লাগামছাড়া গতিতে গাড়ী চলেছে জার্মানির সুবিখ্যাত মোটরওয়ে দিয়ে লোয়ার সাক্সনি এলাকায়। পাহাড়, নদী, বন, উপত্যকা পাড়ি দিয়ে ক্ষুদে এক ঝরাপাতা ছড়ানো রাস্তায় ঢুকে ছোট্ট শহর বের্গেন পেরিয়ে আমরা চলেছি ইতিহাস কুখ্যাত বের্গেন-বেলসেন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। ইতিহাসে দগদগে ক্ষত নাৎসি অধিকৃত জার্মানিতে যুদ্ধবন্দীদের মরণফাঁদ সৃষ্ট ও পরিচালিত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলোর অন্যতম এই স্থানে অন্তত সত্তর হাজার তরতাজা প্রাণ ঝরে পড়েছে ২য় বিশ্বযুদ্ধ বছরগুলোতে, আমাদের আজকের যাত্রা ইতিহাসের সেই গুপ্ত কালো অধ্যায়ের পানে।
সুমসাম চারিদিক, উঁচু গাছের সমারোহ, গায়ক পাখিরাও নিস্তব্ধ হয়ে গেছে মধ্যদিনের সূর্যের তেজে, চারিদিকে প্রাচীর ঘেরা এলাকা। খোলা গেট পেরিয়ে সামনের দিকে চোখ যেতেই গোটা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল- গাছের বেষ্টনী পেরিয়েই দৃষ্টিপথে মধ্যম আকৃতির ফাঁকা মাঠমত জায়গা, তার ওপারেই আবার সীমানা প্রাচীর, এই দৃশ্যটুকুই মনে করিয়ে দিল সেলুলয়েডের ফিতেয় ২য় বিশ্বযুদ্ধের গণহত্যা ও বন্দীশিবির নিয়ে তৈরি শিল্ডার্স লিস্ট, ডায়েরি অফ অ্যানা ফ্রাঙ্ক, বয় ইন দ্য স্ট্রাইপড পাজামা, লাইফ ইজ বিউটিফুল, দ্য রিডার ইত্যাদি চলচ্চিত্রগুলোর দৃশ্যবিশেষের কথা। ঠিক একই রকমের স্থাপনা, খানিকটে ফাঁকা জায়গা, বেড়া বেষ্টিত। কেবলমাত্র জন কোলাহল নেই, বন্দীশিবিরের ঘরগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে অনেক যুগ আগেই, বিদ্যুৎচালিত কাঁটাতারের বেড়ার স্থান দখল করেছে কংক্রিটের সীমানা প্রাচীর।
অন্তর্দৃষ্টিতে স্পষ্ট দেখতে পেলাম হাজার হাজার যুদ্ধবন্দী সারি বেঁধে দাড়িয়ে আছে হুকুম তামিলের অপেক্ষায়, কঠোর পরিশ্রমের সাক্ষর তাদের পোশাকে, মুখে, নীরব চাহনিতে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ কেউ বাদ নেই সেই অভিশপ্ত লাইনে। লাশের স্তূপ পড়ে আছে অদূরেই, পোড়ান হচ্ছে বন্দীদের কাপড়-জুতো, হয়ত মৃতদেহও, জীবন্ত বিভীষিকা, ধরণীর বুকে কল্পকথার নরক নামিয়ে এনেছে মানুষের রূপধারী মূর্তিমান পিশাচেরা।
মাঠের আগেই এক স্মৃতিফলক, তাতে ক্ষুদে নুড়িপাথরের সমারোহ। দর্শনার্থীরা সমর্পণ করেছে মৃতদের স্মৃতিতে, লেখা রয়েছে স্মৃতিফলকটি ১৯৩৯-১৯৪৫ পর্যন্ত এই বধ্যভুমিতে নিহতদের স্মরণে নির্মিত।
