোনালি ফ্রেমের চশমা পরে না। আম্মা তার পুত্রচিন্তায় কাতর থাকে। তাকে তো কখন শান্ত দেখিনি। হ্যাঁ। দেখেছি। আম্মা ওই যেদিন সূরা পড়ছিলেন। হঠাৎ আম্মার গলার স্বর শুনতে পাই। "ইয়াসিন। ওয়াল কুর'আনিল হাকিম..." সূরা থেমে যায়। আম্মা যেন অনেক দূর থেকে ডেকে ওঠে, "বাজান!" আমি চিৎকার দেই! "আম্মা!" আমার গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না। খালি কয়েকটা বুদবুদ ফুটে ওঠে। আমার হাতে টপটপ করে কয়েক ফোঁটা পানি পরলো। উষ্ণ। আমি মুখ তুলে তাকাই। আকাশে মেঘ ছিলো, নাকি সন্ধ্যা নামছে বুঝলাম না। কিন্তু বৃষ্টি তো হিম শীতল। খুব অন্ধকার লাগতে লাগলো। আমি কি সেই ভরদুপুর থেকে শুয়ে আছি? সময় তো খুব ধীরে যাচ্ছিলো। তাহলে সন্ধ্যা হলো কেমনে? আবার ফিসফিসানি শুনতে পাই। আম্মা! আসছিস তুই? একবার চোখ তুলে তাকাই। নেত্রীর দিকে। তার দায়িত্ব শেষ করে গেলাম। কিন্তু আমার আম্মার চেহারাও আমার মনে পড়ে না। গোধূলীবেলায় অস্তায়মান সূর্য। ফেরেশতাদের তলোয়ার দেখা যাচ্ছে। আমি আম্মার মুখ দেখার জন্য বুভুক্ষুর মত তাকিয়ে থাকি। গাঢ় অন্ধকার নেমে আসে। শুধু দূরে শুনতে পাই, "ইয়াসিন। ওয়াল কুর'আনিল হাকিম..."

- জনি হক


মন্তব্য

কল্যাণF এর ছবি

খুব ভাল লেগেছে, চলুক (Y)

জনি হক এর ছবি

ধন্যবাদ।

- জনি হক

পাঠক এর ছবি

(Y) (Y) (Y) (Y) (Y) (Y)

কর্ণজয় এর ছবি

দারুন...
সময়ের... সমাজের...- চালচিত্র

তারেক অণু এর ছবি

(Y)

মিশু তাজ এর ছবি

খুব ভেবে লিখেছেন , লিখতে থাকুন ।

জনি হক এর ছবি

:)

উচ্ছলা এর ছবি

এত ভালো লেখেন কি করে?!
আপনার এই লেখাটা একটা নক্সীকাঁথার মত। জীবন্ত সব ছবি আঁকা। জীবন থেকে নেয়া ছবি।

জনি হক এর ছবি

ধন্যবাদ।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

গল্পটা সকালে পড়েছিলাম, নেটের ঝামেলায় মন্তব্য করতে পারিনি...

ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম। :)

জনি হক এর ছবি

ধন্যবাদ।

- জনি হক

তানিম এহসান এর ছবি

একটা ঘোরের ভেতর চলে গিয়ে ছিলাম! জনি হক, এইসব লেখা থামেনা যেন!

জনি হক এর ছবি

চেষ্টা করবো :)

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

গল্প হিসাবে ভালো লাগলো। কিন্তু আমি ভীতু মানুষ ভাই, গুলির শব্দে পিলে চমকে উঠে, বড্ড ভয় পাই!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

জনি হক এর ছবি

:)

ধুসর গোধূলি এর ছবি

খুব গতিময়। এবং জটলা পাকানো। 'এক' অংশটা হঠাৎ আলাদা মনে হয়েছে পড়তে গিয়ে।

জনি হক এর ছবি

প্রতিটা আঘাতের সাথে ফ্ল্যাশব্যাক রাখার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে বুলেটের আঘাতগুলি। আরো ভাল লেখার চেষ্টা থাকবে পরেরবার। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

বন্দনা এর ছবি

অসাধারন হয়েছে গল্পটা। খুব ভালো লেগেছে, আর ও লিখুন। :)

জনি হক এর ছবি

ধন্যবাদ।

সুমন তুরহান এর ছবি

আপনার গদ্য সুন্দর। আমাদের সময়টাকে তুলে এনেছেন প্রতিদিনের ভাষায়। আশা করি নিয়মিত লিখবেন। :)

-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী

সুমন তুরহান এর ছবি

অসাধারণ লিখেছেন! প্রথমদিকটা পড়তে পড়তে 'সব কিছু ভেঙে পড়ে' উপন্যাসটির কথা মনে পড়ছিলো। আপনি খুব ভালো লিখেছেন। নিয়মিত লিখুন!

-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী

জনি হক এর ছবি

ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।