জোনাথান ফ্র্যানজেন আমার খুব প্রিয় লেখক। বার্নস এ্যান্ড নোবেলস এর মিট দ্য রাইটার্স সিরিজে ফ্র্যানজেনের একটা ইন্টারভিউ দেখছিলাম। দেখলেই বোঝা যায় ফ্র্যানজেন কি পরিমান - 'সৎ' একজন লোক। বুকের ভিতর থেকে কথাগুলো বের হয়ে আসে। না, ফ্র্যানজেন সব কথা খুব দরদ দিয়ে বলেন সেটা না। কিন্তু সততার সাথে বলেন। এবসোলিউট এ্যান্ড ব্রুটাল ট্রুথ যাকে বলে, হয়তো।
এ কারণে ফ্র্যানজেনের পরিবার একটু চিন্তায় থাকে, ফ্র্যানজেন কখন কি বলে বসে? প্রচলিত সমাজে কিছু মিথ কাজ করে। প্রচলিত সমাজ ধরে নেয় আমাদের পরিবারের সাথে আমাদের সম্পর্ক গুডি-গুডি-ফাইন-ফাইন বা ওরকম কিছু থাকবে। সাধারণত মনে হয় ওরকম থাকে না। আমার নাই। মাইকেল ক্রাইটনের লেখায় দেখলাম ছিল না, তা-ও বোঝার চেষ্টা করেননি তা না। ফ্র্যানজেনও ওরকম একটি কাজই করেছেন।
ফ্র্যানজেনের ইন্টারভিউটা দেখার পর ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেখলাম - সেখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ডিলিনিয়েশন বেশ পরিষ্কার। যারা লাইক মেরেছেন তাদের মধ্যেও। তখন হাজারো বারের মত আবার ঝলক মেরে উঠলো নিজের পরিবারের রাজনৈতিক এ্যালাইনমেন্ট।
ভদ্র সমাজে আলোচনায় আমরা রাজনীতি, ধর্ম ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা সহজে তুলি না। তুললেও গ্লস ওভার করে যাওয়ার প্রবনতা তীব্র। আমি আরো কিছুদূর যাই, বিশেষত ধর্মে, কিন্তু এগুলি আসলে শেষ পর্যন্ত মানুষের এতটাই নিজস্ব ব্যাপার যে প্রিমাইসে না মিললে আগানো ব্যাপক পন্ডশ্রম। তাই ছেড়েই দেই।
প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সচলায়তনে এ নিয়ে লিখতেও আমার ভয় লাগে। প্রথমত, আমার পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে সচলায়তন একটা চরমভাবে বাম-লিনিং প্ল্যাটফর্ম। খেয়াল করেন, *আমার পরিবারের*, বিশেষত আমার ইমিডিয়েট পরিবারের, বিশেষত আমার বাবার দৃষ্টিভঙ্গী থেকে। ছোটবেলায় আমাকে মানুষ করেছেন আমার দাদী, মা আর ফুপু - কেউই ওরকম স্ট্রং ফিমেল ফিগার নন। আব্বু অনেক ডগম্যাটিক একজন মেল ফিগার, এবং আমার বেড়ে ওঠায় তার ভূমিকা শক্ত। ২৮ বছর ধরে আমার মাথার উপরে আমার বাপ। লাভ ইট অর হেট ইট (এবং আমি দুইটাই করি, পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের বাইরেও মনে হয় বলাটা ঠিক হবে লাভটাই বেশি করি, কিন্তু সেটা বায়াসড স্টেটমেন্ট এবং আপনারা ডিসকাউন্ট করে নিতে পারেন) - আমার জীবনে তার প্রভাব তীব্র।
তো যা বলছিলাম, সচলায়তনের শ্লোগানে যে বলে 'চিত্ত যেথা ভয়শূন্য মুক্ত যেথা শির' - একজন সচল হিসেবে আমি মনে করি সেটা অনেকাংশে সত্য হলেও পূর্নাংশে সত্য না। ট্রুথ কোয়োটিয়েন্ট-টা ভ্যারি করে আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড বিবেচনায় - এগনস্টিক আওয়ামি পরিবার থেকে আসলে জিনিসটা খুব সম্ভবত অনেক বেশি সত্য। আমার মত অত্যন্ত ধার্মিক কট্টর বিএনপি পরিবার থেকে আসলে অতটা শক্তভাবে সত্য না। যাই হোক, তাই বলে যে সচলায়তনকে যে আমি ফাউ প্ল্যাটফর্ম মনে করি তা না। মনে করলে ২৭ পেজ জুড়ে ৩০০-এর উপরে (খুব সম্ভবত) লেখা লিখতাম না।
কিন্তু এই লেখায় কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবেই। জোনাথান ফ্র্যানজেনের পরিবার খুব চিন্তায় থাকে জোনাথান ফ্র্যানজেন নন-ফিকশন লিখলে, যা বলছিলাম। ফ্র্যানজেনের 'দ্য ডিসকমফোর্ট জোন'-এ নিজের বাবাকে নিয়ে বিশাল একটা লেখা আছে। সেখানে অনেক অস্বস্তিকর সত্য আছে। দ্য কারেকশন্সের মূল চরিত্রও ফ্র্যানজেনের বাবার আদলেই - কিন্তু সেটাকে ফিকশন বলে চালিয়ে দেয়া যায়।
বাংলাদেশ রাজনৈতিক সমাজ। আমি জোনাথান ফ্র্যানজেন নই। আমি সামান্য ব্লগার, কর্পোরেট চাকরি করি। আমার বাবাও মোটামুটি সাধারণ মানুষ। আমরা সাধারন পরিবার। বড় কথা, এই লেখার চরিত্ররা জীবিত। সুতরাং আমার মনে যা আছে এবসোলিউট ট্রুথ (এখানে মজার ব্যাপার হল সচেতনভাবে এবসোলিউট ট্রুথটা মনে হয় কেমন যেন পলায়নপর মনে হয়; ওটা আনকনশাসভাবেই, কিচেন ডিসকাশনেই সঠিকভাবে বের হয়!) এখানে বলবো না। কারণ সহজ, এত গাটস নাই। তাছাড়া সচলায়তন সঠিক প্ল্যাটফর্ম বলে মনে হয় না। দুঃখের কিছু নাই, চেনা প্ল্যাটফর্মগুলির মধ্যে সচলায়তনেই তাও এদ্দুর বলতেসি, বাকিগুলিতে এদ্দুরও বলতাম না। প্রপার প্ল্যাটফর্ম মনে হয় এরকমই, আমার অফিসের কিচেন, বন্ধুদের সাথে মন্টানা ড্রাইভে - এরকম জায়গায়। বাই দ্য ওয়ে, এখানে শুরু করার আগে বলে রাখা ভাল, 'ফর দ্য রেকর্ড' - যে এর আগে আমার বাবাকে নিয়ে 'পজিটিভ' লেখাও সচলে দিসি। ওহ, আরেকটা ব্যাপার আছে, আমার প্রচুর আত্মীয় ইদানিং সচল পড়ে (আমার খালাতো বোন সেদিন 'দ্য গার্ল হু সেডিউসড এভরিবডি' সিরিজটা নিয়ে অনুরোধ করছিল)। তাছাড়া, আমার বড়চাচার ছেলে, আপন চাচাতো ভাই, এখানে লেখেও (নাদির জুনাইদ)। সুতরাং সীমাবদ্ধতা, বা আমার সাহসের অভাব - আছে।
একটু বেশি ভনিতা করে ফেললাম বোধহয়। সরি। হালকা টেনশন লাগতেসে।
*
'আওয়ামি চরিত্র' শব্দটা একটা রিপ্রেজেন্টেটিভ ফ্রেজ বলতে পারেন। আব্বার কাছে জিনিসটা ছিল মূলত এক রকমের গালি।
যদি আমি ফেজটাকে দুই ভাবে ভাগ করি, পঞ্চাশের আগে আব্বা ছিল একরকম। বয়স পঞ্চাশ আরকি। ডগমা অনেক বেশি ছিল। পঞ্চাশের পরে ডগমা কমে গেসে। সাথে আওয়ামি চরিত্র বলাও। যদিও আব্বাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলে আব্বা ইগোবশত এখনও বলবে হয়তো যে ও স্ট্যান্ডবাই করে এটায়। কিন্তু এখন দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টাতে বাধ্যই। আমাদের ইমিডিয়েট পরিবারেই আওয়ামি লীগের এমপি আমার খালু, আব্বুকে নিয়মিত তার সাথে খেতে হয়। তাছাড়া রাজনৈতিক পটভূমি, জেনারেশনাল আইডিওলজির ব্যাপার আছে।
আওয়ামি চরিত্র নিয়ে বলছিলাম। শঠতা, নামাজ না পড়া, মিথ্যা না বলা, জোরে কথা বলে - সবকিছুকেই আব্বু মোটামুটি 'আওয়ামি চরিত্র'-এর মধ্যে ফেলতো। এটা একটু কনফিউজিং ছিল মাঝে মধ্যে। আওয়ামি লীগ সমর্থন করে এরকম ধার্মিক লোকও আমরা দেখতাম। আবদুস সামাদ আজাদের দাড়ি ছিল। আমরাও বুঝতাম যে জিনিসটা একটু কনফিউজিং। আবদুস সামাদ আজাদ আবার ৯০ এর উপরে বয়সে বিয়ে করলেন? আব্বার বলা লাগে নাই, 'আওয়ামি চরিত্র'।
বাংলাদেশে বিএনপি-আওয়ামি লীগ পোলারাইজেশন নানা কারণেই হয়। রাজনৈতিক, আদর্শগত, চাকুরিগত। লোক কাকে ভাল লাগে না। চাকরিচ্যুতি। সামাজিকও আছে। আমার আব্বার সমবয়সী অনেক ভাইয়েরাই অত্যন্ত কড়া বিএনপিপন্থী। এটা ডিকনস্ট্রাক্ট করা সম্ভব। আব্বার সাথে কথা বলে আমি অনেকদূর করসিও। কিন্তু সেটা এখানে দিবো না। অস্বস্তিকর লাগতেসে। আমার ধারনা আব্বার অধিকার ব্রিচ করা হবে। এই লেখা যে লেখতেসি সেটাও আব্বাকে বলি নাই। আমি আমার বাপ না। আমি নিজের কাজে লেখা লিখতেসি। সচলায়তনের যে আবহ, পরোক্ষভাবে আব্বাকে এমনিই ফ্ল্যাক নিতে হবে। আর দরকার নাই। তবে কিছু প্রশ্ন আন্দাজ করতে পারতেসি। আব্বা মুক্তিযুদ্ধ করসে, হ্যাঁ।
এখানে আরেকবার মনে করায় দেয়া দরকার - এই লেখার উদ্দেশ্য অনেকাংশেই নিজের চারপাশের সংস্কৃতি বুঝা। রাজনীতি সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুপারচার্জড থাকায় রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে আমরা চাই না। মানুষ এবং ব্লগার হিসেবে আমি 'লো ল্যাটেন্ট ইনহিবিশনে' ভুগি। এ ধরণের ওপেননেসের (আমার ধারণা আমি গড়ের থেকে বেশি ওপেন আর কি, ভুলও হতে পারি!) সুবিধা আছে, অসুবিধাও আছে। কিন্তু তাই বলে কি এগুলি কেউ আলোচনা করবে না?
তো সংস্কৃতি বোঝার কথাই যখন আসতেসে, তখন আমি আমার বাবাকে আর বাদ দিতে পারি না, কারণ সে পরিবারের কর্তা, এবং আব্বা আসলেই জাঁদরেল, টিপিকাল মেল রিলিজিয়াস এনফোর্সার ফিগার ছিলেন।
*
আমি বেশ কিছুবার বোঝার চেষ্টা করসি আমার এই ফ্যামিলি ইউনিটের আওয়ামি বিরোধিতার কারণ কি (আমার ব্যক্তিগত মত অনেক গ্রে, কিন্তু সেটা পরে কোথাও আসবে)। আমার ফ্যামিলি ইউনিট যখন বলি: আমি, আম্মু, আব্বু, বোন, ফুপু, কাজের মেয়ে (একসময় দাদী এবং আরো দুই ফুপু)।
এখানে নিয়ন্তা একজনই বড়সড় - আব্বু। আব্বুকে চ্যালেঞ্জ করার তেমন কেউ ছিল না আমি বেড়ে না ওঠা পর্যন্ত (লেখায় বায়াসনেস এসে যাচ্ছে হয়তো - আমি চ্যালেঞ্জ বলতে বোঝাচ্ছি না 'ইনহেরেন্টলি' আওয়ামি বিরোধিতা ভুল; মাইক্রো-ঐতিহাসিক এবং সচল কনটেক্সটে সেটা ভুল হতে পারে, কিন্তু *এখানে* চ্যালেঞ্জ বলতে বোঝানো হচ্ছে - ওয়েল, প্রতিআলোচনা - প্রশ্ন করা)।
যাহোক, আমি আব্বার সঙ্গে আলোচনা করে একেক সময় একেক সিগনাল পাইসি। আবারো বলি, আব্বুর পলিটিকাল ডগমার ইনটেনসিটি ক্রমহ্রাসমান।
১। "আওয়ামি লীগ বেসিকালি ইসলামবিরোধী একটা পার্টি"। এই লাইনটা লিখতে গিয়ে একটু থমকাইলাম। এখন যদি ছাত্রলীগের কোন ক্যাডার আমাকে হকিস্টিক দিয়ে বাড়ি মারে, থামাবে কে?
