নলটোনা ঘাস এর মত সবুজের একমুঠো দিয়েছিলে নোলকের তীব্র ঘ্রাণ;
উত্তুরে বাতাস তুমি, দখিনের হাওয়ার মত প্রকৃতির অফুরান অভিধান
জেনেছিলে, আর তার ভাজ খুলে নিরাকার বেঁধেছিলে কোন এক রমণীয় সুর;
মাধবীলতার বনে মাধবীর মত তুমি - তুমি আর তুমিময় একটি দুপুর
একসাথে কাটানোর পর - প্রজাপতি সময়ের ডানা জুড়ে এসেছিলো নীল রাত;
রঙ্গনের রঙ নিয়ে মেহেদীর আলো মাখা পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াবতী হাত
তার, কোন এক লয় নিয়ে বোশেখের মেঘবোনা সুবাসিত খোঁপা খুলে বারবার
ছুঁয়ে গেছে বিপরীতে বসে থাকা মোহহীন চৈত্রের হৃদয় - দাবদাহ; আর তার
ফাগুনের ফেলে আসা আমলকী কেতকীর পলাতক মাঘ-মাস - কুয়াশা জীবন।
জাফরান ঢেউ নিয়ে সব নদী জলে ভাসে - জলজ প্রদাহে তার উচাটন মন
ক্রমাগত তীরে এসে ভেঙে দেয় বাঁধভাঙা বাধ - অফুরান নদীটির মত তুমি
হেসেছিলে - ভেঙেছিলো পাখীদের বিকেলের ঘুম; কপোলের দীঘল মসৃণ ভূমি
জুড়ে খেলা করে ছায়া, তার মাঝে দীঘির মতন ঘন তার দুটি চোখ - চোখ জুড়ে
ভিড় করে এসেছিলো পলান্ন আকাশ - আকাশের মত করে একদিন প্রাণ ভরে
ভেঙেছিলো লজ্জাবতী বুকে সুপ্রাচীন যত ভয় - একদিন খুব করে বলেছিলে
কথা সব - দিয়েছিলে নীরবতা যত - আজো তার গভীরতা কবিতার অন্ত্যমিলে
তবু খুঁজে পাই জানি; জানি আজো তোমার মহুয়া বনে ফুল ফোটে - এখনো মহুয়া
সব, একদিন ঘুম ভেঙে গাছে তার ধরায় আগুন - তারপর নিভে যায়; ধোয়া
তার জ্বলে যায় ঘাম হয়ে শেকড়ের; সেইসব দিন সমাহিত হয়ে গেছে বলে
আমরা ব্যাসার্ধ ভুলে পলাতক হতে পারি, যেতে পারি ফেলে আসা হিমায়িত জলে!
মাঝখানে পৃথিবীর সব প্রেম অনাবিল করে রাখে ভাষাহীন নদীটির তীর -
তুমি আর আমি তবু বয়ে চলি - আমাদের আজীবন দূরে রাখে আমাদের ভিড়!
------ পটুয়াখালী, ২৬. ০৯. ২০১১
মন্তব্য
সুন্দর। জীবনানন্দের টাচ পেলাম।
জীবনানন্দের ঘোরতো আছেই, এটা মাথায় নিয়েই হাটছি, জানি একদিন নিজের পথ মিলে যাবে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, বাহাস করলাম নাকি
বাহাস-buddy, বাহাস করতে চাইলে আপনার ত্রিসীমানায় আমি নাই...তাইরে নাইরে নাই
হাহাহাহা! জিপসীরা সব প্রশান্ত থাকুক, অনেক ধন্যবাদ
ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম - আরো কয়েকবার পড়ে জানাব আসলে কেমন লাগল লিখতে থাক লম্বু ----
এইযে তুমি লম্বু বললা এতেই আমি খুশী, খুব কতদিন তানিম ভাই, তানিম ভাই করে মন্তব্য করেছিলা, তুমি অদ্ভুত প্রিয় বড় ভাই কিন্তু বন্ধু- তোমার কাছ থেকে নো মোর ফরমালিটি, ওক্কে
জীবনবাবু আসলে আমাদের ভাললাগায় এমন ভাবে জড়িয়ে আছেন--- আমাদের উচাটন মনে--
facebook
প্রিয় উড়ন্ত ঘুড়ি, উচাটন মনের চাইতে জীবনবাবু আমাদের ‘বোধ’ জুড়ে আছেন বেশী বলেই মনে হয় আমার কাছে। দেশে আসেন, আমি বরিশাল থাকি আর না থাকি, কথা দিলাম আপনাকে জীবনবাবুর বাড়ী দেখার এন্তেজাম করে দেবো! ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা
তানিম ভাই কবিতা বুঝিনা, কিন্তু পড়ে কেন যেন মন খারাপ হল, খুবি আচানক! কবিতা বুঝলে নিশ্চয় সঠিক অর্থটা ধরতে পারতাম। লেখা চলুক। একটা জিনিস বলেন নলটোনা ঘাস টা কি?
