বৈদেশিক সাহায্যের রাজনৈতিক অর্থনীতিঃ প্রসঙ্গ বাংলাদেশ(পর্ব ২): কেন এই দাতা তোষণ নীতি?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ২৫/০৯/২০১১ - ১০:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি যেকোন অর্থনীতির জন্যই ভয়ানক একটি ব্যাপার। আর এই ব্যাপারটি যদি ঘটে থাকে বাংলাদেশের মত একটি স্বল্পোন্নত দেশের অর্থনীতিতে তাহলেতো কথাই নেই। বাংলাদেশের বিগত সরকারগুলোর মত বর্তমান সরকার ও মুদ্রাস্ফীতি রোধে ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তাই নয়......বর্তমান সরকারের গৃহীত কিছু পদক্ষেপ আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
অর্থনীতিতে পন্যমুল্যের বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয় সরবরাহ বৃদ্ধিকে। কিন্তু বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির কারন সরবরাহ বৃদ্ধি নয় বরং কৃত্রিম সরবরাহ সংকট। দেশের বাজারে যেসকল অস্থিতিস্থাপক চাহিদার পন্য রয়েছে তার প্রায় সবকটিই কতিপয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। যারা মুনাফা সর্বোচ্চকরনের জন্য কৃত্রিম সংকট তৈরির আশ্রয় নিচ্ছে। অর্থনীতির ভাষায় এই চক্রকে বলা হয় কার্টেল। তেল, চিনি, গুড়োদুধ সহ আরো বেশ কয়েকটি পন্য এইসব কার্টেল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুই দুই বার জ্বালানীতেলের মুল্য বৃদ্ধির মত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। জ্বালানী তেলের মুল্য বৃদ্ধির ফলে পরিবহণ ভাড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি পন্য পরিবহণ ব্যয়কে বাড়িয়ে দিচ্ছে যা মুদ্রাস্ফীতিকে উস্কে দিচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হলো---কেন সরকার বার বার জ্বালানীর মুল্য বৃদ্ধি করে দেশের স্বল্প ও মধ্য আয়ের জনগোষ্ঠী এবং পুরো অর্থনীতি কে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে? উত্তর দুটো।
প্রথমত, বিশাল ভর্তুকির চাপ সামাল দিতে অপারগতা। এবং দ্বিতীয়ত, দাতাদের চাপ।
চলুন পাঠক, এই উত্তর গুলোর ভেতরের কারন অনুসন্ধান করা যাক।

জ্বালানীখাতে সরকার প্রতি বছর বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে থাকে। শ্রদ্ধেয় আনু মুহাম্মদ স্যারের বক্তব্য অনুযায়ী বাৎসরিক ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এই ভর্তুকির কারণে সরকারের কোষাগার থেকে গত সাত বছরে বেরিয়ে গেছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। গ্যাসের ভর্তুকি বাড়ানোর পেছনে প্রধান কারণ হলো বিদেশি কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তি। চুক্তি অনুযায়ী বছরে ওইসব কোম্পানীর কাছ থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকার গ্যাস কিনেছে সরকার। অথচ এর চেয়ে কম অর্থ ব্যয় করে সরকার দেশীয় প্রতিষ্টান বাপেক্স ও পেট্রোবাংলা কে শক্তিশালী করতে পারত। পারত এনার্জী রেগুলেটরি কমিশনের ভুমিকাকে আরো গঠনমুলক ও শক্তিশালী করতে। তাহলে সরকার অন্তত এই বিশাল অংকের অর্থ সাশ্রয় করতে পারত। বিশাল অংকের ভুর্তুকির ফলে ব্যয় বাড়ছে। এই ব্যয় সামাল দেওয়ার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে। সরকারের বৃহদাকৃতির ঋণ গ্রহণের ফলে দ্বিমুখী সংকট তৈরি হচ্ছে। সরকার যদি তফসিলি ব্যাংকের কাছ থেকে বেশি ঋণ করলে বেসরকারি খাতের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে যায়। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিলে ব্যাংক যদি পরবর্তী সময়ে তা তফসিলি ব্যংকের কাছ থেকে তুলে নিতে না পারে তবে নুতন টাকার সরবরাহ মুদ্রাস্ফীতিকে বাড়িয়ে দেয় (তথ্যসূত্র- প্রথম আলো)।

