আমার বয়স তখন পাঁচ। রবিবারের এক দুপুরে আমদের পাড়ায় এক ঝাঁকা মুরগীর ছানা নিয়ে একজন হকার আসে। রেশন তুলতে বাবার সাথে আমি তখন বাইরে, তো সেই হকার আমার হাতে ছোট্ট একটা ছানা তুলে দেয়। অদ্ভুত নরম আর মিষ্টি একটা উষ্ণতা হাতের তালুতে শিহরণ তুলে। বাবাকে ঘ্যাঁনঘ্যাঁন করে বলতে থাকি মুরগীর ছানা কিনে দেয়ার জন্য। বাবার অতো টাকা-পয়সা নেই। মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করে বাবা। আর মার অনেকদিন ধরেই অসুখ। তাই সে কোনো কাজই করতে পারে না। বাবা না পারতে দুটা মুরগীর ছানা আমাকে কিনে দেয়। ফেরার পথে বলে, এগুলো কিন্তু দুইদিনের বেশি বাঁচবো না, এইটা মনে রাখিস্। আমি বাসায় ফিরে একটা জুতোর বাক্সে ওদের দুইজনের বাসা বানিয়ে দিই। ময়দার গোলা পানিতে ভিজিয়ে খাওয়াই। ওদের একটু অসুস্থ মনে হলে অ্যাসপিরিন গোলানো পানি খাওয়াই। দুইদিন পরে তারা ঠিকই মারা যায়। ‘ছোট্ট ফোঁটা’টা মারা যায় প্রথমে। ওকে ঐ নাম দিই ওর মাথায় ছোট্ট একটা ফোঁটা এঁকে। এরপরেই মারা যায় ‘মাশরুম’। বাবা সেই দুপুরে পাশের বাসার নষ্ট সিঙ্ক সারাতে গেলে গেলে রান্নাঘর থেকে চুপচাপ দুটা ডিম চুরি করি। মা’তো শুয়েই থাকে। তাই কিছু খেয়াল করে না। আমি আস্তে করে ডিম দুটা ভেঙে ভেতরের কুসুম আর সাদা অংশ ফেলে দেই। পানিতে ধুইয়ে ভেতরটা পরিষ্কার করি। তারপর আমার ছোট্ট দুটি ছানাকে ডিমের খোলে ঢোকাতে চেষ্টা করি। কিন্তু পারি না। ‘ছোট্ট ফোঁটা’র মাথায় ডিমের খোলটা একটা টুপির মতো সেঁটে গিয়ে ওকে কি ভীষণ হাস্যকর দেখায়।
ফিরে: ইয়ুন লি’র ‘গোল্ড বয়, এমারাল্ড গার্ল’ গল্পগ্রন্থের ‘কাইন্ডনেস’ গল্পের একটা অংশের ভাবানুবাদ।
সূত্র:
Gold Boy, Emerald Girl: Stories
Yiyun Li
Random House
First Edition
September 14, 2010
মন্তব্য
তারপর? গল্পটা ভাল লাগা শুরু করছে, অম্নি ফট কইরা শেষ কইরা দিলেন । এইটা ঠিক হয় নাই, চরম অবিচার হইছে
শেষ হয়ে যেন হইলনা শেষ।
এককথায় ক্ল্যাসিক।
ডাকঘর | ছবিঘর
আপনার এই টুকুন গল্পগুলো পড়তে আসার আগে জানাই থাকে যে একটা ধাক্কা খাবো, প্রিপারেশন নিয়েই আসি কিন্তুধাক্কাটা প্রতিবারই খাই! কি অদ্ভুত এইসব ছোট করে বলে ফেলা বৃহৎ কিছু!
অনুবাদ পড়ে ভালো লাগল
চমৎকার অনুবাদ, টুকুন গল্প।
তুলতুলে...
................ গল্পের চরিত্র... গল্প.... এবং অনুবাদ...
অনেক ভালো লাগলো।
ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।
আহারে!
সুন্দর গল্প।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
আহারে!! ভালবাসা ধরে রাখার কতই না চেষ্টা!!
টুকুনেই মুগ্ধ!!
বাল্টিমোরের পুজায় গেলাম গতকাল। আপনার মতো একজনকে দেখলাম।
চমৎকার গল্প, কিন্তু এত ছোট যে, শুরু হতেই শেষ হয়ে গেলো।
পড়া ও মন্তব্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
নতুন মন্তব্য করুন