১৯৩৯ সালে সালেই এই কুখ্যাত স্থাপনার যাত্রা শুরু হয় যুদ্ধবন্দীদের বন্দীশিবির হিসেবে, যেখানে আনা হয়েছিল ফ্রেঞ্চ, পোলিশ, বেলজিয়ান, রাশান বন্দীদের। কিন্তু বন্দীশিবিরের যথাযথ সুবিধা ছিল না বিন্দুমাত্র- অপ্রতুল খাবার, কনকনে ঠাণ্ডা, আদিকালের বাসস্থান। পরিণতিতে ১৯৪১ সালের জুলাইতে পাঠানো ২০,০০০ রাশান বন্দীর ১৮,০০০ই ঢলে পড়েন মৃত্যুদেবতার কোলে। ১৯৪৩ সালে হিটলারের অন্যতম দোসর হাইনরিখ হিমলারের নির্দেশে এই বন্দীশালাকেই পরিণত করা হয় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে, আনা হয় হাজার হাজার ইহুদী ও রাশান বন্দীদের। এদের অনেককেই নাৎসি সরকার ব্যবহার করে যুদ্ধকালীন বন্দী বিনিময়ের হাতিয়ার হিসেবে, অন্যান্য দেশে আটককৃত নাৎসি বন্দীদের বদলে মুক্তি দেয়া হয় অল্প সংখ্যক ডাচ ইহুদী বন্দীদের। পরবর্তী বছরগুলোতে এমনভাবেই চলতে থাকে প্রবল দমন পীড়ন।
১৯৪৫ সালের ১৫ এপ্রিল কানাডা-ব্রিটিশ যৌথবাহিনীর হাতে এই ক্যাম্পের পতন ঘটে, তখনো ৬০,০০০ বন্দীকে জীবিত অবস্থায় পায় মিত্রবাহিনী, যাদের অধিকাংশই ছিলেন মারাত্নক অসুস্থ আর চত্বরে ছিল মাটি চাপা দেবার অপেক্ষায় ১৩,০০০ শবদেহ। এক স্মৃতি ফলকে উল্লেখিত আছে কারা মূলত এই জান্তব আক্রোশের শিকার হয়েছিলেন, তাতে মূলত দেখা যায় বের্গেন-বেলসেন ক্যাম্পে নিহত ৭০,০০০ বন্দীর ৩০,০০০ ছিলেন ইহুদী, প্রায় সমসংখ্যক রাশান, সেই সাথে প্রচুর সমকামী, জিপসি আর নাৎসি বিরোধী স্বদেশপ্রেমী জার্মানরা( কোন এক অদ্ভুত কারণে ইহুদীদের সাথে সাথে জিপসি ও সমকামীদের উপরেও অত্যাচারের খড়গ চালিয়েছিল হিটলার আর তার রক্তপিপাসু বাহিনী), এই বধ্যভূমিতে বলি হওয়া সবচেয়ে বিখ্যাত বন্দী ছিলেন বিশ্বের ইতিহাসে জনপ্রিয়তম ও
সর্বাধিক পঠিত রোজনামচার লেখিকা কিশোরী অ্যানা ফ্রাঙ্ক।
পাঠক, মনে আছে তো অ্যানা ফ্রাঙ্কের কথা? সেই যে আমাদের ষষ্ঠ শ্রেণীর ইংরেজি পাঠ্য বইতে উল্লেখ ছিল তার ও তার অতিবিখ্যাত ডায়েরী কিটির কথা। জন্মগত ভাবে জার্মান হলেও নাৎসি বাহিনী ক্ষমতায় আসার পর ১৯৩৪ সালে হল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডামে চলে আসেন তারা, নিজ দেশ ছেড়ে আসার একটাই কারণ ছিল তারা ছিলেন পারিবারিক ভাবে ইহুদী। যদিও ইতিহাসের নথিপত্র ঘেটে দেখা যায় তাদের পরিবার ছিল অতি মুক্তমনা, কোন ধর্মের সাথেই তাদের নিবিড় বন্ধন ছিল না বরং তাদের বন্ধুতালিকায় ছিল নানা জাতির নানা ধর্মের লোক। বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অ্যানা ফ্রাঙ্ক ও তার পরিবার ১৯৪২ সালের পরপরই দখলদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে আত্নগোপন করেন। এই বন্দিজীবনেই ১৩তম জন্মদিনে উপহার হিসেবে পাওয়া ডায়েরীতে( যার নাম অ্যানা দিয়েছিলেন কিটি) তার জীবনের দিনলিপি লিখে রাখা শুরু হয়। সেই আবদ্ধ জীবনের দুঃসহ অভিজ্ঞতা, কৈশোরে ডানা মেলার উত্তাল রঙিন দিনের বদলে ভ্যাঁপসা আঁধার ঘেরা গুমোট জীবন। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস চলে যায় আপন ধীর অবশ্যম্ভাবি গতিতে গড়িয়ে, অ্যানার রোজনামচার পাতায় লিপিবদ্ধ হতে থাকে চারপাশের অভিজ্ঞতা।
প্রশ্ন করেছেন তিনি জগতের বড়দের কাছে- মানুষ কেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে? কচি মনের এত সরল সেই প্রশ্নের উত্তর কি আজো জানা আছে আমাদের রাষ্ট্রনায়কদের! ১৩ বছরের এক কিশোরী ধর্ম সম্পর্কে কতটুকুই বা জ্ঞান রাখে? মসুলমান, হিন্দু, খ্রিষ্টান, ইহুদীর সে বোঝেই টা কি! শুধুমাত্র ইহুদী ধর্মাবলম্বী পরিবারে জন্মের কারণেই যে তাদের এই নিষ্ঠুর হেনস্তা এটাই তাকে করে তোলে আরও দুঃখী, সংকুচিত। বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ের নানা ঘটনা, মাসের পর মাস একঘেয়ে ধুসর জীবনযাত্রা, বনের পশুর মত গুহার গভীরে লুকিয়ে কেবলই ধুঁকে ধুঁকে বাঁচার চেষ্টার মাঝেও হঠাৎ আলোর ঝলকানির মত উঁকি দিয়ে যায় কৈশোর প্রেম। এভাবেই ছোট ছোট আবেগ মোড়া ঘটনায় ভরে উঠতে থাকে ডায়েরীর পাতা ১৯৪৪ সালের ১ আগস্ট পর্যন্ত, এর পরপরই গুপ্তপুলিশ গেস্টাপোর হাতে বন্দী হয় ফ্রাঙ্ক পরিবার, থেমে যায় ডায়েরী কিটির তরতর বেগে ছুটে চলা।
এরপরে নানা বন্দীশালা হয়ে অ্যানা ফ্রাঙ্ক, তার মা এডিথ ফ্রাঙ্ক ও বোন মার্গট ফ্রাঙ্কের আগমন ঘটে বের্গেন-বেলসেন বধ্যভূমিতে। সেখানে কোন ডায়েরী ছিল না বিধায় সেই নিষ্ঠুর পঙ্কিল দিনগুলোর করুনঘন বর্ণনা আমাদের হাতে নেই কিন্তু একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর মাধ্যমে জানা যায় সবচেয়ে কমবয়সী বন্দীদের একজন অ্যানা বিশেষ ব্যাথাতুর ছিলেন শিশুবন্দীদের গ্যাসচেম্বারে নিয়ে যাবার ঘটনায়। চরম নিষ্ঠুরতায় প্রত্যেকেই নিয়োজিত ছিলেন পাথর ভাঙ্গা ও পরিবহনের অত্যন্ত ক্লান্তিকর কায়িকশ্রমের কাজে। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেকেরই মাথা কামানো থাকত আর বন্দী নম্বরটি হাতের এক জায়গায় ছিল উল্কির মাধ্যমে খোদাই করা।
১৯৪৫ সালের মার্চে টাইফাস রোগ এই শিবিরে ছড়িয়ে পড়ে মহামারী আকারে, শেষ পর্যন্ত এই রোগই পৃথিবী থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় সবচেয়ে বিখ্যাত রোজনামচার লেখিকাকে, যার বয়স হয়েছিল কেবল ১৫ !