এ জাতীয় একটা ঘাস আছে
অসাধারণ লাগলো স্তবকগুলি, অনুরাগসিক্ত হে কবি!!! আপনার অন্যান্য কবিতা থেকে আলাদা, প্রেমময় ।
_____________________
Give Her Freedom!
তোমার লেখাপড়ার কি খবর? ভালো থাকো ভাইয়া, শুভকামনা
টার্ম ৪-২ তো কেবলি শুরু হল, আর আমি পড়ি পরীক্ষার আগে, এখন কেবল দৌড়ের উপর থাকা!!!
শুভেচ্ছা নিরন্ত।
_____________________
Give Her Freedom!
আমাদের আজীবন দূরে রাখে আমাদের ভিড়!
বাহ!
সুমিমা ইয়াসমিন
এই পংক্তিটা মাথায় নিয়েই এই কবিতার যাত্রা শুরু হয়েছিলো, আপনাকে অনেক, অনেক ধন্যবাদ
কবিতার রূপকল্প ও শব্দচয়ন অনন্যসাধারণ!
অক্ষরবৃত্তে লম্বা পঙক্তির ব্যবহার করা হয় সাধারণত ভাবনাকে এলায়িত, প্রসারিত ও ক্রমশঃ গীতল উম্মুক্তি দেবার জন্য। সেক্ষেত্রে দুই পর্বের মধ্যবর্তী যতির দিকে খুব খেয়াল রেখে পর্ববিন্যাস করতে হয়। নির্ভর করবে কবিতায় তুমি কেমন সুর আনতে চাইছো। সাংগীতিক লালিত্য আনতে চাইলে পর্বগুলোকে দীর্ঘ ও সমদৈর্ঘ্য করো। আর কবিতায় গদ্যভাব আনতে চাইলে ছোট ছোট পর্বে অসমান পর্ববিন্যাস করো। উদাহরণ দিই,
এখানে পর্বগুলো দীর্ঘ এবং সমমাপের (হাজার বছর ধরে=সিংহল-সমুদ্র থেকে, আমি পথ হাঁটিতেছি=নিশীথের অন্ধকারে)
এটিও অক্ষরবৃত্তে। কিন্তু দেখেছ, এখানে গতিশীলতা ও টানা গদ্যের ভেদরেখা কেমন বিলুপ্ত হয়েছে। এখানে 'উপযতি' তো বটেই, এমনকি মূল পর্বের মধ্যবর্তী যতিগুলোও যেন তিরোহিত। 'যেহেতু লৌকিকতার'- এই ৮ মাত্রার পর্বটির শেষ শব্দটি খেয়াল করো। 'লৌকিক' পর্যন্ত হলে 'হাজার বছর'-এর সমান হতো। কিন্তু 'লৌকিক' এর সাথে 'তার' যুক্ত হওয়ায় মধ্য যতি বিলুপ্ত হয়ে গদ্যভাব এনে দিচ্ছে।
ছন্দ নিয়ে তোমার নিরীক্ষা আমাকে খুশী করল। কিন্তু একটি কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। শুরুতেই কঠিন এক্সপেরিমেন্টে যেওনা। রয়ে সয়ে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ভাইয়া, আমি কোন এক্সপেরিমেন্ট করিনি; বরগুনা থেকে পটুয়াখালী আসার পথে ফেরীর অপেক্ষায় বসে ছিলাম ’পায়রা’ নদীর তীরে, বহুদূর নদী আর তার মসৃন জল ঘিরে অগণিত মাছ ধরা নৌকা - অসামান্য এক দৃশ্য! আমি সাধারণত মোবাইলে মেসেজ অপশনে লিখি, এই কবিতাটি আমি রেকর্ড করেছি রেকর্ডিং অপশনে। ঘোরের মধ্যে জ্বরাক্রান্তু এক অবশ সময়ে যা রেকর্ড হয়েছিলো তাকেই পরে ’সুমন তুরহান’ ভাইয়ের ভাষায় খনিশ্রমিক এর মত ঘষা-মাজা করেছি এবং আমি অবাক হয়ে দেখলাম খুব বেশি ঘষা-মাজা করতে হয়নি, ৩০ মাত্রায় যেন বসেই ছিলো সব!
বরিশাল বিভাগে কি আপনি এসেছেন কখনো? আমি থাকতে থাকতে আসুননা, আপনাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াই এই জীবনানন্দের দেশে - বাংলাদেশ এখানে তার সব রুপ নিয়ে খেলা করে!
ভালো থাকবেন। ঘরে সুখ থাক আর থাক প্রশান্তি
নতুন মন্তব্য করুন