মুরুগাপ্পা স্ট্রিট
(ক)
সমূদ্রমন্থনে ঊর্বশী যদি বঙ্গপোসাগরের পশ্চিম উপকূল দিয়ে সমূদ্র থেকে উঠতেন তাহলে তিনি অবাক হয়ে দেখতেন বেলাভূমিতে একটা স্ট্রাকচার দাঁড় করানো আছে যেটা দেখতে অনেকটা কব্জির কাছে দু’হাত ঠেকিয়ে ভেতরদিকে বাঁকানো দশটা আঙুলের মতো লাগে। এই সাদা দশটা আঙুলের মাঝখানে আবার কালো-সরু-লম্বা একটা কিছুকে আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টায় রত থাকতে দেখা যায়। ঊর্বশী যদি ঐ লম্বা বাঁশের মতো জিনিসটাকে টাওয়ার অভ বাবেলের মতো কিছু ভেবে সেটা বেয়ে স্বর্গে ওঠার চেষ্টা করতেন তাহলে স্থানীয় লোকজন নিশ্চয়ই তাকে নিরস্ত করতে ছুটে আসতেন। কারণ, ঐ স্ট্রাকচারটা একটা সমাধি মন্দির। তাও আবার যে সে লোকের নয় - ওটা এমন একজন মানুষের সমাধি যাঁর মৃত্যুতে অন্ততঃ ত্রিশ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছিলেন আর যাঁর অন্ত্যষ্টিক্রিয়ার সময় মারা যান আরো ত্রিশ জন। চার দশক ধরে প্রায় শ’দেড়েক চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। টানা দশ বছর ধরে নিজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। মোটামুটি সত্তর বছর জীবনের পঞ্চাশ বছর ধরেই নিজ রাজ্যের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন। অমন প্রবল প্রতিপত্তির মানুষ মরে গেলেও তাঁর প্রতিপত্তি কমে না। ঊর্বশীর সেখানে পাত্তা পাবার কথা না। আমি ঊর্বশী নই, তাই সমূদ্রের বুক থেকে আমার উত্থান সম্ভব নয়। আমি তাই অবতরন করি অটো থেকে - ওয়াল্লাজাহ্ রোডের মাঝামাঝি একটা জায়গায়, এই রাস্তাটার শেষ মাথার কাছের বেলাভূমিতে ঐ সমাধি মন্দিরটি আছে।
অটো থেকে যেখানে নামি সেখানে মূল রাস্তা থেকে একটা সরু রাস্তা শুরু হয়েছে। অটোর ড্রাইভার আমার বোধের অগম্য ভাষায় কিছু বলে হাত নেড়ে ঐ রাস্তা ধরে গিয়ে সামনে বামদিকে মোড় নিতে বলে। তার মুখের ভাষা না বুঝলেও তার হাতের ইশারা বুঝতে পারি, আমি বাক্স-প্যাঁটরাসহ সেই রাস্তা ধরে আগাই। এই জায়গাটার নাম ট্রিপলিকেন - এই মহানগরীতে ভ্যাগাবন্ডদের আশ্রয়স্থল বলে খ্যাত। সন্ধ্যা পার হয়ে রাত ঘনিয়ে আসলেও কোন কারণে রাস্তার স্ট্রিটলাইটগুলো জ্বলছেনা - বেশ অন্ধকার। আমি আন্দাজে পথ চলে যথাস্থানে বামে মোড় নিয়ে আগাই। মোড় ঘুরে একটু আগাতে চায়ের দোকানের আলো দেখা যায়, আর তার পেছনে একটা চারতলা বাড়ির গায়ে লাগানো লম্বা সাইনবোর্ডের আলো চোখে পড়ে। সাইনবোর্ডে সাদার উপর নীল রঙে লেখা “সালাম ম্যানশন”, ১৩ মুরুগাপ্পা স্ট্রিট। অপয়া হোল্ডিং নাম্বারওয়ালা এই বাড়িটাই পরবর্তী অনির্দিষ্ট কালের জন্য আমার আবাসস্থল হতে যাচ্ছে। এই বাড়ির হদিস আমার জানা ছিল না। রায়নন্দিনী কার কাছ থেকে যেন জেনে, ফোনে এদের সাথে কথা বলে ঠিকঠাক করে দিয়েছে। বাড়িটার নামের প্রথম শব্দটি একটি আরবী শব্দ বলে বোধ হচ্ছে, যদি না দ্রাবিড় ভাষায় একই শব্দ ভিন্নার্থে থেকে থাকে। সেক্ষেত্রে বোধকরি গৃহকর্তা একজন মুসলিম।
নামে ম্যানশন হলেও বাড়িটা আঙ্গিনাবিহীন, সিংহদরজাবিহীন, ঠিক রাস্তার উপর দাঁড়ানো একটা দরিদ্র ভবন। দুই পাল্লার কাঠের দরজা খোলাই ছিলো, ঢুকতেই উঁচু কাঠের কাউন্টার। সেখানে দাঁড়ানো ভদ্রলোকের বয়স বেশি নয়, চেহারাতে একটা হাসি-খুশি ভাব আছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় দিলাম, মাথা দু’পাশে নাড়িয়ে দ্রাবিড়িয় ভঙ্গীতে সম্মতি জানিয়ে পরিচয়পত্র চাইলেন। রেজিস্টারে নিজের নাম-ঠিকুজী লেখার সময় চোখে পড়লো কাউন্টারের কাঁচের নিচে “আয়াতুল কুরসী” রাখা, বুঝলাম বাড়ির নাম দেখে করা আমার অনুমান সঠিক। লেখা শেষ করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট উচ্চারণে বললাম, “আস্সালামু আলাইকুম”। উত্তরে তিনি একগাল হেসে বললেন, “ওয়ালাইকুম আস্সালাম”। আমার সালাম ম্যানশন তথা মুরুগাপ্পা স্ট্রিটের জীবন শুরু হলো।
