তীর্থের কাক ১ তীর্থের কাক ২ তীর্থের কাক ৩
জানালা খুলে পুলিশ দুজন এয়ার ফ্রেসনারের ক্যান খালি করলেন ঘরে।
আপনার টাকা কোথায়?
এর আগে যেনো কোন কিছুই ঘটে নি, এমন একটা ভাব নিয়ে প্রশ্নটা করলো ছোকরা পুলিশটা। আচ্ছাদনে শরীরে আর ব্যাগে এর মধ্যে ঠিকঠাক করে ঢুকিয়েছি সব। টাকার জন্য এতো তালাশের কী দরকার ছিলো! সেটা আগে বললে অনেক ঝামেলা থেকে বেঁচে যেতাম। টাকার খোঁজেই তো এলাম তোমাদের দেশে। ভাবতে গিয়ে সেচ্ছা নির্বাসনের হড়ন-তড়নটা উকুনের মতো কামড় দিলো মাথায়।
এরশাদের পতনের পরে পরেই আশি হাজার টাকা হাতে দিয়েছিলেন বাবা। তখন ইচ্ছে ছিল সুজাতের দোকানটা চালাব আর নাটক করব। জিয়া এরশাদ রাজনীতি মাগীবাজীর যে পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, সেখানে বিচরণের ইচ্ছা শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এরশাদ হটাও আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম সম্মিলিত সংস্কৃতিক জোটের ব্যানারে। ব্যাপারটা পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু সুজাতের কাছে বিদেশের কথা শুনে কেনো যেনো সে দিকেই টানলো মনটা। এদিকে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে নির্বাচিত হয়েই। সুস্থ রাজনীতি কারো কাছে আশা করাই বোকামী। তার পরেও এরশাদ হটিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখে মনটা গিয়েছিল ভেঙ্গে। আর বিদেশে টাকার লোভতো আছেই। বিদেশে আশার সিদ্ধান্ত অল্প কয়েক দিনের। তার পরেও সব সংগতি সম্পন্ন আত্মীয়ের দুয়ারে দুয়ারে ধর্ণা দিলাম। সবাই ভরসা দিলো, সব ঠিকঠাক হোক, কিছু না কিছু তো দেবেনই। এই প্রতুশ্রুতি নিয়ে ফ্লাইট হওয়ার পরে সব আত্মীয় স্বজনের বাড়িই গেলাম। কিন্তু তখন ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে, এমনই বাস্তব কারণে কারো কাছেই কিছু পেলাম না। নিজের কাছে যা ছিলো বেবী বা টেক্সিতে করে সে টাকায় বিমান বন্দর পৌঁছানোও সম্ভব ছিল না। পাঁচ শলা ষ্টার সিগারেট কেনার পর পকেটে ছিল একটা সিকি। সেটা এখানে কোন কাজে লাগবে বলে মনে না হওয়ায় আরেক ভিখেরিকে দিয়ে সত্যিকারের কপর্দক শূন্য ভিখেরী হয়েই অজানায় পা বাড়িয়েছি।
চুরি গেছে, হারিয়ে গেছে, দালাল পাসপোর্ট টিকেটের সাথে রেখে দিয়েছে এমন অনেক মিথ্যা ঝলক দিয়ে গেলো মাথায়। পূর্ব পাপের অনুশোচনায় মিথ্যার ধারে কাছে না গিয়ে সত্যিই বললাম, আমার কাছে কোন টাকা নেই। প্রশ্নটা করে যেনো কোন অন্যায় করে ফেলেছেন, এমন ভঙ্গিতে সরি বলেন পুলিশ।
শুরঙ্গের মতো করিডোর পার হতেই আলোর বন্যায় ভেসে গেলাম। সব কিছু নিজের হাতে বুঝিয়ে দিয়ে এই ঘরটা দেখিয়ে মহিলা পুলশিটা বললো,
-এই খাবার ঘরটা পার হলে ডানে গোসলের জায়গা, টয়লেট রুম। ফ্রেস হয়ে এখানে নাস্তা করে বায়ে সারি সারি বিছানার যে কোনটাতে বিশ্রাম নিতে পারেন।
গোসল করাটা এখন ফরজে আইন। খাবার ঘর পার হয়ে সে দিকেই যাচ্ছিলাম। দরজায় এলোমেলো বাংলা হরফে লেখা বইয়ের মলাটের মতো সাদা একটা কগজে আটকে গেলো চোখ। “এখানে আসলে আর দেশে ফেরৎ পাঠানো হবে না”।
গোসল খানায় ঢুকে দেখি দেয়াল থেকে হাত খানেক দূরে সাওয়ারের সারি। দেয়াল ঘেসে নালার মতো পানি সরার ড্রেন। প্রতিটায় কল খোলার জন্য দুটো করে গোল চাকা। একটার রং লাল, আরেকটা নীল। নীলটা খুললে পানি বের হবে আর লাল ঘুরিয়ে পানি বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের মতো খোলা এবং বন্ধ করার জন্য একই চাকা না। কারিগরিটা দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।
নীল ঘুরিয়ে দিতেই আহা কি শীতল জল। এতো শীতল যে চামড়া বেধ করে কলিজা পর্যন্ত ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। মনে হয় আলপ্সের বরফ গলা জল পাইপ লাইনের মাধ্যমে সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে জার্মান সরকার। এই ঠাণ্ডা পানির বরকতেই জার্মানরা সব সাদা। সাবান মেখে কোন রকমে গোসল সারতে সারতে ওস্তাদ জাকির হোসেনের তবলা শুরু হয়ে গেলো দাঁতে দাঁতে। পানি বন্ধ করার জন্য লাল ঘোড়াতেই দেখি জল আরো বের হচ্ছে কিন্তু ঠাণ্ডা না! একেবারে ভাত রান্না করা যাবে এমন গরম। কি বিপদ! তাড়া তাড়ি কল উল্টা দিকে ঘুরিয়ে পানি বন্ধ করলাম।
খুব ঠাণ্ডা জলে স্নান করায় অ, আ লেখা টি সার্ট গায়ে দিয়ে গরম গরম একটা ভাব। যে দ্বিতল খাটে ব্যাগটা রেখেছিলাম সেটা সারির প্রথম। লম্বা হল ঘরের দুধারে এমন দ্বিতল খাটের সারি। সারির শেষ মাথায় জানালা গলে আলো আসছে। জার্মানের ভেতরটা দেখার জন্য জনালা দিয়ে বাইরে চোখ বুলাতে এগিয়ে গেলাম। ঝলমলে আলো। ইঁতি উঁতি সাদা মেঘের পাল মহাসমুদ্রে ভাসা ভেলার মতো অসীম নীলের বুকে দোল খায়। সামনের আঙ্গিনাটা হাড়ির মতো কালো পিচের। তার শেষ প্রান্তে কাঁটা তারের বাইরে চাষ দেয়া জমির ঢেউ খেলানো মাটির ফাঁকে মিহি দানার সাদা আটা। গম ক্ষেত হবে নিশ্চই। উন্নত চাষাবাদে ক্ষেতের গম আটা হয়ে বস্তাবন্দী অবস্থায় দোকানে যায়। আমাদের দেশে এতো আটা এতক্ষণ এমন অবহেলায় নিশ্চই পরে থাকতো না! ধনী দেশ এইটুকু অপচয়ে এদের কিছুই যায় আসে না। একপাটি কাঁচের জানালার কলকব্জা খুলে ঘাড় বাইরে বের করে চোখ ভরে দেখার সাহস পাই না। জিন্স ভেদ করে হাটুতে গরম লাগায় নীচের দিকে তাকালাম। সূর্যের তাপ দেয়াল ভেদ করে সাদা রং করা ঢেউ টিন গরম করে দিয়েছে! হবে না কী চকমকে রোদ!
