প্রায় এক যুগ আগের কথা। ছেলেটা তখন একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। সামনেই বার্ষিক পরীক্ষা।
স্কুলের ছুটির সময় ছেলেটাকে আনতে গেলে কিছুক্ষণ ওয়েটিংরুমে অপেক্ষা করতে হত। সেখানেই কয়েকজন অভিভাবকের সাথে পরিচয়। তাঁদের আলোচনায় জানতে পারি এক ব্যাতিক্রমি কোচিং সেন্টারের কথা।
ভদ্রলোকের নামটি আজ আর মনে নেই। তবে এটুকু স্মরন করতে পারি, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। প্র্রাইমারি লেভেলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ এক ধরনের অভিজ্ঞতা ছিল।
তিনি তাঁর বাসায় পড়ন্ত বিকেলে প্রাইমারি লেভেলের ছাত্রছাত্রীদেরকে প্রাইভেট পড়াতেন। তাঁর বিশেষত্ব হচ্ছে তিনি ঢাকার নামিদামি কয়েকটি স্কুলে মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তির জন্য ছাত্রছাত্রীদেরকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করতেন।
তো আমার ছেলেটাকেও একটি বিশেষ স্কুলে ভর্তির আশায় তাঁর দারস্থ হলাম।
তিনি তাঁর সিস্টেম সম্পর্কে একটি ধারনা দিলেন। তিনি দুরকমভাবে ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব নেন। একটি হল মাসিক বেতনের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীদেরকে ভর্তিপরীক্ষার জন্য তৈরি করা। আর অপরটি হল চুক্তিভিত্তিক। নির্দিষ্ট স্কুলে মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তির জন্য তাঁকে চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ দিতে হবে । অর্ধেক অগ্রিম, বাকিটা ভর্তির পর। লিখিত অঙ্গিকারপত্রে সুনির্দিষ্টভাবে সমস্ত কিছুর উল্লেখ থাকবে। ভর্তিতে ব্যর্থ হলে অর্থ ফেরত।
আমি ভর্তিভিত্তিক চুক্তিতেই আবদ্ধ হলাম এবং অঙ্গিকারপত্র সম্পাদনকালে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থও প্রদান করলাম।
শুরু হল আমার নতুন এক প্রজেক্ট। প্রতিদিন ছেলের স্কুল ছুটির পর ক্লান্ত অবসন্ন এক ভর্তিসৈনিক কে নিয়ে সেই শিক্ষকের বাসায় হাজির হতাম। আরও বেশ কয়েকজন অভিভাবক তাঁদের সন্তানদেরকে নিয়েও হাজির হতেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হত। তিনি অফিস থেকে ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তারপর ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বসতেন।
অভিভাবকদের বসবার জন্য পৃথক ঘর ছিল। আমরা কয়েকজন অভিভাবক সেখানে অপেক্ষা করতাম। অভিভাবকগণ সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে এসেছেন। তাই সেখানেও শ্রেণীবিন্যাস। অভিভাবকেরা নিজ নিজ শ্রেণীর সাথেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। ঐ সময়ে রমযান মাস শুরু হয়ে যাবার কারনে আমরা চাঁদা তুলে দোকান থেকে মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি ইত্যাদি কিনে একসাথেই ইফতারী সারতাম। বৃহ্ত্তর প্রয়োজনে তখন শ্রেণীপ্রথা বাতিল হয়ে গিয়েছিল।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্কুলে ভর্তির ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে। আমি নির্দিষ্ট স্কুলে ভর্তির ফরম সংগ্রহ করতে গিয়ে জানতে পারলাম, ঐ স্কুলে বেসরকারি প্রাইমারি স্কুল থেকে পাশ করা ছাত্রদের ভর্তি করা হয়না (গভঃ লেবরেটরী হাই স্কুল)। বিষয়টি শিক্ষক মহোদয়কে জানানো হলে তিনি খোঁখবর করে আমার কাছ থেকে অগ্রীম নেওয়া টাকাটা ফেরত দিলেন এবং অনেক দুঃখ প্রকাশ করলেন।
আমিও বেশ হতাশ হয়ে পড়লাম। যাহোক পরবর্তিতে সাহস করে ছেলেটাকে দু-একটা ভাল স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ালাম। ঢাকার একটা ভাল স্কুলে ভর্তিরও সুযোগ হয়ে গেল।
ছেলেটা মাস তিনেক ঐ শিক্ষকের কাছে পাঠ নিয়েছিল। তার জন্য আমি তাঁকে কোন অর্থ প্রদান করি নাই। পরবর্তিতে আমি একধরনের অপরাধবোধে আক্রান্ত হয়েছিলাম। শেষপর্যন্ত্য নিজের মনকে বুঝ দিয়েছিলাম যে অঙ্গিকারপত্রে লিখিত কোন শর্তের বরখেলাফতো করি নাই।
ঐ শিক্ষকের কাছে অল্পকিছুকাল পাঠ নিলেও ওটি তার ভীত তৈরিতে সহায়ক হয়েছিল।
লিখেছি : প্রৌঢ়ভাবনা
মন্তব্য
ভেবেছিলাম হয়তো কোন প্রতিবেদন/বিশ্লেষণ/গবেষণা জাতীয় পোস্ট হবে। এই বিষয়টিতে এরকম পোস্ট আশা করতে পারি। সাদামাটা পোস্ট লাগলো। কন্টেন্ট বিষয়ে আরেকটু যত্নবান হবেন ভাইয়া।
অফটপিকঃ গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরিতে বেসরকারি বিদ্যালয় থেকে আসলে ভর্তি নেয় না, এটা আমিও(একজন ছাত্র) জানতাম না।
ভালো থাকবেন
_____________________
Give Her Freedom!
আপনাকে হতাশ করবার দায় আমি মাথা পেতে নিচ্ছি এবং দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি খুব সাধারন একজন মানুষ। গবেষণাধর্মী পোস্ট লেখার যোগ্যতা বা জ্ঞান কোনটাই আমার নেই। আর এই বয়সে নতুন করে তা আর হবারও কোন সুযোগ নেই। জীবনটা একটা গবেট জাতীয় মানুষ হিসাবেই কাটিয়ে দিলাম। বাকি জীবনটা গবেট হিসাবেই আপনাদের সাথে থাকতে চাই। বুদ্ধিদীপ্ত পোস্টগুলো নাহয় আপনারাই লিখুন।
হ্যাঁ, আপনার পরামর্শটার মুল্যায়ন করেই বলছি লেখা পাঠাবার ক্ষেত্রে আরেকটু যত্নবান হব অবশ্যই।
সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন।
প্রৌঢ়ভাবনা
আরে না ভাই, এত বিষণ্ণ হয়ে প্রত্যুত্তর দেবার কিছু নাই। লেখালেখির বিচারে আমিও দৈন। তাইতো দেখেন না শুধু আপনাদের লেখা পড়ে বেড়াই, নিজে পোস্ট দেই না। আর ভালো লাগা, না লাগাটাও হয়তো বলে ফেলি। তবে আপনি আগেও ভালো লিখেছেন, সামনেও লিখবেন আমি নিশ্চিত। শুভেচ্ছা রৈলো।
_____________________
Give Her Freedom!
ল্যাবরেটরী স্কুল এর নিয়ম সম্বন্ধে আমার জানা নাই। যদি এটা আগে থেকেই এমন হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আপনার কিংবা ঐ শিক্ষকের দুইজনেরই আগে থেকে খোজ নিয়ে রাখা উচিত ছিলো বলে আমার মনে হয়। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ঐ শিক্ষকের চার্জ পাওনা রয়ে গেছে, যেহেতু উনি অন্তত আপনাকে ঠকান নাই শিক্ষার বিবেচনায়। আর এখনকার স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা আর প্রতিযোগিতা এত মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে যে, কোচিং ব্যতীত ভালো করতে গেলে বাবা-মাকে খাটতে হবে অনেক। আর যেহেতু তাদের সেই সময় নেই, শত কাজের ভীড়ে; তাই তারা ভালো কোচিং এর আশায় ছেড়ে দেন সন্তানকে। এদিকে ব্যবসায়িক ধান্ধা তো আছেই কোচিংগুলোর। ভালো মানের পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আসলে আমাদের আগামী শিশুদের জন্যে শিক্ষাটা দিনে দিনে রোবোটিক হয়ে যাচ্ছে। তারা যতটা না শিখছে, তার চেয়ে ভুগছে।
লেখা চলুক।
অতীত
ধন্যবাদ।
প্রৌঢ়ভাবনা
দেখুন যদি চুক্তিপত্র অনুযায়ী আপনি চিন্তা করেন ও খুশী থাকেন তাহলেতো মিটেই গেল, ওই শিক্ষকের কোন পাওনা নেই, কথা শেষ, ফুল স্টপ। আর যদি মনের মধ্যে খঁচ খঁচ করে তাহলে শিক্ষককে তিন মাস পড়ানর জন্যে উপযুক্ত পাওনা দিয়ে দিন। লেখার শিরনাম পড়ে ভর্তীযুদ্ধ সংক্রান্ত কথা বার্তা পাব ভেবেছিলাম, কিন্তু সেরকম কিছু পাওয়া গেল না। বরং মনে হল শিক্ষক বেচারাকে যে পারিশ্রমিকটা দেননি, সেইটা নিয়ে আপনার মনকষ্ট লাঘবের জন্যে এই পোষ্ট। অবশ্য এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত ভাবনা যেটা আপনার লেখা পড়ে তাতক্ষণিক মনে হয়েছে। ভাল থাকবেন, লেখা চলুক।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
প্রৌঢ়ভাবনা
নাম দেখে আসলেও অন্যরকম এক্সপেকটেশন আসছে কিন্তু। যাহোক আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে নিশ্চয় আরও মেলাই গল্প আছে ? সেগুলোর অপেক্ষায় বসলাম গুছিয়ে
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
যেহেতু জীবনের অনেকটাই সময় পার করে এসেছি তাই গল্পতো আছে মেলাই কিন্তু তা বড়ই সদামাটা। গরীব ঘরানার।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
প্রৌঢ়ভাবনা
আরে দূর, গল্পের আবার ধনী-গরিব কিসের ? হিন্দি সিরিয়ালে দেখেন না নায়িকা চারখানা বাদাম ভেঙ্গে খায় সেটাই কত রহস্য-রোমাঞ্চ-মেকআপ আর ঢ্যাঞ্চাক বাজনার সাথে চারটে এপিসোড জুড়ে দেখাতে থাকে ?! আর সব্বাই চোখের পাতি না ফেলে তাই গিলতে থাকে ! গল্প তো গল্পই, সেটা বলতে পারা চাই।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
সাদামাটা অনেক অনেক ঘটনায় যখন মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখবেন, দেখবেন কেমন রত্নরাজি হয়ে ওঠে সেগুলো! আরো লিখতে থাকুন। বয়স নিয়ে কোন চিন্তার কিছু নাই, বিশ্বের সেরা শিকারকাহিনী ও প্রকৃতির ছন্দ নিয়ে লেখা লেখক জিম করবেট কলম হাতে তুলে নিয়েছিলেন ৪৮ বছর বয়সে।
facebook
ওয়াও অণু, এইটা ভাল একটা জিনিস কইছ। আমারো তাইলে আশা আছে? এখন তাইলে সমানে পড়ি আর সচলে মন্তব্য করি, হাতে অনেক সময় আছে বাঁচলে।
নতুন মন্তব্য করুন