সালাম ম্যানশনের কোন বিশেষত্ব নেই। বাড়িটা পুরনো নয়, তবে আলোর কমতি থাকায় তার ছোট ছোট কামরাগুলোতে অন্ধকার চব্বিশ ঘন্টা জমাট বেঁধে থেকে একটা ভুতুড়ে ভাব এনে রেখেছে। পূর্বমুখী বাড়ি হলেও রাস্তার উল্টোদিকে উঁচু বাড়ি থাকায় পূর্ব দিকের আলো-বাতাস কিছুই আসেনা। অন্য তিন দিক জুড়ে একেবারে গা-লাগোয়া উঁচু বাড়ি - সেদিক থেকে চিৎকার, চেঁচামেচির শব্দ ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। সিড়িতে ক্ষীণ আলো জ্বলে। ঘরগুলোতে চন্দনের গন্ধ। স্নানঘরে ঢুকলে চন্দনের গন্ধ তীব্রতর হয় - একেবারে মাথা ধরিয়ে দেবার মতো। উৎস খুঁজতে দেখি টয়লেট ফ্রেশনারটি চন্দনগন্ধী। ঠিক করলাম বাজারে গেলে অন্য সুবাসের একটি টয়লেট ফ্রেশনার কিনে এটা ফেলে দিতে হবে। থাকার ঘরটিতে খাট, চেয়ার-টেবিল থাকলেও স্থানাভাব প্রকট। একটু হাঁটা-চলা করার উপায় নেই। ঘরের এমন দুরবস্থা জানলে রায়নন্দিনী নিশ্চয়ই আমার জন্য এমন ম্যানশন ঠিক করে দিত না। এই জায়গাটার অন্য যেসব সুবিধা আছে দূর থেকে সেগুলোই শুধু জানা যায়, অসুবিধাগুলো জানা যায় না। তাই রায়নন্দিনীকে দোষারোপ করার উপায় নেই। এর জন্য তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। আমি অবশ্য তার প্রতি চির অকৃতজ্ঞ।
মুরুগাপ্পা স্ট্রিট রাস্তাটার নাম যতো বাহারী হোক, এটা আসলে একটা সরু পথ ছাড়া কিছু না। মূল রাস্তা ওয়াল্লাজাহ্ রোড থেকে বের হয়ে অনেকটা ইংরেজী ‘সি’ অক্ষরের মতো হয়ে আবার ওয়াল্লাজাহ্ রোডেই এসে মিশেছে। পথটার প্রথমাংশে কিছু দোকান-পাট থাকলেও মধ্যাংশে সাধারণ আবাসিক বাড়ি-ঘরই বেশি। সেসব বাড়ির খোলা বারান্দা বা উঁচু-চওড়া প্লিন্থ বা তিন-চার ধাপের প্রশস্ত সিঁড়ি একেবারে রাস্তায় এসে ঠেকেছে। দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের শহরতলীর বাড়িগুলোর মতো। সেসব বারান্দা বা প্লিন্থ বা সিঁড়িতে আমাদের দেশের মতোই রোদ পোহানো বুড়ো, তরকারী কুটতে থাকা গৃহিনী অথবা চুলে বিলি দিতে থাকা নারীর দেখা মেলে। এই বিভুঁইয়ে অমন দৃশ্য মনে শান্তি আনে। রাস্তার শেষ ভাগে একটা রেস্টুরেন্ট আছে যেটাকে দেখে সাধারণ থাকার বাড়ি ছাড়া আর কিছু মনে হয় না। সেখানে ইডলি, প্লেইন দোসা আর বড়া ছাড়া কোন বেলাতেই অন্য কিছু মেলে না। সব খাবারেই একটা তিতকুটে স্বাদ আছে, বোধকরি নিম্নমানের চাল-ডাল ব্যবহার করার দরুণ। সব খাবারের সাথে শুকনো মরিচ বাটা-তেঁতুল জল গোলানো একটা চাটনি দেয়া হয় যেটা খেলে টক-ঝাল-নুনে জীভের এমন দশা হয় যে পরের দু’বেলায় তাতে আর কোন সাড় পাওয়া যায় না। তবে এই মহানগরীতে এর চেয়ে সস্তা আর কোন রেস্টুরেন্ট হতে পারে না। অনেক কষ্টেও কারো কাছ থেকে রেস্টুরেন্টটার সঠিক নাম উদ্ধার করতে পারিনি। আমি যতোবার ওখানে গেছি ততোবার ইডলি বা দোসা বা বড়া ছাড়া অন্য কোন শব্দ উচ্চারণ না করে ইউনিভার্সাল ইশারার ভাষায় কাজ সেরেছি। এই রেস্টুরেন্টটার পরে একটা এসটিডি বুথ আছে যেখানে ফ্যাক্স করার সুবিধাও আছে - যা আশা করিনি। দেশে নিজের কর্মস্থলে ফ্যাক্স করা যাবে ভেবে আশ্বস্ত হলাম। রাস্তার শেষ মাথায় একটা পানের দোকান আছে, কীর্তিটা এক প্রবাসী বাঙালীর। আমি ওখান থেকে সবচে’ সস্তা ফিল্টার টিপড্ সিগারেট কিনতাম। আবার মূল রাস্তায় বের হলে হাতের ডান দিকে ভেনাস লজ। এ’দেশের যে কোন রাজ্যে গেলেই একটা না একটা ভেনাস লজের দেখা মেলে। সেগুলো চেইন কিনা জানি না, তবে তাদের চেহারা-মূল্য-আচার-ব্যবহারে অসম্ভব মিল। ভেনাস লজের একটু পরেই একটা বড় রেস্তোরাঁ যার নাম ‘মাদুরাই সারদা হোটেল’। এটা এমন একটা জায়গা যেখানে সারাটা দিন বসে পার করা যায়। এতো বিচিত্র সব মানুষ এখানে আসে! তাদের চেহারা, বর্ণ, ভাষা, পোশাক, রীতি, আচারে এতো বৈচিত্র্য যে একটা আন্তর্জাতিক কার্নিভ্যালের মতো মনে হয়।
প্রথম রাতে খাবারের সন্ধানে আলম ম্যানশন থেকে বের হয়ে এসটিডি বুথটা যখন আবিষ্কার করলাম, তখন মনে পড়ল আমার উপর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ আছে, “পৌঁছেই ফোন করে খবরটা জানিও”। রায়নন্দিনীর মোবাইল ফোন নেই - মোবাইল ফোন তখনও আম-জনতার জিনিস হয়ে ওঠেনি। তখনও প্রতিবেশীর বাসায় ফোন করে বলা যেতো, “আপনাদের পাশের বাসার অমুককে একটু ডেকে দেবেন”? আমি ফোন করে কাউকে ডেকে দেবার কথা না বলে বলি, “নমস্কার মাসীমা। আমি পাণ্ডব, আপনাদের পাশের ফ্ল্যাটের দীপা রায়ের বন্ধু। দয়া করে দীপাকে বলবেন যে আমি ঠিক মতো পৌঁছেছি আর আমি ভালো আছি”। আমার কথা ফুরিয়ে যায়, বিল মিটিয়ে বুথ থেকে বেরিয়ে রেস্তোরাঁ খুঁজতে বের হই। যে প্রবাসে বাঙালীর প্রধান কাজ জীবিকার সন্ধান নয়, সেখানে বাঙালীকে সাধারণত সুহৃদের ভূমিকায় পাওয়া যায়। পথে অমন এক সুহৃদ মাদুরাই সারদা হোটেলের খোঁজ দিলেন। রেস্তোরাঁটিতে ঢুকতে বুঝে গেলাম আন্তর্জাতিক কার্নিভ্যালে ঢুকে পড়েছি। মাতৃভাষার বাইরে আমার দৌড় সাহেবদের ভাষা পর্যন্ত, তাও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। তবে কানে শুনে নিকট বা দূর প্রতিবেশিদের অনেকের ভাষাই আলাদা করতে পারি। সেখান থেকেই অনুমান করি কম করে হলেও সাত-আটটা ভাষায় কথা হচ্ছে। বিশাল হলঘরকে বর্ণ ও শ্রেণী অনুযায়ী আলাদা করা হয়েছে। একপাশে কাচঘেরা চীনে খাবারের ঘর যেমন আছে, আবার দূরের কোনায় কলাপাতা বিছিয়ে ঠাঁই করাও আছে। পেতলের বগি থালা, স্টীলের বড় থালা, চীনেমাটির প্লেট সব ধরনের ব্যবস্থাই আছে। আমি স্টীলের থালার দলে ভীড়ে যাই। দেখলাম “ফিশ-কারি-রাইস”, “চিকেন-কারি-রাইস”, “এগ-কারি-রাইস”-এর মতো সেট ডিশগুলো নিলে সস্তা পড়ে। সেই সস্তার মধ্যেও সবচে’ সস্তা “এগ-কারি-রাইস” অর্ডার করি। বিষ্ণু নামের দ্রাবিড় রেস্তোরাঁ কর্মী এক টুকরো পাতলা কাঠ দিয়ে অদ্ভূত দক্ষতায় টেবিল পরিষ্কার করে দিলো - কোন তোয়ালে বা ন্যাকড়া ব্যবহার না করেই। খাবার আসলো - স্টীলের বড় থালা ভর্তি ভাত, তাতে ছোট ছোট বাটি বসানো। বাটিগুলোর কোনটাতে ডিম-আলুর তরকারী, কোনটাতে সবজী, কোনটাতে টক ডাল। মশলা আর রান্নার ভিন্নতায় সেগুলোর স্বাদ-গন্ধ অন্য রকমের। পাশের টেবিলের এক বাঙালী নারী বলে ওঠেন, “এ মা! আমার কেমন গা গুলোচ্ছে”! গা গুলানো আমার জন্য সংক্রামক ব্যাধি। নাক চেপে কোন রকমে খেয়ে বাইরে বের হয়ে সিগারেট ধরাই।
(খ)
রায়ালাসীমা জায়গাটা কোথায় সেটা জানা তো দূরে থাক জায়গাটার নামও কখনো শুনিনি। শেখর রেড্ডি যখন বলল সে রায়ালাসীমা থেকে এসেছে তখন জিজ্ঞেস করতেই হলো, জায়গাটা কোথায়? তখন জানলাম পাশের জেলা, যেটা অন্য রাজ্যে পড়েছে, সেটা রায়ালাসীমার অন্তর্গত। শেখর আর তার বোন প্রিয়া এ’রাজ্যে এসেছে ভাগ্যের সন্ধানে। ভাইয়ের ইচ্ছে লেখক বা সাংবাদিক হওয়া। বোনের অমন বিশেষ কিছু হবার ইচ্ছে নেই, আরেকটু লেখাপড়া করে একটা ভালো চাকুরী পেলেই তার চলবে। সেজন্য তারা ঠাঁই গেড়েছে ভ্যাগাবন্ডদের আশ্রয়স্থল মুরুগাপ্পা স্ট্রিটে। এই ভাই-বোনের সাথে পরিচয় হয় কাছের বাসস্ট্যান্ডে। কোন্ বাস কোথায় যায় সেটা আমার জানা ছিলনা। তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে আগ্রহের সাথে বাসগুলোর ঠিকুজী আমাকে জানিয়ে দেয়। কথায় কথায় জানা হয় আমরা এক পাড়াতেই থাকি। এই নিঃসঙ্গ বিভূঁইয়ে তাদের সাহচর্য আমাকে আনন্দ দেয়, তারাও আমার সঙ্গে কথা বলে আনন্দিত হয়।
শেখরদের রাজ্যের উপকূলের মানুষদের সাথে তাদের অঞ্চলের মানুষদের মন কষাকষি আছে। নদীর পানির বেশির ভাগ ভাটির মানুষেরা নিয়ে নেয়, তাই উজানের রায়ালসীমার মানুষ চাষবাসের জন্য পর্যাপ্ত পানি পায় না। খরা, ফসল মার খাওয়া, দুর্ভিক্ষ তাদের নিত্য সহচর। রাজ্যের শাসনভারও মূলত উপকূলীয়দের নিয়ন্ত্রণে। অতীতে তাদের সাথে বহু বার নানা বিষয়ে নানা সমঝোতা হলেও উপকূলীয়রা বার বার নাকি সেসব সমঝোতার বরখেলাফ করেছে। তাই রায়ালাসীমার কেউ কেউ হাঁড়ি আলাদা করতে চাইছে। এই সমস্যা ছাড়া আরো একটা সমস্যা আছে দারিদ্রপীড়িত কৃষিপ্রধান এলাকাগুলোতে - সেটা উগ্র লালদের প্রকোপ। উত্তর-পূর্বের কোশল-উৎকল রাজ্য বাদ দিলে এ’দেশের পূর্বদিকে তাকালে লালদের শক্তি আর প্রভাব বলয়টা টের পাওয়া যায়। দরিদ্র কৃষকদের মধ্যে লালদের জনপ্রিয়তাটা কম নয়। সেটার দায় বহু যুগ ধরে চলে আসা জোতদার, কুসীদিজীবি মহাজন আর তাদের লাঠিয়ালদের। নানা রূপে আসা নতুন নতুন মহাজন আর তাদের ঠ্যাঙাড়েদের অত্যাচারে কৃষকদের মধ্যে আত্মহত্যার হার কম নয়। যারা আত্মহত্যায় অনাগ্রহী তাদের কেউ কেউ লালদের দলে ভীড়ে যায়। রক্ত গরম তারুণ্যের কেউ কেউ অন্যায় সইতে না পেরে ঐপথে পা বাড়ায়। শেখরও অমন পথে যেতে নিয়েছিলো। প্রিয়া সেটা আঁচ করতে পেরে ভাইকে দুর্ভোগ আর অকাল মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়ে এই প্রবাসে এসেছে।
জীবিকার সন্ধানে শেখরদের রাজ্যের অনেক মানুষই এখন এই রাজ্যে স্থায়ী হয়েছেন। সাম্প্রতিককালের বঞ্চনার কথা বাদ দিলেও অতীতে রাজ্য ভাগাভাগি নিয়ে এই রাজ্যের ব্যাপারেও তাদের বেশ অসন্তোষ আছে। রায়ালাসীমার কেউ কেউ এই মহানগরীটাকেও তাদের জমি বলে মনে করেন। পেছনের সত্যটা যাই হোক, সামনের সত্যটা হচ্ছে এই যে, মাথা গুনতিতে এই মহানগরী তো বটেই এই রাজ্যেও শেখরদের জাতভাইরা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। শুধু এই রাজ্যই নয়, দক্ষিণের সব রাজ্যের বড় শহরগুলোতে অন্তঃদ্রাবিড় প্রতিযোগিতা লেগেই আছে।
প্রিয়া সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একটা ডিপার্টমেন্ট স্টোরে সেল্স গার্লের কাজ করে। বিকেল-সন্ধ্যায় একটা কলেজে পড়ে। এখানে আসার পর কিছুদিন তাদের খুব দুরবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে। একদিন চাকুরী খুঁজতে এই দোকানে গিয়ে আবিষ্কার করে দোকান মালিক তার জাতভাই। ভদ্রলোক দরকারে হোক, মায়াবশত হোক বা স্বজাত্যবোধ থেকে হোক প্রিয়াকে চাকুরী দেন। শেখর নির্দিষ্ট কোন কাজ করে না। মাঝে মধ্যে এখান থেকে প্রকাশিত তাদের ভাষার একটা সাপ্তাহিকে নানা বিষয়ে লেখে। তবে তার দিনরাত কাটে উঠতি কবি-সাংবাদিকদের সাথে। কবিতা-সাহিত্য আমার বিষয় না, তাই তার সাথে বেশিক্ষণ কথা চালানো যায় না। শুধু বুঝতে পারি তাদের ভাষায় বিদ্যমান রোমান্টিক কবিতার ধারাতে সে এবং তার বন্ধুরা আস্থাবান নয়। তারা নিত্য দিনের জীবন-যন্ত্রণা নিয়ে কবিতা লেখার নতুন ধারা গড়তে চায়। কবিতা নিয়ে আলাপ শুরু হবে এই ভয়ে শেখরের সাথে দেখা হলে আমি দ্রুত কেটে পড়ার চেষ্টা করি; তবে সেটা সহজে করা যায় না। মাঝখান থেকে কয়েক কাপ কফি আর সিগারেট ধ্বংস করা হয়। এরচেয়ে প্রিয়ার সাথে কথা বলা স্বস্তিকর। কিন্তু রবিবার বিকেল ছাড়া তার দেখা পাওয়া যায় না।
এই মহানগরে আমার প্রধান কাজ হচ্ছে একজন রোগীর অ্যাটেন্ডেন্ট হয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘোরা। এই কাজটা আমার ওপর কেউ চাপিয়ে দেয়নি, আমি নিজেই এটা বেছে নিয়েছি। একটু সময় পেলে প্রকৃতি যেমন তার শরীরের ক্ষতচিহ্নগুলোকে সারিয়ে তুলতে পারে, আমারও তেমন অপ্রকাশ্য ক্ষতগুলো সারানোর জন্য সময় দরকার। আরো বেশি দরকার নিজে নিজের মুখোমুখি হয়ে কতগুলো বিষয়ের মীমাংসা করে নেয়া। এই রোগীর অ্যাটেন্ডেন্ট হওয়াটা আসলে কোন চাকুরী নয়, নিজের জন্য একটা লম্বা সময় বের করার উপায়মাত্র। দেশ থেকে আমার রোগীর এখানে আসতে আরো কিছু দিন দেরি আছে। এই সময়টাতে আমাকে চারপাশটা চিনে রাখতে হবে। দরকারী সব জিনিসের খোঁজ, দরকারী মানুষের খোঁজ এমন হাজারোটা বিষয় জেনে রাখতে হবে। এই ব্যাপারে স্থানীয় কারো সহায়তা পেলে খুব উপকার হতো। শেখর একে তো স্থানীয় নয়, তার ওপর সে নিজের চারপাশ নিয়ে বেশ উদাসীন। কখনো প্রিয়াকে নিয়ে কফি খেতে বসতে পারলে এক ঘন্টাতেই তার কাছ থেকে অনেক কিছুর খোঁজ জানা যায়। কিন্তু সে সুযোগ বড্ড কম; আমি তাই মনে মনে জুতসই মানুষ খুঁজি।
