বহুদিন হয়ে গেল দেখা হয় না মণিকুন্তলার সঙ্গে। মেঘ সরে গিয়ে অপরাজিতা-নীল শরৎ আকাশের ছোটো একটু টুকরো দেখা দিলেই সে উতলা হয়ে উঠে বলতো, "তুলি, তুলি, চল যাই পশ্চিমের মাঠে, ওখানে বুঝি কাশ ফুটেছে।"
আমি হাসতাম, "দূর পাগলি, এখনো যে বর্ষা যায় নি, আশ্বিন আসুক তবে তো!"
ওর মুখে মেঘের আবছায়া পড়তো, "যায় নি বুঝি? বর্ষা? "
একসময়ে স্থলপদ্ম গাছে শেষরাতে ফুটে উঠতো থোকা থোকা সাদা ফুলের দল, যারা কিনা বেলা বাড়তে থাকলেই হয়ে যেতে থাকে গোলাপী। বিকালে একেবারে পুরো গোলাপী। তার পাশের শিউলি গাছটাও একটা দুটো ফুল ফোটাতে ফোটাতে একেবারে ঝমঝমিয়ে ফুল ঝরাতে শুরু করতো একদিন।
আশ্বিনের রোদ্দুরে ঝলমল করা শিশিরে ধোয়া ঘাসের উপর দিয়ে আমরা যেতাম পশ্চিমের মাঠে কাশফুল দেখতে, সারা মাঠ জুড়ে তুলো তুলো মাথা নেড়ে ওরা খেলছে তখন হাওয়ায় হাওয়ায়।
তারপরে মণিকুন্তলা হারিয়ে গেল, আমাদের পাথুরে দুনিয়া বুঝি সইলো না তার। এত ক্রূরতা চারিপাশে ! সে পালালো। শিউলি কাশ স্থলপদ্মেরাও চলে গেল ওর সাথে সাথে। কোথায় গেল ওরা সবাই? স্বপ্নসম্ভব সেই মণিমহলে?
আমি কিন্তু রয়েই গেলাম, মানুষের ক্রূরতা দেখে পাথর হতে হতে। তবু বুঝি সবটুকু দেখা হলো না এখনো। কবে দেখা শেষ হবে? জীবনের মানেটাই বা কী? শুধু টিঁকে থাকা? নাকি কোথাও এখনো রয়ে গেছে কবোষ্ণ নীড়ের মতো কোনো অভয় আশ্রয়?
মানুষের সবটুকু ক্রূরতা এখনো দেখিনি আমরা-
দেখিনি বলেই বেঁচে থাকি কবোষ্ণ আশায়,
কবুতরের বুকের মত নরম,
ফুটন্ত ভাতের মতন গরম,
গ্রীষ্মপারের প্রথম বৃষ্টির মতন
কোমল ঘ্রাণ লাগা আমাদের নড়বড়ে বাসায়।
বেঁচে থাকি পোড়া শহরের পাশে
বেঁচে থাকি পোড়ো বন্দরের শ্বাসে,
বেঁচে থাকি রাত্রির ঝড়ভাঙা বাসায়
ভেজা মা-পাখির মত উষ্ণ ভোরের আশায়।
নির্বোধ অশ্রুমতী নদী বয়ে যায়
বিকেলের প্রান্ত ছেড়ে সন্ধ্যাসীমায়-
আমাদের বেঁচে থাকা এমনই অলীক
আমাদের ভালোবাসা হেমন্ত শালিক
রোগা গায়ে রোগা পায়ে খুঁজে ফেরে দানা
খুঁজে ঠিক পেলো কিনা হয় না তো জানা-
আমাদের ভাবনারা শিমূলের তুলা
এলোমেলো ভেসে যায় বুকে নিয়ে বীজ
হয়তো কোথাও পাবে অঙ্কুরের পালা।
হয়তো কোথাও আছে আগুনের ডানা
উড়িয়ে পুড়িয়ে দিয়ে পুঁথি ফানাফানা,
বের করে নিয়ে আসে স্ফটিক পালক
বালির মিনার গড়া অবাক বালক-
আমাদের স্রোতে ভাসা কুচি কুচি গান
আলোর অধরা লীলা, স্ফুর্ত অনুপ্রাণ।
******
মন্তব্য
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দারুণ কবিতা। পড়তে গদ্য কবিতাই মনে হয়। মাঝে মাঝে আবার অন্ত্যমিল। এই অন্ত্যমিলের ঝামেলায় না গেলেই পারতেন। সুন্দর ভাবনা।
অনেক ধন্যবাদ দেবানন্দ ভূমিপুত্র।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
'সে পালাল' ! মাত্র দুটো শব্দ ! অথচ তাতেই বুকের ভেতর খামচে ধরে চেনা কষ্ট। ওরা পালিয়ে যায়, আর আমরা সেই মুছে যাওয়া পায়ের ছাপ বুকের ভেতর পুরে রাখি কত যত্নে। আনমনে তাতে হাত বুলিয়ে জীবনভর নিজেকে জিজ্ঞেস করে চলি, জীবন মানে কী ? আমরা তো রয়ে গেলাম, তবু কেন মানে খুঁজে পাইনা বলতে পারো ?
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
আশালতা, এই পালিয়ে যাওয়াগুলোর সামনে দাঁড়িয়েই সবচেয়ে বেশি অসহায় লাগে, কারণ সেই বিন্দুতে তো আর কোনো লড়াই নেই, শুধু সমর্পণ। তবু যে রয়ে গেল তার জীবন পরিক্রমা চলেই, চলেই, চলেই। এর মানে খুঁজে পেয়েছে কেই বা! হয়তো গুটিকয় সাধক, প্রেমিক, পাগল পেয়েছে কোনো মুহূর্তে।
ভালো থেকো আশালতা।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
মনে পড়ে গেল নানুবাড়ির স্থলপদ্ম গাছটাকে...দু'হাতে সে ফোটাত অঢেল গোলাপী জৌলুশ...
আপনার লেখা আশ্চর্য এক মন-খারাপ-করা আবেশ নিয়ে এলো...
অনেক ধন্যবাদ উচ্ছলা। ভালো থাকবেন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভাব, ছন্দ ও অন্ত্যমিলে দারুণ স্বচ্ছতোয়া!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
আমার পক্ষ থেকে লন রোমেল। অনেক শুভেচ্ছাও লন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ভালো লাগা অনেক।
মেঘে ধুঁয়ে যায় ...
অনেক
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
facebook
তারেক অণু, আপনার প্রোফাইল পিকের ঝর্ণাটা কোথাকার?
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
প্রতিমন্তব্যে না এখন আরেকটা ভ্রমন-কাহিনী নামে!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
শুনছেন তারেক অণু ? মৌনকুহর কী বলছেন?
জমিয়ে লিখুন ঝর্ণাটার কাহিনি, আমি শুরু করে দিচ্ছি, " সে এক বিরাট ইতিহাস, ঘরে ছিলো না কেরোসিন---" এরপরে আপনি লিখুন কী হোলো, কী বৃত্তান্ত।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
" বেঁচে থাকি রাত্রির ঝড়ভাঙা বাসায়, ভেজা মা-পাখির মত উষ্ণ ভোরের আশায় "
এতো সুন্দর কবিতার একটা লাইন, আর চিত্রকল্প। ধন্যবাদ দেবোনা।
আমার পক্ষ থেকে আপনাকে দিলাম ।
আর শুভেচ্ছাও লন।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
দারুণ!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
সুন্দর কবিতাটি আর প্রাক কথকতা!!!!
_____________________
Give Her Freedom!
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
চলমান মননের অভিব্যক্তি
ডাকঘর | ছবিঘর
অনেক ধন্যবাদ তাপস।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন