সময় বড় নিষ্ঠুর। শুধুই ধুলো উড়িয়ে পালিয়ে যায়। বোকা বয়স তার পিছেই ছুটতে থাকে। আর সেই ধুলো চুলে আটকে রঙ পাল্টে দেয়। এই টপ টু বটম বেরসিক সময়ের পিছে কেন দৌড়াতে হবে? ঢাকার ট্রাফিক জ্যামের মতো হলে কী ক্ষতি হতো? সময়ের তোয়াক্কা না করে ননস্টপ দাঁড়িয়ে থাকা। ইস, সময়টাকে যদি কানে ধরে ঘুরিয়ে কুড়ি বছর পেছনে নেওয়া যেতো! জীবনটা ডিভিডি প্লেয়ারের মতো হলেও মন্দ হতো না। ইচ্ছে মতো প্লে করা যেতো, নইলে পজ দিয়ে আটকে রাখারও সুযোগ থাকতো। তা না হয়ে উনি হলেন নদীর মতো, গড়িয়ে পড়া ঝর্নার মতো। শুধুই সামনে এগিয়ে যায়। একেবারে ননস্টপ জার্নি।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে নিজের চল্লিশোর্ধ দেহারার দিকে তাকিয়ে এভাবেই দুঃখ করছিলেন তাহেরা মাহবুব। এক কালে একটা অমায়িক যৌবন ছিল তার। পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি হাইটের সাথে স্লিম ফিগার। ফর্সা কমফ্লেকশনের সাথে টানা টানা দুটো চোখ। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে লতা-পাতাও যেন হা তাকিয়ে থাকতো। ডাঁসা ডাঁসা যুবক ছেলেরা লোহাজাতীয় পদার্থের মতো দুর্নিবার আকর্ষণ অনুভব করতো। চুম্বকের তো সমমেরুতে বিকর্ষণ আর বিপরীতে আকর্ষণ।
নিজের অরবিটে আপন ছন্দে ঘোরার এই চার্মিং মুহূর্তে ঘটে গেল জীবনের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি। তার থেকে পনের বছরের বড় এক ডাক্তার পাত্র টেনে আনলেন বাবা। ডাক্তার সাহেবের বায়োলজি-ফিজিওলজির ভালো জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও বড় লোভে পড়ে নাছোড়বান্দা হয়ে পড়লেন। তাহেরা আক্তার হয়ে গেলেন তাহেরা মাহবুব। প্রায় চল্লিশ বছরের নিম্নগামী যৌবনে বিয়ে করে বুড়োর খাতায় নাম লেখানোর আগে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ অবশ্য রেখে গেছেন। ঘরে তাদের দুই কন্যা সন্তান। বড় মেয়েটা সতের, আর ছোটটা পনের। বড় মেয়েকে দেখে খুব হিংসে হয় তাহেরা মাহবুবের। ছোটটা সেই ফোকাসে আসার অপেক্ষায়।
বড় মেয়ে তুলি ঘরে ঢুকে দেখে, মা ফর্সা মুখ কালো করে বসে আছে। কারণ জিজ্ঞেস করতেই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাকুতি-মিনতি করতে লাগলেন। মেয়ে তো অবাক!
- মা, হঠাৎ কী হলো তোমার?
- আমার হয়ে একটা কাজ করে দিবি, মা?
- কী কাজ?
- আমার হয়ে প্রক্সি দিতে পারবি।
- প্রক্সি! হোয়াই? হাউ?
- আমি খুব ঝামেলায় পড়ে গেছি। আমার বয়সটাই আমার শত্রু এখন!
- মা, তোমার কথায় আমি পাজল্ড হয়ে যাচ্ছি। স্টোরিটা খুলে বলো না?
ঘটনার জন্ম বেশ কয়েক মাস আগে, ফেইসবুকে। আসল ছবি দেওয়া অ্যাকাউন্টে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসে যতো বুড়োদের। ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়েই নতুন একটা অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। প্রোফাইলে দিয়েছেন বড় মেয়ের একটা ছবি। অমনি জুটে গেল কচি কচি বয়ফ্রেন্ড! একজনের সাথে বেশ ভাব জমে গেল। প্রতিদিন চ্যাটিং করে কমম্পিটার গরম করে ফেলছেন। আবিষ্কার করলেন, আজকালকার ছেলেদের ভাষা ভীষণ বদলে গেছে। নিজে তার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। ছেলেটাও মহানন্দে বগল বাজিয়ে চলেছে। কাল রাত্রে লিখেছে, আর ওয়েট করতে পারছে না। এবার ফেস টু ফেস হতে চায়। এমন ড্রিমি ফেসটা না দেখলে তার নাকি ঘুম হচ্ছে না।
তুলি ভীষণ চটে গেল। বাবার সাথে সম্পর্কের টানাটানি সে বুঝতো। তাই বলে ছেলের বয়সী কারও সাথে এভাবে ভার্চুয়াল প্রেম? তাও আবার তার নিজের ছবি ব্যবহার করে? তুলি রেগেমেগে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। মা হাত টেনে ধরলেন। আদর করে পাশে বসালেন। তারপর গলায় মধু এনে বললেন,
- মা, এবারের মতো আমাকে বাঁচিয়ে দে?
- কী করতে বলছো আমাকে?
- তুই আমার হয়ে একটু দেখা কর না ওর সাথে?
- হাউ কাম?
- দেখ মা, রাগ করিস না। তোকে আর বলবো না।
- বাবা যদি জানতে পারে?
- কেন জানবে? আমরা না বললে জানবে কীভাবে?
- আমার তো বলে দেওয়াই উচিৎ!
- ছি মা! মাকে কেউ এভাবে ব্ল্যাকমেইল করে?
- আর কোন মা তার মেয়েকে এরকম ইনডিসেন্ট প্রোপোজাল দেয়?
ঝগড়া চললো আর কিছুক্ষণ। তাহেরা মাহবুব অসহায়ের মতো দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে রইলেন। মায়ের কষ্ট দেখে তুলির রাগ আরও বেড়ে গেলো। মাঝে মাঝে রাগের মধ্যেও মাথায় অনেক বুদ্ধি খিলে যায়। তুলি চেঁচিয়ে বললো, পাসওয়ার্ড বলো!
তাহেরা মাহবুব চোখ বড় বড় করে বললেন, পাসওয়ার্ড দিয়ে কী করবি?
- ডেটিং করলে টাইম-ভেন্যু জানাতে হবে না?
- আমি জানিয়ে দিচ্ছি?
- আমাকে ভয় পাচ্ছো, মা? তোমার বয়ফ্রেন্ড আমি কেড়ে নিবো না। আমার কি অভাব পড়েছে?
বিকেল না আসতেই ঘটে গেল ট্রাজেডি। না, প্রেমিক ছিনতাই নয়। তুলি মায়ের টিনএজ অ্যাকাউন্টের স্টেটাসে লিখে দিয়েছে, আই অ্যাম ইন আ নিউ রিলেশনশিপ। ওপাশ থেকে রিপ্লাই এসেছে- য়ু আর আ হিপোক্রিট, আ উইচ। আই হেইট য়ু!
….............................................................................................................................................................
দেবানন্দ ভূমিপুত্র
মন্তব্য
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
মাথা ঘুরে যাওয়ার কারণটা বুঝতে পারলাম না। একটু খুলে বলতেন?
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
ভাই, খারাপ লাগলে কইয়া ফালাইতেন? মাইন্ড খাইতাম না কইলাম।
লেখাটা একেবারেই ভাল লাগল না৷ মানে লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে কোনও বক্তব্য নেই, কিন্তু লিখনশৈলী বেশ খারাপ লাগল৷ আর সচলে অহেতুক ইংরাজী শব্দের ব্যবহারের ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা আছে বলে জানি৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
আবার লেখার সময় বিষয়টা মাথায় রাখবো। অনেক ধন্যবাদ।
এখন এমনটা ঘটছে বলছেন? কি জানি। তবে গল্পগুলোতো আর এম্নি এম্নি লেখা হয় না। হজমে সমস্যা হবে অনেকের। অনভ্যস্থ মন আমাদের।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আমার নিজেরও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না। তবে গল্পের পুরোটাই কাল্পনিক নয় কিন্তু। আমার তো মনে হয় এমন বেশ ঘটছে আজকাল। পর্দার আড়ালে অবশ্যই। উন্নতির বাই প্রডাক্ট বলতে পারেন।
কাহিনি অতিকল্পনা হয়ে গেল না, দাদা? তবে লেখার মান বেড়েছে.........
অতিকল্পনা কিছুটা মনে হতেই পারে। এটা লোয়ার বা মিডল ক্লাসে খুব একটা ঘটে বলে মনে হয় না। একটু উপরে উঠলে এর চেয়ে বেশিও তো দেখা যায় মনে হয়। আর এটা একটা সত্যি ঘটনায় খানিকটা রঙ লাগানো। অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে।
বিশ্বাস করলাম। "ইট্স কমপ্লিকেটেড" ব্যাপারটা আজকাল আসলেই বহোত কমপ্লিকেটেড হয়।
ফেইসবুক তো মাইন্ষে খালি গল্প কবিতা শেয়ার আর দুষ্ট একনায়কের মসনদ কাপাঁনোর কামে ব্যবহার করে না।
-মেফিস্টো
ঠিক তাই। এই ফেইসবুক আরও কতো কাজের হাতিয়ার হবে কে জানে। যতো দিন যাবে, অনেক আনপ্রেডিক্টেবল ঘটনা ঘটতে থাকবে। আর আমার মনে হয়, যে প্লটটা এনেছি এখানে- এমন মনোস্তত্ব অনেকেই ধারণ করেন। ফেইসবুকের অবতারণা সময়ের প্রেক্ষিতে সেটা দেখার অভিপ্রায় থেকেই। অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে।
ভাই কি চিন্তায় পড়ে গেলেন? মনে চাইলে কইয়া ফালান কী কী ভালো লাগে নাই। অনেক ধন্যবাদ।
ঘটনাটা ভালোই সাজিয়েছেন। তবে, খুব চটজলদি সবটা হয়ে গেলো না কী? গল্প তো বোধ করি আরেকটু ডিটেইলিঙ দাবি রাখে।
আপনার আগেরটা বেশি ভালো লেগেছিলো। মানে ছোটদের গল্প যেটা।
ডিটেইলে গেলে চরিত্রগুলো আরেকটু বিকশিত হোত। ঘটনাটা বেশি গুরুত্ব পেয়ে গিয়েছে। একারণের একটু সুপারইম্পোজড মনে হয়।
সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন। আসলে অণুগল্প ট্রাই করতে গিয়েছিলাম। বুঝতে পারছি, খুব একটা জুতের হয়নি। অনেক ধন্যবাদ।
হুম। এই ধরনের কাহিনী হজম করা সবার পক্ষে সম্ভব হবে না। তাছাড়া আপনি ছোটদের গল্প থেকে এক্কেবারে ইউটার্ণ। গল্পটা আরো ডিটেইলিং এ যেতে পারত মনে হয়। মনে হলো,হুট করে শেষ হয়ে গেল।
মাথায় ছিল, গল্পটাকে বেড রুমে শুরু করে ওখানেই ইতি টানব। একটা দুটো দৃশ্যপটে শেষ হবে গল্প। আর প্রাসঙ্গিক কথা আনব ফ্যাশব্যাকের মাধ্যমে। সব মিলিয়ে সুবিধে করতে পারিনি। রিশাদ ভাই, অনেক ধন্যবাদ আপনার বিশ্লেষণের জন্যে।
গেরিলা ভাই, ভয় পাইচি!
বাস্তবে এতো দূর হয়তো যায় নি এখনও, তবে খুব যে বেশি বাকি আছে সেটাও তো বলা যায় না। ফেইসবুক অপব্যবহারের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টাও ভালো ফুটেছে।
তবে লেখাটার পরিধি আরেকটু বড় হলে বোধ হয় বেশি ভালো লাগত।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
আপনার কথায় একটু ভরসা পেলাম। আর সবার সাথে আমার মত, এটাকে আরেকটু লম্বা করে মনোস্তাত্ত্বিক টানাপোড়ের আরেকটু গভীর করে তুলে ধরতে হবে। অনেক ভালো থাকুন।
ভালো শিশুতোষ লেখা পায়না বলে বাংলাদেশের শিশুদের মন অনেক খারাপ থাকে! বুঝলেন ভাই দেবানন্দ ভূমিপুত্র
সেটা আমিও খুব অনুভব করি। আর সে জন্যেই তো শিশুদের নিয়ে লিখতে ভালোবাসি। যদিও কাজটা অনেক কঠিন। শিঘ্রই আরেকটা গল্প পোস্টের আশা আছে। অনেক ভালো থাকুন।
প্রফেটিক লেখা যাকে বলে আরকি।
প্রক্সির কি দরকার? এইটা দেখেন।
https://www.youtube.com/watch?v=VG4U2aP8X9E
সাবধানবাণী - Once seen cannot unsee.
হা হা হা! গল্পটা যাদের হজম হয়নি, এই ভিড্যুটা তাদের জন্য বদহজম নিবারণী ঔষধ - "ফ্লাজিল" হিসাবে খুব ভাল কাজ করবে!
আরেকটা কথা মনে হল। গানটা ভাল একটা রিমাইন্ডার হয়েছে - এর গীতিকারের মত বিশ্ববিখ্যাত বুড়োদের ভীমরতি হলে যদি সেটা মিষ্টি মিষ্টি কথায় মুড়িয়ে নিয়ে হজম করা যেতে পারে, তাহলে জেণ্ডার বদলাতেই সেটা হজমের অনুপো্যোগী হওয়া যে আসলে বেশ খানিকটা সেক্সিস্ট ভণ্ডামী -- সেটা ভিড্যুটা দেখতে দেখতে গানটার কথা আর তার গীতিকার কে আর তার লাভলাইফ সম্পর্কে কি শোনা যায় তা মিলিয়ে দেখলে আরও ভালভাবে মনে পড়ে।
****************************************
গুজবে কান দিতে নেই
যাহা রটে তাহা কিছু বটে!
****************************************
নতুন মন্তব্য করুন