পোঙ্গাল নামের খাবারটির কথা শুনেছিলাম প্রিয়ার কাছে। খাবারটি তার খুবই পছন্দের। এই এলাকার জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ রত্না ক্যাফের পোঙ্গাল নাকি স্বর্গীয় স্বাদের জিনিস। খুব সকাল সকাল না গেলে সেটা আর পাওয়া যায় না। বার বার এর স্বাদের কথা শুনতে শুনতে একদিন ভোরে রত্না ক্যাফেতে হাজির হই। বেকার মানুষকে অত সকালে ঘুম থেকে উঠতে হলে তার মেজাজ খারাপ থাকে - আমার অবস্থাও তাই। তবু কৌতুহলের কাছে বিরক্তি হার মানে। খাবারটা দেখতে একটু নরম খিচুরীর মতো মনে হয়। মুখে দিয়ে দেখি চাল-ডাল-মশলার সাথে নারকেলও দেয়া আছে। সাথে মরিচ বাটার মতো কী একটা জিনিস আর বেগুন-টমেটোর চাটনি দেয়া আছে। সকাল বেলা এই পরীক্ষামূলক খাবার মুখে দিয়ে মুখ বিকৃত করি। আমার অবস্থা দেখে উলটো দিকের এক যুগল হেসে ওঠে। সাহেবী ভাষায় জিজ্ঞেস করে খাবারটি আমার পছন্দ হচ্ছে না কেন। আমি তাদের অনুভূতির প্রতি সম্মান রক্ষার্থে আমার অনভ্যস্ততার কথা বলি। তারা আমাকে অন্য কিছু নেয়ার পরামর্শ দেয়। আমিও পোঙ্গালের হাত থেকে বেঁচে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। কফি খেতে খেতে যুগলটির সাথে কথা জমে ওঠে। আমার হাতে অফুরন্ত সময় সুতরাং গল্প করতে আপত্তি নেই। পুরুষটির নাম পেরুমল। তার বর্ণ ও চেহারা যেমন তাতে তার নাম ঘনশ্যাম হলে বরং ভালো মানাতো। পেরুমলের নামের বাকি অংশগুলো দুরুচ্চার্য। পেরুমলের নাম উচ্চারণে আমার দুরবস্থা দেখে নারীটি তার নাম সহজ করে বলে নীতু পিল্লাই। পেরুমল স্থানীয় মানুষ। নীতু এসেছে আরো দক্ষিণের তিরুনেলভেলীর গ্রামাঞ্চল থেকে। অবশ্য কথাবার্তায়, পোশাক-আশাকে, স্মার্টনেসে নীতু যে গ্রামের মেয়ে তা মনে হয় না। পেরুমল আন্না রোডের টেলিফোন এক্সচেঞ্জে কাজ করে। নীতু বছর খানেক হয় এই মহানগরে এসেছে পড়াশোনা করার জন্য, থাকে আরো কয়েকজন বান্ধবীর সাথে ঘর ভাড়া করে। মাস ছয়েক হয় তাদের পরিচয়, সেখান থেকে প্রণয়। নীতু এই মহানগরে নতুন হলেও অনেক খুঁটিনাটি তার জানা। আমি আমার সমস্যা সমাধানে আশার আলো দেখতে পাই।
নীতু বেশ মিশুক। তার সাথে ভাব জমতে সময় লাগে না। তার হাতে যথেষ্ট সময় থাকায় প্রায়ই সে আমাকে এখানে ওখানে নিয়ে যায়। আমিও তার কাছ থেকে ভালো কাঁচা বাজার কোথায়, সুপার মার্কেট বা ওষুধের দোকান কোথায়; হাসপাতালে যাবার সহজ পথ কোনটি, কোন সময় ট্রাফিক কেমন থাকে, কোন রেস্তোরাঁর খবার ভালো কিন্তু দামে সস্তা, কোথায় পুরনো বই পাওয়া যায়, কোন সিনেমা হলে ভালো মুভি চলে এমন হাজারোটা দরকারী-অদরকারী বিষয় শিখতে থাকি। মাঝ-মধ্যে সে আমাকে নিয়ে টেলিফোন এক্সচেঞ্জে পেরুমলের সাথে দেখা করতেও যেতো। সেখানে গেলে নীতু গোটা এক্সচেঞ্জটা ঘুরে ঘুরে দেখতো। পেরুমল জিজ্ঞেস করতো, এসব দেখার কী আছে? নীতু বলতো তার এতোসব জটিল যন্ত্রপাতি দেখতে ভালো লাগে। আমার এসবে আগ্রহ থাকার কথা না। তাই আমি পেরুমলের সাথে বসে গল্প করতাম, কফি খেতাম। পেরুমল নীতুর সারল্যের গল্প করতে পছন্দ করতো। সে যে কতো সাধারণসব বিষয় বা নিয়ম-কানুন জানে না সেসব বলতো। পেরুমল নীতুর মুখের ভাষায় ভিন্ন আঞ্চলিক টানেও মুগ্ধ। ওদের পরিকল্পনা - নীতুর পড়াশোনা মোটামুটি শেষ হলেই তারা বিয়ে করবে।
(গ)