এইতো গেলো প্রথম কারন। এইবার দৃষ্টি দেওয়া যাক তথাকথিত উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও দাতা সংস্থা গুলোর ব্যবস্থাপত্রের উপর। দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর আমাদের অর্থনীতিতে নাক গলানো নুতন কিছু নয়। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাহায্যের শর্ত হিসেবে প্রায় অকার্যকর প্রমানিত কিছু শর্ত আরোপ করে থাকে এবং আমাদের শাসক মহল প্রায় বিনা বাক্যব্যয়ে সেগুলো মেনেও নেয়। এসব শর্তের নমুনা এইরকমঃ
• জ্বালানীর মুল্য বৃদ্ধি।
• কৃষিতে ভর্তুকি প্রত্যাহার।
• শুল্ক ও অশুল্ক বাধা হ্রাসের মাধ্যমে ক্রমাগত অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করা
• বেসরকারিকর ও নিয়ন্ত্রণহ্রাস
• বাজেট ঘাটতি কমানোর জন্য সামাজিক সেবামুলক খাতে ব্যয় সংকোচন।
আশির দশকের শুরুতে আই এম এফ ও বিশ্বব্যাংক কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচী চালু করে। ঐ সময় সাহায্যের শর্ত হিসেবে এইগুলো জুড়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ৯০র দশকে এই কর্মসুচীতে প্রবেশ করে। সামগ্রিকভাবে এটি দেশের অর্থনীতির জন্য কোন সুফল বয়ে আনেনি। জ্বালানীর মুল্য বৃদ্ধি ও কৃষতে ভর্তুকি প্রত্যাহারের ফলে বিশাল জনগোষ্টীর এই দেশে বার বার খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে। ক্রমাগত অর্থনীতিকে উদারীকরণের ফলে দেশীয় উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় হেরে উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। এতে বেকারত্ব সৃষ্টি ও ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস্রের ফলে নুতন করে কিছু মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে পতিত হয়েছে। বেসরকারিকরণ ও নিয়ন্ত্রণ হ্রাসের ফলে বাংলাদেশে কার্টেল ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়েছে। এতে মধ্যবিত্তের কষ্টার্জিত অর্থ শোভা পাচ্ছে কতিপয় ব্যবসায়ীগোষ্ঠীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এর ফল যা হয়েছে তা হলো আয় বৈষম্য বৃদ্ধি। আমারা যাত্রা শুরু করেছিলাম ০. ৩২ গিনি সহগ দিয়ে এখন এটা এসে দাড়িয়েছে ০. ৪৬৭ এ।

সামাজিক সেবামুলখাতে ব্যয় হ্রাসের ফলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজার ঢুকে পড়েছে। বাজার কখনো সম্পদের সুষ্ট বন্টন নিশ্চিত করতে পারে না। আমাদের জরাজীর্ণ শিক্ষা ও রুগ্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই তার প্রমাণ।
দেশে দেশে কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচীর নেতিবাচক ফলাফলের পর এর প্রতি অসন্তোষ তীব্র হলে আন্তর্জাতিক সুপার পাওয়ার এই সংস্থাদ্বয় এটি পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে আসে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র। এটি নুতন বোতলে পুরাতন মদের মতই। এর সাথেও যুক্ত হতে থাকে শর্তের বহর।
গত সপ্তাহে আবারো সরকার আই এম এফের শর্ত মেনে জ্বালানীর মুল্য বৃদ্ধি করল। এতে আবার অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদী মুদ্রাস্ফীতির মুখে পড়ল।
এখন প্রশ্ন হলো—কেন এই দাতা তোষণ নীতি? আমাদের নীতি নির্ধারক মহলে এমন কিছু কর্তাব্যক্তি আছেন যাদের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর হলো ‘বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা’। তাদের ধারনা বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ মানেই উন্নয়ন এবং বাংলাদেশের মত দরিদ্র্য দেশের জন্য সাহায্য গ্রহণ ছাড়া কোন উপায় নেই। কিন্তু বাস্তবে এই সাহায্য হলো একটি লুন্ঠন প্রক্রিয়া এবং দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানীকীকরণ।

যে পরিমাণ সাহায্য প্রদান করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয় প্রকৃতপক্ষে পাওয়া যায় তার চেয়ে অনেক কম। আর যেটুকু পাওয়া যায় তার অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশই তার নির্ধারিত গন্ত্যবে পৌঁছায়। এর প্রায় পুরোটাই চলে যায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, আমলা, ঠিকাদার, পেশাজীবি শ্রেণী ও আমদানীকৃত বা চেপে বসা বিশেষজ্ঞদের পকেটে।
দাতাদের এই অব্যাহত দাওয়াই মানার ফলে আমারা পেয়েছি ক্রমাগত মুল্যস্ফীতির দংশন, দুর্নীতিগ্রস্থ প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিতে চোরাকারবারিদের অসীম দৌ্রাত্ম্য। এইসব অবিবেচনাপ্রসূত ব্যবস্থাপত্র মানার ফলে সমাজে আয় বৈষম্য বেড়েছে প্রকট আকারে, মানুষের মনে সৃষ্টি হয়েছে নিরাপত্তাহীনতা। আমাদের এখন সময় হয়েছে এইরাহু চক্র থেকে বের হয়ে আসার। আসুন সবাই মিলে বৈদেশিক সাহায্য নামের পশ্চিমা দেশ ও সংস্থাগুলোর রমরমা বাণিজ্যকে “না” বলি..................