সেই সাথে অন্যভুবনে যাত্রা করেন অ্যানার বোন মার্গটও। মহাযুদ্ধের করালগ্রাস থেকে কেবল বেঁচে ফেরেন বাবা অটো ফ্রাঙ্ক,তিনিই আমস্টারডামের সেই বন্দীশালা থেকে উদ্ধার করেন মেয়ের ডায়েরী ও অন্যান্য স্মৃতিবহুল সংগ্রহ। মনের গহনে তার আশা ছিল হয়ত বেঁচে আছেন অ্যানা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা, তাদের হাতেই তুলে দিতে চেয়েছিলেন সেই স্মারকগুলো।
আমস্টারডামের সেই বাড়ী, সেই আঙ্গিনা, সেই বাদাম গাছ অবলোকনের সৌভাগ্য হয়েছিল কবছর আগেই আর আজ এইখানে আমরা এক অভিশপ্ত বন্দীশিবিরে সেই কিশোরীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের আশায়। এইখানে কিছুদিন আগে অ্যানা ও তার বোন মার্গটের প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে কালো রঙের এক এপিটাফ বসিয়ে গেছেন ভক্তরা, যেখানে সাদা হরফে খোদাই করা রয়েছে তাদের নাম।
অদূরেই ঘাসে ছাওয়া এলোমেলো ছড়ানো কিছু সবুজের চিহ্ন, সেখানে আরো এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানাকৃতির ফ্রেমে বাঁধানো সাদাকালো আলোকচিত্র, সেই বিভীষিকায় নিহত অনেকের ছবি।
বড় এক স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে যে সমস্ত শবদেহ সমাহিত করা হয়নি তাদের উদ্দেশ্যে। অদূরেই আকাশছোঁয়া অবেলিস্ক, ফুলের তোড়া ইতস্তত, ইদ্দিস আর হিব্রু ভাষায় পাথর কুঁদে লেখা নানা বাণী। বধ্যভূমিটির একপ্রান্তে সুউচ্চ ক্রুশ, তার পাশেই ছোট ছোট প্রস্তরস্তম্ভ।
নারকীয় ঘটনাগুলোর ৬৫ বছরপরও এই রোদেলা গ্রীষ্মের মাঝেও জায়গাটিকে কেবলই অভিশপ্ত মনে হয়, যেন কান পাতলেই শোনা যাবে সেই বিদেহি শহীদদের আর্তনাদ, মানুষ জান্তব আক্রোশ চরিতার্থের সকরুণ কাহিনী।
ফেরার পথে মূল ফটকের পাশে এক সংগ্রহশালায় দেখানো হচ্ছে সেই সময়ের কিছু ভিডিও ফুটেজ, কিন্তু এই পরিবেশে আর দুঃখ অবলোকন করার ভার নিতে চাইছে না মন, এক ধরনের চুপিসারেই বের হয়ে এলাম সেই নিঠুর বধ্যভূমি থেকে।
সান্ত্বনা এটাই- একটা সময়ে ইতিহাস ঠিকই অত্যাচারিতের সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে, সেই নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞের হোতাদের নাম আজ বিস্মৃত প্রায়, নিজ দেশ জার্মানিতেও (হিটলারের ক্ষেত্রে অস্ট্রিয়া) তারা অশ্রুত, কিন্তু ১৫ বছরের কিশোরী অ্যানা ফ্রাঙ্ক আজ বিশ্বের সকলের হৃদয় জুড়ে অমর।।
I don't think of all the misery, but of the beauty that still remains... My advice is : "Go outside, to the fields, enjoy nature and the sunshine, go out and try to recapture happiness in yourself and in God. Think of all the beauty that's still left in and around you and be happy!" ....Anne Frank
মন্তব্য
মানুষ মানুষকে যে কীভাবে পরিকল্পনা করে, ফ্যাক্টরিতে মুরগি প্রসেসিং-এর মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্টাইলে দলে দলে খুন করে সুখ পেতে পারে - তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইহুদি গণহত্যার নিদর্শন না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
অ্যানা ফ্রাঙ্কের স্মৃতি অমর থাকুক।
-----------------------------------------------------------
স্নান স্নান চিৎকার শুনে থাকো যদি
নেমে এসো পূর্ণবেগে ভরাস্রোতে হে লৌকিক অলৌকিক নদী
বিশ্বাস করা যায় না । এত প্রমাণ দেখেও বিশ্বাস হয় না মানুষ এমন নিষ্ঠুরতা দেখাতে পারে। হয়ত সত্য বড় নির্মম।