একদিন সকালে আমার রুম থেকে নিচে নামতে দেখি সালাম সাহেব বিরক্ত মুখে বার বার টেলিফোন করার চেষ্টা করছেন। জিজ্ঞেস করতে বললেন টেলিফোন কাজ করছে না। আমারও টেলিফোন করার দরকার থাকায় এসটিডি বুথটাতে যাই। দেখি সেখানকার ফোনও কাজ করছে না। ব্যাপার কী জিজ্ঞেস করতে জানা গেল গতকাল রাতে আন্না রোডের টেলিফোন এক্সচেঞ্জে নাকি বোমা হামলা হয়েছে। আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। কয়েকদিন হয় আমার রোগী এসেছেন। তাকে নিয়ে মায়াবাদীদের হাসপাতালে নানা পরীক্ষা করানোর পর ডাক্তার রায় দিয়েছেন কয়েকটা বড় ধরনের সার্জারী করতে হবে। কিন্তু সার্জারী আবশ্যক হওয়া রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার রোগীর সার্জারীগুলো কবে করা যাবে সেটা ঠিক বলতে পারে না। আমাদের জানানো হয় - আপনারা আপনাদের ফোন নাম্বার রেখে যান, সার্জারীর শিডিউল পাওয়া গেলেই আপনাদের ফোনে জানানো হবে। এখন সালাম ম্যানশনের ফোন যদি নষ্ট থাকে তাহলে আমরা শিডিউল পাবো কী করে? বুঝতে পারলাম আপাতত আমাদের ট্রিপলিকেন এলাকা থেকে অন্য কোথাও, যেখানে ফোনের সুবিধা পাওয়া যাবে, অমন জায়গায় যেতে হবে।
টেলিফোন এক্সচেঞ্জে বোমা হামলার ঘটনায় পেরুমলের কী হয়েছে জানতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তার বাসার ঠিকানা জানা না থাকায় তার সাথে যোগাযোগের উপায় থাকে না। বোমাক্রান্ত টেলিফোন এক্সচেঞ্জে গিয়ে তার খোঁজ নেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মনে হয় না। শেখরের সাথে দেখা হয়; সে জানায় পুলিশের সন্দেহ দক্ষিণ উপকূলের দ্বীপরাষ্ট্র থেকে আসা সন্ত্রাসীরা এ’কাজ করেছে। নীতুর সাথে দেখা করার কথা ভাবি। তার বাসাটা চিনি; তবে সেটা একটু দূরে বলে যাওয়া হয়ে ওঠেনা। তাছাড়া পরের দুটো দিন কাটে শহরের নানা জায়গায় সুবিধাজনক মূল্যে নিজেদের জন্য বাসস্থান খুঁজতে। এমন সময় আমার গুরুর কথা মনে হয়। গুরু বলেছিলেন সব দেশেই ট্রেন স্টেশনের কাছে সস্তার হোটেল মেলে। আমিও সময় নষ্ট না করে সেন্ট্রাল ট্রেন স্টেশনের কাছের ওয়ালট্যাক্স রোডে আশ্রয় খুঁজি। অল্প চেষ্টায় ট্রিনিটি চ্যাপেলের পাশে জুতসই আশ্রয়ের সন্ধান মেলে; কাছের জেসন স্ট্রিটে বাঙালী খাবারের দোকানও মেলে। দ্রাবিড় খাবারে মানিয়ে নিতে অক্ষম আমার রোগীর কথা ভেবে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি।
বেশ কয়েকদিন পরের কথা। একদিন এগমোরের মিঠু ফার্মেসী থেকে ওষুধ কেনার সময় দেখি পেরুমলও ওষুধ কিনছে। আমি ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে কুশল জিজ্ঞেস করি, নীতুর কথা জিজ্ঞেস করি। পেরুমল জানালো টেলিফোন এক্সচেঞ্জে বোমা হামলা হবার পরের তিন-চারটা দিন তার খুব ব্যস্ততায় কেটেছে। পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থা-মিডিয়ার লোকজনকে সামলাতে গিয়ে নীতুর সাথে আর যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি। সপ্তাহখানেক পরে নীতুর খোঁজ করতে জানা গেলো আরো এক সপ্তাহ আগে নীতু আর তার বান্ধবীরা ভাড়ার ঘর ছেড়ে দিয়ে কোথায় যেন চলে গেছে। নীতুর চলে যাবার খবর পেরুমল যে জানে না এটা শুনে নীতুর বাড়িওয়ালা বেশ অবাক হয়। পেরুমলও কম অবাক হয়নি। এভাবে না বলে, না জানিয়ে নীতু চলে যেতে পারে এটা সে ভাবতেই পারে না।
এরপর পেরুমল আরো যা বলে তাতে আমি বিস্মিত হই। পেরুমল জানায়, যেখন টেলিফোন এক্সচেঞ্জে বোমা হামলা হয় তখন হামলাকারীদের দলে নাকি কয়েকটা মেয়েও ছিলো। তাদের গা-মুখ ঢাকা থাকলেও পুরুষ আর নারীদের আলাদা করতে টেলিফোন এক্সচেঞ্জের কর্মীদের কোন অসুবিধা হয়নি। হামলাকারীদের দলের একটা মেয়ের চলা-ফেরায় বোঝা গেছে টেলিফোন এক্সচেঞ্জের ভেতরের অনেকটাই তার চেনা। বোমা হামলাকারী দলে টেলিফোন এক্সচেঞ্জের ভেতরটা চেনা নারী সদস্যের উপস্থিতি, একই সময়ে সদলবলে নীতুর অন্তর্ধানকে পেরুমল এক সূতোয় বাঁধে। নিজের উপর কিছুটা ঝুঁকি আসে জেনেও পেরুমল পুলিশকে সব জানায়। পুলিশ অবশ্য পেরুমলকে অকারণে গ্রেফতার করেনি। শুধু বলেছে সে এই মহানগর ছেড়ে যেতে পারবে না, আর নীতুর কোন খোঁজ পেলে পুলিশকে জানাতে। ওখানে আমার থাকার শেষ পর্যন্ত জানতাম পেরুমল বা পুলিশ কেউই আর নীতুর বা তার বান্ধবীদের খোঁজ পায়নি। আমি মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি এই ভেবে যে, আমরা যথাসময়ে মুরুগাপ্পা স্ট্রিট ছেড়ে চলে এসেছিলাম। নয়তো অহেতুক পুলিশি ঝামেলায় পড়তে পারতাম।
ওয়ালট্যাক্স রোডে কিছু কিছু সুবিধা আছে ঠিকই তবে মুরুগাপ্পা স্ট্রিটের তুলনায় তা বিশেষ সুবিধাজনক নয়। তাছাড়া এখানকার খরচ মুরুগাপ্পা স্ট্রিটের খরচের চেয়ে ঢেড় বেশি। আমি ভাবি, যদি আরো দীর্ঘ সময় এই মহানগরে থাকতে হয় তাহলে আমার রোগীর সার্জারীগুলো হয়ে গেলে আবার মুরুগাপ্পা স্ট্রিটে ফিরে আসতে হবে। নয়তো যে সীমাবদ্ধ সঞ্চয় নিয়ে এই দেশে এসেছি তা দিয়ে শেষদিন পর্যন্ত চলতে পারবো না। আমার মন জানে, মুরুগাপ্পা স্ট্রিটে আরেক দফা বাস আমার নির্বন্ধে আছে।
মন্তব্য
খুব ভালো লাগলো পড়তে।
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বেশ ভালো লেগেছে কিন্তু এই পর্বে রায়নন্দিনীর অনুপস্থিতির জন্যে আপনার উপর খুব রাগ হলো। মুরুগাপ্পা ষ্ট্রীট দেখেই ভেবেছিলাম আবারো বোধকরি রায়নন্দিনীর আঙ্গুল এসে পাণ্ডবের হাত ছুঁয়ে যাবে, চারপাশ জুড়ে ফেলে যাবে অচেনার মতো কিছু সুরভিত ঘ্রাণ! আহা, সে পর্বটি কি দারুণই না লেগেছিল, আজ সেটি বের করে আবার পড়লাম!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ বস্! এই পর্বে রায়নন্দিনী আসার কোন সুযোগ ছিলনা। তিনি তখন ১৬৭৬ কিলোমিটার দূরে আপনাতে মগন। আবার তার দেখা মিলবে আগামী কোন এক পর্বে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভালো লেগেছে।
-মেফিস্টো
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
চমৎকার লেগেছে। বড় গল্প বা উপন্যাসের জন্যে আপনার গদ্য খুবই মানানসই। বিশেষ করে আপনার দীর্ঘ বাক্যগুলো (যেমন ধরুন প্রথম বাক্যটি) চমৎকৃত করলো!
-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী
সচলের অনেকগুলো সুবিধার একটি হচ্ছে এখানে মনোযোগী পাঠক অনেক - তাদের চোখে ঠিকই ধরা পড়তে হয়। এই গল্পটা একটা সম্ভাব্য "উপন্যাস প্রচেষ্টা"র অংশ। গল্প পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ কবি!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
খাবারের অংশটুকু দারুণ লাগল। সচলের খাদ্যরসিকদের প্রভাবে কীনা জানি না, পোস্ট খাওয়ার উল্লেখ থাকলেই হল, চোখ আগে ঐদিকেই যাবে।
রত্না ক্যাফে আর সারদা হোতেলের মেনু কী অনেকটা একই রকম? (জানি গল্প, তবু মনে এল)
কাঠের টুকরো দিয়ে টেবিল পরিষ্কার, অটোওয়ালা, মরুগাপ্পা স্ট্রিট, নারকেল দেওয়া খাওয়া, চিকেন-কারি-রাইস - গল্পের এই আধা-পরিচিত গন্ধটুকুখুব প্রিয় আমার। আর কেন জানি মনে হচ্ছে, আপনি ইচ্ছে করেই গল্পগুলোতে প্রচুর ডিটেইল উল্লেখ করছেন, হয়ত পাঠককে নতুন পরিচবেশের সাথে মানানোর জন্যই বা খুঁটিয়ে দেখার মধ্যে একটা চোখা ভাব আছে সে ধরনের টোন আনার জন্য - এই কারুকাজটুকু দারুণ লাগে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
১. খাবারার বর্ণনা দেয়াটা সৈয়দ সাহেবের প্রভাবে। তাছাড়া আমি মনে করি কোন জনগোষ্ঠীর খাবার, সেগুলো রান্না করার তরিকা থেকে ঐ জনগোষ্ঠী সম্পর্কে অনেক খুঁটিনাটি জানা যায়।
২. রত্না ক্যাফে আর মাদুরাই সারদা হোটেল বাস্তবে আছে। প্রথমটা পুরোই দ্রাবিড় রেস্তোরাঁ, দ্বিতীয়টা অনেক বেশি পূর্বের ঘরাণার।
৩. খুঁটিনাটি বর্ণনা দেয়াটা কিছুটা আইয়েন্দে প্রভাবিত। তবে আমি মনে করি এতে পাঠকের পক্ষে গল্পের ভেতর প্রবেশ সহজতর হয়। তাছাড়া গল্পের চরিত্রগুলোর আশেপাশের বস্তুনিচয়ের অন্তর্সম্পর্ক থাকে। সেটা দেখানোটাও জরুরী। আমার খুঁটিয়ে দেখার চোখ আছে এমন ভাব দেখানোর কোন অভিসন্ধি বা স্পর্ধা কোনটাই নেই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
উপরে আমার করা মন্তব্যের শেষ বাক্যটি ঠিক হয়নি।