দীপাবলি।


মন্তব্য

কল্যাণF এর ছবি

অবাক হই যখন দেখি নামে সাহায্য হলেও সুদ দিতে হয় ঠিকই, এটা ব্যবসা ছাড়া আরকি? তার উপর চাপিয়ে দেয়া সংস্কারের আড়ালে তছনছ?

ফাহিম হাসান এর ছবি

কেন দারিদ্র বিমোচন কৌশল নীতিকে "নতুন বোতলে পুরানো মদ" বলছেন?

কিছু বিষয়ে একমত। তবে লেখাটাতে যুক্তির উপস্থাপনা দুর্বল লাগল।

ঢালাওভাবে কিছু কথা ক্লিশে অভিযোগ করে গিয়েছেন:

"বাজার কখনো সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে না"

আর এইধরনের বিচিত্র কথার অর্থ কী ভাই?

"অর্থনীতিতে পণ্যমূল্যের বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয় সরবরাহ বৃদ্ধিকে।"

সরবরাহ বাড়লে দাম বাড়ে ?? আজব। অর্থনীতির কোন সূত্রমতে?

প্র-চু-র বানান ভুল আর টাইপো রয়ে গিয়েছে। আপনি যে দেশের জন্য পজিটিভলি চিন্তা করছেন তা ভেবে ভাল লাগছে। কিন্তু এ ধরনের লেখার আগে অর্থনীতির প্রাথমিক পাঠটুকু নেওয়া জরুরী। এই ইস্যুতে বলার মত অনেক কথা আছে। কিন্তু এরকমভুল অনুসিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নয়।

guest_writer এর ছবি

প্রথমে বানান ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি ফাহিম হাসান ভাই। আমি যদিও অভ্র দিয়ে লিখি তারপর ও বাংলা টাইপে অভ্যস্ত না হওয়ায় লেখার সময় সাংঘাতিক সমস্যায় পড়ি। আমি আসলেই খুব দুঃখিত। কারণ, বাংলা বানান ভুল করাটা আমি নিজেও স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারিনা।

বাজার কখনো সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে না

------এটা আপনার কাছে বিচিত্র কেন মনে হচ্ছে? দেখুন, বাংলাদেশের মত ছোট একটি দেশে বাজারের আকার আসলেই সীমিত। এখানে মানুষ বেশি, তার মানে এই নয় যে বাজার বড় হবে। যে পরিমাণ মানুষ আছে তাদের মধ্যে কতজন বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে তা দেখাটা জরুরী। আমরা আমাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বাজারমুখী করে ফেলেছি। পরিণামে কি হয়ছে? ব্যাঙ্গের ছাতার মত কিন্ডার গার্টেন স্কুল আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গজিয়ে আছে। কিন্তু হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিগুলো কি মানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে পারছে?এটা ঠিক যে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষার প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু একটু পরিকল্পনা মাফিক এগুলেইতো আমারা সকলের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার মৌলিক অধিকারটুকু নিশ্চত করতে পারি।
এইতো ক'দিন আগে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলবেন। যেখানে জেলায় জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ই নেই। এখন আপনি বলুন, আগে বিদ্যালয় নাকি বিশ্ববিদ্যালয়????????
অর্থনীতিতে বাজারের ভুমিকা শক্তিশালী। কিন্তু বাজারের গঠনমুলক ভুমিকা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে আরো শক্তিশালী হতে হবে। বাজার একচেটিয়া ক্ষমতার ব্যবহার কে উস্কে দিবে ফলে জনকল্যাণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। রাষ্ট্র একচেটিয়া ক্ষমতা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। উন্নত দেশগুলোতে বিভিন্ন anti trust law আছে। বাংলাদেশে নেই। তাই এখানে কার্টেল এত শক্তিশালী হয়ে ভোক্তার কল্যাণ হ্রাস করছে।

সরবরাহ বাড়লে দাম বাড়ে----এটা অর্থনীতির একেবারে প্রাথমিক বক্তব্য। এটা যোগান বিধি নামে পরিচিত যার আলোচ্য বিষয় হলো দামের সাথে যোগান বা সরবরাহের সরাসরি বা সমমুখী সম্পর্ক।

কর্ণজয় এর ছবি

জানলাম.. কিছু জিনিষ পরিষ্কার হলো...

উচ্ছলা এর ছবি

আপনি নিজেই বলেছেন, প্রাপ্ত বৈদেশিক সাহায্য চলে যায় হাভাতে মন্ত্রী-আমলা-ঠিকাদারের ভাগাড়ে। যে উদ্দেশ্যে সাহায্য নেয়া হয়েছিল, তার দিকে দৃষ্টিপাত করার সময় এবং সদিচ্ছা নেই শকুনের দলের। আমি পুরোপুরি সহমত জানাচ্ছি।

তবে দ্বিমত এসে যায় যখন আপনি বললেন 'সাহায্যের নামে পশ্চিমারা রমরমা ব্যবসা করছে'...।

প্রথমত: সুদ ছাড়া পশ্চিমারা আমাদেরকে সাহায্য করবে, এই অবান্তর প্রত্যাশা আমাদের মনে আসে কি করে?! সুদ সমেত প্রাপ্ত সাহায্য ফেরৎ দেবার মুরোদ না থাকলে ঐ সাহায্যের নেয়ার জন্য লোল পড়ে কেন আমাদের?!

দ্বিতিয়ত: দূর্দিনে আমরা পশ্চিমাদের কাছ থেকে সাহায্য/ঋন পাই, এ ব্যাপারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ দূরে থাক...উল্টে ঋনদাতাকে 'ব্যবসায়ী' বোলে গালি দিয়ে আমরা আমাদের 'দেশপ্রেম' প্রকাশ করি।

বরং আসুন 'ঘরের শত্রু বিভিষন'গুলোকে শায়েস্তা করি সদলবলে। বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভরতা কমাতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করি।

বামপন্হী-আদর্শ কেবল পশ্চিমাদের গালি দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সরকারকে Educate করার প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠা পাক।

guest_writer এর ছবি

উছলা, ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

পশ্চিমারাতো আমদের শুধু ঋণ দেয় না কিছু অনুদান ও দেয়। সেই অনুদাগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রেই ব্যবসাটা রমরমা।
প্রথমত, যে পরিমাণ অনুদান দিবে বলে আশ্বাস প্রদান করা হয় দেওয়া হয় তার অর্ধেক বা তারও কম।
দ্বিতীয়ত, এই অনুদানগুলো তখনই ছাড় করানো হয় যখন দাতা দেশের স্বার্থ উদ্ধার হয় এমন কিছু প্রস্তাবে সাহায্যগ্রহীতা দেশ সম্মত হয়। যেমন ধরুন, তদের রপ্তানিযোগ্য কোন পণ্য আপনাকে আমদানি করতে হবে। দেখা যাবে মিলিয়ন ডলার মূল্যের সেই সাহায্য পাবার জন্য আপনাকে বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় মেটাতে হচ্ছে। যদিও তৃতীয় কোন দেশ থেকে আমদানি করলে আপনি আরো কম খরচে পন্যটি ক্রয় করতে পারতেন।

দুর্দিনে পশ্চিমাদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার কথা বলছেন...তাহলে আসুন আপনাকে একটি গল্প শোনাই............
স্বধীনতার পরপর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের কথা আমরা সবাই কম-বেশি জানি। ঐসময় প্রায় বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দেয়। একেতো যুদ্ধবিদ্ধস্ত অর্থনীতি তার উপর প্রবল বন্যায় বাংলাদেশের ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের এককভাবে দুর্যোগ মোকাবেলার মত খাদ্য মজুদ ছিল। ঐসময় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সরকারের কাছে খাদ্য সাহায্য চায়। চুক্তি স্বাক্ষরের ঠিক আগমূহুর্তে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ কে খাদ্য সাহায্য দিতে অস্বীকৃতি জানায় এই বলে যে কিউবার সাথে অর্থনৈতিক লেনদেন আছে এমন কোন দেশকে সাহায্য প্রদান তাদের সংবিধান বিরোধী। সেই সময় বাংলাদেশ কিউবাতে পাট রপ্তানি করত।
ঠিক একই সময়ে বিশ্বব্যাংক ও আই এম এফ তাদের স্বাক্ষরিত সাহায্য প্রদানে সময় ক্ষেপণ শুরু করে অনন্য এক শর্ত প্রদানের মাধ্যমে। শর্তটি ছিলো, বাংলাদেশ পুর্ব পাকিস্তান থাকাকালীন সময়ে পশ্চিম পাকিস্তান তাদের প্রকল্প অর্থায়নে যে সাহায্য নিয়েছিল বাংলাদেশ যেন সেগুলোর দায় ভাগাভাগি করে।

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য পরে সাহায্য ছাড় করেছিল। তারা সাহায্য ছাড় করার পর আই এম এফ আর বিশ্বব্যাংকও আর দেরি করেনি। তবে সাহায্য সময়মত পাওয়া গেলে দুর্ভিক্ষ এড়ানো সম্ভব হতো বলেই তৎকালীন চিন্তাবিদদরা মত দেন।

বিদেশি সাহায্য নির্ভরতা কমানোর জন্য কি করা যায় তা আলোচনার জন্যইতো আমার এই লেখা।আসুন আমরা সবাই মিলে করনীয় ঠিক করি।

দীপাবলি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।