ছন্দে ছন্দে চলা ০১
ছন্দে ছন্দে চলা ০২
পরিকল্পনা মাফিক এই পর্বে অক্ষরবৃত্ত নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। ইতিমধ্যে মন্তব্যে-প্রতিমন্তব্যে আলোচনা বেশ জমে উঠেছে। আগ্রহী পাঠক যেমন পেয়েছি, তেমনি পেয়েছি ছন্দ বিষয়ে অভিজ্ঞ গুণীজনের মন্তব্য ও পরামর্শ। আমি শখের লিখিয়ে, ছন্দ বিষয়ে কোন কাজও করছি না, অভিজ্ঞতার ঝুলিতে সঞ্চয়ও সীমিত, এই কথাটি আবারো সবাইকে সবিনয়ে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। তবে আমি ইতিমধ্যে একটি বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি যে ব্লগের শ্রেষ্ঠত্ব হচ্ছে তার সম্মিলিত শক্তিতে। সকলের মিথস্ক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যে সোনালি ফসল ঘরে তোলা যায় সেটি সুস্থ ও চিটাবর্জিত। প্রথম পর্বের ইতি টানবার সময় আমি বলেছিলাম, ছন্দ বিচারে চোখের চাইতে কানের উপর নির্ভর করতে হয় বেশী। পাঠকের বিচারেও সেই জিনিসটি প্রাধান্য পেয়েছে। তাই সুধীজনের প্রতি সন্মান রেখে আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিলাম। যা থাকে কপালে। যদি ঠেকে যাই, তাহলে আপনারা তো আছেনই।
আলোচনা থেকে চোখ ঘুরিয়ে আমরা সন্ধান করবো এমন একটি চাবির যা দিয়ে অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত এই তিন ছন্দেরই তালা খোলা যাবে। সেটি হলো 'সিলেবল' (Syllable)-এর চাবি। তাহলে 'সিলেবল' কি? ন্যূনতম চেষ্টায় আমরা শব্দের যতটুকু অংশ উচ্চারণ করতে পারি, তাকেই সাদা কথায় বলবো সিলেবল। অর্থাৎ, সিলেবল হলো উচ্চারণের একক। 'সিলেবল' দু'ধরনের। ওপেন সিলেবল (Open Syllable) ও ক্লোজড সিলেবল (Closed Syllable)। উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
যে সব সিলেবল উচ্চারণের সময় মুখের ভেতর প্রবহমান বাতাস জিভের দেয়ালে আটকে যায় তাদের ক্লোজড সিলেবল বলা হয়। যেমন : দাগ্, ধর্, ভাগ্, কর্, ঘুষ্, খাক্, বাঘ্, আঁক্, হাঁস্, ঝাঁক্, আজ্, থাক্, কাল্, দিন্, লুল্, ফেল্, চিন্, কই, ইত্যাদি।
যে সব সিলেবল উচ্চারণের সময় মুখের ভেতর প্রবহমান বাতাস জিভের দেয়ালের কোনো বাধা ছাড়াই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে তাদের ওপেন সিলেবল বলে। যেমন: জা, ঝা, ছা, গু, চা, দি, দা, বা, বু ইত্যাদি।
এবার শব্দের শরীরের ভেতরে সিলেবলকে খুঁজি।
উত্তম=উত্+তম্ ; দুটিই ক্লোজড সিলেবল।
জাঝা=জা+ঝা ; দুটিই ওপেন সিলেবল।
বাহুবন্ধন=বা+হু+বন্+ধন্ ; এখানে 'বা' ও 'হু' ওপেন সিলেবল কিন্তু 'বন্' ও 'ধন্' ক্লোজড সিলেবল।
যুক্তাক্ষর=যুক্+তাক্+খর্ ; তিনটিই ক্লোজড সিলেবল।
সচলায়তন= স+চ+লা+য়+তন্ ; প্রথম চারটি অর্থাৎ 'স', 'চ', 'লা', 'য়' ওপেন সিলেবল, শেষেরটি অর্থাৎ 'তন্' ক্লোজড সিলেবল।
এবারে আমরা সকল ছন্দের তালা খোলার সেই মোক্ষম চাবিটির সন্ধান করবো।
ওপেন, ক্লোজড উভয় সিলেবলই পাবে ১ মাত্রা।
হ্যাঁ, এটিই সেই চাবি। এই চাবিটির মাধ্যমে তিনটি ছন্দের বিশ্লেষণে যাই।
অক্ষরবৃত্তের নিয়মটি আবার আউড়ে নিই। ওপেন সিলেবল সবসময় পাবে ১ মাত্রা। শব্দের শুরুতে কিম্বা মধ্যে থাকলে ক্লোজড সিলেবল পাবে ১ মাত্রা, শব্দের শেষে থাকলে ২ মাত্রা।
চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, 'ন্যায়দণ্ড')
চিত্ত=চিত্(১)+তো(১)=২ মাত্রা ; শব্দের শুরুতে থাকায় ক্লোজড সিলেবল ১ মাত্রা পাচ্ছে।
যেথা=যে(১)+থা(১)=২ মাত্রা ; ওপেন সিলেবল ১ মাত্রা পাচ্ছে।
ভয়শূন্য=ভ(১)+য়(১)+শূন্(১)+নো(১)=৪ মাত্রা ; শব্দের মাঝে থাকায় ক্লোজড সিলেবল ১ মাত্রা পাচ্ছে।
উচ্চ=উচ্(১)+চো(১)=২ মাত্রা।
যেথা=যে(১)+থা(১)=২ মাত্রা।
শির্(২)= শব্দের শেষে থাকায় ক্লোজড সিলেবল ২ মাত্রা পাচ্ছে।
এবার পর্ব বিন্যাস করে দেখি,
চিত্ত যেথা/ ভয়শূন্য/ উচ্চ যেথা/ শির/
চিত্(১)তো(১) যে(১)থা(১)/ ভ(১)য়(১)শূন্(১)নো(১),/ উচ্(১)চো(১) যে(১)থা(১)/ শির্(২)/
৪+৪+৪+২= তিনটি সম্পুর্ণ ও একটি অতিপর্বে মোট ১৪ মাত্রা।
জ্ঞান যেথা/ মুক্ত, যেথা/ গৃহের প্রা/চীর
জ্ঞা(১)ন(১) যে(১)থা(১)/ মুক্(১)তো(১) যে(১)থা(১)/ গৃ(১)হের্(২) প্রা(১)/চীর্(২)/
৪+৪+৪+২= তিনটি সম্পুর্ণ ও একটি অতিপর্বে মোট ১৪ মাত্রা।
এবারে আবার মাত্রাবৃত্তের নিয়মটি বলি। ওপেন সিলেবল সবসময় পাবে ১ মাত্রা, ক্লোজড সিলেবল পাবে ২ মাত্রা।
ধনুকের মতো টংকার দিলো টাকা
তোমার উষ্ণ লাল কিংখাবে ঢাকা
উজ্জ্বল মুখ যেন বা পয়সা সোনালী, রুপালী তামা
(শহীদ কাদরী, ‘প্রেমিকের গান’)
ধনুকের=ধ(১)+নু(১)+কের্(২)=৪ মাত্রা।
মতো=ম(১)+তো(১)=২ মাত্রা ; ওপেন সিলেবল ১ টি করে মাত্রা পেল।
টংকার=টং(২)+কার্(২)=৪ মাত্রা ; ক্লোজড সিলেবল ২ টি করে মাত্রা পেল।
দিলো=দি(১)+লো(১)=২ মাত্রা।
টাকা= টা(১)+কা(১)=২ মাত্রা।
তাহলে পর্ব বিন্যাসে গেলে আমরা পাই,
ধনুকের মতো/ টংকার দিলো/ টাকা/
ধ(১)নু(১)কের্(২) ম(১)তো(১)/ টং(২)কার্(২) দি(১)লো(১)/টা(১)কা(১)
দুইটি সম্পূর্ণ পর্ব ও একটি অতিপর্বে মাত্রাবৃত্তের ৬+৬+২ চাল।
তোমার উষ্ণ/ লাল কিংখাবে/ ঢাকা/
তো(১)মার্(২) উষ্(২) নো(১)/ লাল্(২) কিং(২)খা(১)বে(১)/ ঢা(১)কা(১)/ অর্থাৎ, ৬+৬+২ চাল।
উজ্জ্বল মুখ/ যেন বা পয়সা/ সোনালী, রুপালী/ তামা/
উজ্(২)জল্(২) মুখ্(২)/ যে(১)ন(১) বা(১) প(১)য়(১)সা(১)/ সো(১)না(১)লী(১), রু(১)পা(১)লী(১)/ তা(১)মা(১)/ অর্থাৎ, ৬+৬+৬+২ চাল।
স্বরবৃত্তে ওপেন, ক্লোজড উভয় সিলেবলই পাবে ১ মাত্রা।
তোমরা যখন শিখছো পড়া
মানুষ হওয়ার জন্য,
আমি না হয় পাখিই হবো,
পাখির মতো বন্য।
(আল মাহমুদ, ‘পাখির মতো’)
তোমরা=তোম্(১)+রা(১)=২ মাত্রা, যখন=য(১)+খন্(১)=২ মাত্রা, শিখছো=শিখ্(১)+ছো(১)=২ মাত্রা,
পড়া=প(১)+ড়া(১)=২ মাত্রা।
মানুষ=মা(১)+নুষ্(১)=২ মাত্রা, হওয়ার=হও(১)+য়ার্(১)=২ মাত্রা, জন্য=জন্(১)+নো(১)=২ মাত্রা।
আমি=আ(১)+মি(১)=২ মাত্রা, না=না(১)+হয়্(১)=২ মাত্রা, পাখিই=পা(১)+খিই(১)=২ মাত্রা, হবো=হ(১)+বো(১)=২ মাত্রা।
পা(১)+খির্(১)=২ মাত্রা, ম(১)+তো(১)=২ মাত্রা, বন্(১)+নো(১)=২ মাত্রা।
পর্ব বিন্যাস করে দেখাই,
তোমরা যখন/ শিখছো পড়া/
তোম্(১)রা(১) য(১)খন্(১)/ শিখ্(১)ছো(১) প(১)ড়া(১)/ অর্থাৎ ৪+৪ চাল।
মানুষ হওয়ার/ জন্য,/
মা(১)নুষ্(১) হও(১)য়ার্(১) জন্(১)নো(১)/ অর্থাৎ, ৪+২ চাল।
আ(১)মি(১) না(১)হয়্(১)/ পা(১)খিই(১) হ(১)বো(১)/ অর্থাৎ ৪+৪ চাল।
পা(১)খির্(১) ম(১)তো(১)/ বন্(১)নো(১)/ অর্থাৎ, ৪+২ চাল।
অর্থাৎ, স্বরবৃত্তের ৪+৪, ৪+২, ৪+৪, ৪+২ চাল।
পরবর্তী পর্বে অক্ষরবৃত্ত নিয়ে বিশদ আলোচনা করার ইচ্ছে রইল।
মন্তব্য
সিলেবল ভিত্তিক হিসাবে যখন আসলেন তখন কিছু বিষয় উল্লেখ করি। স্বর এবং মাত্রাবৃত্তে ঝামেলা হয় না এক্ষেত্রে। ঝামেলা বাঁধে অক্ষরবৃত্তের ক্লোজড সিলেবল হিসাব করতে
প্রচলিত সূত্র: অক্ষরবৃত্তে ক্লোজড সিলেবল শব্দের প্রথমে এবং মধ্যে থাকলে এক মাত্রা আর শেষে থাকলে দুই মাত্রা হয় (প্রবোধচন্দ্রের সূত্র)
এই হিসাবে নিচের শব্দটার মাত্রাগণনা হলো;
সবসময়= ৪ মাত্রা (আপনি এভাবে জোড়া দিয়ে লিখেছেন। অনেকেই লেখে)
সব সময় = ২+৩= ৫ মাত্রা (এভাবেও লেখে অনেকে)
তাহলে কি লেখার ধরনের জন্য মাত্রা বদলাবে? নাকি বদলানো উচিত?
০২
বিষয়টাকে যদি উচ্চারণসূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করি তাহলে কিন্তু অন্য চেহারা আসে;
'সবসময়' এই কথাটা যেভাবেই লেখা হোক না কেন; আমরা কিন্তু আলাদাভাবেই উচ্চারণ করি= 'সব সময়' ('সব্সময়' নয়) ফলে যেভাবেই লেখা হোক না কেন উচ্চারণ অনুযায়ী 'সবসময়' কিন্তু সব ক্ষেত্রেই ৫ মাত্রার দাবিদার
০৩
'একদিন/একজন' দুই বাংলাতেই এটার লেখার তফাত নেই। 'একদিন/ এক দিন- একজন/এক জন' দুভাবেই লেখা হয়। কিন্তু দুই বাংলায় উচ্চারণ করা হয় দুইভাবে। বাংলাদেশে উচ্চারণ হয় 'এ্যাক দিন/এ্যাক জন= ৪ মাত্রা; আর কলকাতায় 'এ্যাগ্দিন/এ্যাগ্জন'= ৩ মাত্রা; (ক' এর উচ্চারণ গ-তে বদলে যাবার সাথে সাথে শব্দদুটো জোড়া হয়ে উচ্চারিত হয়)
উচ্চারণসূত্র দিয়ে এর একটা সমাধান বের করা সম্ভব; যদি বলি যে;
ক) স্বরধ্বনি সূত্র: অক্ষরবৃত্তে ক্লোজড সিলেবলের লং ভাওয়েল পায় ২ মাত্রা আর শর্ট ভাওয়েল পায় ১ মাত্রা
অথবা
খ) ব্যঞ্জনধ্বনি সূত্র: ক্লোজড সিলেবলের স্বতন্ত্রভাবে উচ্চারিত কনসনেন্ট সাউন্ড পায় ১ মাত্রা আর যুক্তভাবে উচ্চারিত (২টা কনসোনেন্ট সাউন্ড) পায় ১ মাত্রা। সব স্বরধ্বনিও পায় ১ মাত্রা
এই সূত্র ধরে যদি হিসাব করি তাহলে কী দাঁড়ায়?
স্বরধ্বনি সূত্র: 'সব' এ 'স' এর পরে ব্যবহৃত 'অ' লং ভাওয়েল। একইভাবে 'সময়-এ 'স' এর সাথে ব্যবহৃত 'ও' লং ভাওয়েল= স/২+ব+ সো/২+ম/১ (য়)= ৫ মাত্রা। (শেষ ম শর্ট ভাওয়েল)
ব্যঞ্জনধ্বনি সূত্র: 'সবসময়'-এ ব এবং স স্বতন্ত্রভাবেই উচ্চারিত হয়। সুতরাং দুটোই ১ মাত্রা করে পাচ্ছে। = মাত্রা (স/১+ব/১+ স/১+ম/১+য়/১= ৫ মাত্রা
একজন: বাংলাদেশ উচ্চারণ= এ্যাক জন
স্বরধ্বনি সূত্র: 'এ্যা'= লং ভাওয়েল। 'জ'-এর সাথের অ/ও= লং ভাওয়েল। সুতরাং এ্যা/২+(ক)+জ/২+(ন)= ৪ মাত্রা
ব্যঞ্জনধ্বনির সূত্র: ক এবং জ স্বতন্ত্রভাবেই উচ্চারিত হয়ে ১ মাত্রা করে পেয়ে হচ্ছে ২ মাত্রা (এ্যা/১+ক/১+জ/১+ন/১= ৪ মাত্রা)
একজন; কলকাতা উচ্চারণ= এ্যাগ্জন (ক'র উচ্চারণ গ-তে পরিবর্তিত এবং গ+জ যুক্তভাবে উচ্চারিত)
স্বরধ্বনি সূত্র: 'এ্যা' শর্ট ভাওয়েল। ফলে ১ মাত্রা পাচ্ছে। 'জ'-এর সাথের অ/ও= লং ভাওয়েল; ফলে পাচ্ছে ২ মাত্রা। এ্যা/১+(গ্জ)অ/ও)/২+(ন)= ৩ মাত্রা
ব্যঞ্জনধ্বনির সূত্র: গ এবং জ একসাথে উচ্চারিত হয়ে পাচ্ছে মোট ১ মাত্রা (এ্যা/১+গ্জ/১+ন/১= ৩ মাত্রা
এই সূত্র ধরে অন্য উদাহরণ
হরতাল= উচ্চারণ হর্তাল= ৩ মাত্রা
কাকতাল= ৪ মাত্রা= উচ্চারণ কাক তাল; কাক্তাল নয়
০৪
এবার আসি রবীন্দ্রনাথের বহুল আলোচিত বাঁশি কবিতার আকবর বাদশা প্রসঙ্গে
প্রবোধচন্দ্র সেনের বর্ণ গণণা সূত্র অনুযায়ী (আকবর= ৪ মাত্রা। বাদশার= ৪ মাত্রা)। এই দুইটা শব্দে দুই মাত্রা বেশি ব্যবহার করায় পুরো লাইনটাতে দুই মাত্রা বেশি হয়ে যায়/ ছন্দে ভুল হয়ে যায় (আকবর বাদশার সঙ্গে= ১০ মাত্রা। হবার কথা ছিল ৮ মাত্রা)
কিন্তু উচ্চারণসূত্র/ধ্বনি দিয়ে গুনলে কিন্তু ৮ মাত্রাই পাওয়া যায়। কারণ আকবর বলার সময় 'আ' শর্ট ভাওয়েল হিসাবে উচ্চারিত হয়। একইভাবে বাদশার বা-ও শর্ট ভাওয়েল;
সুতরাং
আ/১+ (কব)অ/২ +(র) = ৩ মাত্রা
বা/১+(দশ)আ/২ +(র)= ৩ মাত্রা
এই হিসাবে পুরো লাইনের মাত্রা সংখ্যা ৮ (১০ নয়)
ব্যঞ্জন সূত্র
বাংলায় ক+ব এবং দ+ শ এর যুক্তাক্ষর না থাকলেও উচ্চারণে কিন্তু যুক্ত ক+ব এবং দ+শ উচ্চারণ আছে
সেই হিসাবে;
আ/১+কব/১+র/১= ৩ মাত্রা
ব/১(আ)+দশ/১(আ)+র/১= ৩ মাত্রা
এই হিসাবেও পুরো লাইনের মাত্রা সংখ্যা ৮ (আকবর বাদশার সঙ্গে= ৮)। কোনোভাবেই ১০ নয়
০৫
এখানে আলোচনায় বাংলা উচ্চারণের যে দুটো সূত্র ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো
ক) বাংলায় যুক্তাক্ষরের আগের ভাওয়েল সব সময় শর্ট ভাওয়েল হিসেবে উচ্চারিত হয়।
খ) যদিও বাংলা বর্ণে মাত্র কয়েকটা ভাওয়েলের লং আর শর্ট ফর্ম আছে। কিন্তু উচ্চারণে মৌলিক সাতটা ভাওলেরই লং আর শর্ট ফর্ম আছে)
০৬
জানি না আমার এই হিসাব নিকাশ ছন্দকে আরো জটিল করল কি না
অসাধারণ আলোচনা। অন্যদুটো ধারা জানানোর জন্য কৃতজ্ঞতা লীলেনদা। দুয়েকটা জায়গায় একটু সমস্যা হচ্ছে তবে আরেকবার পড়লে বোধ করি ঠিক হয়ে যাবে।
০৬
কিছুটা জটিল, পদ্ধতিটি সময়সাপেক্ষ আর কানের উপর থাকতে হবে খুব সজাগ। তবে পার্ফেক্ট। ধন্যবাদ, দাদা।
অটঃ বহু বহুদিন হল লীলেনদার নিঃশ্বাসবধ সম্মোহনী লেখা পাই না.................
আপনার মন্তব্য যথেষ্ট আগ্রহ উদ্দীপক। এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হতে পারে। হ্রস্ব-স্বর ও দীর্ঘ-স্বর নিয়ে পি সি সেন সম্পাদিত রবীন্দ্রনাথের 'ছন্দ' বইটিতে যথেষ্ট আলোচনা আছে। বাংলা স্বরবর্ণ যে সংস্কৃত বানানের হ্রস্ব-দীর্ঘতা না মানলেও যে তার একটি স্বকীয় নিয়ম আছে, সেটিও সেখানে বিধৃত। সেক্ষেত্রে সুনীতিকুমার চট্টপাধ্যায়ের স্মরণাপন্ন হওয়াও যায়। সেসব জটিলতায় না গিয়ে সংক্ষেপে লেখা এই পোষ্টটিও পড়ে দেখা যায়। হ্রস্ব-স্বর ও দীর্ঘ-স্বরের ফয়সালা হলেই না আপনার মন্তব্যের উচ্চারণসূত্র নিয়ে কথা বলা যাবে। তবে আপনার মন্তব্যের উচ্চারণসূত্র যথেষ্ট সম্ভাবনাময় বলেই আপাতত মনে হচ্ছে।
উচিত কি না সেটি বিবেচনা সাপেক্ষ। তবে বদলায়। বাংলা উচ্চারণে স্বরের ধ্বনিকে অতি সহজেই বাড়ানো-কমানো যায়।
"ও-ই শোনো, পাখিরা বলছে কথা..."। দীর্ঘ ও-কার।
ঐ দেখো, কী ঝটপট বিদায় হচ্ছে! হ্রস্ব ঐ-কার।
০৪
'বাঁশি' বিষয়ে আমি আপনার সাথে এখনও ভিন্নমত পোষণ করি। কেন, সেটি পুরো কবিতাটির ছন্দবিচার করলেই পরিস্কার হবে।
০৫
ভেবে দেখি।
০৬
পাঠকই জবাব দেবেন।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ছন্দে ছন্দে চলার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু মন্তব্যে মন্তব্যে খানাখন্দে পা পড়ে হোঁচট খাচ্ছি। বলতে পারেন আমার মত অর্বাচিনের জন্য এ লেখা নয়। এক বাক্যে মেনে নেব। কিন্তু এই বয়সেও নতুন কিছু শিখতে ইচ্ছে করে যে !
প্রৌঢ়ভাবনা
আপনার এই মন্তব্যটি আমাকে অভিভূত করলো, অফুরন্ত প্রেরণায় সিক্ত করলো। সচলে করা আমার পোষ্টগুলিতে যতগুলো মন্তব্য পড়েছে, তারমধ্যে সম্ভবতঃ সবচাইতে বেশী প্রেরণাদায়ক এই মন্তব্যটি।
আপাতত মন্তব্যগুলো বাদ দিয়ে মূলপোষ্ট পড়ে আগে বিষয়টির উপর একটি সাধারণ ধারণা নিয়ে নিন। পরে না হয় মন্তব্যের ভেতরে ঢুকে অপেক্ষাকৃত জটিল বিষয়গুলোকে বুঝবার চেষ্টা নিলেন। এই পোষ্ট ছন্দের চালচলন জানার জন্য, ছান্দসিক নয় ছন্দরসিক হবার জন্য।
এ লেখাটির ট্যাগ লক্ষ্য করুন, 'সববয়সী', তাই না?
আপনার জিগীষাকে বিমুগ্ধ শ্রদ্ধা!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
আপনার প্রতিমন্তব্যে গর্বিত ও পুলকিত।
প্রৌঢ়ভাবনা
এত ব্যস্ততার মধ্যেও যে নিয়মিত পর্বগুলো লিখছেন, এজন্য আমরা পাঠকরা কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ।
উচ্চারণের সাহায্যে যারা বিশ্লেষণ করতে চান তাদের জন্য খুব উপকারী হবে। আরেকবার ধন্যবাদ।
সারাংশ হল, প্রথমে ১. শব্দের সঠিক উচ্চারণ জানতে হবে। ২. উচ্চারণানুযায়ী এককে ভাগ করতে হবে। ৩. একক গুলো মুক্তদল হলে তিন ছন্দেই ১ মাত্রা করে পাবে। রুদ্ধদল হলে ক) স্বরবৃত্তে ১ মাত্রা খ) মাত্রাবৃত্তে ২ মাত্রা গ) অক্ষরবৃত্তে রুদ্ধদলটি শব্দের কোন স্থানে আছে তা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবেঃ প্রথমে বা মাঝে হলে ১ মাত্রা আর শেষে হলে ২ মাত্রা। ৪. ঝামেলা(!) শেষ।
'জয়ধ্বনি'র ক্ষেত্রে দেখিঃ
১. সঠিক উচ্চারণ 'জয়োধ্ ধোনি'
২. একক গুলো হল জ, য়োধ্, ধো, নি। ৪ টি। ১ টি রুদ্ধদল, বাকি ৩ টি মুক্তদল।
৩. স্বরবৃত্তে জ(১) য়োধ্(১) ধো(১) নি(১) = ৪ মাত্রা।
মাত্রাবৃত্তে জ(১) য়োধ্(২) ধো(১) নি(১) = ৫ মাত্রা।
অক্ষরবৃত্তে জ(১) য়োধ্(১) ধো(১) নি(১) = ৪ মাত্রা। (রুদ্ধদল মাঝে)
মাত্রাবৃত্তের অনেক গুলো চমৎকার পঙ্ক্তি আগের পর্বে দেখেছিলাম। অক্ষর আর স্বরবৃত্তের জন্যও তেমনটি চাই। পাঠকদের অনুশীলন সহজ হবে।
শুভেচ্ছা নিরন্ত, কবি।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
বাপরে! এতোকিছু হিসেব করে কি লিখতে হয়!
আমি যে দুয়েকবার এটাসেটা লিখতে চেষ্টা করেছি তখন কেবল দেখেছি পড়তে আরাম পাই কিনা! পাঠক হিসেবেও আমি লেখা/ছন্দ বিচার করি এই হিসেবে।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
না, মনে হয় কবিরা লিখার সময় এতো কিছু হিসেব করেন না। এমনিতেই এসে যায়। লিখার পর পরখ করে নেন। বাংলা ভাষার ধ্বনি ও ছন্দ এই সুন্দর দেশটির মতোই সমতল। সেখানে জটিলতা খুবই কম।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
অশেষ কৃতজ্ঞতা জানবেন।একবার পড়েছি,আর একবার পড়লে বোধকরি ঠিকঠাক বুঝতে পারব।
অক্ষর আর স্বরবৃত্তের আরো কিছু পংক্তি থাকলে চর্চাটা আরেকটু ভালো হত।বেশি দাবী করে ফেল্লাম
নাতো?
সততই ভালো থাকবেন।পরবর্তী সিরিজের অপেক্ষায় আছি।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। অক্ষরবৃত্ত ও স্বরবৃত্তের মূল আলোচনায় এখনও আসিনি। সেখানে অনেক অনেক কবিতাংশ তুলে দেয়া যাবে। সমস্যা হলো, বাংলা কবিতার বিশাল ভাণ্ডার থেকে প্রতিনিধিত্বশীল কবিতা তুলে আনার বিষয়টি যথেষ্ট শ্রম ও বিবেচনাসাধ্য। আশাকরি পাঠক এ বিষয়টিকে কোমলভাবেই নেবেন।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ডরাইছি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আরে খামোখা ডরাইয়েন না...
আমি হলাম গিয়ে দন্তবিহীন লিখিয়ে, আমার লেখা, "যত কয়, তত নয়"!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
প্রিয় রোমেল ভাই, আপনার নতুন করে চলতে শুরু করাটাই একটা দারুন প্রেরণার জন্ম দিলো! সাথে লীলেন ভাই এর জন্য অফুরন্ত শুভেচ্ছা। খুলে যাক বৃত্তের বাঁধন, নতুন ব্যাসার্ধ এসে গড়ে নিক ভাষা!
লীলেন ভাই, আপনার লেখা পড়িনা অনেকদিন। ভাই, আপনার লেখা পাজরের হাড় নড়িয়ে দেয়, অপেক্ষায় আছি!
ধন্যবাদ, তানিম এহসান।
বুঝিনি।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ভাইয়া, আমি বলতে চেয়েছি সিলেবল ধরে ছন্দের এই ব্যাখ্যা শুরু করার প্রয়াসটাই একটা অনুপ্রেরণা দিলো। বর্ণ ধরে ব্যাখ্যা করার যে চলমান ধারা তার হাত ধরেই কবিতা বোঝার চেষ্টা করছিলাম, এখন এইভাবে করে ব্যাখ্যায় কেন যেন একটা আলাদারকম দ্যোতনা তৈরী হচ্ছে নিজের ভেতর।
ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা,
নতুন মন্তব্য করুন