কুলদা রায়
এমএমআর জালাল
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। রচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জাতীয় সঙ্গীতটি ১৯৭৫ সালের পর থেকেই নানাবিধ বিরোধিতার সম্মুখিন হচ্ছে কখনো ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর কাছ থেকে--কখনো ছদ্মপ্রগতিশীলদের কাছ থেকে। এই বিরোধিতারস্বরূপটি দেখার চেষ্টা করা হয়েছে এই রচনায়।
গগনে গগনে আপনার মনে কী খেলা তব।
তুমি কত বেশে নিমেষে নিমেষে নিতুই নব।।
---------------------------------------
নাম তার গগন দাস। বাড়ি কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। আড়পাড়া গ্রামের এক কায়স্থ পরিবারে জন্ম উনিশ শতকের মাঝামাঝি।
তার বাবা-মা সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে কিরণ চন্দ্র দাস নামে গগনের এক ছেলের নাম জানা যায়। এইটুকু গগন-কথা।
গবেষক প্রফেসর ড. আবুল আহ্সান চৌধুরী রবীন্দ্র উত্তরসূরী গ্রন্থে জানাচ্ছেন-- দুই যুগ আগেও গগনের ভিটার অস্তিত্ব ও ফলের বাগানের সাদৃশ্য ছিল। লোকমুখে জানতে পারা যায় যে, গগন হরকরা’র একটি বড় ফলের বাগান ছিল। উল্লেখ্য যে, গগনের বাস্তুভিটায় আসামদ্দি নামক একজন কৃষক বাড়ি করে থাকতেন এবং সেই বাড়িটি আজও ‘দাসের ভিটা’ নামে পরিচিত সে সময় দাসেরা মণ্ডল নামেও পরিচিত ছিল।
শিলাইদহের শচীন্দ্রনাথ অধিকারী লিখেছেন-- গগন সামান্য শিক্ষা-দীক্ষায় পারদর্শী ছিলেন এবং তার ফলশ্রুতিতেই তৎকালীন শিলাইদহের ডাক ঘরের ডাক হরকরা’র চাকুরি পেয়েছিলেন। গাঁয়ে গাঁয়ে চিঠি বিলি করতেন। আর করতেন গান। তিনি শিলাইদহে ‘সখীসংবাদের’ গানে এমন করুণ আখর লাগিয়ে গাইতেন যে, শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে সে গান শুনতেন। গগন সম্পর্কে পণ্ডিত ক্ষিতি মোহন সেন শাস্ত্রি বলেছেন: লালন-এর শীর্ষ ধারার একজন ছিলেন রবীন্দ্রনাথের শিলাইদহের ডাক হরকরা–যাঁর নাম গগন। রবীন্দ্রনাথ গগনকে সবার মাঝে বিভিন্ন ভাবে পরিচিত ও বিখ্যাত করে যথাসাধ্য মূল্যায়ন করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৯ থেকে ১৯০১ সাল বাংলাদেশের শিলাইদহ ও শাহজাদপুরে জমিদারী দেখাশুনা করতে নিয়মিত যেতেন। তখন শিলাইদহে তাঁর সঙ্গে গগনের পরিচয় হয়েছিল। গগণ তাকে গান গেয়ে শোনাতেন।
শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে গগন হরকরা, গোঁসাই গোপাল, সর্বক্ষেপী বোষ্টমী, গোঁসাই রামলাল এবং লালনের অজস্র শিষ্য, প্র-শিষ্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিনি বাউল-ফকিরদের গান শুনে আপ্লুত – নিজে শিলাইদহ ও ছেঁউড়িয়া অঞ্চল হতে অনেক বাউল গান সংগ্রহ ও প্রচার করেছেন। তারপরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সেগুলো প্রচার করার ব্যবস্থা করেন। উদ্দেশ্য একটাই-যাতে- সুধী সমাজের মধ্যে বাংলাদেশের বাউল গান সম্পর্কে একটা ধারণা জন্মে।
অধ্যাপক মনসুরউদ্দিনের হারামণির গ্রন্থের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, শিলাইদহে যখন ছিলাম, বাউল দলের সঙ্গে আমার সর্বদাই দেখাসাক্ষাৎ ও আলাপ-আলোচনা হত। আমার অনেক গানেই আমি বাউলের সুর গ্রহণ করেছি এবং অনেক গানে অন্য রাগরাগিণীর সঙ্গে আমার জ্ঞাত বা অজ্ঞাত-সারে বাউল সুরের মিলন ঘটেছে। এর থেকে বোঝা যাবে বাউলের সুর ও বাণী কোন্-এক সময়ে আমার মনের মধ্যে সহজ হয়ে মিশে গেছে। আমার মনে আছে, তখন আমার নবীন বয়স, শিলাইদহ অঞ্চলেরই এক বাউল কলকাতায় একতারা বাজিয়ে গেয়েছিল–
কোথায় পাব তারে
আমার মনের মানুষ যে রে!
হারায়ে সেই মানুষে তার উদ্দেশে
দেশ-বিদেশে বেড়াই ঘুরে
গগন হরকাকরার গানটির পূর্ণপাঠ
--------------------------------------------
আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে –
হারায়ে সেই মানুষে তার উদ্দেশে দেশ বিদেশে বেড়াই ঘুরে।
লাগি সেই হৃদয়শশী সদা প্রাণ হয় উদাসী
পেলে মন হত খুশি দেখতাম নয়ন ভরে।
আমি প্রেমানলে মরছি জ্বলে নিভাই অনল কেমন করে
মরি হায় হায় রে
ও তার বিচ্ছেদে প্রাণ কেমন করে
ওরে দেখ না তোরা হৃদয় চিরে।
দিব তার তুলনা কি যার প্রেমে জগৎ সুখী
হেরিলে জুড়ায় আঁখি সামান্যে কি দেখিতে পারে
তারে যে দেখেছে সেই মজেছে ছাই দিয়ে সংসারে।
মরি হায় হায় রে –
ও সে না জানি কি কুহক জানে
অলক্ষ্যে মন চুরি করে।
কুল মান সব গেল রে তবু না পেলাম তারে
প্রেমের লেশ নাই অন্তরে –
তাইতে মোরে দেয় না দেখা সে রে।
ও তার বসত কোথায় না জেনে তায় গগন ভেবে মরে
মরি হায় হায় রে –
ও সে মানুষের উদ্দিশ যদি জানুস কৃপা করে
আমার সুহৃদ হয়ে ব্যথায় ব্যথিত।
রবীন্দ্রনাথ গগন হরকরার এই ‘কোথায় পাব তারে আমার মনে মানুষ যে রে’ গানটি বিষয়ে আরও লিখেছেন,
কথা নিতান্ত সহজ, কিন্তু সুরের যোগে এর অর্থ অপূর্ব জ্যোতিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। এই কথাটিই উপনিষদের ভাষায় শোনা গিয়েছে : তং বেদ্যং পুরুষং বেদ মা বো মৃত্যুঃ পরিব্যথাঃ। যাঁকে জানবার সেই পুরুষকেই জানো, নইলে যে মরণবেদনা। অপণ্ডিতের মুখে এই কথাটিই শুনলুম তার গেঁয়ো সুরে সহজ ভাষায়–যাঁকে সকলের চেয়ে জানবার তাঁকেই সকলের চেয়ে না-জানবার বেদনা–অন্ধকারে মাকে দেখতে পাচ্ছে না যে শিশু তারই কান্নার সুর–তার কণ্ঠে বেজে উঠেছে। ‘অন্তরতর যদয়মাত্মা’ উপনিষদের এই বাণী এদের মুখে যখন ‘মনের মানুষ’ বলে শুনলুম, আমার মনে বড়ো বিস্ময় লেগেছিল। এর অনেক কাল পরে ক্ষিতিমোহন সেন মহাশয়ের অমূল্য সঞ্চয়ের থেকে এমন বাউলের গান শুনেছি, ভাষার সরলতায়, ভাবের গভীরতায়, সুরের দরদে যার তুলনা মেলে না–তাতে যেমন জ্ঞানের তত্ত্ব তেমনি কাব্যরচনা, তেমনি ভক্তির রস মিশেছে। লোকসাহিত্যে এমন অপূর্বতা আর কোথাও পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করি নে।
রবীন্দ্র উত্তরসূরিতে প্রফেসর ড. আবুল আহ্সান চৌধুরী লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথের ভাগ্নী সরলা দেবী (১৮৭২-১৯৪৫). ‘‘ভারতী’’ পত্রিকায় (ভাদ্র-১৩০২) গগনের কয়েকটি গান সংগ্রহ ও প্রকাশ করেছিলেন। সরলা দেবী উক্ত প্রবন্ধের শেষ অংশে আবেদন করেছিলেন যে, ‘‘প্রেমিক গগনের ভক্ত জীবনীর বিবরণ সংগ্রহ করিয়া কেহ ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশার্থে পাঠাইয়া দিলে আমাদের কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞতা ভাজন হইবেন।” রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতা-প্রবন্ধে গগনের গানের কথা ও গগনের নাম উল্লেখ করেছেন একাধিকবার। রবীন্দ্র সংগৃহীত গগন হরকরার ‘আমি কোথায় পাব তারে, আমার মনের মানুষ যে রে’ এই গানটি দিয়েই রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের পরামর্শে ‘হারামণি’ বিভাগের (বৈশাখ- ১৩২২) সূচনা হয়েছিল। শিলাইদহে এসে রবীন্দ্রনাথ যেমন সাঁইজি লালন কর্তৃক প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং লালনের পরেই প্রভাবিত হয়েছিলেন গগন হরকরা কর্তৃক। তাঁর মনে ধর্ম সম্পর্কে যে নতুন ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল, তারই সমর্থন তিনি খুঁজে পাচ্ছিলেন বাউলদের গানে। এমনকি আজীবন লালিত ঔপনিষদিক দর্শনের সঙ্গেও তিনি এ সময় থেকে বাউলদের একটা সমন্বয় ঘটাতে চেষ্টা করেছিলেন। যে সত্যের বাণী তিনি উপনিষদের শ্লোকে শুনতে পেয়েছিলেন, তার প্রতিধ্বনি শুনতে পেলেন বাউল গানে। গগনের ‘আমি কোথায় পাব তারে’ এই গানের সুরে রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছিলেন ‘‘আমার সোনার বাংলা/ আমি তোমায় ভালোবাসি’’। সরলা দেবী ইতিপূর্বে শতগান (বৈশাখ ১৩০৭) এ মূল গানটির স্বরলিপি প্রকাশ করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন--
----------------------
একবার যদি আমাদের বাউলের সুরগুলি আলোচনা করিয়া দেখি তবে দেখিতে পাইব যে, তাহাতে আমাদের সংগীতের মূল আদর্শটাও বজায় আছে, অথচ সেই সুরগুলা স্বাধীন। ক্ষণে ক্ষণে এ রাগিণী, ও রাগিণীর আভাস পাই, কিন্তু ধরিতে পারা যায় না। অনেক কীর্তন ও বাউলের সুর বৈঠকী গানের একেবারে গা ঘেঁষিয়া গিয়াও তাহাকে স্পর্শ করে না। ওস্তাদের আইন অনুসারে এটা অপরাধ। কিন্তু বাউলের সুর যে একঘরে, রাগরাগিণী যতই চোখ রাঙাক সে কিসের কেয়ার করে! এই সুরগুলিকে কোনো রাগকৌলীন্যের জাতের কোঠায় ফেলা যায় না বটে, তবু এদের জাতির পরিচয় সম্বন্ধে ভুল হয় না–স্পষ্ট বোঝা যায় এ আমাদের দেশেরই সুর, বিলিতি সুর নয়।
১৯১৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ফালগুনী নাটক রচনা করে সেখানে অন্ধ বাউল চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯১৬ সালে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথের একটি ছবি আঁকেন। ছবিটিতে দেখা যায় বাউল রবীন্দ্রনাথ একতারা হাতে বিভোর হয়ে নাচছেন।
দুই.
আমার সোনার বাংলা
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গানটি ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের সময় গীত হয়। প্রশান্ত পাল রবিজীবনী গ্রন্থে লিখেছেন, ইতিমধ্যে রবীন্দ্রনাথ-রচিত নূতন স্বদেশী গান ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ (দ্রষ্টব্য গীত ১।২৪৩; স্ব ৪৬) নিয়ে কলকাতা উত্তাল হয়ে পড়েছে। গানটির পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়নি। রচনার তারিখও জানা নেই। সত্যেন রায় লিখেছেন: বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ৭ আগস্ট (১৯০৫ খৃ:) কলিকাতার টাউন হলে যে সভা হয়েছিল, সেই উপলক্ষ্যে… রবীন্দ্রনাথ নূতন সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ বাউল সুরে গীত হয়েছিল। …১৯০৫ খৃ: ৭ই সেপ্টেম্বর (১৩১২ সনের ২২শে ভাদ্র). তারিখের ‘সঞ্জীবনী পত্রিকায় এই গানটি রবীন্দ্রনাথের স্বাক্ষরে প্রথম প্রকাশিত হয়। সঞ্জীবনীর উক্ত সংখ্যাটি দেখার আমরা সুযোগ পাইনি, গানটি রবীন্দ্রনাথ সম্পাদিত আশ্বিন-সংখ্যা বঙ্গদর্শন-এ (পৃষ্ঠা ২৪৭-৪৮) মুদ্রিত হয়।
রবীন্দ্রনাথের আমার সোনার বাংলা গানটির পূর্ণপাঠ
-----------------------------------------------
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে
ও মা, অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি।
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি।
তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিল রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি।
ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে,
সারাদিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, তোমার রাখাল তোমার চাষি।
ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে
দে গো তোর পায়ের ধূলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে
আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ বলে গলার ফাঁসি।(ডাউনলোড লিংক
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পূর্ব বঙ্গের মানুষ তাদের আত্মপরিচয় খুঁজে পান। সে সময়ে নতুন করে বাঙালির ভাবসম্পদ পূর্ববঙ্গের মানুষের জীবনানুসঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সে সময় থেকেই রবীন্দ্রনাথ বাঙালির চলার পথের সঙ্গী। আইয়ুব খানের কঠিন মার্শাল লয়ের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে সকল প্রকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হয়। ফলে তখন সারাদেশে সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মাধ্যমেই বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রা্মের পরম্পরাটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গানটি তখন থেকেই মানুষের মুখে মুখে ফিরতে শুরু করে। চলচ্চিত্রকার শহীদ জহির রায়হান ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তার বিখ্যাত 'জীবন থেকে নেওয়া' কাহিনীচিত্রে এই গানের চলচ্চিত্রায়ন করেন।
১৯৭১ সালের ১ মার্চ গঠিত হয় স্বাধীন বাংলার কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ। পরে ৩ মার্চ তারিখে পল্টন ময়দানে ঘোষিত ইশতেহারে এই গানকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিব নগরে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে এই গান প্রথম জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গানটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত পরিবেশিত হতো। স্বাধীনতার পর সাংবিধানিকভাবে .(অনুচ্ছেদ ৪.১). ‘আমার সোনার বাংলা’ .গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত রূপে ঘোষিত হয়। গানের প্রথম ১০ লাইন কন্ঠসঙ্গীত এবং প্রথম ৪ লাইন যন্ত্রসঙ্গীত হিসেবে পরিবেশনের বিধান রাখা হয়েছে। জাতীয় সঙ্গীতের সিগনেচার টিউন তৈরী করেন প্রয়াত সুরকার সমর দাস।
তিন.
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বিরোধিতার স্বরূপ
------------------------------------------------------
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে পাকিস্তানপন্থীরা বাংলাদেশের ক্ষমতায় নানা কায়দায় বহাল হয়। সে সময় থেকেই একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা দাবী তোলে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে হিন্দু রবীন্দ্রনাথের আমার সোনার বাংলাকে বাতিল করা হোক।
গানটির বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ করা হয় রক্তের দাগ মুছে রবীন্দ্রনাথ পাঠ বইটিতে। লেখক—ফরহাদ মজহার। তার অভিযোগগুলোর সার সংক্ষেপ--
১. রবীন্দ্রনাথের এই গানটি কোনো অসাধারণ গান নয়। শুধু রবীন্দ্রনাথকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই এই গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত করা হয়েছে।
২. রবীন্দ্রনাথের গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ না করে কোনো বাংলাদেশীকে দিয়েই রচনা করালে ভাল হত। কারণ পারিবারিক ও ধর্মীয় পরিচয়, মনন, দর্শন, পঠন, পাঠন প্রভৃতির মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথের মধ্যে যে মনোগাঠনিক প্রক্রিয়া ও প্রকাশ সচল ছিল তার সম্পৃক্তি হিন্দু ঐতিহ্যের সঙ্গে, বৌদ্ধ বা ইসলামী ঐতিহ্যের সঙ্গে নয়। সুতরাং হিন্দু রবীন্দ্রনাথের গানটিকে মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশে জাতীয় সঙ্গীত করাটা একটা ঐতিহাসিক ভুল।
৩. আমার সোনার বাংলা গানটির বাংলা শব্দটির বানান রবীন্দ্রনাথ পাল্টে দিয়েছেন। কারণ বাংলা বানানটি আদিতে মুসলমানেরা বাঙ্গালা বলতেন। রবীন্দ্রনাথ মুসলমান বিরোধী ছিলেন বলে বাঙ্গালা শব্দটিকে বাংলা করে দিয়ে হিন্দুয়ানি করে দিয়েছেন। সে কারণেও গানটিকে বাতিল করা দরকার।
এই তিনটি অভিযোগে কতটুকু সারবত্তা আছে তা একটু খতিয়ে দেখা যেতে পারে।
১. রবীন্দ্রনাথের আমার সোনার বাংলা গানটি বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের ভাব ও ভাষায় রচিত। আর সুরটিও কুষ্টিয়ার শিলাইদহের বাউল গানের থেকে নেওয়া। গানটির মধ্যে দিয়ে বাংলার শ্যামল জননী প্রকৃতির নিরাভরণ বর্ণনা দিচ্ছেন সহজ সরল মুগ্ধতায়। বানীতে প্রকাশ পাচ্ছে স্বদেশমায়ের প্রতি সন্তানের ভালবাসার নিবেদন। স্বদেশের গলায় পরানোর জন্য বিদেশী আভরণ কেনাকে তিনি ফাঁসির তুল্য বলছেন। বলছেন—স্বদেশকে স্বদেশের সম্পদে পুর্ণ করতে হবে। সে অর্থে এই গানটি শুধু বর্ণনাবহুলতা পূর্ণ নয়, আকুলতা পুর্ণও গান নয়— এ গানে স্বদেশকে রক্ষার একটি ঐক্যের সতেজ আহ্বানও আছে। সে অর্থে গানটি অসাধারণ। রবীন্দ্রনাথ বাঙালি জাতির শুধু রাজনীতিতে নয়—জীবনের সর্বত্রই জড়িয়ে আছেন। শুধু রাজনীতির কথাটি নির্দেশ করলে সংকীর্ণ ব্যাখাই করা হয়। কারণ মিছিলে মিটিংএ যেমন রবীন্দ্রনাথের গান করা হয়, আনন্দে উৎসবে, ব্যাথা বেদনায়ও রবীন্দ্রনাথ উচ্চারিত হন। তিনি প্রেমে-প্রকৃতিতে আসেন, শীতে আসেন, বর্ষায় আসেন। আলোতে আসেন। অন্ধকারেও তাকে নিয়ে পথ চলা যায়। তিনি সর্বত্র ছুঁয়ে আছেন। তাঁকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার দরকার হয় না। পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রনাথকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু মানুষের প্রাণের মধ্যেই আরও জাগরুক হয়ে উঠেছেন।
২. রবীন্দ্রনাথকে গোড়া সাম্প্রদায়িক লোকজন হিন্দু বলে ঘোষণা করার চেষ্টা করলেও তিনি অবশ্য নিজের ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে ততটা নিশ্চিত ছিলেন না। কারণ, বেশির ভাগ মানুষের মতো যে ধর্ম নিয়ে জন্মেছিলেন, সেই পারিবারিক ধর্মমত তিনি চিরকাল আঁকড়ে রাখতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথের জন্ম ব্রাহ্ম পরিবারে। ব্রাহ্মরা একেশ্বরবাদি। হিন্দুরা তাদের অহিন্দু মনে করে। আর ব্রাহ্মরা নিজেদের হিন্দুদের চেয়ে পৃথক মনে করেছে। রবীন্দ্রনাথ কখনোই কোনো পুরণো বিশ্বাসে নিজেকে বদ্ধ রাখেননি। কোনো কিছু নিয়েই তিনি অচল ছিলেন না। গাছ যেমন প্রতি বসন্তে সজ্জিত হয় নতুন পাতায়, তিনও তেমনি নব-নব রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। নিজেকে নিরন্তর পাল্টে নিয়েছেন—নিজের উত্তরণ ঘটিয়েছেন। কখনো নেতির দিকে তাঁর যাত্রা ছিল না। যাত্রা ছিল ইতির দিতে। প্রতিক্রয়াশীলতা নয়--প্রগতিশীলতাই তার লক্ষ্য। পুরনো বিশ্বাসকে নতুন বিশ্বাসে বদলে দিয়েছেন। তিনি আদি ব্রাহ্মসমাজের সীমানা অতিক্রম করেছিলেন অল্পকালের মধ্যেই। নতুন কোনো গুরুর সন্ধান তিনি পাননি অথবা কারও কাছে তিনি দীক্ষাও গ্রহণ করেননি। তা সত্ত্বেও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, এমনকি ধর্মচিন্তা বদলে গেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এর সূচনা হয় যখন তিনি ক্ষুদ্র জোড়াসাঁকো তথা কলকাতার সীমানা পেরিয়ে বৃহত্তর সমাজের মুখোমুখি হলেন, তখন। তখন থেকেই তিনি হৃদয় প্রসারিত করে চারদিকে চেয়ে দেখলেন। তিনি সর্বমানবের মিলনের কথা ভেবেছেন। তিনি মানব ধর্মে পৌছে গিয়েছিলেন। ‘হিন্দু মুসলমান’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, যে দেশে প্রধানত ধর্মের মিলেই মানুষকে মেলায়, অন্য কোনো বাঁধনে তাকে বাঁধতে পারে না, সে-দেশ হতভাগ্য। যে-দেশ স্বয়ং ধর্মকে দিয়ে যে-বিভেদ সৃষ্টি করে সেইটে সকলের চেয়ে সর্বনেশে বিভেদ। ...মানুষ বলেই মানুষের যে মূল্য সেইটিকেই সহজ প্রীতির সঙ্গে স্বীকার করাই প্রকৃত ধর্মবুদ্ধি। যে দেশে ধর্মই সেই বুদ্ধিকে পীড়িত করে রাষ্ট্রিক স্বার্থবুদ্ধি কি সে-দেশকে বাঁধতে পারে? ‘’ শেষ বেলায় রবীন্দ্রনাথ অনুভব করেছিলেন—মোহমুগ্ধ ধর্মবিভীষিকার চেয়ে সোজাসুজি নাস্তিকতা অনেক ভালো। ধর্মমোহ কবিতায় লেখেন—
ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে
অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে।
নাস্তিক সেও পায় বিধাতার বর,
ধার্মিকতার করে না আড়ম্বর।
৩. বঙ্গ নামটি রামায়ণ মহাভারতের মতো অনেক পৌরাণিক কাহিনীতে পাওয়া যায়। ফার্সি নথিতে শাহ-এ বঙ্গালিয়া বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। পর্তুগীজ নথিতে বাঙ্লা নামটি পাওয়া যায়। বৃটিশ আমলে দুটো বঙ্গ ছিল। একটি পূর্ব বঙ্গ। আরেকটি পশ্চিমবঙ্গ। এই দুটো প্রদেশ মিলেই ছিল বঙ্গ।
রবীন্দ্রনাথ জমিদার হলেও তাঁর মূল কাজ আসমানদারী। কবিতার ছন্দ মেলানোর জন্য কবিতায় বঙ্গদেশ লিখলেন না। লিখলেন না বাঙ্গালাদেশ বানান। বাঙলাদেশও লিখলেন না। তিনি কবিতার ছন্দ মেলানোর জন্য যুক্তাক্ষরকে দুই মাত্রা হিসাবে গণনা করেছিলেন। তখন তিনি লক্ষ করলেন—'ঙ্গ' অক্ষরটি যুক্তাক্ষর। 'ঙ্গ' থেকে যদি যদি পুরো আওয়াজ আদায় করতে হয়—তো সে এক মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। সেটা ভারি মুশকিল। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—শব্দতত্ত্ব অনুসার লিখিব এক, আর ব্যবহার অনুসারে উচ্চারণ করিব আর, সেটা ছন্দ পড়িবার জন্য বড়ো অসুবিধা।
যেখানে যুক্ত অক্ষরেই ছন্দের আকাঙ্ক্ষা সেখানে যুক্ত অক্ষর লিখলে পাঠকের কোনো সংশয় থাকে না। পাঠক যুক্ত অক্ষর গণ্য করে সেটা পড়তে পারে। যেমন—
বাঙ্গলা দেশে জন্মেছ বলে বাঙালি নহ তুমি
সন্তান হইতে সাধনা করিলে লভিবে জন্মভূমি।।
কিন্তু যদি বাঙ্গালার মাটি বাংলার জল—লেখা হয় তাহলে কবিতাটির ছন্দ মাটি হয়। যেখানে এই পঙক্তিতে তিন মাত্রা দরকার—তখন বাঙ্গালা বা বাঙ্গলা লিখলে চার মাত্রা হয়ে যায়। কিন্তু বাঙ্গালার ঙ্গ-এর বদলে অনুস্বার ব্যবহার করে বাংলার মাটি বাংলার জল লেখা হয় তাহলে অনুস্বার থেকে তিন মাত্রাই পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ছন্দ বজায় থাকে। 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি' গানটির ক্ষেত্রেও এই কারণে ঙ্গ এর বদলে অনুস্বার রেখেছেন। এখানে তিনি কোনো ধরনের মুসলমান শাসক মুগলদের বিরোধিতার জন্য করেননি। আর ব্যকরণের বিষয় হিসাবে বানান পরিবর্তিত হয়। এখানে সাম্প্রদায়িক বিভেদ খোঁজার অর্থই হল আরেকটি সাম্প্রদায়িকতার সূত্রপাত ঘটানো। রবীন্দ্রনাথ তো চিরকাল হিন্দুমুসলমানদের মিলনের কথা কথাই ভেবেছেন। কলকাতায় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গায় তার মন পীড়িত হয়ে পড়েছে। তিনি ১৩৩২ সালে রানী মহলানবিশকে এক পত্রে লিখছেন--কোথাও একটা কোনো অন্যায় উপদ্রব হলে আমার বুকের ভিতর ভারি একটা ক্ষোভ উপস্থিত হয়। এই হিন্দু-মুসলমান উৎপাতে আমার শরীরটাকে ভারি পীড়ন করচে। সে অর্থে বাংলাদেশ বানান নিয়ে এই ধরনের সাম্প্রদায়িক অভিযোগ শুভবুদ্ধিকে উৎপীড়িত করে মাত্র।
চার.
রবীন্দ্রনাথ কি করে গান চোর হলেন?
----------------------------------------
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে আরেকটি অভিযোগ সম্প্রতি উত্তাপিত হয়েছে অন্তর্জালে। লেখা হয়েছে—রবীন্দ্রনাথ আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গানটি চুরি করেছেন। শুধু সাহিত্যে নয়—বাংলা গানেও যে রবীন্দ্রনাথের অবদান মহাবৃক্ষের মত, সেই রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে এই অভিযোগটি মারাত্মক।
আমার সোনার বাংলা গানটির সন্ধান পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্র বলেন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনায়। বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন--রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহে যান ১১ অগ্রহায়ণ, ১২৯৬ বঙ্গাব্দ/ ২৫ নভেম্বর ১৮৮৯ সালে। সঙ্গে ছিলেন মৃণালিনী দেবী, তাঁর একজন সহচরী, বড় মেয়ে বেলা ও পুত্র রথীন্দ্রনাথ। আরও ছিলেন বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সে সময় রবীন্দ্রনাথ জমিদারী পরিচালনা করতে ব্যস্ত থাকতেন। বলেন্দ্রনাথ সিলাইদহ/ সুনাউল্লাহর-গান শীর্ষক লেখায় লিখেছেন,
আমরা যখন সিলাইদহে ছিলুম তখন রোজ রোজ আমাদের বোটে সেখানকার গ্রাম্য গাইয়েদের আমদানি হত। তার মধ্যে দুজন আমাদের মার্কামারা হয়ে পড়েছিল। একজন বষ্ণম–সে কাঙ্গাল ফিকির চাঁদ ফকিরের গান গাইত। …আরেকজন আসত সুনাউল্লাহ। এক-একদিনের পাল্লায় তার দুআনা পয়সা বরাদ্দ ছিল। … নিয়মিত বরাদ্দ ছাড়াও কাকীমার দানশীলতায় তাঁর একখানি সাড়ি এবং তার সহচরীর ফসফরিক সালসার একটা খালি বোতল লাভ হয়েছিল।
বলেন্দ্রনাথ সে সময় সুনাউল্লাহর মুখ থেকে শোনা ১২টি গান খাতায় নকল করে রেখেছেন। ৪ ও ৭ সংখ্যক গানের পাশে মার্জিনে লেখা যথাক্রমে ২৩শে ও ২৫ শে অগ্রাহয়ণ ‘৯৬–অনুমান করা যায় অন্তত এই দুটি গান উক্ত তারিখগুলিতে শুনেছিলেন। এর মধ্যে ২ সংখ্যক গানের রচয়িতা গগন মণ্ডল, বলেন্দ্রনাথ তার নামের পাশে ব্রাকেটে গগন মণ্ডলের পরিচয় লিখেছিলেন–সিলাইদহের ডাক হরকরা। এই গগণহরকরা ‘আমি কোথায় পাব তারে, আমার মনের মানুষ যেরে’ গানটি রবীন্দ্রনাথকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল, এর সুর অবলম্বনে তার বিখ্যাত স্বদেশী সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ রচিত হয়।
বলেন্দ্রনাথ রবিঠাকুরের স্নেহের পাত্র ছিলেন। তাকে দিয়েই শান্তিনিকতনের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করেছিলেন খসড়টি। বলেন্দ্রনাথ অকালে মারা যান। বলেন্দ্রনাথ গগন হরকরার গানটির কথা এবং রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা রচনার ইতিহাসটি বলছেন। এখানে কোনো তথ্যই লুকানো হয়নি। রাহাজানি করলে গোপন করার বিষয় থাকে। সেটা তো করা হয়নি। রবীন্দ্রনাথ নিজেও এই গানটির সুর কোথা থেকে নিয়েছেন–তা অকুণ্ঠ চিত্তে বলেছেন। সেগুলো ঠাকুরবাড়ির লোকজনই গেয়েছেন। লালন করেছেন। মূল গান এবং তার প্রভাবে সৃষ্ট গান–সবই রবীন্দ্রনাথের অনুপ্রেরণায় গীত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ কখনো কোথাও বলেছেন–আমার সোনার বাংলা গানটির তাঁর নিজে সুরে করা।
সঙ্গীতের বিষয়টিই সেকালে এরকম ছিল। রজনীকান্তের কোনো কোনো গান আছে–যেগুলো রবীন্দ্রনাথের গানের সুরকে হুবহু নেওয়া হয়েছে। সেগুলো তিনি রবীন্দ্রনাথকেও গেয়ে শুনিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ শুনে তারিফ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ, ডিএল রায়, অতুল প্রসাদ, কাজী নজরুল ইসলাম, সত্যজিৎ রায় রামপ্রসাদের সুর থেকে গান করেছেন। নজরুল তার গজল গানের সুরগুলো পারস্য গজল থেকে নিয়েছেন। সেগুলোকে কেউ রাহাজানি বলেনি। শ্যামা সঙ্গীতের কথাই ধরা যাক। শ্যামা সঙ্গীতের সুরের একটা ঘরানা আছে। লক্ষ করলেই বোঝা যায়-- একই সুরে বহু গীতিকার সাধক তাঁদের নিজেদের কথা বসিয়েছেন। কাজী নজরুলইসলামের ২/৩ টা সুরে ভিন্ন বাণী বসিয়ে গান বেঁধেছেন অতুল প্রসাদ। ফৈয়াজ খাঁ সাহেবের একি গানে বাণী বদল করে একি সময় গান বেঁধেছেন কাজী নজরুল আর শচীন কর্তা। বড়ে গুলাম আলীর সাহেবেরও এক গানের সুর নিয়ে নতুন গান বেঁধেছেন এরা দু'জন। মোজার্টের সুরে সরাসরি বাণী বসিয়ে গান বেঁধেছেন সলিল চৌধুরী। এমন কি রবীন্দ্রনাথও তার একই গানে দুরকম সুর ব্যবহার করেছেন। কেউ তো কখনো বলেনি–তারা চুরি বা রাহাজানি করেছেন। কীর্তনেরও বিষয়টাও তাই। রবীন্দ্রনাথ পদাবলী থেকে সুর নিয়েছেন। সেখানে কথা বসিয়েছেন। অন্য পদকর্তাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আর রবীন্দ্রনাথ দক্ষিণ ভারতীয় রাগাশ্রয়ী গানগুলোকে ব্যবহার করেছেন নিজের মত করে। তাঁর টপ্পা গানগুলোর কথাও দক্ষিণ ভারতীয় গানের সুরভাণ্ডার থেকে নিয়েছেন। তিনি কোন গান থেকে তিনি নিয়েছেন–সবই বিবৃত আছে। কিছুই লুকোনো হয়নি। জ্ঞানপ্রসাদের বাংলা রাগাশ্রয়ী গানগুলোর সঙ্গে মূল রাগগুলিও শুনে দেখলে এ কথার প্রমাণ পাওয়া যায়।
সনদ পিয়ার লেখা একটি বিখ্যাত ঠুমরী গান ভেঙে রবীন্দ্রনাথ বাংলা ঠুমরী গান লিখেছেন। মুল ঠুমরীটি গিরিজা দেবী গেয়েছেন। আর রবীন্দ্রনাথের গানটি নীলিমা সেনের গলায় শুনলেও এর মাধুর্য টের পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথ এভাবেই বাংলায় ঠুমরীর রসটি সফলভাবে বাঙালির করে রবীন্দ্রনাথ সনদ পিয়ার ঠুমরীটি ভেঙে যখন খেলার সাথী গানটি করলেন, তখন কিন্তু বাঙালি ঠুমরীর আস্বাদটি নিজের করে পেল। ঠুমরী তো এক সময় দরবারী সঙ্গীত ছিল। সেখানে বাঙালির পরিচয় খুব বেশি ছিল না। রবীন্দ্রনাথ যখন এই ঠুমরীর সুরে বাণী বসালেন–দেখেন কী বিষাদ আর হাহাকার আমাদের মনে পৌঁছে দিলেন। ঠুমরীর দরবার মনের প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়ল।
খেলার সাথি, বিদায়দ্বার খোলো–
এবার বিদায় দাও।
গেল যে খেলার বেলা।।
ডাকিল পথিকে দিকে বিদিকে,
ভাঙিল রে সুখমেলা।।
রবীন্দ্রনাথ শুরুই তো করেছিলেন গান রচনা এভাবে। জ্যোতিদাদা পিয়ানোতে সুর তুলতেন–আর রবি সে সুরে কথা বসাতেন। রবীন্দ্রনাথের নিজের জবানীতে এই ইতিহাস আছে। এমনকি জ্যোতিদাদা নিজেও সেভাবে অনেক গান রচনা করেছেন। আর জ্যোতিরিন্দ্রনাথতো পাশ্চাত্য সঙ্গীতে কৃতবিদ্য ছিলেন। পিয়ানোতে তিনি পাশ্চাত্যগানের সুরই বাজাতেন।
জীবনস্মৃতিতে রবীন্দ্রনাথ লেখেন,
পিয়ানো বাজাইয়া জ্যোতিদাদা নূতন নূতন সুর তৈরি করায় মাতিয়াছিলেন। প্রত্যহই তাঁহার অঙ্গুলিনৃত্যের সঙ্গে সঙ্গে সুরবর্ষণ হইতে থাকিত। আমি এবং অক্ষয়বাবু তাঁহার সেই সদ্যোজাত সুরগুলিকে কথা দিয়া দিয়া বঁধিয়া রাখিবার চেষ্টায় নিযুক্ত ছিলাম। গান বাঁধিবার শিক্ষানবিশি এইরূপে আমার আরম্ভ হইয়াছিল।
বাল্মিকীপ্রতিভা গীতিনাট্য রচনা বিষয়ে লেখেন, দেশী ও বিলেতি সুরের চর্চার মধ্যে বাল্মিকীপ্রতিভার জন্ম হইয়াছিল। ইহার সুরগুলি অধিকাংশই দেশি, কিন্তু গীতিনাট্যে তাহাকে তাহার বৈঠকি মর্যাদা হইতে অন্য ক্ষেত্রে বাহির করিয়া আনা হইয়াছে; উড়ায়া চলা যাহার ব্যবসায় তাহাকে মাটিতে দৌড় করাইবার কাজে লাগানো গিয়াছে।
তিনি গান রচনার এই পদ্ধতিকে বলেছেন সঙ্গীতের বন্ধন মোচন। এই গীতিনাট্যটির অনেকগুলি গানই বৈঠকি-গান-ভাঙা, অনেকগুলি জ্যোতিদাদার রচিত গতের সুরে বসানো এবং গুটি তিনেক গান বিলাতি সুর হইতে লওয়া। কালমৃগয়া গিতীনাট্য রচনা করেন কয়েকটি বিলেতি সুরে।
জ্যোতিদাদার সুরে রবীন্দ্রনাথের বসানো গানের তালিকা গানের বহি ও বাল্মিকীপ্রতিভার লেখা আছে। ২৫টির সন্ধান পাওয়া যায় গীতবিতানে।
এর মধ্যে–
১) অনেক দিয়েছ নাথ, ২) এত দিন পরে, সখী, ৩) এমন আর কতদিন চলে যাবে রে, ৪) ওকি সখা, মুছ আঁখি ৫) কে যেতেছিস আয় রে হেথা, ৬) খুলে দে তরণী, ৭) দাঁড়াও, মাথা খাও, ৮) দে লো সখী, দে পরাইয়ে গরে, ৯) দেশে দেশে ভ্রমি তব দুখগান গাহিয়ে, ১০) না সজনী, না, আমি জানি জানি, ১১) নিমেষের তরে শরমে বাধিল, ১২) নীরব রজনী দেখো মগ্ন জোছনায়, ১৩) প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন, ১৪) ভূল করেছিনু, ভুল ভেঙেছে, ১৫) সকলি ফুরাইল, ১৬) সখা হে, কী দিয়া আমি তুষিব তোমায়, ১৭) সখী, বল দেখি লো, ১৮) সমুখেতে বহিছে তটিনী, ১৯) সহে না যাতনা, ২০) হল না, হল না সই, ২১) হা সখি, ও আদরে, ২২) হায়রে, সেইতো বসন্ত ফিরে এল, ২৩) হাসি কেন নাই ও নয়নে, ২৪) হৃদয়ের মনি আদরিণী মোর ২৫) গেল গো–ফিরিল না, চাহিল না।
গানের বহিতে–হিন্দিগান বিশেষের রাগ-রাগিনীর অনুসরণে রচিত হয়েছে এরূপ গানের সংখ্যা ৯০/৯২টি। আরও কিছু তালিকা করেছেন রবীন্দ্রনাথের স্নেহ ধন্য ইন্দিরা দেবী। পুরাতন গানকে ভাঙিয়াও রবীন্দ্রনাথ অসংখ্য রচনা করেছেন। তার তালিকাও পাওয়া যায়। কোনো কিছুই গোপন করা হয় নাই। কারণ এটা গান রচনারই একটি প্রচলিত পদ্ধতি।
এবার দেখুন কালমৃগয়া ও বাল্মিকীপ্রতিভা গীতিনাট্যে কতকগুলি গানে ইংরেজি স্কচ আইরিশ সুর দেওয়া হয়েছে। তার তালিকা–
১) ও দেখবি রে ভাই, আয়রে ছুটে : The Victor of Bray,
২) তুই আয় রে কাছে আয় : The British Grenediers,
৩) ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে : Ye banks and braes.
৪) মানা না মানিলি : Go where glory wait thee,
৫) আহা আজি এ বসন্তে : Go where glory wait thee,
৬) তবে আয় সবে আয় : অজ্ঞাত
৭) কালি কালি বলো রে আজ : Nancy Lee
৮) মরি, ও কাহার বাছা : Go where glory wait thee
৯) ওহে দয়াময় :Go where glory wait thee
১০) কতবার ভেবেছিনু : Drink to me only
১১) পুরনো সেই দিনের কথা : Auld Lang Syne.
বঙ্গভঙ্গ নিয়ে যখন সারা দেশ উত্তাল তখন রবীন্দ্রনাথ ভাবের দিক থেকে ইন্ধন যুগিয়েছেন গান লিখে। বাংলার নিজস্ব বাউল সারি ভাটিয়ালি রামপ্রসাদী প্রভৃতি সুরে অনেকগুলি গান লিখেছেন। লোকপ্রচলিত বা পুরাতন বাংলা গানের সুরে রচিত গানের তালিকা–
১) এবার তোর মরা গাঙ্গে : ( মন-মাঝি সামাল সামাল)
২) যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে : (হরিনাম দিয়ে জগৎ মাতালে)
৩) আমার সোনার বাংলা : (কোথায় পাব তারে/ লেখা আছে– মূল বাউল সঙ্গীতটি শিলাইদহে গগন হরকরার নিকট পাইয়াছিলেন)
৪) বেঁধেছ প্রেমের পাশে : (চাঁচর চিকুর আধো)
৫) ক্ষমা আমায়–আমায় : (জয় জয় ব্রহ্মণ ব্রহ্মণ) ।
বিদ্যাপতি, গোবিন্দদাস, বঙ্কিমচন্দ্র, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয়কুমার বড়াল, সুকুমার রায়, হেমলতা দেবীর ৮টি গানের সুর নিয়েও তিনি গান করেছেন। তার তালিকাও আছে
বেদমন্ত্র ও বৌদ্ধ মন্ত্রেও তিনি সুর দিয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন গানের সুর নিয়েছেন বিভিন্ন ভাণ্ডার থেকে। কোথা থেকে কোন সুরটি নিয়েছেন সব তথ্যই দেওয়া আছে। গানের বাণী তার নিজের। সুর সর্বপ্রাণের। এই সুর ও বানীর মেল বন্ধনে বাংলা গানের ধারা পুষ্ট হয়েছে। মিশেছে বিশ্বসঙ্গীতের প্রবাহে।
সূত্র.
----
রবিজীবনী : প্রশান্তকুমার পাল।
রবীন্দ্রজীবনকথা : প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়।
হাজার বছরের বাঙালি : গোলাম মুরশিদ।
রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়স্বজন : সমীর সেনগুপ্ত।
রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ : পূর্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায়।
আত্মজীবনী : মহর্ষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
ছিন্নপত্রাবলী : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় পরিচয় : গোলাম মুরশিদ।
রবীন্দ্র উত্তরসূরি : প্রফেসর ড. আবুল আহ্সান চৌধুরী।
কাঙাল হরিনাথ : প্রফেসর ড. আবুল আহ্সান চৌধুরী।
হারামণি : মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন।
সুধীর চক্রবর্তী : ব্রাত্য লোকায়ত লালন।
রবি ঠাকুর, রাহাজানি এবং রবীন্দ্র পূজারীবৃন্দ : ফরিদ আহমদ ও অভিজিৎ রায়--মুক্তমনা ব্লগ ও বিডিআর্টস।
সুজন চৌধুরী : সচলায়তন।
গানের লিংক :
-------------------------------------
আমার সোনার বাংলা গানটি আটজনের কণ্ঠে শুনুন– লিংক শুনে দেখুন আটজনের সুরের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে।
[url=http://www.youtube.com/watch?v=2OJN-nDg8iw&feature=youtu.be।]অমর পালের কণ্ঠে[/url] আমি কোথায় পাব তারে শুনুন–গগন হরকরার গানটিও শুনুন
ড. স্বপন বসুর গাওয়া গগন হরকরার কোথায় পাব তারে এবং রবীন্দ্রনাথের আমার সোনার বাংলা গানের লিংক। শুনে এই গায়ক ও গবেষক কী বলেন কী গাচ্ছেন
একটু খুঁজলেই পাওয়া যাবে– [url=–http://www.youtube.com/watch?v=DnZvc73nQCk&feature=youtu.be]গগন হরকরার একই গানের বহু ধরনি গায়কী।[/url]
কয়েকটি গান খেয়াল করুন–
————————————-
পদাবলী কীর্তনগুলো শোনাই–পর্ব ১. [url=http://www.esnips.com/doc/61ced3dc-d1dd-4f12-b11b-562b048717da/Sri-Radha...—Part-I]লিংক [/url]
পর্ব. ২. [url= http://www.youtube.com/watch?v=-iBHgDuKd9M&feature=related]লিংক[/url]
পদাবলী শুনুন -লিংক
কাজী নজরুলের একটি কীর্তন–[url=http://www.youtube.com/watch?v=MKIVnchdrbw&playnext=1&list=PLF9162A3219E... v=MKIVnchdrbw&playnext=1&list=PLF9162A3219E3E94B]লিংক [/url]
নাম সংকীর্তন–লিংক.
এই গানটির সঙ্গে পান্নালালের গাওয়া বলরে জবা বল কোথায় ঘন শ্যাম-গানটির সুরের কি মিল খেয়াল করুন।
রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু গানের সুর হিন্দি মুভিতেও ব্যবহার করা হয়েছে। শচীনদেব বর্মন করেছেন। যেমন, অভিমান ছবিতে তেরে মেরে মিলন কি এ রয়না–লিংক
রবীন্দ্রনাথের মূল গানটি শুনুন–লিংক
রবীন্দ্রনাথের জীবিতকালেই রবীন্দ্রনাথের গানের পেশাজীবী বাইজী বা গায়করা গেয়েছেন তাদের ইচ্ছে মত।
মন্তব্য
দারুণ গোছানো লেখা।ভালো লাগলো।কৃতজ্ঞতা জানবেন।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
দারুণ একটা গোছানো লেখা স্যার
ধন্যবাদ লিলেনদা। এটা নিয়ে অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে এবং তার মুরীদদের সঙ্গে আমার একটা বাহাস হয়েছিল। যুক্তিবাদি তাত্ত্বিক অভিজিৎ এবং তার সহলেখক ফরিদ আহমদ রবীন্দ্রনাথকে এই গানটি বাঁধার কারণে রবীন্দ্রনাথকে পুরো চোর ঠাউরেছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই তথ্যগুলো দেওয়া হয়েছিল।
মুক্তমনার অভিজিৎ রায় ও ফরিদ আহমদের এই লেখাটি যেহেতু মগবাজারদের আদর্শের সঙ্গে বেশ চলে সেকারণে লেখাটিই ইতিমধ্যেই বিডিআর্টসে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের দেওয়ালে আলো ঝলমলো করে ঝুলছে।
ইতিমধ্যেই মগবাজারী লোকজন অভিজিৎদের তথ্য নিয়ে নেমে পড়েছে। আশা করা হচ্ছে সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত, আমার দেশ, ইনকিলাবে তাদের লেখাটা যাবে।
কিন্তু সত্যিটা তো খুব বেশী যায় না। একটু খুঁজলেই আসল সত্যিটা বেরিয়ে আসে। আসলের মজাটাই অন্যরকম। শুভাশীষ দাশ লেখাগুলো করার জন্য তাড়া দিচ্ছিলেন। আর এমএমআর জালাল ভাই মাথা খারাপ করেছিলেন। তাই লেখাটা হল।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
একবার রবীন্দ্রনাথের একটি লেখা মৌলিক নয় বলে কথা উঠেছিল। তার উত্তরে তিনি খুব সুন্দর একটি কথা বলেছিলেন। আমি হুবহু কোট করতে পারছি না। রেফারেন্স দেবার ব্যাপারে আমার আলসেমী আছে। ভুল না হয়ে থাকলে এটি আমি সৈয়দ মুজতবা আলীর কোন একটি প্রবন্ধে। কী প্রবন্ধ, কোন বই, এখন কিচ্ছু বলতে পারবো না। মনে নেই, আর বইটা আমার নিজের সংগ্রহেও নেই। যাই হোক যেটা বলছিলাম।রবীন্দ্রনাথ যে কথাটা বলেছিলেন, তার ভাব অনেকটা এই রকম, মৌমাছি বিভিন্ন ফুল থেকে নির্যাস সংগ্রহ করে, নিজের পেটের রস মিশিয়ে মধু তৈরি করে। তাই মধু এত মধুউউউউউরররররর !!!!!
মধুর তোমার শেষ নাহি যে পাই।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
দুর্দান্ত একটা লেখা ...
চমৎকার গবেষণালব্ধ একটা লেখার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
চমৎকার একটা লেখা। খুব ভাল লেগেছে পড়ে, লেখাটা অনেক গোছানো আর লেখার পেছনের পরিশ্রমটাও চোখে পড়ল। খুব দরকারী লেখা মনে হয়েছে। আপনাকে ধন্যবাদ।
একটা বইয়ের রেফারেন্স দেওয়া দরকার ছিল--
রক্তের দাগ মুছে রবীন্দ্রপাঠ : ফরহাদ মজহার। আগামী প্রকাশনী। ৩৬ বাংলা বাজার, ঢাকা ১১০০, বাংলাদেশ। ফো্ন ৭১১১৩৩৫। প্রথম প্রকাশ ফাল্গুন ১৪১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৮। মূল্য ১০০.০০ টাকা।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
এই লেখাটার পরে মুক্তমনার অভিজিৎ রায় আমাকে ফেসবুকের ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে ব্লক করে দিয়েছেন।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
আশা করি অভিজিৎ রায় এখানে কিছু বলবেন।
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
কুলদা রায়,
আপনার রবীন্দ্র গবেষণা ও সুলেখনিকে সাধুবাদ জানাই।
তবে সময়-সুযোগ পেলেই অভিজিৎ রায় ও ফরিদ আহমেদ, তথা মুক্তমনা ডটকম-কে একচোট ধোলাই দেওয়ার জেহাদী প্রবনতাটি হাস্যকর। একই সূত্রে রাইসু এক্সপ্রেসের ট্যাগ সূত্রে অভিজিৎ-ফরিদকে 'জামাতি' বানানোর অতিমাত্রার সরলীকরণের গরলভেলটুকু নকশালী প্রবনতা বলে মনে হচ্ছে। সোনার কলম আপনার; সেই কলমের এমন অপব্যবহার সত্যিই খুব পীড়া দায়ক। এ বিষয়ে সচলে এবং মুক্তমনায় আপনি যা বলছেন, তা মোটেই সাবালক লেখকের আচরণ নয়।
বেয়াদপী হলে মাফ করবেন। আপনার বিনীত সুমতি ও সুবিবেচনা প্রার্থনা।
http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=19123
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
তো ???
এই কথাটা এইখানে বা এই পোস্টের মন্তব্যে কিভাবে প্রাসঙ্গিক হলো ? এই তথ্যে এই পোস্টের মেরিট কিভাবে বৃদ্ধি পেল ? (এই আপনিই না আবার অন্যত্র পদে পদে পোস্টের সাথে প্রাসঙ্গিক মন্তব্য করার জন্য সবাইকে ধমকান?)। এই তথ্য জেনে সচলায়তনের পাঠকদের কি হবে ? ফেসবুক একটা প্রাইভেট স্ফিয়ার - ওখানে কে কাকে নিজের ফ্রেণ্ড লিস্টে রাখবে বা রাখবে না সেটা সম্পূর্ণতই তার ব্যক্তিগত অধিকার এবং প্রেরোগেটিভ। এটা কবে থেকে পাব্লিক ইস্যু হলো ? আপনি সেটা নিয়ে এই রকম একটা পাব্লিক ফোরামে এসে অপ্রাসঙ্গিক এবং অযাচিতভাবে গায়ে পড়ে কান্নাকাটি করছেন কেন ?
২য়তঃ আপনি অভিজিৎ রায়কে ব্লগে ব্লগে কোন রকম হার্ড এভিডেন্স ছাড়াই জামাতের টাকা খাওয়া এজেন্ট, ফরহাদ মাযহারের চ্যালা, মগবাজারি, ভণ্ড, কুম্ভীলক, রবিন্দ্র-বিদ্বেষী, রাজাকারী-স্টাইল ইত্যাদি বলে অকথ্য গালিগালাজ করা থেকে শুরু করে তার প্রপিতামহ পর্যন্ত টেনে আনবেন, আর উনি তারপরও আপনাকে "ফ্রেন্ড" বলে গন্য করে কোলে তুলে নাচবেন, চুমা খাবেন - বলে আশা করেন আপনি ?? আর তা না করলে আপনি সেটা নিয়ে এখানে এসে কান্না জুড়বেন ? আর আমাদের সেসব ধৈর্য ধরে শুনতে হবে ? আজব তো !
আর হ্যাঁ, এমন একটা 'জামাতের টাকা খাওয়া এজেন্ট, ফরহাদ মাযহারের চ্যালা, মগবাজারি, ভণ্ড, কুম্ভীলক, রবিন্দ্র-বিদ্বেষী, রাজাকারী-স্টাইলের' লোকের ফ্রেণ্ড আপনি হলেনই বা কিভাবে ? নাকি আপনি নিজেও আসলে আরেক ছদ্ম জামাতি, ভণ্ড মগবাজারি ? আমি তো জামাতি বা রাজাকারের সাথে জামাতি বা রাজাকার ছাড়া আর কারো ফ্রেণ্ডশিপ সম্ভব বলে মনে করি না।
যাই হোক, দয়া করে এক ব্লগের ক্যাচাল আরেক ব্লগে টেনে আনার বা ব্লগ থেকে ব্লগে ছড়িয়ে দেয়ার এই বদভ্যাসটা বাদ দিন। ফেসবুকের তর্ক ফেসবুকে, মুক্তমনার তর্ক মুক্তমনাতেই শেষ করুন (এই কাজটা আপনি আগেও করেছেন - এই একই লোকের বিরুদ্ধে)। নিজেকে না পারুন, অন্তত সচলায়তনকে ক্রস-ব্লগ ক্যাচাল ভাইরাসের ইনফেকশন থেকে মুক্ত রাখুন। নয়তো অভিজিৎ-ফরিদদের বিরুদ্ধে আপনার এই জেহাদি জোশটা কিন্তু আসলে আপনার একটা অত্যন্ত কুদুলে, ক্যাঁচাইল্যা, এবং প্রতিহিংসাপরায়ন চেহারাই শুধু উম্মোচন করে।
এক্কেরে মনের কথা কৈছেন রে ভাই। কুলদা বাবুরে জ্ঞানের কথা কৈলেই আবার কত্তো কিচ্ছা কেত্তনই যে শুনতে হৈবো!
অভিজিৎ দার কথা শুনে একটু খারাপ লাগছে! এমন একজন অগ্রগামী মানুষের কাছ থেকে এ ধরণের ব্যবহার আশা করি নি। তিনি একজন পুরানো সচল, আশা করি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ তিনি নেবেন।
একটা সাম্প্রদায়ীক শক্তি সবসময়ই ইসলামী সংস্কৃতি আবিস্কার করতে চায়। যেখানে বাঙ্গালী বাদ দিয়ে কেবল মুসলমান সংস্কৃতি থাকবে। এর জন্য যত রকমের মিথ্যা আছে তাতে তাদের কিছুই যায় আসে না।
তাদেরকে খুসী করার জন্য একটা কাজ করা যেতে পারে-
পাকিস্তান জিন্দাবাদ
পাকিস্তান জিন্দাবাদ
পাকিস্তান জিন্দাবাদ
জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ- গানটি পূনরায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত করা যায়।
ধন্যবাদ জানাই কুলদা রায় আপনাকে, এবং লেখাটি লেখার জন্য আপনাকে যারা বাধ্য করেছে তাদেরকে। অন লাইনে একটা ডকুমেন্ট রইল। সত্যটা যারা জানতে চায় তারা জানতে পারবেন।
রবীন্দ্রসংগীতের কুম্ভিলবৃত্তী
প্রাসংঙ্গিক মনে হওয়ায় একজন অতিথি লেখকের একই বিষয়ে লেখার (বিশেষ করে আমাদের গানের সুর বিষয়ে) লিংকটা এখানে দিলাম।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
আসলে গানের লিংক দিয়ে দেখালে ভালো হয় যাতে পোস্টে থেকেই শোনা যায়।
ভালো ১টা কাজ করলেন কুলোদা'দা।
হাবলাগুলা ১টা গানের কথা বল্লেও এমনতো বেশ অনেক গান এবং অনেকের গান!
সব কটা গান একত্র করে ১টা পোস্ট দিবো ভাবছি.... কিছু গান পাচ্ছি না হাতের কাছে .... সব গান নেটে নাই... আমার কাছে যেগুলো আছে আপলোড করতে হবে কোথাও.... দেখি
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
কুলদা রায়,
আপনার গবেষণালব্ধ ও পরিশ্রমী লেখা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কে একটি বড় পদক্ষেপ এবং অনেকেরই ভুল ধারনা ভেঙ্গে দিতে বাধ্য। বিশেষ করে, চুরি করে যে 'রবীন্দ্রনাথ' হওয়া যায় না, তা বোঝার জন্য বড় বোদ্ধা হওয়ার দরকার নেই। যে গগন হরকরাকে অকুণ্ঠ চিত্তে রবীন্দ্রনাথ প্রশংসা করেছেন এবং শহুরে বাঙ্গালির কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, তার একটা সুর উনি মেরে দিয়েছেন বা সুর অ্যাডাপ্ট করেও ইচ্ছা করেই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেননি (পাছে চুরি ধরা পড়ে যায়!), এ হতেই পারে না; এমন ভাবনা খুবই কষ্টকল্পিত এবং এতে রবীন্দ্রনাথকে নয়, বরং নিজেদেরই ছোট করা হয়!
তবে মুক্তমনাতে আপনার প্রতিক্রিয়াগুলোও শোভন হয়েছে, এমন কিন্তু বলা যায় না। বিশেষ করে আপনার মত একজন বিদগ্ধ ব্যক্তির কাছে পাঠক হিসাবে আরও রুচিশীল ভাষা আশা করি!
ধন্যবাদ মামুন। আশা করছি--রবীন্দ্রবিরোধিতার স্বরূপটি আমরা বোঝার চেষ্টা করব। আগামী বিরোধিতার সকল ক্ষেত্রগুলিকেই প্রকাশ করা হবে। সঙ্গে থাকুন।
আমাকে আপনি ভুল বুঝেছেন। আমি কোনো অর্থেই বিদগ্ধ নই। আমার জানাশোনা খুবই কম। এবং নিঃসঙ্গ। ব্যক্তিগতভাবে গ্রামে কাদামাখা লোক। ভাষাটাও তাই নাগরিক হয় না চণ্ডপরিস্থিতিতে। আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি। এবং করছি আপনার কাছে।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
কুলদা রায়,
আপনার রবীন্দ্র গবেষণা ও সুলেখনিকে সাধুবাদ জানাই।
তবে সময়-সুযোগ পেলেই অভিজিৎ রায় ও ফরিদ আহমেদ, তথা মুক্তমনা ডটকম-কে একচোট ধোলাই দেওয়ার জেহাদী প্রবনতাটি হাস্যকর। একই সূত্রে রাইসু এক্সপ্রেসের ট্যাগ সূত্রে অভিজিৎ-ফরিদকে 'জামাতি' বানানোর অতিমাত্রার সরলীকরণের গরলভেলটুকু নকশালী প্রবনতা বলে মনে হচ্ছে। সোনার কলম আপনার; সেই কলমের এমন অপব্যবহার সত্যিই খুব পীড়া দায়ক। এ বিষয়ে সচলে এবং মুক্তমনায় আপনি যা বলছেন, তা মোটেই সাবালক লেখকের আচরণ নয়।
বেয়াদপী হলে মাফ করবেন। আপনার বিনীত সুমতি ও সুবিবেচনা প্রার্থনা।
http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=19123
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
বিপ্লব
১. প্রথম কথা হল কুলদা রায় কোনো গ্রুপের বা ব্লগের বান্ধা লোক নন। তিনি ছাতামাতা লেখেন। এবং যেখানে খুশী সেখানে লেখেন। ১০১% ফ্রিল্যান্স। তিনি কোনো ব্যক্তি, গ্রুপ, বা গোষ্ঠীর পারপাস সার্ভ করেন না। কেউ তার পীর নয়---কেউ তার মুরীদ নয়। এ বিষয়টার সঙ্গে আশা করি আপনার সঙ্গে কুলদা রায়ের ব্যবধান দুস্তর। সে কারণে সাবালকত্ব আর নাবালকত্বের সংজ্ঞাটায় আপনার সঙ্গে অমিলটা তাই খুব স্বাভাবিক। এমন দুজন লোকের পক্ষে আপনি সাফাই গাইতে এসেছেন যাদের একজনের বিরুদ্ধে প্রথম স্ত্রী নির্যাতন এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী হিসাবে সুনাম আছে এবং আরেকজনের বিরুদ্ধে জামাতি রাজনীতির ইতিহাস আছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২. মুক্তমনা বা কোনো ব্লগ বিষয়ে কুলদা রায় কখনোই সমালোচনা করেননি। তিনি ঐ সব ব্লগের নিয়ন্ত্রকদের জমিদারসুলভ আচরণের নিন্দা করেছে। এবং করবে। কারণ অন্তর্জালের কারণে মানুষের বাক স্বাধীনতার গণ্ডীটা অনেকটাই ভেঙে গেছে। কোনো নিয়ন্ত্রণকে আর কার্যকরী করা সম্ভব নয়। কারো আর পীর সাহেব হওয়ার সুযোগ নেই। তথ্যের অবাধ প্রবাহের সময় এসে গেছে।
৩. আপনার কথিত উক্ত দুই লেখকের বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার প্রশংসাই করেছেন কুলদা রায়। কিন্তু তাদের কোনো কোনো লেখা বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে লেখাটা অসত্য এবং পাকিপ্রচারণাপূর্ণ হওয়ায় সেটাকে জামাতি এজেন্ডার অংশ মনে করাটা খুব স্বাভাবিক। এবং পরবর্তীতে এই জামাতি এজেন্ডামূলক লেখাটা ছাগুরা ব্যবহার করছে। এবং করবে। পাকিছাগুদের ব্যবহার করতে দেওয়ার জন্যই সেটা লেখা হয়েছে।
৪. এখানে আপনার প্রদত্ত লিংকে কোনো বক্তব্যের বিষয়ে আপনার কোনো মন্তব্য নেই। আপনার সমর্থন হচ্ছে নয়া পীরতন্ত্রে। নোটটিতে মন্তব্য করার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকস্বাধীনতাকে হরণ করা হয়েছে। এই হচ্ছে সুপ্তফনাগিরি। নোটবহির্ভূত ব্যক্তিবিদ্বেষে ঘোষাণা দিয়ে আপনি সেখানে অংশ নিয়েছেন এবং সচলে সেটা করতে এসেছেন। এটাই যদি যুক্তিবাদিতার লক্ষণ হয়--কুলদা রায় সে যুক্তিবাদকে ঘৃণা করে।
৫. এই লেখার মেরিট নষ্ট করার উদ্দেশ্যে আপনার আগমন ঘটেছে। আপনাকে ধিক্কার জানাই।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
ফরিদ আহমেদ এক রাজাকারের মৃত্যুতে সচলে সহানুভূতিমূলক পোস্ট দিয়ে ব্যান হয়েছিলো না? (নাকি ...মারা খেয়ে গোস্বা করে চলে গিয়েছিলো?)। অনেক আগের ঘটনা, তবে বিষয়টা যে এক রাজাকারকে নিয়ে ছিলো তা পরিস্কার মনে আছে।
আর বিপ্লব রহমানকে অনেক দিন পরপর সচলায়তনে দেখি। পুরনো ব্লগারদের দেখতে ভালোই লাগে। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় সচলায়তন নিয়ে বিষোদগার দেখতে ভালো লাগে না। যে পোস্টের লিংক দিয়েছেন, সেখানে আপনার এই কমেন্ট দেখলাম-
আপনার কমেন্টের বিষয়ে মডারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ফরিদ আহমদ ব্যক্তিগতভাবে জামাতি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি মুক্তমনার ঐ পোস্টে মন্তব্য করেছেন যে তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন পিলসুজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কুলদা রায় তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পুরোটাই পিলসুজে কাজ করেছেন। পিলসুজের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বিবিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। ফরিদ আহমদের দাবী অসত্য। তিনি না কবিতা লিখতেন, না গান গাইতেন, না আবৃত্তি করতেন, না অভিনয় করতেন, না পোস্টার লিখতেন। উনি কিছুই ছিলেন না। বিএনপি-জামাতি আমলে উনি পিএসসির মেম্বর প্রফেসর মাহফুজার রহমানে সহযোগী ছিলেন। মাহফুজার কোটি কোটি টাকা দূর্নীতি করে এখন ফেরার। ফরিদ আহমদ সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠীর লোক ছিলেন। বিপ্লব এসব তথ্য জানেন না। তার হয়ে তিনি কথা বলছেন।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
প্রথম কথার প্রথম বাক্যের সঙ্গে একমত। সঙ্গে আরেকটু যোগ করে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, কুলদা রায়ের মতো আমরা যারা ব্লগে যে সামান্য লেখালেখি করি, তারা সবাই-ই "কোনো গ্রুপের বা ব্লগের বান্ধা লোক" নই, তারা কুলদা রায়ের মতোই "যেখানে খুশী সেখানে লেখেন। ১০১% ফ্রিল্যান্স।"
তাই নিজেকে এতো সুমান বা উচ্চস্তরের ভাবার কোনো কারণ নেই। পীর-মুরীদানের বিষয়টি অবান্তর। তাই কুলদা রায়ের সঙ্গে বিপ্লব রহমানের ব্যবধানটি এ পয়েন্টে খুঁজে পাওয়া গেল না বলে দুঃখিত।
তবে কুলদা রায়ের প্রকাশ্য নাবালকত্ব নিয়ে একা বিপ্লব রহমানই বলছেন, না এই পোস্টের মন্তব্যর ঘরে অনেকেই বলছেন দেখছি-- যা তাদের সাবালকত্বই প্রমান করে।
আবারো ভুল বকছেন দেখছি, আমি কোনো সাফাই গাইতে আসিনি, দুজন প্রতিষ্ঠিত অগ্রসর লেখকের বিরুদ্ধে আপনার সীমাহীন ব্যক্তি কুৎসার প্রতিবাদ করছি মাত্র। ... আর আপনি ব্যক্তি কুৎসাটি এখানে-সেখানে রটনা করে বেড়াচ্ছেন কোনো রকম তথ্য-প্রমান ছাড়াই যা এখন বিকারে পরিনত হয়েছে। দেখুন, লিংক-১, লিংক-২।
মাফ করবেন। 'মুক্তমনা বিরুদ্ধ মতকে কঠোরভাবে দমন করে' এই আপত্তিকর ও অশালীন উক্তি ব্যবহার করে সেখানের ব্লগপোস্টে আপনি রীতিমত গণরোষের কবলে পড়েছিলেন, তারপরেও এর দুজন অগ্রসর লেখক ও মডারেটরের ব্যক্তি কুৎসায় নেমে এখন মুক্তমনা থেকে অভি-ফরিদ'কে আলাদা করার প্রবনতাটি বেশ হাস্যকর ঠেকছে।
এ ক ম ত। এ কারণেই আপনার পাঠককেরাই এখন সুলেখনির পাশাপাশি আপনার সীমাহীন বালখিল্যতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। কারণ আর কিছু্ই না -- কারো আর পীর সাহেব হওয়ার সুযোগ নেই। তথ্যের অবাধ প্রবাহের সময় এসে গেছে।
অর্থাৎ অভি-ফরিদের বিজ্ঞান ও রবীন্দ্র বিষয়ক অবিজ্ঞান সমান সক্রিয়, তাই না? আজব! তাদের লেখার খাটোত্ব থাকলেই (অবশ্য যদি তা থাকে), জামাতি এজেন্ডার হয়ে যাবে কেনো? ডাবল আজব আপনার সর্পবিলাস!!
তাই? সেখানে বা এখানে আর যারা আপনার ব্যক্তি কুৎসা রটনার প্রতিবাদ করছেন, তারা সবাই-ই পীরতন্ত্রী?? লা জবাব দিল্লী...
শাবাশ কুলদা রায়! ব্লগারদের অনুরোধে মন্তব্য করার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হলেই সেটা "সুপ্তফনাগিরি" হয়ে যায়, তাই না? অদ্ভুদ আপনার যুক্তেবোধ!!!
দুঃখিত। আপনি হয় আমার মন্তব্যগুলো ভালো করে পড়েননি, নয় তো সেগুলো আপনার বোধগম্য হয়নি। আমি কখনোই আগ বাড়িয়ে নোট বহির্ভূত কোনো ব্যক্তিবিদ্বেষমূলক মন্তব্য করিনি, সচলের চলতি পোস্টে এবং মুক্তমনার এই পোস্টে যে টুকু মন্তব্য করা হয়েছে, তা প্রসঙ্গক্রমেই করা হয়েছে, কথার পিঠে কথা বলতে আসা মাত্র।
আপনার ধিক্কার বহাল থাকুক। তবে কথা হচ্ছে, অধমের এই আগমনটি আপনিই আহ্বান করেছেন, দ্রষ্টব্য: "এইখানে গান নিয়া আলোচনা চলিতেছে" লেখার লিংকসহ শেষ তিনটি বাক্য:
বেয়াদবী হইলে ক্ষমা করিবেন।
আমিন।
সূত্র : সচলায়তনের একটি পোস্ট। লিংক।
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
বিপ্লব,
১. কুলদা রায় কখনো কারো হয়ে ভাড়া খাটতে যায়নি কোথাও। আপনাকে এখানে সেই ভূমিকাতেই দেখা যাচ্ছে। এবং আপনার ব্লগীয় অবস্থান সম্পর্কে আপনি তথ্যগোপন করেছেন। আপনি কয়েকটি ব্লগ বা গ্রুপেরই বান্ধা লোক। যথেষ্ট প্রমাণ আছে। সুতরাং কুলদা রায়ের ফ্রিল্যান্সগিরির সঙ্গে আপনার পার্থক্য মৌলিক। আপনি অসত্য বলেছেন। কুলদা রায় অসত্য বলেননি। একটি ব্লগের সহযোগী গ্রুপ থেকে আপনার ব্যক্তিগত স্বার্থপর তৎপরতার জন্য আপনাকে এডমিন পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কি প্রমাণ করে ঐ গ্রুপের এডমিন পদপ্রাপ্তি বিষয়ে?