এ’কাজটা কেন করেছি সেটা আগেই বলেছি। হ্যাঁ, পাঠক এতে নতুন পরিবেশে শুধু মানিয়েই নেননা, একসময় নিজের তার অংশ হয়ে যান। তবে কোন তীক্ষ্মভাব আনার উদ্দেশ্য ছিলনা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আরে না পান্ডবদা, আমি নিজেও ঐটা মিন করি নাই
খুঁটিনাটি বর্ণনা দ্যান, পড়তে পড়তে মনের মধ্যে শিকড় গজিয়ে যায়, সহজে আত্মস্থ হই। আপনার প্রচেষ্টা চালু থাকুক
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আসলেই গদ্যটা নিপাট।
স্থান- কে খুব ভালভাবে তুলে ধরতে পারেন আপনি। এদিক থেকে এই লেখাটা পড়ার সময় দেবেশ রায়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। উইনো খুব ভাল স্থান এবং তার পরিপার্শ্বকে নিখুতভাবে আকতে পারতেন।
পড়াটার সময় একটা বিষয় খেয়াল করলাম-
কাইহনীটা এগুচ্ছে অস্বাভাবিক স্বাভাবিকভাবে... অনেকটা প্রকৃতির মত। নিরাভরন। আমরা গল্প বা সাহিত্যে যে মূহূর্তের নাটকীয়তা, বিশেষণের প্রতিমূর্তি আশা করতে থাকি- সেটা যেন নেই। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আসলে ওটা আছে। কিন্তু ওটা লুকিয়ে থাকে। চলতে চলতে এর দেখা মেলে।
আর চমকটা আসে সত্যিকারের ঢং- এ।
জীবনে যেমনটা আসে...
মনোযোগ দিয়ে পড়া আর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ। শুধু দেবেশ রায় নন, বাংলা ভাষায় আরো অনেকেই স্থানের বা কালের নিখুঁত চিত্র এঁকে গেছেন। আর গল্প লেখার সময় আমি তাকে তার স্বাভাবিক গতিতে এগুতে দেই। জোর করে কোন ঘটনা ঘটাই না বা পরিণতি টানি না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মুরুগাপ্পা নামটা খটমটে তবে গল্পের বর্ণনা মারাত্তক লেগেছে পান্ডবদা, মনে হোল দেখতে পাচ্ছি যেন। এটার পরে কি আর ও পর্ব আছে, শেষ লাইন টা পড়ে এমনি মনে হোল যেন ।
গল্প হিসাবে এটা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে এই গল্পের কিছু চরিত্র আগের গল্প প্রচেষ্টা - ৪, ৬, ১০ ও ১২তে পাওয়া যাবে। সামনের কোন গল্প প্রচেষ্টাতেও তাদের দেখা পাওয়া যাবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
গতরাতেই পড়েছি, পড়ার সময়ই মনে হচ্ছিলো এটা উপন্যাসের দিকে যাবে...
চলুক
ভালো লাগছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ। আপাতত এগুলো বিচ্ছিন্ন গল্প প্রচেষ্টা হিসাবেই আসবে। কাহিনী মোটামুটি বড় ক্যানভাসে দাঁড়ালে উপন্যাস প্রচেষ্টার কথা ভাববো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সচলে নীড়পাতায় আজকাল একটা লেখা বেশিক্ষণ থাকে না। একারণে মাঝে মাঝে কিছু ভালো লেখা মিস করে ফেলি...
মুরুগাপ্পা স্ট্রীটের কথা আগেও আপনার কোন একটা গল্পে পড়েছিলাম। এছাড়াও কোথাও যেন পড়েছি, কিন্তু ওটা এখন মনে আসছে না কিছুতেই।
এই গল্পটায় খুঁটিনাটি (নামধাম- খাবার দোকান- খাবারের ধরণ) খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু মূল গল্প কি নীতুরটা ?? মানে আমি বলতে চাচ্ছি, গল্পের ডিটেইলের আড়ালে মূল গল্পটা কি একটু সরে গেলো না দৃর্ষ্টি থেকে ?? ... অবশ্য, হয়তো ওইটাই আপনি চেয়েছেন
পান্ডবদা' গল্পটা আপনি পোষ্ট করার পর থেকে খুলে রেখেছি যে আরাম করে উইকেন্ডে পড়ব, সেটা মনে হচ্ছে হবে না, তাই এখুনি পড়ে ফেললাম। চমৎকার এগিয়েছে, শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও আরো পড়তে ইচ্ছা হচ্ছিল। আমি ভেবেছি যে আরো চলবে, কিন্তু উপরে আপনার একটা মন্তব্যে দেখলাম এটা বিচ্ছিন্ন একটা গল্প। তাই তাড়াতাড়ি আরো আসুক সেই দাবী জানিয়ে গেলাম। একটা জিনিশ চোখে পড়ল, আপনি শুরুতে সালাম ম্যানশন লিখলেও ৬নম্বর প্যারার প্রথমে লিখেছেন "প্রথম রাতে খাবারের সন্ধানে আলম ম্যানশন থেকে বের হয়ে...", এটা বোধকরি টাইপো।
ভুলটা ধরিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ কল্যান। পরে ঠিক করে নেবো। পরের লেখাটা কবে আসবে নিশ্চিত নই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন