ভেসে যায় আদরের নৌকো
ঘরের উত্তর-পূর্ব কোণ ঘেঁষে খাটটা রাখা, মাপে খুব একটা বড় নয় - তবে সুন্দর। উত্তরে মাথার দিকটা সমান হয়ে উপরের দিকে উঠে গেলেও দক্ষিণে পায়ের দিকটা একটা ময়ুরপঙ্খী নৌকার গলুইয়ের মতো উপরে উঠে গেছে। গোটা খাটের শরীরটাও মাথা থেকে পায়ের দিকে ক্রমশ কিছুটা সরু হয়ে এসেছে। খাটের দু’ধারে নৌকার মতো করে সরু আলগা রেলিঙ দেয়া। পূর্ব দিকের দেয়াল ঘেঁষে খাটের মাঝ বরাবর একটা লম্বা-চ্যাপ্টা স্ট্যান্ড ছাদের দিকে উঠে গেছে - দেখতে মাস্তুল বলে মনে হয়। মাস্তুলের মাথা থেকে ডান দিকে খাটের জমিন পর্যন্ত নীল রঙের পাল - দেখতে হাঙরের ডর্সাল ফিনের মতো ঈষৎ বাঁকানো। পায়ের দিকে কুশন ময়ুরপঙ্খীর গলুই পর্যন্ত উঠে গেছে। সেখানে হেলান দিয়ে বই পড়া যায়। পাশে হাত বাড়ালে একটা জায়গায় স্পট লাইটের একটা লুকনো সুইচ পাওয়া যায়। সুইচ টিপলে ছাদ থেকে আলো এসে গলুয়ের অংশটা আলোকিত করে রাখে। তাতে বই পড়ার সুবিধা হয়। খাটটা মায়ের ডিজাইন করা। বস্তুত এই বাসার সব ফার্নিচার-শোপিসই মায়ের ডিজাইন করা, বাঁধানো পেইনটিংগুলোও তাঁর আঁকা। মা’র খুব ইচ্ছে ছিলো চারুকলাতে পড়ার, কিন্তু নানুমণি সেটা হতে দেননি। তাঁর ধারণা ছিলো চারুকলাতে পড়লে মেয়ে বখে যাবে। মা তাঁর সেই ভুল ধারণা ভাঙাতে পারেননি, তাই তাঁর আর ডিজাইনার হয়ে ওঠা হয়নি - বাচ্চাদের শিক্ষক হতে হয়েছে। খাটের উপর সাদা ধব্ধবে সাটিনের বেড কভার। সেখানে শুয়ে চোখ বন্ধ করলে মনে হয় একটা নৌকা পাল তুলে, ঢেউ ভেঙে সাগরের বুক চিরে ছুটে চলেছে। গলুইয়ের দু’পাশ দিয়ে পানি ছিটকে পড়ছে, পানিতে সাদা ফেনা। সাগরের পানি হালকা সবজে-নীল, স্বচ্ছ-টলটলে। সেখানে ঢেউয়েরা নিরীহ গোছের - কোনো মাতামাতি নেই। আকাশ অদ্ভূত নীল, চারদিকে মিষ্টি রোদ। সামনে দিগন্তের ওপাড়ে কোনো ক্যারিবিয়ান বা পলিনেশিয় দ্বীপ। সাগরে নৌকা চালানোর এই স্বপ্নটা খাটে শুলেই আসে না। কখনো মন খুব খারাপ থাকলে অথবা মন খুব ভালো থাকলে খাটে শুয়ে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভাবলে ওটা দেখা যায়।
এই অ্যাপার্টমেন্টটা দোতলাতে হলেও আসলে এটা একটা আটতলা বাড়ির একতলা, নিচে গাড়ি রাখার গারাজ। উত্তর-পশ্চিম কোণে বলে এখানে সরাসরি রোদ বা বাতাস কিছুই ঢোকে না। এ’বাসার একই ফ্লোরে থাকা চারটা অ্যাপার্টমেন্টে কারো সাথে কারো কোনো আলাপ-পরিচয় নেই। সেটা করার উদ্যোগও কখনো কেউ নেয়নি। আর উপরের কোনো প্রতিবেশির সাথে আলাপ-পরিচয় তো আরো দূরের ব্যাপার। সেজন্য প্রতিবেশিদের বাড়ি যাওয়া, তাদের বাড়ি থেকে কারো আসা বা প্রতিবেশিদের বাচ্চাদের সাথে খেলা এ’সব কিছু নেই। বাসার নিচে খেলার কোনো ব্যবস্থা নেই। কে যেনো কবে ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছিলো তাই ছাদে যাবার দরজা বন্ধ থাকে সব সময়। খেলা বলতে গেমবয় বা কম্পিউটারে খেলা। পুরনো কিছু লেগো আছে - এখন আর ভালো লাগে না। চাচাতো-ফুফাতো-মামাতো-খালাতো ভাইবোনদের কেউ এই শহরে দূরে দূরে, আবার কেউ এই দেশের বাইরে আরো দূরে দূরে থাকে। তাদের কারো সাথে বছরে দুই-একবার আর কারো সাথে দুই-তিন বছর পর এক-আধবার দেখা হয়। বন্ধু বলতে, খেলার সাথী বলতে যা কিছু সবই স্কুলের সহপাঠীরা। স্কুলটা একটা ভাড়াবাড়িতে, সেখানে কোন মাঠ নেই। তাই ফুটবল, ক্রিকেট বা লুকোচুরির মতো খেলাও কোনদিন হয়ে ওঠেনি। বিনোদন বলতে টেলিভিশন দেখা আর কম্পিউটার বা গেমিং কনসোলে আজগুবি সব খেলা। কখনো বাবা-মায়ের সঙ্গে এই শহরের বাইরে সমূদ্র, পাহাড় বা জঙ্গল দেখতে বেড়াতে গেলে খোলা মাঠে দৌড় দেবার সুযোগ হয়।
প্রতিদিনের দৌড় শুরু হয় বেশ ভোরে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আগের রাতে বানানো নাস্তা নাকেমুখে গুঁজে বাবা-মায়ের সাথে স্কুলে ছুটতে হয়। ট্রাফিক জ্যাম এড়ানোর জন্য এই দৌড়। এতে একটু সকাল সকাল স্কুলে পৌঁছানো হয়। ক্লাশ শুরু হবার আগে তাই সহপাঠীদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করা যায়। দুপুরে ক্লাশ শেষ হবার পর মায়ের আসতে যদি দেরি হয় তাহলে আরো কিছুটা সময় মেলে গল্প করার। সারা দিনে ঐটুকু সময়ই কেবল সমবয়সীদের সাথে কাটানোর সুযোগ হয়। সহপাঠীদের সাথে আজকাল গল্পের বিষয় প্রায়ই ফুটবল-ক্রিকেট-ডব্লু ডব্লু এফ-ভিডিও গেম-বেড়াতে যাবার বাইরে নিষিদ্ধ বিষয়ে মোড় নেয়। বিষয়গুলো যে নিষিদ্ধ সে কথা কেউ বলে দেয়নি, তবে তারা সবাই বোঝে বিষয়গুলো বড়রা জানলে কপালে খারাবি আছে। যে সেশন থেকে সহপাঠিনীরা সালোয়ার-কামিজ-ওড়না পড়া শুরু করলো তখন থেকে তাদের সম্পর্কে আলোচনা ভিন্ন দিকে মোড় নিতে থাকলো। ওদের সাথে মেলা-মেশার আগের সহজ ভাবটাও আর থাকলো না। এই বিষয়গুলো তার কাছে খুব স্পষ্ট নয়, তবু পরিবর্তনটা ঠিক বুঝতে পারে। শরীরি গল্পগুলো শরীরে অনুভব করতে পারে না, তবে মনে অজানা শিহরন জাগিয়ে যায়।
গত সপ্তাহে টিচার মেয়েদের বাথরুমে উঁকি দেবার সময় ফারদীনকে হাতেনাতে ধরেছে। ক্লাশের সবার ওপর দায়িত্ব বর্তেছে টিফিন টাইমে ফারদীন যেনো মেয়েদের বাথরুমের দিকে যেতে না পারে সেটা খেয়াল রাখতে। ফারদীন অবশ্য গোটা ব্যাপারটা গায়েই মাখেনি। সে প্রায়ই বলে তার বাবা-মা বাইরে গেলে সে বাবার ল্যাপটপ চালিয়ে ইন্টারনেটে কী কী সব ছবি আর ভিডিও দেখে। তাছাড়া সে নাকি একবার এক পার্টিতে গিয়ে বড়দের লুকিয়ে একটা বিয়ারের ক্যানের অর্ধেকটা সাবাড় করেছে। ফারদীনের এই গল্প শুনে দেখা গেলো ইন্টারনেটের অভিজ্ঞতা আরো কয়েকজনের আছে। আর একজন চুরি করে বাবার হুইস্কির বোতল থেকে দু’চুমুকও খাবার গল্পও বলল। স্কুল থেকে নোটিশ দেয়া আছে বাসায় কেউ একা একা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে না। তারা অবশ্য অমন নোটিশের থোড়াই পরোয়া করে। মলাটের ভেতরে করে ডিভিডি চালাচালি হয় বলে বই-খাতাতে মলাট লাগানোর ব্যাপারেও স্কুলের নিষেধাজ্ঞা আছে। । আজকাল কেউ ডিভিডি চালাচালি করেনা, আঙুলের ফাঁকে লুকিয়ে ফেলা যায় এমন সাইজের ফ্ল্যাশ ড্রাইভ চালাচালি করে। তার অবশ্য ফ্ল্যাশ ড্রাইভ বাসায় আনার সাহস হয়নি, একবার কেবল উযায়েরে কাছে একটা ছবির বই দেখেছিলো। উযায়ের এই বস্তু কোথায় পেলো জিজ্ঞেস করতে জানা গেলো - সে তার ছোট কাকার বিছানার তোশকের নিচ থেকে ওটা সরিয়েছে।
ক্লাশে দুষ্টামি করলে বা হোমটাস্ক ঠিক মতো না করলে শাস্তি হিসেবে ছুটির পরে লাইব্রেরীতে এক ঘন্টা সময় কাটাতে হয়। লাইব্রেরীতে গল্পের বই যতটা না পড়া হয়, তারচেয়ে বেশি হয় চাপা গলায় গল্প করা। কখনো কখনো লাইব্রেরীতে উপরের ক্লাশের ছেলেমেয়েদের যা করতে দেখা যায় তাতে শাস্তিটাকে পুরষ্কার বলে মনে হয়। লাইব্রেরিয়ান মিস্ পারতপক্ষে নিজের চেয়ার ছেড়ে ওঠেন না; আর বেশিরভাগ সময় তিনি ঝিমান। সেই সুযোগে বড় ক্লাশের ছেলেমেয়েদের মধ্যে একজনের কোলে আরেকজনের ওঠা বা একজনের উরুতে আরেকজনের হাত ঘষা এমনকি গলায়-ঘাড়ে চুমু খাওয়াও চলে। কখনো কখনো একটু বাড়াবাড়ি যে হয়ে যায় না তা নয় - তবে ধরা না পড়লেই হলো। সবাই যে পার পেয়ে যায় তা নয়। একবার সারাহ্ মিসের সেভেনে পড়ুয়া মেয়ের সাথে নাইনে পড়ুয়া এক ছেলেকে হাতেনাতে ধরা হলো ছাদে যাবার সিঁড়িতে। তারা আসলে যে কী করছিলো সেটা আর জানা যায়নি। তবে ছেলেটাকে সেদিনই টিসি দেয়া হয়েছিলো। তার কিছুদিন পর সারাহ্ মিসও এই স্কুলের চাকুরী ছেড়ে দিয়ে মেয়েকে নিয়ে অন্য কোন স্কুলে যেনো চলে গেছেন। তাদের ক্লাশের অর্পণও টিসি খেতে গিয়ে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিল। অর্পণ অবশ্য স্কুলের কোন মেয়ের সাথে কোন গোলযোগ ঘটায়নি। ক্রিয়েটিভ রাইটিং ক্লাশে রচনা লিখতে দেয়া হয়েছিল “My favourite teacher”। অর্পণ “The cow” রচনা লেখার অভিজ্ঞতা থেকে তার রচনায় ক্লাশের মিস্-এর বিস্তারিত শারীরিক বর্ণনা দিয়েছিল যেখানে এমন বাক্যও ছিল - “and she has a nice pair of breasts”।
সুনৃত একদিন তার ম্যাথ কপির একটা পাতা ছিঁড়ে দিয়ে বললো, “বাসায় গিয়ে এটাকে সিগারেটের মতো পাকিয়ে আগুন লাগিয়ে টানিস্”। সে এখনো নিজে নিজে দেয়াশলাই জ্বালাতে শেখেনি। তাছাড়া তাদের বাসা এত বড় নয় যে সেখানে সে লুকিয়ে সিগারেট টানতে পারবে। তাই তার সরল অস্বীকৃতি, “না ভাই, আমার পক্ষে এটা করা সম্ভব না। তাছাড়া কপি’র পাতা দিয়ে সিগারেট খাবো কেন? এটাতে তো কোন টোব্যাকো নেই”! তার অজ্ঞতায় সুনৃত অবজ্ঞার হাসি হেসে জানালো - বিশেষ এক রকমের পাউডারকে পানিতে গুলিয়ে খাতার পাতায় লাগিয়ে শুকানো হয়েছে। এটা টানলে যে আমেজ হবে তা দশটা সিগারেট খেলেও হবে না। সুনৃত আরো জানালো চিউয়িং গামের মতো জিনিসও নাকি আছে, তবে সেটা এখনো যোগাড় করে উঠতে পারেনি। এমন বস্তু সে কোথায় পায় জিজ্ঞেস করলে সুনৃত জানায় তাদের ড্রাইভার বাবুল ভাই নাকি এসব জোগাড় করে দেয়। “এসব কেন খাস্” -এমন প্রশ্নের জবাবে সুনৃত যা বলে তাতে তার সমস্যার সমাধান মাথায় কুলিয়ে ওঠেনা। সুনৃতের বাবা-মা প্রতিদিনই ঝগড়া করেন। সেই ঝগড়ার ভাষা ভয়ঙ্কর রকমের অশ্লীল। তাদের গালাগালির কিছু শব্দের মানে সুনৃত জানেনা, তবে বুঝতে পারে সেগুলোর অর্থ আরো ভয়াবহ অশ্লীল। কোন কোন দিন তাদের ঝগড়া হাতাহাতির পর্যায়েও চলে যায়। এসব করতে গিয়ে সুনৃত কী করছে না করছে সেদিকে তাদের খেয়াল নেই। সুনৃত জানে আজ হোক কাল হোক তার বাবা-মা আলাদা হয়ে যাবেন, যেমনটা আলাদা হয়ে গেছেন হিশামের বাবা-মা। গত বছরের মাঝামাঝি হঠাৎ দেখা গেলো হিশাম আর স্কুলে আসছে না। পরে মিস্দের গল্প থেকে জানা গেলো হিশামের বাবা-মা আলাদা হয়ে গেছেন। হিশাম তার মায়ের সাথে দেশের বাইরে চলে গেছে। বাড়িতে বাবা-মায়ের নিয়মিত তুমুল ঝগড়ার কথা আরো কয়েকজনের কাছে সে শুনেছে। হিশামের মতো শুধু মায়ের সাথে বা শুধু বাবা’র সাথে থাকে এমন জনও আছে কয়েক জন। এগুলো ভাবলে তার দিশেহারা লাগে।
বাবা-মা যদি তুমুল ঝগড়া করে জিনিস ভাঙচুর করেন, অথবা এক সপ্তাহে যদি দশটা ক্লাশ টেস্ট থাকে, অথবা টার্ম ফাইনালের প্রগ্রেস রিপোর্টে যখন ক্লাশ টিচার মন্তব্য লেখেন - “Causing concern” তখন তার ক্লাশ টেনের প্রিয়ম ভাইয়ার মতো কিছু করতে ইচ্ছে করে। ভেঙে যাওয়া পরিবারের সন্তান প্রিয়ম ভাইয়া ডিপ্রেশনে ভুগে ভুগে পরীক্ষায় ক্রমাগত খারাপ ফলাফল করতে থাকে। শেষে একদিন বাসার সবাই যখন বাইরে গিয়েছিল তখন সে সিলিং ফ্যানের সাথে দড়ি বেঁধে ঝুলে পড়ে। তার পরদিন শোক প্রকাশ করে স্কুল ছুটি দেয়া হয়েছিল, কিন্তু ছুটির নোটিশে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা ছিলনা। রাতে বাবা-মায়ের আলোচনা থেকে মৃত্যুর কারণটা সে শুনে ফেলে। অবশ্য অমন করতে গেলে বেশ সাহস লাগে, তার সেই সাহস নেই। কিন্তু সুনৃতের মতো সাহসী ছেলে যদি অমন কিছু করে ফেলে! সে’কথা ভাবতেও ভয় হয়। এরচেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে দূরের কোন দ্বীপে যদি চলে যাওয়া যেতো! যদি পিটার প্যানের নেভারল্যান্ডটা যদি সত্যি থাকতো! বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার পথে সবচে’ বড় বাধাটা হচ্ছে মা। পৃথিবীর অন্য কোন কিছু না হলেও তার চলবে, কিন্তু মা’কে ছাড়া তার একটা দিনও চলবে না। কখনো সখনো দাদু’র বাসায় বেড়াতে যেতে তার খারাপ লাগে না; তবে সেখানে দুটো দিন কাটলেই মায়ের জন্য তার মন অস্থির হয়ে ওঠে।
একটু বড় হয়ে যাবার পর থেকে তাকে রাতে আলাদা ঘরে একা বিছানায় ঘুমাতে হয়। সেটা কোন ব্যাপার না। মায়ের ডিজাইন করা এই খাটটা তার খুব পছন্দ। তবে আরো বেশি পছন্দ মায়ের বুকের কাছে কুঁকড়ে শুয়ে থাকা। কোন কোন দিন কোন কারণে বাবা’র সাথে মায়ের তুমুল ঝগড়া হলে মা যদি এসে এই খাটটাতে শোন; তখন মায়ের বুকের কাছে কুকুর কুণ্ডলী পাকিয়ে শোয়া যায়। মায়ের হাতটা তার হাড় বের করা সরু পিঠটার উপর আদরের পরশ বুলায়,
- তুমি মামের কী হও?
মায়ের বুকে মুখ গোঁজা আদুরে গলার উত্তর আসে,
- পাখী-ঈ-ঈ-ঈ।
- কী পাখী?
- ছোটো পাখী-ঈ-ঈ।
মায়ের হাত ঘাড় হয়ে লম্বাটে কানের উপর চলে আসে,
- আর কী হও?
- র্যাবিট হই।
মায়ের আঙুলগুলো ঝাঁটার শলার মতো শক্ত, খাড়া খাড়া চুলে বিলি কাটে,
- আর কী হও?
- হেজহগ হই, পর্কিউপাইন হই।
মায়ের আঙুলগুলো তার চুলে বিলি কাটতেই থাকে। খাটটা আবার নৌকা হয়ে পাল তুলে, ঢেউ ভেঙে সাগরের বুক চিরে ছুটে চলে। গলুয়ের দু’পাশ দিয়ে সাদা ফেনাসহ পানি ছিটকে পড়ে। সাগরের পানি হালকা সবজে-নীল, স্বচ্ছ-টলটলে। সেখানে ঢেউয়ের মাতামাতি নেই। আকাশ অদ্ভূত নীল, চারদিকে মিষ্টি রোদ। সামনে দিগন্তের ওপাড়ে কোনো ক্যারিবিয়ান বা পলিনেশিয় দ্বীপ।
মন্তব্য
এমন অনেক অনেক আদরের নৌকো বানিয়ে আমাদের ঘরে ঘরে পৌছে দেয়া যায় না?
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
আদরের নৌকো বানানোর দায়িত্ব ঘরের লোকদের, বাইরে থেকে কিছু করলে কিছু হবে না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
(গুড়) (গুড়) (গুড়)
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সুন্দর।
ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এটা এতদিন পড়িনি দেখে আফসোস হচ্ছে।
অসাধারণ।
আপনি বেশি দেরি করেননি, একদিন পরেই পড়েছেন। পড়া ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কী চমৎকার একটা গল্প!
প্রিয়তে নিলাম।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
গল্প পড়া ও মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কয়েকটা ধাক্কা খেয়ে গল্পের শেষটায় এসে আশ্রয় নৌকাটার সন্ধান পেয়ে স্বস্তি হলো। উচ্চবিত্ত পরিবারের বাচ্চাদের জীবন কি এরকমই হয়ে যাবে আস্তে আস্তে?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আপাত স্বস্তি পেতে পারেন, তবে শান্তি নেই। বাস্তবটা এমন যে সেখানে "ধাক্কা খেলাম" কথাটাও বলা যায় না - বাক্রহিত হয়ে থাকতে হয়। এই রকম জীবনটা কেবল উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদেরই নয় অন্য শ্রেণীগুলোর জন্যও সত্য - কিছু কম-বেশি, কিছু অন্য রকম।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
কী অসাধারণ একটা গল্প!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
গল্প সাধারণ, ঘটনাগুলো এক কালে অ-সাধারণ ছিল - এখন খুবই সাধারণ হয়ে গেছে। পরবর্তী "গল্প অপচেষ্টা" কবে নাগাদ পাওয়া যাবে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নিঃসন্দেহে এটা এই সিরিজের সেরা গল্প।
... এই অন্ধকারের গল্পটা আমি মনে রাখবো।
বুঝতে পারছিনা এই সিরিজ চালানোটা আমার জন্য কি কঠিন হয়ে গেলো, নাকি সহজ?
এটা অন্ধকারের গল্প নয় সুহান, ঘোরতর বাস্তব - আলোয় আসা বিষয়ের গল্প। সত্যিকারের ক্ষেত্রে যা যা হয় তার কিছুই বলতে পারলাম না। যা হয় সেগুলো ভাবলেও আতঙ্কে হাত-পা জমে যায়। বয়স বাড়লে চিন্তা-ভাবনায় কিছুক্ষেত্রে মানুষ অর্থোডক্স হয় এ'কথা মানি। তবে সেটা মানলেও শুভ-অশুভকে পার্থক্য করার বুদ্ধি আজো গুলিয়ে যায়নি। সেই বোধ থেকেই বলতে পারি, "এ ভয়ঙ্কর! সর্বনাশা গতিধারা"।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
বগুড়আর দই এর মত জমাট সত্যবচন।
খাতার কাগজের ড্রাগের বিষয়টা আগে জানতাম না তো!
লাইব্রেরীই কিনা আজকাল হয়ে গেল শাস্তির জায়গা। আফসোস।
খাতার কাগজের মতো আরো নতুন নতুন প্রযুক্তি প্রতিদিন আবিষ্কৃত হচ্ছে। এগুলোর ব্যাপারে খোঁজ না রাখলে চলে না - বাঁচতে হলে জানতে হবে।
লাইব্রেরী শাস্তি দেবার পুরনো জায়গা। এক কালে সেখানে বসিয়ে "আমি আর দুষ্টামী করবো না" জাতীয় বাক্য একশ'বার লেখানো হতো বা জীবনীগ্রন্থ পড়তে দেয়া হতো। সেসব শাস্তি দিলে তার আবার ফলো-আপ করার বিষয় থাকে। স্যার/ম্যাডামরা আজকাল সেসব ফলো-আপের ঝামেলায় যেতে চান না। তাই শাস্তি লাইব্রেরীতে বসিয়ে রাখাতেই সীমাবদ্ধ। আর কে না জানে - "অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা"।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এই গল্পটা দারুণ লাগল৷ কিন্তু এই সিরিজের আগেরটা পড়ি নি৷ দাঁড়ান পড়ে আসি৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
ধন্যবাদ। দাঁড়ালাম; আগেরটা পড়ে জানান কেমন লাগলো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মানুষ ফাঁদ বড় ভালোবাসে। নিজের তৈরী করা ফাঁদে নিজে বন্দী হতে ভালোবাসে।
নতুন মন্তব্য করুন