যাহোক, আওয়ামি লীগকে অনেক রক্ষণশীল মুসলিম ইসলামবিরোধী মনে করে। এ বিষয়ে বহু আলোচনা করা সম্ভব - আমি এখানে এক লাইন লিখলেও কোয়ালিফায়ারের ধাক্কায় সেটা এক প্যারা হয়ে যাবে। এতটুকু বলতে পারি, আমার পরিমন্ডলে বহুলোককে দেখসি যারা আওয়ামি লীগকে ইসলামবিরোধী মনে করায় অন্য বিকল্প খুঁজে। এ নিয়ে আমার নিজস্ব কিছু চিন্তাভাবনা আছে, কিন্তু হয় পরে, নাহলে লিখতে নার্ভাস লাগে।
২। "ভারতের কাছে দেশ বেইচা দিসে।" - এটা কমন রিফ্রেইন। আওয়ামি লীগ ভারতঘেঁষা এটা জানা কথা।
৩। "তুমি জানো না কি ঘটসে। আমি এক্স কে বা এক্সের ছেলেকে চিনি/ চিনতাম!!" - আব্বু ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামি লীগের সাথে হাইলি আইডেন্টিফায়েবল কিছু লোকের ঘনিষ্ঠ ছিল (বলে দাবী করে), এবং তাদের কীর্তিকলাপ তার কাছে সম্পূর্ণ আনএক্সেপ্টেবল লেগেছে। এখানে কিছু করোলারি প্রশ্ন থাকে, কিন্তু সেটাও আরেক আলোচনা।
৪। প্রশাসনিক ফেইলিউর। "এই দুর্ভিক্ষে আমি নিজের হাতে খাওয়াইসি, আমার সামনে লোকটা মারা গেল।" এটাকে স্বাধীনভাবে একটা পয়েন্ট বলা ঠিক কি না নিশ্চিত না। কিন্তু আওয়ামি লীগের প্রশাসনিক ফেইলিউর একটা ব্যাপার।
রাজনৈতিক বায়াসনেসের কার্ভটা আমার মনে হয় 'হকিস্টিক কার্ভ'। এবং যথারীতি খুব সুক্ষ্ম কারণেও এটা পাল্টায়। কারণগুলি খুব একটা প্রেডিক্টেবল বলে আমি মনে করি না।
*
পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। পরিবারের সাথে আমরা বিশাল সময় কাটাই। পরিবারকে দায়িত্ব দেয়া হয় বটে সবকিছু নিউট্রালভাবে শেখাতে, শিশুর জীবনদর্শন ডেভেলপ করতে, কিন্তু কতগুলি পরিবার সেটা সফলভাবে করে কে জানে। পরিমন্ডল পরিবারকে প্রভাবিত করে - পরিবার নিজে যেটা সঠিক মনে করে সেটা করে। কিছু পরিবার প্রাধাণ্য দেয় ধর্মকে, কিছু শিক্ষাকে, কিছু মুক্ত উন্নয়নকে, কিছু অধর্মকে, কিছু ডগমাকে, কিছু মোল্ডেবিলিটিকে।
পরিবারের বাইরে থাকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি। সেখানে আরেকরকম এডজাস্টমেন্ট মেকানিজম কাজ করে। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতেও বায়াস নেই তা না। বায়াস খারাপ না। একরকম এডজাস্টমেন্ট ওখানেও করতে হয়। এখানে আমার পরিবারের কিছুটা কন্ট্রাডিকটরি ব্যবহার দেখি। আমি লেখাপড়া করেছি সেন্ট জোসেফ আর নটরডেমে, দুটাই মিশনারি স্কুল। সংখ্যালঘু। হালকা আওয়ামি-ঘেঁষা। তাহলে কি?! আনকনশাসলি পরিবার চাইসে আমি নিউট্রালিটি শিখি? স্কুল-কলেজের বায়াস বাসায় কমপেনসেট করার চেষ্টা করা হইসে? কারণ স্কুল কলেজও তো একরকম সাবকনশাস সোশ্যাল স্ট্রাটা সিলেকশন প্রসেস।
আইবিএ কোন আইডিওলজিকাল জায়গা ছিল না। এটা বিজনেস স্কুল। এখানে সেল্ফ-সিলেকশন প্রসেসটা এমবিশনের। সে তুলনায় সেন্ট জোসেফ-নটরডেম আরেকটু বেশি আইডিওলজিকাল ছিল, যদিও এগুলির মূল খ্যাতি ভাল স্কুল হিসাবে। প্রতিষ্ঠান - মানে কর্পোরেট, খুব সম্ভবত এদিক দিয়ে যতটা সম্ভব ততটা নিউট্রাল। তবে বায়াস থাকবেই, তবে সেটা আবার পারসেপশনেরও ব্যাপার। মানে আপনি বায়াস খুঁজতে চাইলে হয়তো খুঁজে পাবেন।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বায়াস থাকতে পারে। এ কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে উইকিলিকসের কাহিনী পড়ে মজা পাচ্ছি। রাস্তার কট্টর আওয়ামি বা কট্টর বিএনপি-পন্থী বেআক্কেলে বায়াসড। ওনাদের নেতারা খুব সম্ভবত আরো 'ক্লোজ বাই'। কারণ সেখানে আরেকরকমের বৃহত্তর, আত্ম-স্বার্থ কাজ করে। অবশ্য তাহলে রাস্তার কট্টর আওয়ামি বা বিএনপি-পন্থীরও আদর্শ ঠিকই আছে। তাদের স্টেক কম। আমার ধারণা একটা বয়সের পর আমার বাবাও আরো - রাশনাল কস্ট-বেনিফিট এনালাইসিস করসে। হুঁম, নাহ, স্টেটমেন্টটা ভুল - বরং এটা এভাবে দেয়া উচিৎ - প্রতিনিয়তই সে কস্ট-বেনেফিট এ্যানালাইসিস করেছে। আমাদের কস্ট-বেনিফিট এ্যানালাইসিস নিয়ে সমস্যা একটাই - মনের দুনিয়ায় করবো না 'বাস্তব' দুনিয়ায় (আমি বলছি না আমার বাবার কস্ট-বেনিফিট এ্যানালাইসিস ভুল)।
সচলায়তনের আসছি আমি মূলত ইশতিয়াকের মাধ্যমে। ইশতিয়াক আমাদের ক্লাসে একটা বিশেষ জায়গা দখল করতো। সেই জায়গাটাকে অনেকে পছন্দ করতো, কেউ কেউ করতো না। ইশতিয়াকের এ্যালাইনমেন্ট নিয়ে আমি এখানে কোন বক্তব্য দিবো না, কারণ লেখাটা প্রকাশের আগে আমি ওকে কিছু বলি নাই। কিন্তু সচলায়তনে ঢুকে আমি প্রথমে ধাক্কা খাইসি। র রিঅ্যাকশন বললে - এরা এত 'অধার্মিক'? এত আওয়ামি? এত বাম? আমার কন্ডিশনিং রক্ষণশীল বিএনপি ঘরানার। আমি তার মধ্যে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে একটা জায়গায় পৌঁছাইসি। সেই প্রশ্নগুলো ধর্ম এবং কিছু ক্ষেত্রে কতক রাজনৈতিক-সামাজিক। কিন্তু সেদিন আমার অফিসের এক নীরব সচলপাঠক বলতেসিলো আমাকে গাড়িতে (প্যারাফ্রেজ)- "হ্যাঁ সচলায়তন আসলে আওয়ামিঘরানার জন্য হজম করতে সুবিধা।" আমার প্রথম দিকে এই সাইকিটা বুঝতেই সময় লাগলো। এই সাইকিটার অংশবিশেষের সাথে আমি পরিচিত (আমি এখানে স্টেরিওটাইপ করছি তো বটেই, কিন্তু আমার ব্যক্তিগত স্টেরিওটাইপ)। "ও তুমি সচলায়তনে লেখো' সবসময় কমপ্লিমেন্ট না, যেটা নানা জায়গায়ই শুনছি একসময় (উল্টাও শুনছি - মানে উল্টা টোনে)। সাইকিটার যে অংশবিশেষের সাথে আমি পরিচিত সেটা হল লিবারেল থট, ওপেননেস, বিজ্ঞানে আগ্রহ। সাইকিটার কিছু ডগমা আমার কাছে এলিয়েন। এটা মেনে নেওয়া তখনই সহজ যখন সচলায়তনের থেকে ইনফিনিট আশা না থাকে। সচলায়তন পারফেক্ট না। আমার সাথে ব্লগিং শুরু করেছিলেন রাজর্ষিদা, মামুন ভাই। এরা চলে গেছেন। আমি টিকে আছি। ঝাড়ি-ঝুড়ি ইত্যাদি কম খাই নাই। ঝগড়া-ঝাটি করসি। সচলায়তন বুঝতে সময় লাগসে। বুঝছি যে পুরা সচল জুড়ে আমি অপারেট করতে পারবো না। এখানে তো কেবল রাজনৈতিক-ধর্মীয় এসপেক্টের অংশবিশেষ আলোচনা করলাম। আরো অনেক এসপেক্ট আছে। ইন্টারপারসোনাল। সামাজিক। গ্রুপ ডাইনামিক্স। আমি নিজের একটা নিশ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করসি। আমার বড় একটা ধারণা সচলায়তন একদল সমমনা (অন্তত কিছু গুরুত্বপূর্ণ এসপেক্টে) মানুষের তৈরি একটি ফোরাম। এমনকি তাদের নিজেদের মধ্যেও মতের অমিল থাকতে পারে। আমি সচলায়তনের নেগেটিভ দিকগুলির দিকে তাকাতে পারি, কিংবা পজিটিভ। বলাই বাহুল্য আমার কিছু 'প্রবৃত্তির' এবং 'লিনিং'-এর সাথে সচলায়তনের ওভারল্যাপ আছে, সেটা হয়তো আমার জন্য সচলায়তনের পজিটিভগুলোর দিকে তাকানো সহজ করে দিসে।
আজকে এটুকুই থাকুক। দেখেন পাঠক, লেখাটা লেখার সময় আমি নানারকম অনুভূতির মধ্য দিয়ে গেছি, কিন্তু এতটুকু বলতে পারি জেনেশুনে কাউকে অপমান করা বা রাগানো লেখার উদ্দেশ্য ছিল না। উদ্দেশ্য যদি থাকে, সেটা কিরকম, নিটশা বলুক:
"Poets are shameless with their experiences: they exploit them." - Friedrich Nietzsche।
আমি কবি না। ব্লগার। আর আমি নিজের অভিজ্ঞতা *এবং* আবেগকে এক্সপ্লয়েটই করলাম কিছুটা। আমি জানি লেখাটা লিখে আমি অস্থির থাকবো। সব লেখার 'ইভেন্ট গ্র্যাভিটি' সমান না। [ডেভিড ফস্টার ওয়ালেসের আত্মহত্যার সাথে সাথে তার উপন্যাসগুলির, মায় তার পুরো জীবনের অর্থবহতা অন্যরকম হয়ে যায়, লিখেছেন ইন্টারভিউয়ার ডেভিড লিপস্কি (যদিও ওয়ালেসের আত্মহত্যা মেডিকাল কারণে)। সেখান থেকে শব্দটা নিলাম।] লেখাটা বহুদিনের সাব/আনকনশাস ইচ্ছা থেকে লেখা। গত ঈদে তিন পৃষ্ঠার একটা লিখেছিলামও (সেখানে আমার চাচাদের কথাও ছিল), যেটা আংশিক ফেসবুকেই পোস্টিয়েছি, লেখা আর শেষও করিনি, খুব - অস্বস্তি এবং কষ্টকর এরকম লেখা লেখা।
আচ্ছা, অনেক হল। এই একটু পেলেন আমার ব্যাকগ্রাউন্ড আর কি। 'আমার ব্যাকগ্রাউন্ড' বলে ইগো ব্লাস্ট করছি না, এটা হয়তো অনেকেরই। কিন্তু আমি কিভাবে দুনিয়া দেখা শুরু করেছি এবং কিভাবে তার বিবর্তন তা দেখলেন হয়তো একটু। আরো লিখতে চাচ্ছিলাম - 'কট্টর আওয়ামি' পরিবার নিয়ে, আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলো নিয়ে, আগের প্রজন্ম আর আমাদের রাজনৈতিক-সামাজিক বিবর্তন নিয়ে, ধর্মের ভূমিকা নিয়ে, ফেসবুকের সেই স্ট্যাটাসটা নিয়ে, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, পাকিস্তান এবং পারলে বাকি দুনিয়াকে টান দিতে, কিন্তু লেখা ইতিমধ্যেই অনেক বড় হয়ে গেছে, টাটা।
যাওয়ার আগে - শ্রদ্ধেয় সরকার, পুলিশ এবং তাদের অঙ্গসংগঠন - এটি বিশ্লেষণের একটি টুলবিশেষ। আর কিছুই না। আমাকে কিছু করবেন না আমি ধরেই নিচ্ছি, কিন্তু কিছু যদি করতে চান, সেটা নিতান্তই সময়ের অপচয়। আমার এবং আমার পরিবারের ক্ষেত্রেও, অন্তত এখন।
মন্তব্য
ফ্র্যানজেনের ভিডিওটা:
আপনার লেখা দেখে আবার ফিরলাম। পড়লাম। মিশ্র অনুভূতি হল। একটু সময়ের অভাব রয়েছে নতুবা অনেক কিছু(নিজস্ব) বলতে ইচ্ছে করছিল।
সচলকে(সামগ্রিকার্থে) আওয়ামীঘেষা মনে হয় নাই। তবে এর কিছু লেখকের কিছু বাক্যে/মন্তব্যে কখনও কখনও তা মনে হয়েছে(ভুলও হতে পারে), সেটা স্বাভাবিকই মনে হয়। আর এদের জন্য সচলকে অওয়ামীঘেষা বলাটা ঠিক হবে না। সচলে আমি সব দলেরই কৃত অন্যায়ের প্রতিবাদ খুঁজে পেয়েছি। আমার কাছে নিরপেক্ষই লাগে।
একটা বিষয়ে সচল ইস্ট্রিক্ট, তা হল ধর্মে। তবে আমার মনে হয় এর প্রয়োজন আছে। সমাজ থেকে সংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতা দূরীকরণে এর প্রয়োজন আছে।
বায়াসনেসের বিষয়টা সত্য। বিয়ের পর ধীরে ধীরে আমার মা বাবার রাজনৈতিক মতাদর্শে চালিত হতে শুরু করেন, এতে তাকে ১৮০ ডিগ্রি টার্ন নিতে হয়। একটা সময় পর্যন্ত(প্রাথমিক কৈশোরে) আমিও বায়াস্ড ছিলাম। তবে ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে উঠি। নিরপেক্ষ থাকতে পারি বলেই বিশ্বাস। আমার বাবা কট্টর-অন্ধভাবে আওয়ামী সমর্থক, উনার চোখে আওয়ামী লীগ আজ পর্যন্ত কোন ভুল করে নাই! খুবই দুঃখজনক দৃষ্টিভঙ্গি।
-----------------------------------------
শেষ কথা, কিছু সত্য উহ্য রাখা শান্তিপ্রদ।
_____________________
Give Her Freedom!
এখানে সত্য হল স্মৃতিভিত্তিক, ডিসটর্টেড সত্য - 'আবহিক' সত্য - 'Affective সত্য' বলতে পারেন - অনেকটা ক্রিস্টোফার নোলানের মেমেন্টোর চরিত্রটার মত। সে বেচারা সত্যের নৈর্ব্যক্তিকতা বজায় রাখতে অনেক কষ্ট করেছে - কিন্তু মূল কারণ স্মৃতিশক্তির বিলুপ্তি।
আমি দেখানোর চেষ্টা করেছি মানসস্বত্ত্বা (মাইন্ডসেট) ডাইভারজেন্সটা। আমার মাইন্ডসেট আমার নিজেরই, কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের ব্যাকগ্রাউন্ড আলাদা। সেখান থেকে আমরা একেকটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাই। ব্যাকগ্রাউন্ড মাইন্ডসেটকে সেইভাবে প্রভাবিত করে। একই সিদ্ধান্তের জন্য দুইজন লোককে দুই রকমের ফাইট দিতে হয়। **যদি এই পোস্টে কোন সত্যের কথা থাকে, সেটা হল এই ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে। বা ব্যাকগ্রাউন্ড-এডপ্টেড মাইন্ডেসেটের ডাইভার্জেন্সটা নিয়ে।** যদিও সেটা আমি শেষ পর্যন্ত আলাদা করে দেখাতে পারিনি। অগোছালো হয়ে গেছে লেখা, আমি প্যানিক করেছি, হাঁপিয়ে গেছি (স্ট্রেসে বেশি)।
তবে আমি মনে করি আমাদের এই আলোচনাগুলো আরো করা উচিৎ। উহ্য থাকা উচিৎ না। মিশেল ইকুইম ডি মন্টেইনের এসাইস পড়ে এটা আমার বেশ কয়েকবার মনে হয়েছে, এবং মন্টেইন এখানে বড় অনুপ্রেরণাও। ব্যক্তিগতভাবে যদিও বুঝি এটা শেষতক ব্যক্তিরই ইনক্লাইনেশন; সবরকম ব্যক্তি এই ঝুঁকি নিবে না - এবং যেভাবে তাকাবেন সেটার উপর নির্ভর করে এটা একরকম গাধামি - রিস্কটেকিং তো বটেই। আমার নিজের স্বত্তার অংশবিশেষ নিজেকে ব্যাখ্যা করতে পেরে যারপরনাই আনন্দিত। অংশবিশেষ পালানোর পথ খুঁজছে, নার্ভাস।
ওয়াল্ট হুইটম্যানের কিছু লাইন মনে পড়ছে
"Do I contradict myself?
Very well then I
contradict myself,
(I am large, I contain
multitudes.)"
ভাই আপনি বাংলা ফন্টে ইংরেজী লিখে এত সময় নষ্ট না করলেও পারতেন। ব্লগ হলেও সচলায়তন একটা গনমানুষের জায়গা, আপনার লেখাটা বাংলা ভাষাভাষীরা যেখানে পড়বেন, সেখানে প্রতি লাইনেই দুই তিনটি ইংরেজী শব্দ ঢুকিয়ে তাদেরকে অভিধান নিয়ে ছুটতে বলছেন কেন? বাংলাকে ভালবাসুন জনাব, দয়া করে বাংলায় লিখুন, যেখানেই চাকরী করুন না কেন!
প্রথমত, এটা আমার লেখার দূর্বলতা, সে কারণে মাফ আগেও চেয়েছি, আবারও চাইলাম। সরি। আমি দ্রুত লিখতে গেলে আমার মাথায় অনেক বাংলা প্রতিশব্দ আসে না। ধীরে লিখতে গেলে আসে, সেই ক্ষেত্রে লেখায় হয় না। আমি তারচেয়ে দ্রুত জগাখিচুড়ি লিখি। অনেকে লিখতো না, আমি লিখি - কারণ লেখাটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ন। ব্যান খেয়ে গেলে লিখতাম না, কিন্তু এ্যাপারেন্টলি কেউ কেউ অন্তত পড়ে। তাই লিখি।
ইন কেস আপনি খেয়াল করেন নাই - উপরে আমি সরি বলছি। এবার আমার একটা প্রতিউত্তর দেই।
কিন্তু আপনি সেখান থেকে এত জটিল উপসংহার টানছেন কেন বুঝলাম না। আমার চাকরির সাথে এখানে লেখার কি সম্পর্ক? এটা তো যদি আর কারো হয় ব্যক্তি হিসেবে আমার সমস্যা। আমার সাথে চাকরি করেন এমন লোক সচলায়তনে অত্যন্ত শুদ্ধ বাংলায় লেখা দিয়েছেন। কম দিয়েছেন, ২-৩ খানা। তারপর হাল ছেড়ে দিয়েছেন।
আমি মাঝে মাঝে এটাকে সমস্যা হিসেবে দেখতে চাই না, সেটাও আমার সমস্যা। খোঁচান কেন? আপনার কি মনে হয় আপনার খোঁচা খেয়ে আমি বাংলা ডিকশনারি খুলে বসে যাবো? আপনি ইতোমধ্যে আমার ইগো সম্পর্কে একটা বায়াসড ধারণা নিয়েই রেখেছেন। তাহলে মডারেটরদেরই আলাদা করে মেইল দেন যে আমার লেখা মডারেশনের ভিতর দিয়ে যাক? আমি বাংলাকে কতটা ভালবাসি সেটার থাকে বাংলায় মনের ভাব প্রকাশের দক্ষতার যে কোরিলেশন করছেন - সেটাই বা কতটা জাস্টিফায়েড? বা আপনি যেই প্রিমাইস থেকে আসছেন - শুদ্ধ বাংলা বলতে আপনি কি বোঝেন? এর মধ্যেও তো সচলায়তনে ডাইভার্জেন্স আছে প্রচুর।
সচলায়তন চরম আওয়ামীঘেঁষা এ বিষয়ে কখনই সন্দেহ ছিল না। সচলের জন্মকাল থেকে পড়ছি, কখনও কিছু লেখা হয় না। তবে এখানে ভাল মানের লেখা পড়া যায়, তাই বার বার ঘুরে ঘুরে আসা। বাংলাভাষায় এর থেকে ভাল নতুন নতুন লেখা ( কনটেন্ট ) অন্য কোথাও পাওয়া মুশকিল।
ভোটার হবার পর ১৬ বছর পার হয়েছে কাউকেই যোগ্য মনে হয়নি, ভোট দেওয়া হয়ে ওঠেনি। আর ব্যাক্তিগতভাবে আওয়ামীলীগ ঘৃণা করি। আমার মনে হয় এখানে লেখকদের শতকরা ৯০ ভাগের বেশী লেখক যে কোন সময়ে যে কোন পরিস্থিতিতে আওয়ামী পক্ষ অবলম্বন করবেন।
একজন সচেতন মুসলিম এর পক্ষে আওয়ামীলীগার হওয়া কঠিন বলে আমার বিশ্বাস। যা হোক, সেটা একান্তই আমার দৃষ্টিভন্গী।
মন্তব্যের মাধ্যমে আপনি কিন্তু এখানে সব পাঠক-লেখককে একটা দিকে গড়ে ঠেলে দিলেন। এটা কি সঠিক বিশ্লেষন হল? আমিও সচল পড়ি, মন্তব্য করি, দু' একটা লেখার চেষ্টা করি, তাই নিজেকে সচলের অতি ক্ষুদ্র একটা অংশ ভাবতে পছন্দ করি, আর আপনি কিন্তু আমার গায়েও একটা সিল দিয়ে দিল্বেন? কেন? এটা কি আক্রমন?
আমিতো অসংখ্য মুসলিম দেখেছি যারা আওয়ামীলীগের সমর্থক, কেউ কেউ কঠিন সমর্থক, তাদের আমার অসচেতন মনে হয় নি। এখানে "সচেতন" বলতে আপনি কি বোঝাচ্ছেন? ঠিক কি কি বৈশিষ্ট থাকলে একজন মুসলিম কে সচেতন বলে দয়া করে পরিস্কার করুন।
আপনি অনেকগুলি সিদ্ধান্ত দিসেন, যদিও বলছেন ব্যক্তিগত মত। আমি এখানে, আবারো বলি, কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাই নাই, অন্তত সেটা উদ্দেশ্য ছিল না। নিচে সুরঞ্জনা এবং নজমুল আলবাবের উত্তরগুলো পড়ে দেখতে পারেন।
আপনের কানের গোড়ায় ঠাডাইয়া একটা চটকনা মারা দরকার শালা ছাগু।আপনের কথার লজিক্যাল স্ট্রাকচার এই রকম “সচলে যারা লেখে তাদের ৯০% এর বেশি আওয়ামী লীগার, যেহেতু একজন পারফর্মিং মুসলমানের পক্ষে আওয়ামী লীগার হওয়া সম্ভব না, সেহেতু সচলের সবাই অমুসলমান”। এতদিন ধইরা সচল পইড়া আপনে এই বুঝলেন?
হেই গেদাকাল থেইকা সচলায়তন পড়ি, কোনদিন লেখা বা কমেন্ট করার দুঃসাহস দেখাই নাই, আজকে আপনে বাধ্য করলেন। জীবনের প্রথম মন্তব্যেই গালাগালি আর হুমকি দেয়ার জন্য সচলের কাছে দুঃখিত।
মনে হচ্ছে আপনার লজিক প্রসেসরে সমস্য রয়েছে। আমি কিন্তু কোথাও একথা বলিনি যে সচলায়তনের ৯০% অমুসলিম। এটি আপনি কয়েকধাপ এগিয়ে নিজে ধারনা করছেন। আমার বক্তব্যের শেষে খেয়াল করুন আমি আমার মন্তব্য সম্পর্কে বলেছি " আমার বিশ্বাস", আবার এটাও বলেছি এটি একান্তই আমার নিজের দৃষ্টিভন্গী।
আমি ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামীলীগকে ইসলাম এর সন্গে সাংঘর্ষিক দল হিসেবে দেখি। তাই আমার এটা বুঝতে কষ্ট হয় একজন মুসলিম কিভাবে এ দলটিকে সমর্থন করেন।
শুধু শুধু না বুঝে থাপড়া থাপড়ি করলে ওটা বাতাসে ঘুরে নিজের গালে এসেই লাগে।
আওয়ামী লীগকে যারা ইসলামবিরোধী মনে করে, তারা "রক্ষণশীল" না- তারা ডাইরেক্ট জামায়াতপন্থী। মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রজন্মের জামায়াতীদের মধ্যে একটা ধারণা গেথে দেওয়া হয়েছে যে গোটা দুনিয়াতে ইসলামের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে(আসলে সব ধর্মের ধার্মিকরাই নিজেরা শিকারী হওয়া সত্ত্বেও নিজেদেরকে শিকার ভাবতে পছন্দ করে, এই মর্ষকামীতাকে আমি ধার্মিক চরিত্রের অংশ হিসেবেই দেখি) এবং বাংলাদেশে এই চক্রান্ত বাস্তবায়নকারীরা হল আওয়ামী লীগ এবং বামপন্থীরা(অবশ্য রাজনীতির অঙ্গনে প্রভাবশালী যেই জামায়াতের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে, সেই "ইসলামবিরোধী" গোত্রের সদস্যপদ লাভ করবে)। জামায়াত-বিএনপি জোটের কারণে জামায়াতীরা বিএনপির জন্যও ক্যামপেইনিং করে, তাই আপাতঃদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে "রক্ষণশীলরা" বিএনপিঘেষা হয়।
আওয়ামী লীগ আর বিএনপির সাথে আমি ধর্মীয় অবস্থানকে ইক্যুয়েট করতে রাজি না। একটা রাজনৈতিক দলের সাথে কোন ধর্মীয় আদর্শকে তখনই ইক্যুয়েট করা যায় যখন দলটি তীব্রভাবে আদর্শবাদী হয়। আওয়ামী লীগ-বিএনপি আমার দৃষ্টিতে আদর্শের রাজনীতি করে না, ভোটের রাজনীতি করে।
বাই দ্যা ওয়ে, আপনার কাছে সেন্ট যোসেফ আর নটরডেমকে কেন "হালকা আওয়ামী-ঘেষা" মনে হল? এই দু'টো প্রতিষ্ঠানকে তো আমার কাছে নিরপেক্ষই মনে হয়েছে। সংখ্যালঘু হওয়া মানেই কিন্তু আওয়ামী সমর্থক হওয়া না
গুছিয়ে বলেছেন। সহমত।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
আওয়ামী লীগ আর বিএনপির সাথে আমি ধর্মীয় অবস্থানকে ইক্যুয়েট করতে রাজি না। একটা রাজনৈতিক দলের সাথে কোন ধর্মীয় আদর্শকে তখনই ইক্যুয়েট করা যায় যখন দলটি তীব্রভাবে আদর্শবাদী হয়। আওয়ামী লীগ-বিএনপি আমার দৃষ্টিতে আদর্শের রাজনীতি করে না, ভোটের রাজনীতি করে।== সহমত
facebook
আমি রাজনৈতিক দলের সাথে ধর্মীয় অবস্থানের ওভারল্যাপ দেখতে পাই। আমার মতে এগুলোকে শুধু ভোটের রাজনীতির মধয়ে ফেলা চরমপন্থাকে কেবল আদর্শিক অবস্থান বানানোর মত। আপনার মতের সাথে শ্রদ্ধা রেখেই বলছি।
আপনার শেষ প্রশ্নের বার্ডেন অফ প্রুফ কেন আমার? আমার দিতে ইচ্ছা করছে না, কিন্তু বিভিন্ন কারণেই আমার, বা আমার পারিবারিক সেল্ফটির - হালকা আওয়ামীঘেঁষা মনে হয়েছে। আর বড় কথা, এখানে ব্যক্তিগত গল্প বলতে ইচ্ছাও হচ্ছে না। সংখ্যালঘু হওয়া মানেই আওয়ামি সমর্থক না, সেটা জানি, কিন্তু কেবল সেই দৃষ্টিভঙ্গী থেকে তো আসিনি। জিনিসটা অনেকটা ডিফিউডস সাংস্কৃতিক সত্য বলেই আমার মনে হয় - এবং সঙ্গে এর সাথে ব্যক্তির নিজস্ব মত এবং ডিসকাউন্টের ব্যাপারও আছে। কোথাও বলবো না এটা অবজেক্টিভ, সায়েন্টিফিক সত্য। কিন্তু ব্যক্তির মনে হওয়াকে সায়েন্টিফিক প্রসেস সবসময় অনুসরণ করতে হবে এমনটা কোথায় বলা হয়েছে - আর তা কি ভায়াবলও?
আপনার প্রথম প্যারায় আপনি কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এর অংশবিশেষের সাথে আমি একমত, অংশবিশেষের সাথে না। এগুলো আপনারই সিদ্ধান্ত।
সিরাত, আপনি আপনার পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে একটা বক্তব্য দিয়েছেন যে নটরডেম আর সেইন্ট জোসেফকে আপনার হালকা আওয়ামী ঘেঁষা মনে হয়েছে। এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তি কী পাঠক অবশ্যই জানতে চাইবে। আমি নিজেও জানতে চাই। বার্ডেন অব প্রুফ অবশ্যই আপনার - আমি যদি আজকে বলি "সিরাত চোর বা ডাকাত বা এ জাতীয় খারাপ কিছু" - কেন বললাম এইটা জানতে চাইলে " উত্তর দিতে ইচ্ছে করছেনা" এটা বলা কি গ্রহণযোগ্য হবে?
ব্যক্তির মন সবসময় সায়েন্টিফিক প্রসেস হয়ত অনুসরণ করেনা, কিন্তু ব্যক্তির নিজস্ব মতের কিছু ভিত্তি সবসময়েই থাকে। আপনি সেটাই বলুন না। সেটা সায়েন্টিফিক হতে হবে এমন দাবীতো কেউ করছেনা! হয়ত নিমাই/জহরলাল স্যারের পরিধেয় দেখে মনে হয়েছে এই রঙের কম্বিনেশনটাতো মুজিব কোটধারীদেরও থাকে। সো বি ইট। আপনি সেটাই বলুন।
আপনার লেখা মন্তব্য প্রতিমন্তব্য দেখে মনে হল আপনি কিঞ্চিত আক্রমনাত্মক মুডে আছেন। লেখাটা পড়ার সময় আমার কাছে আলোচনামূলক মনে হলেও মন্তব্যগুলো পড়ে মনে হচ্ছে কোন কারণে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
ভাল থাকবেন।
ঝরঝরে লেখা হে!
আবার ফর্মে ফিরলা মনে হইতেসে। আগের দুইটা লেখাও পড়ি গিয়ে...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
"আওয়ামী লীগ বেসিকালি একটা ইসলাম বিরোধী পার্টি", বুঝলাম আপনার পরিবারের মনোভাব। আপনি নিজে তো এখন বড় হয়েছেন, আইবিএর মতো ভালো জায়গায় পড়াশোনা করেছেন, এখনো নিজের মতামত কি গড়ে ওঠেনি? এখন এই লাইনটার যুক্তি কতটুকু বলে মনে হয়?
সবাই নিজের মতামত তুলে ধরবে সেটাই স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ কে বেছে নেয়ার আসল কারণ টাই আপনি বলেননি। সেটা জানিয়ে দেই। ইসলাম ভিত্তিক দল বলতে যদি জামাত বোঝান, সেটা সাপোর্ট করা ধর্ম-প্রাণ মুসুল্লি দের পক্ষেও সম্ভব না। বিএনপি যখন জামাতের সাথে গাটছড়া বাঁধবে, তখন তাকে সাপোর্ট করাও সম্ভব না।
সাচ্চা মুসলমানের পক্ষে যদি জামাত সাপোর্ট করা সম্ভব হয়, তাহলে তার মুসলমানত্ব নিয়েই আগে প্রশ্ন জাগে। কেন?
প্রশ্ন যদি আসে উত্তর ও আসবে।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
সুরঞ্জনা,
আমি কিন্তু এখানে কোন কারণ পিনপয়েন্ট করার চেষ্টা করিনি। কেবল আমার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে কিছু চলক দেয়ার চেষ্টা করেছি। উপরে আপনার কিছু বাক্যের সাথে আমি একমত, কিছু বাক্যের সাথে একমত নই, কিছু বাক্যের উত্তর নিজেও জানি না - কিন্তু কেবল যদি কেন লিখলাম জিজ্ঞেস করেন - মিশেল ইকুইম ডি মন্টেইন যে কারণে তাঁর এসাইস লিখেছিলেন (ব কেরুয়াকের স্ট্রিম অফ কনশাসনেস) - চেষ্টা করেছিলাম একটা 'সিদ্ধান্ত-পূর্বক' মানসিক অবস্থা তুলে ধরতে। সিদ্ধান্তে আরো চলক আসবে সেটা বলাই বাহুল্য। আমার লেখার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে (বা 'আমার পরিবারের', বা 'আমার বাবার' সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে) পৌঁছানো কঠিন, কারণ লেখার গাঠনিক দূর্বলতার বাইরেও সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত চলক সম্পর্কে এখানে খুবই কম বলেছি।
আমি নিজে এখানে কোন সিদ্ধান্ত দেয়ার চেষ্টা করিনি। সেটাকে কেউ দুর্বলতা হিসেবে ধরে নিতেও পারে। আমার উত্তর হবে এটা সেরকম পোস্টই ছিল না।
এ ব্যাপারে আপনার মতামত আপনার উত্তর থেকে অনেকটাই পরিষ্কার। ধন্যবাদ!
" আইবিএর মত ভাল জায়গায় পড়াশোনা করেছেন, এখনো নিজের মতামত কি গড়ে ওঠেনি ?"
মতামত গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ওঁর অবস্থানতো সঠিক জায়গায়ই। খোঁজ নিয়ে দেখুন, আইবিএর অনেক প্রভাবশালী শিক্ষকই জামায়াত সমর্থক। তাঁরা আবার বড় ব্যাবসায়ীও বটে।
আইবিএর এক স্বনামধন্য শিক্ষক যিনি একজন বড় ব্যাবসায়ীও বটে, এবারের রোযার মাসে প্রচুর ইসলামী বই বিতরন করেছেন ( ইসলামী বই বিতরন করলেই তিনি জামায়াতী হবেন এমনটা নয়, তিনি জামায়াতী হিসাবেই পরিচিত )।
আওয়ামী লীগকে বেছে নেওয়া নয়, নিরপেক্ষতা বজায় রেখে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়ীকতা ইত্যাকার চেতনাগুলো অন্তরে ধারণ করলে আওয়ামী লীগ বা বাম দলগুলোর দিকেই ঝুঁকে থাকতে হচ্ছে বর্তমান প্রেক্ষিতে ( আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের মানুষ )।
আপনার শেষাংশের মন্তব্যের সাথে সহমত।
প্রৌঢ়ভাবনা
সচল বিষয়ে আপনার স্পষ্ট কোন সিদ্ধান্ত আছে?
ধর্ম পালন এবং জামায়াত করণ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি? এই দুটিকে সমার্থ ক ভাবেন কি?
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আমি প্রথমে সুরঞ্জনাকে যে উত্তর দিয়েছি সেদিকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবো।
যেই মুহুর্তে এই ধরণের প্রশ্নের সিদ্ধান্তমূলক উত্তর দিতে যাই, তখনি লেখার উদ্দেশ্যটা গুলিয়ে যায়। এরকম লেখার আর কি।
*আমি* মনে করি সচলায়তন থাকার প্রয়োজনীয়তা আছে। যদিও যত বেশি ভাবি তত মনে হয় 'আমি' বলে কোন এক ভয়েজ নেই। একটা অংশ মনে করে থাকা মাস্ট। আরেকটা বলে না থাকলে কি-ই বা হতো? আরেকটা অংশ বলে সচলায়তন কালচারার ইকুইলিব্রিয়ামের অংশ।
পরের প্রশ্ন, *আমি* নিজে এগনস্টিক। *আমি* ধর্ম পালন এবং জামায়াত করণের (বা জামায়াতের প্রতি, বা বৃহৎ-ডানের প্রতি *সহানুভূতির* মধ্যে) আংশিক ওভারল্যাপ দেখি - আপনি যদি সম্পূর্ণ হোলিস্টিকালি ভাবতেই বলেন। কিন্তু আবারো, আমি নিজের এগনস্টিক জুতোয় ফেরৎ গেলে পুরো জিনিসটাকে এবসার্ড লাগে। আবার রক্ষণশীল আমি-র দৃষ্টিভঙ্গী থেকে আরো বেশি পার্সেন্টেজ দেখি। তবে জামায়াত একটা নির্দিষ্ট ধারা দেখায় এমনকি ইসলামিক থিওলজির বৈচিত্র্যময় ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যেও (সুফী, সালাফি, শিয়া, দেওবন্দি - ধর্ম-রাজনৈতিক ওভারল্যাপ)। সুতরাং উল্টো যুক্তি দিয়ে যদি আসি - জামায়াত ইসলামিক সেট পুরো ভরতে পারবে না। যথেষ্ট কট্টর না। জামায়াতের রাজনৈতিক এজেন্ডা ওই সেটের বাইরেও চলে যায়। কিন্তু এই বাক্যে আবার কোয়ালিফায়ার আসবে বড় - আমি ইসলাম বলতে কি বুঝি?
আমি আসলে এই প্রশ্নগুলার উত্তর দিতে চাচ্ছিলাম না। এক ধরণের অদৃশ্য পিয়ার প্রেশারে দিয়ে ফেললাম।
অস্পষ্ট, বিভ্রান্ত এবং সম্ভবত লোকানোর প্রবনতা নিয়ে আপনি লিখে চলেছেন। আমি বেশিরভাগ সময়ে আপনাকে রেফারেন্স আর উদাহারণ টানতে দেখি। কিন্তু সব কিছুর উত্তর এভাবে দেয়া যায় না। কিছু কিছু বিষয়ে অন্তত আপনার নিজেকে স্পষ্ট করতে হবে। আপনি সচল এবং এর বেশিরভাগ সদস্য আওয়ামী, বাম কিংবা ধর্মহীন বলার পর নিজের অবস্থানটা ক্লিয়ার না করে প্যাচওয়ালা উত্তর দিয়ে চলেছেন। সচল কোন রাস্ট্রযন্ত্র না, যে এখানে ফাকেতালে কিছু ধোঁয়াশা থেকে যাবে। এটা একটা ছোট ওয়েবপেজ। এখানে প্যাচ কিংবা অস্পষ্টতা প্রবল হলে সেটা প্রকাশ্য হওয়া উচিত। আপনার অবস্থানটা পরিস্কার হওয়া আপনার জন্য যতটা জরুরী, সচল এবং তার গড়ে উঠা চরিত্রের নিরাপত্তার জন্য সেটা তারচে বেশি জরুরী।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
বিএনপি ইলেকশান জেতার পর যে হিন্দু কমিউনিটির উপর অত্যাচার চলে, যেই হিন্দু মেয়ে রেপ হয় সেলিব্রেশান হিসাবে - সেটা কতখানি হোলিস্টিকালি দেখেন? রেপ-টাও কি একটু এবসার্ড লাগে না তখন?
সিরাত ভাই কিছু মনে কইরেন না তিন নম্বর এর মন্তব্যকারির প্রশ্নটাও আপনার প্রত্যেকটা পোস্টের বিষয়বস্তু গুলার মধ্যে ভিন্নতা থাকে , কিন্তু লেখাটাতে ইংরেজী বাংলাজুমমিক্সচার এতোটাই বেশি থাকে যে মাঝে মাঝে মনে হয় ডিজুস বাংলা পড়ছি যা আমার দু চোখের বিষ ইংরেজীর প্রতি আমার কোন প্রকার বিদ্বেষ নাই কিন্তু দুইটার এতো মিক্সচার ভালো লাগে না ।
এখন আপনার পোষ্টের আলোচনায় আসি
আপনি একটু অসাম্প্রদায়িক, উদারমনা, সাংস্কৃতিক প্রেমী হলেই আমাদের সমাজে আপনার গায়ে হয় বাম কিংবা আওয়ামীলীগ ট্যাগ আপনার গায়ে লাগবেই অথচ আমার ফ্ল্যাট এ আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক আছেন যার পরিবার কঠোর পর্দা প্রথা পালন করা হয় উনার সহধর্মীনি আজ পর্যন্ত আমাকে দেখা দেননি এবং ঘরের বাইরে বের হলে উনি নিকাব পড়ে বের হন (হিজাবের নয় খেয়াল করুন) উনার ছেলেও প্রচণ্ড নামাজি অথচ উনার পুরা পরিবার আওয়ামীলীগের ডাই হার্ড সমর্থক উনার ছেলে আওয়ামীলীগ এর আইনজীবি সংগঠন করে
অন্যদিকে এক উচ্চবিত্ত বন্ধু আছে তার পরিবারের আর দশটা মুসলমান পরিবারের মতোই বাড়িতে কেউই পর্দা করে না ক্লাব পার্টি তারা নিয়মিত যায় তবে পরিবারের সবাই বিএনপি সমর্থক।
আপনার পলিটিকাল লজিক/চিন্তাধারা খুবই অপরিপক্ক লাগলো - নীচে কিছু প্রশ্ন - একটু সিরিয়াসলি ভেবে উত্তর দেন প্লিজ।
একটা পলিটিকাল পারটির প্রো-ইসলাম বা এন্টি-ইসলাম লেবেল থাকা জরুরি কেন? এন্টি-ইসলাম হলেই কি বা প্রো-ইসলাম *না* হলেই বা কি? এতে কি সুশাসনের কোন এদিক সেদিক হয়? আলীগ আপনার কথায় এন্টি-ইসলাম বলে কি দেশ শাসন আরো খারাপ করসে? বিএনপি-জামাত প্রো-ইসলাম হওয়াতে কি দেশের মানুষের তিল পরিমান উন্নতি বাড়সে?
আর এত লেখাপড়আ করসেন - একটা বিশেষ রেলিজিওন কে বাড়তি প্রশ্রয় দিলে সেই দেশের মাইনোরিটিদের কি অবস্থা হয়, একটু চিন্তা করে বলবেন? স্টেটের দায়িত্ব কি উগ্র মেজোরিটিকে কোলে তুলে রাখা, নাকি সবচেয়ে দুরবল কমিউনিটিকে প্রোটেক্ট করা, আর এগিয়ে নেয়া?
আরো অনেক প্রশ্ন আছে, আপাতত এইটাই।
১। আমার চিন্তাধারা অপরিপক্ক আপনার মনে হতেই পারে। যদি তাই হয়, তাহলে সমাধান কী? দূরে গিয়ে চুপ করে বসে থাকবো? আমি প্রকাশ করায় আপনি অপরিকপক্কতাটা দেখলেন, তাই না?
[১ক: 'এত লেখাপড়া করসি'। তাও অপরিপক্ক। লেখাপড়া বানের জলে ভেসে গেছে ভাই। মিনিংলেস, ফাউ 'লেখাপড়া'। এটা স্পেকট্রামের দুই সাইড থেকেই শুনা। ]
২। আপনি উপরের উত্তরের স্ট্রিম যদি পড়েন - আমি এখানে কোন সিদ্ধান্তমূলক লেখা লেখার চেষ্টাই করি নাই। বিশেষত রাজনৈতিকভাবে তো না-ই। আপনার কেন মনে হল আমি রাজনৈতিক উপসংহারে পৌঁছানোর চেষ্টা করসি?
৩। আমার মনে হয়, এবং ভুল হওয়ার সম্ভাবনা, আপনি আমার লেখার উদ্দেশ্য অনেকটাই ভুল বুঝছেন (যদিও আমি নিজেও ১০০% নিশ্চিত না )। আমার রাজনৈতিক পার্টির লেবেলিং নিয়ে *এই লেখায়* উত্তর দেয়ার ইচ্ছা নাই। *প্লিফ অফেন্ডেড হইয়েন না।* আপনি উপরের মন্তব্য স্ট্রিম পড়লে আশা করি বুঝতে পারবেন কেন।
ধন্যবাদ।
আপনের বয়েস ২৭-২৮। এখনো কোন প্রকার পলিটিকাল চিন্তা-ধারা/লীনিং আপনার ভেতর দানা বাঁধে নাই, সেইটা ১০০% কনভিন্সিং না। আপনে দিস্তা দিস্তা ফ্রানজেন, মন্টেইন, আর হুইটমান এখন আবার কোট করতে পারেন। তবে সেটা আর আপনের নিজের অপিনিয়ন, নিজের বিশ্বাস কখনোই এক না।
আর বারবার পরিবার-পরিবার, বাপ, ইন্ফ্লুয়েন্স এইসব বলে কথা এভয়েড করেন। যা বুঝি, আপনে চিন্তা ভাবনায় বহুতই ইন্ডেপেন্ডেন্ট। অন্তত ২৭-২৮-এ আপনার বাপের ইন্ফ্লুয়েন্স বাদ দিলেও কিছু কিছু জিনিস বোঝার বয়েস, এলেম আপনের হইসে। আপনের বাপ যদি রাজাকার-প্রেমী হয়, সেই একই ফিলিংস আপনারও হওয়া জরুরত না। আপনের পরিবার যদি চায় দেশের সব হিন্দু পারসিকিউট করা হোক, সেইটা আপনেও চান?
এইখানে আওয়ামী আবুল-দের প্রচুর ক্রিটিসাইজ করা হইসে। এখন কন, আপনের বাপ যদি তারেক জিয়ার মত একটা বিশাল চোররে সেকেন্ড কামিং অফ ক্রাইস্ট হিসাবে বিবেচনা করে - তাতেও আপনের "নিজের" মতামতটা কি? লুকাচুরি তো বহুত খেলতাসেন। স্টেট-এর ইসলামাইজেশান, দেশের ভবিষ্যত ক্রমশ আফগানিস্তান-এর দিকে বা পাকিস্তানের সিচুয়েশানের দিকে ধাবিত হওয়ার বিষয়ে আপনের মত-ই বা কি, বা আপনের পরিবারের মতই বা কি?
নাকি আপনেরা কেউই কিসু বুঝেন না?
সিরাত ভাই, আপনার লেখার শুরুর দিকে একযায়গায় বললেন "চিত্ত যেথা ভয় শুন্য উচ্চ যেথা শির" স্লোগান হলেও তা এখানে পুরপুরি সত্য নয়। একটু ব্যাখ্যা করুন দয়া করে।
আবার পরে আরেক যায়গায় লিখলেন শঠতা, নামাজ না পড়া, মিথ্যা না বলা, জোরে কথা বলা - এগুলো আপনার আব্বার মতে আওয়ামী চরিত্র। মিথ্যা না বলে কি শঠতা করা যায়?
এ তো ধরি মাছ না ছুই পানি হলো। নিজের আইডিওলজি পরিষ্কার করে বলবেন না। আবার যারা পরিষ্কার একটা অবস্থান নেয় সেকুলারিসমের জন্য, তাদের উগ্র বা অন্ধ-বাম বলে নিজেকে সুপিরিয়র ভাববেন!
সিরাত, তোমার লেখাটা পড়লাম। তোমার বাবা এবং তোমার ফ্যামিলি ইউনিটটির চিন্তা করার ধরনকে উল্লেখ করে তুমি লেখাটি লিখেছো। কিন্তু তুমি ঠিক কী ভাবে ভাবো তা আমার কাছে স্পষ্ট হলো না। তুমি কী বোঝাতে চেয়েছো যে তোমার চিন্তাভাবনায় তোমার নিবিড় ফ্যামিলি ইউনিটটির এবং তোমার বাবার চিন্তাধারার অনেকখানি বা কিছুটা প্রভাব রয়েছে? এমনকী এই প্রভাব এখনো রয়েছে যখন তোমার নিজের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মাণের সুযোগ, সামর্থ্য এবং স্বাধীনতা তোমার আছে? মানুষের ওপর পরিবারের এমন কী অন্য অনেকেরও প্রভাব থাকে, আবার কখনো এমন প্রভাব কাউকেই 'ডগম্যাটিক' করে তুলতে পারে না, এমন কী অনেক কমবয়সীদেরও না। তুমি কীভাবে 'দুনিয়া দেখতে শুরু করেছো' তা উল্লেখ করেছো; কিন্তু পাঠক হিসেবে কৌতুহলী বোধ করছি এবং করবো তুমি এখন কীভাবে দুনিয়া দেখছো তা জানতে। তোমার চিন্তাভাবনায় তোমার নিজস্ব ফ্যামিলি ইউনিটের চিন্তাধারার প্রভাবটি কী টিকে থাকতে পেরেছে? না কী তা বদলে গেছে? বদলে গেলে কেন এই পরিবর্তন, না কী না বদল হওয়াটাই সঙ্গত মনে হয়েছে এই বিষয়গুলো অর্থাৎ একজন লেখকের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি জানার ব্যাপারেই পাঠক হিসেবে আগ্রহ বেশি থাকবে।
সিকোয়েল হিসেবে "জামাতি চরিত্র" পড়ার জন্য চা-চু নিয়ে বসলাম।
১) মানুষের চরিত্রগঠনে তার পরিবারের ভূমিকা ব্যাপক। বিশেষ করে পরিবার যতো বেশি তার আভিজাত্য ইত্যাদি নিয়ে রক্ষণশীল বা সুপিরিয়র মনোভাব পোষণ করে, ভবিষ্যত প্রজন্মেও সেই মনোভাব শক্তভাবে গেঁথে দিতে সচেতন এবং অবচেতনে চেষ্টা করে। এই প্রভাব থেকে কখনো মুক্ত হওয়া যায় না। তবে মানুষ বিভিন্ন কনটেক্সটে এসে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করে। চোখকান খোলা থাকলে সেই অভিজ্ঞতাও মানুষের চরিত্র ও চিন্তাভাবনার ওপর প্রভাব ফেলে। এজন্য অসুস্থ চিন্তাচেতনা ধারণ করা পরিবারের ছেলেমেয়েদের পক্ষেও চেষ্টা থাকলে ব্যবহারিক জীবনে মানুষের সমাজে সুস্থ আরচণ করা সম্ভব।
২) আওয়ামী লীগের অনেক সমস্যা আছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের সমস্যা না থাকাই অস্বাভাবিক। কিন্তু আপনার পরিবার যে ৪টি কারণে আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করে, ওই কারণগুলো আসলে আওয়ামী লীগ না; বরং আওয়ামী লীগের কাঁধে বন্দুক রেখে বাংলাদেশের জন্মকে ঘৃণা করতে এবং করাতে প্রোপাগান্ডা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ৭১-এ আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধারা ইসলামের শত্রু ছিলো (!), এখানেই একই কেস। আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের দালাল ও দুষ্কৃতিকারী ছিলো, এখানেই একই ব্যাপার। আক্কাস আলীর মুখে দাড়ি নেই কেন, মজিদের গল্পের সেই কাহিনীর মতোই কামাল-জামালের ডালিমের বউকে অপহরণের কাহিনী কিংবা আওয়ামী লীগার ওমুকের চরিত্র খারাপ বলে আওয়ামী লীগ খারাপ - এই ফতোয়া এখনো চলমান। আর চতুর্থ কেস তো আরো বাস্তব। পাকিস্তান আমলে আমরা কতো ভালো ছিলাম! যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশে স্বাধীনতার সাথে সাথে কেন আমরা ১০ টাকা দরে মণ চাউল খেতে পারি না, তার জন্য মজিবর খারাপ! এই চারটা পয়েন্টই আসলে আওয়ামীবিরোধিতার আড়াল নিয়ে বাংলাদেশের জন্মেরবিরোধিতা।
৩) মানুষ সারাজীবনই শিখতে থাকে। একসময়ের সিদ্ধান্ত পরে এসে পালটায়। কিন্তু এর মধ্যেও মানুষকে সিদ্ধান্ত নিয়েই কাজ করত হয়। মানুষের সব সমস্যার সমাধানই ওপেন এন্ডেড না। কোনো একটা বিষয়ে ইউনিভার্সাল সমাধান পাওয়া যাক বা না যাক, একটা নির্দিষ্ট কনটেক্সটে প্রয়োগযোগ্য সমাধান নিয়ে কাজ করাটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করা যায় না। একজনের ব্যক্তিগত চিন্তাধারা ওপেনএন্ডেড থাকলে হয়তো সমস্যা নেই; কিন্তু সেটা অন্যের সাথে সংশ্লিষ্ট হলে তখন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েই কাজ করতে হয়। সিদ্ধান্ত ভুল, না সঠিক, সেটা সময়ই নির্ধারণ করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এর রাজনীতি ও রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার একটা জীবনমরণ সমস্যা। এটা নিয়ে লিখতে গেলে আপনাকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে। ধোঁয়াশায় থাকলে পাঠকের রিঅ্যাকশন খুব ভালো হবে না - এটাই স্বাভাবিক।
৪) সচলায়তনকে আওয়ামী ঘেষা মনে হওয়া ঠিক আছে। কারণ, পোস্টে উল্লিখিত যে চারটি বৈশিষ্ট্যের কারণে আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করা হয়, তা আওয়ামী লীগের কাঁধে বন্দুক রেখে স্বাধীন বাংলাদেশকে বাঁশ দিতেই সাধারণত ব্যবহৃত হয়। সচল স্বাধীনতার প্রশ্নে তার অনড় অবস্থানের কারণে আওয়ামী লীগের সমর্থক ও সমার্থক হয়ে যাবে, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের যেসব দোষ আছে, যেমন আবুলের আবাল উক্তি, ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে হাসিনার জগাখিঁচুড়ি অবস্থান এগুলোর সমালোচনা সচলেই আসে। এই জিনিসগুলো স্বভাবতই স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রোপাগান্ডা মেশিনে খুব বেশি জ্বালানী সরবরাহ করে না।
৫) বক্তব্যপ্রকাশে সততা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সততার সাথে বক্তব্য প্রকাশ না করা গেলে সে বক্তব্য এড়িয়ে যাওয়াই উচিত। যেমন, আপনার মনে হয়েছে সচলে মন খুলে কথা বলার জন্য আপনি একটা নিঃসন্দেহ অবস্থা অনুভব করেন না, তাই রেখেঢেকে আপনাকে বক্তব্য প্রকাশ করতে হচ্ছে। এরকম মনোভাবের প্রকাশ যে সচলের জন্য ক্ষতিকর, এই জিনিসটা আপনি একবারও ভাবছেন না। আপনি যখন আপনার কথা বলেন, তখন ওডিয়েন্স ও মাধ্যমের প্রতি যত্নশীল হওয়াও আপনার দায়িত্ব। পাঠকের রিঅ্যাকশনে ইগো দিয়ে ঘেরা একটা রক্ষণব্যুহের ভিতরে না গিয়ে পাঠক কেন রিঅ্যাক্ট করে, সেটা বোঝা লেখকের দায়িত্ব। আপনার কোনো স্টেটমেন্টে আপনারই মতপ্রকাশে এইড করা একটা মাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা, সেটা বিবেচনার দায়িত্বও আপনারই।
৬) জ্ঞান এবং বুদ্ধি আলাদা বিষয়। বুদ্ধি জ্ঞানকে ব্যবহার করে জ্ঞানকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। দুইটার ব্যালেন্স জরুরী। শুধু জ্ঞানার্জন করে পাণ্ডিত্য অর্জন পৃথিবীর কোনো কাজে আসে না। সাথে সাথে বুদ্ধির প্রয়োগটাও যথাযথ হওয়া দরকার।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
- সচল স্বাধীনতার প্রশ্নে তার অনড় অবস্থানের কারণে আওয়ামী লীগের সমর্থক ও সমার্থক হয়ে যাবে, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই - সহমত - - - এটি শুধু সচল নয় যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এর জন্যই প্রযোজ্য -
বছরখানেক আগের এক পোস্টে আপনি শিবিররে বেনিফিট অব ডাউট দিছিলেন...
এখন আপনার অবস্থান কী?
আমিও এই পোস্টের সিকুয়েল হিসেবে 'জামাতি চরিত্র' পড়ার জন্য চা-চু নিয়া বইলাম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভদ্র সমাজে যেহেতু আমরা ধর্ম , রাজনীতি আলোচনা তুলি না, তাই আপনার লেখাটা এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু আপনার আগের লেখাগুলো ভাল লাগায় পড়া শুরু করলাম।
এবং বুঝতে পারলাম সচলের ট্রেন্ড এর বাইরে এটা লেখা।
এই ধরনের লেখা সচলে দেয়া দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন বলতে হবে। এইরকম লেখায় সচলে যেমন মন্তব্য আশা করেছিলাম সে ধরনের মতামত ই দেখা যাচ্ছে, ব্যতিক্রম কিছু না।
সচল অন্য বাংলা ব্লগগুলি থেকে অনেক আধুনিক এবং মান সম্মত। অধিকাংশ লেখকদের লেখা অনেক উন্নত ও রুচিশীল। মডারেশানের মাধ্যমে তা করা সম্ভব হয়েছে বোধ করি। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি একমত যে সচলায়তন একদল সমমনা মানুষের তৈরি ফোরাম, যাতে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যাপারগুলিতে আপনি ভিন্ন মত পোষণ করলে কিছুটা অসস্থি নিয়ে থাকতে হবে। মডারেশান পার করলেও মন্তব্যের ক্ষেত্রে ঠিক সহমত কম পাবেন।
আমি এখন সচল নই, তবু সাহস করে বলে ফেললাম আপনার এই লেখার অধিকাংশ অংশের সাথে আমি একমত।
সচলের অনেক ব্লগারদের(অবশ্যই সবাই নয়) মতে আওয়ামিলীগ অথবা জামাত ছাড়া আর কোন রাজনৈতিক মতের অস্তিত্ব নেই। ব্যক্তিগত ভাবে আমার ধারনা আওয়ামিলীগ বা বি এন পি, কেউই সমর্থন যোগ্য নয়।বাংলাদেশে রাজনীতি মানেই রক্তচোষক। তাই বলে আমাকে জামাতি সারিতে দাড় করিয়েন না। আমার বাবা ও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, কিছুটা আপনার বাবার মত তার ধারনা ছিল যে স্বাধীনতা তারা এনে দিয়েছেন আওয়ামি সরকার তার অপব্যবহার করেছেন। আমি মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা শহীদদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল।
যা হোক আশা করা যায় সচল আরও নিরপেক্ষ হবে, যেখানে চিত্ত ভয়শূন্য করে শির উচ্চ করে সবাই লিখতে পারবে।
সবার শির উঁচু করে লিখার জন্য সচলায়তন না। ছাগুদের শির উচ্ছেদ করার জন্য ইহা
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সচলের আরো নিরপেক্ষ হওয়ার দরকার নাই, যেখানে চিত্ত ভয়শূন্য করে শির উচ্চ করে লেঞ্জাওয়ালারা লিখতে পারবে।
গতবছর জাকির নায়েকের বাংলাদেশে আগমন উদ্যোগের প্রতিবাদে সচলায়তন এবং ফেসবুকে আমরা যে এক্টিভিটি চালিয়েছিলাম তার সমালোচনা করে আপনি ফেসবুকে কথা-বার্তা বলেছিলেন।
সচলায়তন স্পষ্টতই নিরপেক্ষ নয় কারন আদর্শিক অবস্থানগত প্রেক্ষিতে নিরপেক্ষতা একটা ভ্রান্ত ধারনা যা মুলতঃ অন্যপক্ষকে জায়গা ছেড়ে দেয়ার ক্ষেত্র তৈরী করে দেয়। বাংলাদেশের বাস্তবতায় নিরপেক্ষতার ঝোল ছাগলদের পাতেই যায়।
সচলায়তন কোন পক্ষে, কোন কোন ইস্যুতে সচলায়তনের স্পষ্ট পক্ষপাতিত্ব আছে সেটা সবার জানা, সচলায়তন কখনো এ নিয়ে কোন লুকোচুরি করেনি।
অনেকদিন থেকেই তো আপনার লেখা পড়লাম। আমার ব্যক্তিগত উপসংহার শেষপর্যন্ত একটাই- আপনি আসলে সচলায়তনকে ধারন করেন না।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ফেইসবুকের সামাজিক পরিবেশে দেয়া তথ্য পাবলিক ফোরামে উন্মোচন না করার অনুরোধ জানাই।
সচলায়তনের তথ্য ফেইসবুকে উন্মোচিত হয়েছিলো, স্মরন করিয়ে দিলাম।
সেই সাথে এটাও মনে করিয়ে দিতে চাই জাকির নায়েকের মতো অন্ধকারের জাস্টিফায়াররা সচল হওয়ার যোগ্যতা ধারন করেনা। এই জাস্টিফিকেশন সচলায়তনেই করতে হবে এমন না।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সচলায়তনের জন্মই হয়েছিল ধর্মীয় মৌলবাদ/ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি/ ধর্মীয় রাজনীতি/ ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার এই বিষয়গুলিতে জিরো টলারেন্সের মূলনীতিকে সামনে রেখে। ১৯৭১ এ ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির ভুমিকা খুব বেশী করে তুলে ধরার কারণ ১৯৭১ সালে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি তার সব থেকে ভয়াবহ চেহারা দেখিয়েছে। তার মানে এই না ১৯৭১ই ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির ম্যাসাকারের একমাত্র উদাহরণ। সুতরাং বেনিফিট অফ ডাউটফাউটের কোন জায়গা নাই। যেখানে ডাউট নাই সেইখানে আবার বেনিফিট অফ ডাউট কীয়ের?
যাই হোক আমার বাসায় চা শেষ। কফি নিয়া বসলাম।
অজ্ঞাতবাস
আপনি শুরু করলেন সত্য কথা অকপটে বলা নিয়ে, কিন্তু পুরো লেখাটায় মনে হলো অকপট সত্য বলতে আপনি খুব ইতস্তত। আপনার রাজনৈতিক আদর্শ বা চেতনার জায়গাটি খুব গোলমেলে; আমার মনে হয় সেটি আপনি নিজেও জানেন এবং সচলে সেটি খুলে বলতে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে আছেন:
(আর আরেকটি কথা, আপনি দয়া করে বাংলায় লিখুন।)
-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী
আমি রাজনৈতিক পক্ষাবলম্বনের ঊর্ধে থেকেই কথাগুলো বলতে চাইছি। আমি আমার ভাবনাগুলোই প্রকাশ করছি। বিতর্ক এড়াতে চাই।
আমরা যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়ীকতা ইত্যাকার ধারণা অন্তরে লালন করি, তাঁরা নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চাইলেও আওয়ামী লীগ বা বাম দলগুলোর দিকেই ঝুঁকে থাকতে হচ্ছে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে।
আপনি যে ভাবে অসাম্প্রদায়ীক মানুষগুলোকে "আওয়ামী চরিত্র" এর আওতায় হিপোক্রেট ( এই মুহূর্তে বাংলা প্রতিশব্দটি মনে করতে পারলাম না ) হিসাবে চিত্রায়িত বা সজ্ঞায়িত করতে চেয়েছেন এটা হজম করা সতিৎই বেশ কষ্টকর। এই অসাম্প্রদায়ীক মানুষগুলোর অধিকাংশই ধর্মপ্রাণ সে যে ধর্মেরই হোকনা কেন।
বিষয়টি গভীরভাবে ভাববার দাবি রাখে। অনুগ্রহ করে রাজনীতি ও ধর্মকে একাকার করে ফেলবেননা।
মন্তব্যে কষ্ট পেলে মাফ করবেন। কষ্ট দেওয়াটা উদ্দেশ্য নয়। সম্ভবত বিদেশি লেখকের বই অনেক পড়েছেন, এবার নিজের দেশের হাজার বছরের সংস্কৃতিকে জানুন। নিজের দেশটাকে চিনুন। অনেক ইতিবাচক দিকের খোঁজ পাবেন।
প্রৌঢ়ভাবনা
আপনার এ ধরণের লেখা আগেও পড়েছি, সেজন্যই খুব বেশী বিরক্ত হইনি।
"পুঁথিগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন", কথাটা আপনার জন্যই লেখা হয়েছে। এর চেয়ে ভাল উদাহরণ দেয়া সম্ভব না।
আমার কম্পুর এলেম দুর্বল বলে আপনার মূল লেখা থেকে কপি করে উদাহরণ দিতে পারছি না। কপি হচ্ছে না।
"আ. লীগ এবং সচলায়তন বাম" কথাটার সাথে জামাতের এই কথাটা ভাল যায় যে "আ,লীগ হিন্দুদের দল"।
সচলায়তন এবং আ. লীগ বাম এই যদি পর্যবেক্ষণ হয়, তাহলে আপনার পড়ালেখার ষোল আনাই মিছে বলতে হবে।
মাইক্রো (নিকট অতীত) ইতিহাস নিয়ে যদি বিন্দুমাত্র পড়ালেখা করতেন তাহলে বিএনপির ইতিহাসটা জানা থাকত। আর সিদ্ধান্ত হীনতায় ভূগতেন না। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। অবশ্য ৭ নভেম্বরের সিপাহী জনতার বিপ্লব বিএনপি নিজের মতো করে লিখে নিয়েছে। যত সৎ বলে নিজেকে প্রচার করতে চান তত সৎ হতে হলে কর্ণেল তাহের হত্যার ইতিহাস (নিকট অতীত) টা জানতে হয়।
অবশ্য নিকট অতীত বলে ৭১ কেই আপনি পাত্তা দেন না, ৭ নভেম্বরতো সেদিনের কথা। ৭১ কিছু হয়েছিল কীনা সে প্রশ্ন দয়া করে করবেন না।
রাজনিতীতে চরম সত্য বা শেষ বলে কোন কথা নেই হযরত সিরাত। পৃথিবীর সব ধর্মই একেকটা রাজনৈতিক দর্শন। ধর্মগুলোর উৎপত্তি একেকটা রাজনৈতিক বিপ্লব। সেই সময়ে তার গুরুত্ব যত মূল্যবানই হোক না কেন, আজকের সমাজে তা অচল।
সংস্কৃতিক মূল্যবোধের কারণে আজও মানুষ কিছু ধর্মীয় প্রথা মেনে চলে। প্রথাজাপনের এই সংস্কৃতিক চলক মানা তেমন দোষের কিছু নেই। কিন্তু একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জীবনে তার এত প্রবল প্রভাব থাকলে বিষয়টা দুঃশ্চিন্তার কারণ।
৭১-এ জামাতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল চরম সাম্প্রদায়ীক। কেবল মুসলমান বলেই তারা ভিন্ন মত এবং ধর্মের বাম-পন্হী, আওয়ামী এবং সর্বপরি হিন্দুদের উপড় পৌশাচিক নির্জাতন ও হত্যার শুধু সহায়ক নয় সংগঠকও ছিল। এমন একটা দল সমর্থন করা মানষীক সুস্থতার লক্ষণ নয়।
মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মায়। আপনিও স্বাধীন হয়েই জন্মেছিলেন। সেটা আপনাকে (অন্ততঃ চিন্তার স্বাধীনতা) আবার অর্জন করতে হবে। স্বাধীন ভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা সত্যিই খুব বড় সম্পদ।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আওয়ামি বানান ি দিয়ে নয়, বানানটা আওয়ামী হবে।
সচলায়তনের শ্লোগান কেন আপনার আংশিক সত্য মনে হয়, ব্যাখ্যা করেননি। আপনি কোন সত্য বলতে ভয় পান এখানে? সত্য বলুন। আপনার বাবা কিংবা বিখ্যাত কারো উদাহরন টেনে নয়। নিজের চিন্তা এবং যুক্তি দিয়ে। আর 'অ্যাবসলুট' 'ব্রুটাল' ট্রুথ বলতে চাইলে সেই ট্রুথ কে প্রমান এবং ডিফেন্ড করার দায়িত্বও নিন দয়া করে। পাঠক মন্তব্য করলে ক্ষেপে গিয়ে আর যাই হোক, সত্যবাদিতা হয় না।
চিত্ত যেথা ভয়শুন্য মাথায় রেখে আপনি যদি ধরে নেন এখানে বিএনপি জামায়াত নামের স্বধীনতাবিরোধীদের কাজ কে বৈধতা দেয়া যাবে আওয়ামীলীগের কিছু নেতার সমালোচনা দিয়ে, আপনি ভুল ভেবেছেন। বরং তাদের শির উচ্চ হবার আগেই কেটে ফেলার জন্য সচলায়তন সবসময় সচল থাকবে।
আপনার লেখাটা বেশি খারাপ লাগলো কেন জানেন? আপনি লেখায় টুকটাক করে কিছু আপত্তিকর কিছু কথা বলেছেন, কিন্তু বলেছেন এমনভাবে যে মনে হতে পারে এগুলো বাবার কথা। নিজের মতকে পরিষ্কার করে বলতে এতো দ্বিধা কেন? একটা কথা অবশ্য সত্যিই বলেছেন আপনার কন্ডিশনিং রক্ষনশীল বিএনপি ঘরানার। তাই ধরে নিচ্ছি আপনি সেই ঘরানাই ভালো জানবেন। তো সেটা নিয়েই লিখুন না।
আপনি লেখায় লিখেছেন আপনার আর আপনার আপনার পরিবারের আওয়ামী বিরোধীতার কারণ। আর শিরোনাম দিয়েছেন 'আওয়ামি চরিত্র'। তার মানে কি এই নয়, পরিবার যেই কারণে আওয়ামীর বিরোধীতা করছে, সেই কারণগুলো আপনার কাছে সত্যি মনে হয়? তাহলে এই রাখাঢাক কেন?
আপনার মিথস্ক্রিয়া এমনিতেই কম তার ওপর আশ্চর্য হলো মুক্তিযুদ্ধ কিংবা রাজাকার বিষয়ক লেখায় আপনাকে অন্তত আমি কখনোই সরব হতে দেখিনি। দেখেছি জামায়াতের পক্ষে নরম একটা অবস্থান নিতে। যদিও আপনি পরে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু এই লেখায়ও অপুর প্রশ্নের উত্তরে আপনি জামায়াতের ব্যাপারে নিসন্দেহ নন। বরং একটু সফট কর্নারই দেখতে পেলাম যেন।
একটা ছোট্ট অনুরোধ। যদি আপনি এই মন্তব্যের উত্তর দেন। দয়া করে আপনি কোন বড় মণিষীর বই পড়েছেন জাতীয় উদাহরন টানবেন না। আপনার জন্য না। আমার নিজের সুবিধার জন্যই। আমার পড়াশোনা কম। যাদের নাম বলেন, বেশিরভাগকেই আমি চিনিনা। তার থেকেও বড় কথা, কোথায় কোন গ্যানি লোক কী থিওরি দিয়েছেন জানা থেকে আপনি নিজে কী ভাবেন সেটা জানা আমার জন্য অনেক জন্য জরুরী।
এই লেখায় এক দিলাম।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
হায় হায় এই কমেন্ট টা পড়া হয়নি - দ্য পারফেক্ট! রানা মেহের অনেক ধন্যবাদ মনের কথা গুছিয়ে লেখার জন্য - স্যাম
সচলায়তনের যে বিধিবদ্ধ ঘরানায় আমি অভ্যস্ত তার মাপে অসম্ভব ব্যতিক্রমী একটা লেখা। প্রথমেই আপনার সাহসের জন্য অভিবাদন জানাই)মন্তব্যে ও তৎপরবর্তীতে কি পরিমাণ ব্যাশিং যে পাবেন তা আপনার মত প্রাক্তন সচলের নিশ্চয়ই অজানা থাকার কথা নয়?
যতটুকু বুঝলাম তাতে আপনি আপনার মানসজগত কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে বা হয়েছে তার একটা সাইকোএনালাইসিসের জন্য মূল ক্ষেত্রটা এখানে প্রস্তুত করছেন। আপনার পরিবার, বাবা, স্কুল-কলেজের একটা ক্ষেত্র তুলে আনছেন এখানে যা আপনার পরবর্তী মনোভাব প্রকাশে সহায়তা করবে।
ধর্ম, ধর্মনিরপেক্ষতা, ইসলাম ধর্ম, ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন স্কুল অফ থটস, আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সৃষ্টি, বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা এবং জামায়াত এ ইসলাম এই অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত পয়েন্টগুলোতে আপনার পরিবার ও পারিপার্শিকতার মনোভাব ও অংশগ্রহণ বিষয়ে আপনি পরিষ্কার করতে পারেন নি বা লোকলজ্জার ভয়ে বিশদে যেতে চান নি বা কোনো বায়াসনেস কাজ করেছে বলেই মনে হলো।
---------------------------------------------------------------
১
জামায়েত এ ইসলাম, মুসলীম লীগ, নেজাম এ ইসলাম ইত্যকার সমমনা দলগুলি যে স্পষ্টাকারেই স্বাধীনতাবিরোধী ছিলো এতে আমার কোনো ক্ষীণতম সন্দেহও নেই এবং সন্দেহ নেই তাদের যুদ্ধাপরাধেও। প্যান ইসলামিজমের যে চেতনা তার উপর ভিত্তি করে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ভেঙ্গে ফেলাকে তারা বীভৎসতম উপায়ে হলেও আটকানোর চেষ্টা করেছে। মূলত সুফী ঘরাণার সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলিমদের তীব্র ঘৃণা তাই তাদের উপরে জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মীয় এই দুই কারনেই বর্তায়।
২
অপরদিকে আওয়ামী লীগ যে ১৯৭১ এর স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলো এতেও কোনো সন্দেহ থাকার হয়তো অবকাশ নেই। তাদের মূলনীতিই ছিলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ছয়দফার নিরংকুশ ম্যান্ডেটও যে তারা পেয়েছিলো এটাও আমরা জানি।
মোটাদাগে সামহোয়্যার ইন ব্লগ এর একটা বড় অংশ, সোনার বাংলা ব্লগ এরা ১ নম্বর মনোভাব ধারণ করে। অত্যন্ত ভয়াবহভাবে মওদুদীর ডকট্রিন তারা মানে যা কোনো হিসাবেই আল কায়েদার চেয়ে কম ভয়ঙ্কর নয়।
আমার ব্লগের পুরোটাই, সামহোয়্যার ইন ব্লগ এর আরেকটা বড় অংশ, সচলায়তন ব্লগের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ এবং মুক্তমনা ব্লগের কিয়দাংশ ২য় মনোভাবটি পোষণ করে।
(এই শ্রেণিকরণ একান্তই আমার এমপিরিকাল দৃষ্টিভংগী থেকে কৃত এবং আমি এতে পুরোপুরি ১০০% কনভিন্সড তা বলছি না। অবশ্যই এটা আরো আলোচনা ও উদাহরণ এর দাবী রাখে। তবে ডগমা হিসাবে আমরা একে নিতে পারি।)
অ্ত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো এই দুটি সাদা-কালো মনোভাবের মাঝে যে বিপুল অংশের একটা ধূসর এলাকা আছে তা আমরা প্রায়শই উপেক্ষা করে যাই ব্লগোস্ফিয়ারে। আর এই অংশটিই মূলত বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মনোভাবের প্রতিনিধিত্ব করে। আপনার পোস্টটি এই অংশে আলো ফ্যালে বলেই মূলত তা এতো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে আমার কাছে।
জিন্নাহর বিদ্ধংসী দ্বিজাতিতত্ত্বের অবলুপ্তিতে আনা আওয়ামী লীগের চারটি মূলনীতি সম্বলিত স্বাধীনতা বাংলাদেশের সমস্ত জনগণের উপরে সমান প্রভাব ফেলেনি। যারা পুরোপুরি মানতে পারেন নি তারা জামায়াত কেই আঁকড়ে ধরেছেন। যারা ধর্মকে ফেলতে পারেন নি তারা হিন্দু বাংলা বনাম মুসলিম বাংলা কে সচেতনে বা অবচেতনে ধারণ করেন এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে ঘৃণা করেন। যদিও এরা জামাতকে পছন্দ করেন না তবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে এদের অনুৎসাহ নেই। এবং এদের মাঝে নানা ঘরাণা বিদ্যমান। জিয়াউর রহমান এদের তোয়াজ ভালোমতই করেছিলেন। সাম্প্রদায়িকতার মিঠে-কড়া বিভিন্ন রূপ এদের মধ্যে বিদ্যমান।(অবশ্য এটাও ব্যাপক আলোচনার দাবী রাখে যদিও অসাম্প্রদায়িক ধার্মিক আমার কাছে সোনার-পাথরবাটিই মনে হয়)
গণতন্ত্র কে যারা লিঙ্কন বাবাজির আদলে দেখেন তারা সমাজতন্ত্রকে পছন করেন না, বাকস্বাধীনতা আর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পেছনে অন্তরায় মনে করেন। সুশীল, কর্পোরেট ও ব্যবসায়ী সমাজের এই অংশটি দেশের অর্থনীতির বড় একটা অংশের নিয়ন্ত্রক এবং মার্কিন মদদে রজনীতির পালেও মূলত তারাই হাওয়া দিয়ে থাকে।
সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসীরা গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মিলনে গঠিত সোনার-পাথর বাটিতে বিশ্বাসী নয়। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে এদের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মস্কোপন্থী আর পিকিংপন্থীদের দু কুকুরে লড়াই, তাজউদ্দীনের ডক্ট্রিন থেকে শুরু করে সর্বহারা, সিরাজ শিকদার, জাসদ, কর্ণেল তাহের ইত্যাদি নানা অংশে এরা ভূমিকা রেখেছেন। এদের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ আবার কনভার্টেড হয়ে ধর্ম-কর্মে মতি হয়েছেন(ফ ম গং) এবং এদের মুরিদদের একটা অংশ উত্তরাধুনিক ঘোড়ার ডিমপন্থী ধোঁয়াশায় আক্রান্ত(রাইসু এবাদুর গং)। এদের একটা অঙ্গশ এখনো আওয়ামী লীগের মাঝে সক্রিয়।
বাঙালি জাতীয়তাবাদ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিভক্তির সূচক। গ্রহণযোগ্য জাতীয়তার সংজ্ঞায়নে ব্যর্থ হওয়ায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভয়াবহ পরিণতি আমরা চাকমা বিদ্রোহে দেখি। স্বাভাবিকভাবেই তাই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নামের একটা কাউন্টারপার্ট সৃষ্টি হয়েছে এবং এদের একটা অংশ অন্য আদিবাসী প্রশ্নে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী মনোভাব ধারণ করে(মজার ব্যাপার হলো অধুনা আওয়ামীলীগও সেই যে লাউ সেই কদুতেই ফিরে গেছে আদিবাসীদের স্বীকৃতি প্রশ্নে ) বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলা প্রদেশে যেহেতু এথনিক রেইস হিসেবে বাঙালি বিদ্যমান তাই এই বাঙালি জাতীয়তাবাদকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসাবে দেখানো(পাশাপাশি হিন্দু বাংলার আধিপত্যের জুজু)র মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক বাঙালির আস্থাভাজন হিসাবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী দলের ভূমিকাও এখানে উল্লেখযোগ্য। এদের সাথে জামায়াত পন্থীদের আঁতাতের মাধ্যমে ধূসর অংশের একটা বড়ো সড়ো খাবলা তারা নিজেদের গ্রাসে নিতে পেরেছেন।
আওয়ামী লীগের মূলনীতির বাইরেও আরেকটি বড় কারণ হলো ভারত প্রশ্নে বাংলাদেশের নীতি। সংগত ও অসংগত নানা কারণে ভারত বিরোধিতা ও একটা বড় এলিমেন্ট ধূসর অংশে। আওয়ামী লীগের সরব/নিরব/রহস্যজনক ভূমিকা ও ভারত তোষণ এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও এখানে আলোচনার দাবী রাখে কারণ তাদের সর্বদা যুদ্ধংদেহী করে রাখার জন্য এটা চালু রাখা হয়। আর ভারতের আগ্রাসন তো দিবালোকের মতোই পরিষ্কার দৃশ্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে।
৭২-৭৫ এর আওয়ামী লীগের অপশাসন(আহমদ ছফা দ্রষ্টব্য) তৎকালীন গণমানুষের মনে যে ছাপ রেখেছে উত্ত্রাধিকার সূত্রে সেটাও অনেকেই ধারণ করে থাকে। এই অংশটিও আলোচনার দাবী রাখে।
----------------------------------------------------------------------
আওয়ামী বা জামায়াতি চরিত্রায়নের জন্য এই ধূসর এলাকাগুলোর প্রতি তাই আলো ফেলা উচিত নাহলে নেহায়েত দলীয় প্লাটফর্ম ছাড়া ব্লগ আর কিছুই দিতে পারবে না আমাদের। আর একমাত্র এভাবেই আমরা বাংলাদেশি চরিত্রের ধারেকাছে পৌঁছাতে পারবো। ২০১১ সালে এসেও যদি আমরা পার্টিজান মনোভাব না ত্যাগ করতে পারি, আওয়ামী বিরোধী/ ধর্মীয় রাজনীতি কামী মানেই জামায়াতী বা ভারত বিদ্বেষী বা সমাজতান্ত্রিক/ লীগ প্রেমী মানেই নাস্তিক বা হিন্দু বা ভারতের দালাল এই সরল সহজ সমীকরণ থেক বেরিয়ে না আসতে পারলে আমরা ওই কুয়োর মাঝে মুখগুঁজে থাকা আত্মগর্বী কুনোব্যাং ই হয়ে থাকবো আর মাঝখান থেকে লাভের গুড় ব এন পি এর ফ্যাসিবাদীরা, হিজবুত তাহরীর আর আগ্রাসী ভারত এর পিঁপড়েরা খেয়ে যাবে।
এধরণের পোস্ট সচলায়তনে আরো দেখার প্রত্যাশা রইলো।
ধন্যবাদ সবাইকে।
একটা আলাদা পোস্ট দেন না ... আরেকটু গুছায়া
খুবই গুরুত্বপূর্ণএকটা প্রশ্ন দাড়িয়ে যাচ্ছে এখানে - দলের আড়ালে মৌলবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতাকে আমরা কোন দৃষ্টিভঙ্গী থেকে নেব। সচলায়তনের এই একটা বিষয়ে আমি পুরোপুরি শান্তি খুঁজে পাই যা আর কোথাও পাইনা। আওয়ামী চরিত্র উন্মেচন করতে গেলে সাদামাটা কথায় কিংবা অল্প কথায় তা শেষ করা যাবেনা কারন দলটির ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাসের সমার্থক একটা দ্যোতনা প্রকাশ করে।
আপনার জামাত নিয়ে পোস্টের জন্য এমিডালা খুলে অপেক্ষায় থাকলাম আর তার সাথে ফ্রন্টাল লোব থাকলো সংহত - এই একটা জায়গায় আমার এমিডালা আর ফ্রন্টাল লোব কোন কন্ট্রাডিক্ট করেনি কোনদিন।
ভাইজানেরা এত্ত লেখাপড়া কইরাও এই দুইটা অযোগ্য দল করা নিয়া এত্ত মোচরামুচরি করেন দেখে খারাপ ই লাগে। দেশ রেখে দল নিয়ে টানাটানি। আপছোসসস।।।।
"ছাগুরা ভোলে না"
(হিমুর "হাতিরা ভোলে না" ডায়লগ থেকে খানিকটা পরিবর্তন করে )
কি কমু, পরের পোস্ট ব্লক খাইয়া গেছে দেইখা কইতে আইলাম, ২টা পোস্টেই ১ তারা দাগাইছি। এখন থিকা তোমার খোমা দেখলে ১ তারা দাগানি পবিত্র দায়িত্ব মনে কইরা দাগায়া যামু। মিয়া, আগের বার আরিফ জেবতিক ভায়া একটা উপদেশ দিছিল, সেইটা কান দিয়া ঢুকে নাই, তাই আইজকা এই বেগতিক অবস্থা। আবার মনে করায়া দেই, এত্ত বই টই না পইড়া একটু লোকাল বাসে উইঠা ঘুরাফিরা কর, আর বই সব চৌকির পায়া হিসাবে ব্যবহার কর, এত্ত বই পড়লে দুনিয়া দেখবা কখন মিয়া? অন্য মানুষের ধার করা চিন্তা ভাবনা দিয়া আর কতদিন ভায়া?
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
নতুন মন্তব্য করুন