facebook
পোস্টের শিরোনামটা কী একটু বদলে দেওয়া যায়? "আনা ফ্রাঙ্কের বধ্যভূমি" - কিঞ্চিৎ মিসলিডিং মনে হচ্ছে।
ছবিগুলো সুন্দর এসেছে, তবে লেখায় তাড়াহুড়ো ছাপ আছে। যেমন: বর্ণনায় একই বিশেষণ একাধিকবার আসছে।
কখনো ঘরোয়া ভঙ্গীতে বলা গল্পের মাঝে একটা কেতাবী শব্দ কানে খট করে লাগে। উদাহরণ:
বর্ণনায় তাই আরেকটু বৈচিত্র আসলে লেখা আরো সুখপাঠ্য হবে। যে শব্দগুলো ঘুরেফিরে আসছে সেগুলোকে বদলে দিন। লেখায় স্থানীয় কিছু শব্দ, সাংস্কৃতিক নিদর্শন বা আটপৌরে জীবনের গল্প উল্লেখ করলে বাড়তি স্বাদ আসবে। লেখার প্যারাগুলোর মাঝে আরেকটু ফাঁক থাকলে পড়তে আরাম হবে।
আপনার ভ্রমণ কাহিনিগুলো গোগ্রাসে গিলি। "যাপাতার ম্যানগ্রোভ বনে" - পোস্টের লেখা ও ছবি সবচেয়ে ভাল লেগেছে। সেই তুলনায় এই পোস্টটাতে মনে হল ফাঁকি দিয়েছেন
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আপনার মনোযোগি পাঠ সবসময়ই মুগ্ধ করে... এখানে জানিয়ে গেলাম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনি খুব মনযোগী পাঠক ফাহিম ভাই। প্রথমেই সব দোষ ঘাড় পেতে নিচ্ছি, উইকএন্ডের রাত ভোর করে পোষ্ট করেছি তো, তাড়াহুড়োর অনেক ছাপ থেকে গেছে। ভাল থাকুন সবসময়।
তবে এইধরনের জায়গা নিয়ে লিখতে বসলে মন এত খারাপ হয়ে যায় পরের দিকে শব্দ গোছানোর দিকে মনোযোগ থাকে না, খুব কষ্ট লাগতে থাকে।
facebook
লিখাটা পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো, কিন্তু কিশোরী অ্যানা ফ্রাঙ্কের হাসিমাখা ছবিটা আর কথাগুলো পড়ে ভালো লাগছে।
এই ক্যাম্পগুলো এখনো এতটাই বিবর্ণ আর কষ্টমাখা, ভিতরে যেতেই শরীর শিউরে ওঠে। আমিও নিজের অনুভূতির কথা এখানে গুছিয়ে লিখতে পারি নাই, খুব বেশী খারাপ লাগছিল।
facebook
আমার মাঝে একটা অন্য ধরনের ভাবনা এল। সেটাই আগে বলি। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে নেওয়াটা এক ধরনের অভ্যাসে পরিনত হয়ছে। যেদিন পত্রিকা বন্ধ থাকে সেদিন সকালটা কেমন জানি একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
ইদানিং কিন্তু প্রতিদিন আপনার পোস্ট দিয়েই সচলায়তন শুরু করছি। হয়ত এটাও একদিন একধরনের একটা এক্সপেক্টেশন তৈরি করবে। সম্ভবত ইতোমধ্যে তৈরি হয়েও গিয়েছে। জানিনা যেদিন আপনার নতুন পোস্ট থাকবেনা সেদিনটা আমার অনুভূতি কেমন হবে। অনুরোধ করব সেদিনটা সাদামাটা ভাবে দুটো লাইন লিখে হলেও একটা পোস্ট দিয়ে দিয়েন।
সেই কবে ছোট বেলায় 'অ্যানা ফ্রাঙ্ক' এর ডায়েরীর কথা পড়েছি। আজ আপনি হাতে ধরে স্মৃতির সেই বধ্যভূমিতে পৌঁছে দিলেন। খুব ভাল লাগছে। এই ভাল লাগায় এতই আপ্লুত যে ছবি বা পোস্টের গুনাগুণ বিচারের মুড হারিয়ে ফেলেছি।
মাফ করবেন, অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম, হয়ত বয়সের কারনেই।
প্রৌঢ়ভাবনা
অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপনার এমন উৎসাহদায়ী মন্তব্যের জন্য। আশা রাখি আপনের এমন প্রত্যাশার মান রাখতে পারব।
তবে প্রতিদিন তো সচলে লেখা পোষ্ট করা হবে না, সেই সাথে নীড়পাতায় লেখা দেবার কিছ বাধ্যবাধকতাও আছে। তবে পুরনো লেখাগুলোয় আপনের মন্তব্য পেলে খুব খুশী হব। ভালো থাকুন সবসময়--
facebook
আপনে যান নাই কোথায়? সেইটার একটা লিস্ট চাই
পোস্টে জাঝা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কঠিন কাজ, ঘনাদা থুড়ি অণুদা.. লিস্ট লিখে শেষ করা যাবে তো?
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আরে ধুর মিয়াঁ ভাই ! সে লিস্টি বিশাল, যায় নাই এমন জায়গায়ই এত বেশী যে বলা যায় সব বাকীই আছে। সেই সাথে আছে বুদ্ধমূর্তির সাথে ছবি তোলার ব্যাপারটাও আপনি ছিলেন কোনহানে নজু ভাই, মাঝখানে দেখি লাপাত্তা!
facebook
জীবনে কিছুই দেখা হলো না। না দেখা হলো পর্বতমালা, সিন্ধু, না দেখা হলো ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু।
লেখা
হবে হবে, স্বপ্নগুলো ধরে রাখুন কেবল- সময়ের সাথেই সব হবে
facebook
আমার দেখতে যাওয়ার দরকার নাই! ( জার্নি কষ্টসাধ্য = আঙ্গুরফল টক )
বরং ই-ট্যুর অনেক ভালো...
আপনার লেখার একটি বৈশিষ্ট্য - যা আমার কাছে উপভোগ্য মনে হয়েছে, সেটা হলো- লেখার বিষয়ের সাথে আপনার সংলগ্নতা। আপনার এই সংলগ্নতা লেখাটিকে বস্তুগত অবস্থান থেকে আরো একটু গভীরে নিয়ে যায়। আমাদের চিন্তা, বোধ আর ভাবনার ভেতরে লেখার অস্তিত্বটাকে একটু শক্ত জমির উপরে দাড় করিয়ে দেয়।
যেমন 'অবলোকন' শব্দটি।
ফাহিম অবশ্য বললেন উল্টোকথা। এই শব্দটিকেই তিনি বললেন কেতাবী।
এটি আমার কাছে মনে হয়েছে - বিষয়ের সাথে সংলগ্নতা বলতে আমি যেটা বুঝাতে চাইছি সেটি।
অবলোকন এবং দেখা সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি মানসিক অবস্থান।
আমরা অনেককিছু দেখি... কিন্তু সব দেখাতে অভিজ্ঞতা লাভ করি না।
অবলোকন সেই দৃষ্টি প্রক্রিয়া - যা শুধু চোখেই দেখি না... তা চিন্তা এবং মনকে একটি অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেয়।
আমি যখন এই লাইনটি পড়ছিলাম আমিও তখন তাকিয়ে আছি বাদাম গাছটির দিকে। কিন্তু ঐ গাছটিতো আর শুধু একটি গাছ নয়- গাছটি মনের ভেতরে একে যাচ্ছিল অ্যানা ফ্রাঙ্কের জীবনের সেই পাষাণ মূহূর্তগুলোকে... যেন আমি আর দর্শক নই- ঐ বিবশ ক্ষরণের আমিও এক সাক্ষ্য।
অবলোকন.. শব্দটার ব্যবহার আমার কাছে এমনই মনে হলো- আপনার লেখায়...
অনেক ধন্যবাদ কর্ণজয় দা। এই লেখাটির সময়ে নানা কারণে মনোযোগ বিক্ষিপ্ত ছিল। তবে ফাহিম ভাই অন্য যে দুটি জায়গার কথা বলেছেন তা কিন্তু আমার বেশী রাতজেগে লেখার ফলই হবে, তাই ঠিক করে দিয়েছি। অবলোকন শব্দটা আমার কাছে ঠিক সেই জিনিসটিই প্রস্ফুটিত করে যা আপনি বুঝিয়েছেন।
অফ টপিক- আপনের সচল নাম কর্ণজয় সম্পর্কে একটু জানতে চাইছিলাম, মানে এর শানে নুজুলটা, কর্ণ তো আমার মতে মহাভারতের আসল নায়ক, তাকে জয়ের ব্যাপারটা কি !
facebook
অফ টপিক -
কর্ণজয়= নির্বাণের আকাংখা...
কর্ণের ছোট্ট একটা অভিমান ছিল এই পৃথিবীর জীবনে। এই অভিমান কুন্তী মানে- তার মাকে ঘিরে।
বাকি আর সবই তার কছে ছিল... পথ চলার রেণুময় ধুলোর মত।
কিন্তু এই অভিমানটুকু...
সে ভুলে যেতে চেয়েছিল-
পারে নি।
facebook
এরে সচলে আনছে কে???
শালার, আমি পাশের বাড়িতেই বেড়াইতে পারি না!!! পেটে জেদ জমতে জমতে এমন অবস্থা হইছে যে, যে কোন সময় পেট ফেটে মরে যেতে পারি। যদি সেরাম কিছু হয়, তাইলে আমার মরার জন্য তারেক অনু নামের সৃষ্টিছাড়া ঘুরনেওয়ালাটাই দায়ি থাকবে। কথাটা এখানে জানিয়ে গেলাম।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আমার কুন দোষ নাইক্যা!
এক কাজ করেন করা যায়, আপাতত আশে পাশে দিয়েই শুরু করেন, তারপর একসময় দেখা হয়ে যাবে কোন পথের বাঁকে।
facebook
দুঃখ হয়। আমাদের দেশেও কত শত অ্যানা ফ্রাংক-কে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নারকীয় যন্ত্রণা সয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল, জার্মানীতে হিটলার, গোয়েবল্স্রা ঘৃনিত, আর আমাদের দেশের হিটলাররা আজ অনেকের কাছে মহান নেতা, জাতীয় বীর।
আর আলো চাই, চাই সচেতনতা, চাই জ্ঞান
facebook
প্রতি
'টো টো কম্পানি'র CEO অণু,
আবেগময় অত্যন্ত সুন্দর এই পোস্টের জন্য ধন্যবাদ দিয়ে আপনাকে ছোট করব না। বর্ণনার honesty মন ছুঁয়ে গেল।
ইতি,
'টো টো কম্পানি'র চুনোপুটি ম্যানেজার উচ্ছলা
'টো টো কম্পানি'র স্বঘোষিত চুনোপুটি ম্যানেজার উচ্ছলাকে সমস্ত দায়দায়িত্ব ও পর্বতপ্রমাণ ঋণসহ (ঘোরাঘুরির বাজেট) টো টো কম্পানি'র CEO ( এই পদ শুনলেই পালাতে ইচ্ছে করে ) করার সুপারিশ করা হচ্ছে।
---
টো টো কম্পানির একনিষ্ঠ ভবঘুরে
facebook
খুব ভালো লাগলো ছবি এবং লেখা। কর্নজয়ের মন্তব্যর সাথে সহমত। চমৎকার লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা ।
facebook
সুন্দর লেখা এবং ছবি। মন খারাপ হলো পড়ে। তবে এক দিক থেকে চিন্তা করলে অ্যানা ফ্রাঙ্ক এর মৃত্যু হয়তো সার্থক। কিন্তু আমাদের দেশের অ্যানা ফ্রাঙ্কদের কথা কেউই ঠিক ভাবে জানলোনা, বুঝলোনা।
কোন মৃত্যুই মনে হয় সার্থক হয় না। সেই মানুষটি তো আর জীবন উপভোগ করতে পারল না।
facebook
এটা না পড়ে পারলাম না ভাই...
facebook
অণু, শুভেচ্ছা জানবেন। পোস্ট টি ভালো লেগেছে।
অনেক ধন্যবাদ।
facebook
_____________________
Give Her Freedom!