আপনা কর্তৃক প্রদত্ত লিংকে উল্লেখিত নোটে বা নোটদ্বয়ে কুলদা রায় কোনো ব্যক্তির নাম উচ্চারণ করেননি। সঙ্গীত রচনার একটি কৌশল বিষয়ে সেখানে আলোচনা করা হয়েছে। ঐ নোটে কুলদা রায় বিষয়ের ট্রাকে থাকার জন্য বারবার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু বিষয় বাদ দিয়ে আপনারা কতিপয় সেখানে তীব্রভাবে কুলদা রায়কে আক্রমণ করেছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে কুলদা রায় এক পর্যায়ে প্রস্তাব করেন--এই নোটটি যেহেতু সঙ্গীত বিষয়ক, সুতরাং নোটটির মেরিট নষ্ট না করে কুলদা রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো নিয়ে আলাদা পোস্ট দেন। সেখানে আলোচনা করা যেতে পারে। এই নোটের লিংকদুটো ক্লিক করে দেখুন বিপ্লব, আপনারা কিভাবে অভিমন্যু বধে নেমেছেন, কিভাবে অসত্য বলছেন যে কুলদা রায় ঐ নোটে ব্যক্তি বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন। সত্যি হল--কুলদা রায় শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন শান্ত থাকতে। যৌক্তিকভাবে নোটের ট্রাকে থাকতে। আপনারা কতিপয় ষঢ়যন্ত্র করে কুলদা রাযকে বাধ্য করেছেন ব্যক্তি আক্রমণের জবাব দিতে। এর দায় কুলদা রায়ের নয়। আপনাদের। আপনাদের উদ্দেশ্য একটি অসৎপোস্টের বিরুদ্দে তথ্যপূর্ণ লেখাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে নিয়ে যাওয়া। দুষ্কৃতিকারীদের রক্ষা করা।
২. মুক্তমনা ব্লগে কুলদা রায় নিজে থেকে সদস্য হননি। আপনি তাকে সদস্য করেছেন এডমিনের মাধ্যমে। সে সময়ে যে মেইল করেছিলেন--তা কুলদা রায়ের কাছে আছে। কুলদা রায় যখন দেখলেন--ব্লগটি প্রাতিষ্ঠানিকতার বাইরে ব্যক্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তখন তিনি সেখানে না লেখার কথা জানান। আপনিই তাকে সেখানে লিখে যেতে অনুরোধ করেন।
মুক্তমনার যে সমালোচনার কথা উল্লেখ করেছেন, তার বক্তব্যটি খেয়াল করেন। সেখানে স্পষ্টভাবে মুক্তমনার নীতিমালায় ঘোষিত আদর্শচ্যূতি বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সেখানে বিরুদ্ধ মতকে কঠোরভাবে দমন করা হচ্ছে। কে করছেন? মুক্তমনা কি নিজে এই কাজটি নিজে করতে পারে? পারে না। কিছু ব্যক্তি করতে পারেন। ব্যক্তির সে ক্ষমতা আছে। এই ব্যক্তিবাদকেই এই বাক্যে নির্দেশ করা হয়েছে। দেখুন, ব্যক্তি পাল্টে গেলে প্রতিষ্ঠানটির চরিত্র বদলায়। নয় কি?
৩. যে বা যিনি বিজ্ঞান, যুক্তিবাদ, বাক স্বাধীনতা কথার বলছেন, তিনি বা তারা কি করে কোনো রকম বৈজ্ঞানিক বা যুক্তিবাদি পন্থায় তথ্য যাচাই না করে অসত্য তথ্য পরিবেশন করে রবীন্দ্রনাথকে চোর এবং রাহাজানকারী ঠাউরান? এই অযৌক্তিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়েই আপনাকথিত বৈজ্ঞানিকতার সঙ্গে অবৈজ্ঞানিকতার একটি গুপ্ত মৈত্রী খুঁজে পাওয়া যায়। রবীন্দ্রবিদ্বেষ পাকজমানা থেকেই সাম্প্রদায়িক-প্রতিক্রিয়াশীল চক্র করে আসছে। এখানে রবীন্দ্রনাথ নয়--একটি চেতনার বিরুদ্ধেই অপপ্রচারের মত গুপ্ত অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং তাকে বা তাদেরকে অবৈজ্ঞানিক-অযৌক্তিক-বিভ্রান্তিকর লেখক হিসেবে সনাক্ত করা কি ভুল?
৪. এই যে আপনি বিপ্লব রহমান, মুক্তমনা ব্লগে, উন্মোচনে এবং সচলায়তনে যে বক্তব্য নিয়ে হাজির হয়েছেন, তাতে কিন্তু কুলদা রায় লিখিত নোটের কোনো বক্তব্যের বিরোধিতা বা মতামত প্রদান করেননি। আপনি এসেছেন--দুজন অভিযুক্ত ব্যক্তি বিষয়ে সুসমাচার প্রচার করতে। এটা কি আপনার পীরতন্ত্রের প্রতি অগাধ আস্থাকেই প্রমাণ করে না?
৫. আপনাকে সচলে অন্ধ পীরবাদ প্রচারের জন্য আমন্ত্রণ করেছেন কুলদা রায়? নেভার। আপনি কেন--কাউকেই কোনো পীরবাদ প্রচারের জন্য আমন্ত্রণের দায় পড়েনি কুলদা রায়ের। কারণ কুলদা রায় কখনোই পীরবাদের পক্ষে নন।
পরিশেষে, আপনি লেখেন ভাল। কিন্তু আপনি ভীষণভাবে উদ্দেশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। এটা অযৌক্তিক এবং অবৈজ্ঞানিক। সভ্যতা একে সম্মান করে না। আপনার সুমতি আশা করি।
ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
কুলদা রায় আর বিপ্লব রহমানের কাজিয়া দেখে মনে হল এনারা দুইজন মিলে যোগসাজশে মুক্তমনায় ফেলে আসা ময়লা সচলায়তনে টেনে আনছেন। বিপ্লব রহমান অভিজিত-ফরিদের বন্ধু সেজে কায়দা করে ঠিকই তাদের নামে মুক্তমনায় করা কিছু রটনা সচলায়তনের পাঠকদের জন্য তুলে দিল। এই লোক তো সাক্ষাত বিভিষন। আর বিপ্লবের মতো নেশাখোর কেন অভিজিত রায়ের মতো যুক্তিবাদি লেখকের মুক্তারি করে? অভিজিত রায় নিজেই তো এসে কথা বলতে পারেন।
সত্যি সত্যি এই কাজিয়াতে আমি বিরক্ত বোধ করছি।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
কাজিয়া ডাইকা আর কতো সাধু সাজপেন কুলদা বাবু? আপ্নে দেহি অভিজিত-ফরিদরে বাদ দিয়া অহন বিপ্লব বধে নামছেন! আপ্নের কুরটনার জবাব দিলেই এত্তো কিচ্ছা-কেত্তন ফাঁইদা বসেন কেনু ভাই? আপ্নে দেখি শুধু রবীন্দ্র গোবেষকই না, বিয়াফক বিনোদন!...
হ। ঠিকই কইসেন। হুনছি সে নাকী আবার মেথরপট্টেতেও যায়!!
বেশ পরিশ্রম সাধ্য গোছানো লিখা । ধন্যবাদ কুলদা রায় ।
রবীন্দ্রনাথের বিশাল সরোবরে কালিমা নিক্ষেপ নিমেষেই মিলিয়ে যায়। বরং কালিমা সেখানে শুদ্ধিলাভ করে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
অনেক ধন্যবাদ।
দারুন লাগলো লেখাটা।
খুব চমৎকার গুছিয়ে লিখেছেন। ভালো লাগল।
facebook
জরুরী এবং প্রাঞ্জল...
রাগিব ভাই এর সাথে সহমত, এ সম্বন্ধে লেখকের মতামত আশা করছি। আরেকটি বিষয়, বিডি আর্টস এ রবীন্দ্রনাথ এর বিজ্ঞান বই লেখাকেও চুরি বলা হয়েছে, এ বিষয়ে লেখকের যুক্তি জানতে চাই।
রবীন্দ্রনাথের বিশ্বপরিচয় বইলেখাকে অভিজিৎ রায় এবং ফরিদ আহমদ রাহাজানি হিসেবে অভিহিত করে মুক্তমনায় লিখেছেন। সেটা বিডি আর্টসে প্রকাশিত হয়েছে। এই তথ্য নিয়ে অনেকেই রবীন্দ্রনাথকে এখন বইচোর হিসাবে চিহ্ণত করছেন।
এই রাহাজানি বা বইচুরি নিয়েই আজ লিখতে বসেছিলাম আমরা দুজন। এর মধ্যে সময় করা একটা জরুরী বিষয়। গানচুরি নিয়ে আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর তৈরি লিখতে হচ্ছে। একরণে বই বিষয়টি নিয়ে লিখতে একটু সময় লাগবে। মনে হয় তিন চারদিনের মধ্যেই করা যাবে।
তার আগে আমার সোনার বাংলা গানটি নিয়ে আলোচনা হোক। আসুন এই গানটিতেই আলোচনা নিবদ্ধ রাখি।
আপনাকে ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
রবীন্দ্রনাথের আরও কিছু বাউল গান শুনুন--লিংক
রবীন্দ্রনাথের গানের কিছু আলোচনা শুনুন--লিংক
আরেকটি গানের লিংক
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
নামটা 'রবীন্দ্রনাথ' বলেই এত যুক্তি, এত তর্ক হচ্ছে।
কুলদা রায় মহাশয়, অসাধারণ একটা পোস্ট।
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
বাংলা গানের ইতিহাসটা কিন্তু খুব বেশি জানা যায় না। আর্যদের সঙ্গীতের সঙ্গে স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গীতের সংযোগ এবং সমন্বয় ঘটেছিল। তাদের সঙ্গীতে বঙ্গাল এবং ভাটিয়ালির মতো রাগিনীর নাম পাওয়া যায়। আবার অনেক রাগিনীর নামের সঙ্গে গৌড় নামটি যুক্ত দেখা যায়। যেমন গৌড় মল্লার, গৌড় সারেঙ্গ। আসলে এগুলো মূল মল্লার রাগের বঙ্গীয় সংস্করণ। মল্লার রাগ ভেঙে এই গৌড় মল্লার সৃজিত হয়েছিল।
গীত গোবিন্দ সেন রাজাদের আমলে জয়দেব সংস্কৃত ভাষায় রচনা করলেও বঙ্গে বহুলভাবে গীত হত। গীতগোবিন্দে মাত্র ১২টি রাগিণী ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিটি পদে তালের নামও লেখা আছে। তালের সংক্যা ৫টি। একতাল, অষ্টতাল, যতি, রূপক ও নিঃসার। এখানে একটি রাগের নাম হলো মালবগৌড়। এ নাম থেকে বোঝা যায় উত্তর ভারত থেকে আসা মালব রাগটি ভেঙে বাংরার সঙ্গীত রচয়তারা মালবগৌড় রাগটি করেছিলেন। বড়ু চণ্ডিদাসের শ্রীকৃষ্ণকির্তন রচিত হয় গীত গোবিন্দর রচনার ২৫০-৩০০ বছর পরে। এর মধ্যে চর্যাপদের গুর্জরী, বরাড়ী, দেশাখ, ভৈরবী, পটমঞ্জরী, মল্লার, ভাটিয়ালি এবং বঙ্গাল রাগ ব্যবহৃত হয়েছিল।
পনের শতকের আগেই বঙ্গদেশে এবং বাংলা ভাষায় সুবদ্ধ সঙ্গীত বেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভাটিয়ালি এক হাজার বছর ধরে ভাটিয়ালি প্রচলিত আছে। দক্ষিণ ভারতে বাংলার ভাটিয়ালি আছে। তবে তার দুটো রূপ। একটা বাউলাঙ্গে আরেকটি লোক সুর হলেও তার সঙ্গে বাংলার গানের মিল নেই।
কীর্তন গান থেকেও পশ্চিম ও মধ্যবঙ্গে এক ধরনের লোক সঙ্গীত আছে। এটা ছিল শ্রীচৈতন্যের নাম-কীর্তন। কোনো জটিল বা বিদগ্ধ সুরে এটা গাওয়া হত না। পরে অবশ্য শাস্ত্রকারদের হাতে পড়ে এই নাম-সংকীর্তনের মধ্যে রাগরাগিণী ঢুকে পড়ে। এটা ষোল শতকের ঘটনা।
পদাবলী কীর্তনে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের নিয়মকানুন অনুপ্রবেশ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে রচয়িতা আর সুরকাররাও ভিন্ন হত। ধীরে ধীরে উত্তর ভারতীয় সুবদ্ধ রাগ-রাগিণীর সঙ্গে রাঢ় ও মরধ্যবঙ্গের লোকগীতির মিশ্রণও হয় পদাবলী কীর্তনে। কীর্তনে যে-বিশিষ্ট ভাবটি লক্ষ করা যায় তা কিন্তু এখন আর উত্তর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের নয়--বঙ্গীয়।
বড়ে গোলাম আলী খাঁ সাহেবের একটা ঠুমরী শুনাতে ইচ্ছে করছে। সাইয়া গেয়ে পরদেশ--লিংক .