চলবে?
মন্তব্য
চলবে মানে? দৌড়াবে। চরম । তয় আগে কন্দেখি ডিম ফুইট্টা ৪ নম্বর কাকের জন্ম নিতে ১ বছরের বেশি লাগলো কেন?
হা হা হা,
চার নম্বর কাকের জন্ম আসলে ১ বছর আগেই হয়েছিল। ইচ্ছে ছিল পুরো লেখাটা শেষ করে তারপর প্রথম পাতায় একটা করে পর্ব দেব। অনেক বিলম্বে পরের পর্ব আসলে পাঠকের মনোযোগ এবং ধৈর্য্য কোনটাই থাকে না। কিন্তু বিধি বাম। সেটা অনেক ব্যক্তিগত কারণে সম্ভব হয়নি।
কিছু তথ্যের জন্য একজনের সাথে যোগাযোগের দরকারছিল। সেই একজন আবার এখন আমার পক্ষে সম্ভাব্য সব যোগাযোগ মাধ্যমের আওতার বাইরে। তাঁর পরিবারকে খুঁজে পেতে সময় লেগেছে ৬ মাস। তাঁর মায়ের সাথে কথা বলে অতি প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জেনে নিয়েছি। লেখাও এগিয়েছে অনেকদূর।
কিছু বিষয় মাথার মধ্যে কিলবিল করে, সেগুলো শেষ করেছি। কিন্তু নতুন করে হাজির হয়েছে আমার শেষ করা উপন্যাসের একটি চরিত্র। তাকেও এ সপ্তাহে বিদায় করব।
তারপর শুধুই কাক।
মনে রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ঠিকাছে, এখন তাইলে
এক বছর পাঁচ মাস পরে আপনার এক সপ্তাহ হল?
এ পর্বটায় ফাঁকি দিয়েছেন মনে হল। একটাই অনুরোধ পরেরটা তাড়াতাড়ি দিয়েন, অন্তত আগামী বছরের আগেই।
------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।
মন কেন এত কথা বলে! পাগল মন, মনরে।
খুবভাল করে মনে রাখার জন্য ধন্যবাদ। দেরীর কারণ উপড়ে কিছুটা বলেছি। তবে এখন থেকে নিয়মিত হব।
এই পর্বটা একটু ঝুলে গেছে। কিন্তু ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে লিখতে হল।
পরের পর্বটা এতটা একঘেয়ে না করার চেষ্টা করব।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আমিও একবার এরকম জলের কবলে পড়েছিলাম। তবে নীল ট্যাপ নয় লাল...
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ধন্যবাদ কবি,
জলের কল তো খুব সাধারণ সমস্যা গেল।
সব চেয়ে জটিল ছিল পায়খানা ব্যবস্থা। কী আর বলব! সেই সব অভিজ্ঞতার (বোকামীর) কথা বললে পাঠক পাওয়া কঠিন হবে। সে কারণে ব্যাপারটা চেপে গেলাম।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
পড়ছি...
ধন্যবাদ।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
চলুক--
facebook
উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
খুব সুন্দর সাবলীল বর্ণনায় আত্মকথন.................অবশ্যই চলবে................দ্রুত চাই
_____________________
Give Her Freedom!
ধন্যবাদ বস।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
বড় ভাই, এ কী শব্দে ছোট ভাইটাকে সম্বোধন করলেন, লজ্জায় তো মাথা হেট হবার মত অবস্থা। আমি আপাদমস্তক মূর্খ-সাধারণ মানুষ। স্নেহে কোন নামে ডাকেন ধন্য হবো, কিন্তু এই শব্দটি কখনই নয়।
শুভেচ্ছা নিরন্ত..............
_____________________
Give Her Freedom!
ঠিক আছে ভাই মৃত্যুময় ঈষৎ।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
নতুন মন্তব্য করুন