facebook
কোনো এক জন্মদিনের উপহারে পেয়েছিলাম এ্যানা ফ্রাঙ্কের ডায়রীটা। কতবার যে পড়েছি কিশোরকালে আর হু হু কান্নায় ভেসে গেছি। আজকে পুরো বধুভূমিটা থেকেই ঘুরিয়ে আনলেন। অঠচ কী আশ্চর্য্য একবারো চোখে জল এলোনা। বরং শ্বাস বন্ধ করে তথ্যগুলো মগজে পুরে নিলাম।
আর,
সব শেষে এসে এ্যানার মিষ্টি মুখটা দেখে আর তার লেখা দু ছত্র পড়ে গলায় আটকে থাকা মন খারাপের পাথরটা সরে গেল।
যুগে যুগে এ্যানারাই কালের সাক্ষি হয়ে থাকে আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তবু, আমরা কি কিছু শিখি? আজো দেশে দেশে ধর্ম, আর স্বার্থের কারনে যুদ্ধ লেগে আছে। কে জানে আজো কোথাও কোনো এ্যানা গোপনে বসে বসে লিখছেনা তার করুন কাহিনী! এমন করেই হয়তো হিটলারের অত্যাচারের চিহ্ণের ছবি/ গল্প আজকের অণুর মত অন্য কোন ওণু দেখাবে/ শোনাবে আরো ষাট বছর পরে, তথাকথিত সভ্য মানুষদের।
অণুদার জন্য অনেক শুভেচ্ছা।
খুব গুছিয়ে নিজের অনুভূতি জানালেন আপা, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আশা করি এমন পরিণতি যেন না হয় অন্য কারো, এ বড় কষ্টের গল্প, বড়ই লজ্জার গল্প।
facebook
অণু তুমি লম্বা আছ বেশ তাই অনেক ধন্যবাদ দিলেও ছোট হয়ে যাওয়ার খুব একটা ভয় নাই। চমৎকার লেগেছে বরাবরের মত, চলুক।
facebook
আপনার লেখায় ঘাড় ঝুকাইতে ঝুকাইতে এখন আমার ঘাড় পারমানেন্ট ডিফরমেশনে চলে গেছে প্রায়। আপনি আসলেই অসাধারণ অণু ভাই এবং নিত্য আপনাকে আপনার থেকে ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে আবিষ্কার করছি।
আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি আমি শেষ করি নাই। আসলে শেষ করতে পারি নাই। সেই পরিমাণ সহ্যশক্তি সেই সময় আমার হয়নি। বইটা আছে। কিন্তু এমন একটা জিনিস এইভাবে শেষ হয়েছে সেটা ভাবতেও অনেক কষ্ট লাগে। তাই ধরি না। আপনার লেখায় আনার কথা মনে হওয়াতে প্রথমে ঢুকতে চাইনি। কিন্তু পারলাম না। সেই বর্বরতার চিহ্নগুলো দেখলাম খুটিয়ে খুটিয়ে যেখানে মানুষ তার সবচেয়ে কুৎসিত নৃশংস রূপ দেখিয়েছে।
অতীত
ঘাড় ঠিক রাইখেন ! ঐটা ছাড়া গতি নাই
facebook
ঘাড় ঠিক রাইখেন ! ঐটা ছাড়া গতি নাই
facebook
ভালো লাগল...একটু কষ্ট কষ্ট লাগছিল অবশ্য
সত্য
facebook
যথারীতি চমৎকার!
খুব অল্প সময় হাতে করে নেদারল্যান্ড গিয়েছিলাম। নিষিদ্ধ পল্লী, টিউলিপ শো, ক্যানাল ট্যুর, ভ্যান গগ মিউজিয়াম এগুলো দেখতে দেখতেই সময় চলে গেল। শুধুমাত্র আনা ফ্রাঙ্কের বাড়ীটা দেখেছিলাম, অল্প একটু মওকা মিলেছিল ভিতরে ঢোকার। আহা, এই বধ্যভূমি দেখে চোখে পানি আসছে আবার পানি শুকিয়েও যাচ্ছে, ক্ষোভে!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
খুব সুন্দর করে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন রোমেল ভাই ( আচ্ছা, ঐ মানে নিষিদ্ধ পল্লী নিয়ে লিখে ফেলেন না কিছু একটা)
facebook
নতুন মন্তব্য করুন