আরেকটি বাংলা ঠুমরী শুনুন। গেয়েছেন--বেগম আখতার। পিয়া ভোলো অভিমান নিশিরাত বয়ে যায়--লিংক
এই ঠুমরীটি পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তির কণ্ঠে শুনুন--লিংক
বড়ে গোলাম আলী খায়ের পাতিয়ালা ঘরানার এই ঠুমরীটি জ্ঞানপ্রকাশ যখন বাংলায় করলেন তার নাম দেওয়া হল রাগাশ্রয়ী বাংলা গান। সুরে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলা কথা। আবার বাংলায় যখন আসছে তখন কিন্তু ধীরে ধীরে পাতিয়ালা ঘরানা অনেকটা পাল্টে যাচ্ছে। গায়কীটা লক্ষ করুন--বেগম আখতার যখন করছেন, তিনি মূলত হিন্দুস্থানী ঠুমরী গায়িকা, তিনি যখন জ্ঞানপ্রকাশের সুরে বাংলায় গাইছেন--তখন তার গায়কীতে পাতিয়ালার মূল ফ্লেবারটা থাকছে। কথার চেয়ে সুরের প্রতাপ কাজ করছে। কিন্তু অজয় চক্রবর্তী যখন গাইছেন--তখন তা বাংলার বাণীর হাত ধরে মাধুর্য এবং লাবণ্য এসে যাচ্ছে। সেখানে সুর প্রধান নয়--বানী এসে সুরকে মুক্তি দিচ্ছে।
এই স্টাইলটাকেই বলা হচ্ছে ভাঙা গান। তৎকালীন কোলকাতায় যে বিরাট জনগোষ্ঠী তখন এবং তার পরবর্তী এক শতাব্দি ধরে সমবেত হয়েছিলেন, তারা বঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা ধরনের গান নিয়ে এসেছিলেন। কোলকাতায় সে গানগুলো পরিশীলিত লাভ করে সারা বাংলাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছিল। কোলকাতায় হিন্দুস্থানী গায়করাও গান নিয়ে এসেছিলেন। তাছাড়া কালি মীর্জা এবং নিধুবাবুর মতো অনেক বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ উত্তর ভারত থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখে এসেছিলেন। এভাবে বাংলা গান বিকাশ লাভ করেছিল আদানপ্রদানের মাধ্যমে।
দাশরথি রায়, শ্রীধর কথক, গোপাল উড়ে এবং মধু কাণরাও বাংলা গান রচনার জন্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীত লিখেছিলেন। গোপাল উড়ের বিখ্যাত গান---শ্যাম তুমি বাঁকা, এ মালা তোমার, অই দেখা যায় ঘরখানি, একটু খানি পাশ ফিরেছি, দাশরথী রায়ের লেখা যৌবন যোয়ারে বাড়ি, আর কি থাকে কুল। একটু খুজলেই এগুলোর মূল শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রূপটি পাওযা যাবে।
রামমোহন রায় গান শিখেছিলেন কালী মীর্জা এবং রহিম খাঙ নামে ওস্তাদের কাছে। তিনি একই সময় ধ্রুপদও শিখেছিলেন। এই ধ্রপদী রাগ ভেঙেই তিনি গুরু গম্ভীর উপসনা গান লিখেছিলেন। তাঁর একটি গান-কী স্বদেশে কি বিদেশে যথায় থাকি শুনুন।
এই সময় ইউরোপীয় সঙ্গীতের ধারা এসে মেশে বাংলা গানে। ইউরোপীয় সঙ্গীত যন্ত্র এবং স্বরলিপি বা নোটেশন করার পদ্ধতি বাংলা গানকে একটি গাঠনিক মর্যাদা দিয়ে ফেলে। ফলে স্বর মুখ পরম্পরায় সুর বিকৃতির আশঙ্কা কমে গেল।
পাথুরী ঘাটার শৌরিন্দ্রমোহন ঠাকুর দেশী এবং ইউরোপীয় উভয় ধরনের সঙ্গীত শিক্ষা করে তিনি সঙ্গীতের ক্ষেত্রে একটি জাগরণী ভূমিকা পালন করেন। অক্সফোর্ড বিশ্বিবদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব মিউজিক উপাধী দিয়েছিল। ১৮৬৫ সালে পর থেকে দিবজেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ , জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ স্বদেশী গান রচনা করতে শুরু করেন। তাদের সঙ্গে কিশোর রবীন্দ্রনাথ যোগ দিয়েছিলেন। উনিশ শতকে তখন সঙ্গীতেও রেনেসাঁ এসেছিল।
তার আগে একটু
রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রনাথ রায়, অতুলপ্রসাদ, গিরীশ চন্দ্র ঘোষ, রজনীকান্ত, কাজী নজরুল ইসলাম গান রচনা করছেন এর পরে। কিন্তু তারা সকলেই কিন্তু ভারতীয় শাস্ত্রিয় সঙ্গীত শিখেছিলেন। প্রথম চারজন ইউরোপীয় সঙ্গীত শিখেছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম উর্দু, ফার্সি গজল শিখেছিলেন। ফলে তারা সকলেই কিন্তু ভাঙা গানের আদর্শে গান লিখেছিলেন। কাউকেই কিন্তু চোর বলা হয়নি। দ্বিজেন্দ্রলালের ধনধান্যে পুষ্পে ভরা এই গানটিও কিন্তু একটি উইরোপীয় গানের সুর থেকে ভেঙে নেওয়া। এসডি বমর্নের নিশিতে যাইও ফুলবনে গানটির রচয়িতার নাম কবি জসীমউদ্দিন। মজার কাণ্ড হল এই গানটি একটি লোক গানের অনুসরণে লেখা। বলা যায় সুর নয় বানীও অনেকাংশে তিনি অনুসরণ করেছেন। অমর পালের কণ্ঠে লোকগানটি শুনতে পারবেন। আমাদের নেত্রকোণার বারী সিদ্দিকীর আমার গায়ে যত দুঃখ গানটা করেছেন মীরার ভজন ভেঙে।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
নিশিতে যাইও ফুলবনে গানটি অমর পালের কণ্ঠে শুনুন। এটার একটা লোক সঙ্গীত। লিখেছেন শেখ ভানু । এই গানটিই জসীমউদ্দিন লিখেছেন। গেয়েছেন--এসডিএ বর্মন।
ভানু শেখের গানটি--
শিল্পী : অমর পাল
--------------------------
নিশিতে যাইও ফুল বনে
জ্বালাইয়া দিলের বাতি
কত রঙ্গে ধরবে ফুলের কলি রে ভোমরা
নিশিতে যাইও ফুলবনে।।
নয় দরোজা করিয়া বন্ধ
লইও ফুলের গন্ধ,
জপিও ফুলের নাম রে ভোমরা
নিশিতে যাইও ফুলবনে।।
দল পাতা বৃক্ষ নাই
এমন ফুল ফুটাইছে সাঁই,
ভাবুক ছাড়া না বুঝে পণ্ডিতে রে ভোমরা
নিশিতে যাইও ফুলবনে।।
অধিন শেখ ভানু বলে
ঢেউ খেলাইও আপন দিলে রে,
পদ্ম যেমন ভাসবে গঙ্গার জলে রে ভোমরা
নিশিতে যাইও ফুলবনে।।
জসীমউদ্দিনের রচনা
শিল্পী : এসডি বর্মন
---------------------
নিশিতে যাইও ফুলবনে
জ্বালাইয়া চান্দেরও বাতি রে
জেগে রব সারা রাতি গো
আমি কব কথা শিশিরের সনে রে ভোমরা
নিশিতে যাইও ফুলবনে।।
যদিবা ঘুমাইয়ে পড়ি
স্বপনেরও পথ ধরি গো
তুমি তুমি নীরবে চরণে যাইও গো রে
নিশিতে যাইও ফুলবনে।।
আমার ডাল যেন ভাঙে না
আমার ফুল যেন ভাঙে না
ফুলের ঘুম যেন ভাঙে না
তুমি তুমি নীরবে চরণে যাইও গো রে
নিশিতে যাইও ফুলবনে।।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
লেখাটি ভাল, তাই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার জন্য ফায়ারফক্সের ডিফল্ট প্রিন্ট অপশন ব্যবহার করে পিডিএফ হিসেবে সেভ করতে চাইলাম কিন্তু হল না। মাত্র একটি সাদা পেজ পিডিএফ হয়েছে। এটা কি কোন সমস্যা?
সম্ভবত এটা ফিচার, সমস্যা নয়।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
প্রিন্ট বন্ধ রাখা হয়েছে।
জনাব শুভাশিষ দাশ এবং এমএমআর জালাল সাহেবকে অশেষ ধন্যবাদ। উনাদের তাড়াতেই এতো সুন্দর গোছানো একটা লেখা পাওয়া গেল।
বেশি জ্ঞাণী লোকেদের মুখে রবীন্দ্রনাথের গান/ সুর রাহাজানির গপ্পো শুনে শুনে অনেক ত্যাক্ত হয়েছি। এরপর কেউ কিছু বললে এই লেখাটা ধরিয়ে দিতে পারবো
সারারাত ধরে লেখাটা পড়লাম ।
পড়তেছি আর মনে হচ্ছে , গগন হরকরা বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি আমাদের মতো এত ছোট মনমানসিকতার মানুষের মত ছিলেন যারা আমরা সামান্য খ্যাতিতেই অন্ধ হয়ে যাই ?
আসলেই আমরা অনেক ছোট তাদের কাছে ।
এখন আমরা আসলে অন্যের সমালোচনা ছাড়া নিজেদের কোন সৃজনশীলতা নেই, নেই কোন সাধন - ভজন ।
কুলদা রায় এখন একজন সর্ববিদ হয়ে ওঠেছেন। আমার প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই কুলদা রায়-এর পোস্ট থেকেই মিটে যায়। আর জুটেছেন আরেকজন এম এম আর জালাল। তিনিও তেমন।এমন একটা সমৃদ্ধ জুটি আমাদের সাহস অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই গতকাল সন্ধ্যা থেকে গগণ হরকরার ‘আমি কোথায় পাবো তারে’ আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ গান দুটি পাশাপাশি খোঁজছিলাম। সকাল বেলায় ফেসবুক খুলেই পেয়ে গেলাম পুরো কাহিনী সমেত। কী অসাধারণ বুঝতে পারেন!
অনেক ধন্যবাদ কুলদা রায়, এম এম আর জালাল।
নতুন মন্তব্য করুন