ঘর ঝাড়ু– দিতে কিংবা কেটলিতে করে চা এনে সবাইকে খাওয়াতে এখন আর জাতে ধরে না। তক্তা কাটা কিংবা হাতুড়ি পেটানোতো এখন এনজয়ই করি। কিন্তু মাথায় ঠাঠা ফেলল গ্রুপের নতুন নাটকের সুভেনির প্রকাশনা। নতুন নাটক উপলক্ষ্যে সুভেনির প্রকাশ হবে জেনে খুশিই হয়েছিলাম; ভেবেছিলাম সুভেনিরে একটা মারাত্মক লেখা লিখে দেখিয়ে দেবো অভিনয় কিংবা বাংলা উচ্চারণ না জানলেও লেখায় আমি এইসব গোঁয়ার গোবিন্দের নাগালের কতটা বাইরে। কিন্তু সুভেনিরের জন্য আমার কাছে কেউ লেখাটেখা তো চাইলই না; বরং আক্তার ভাই জানিয়ে দিলো- সুভেনিরের জন্য প্রত্যেককে কমপক্ষে এক হাজার টাকার বিজ্ঞাপন জোগাড় করতে হবে
- বিজ্ঞাপন?
- সুভেনির বের করতে টাকা লাগবে না?
- আমি সুভেনিরে একটা লেখা দিতে চাচ্ছিলাম
- বিজ্ঞাপন পেলে আমি শামসুর রাহমানের লেখাও নিয়ে আসতে পারব। তোমার লেখা লাগবে না। তুমি এক হাজার টাকার বিজ্ঞাপন দিলেই হবে...
আক্তার ভাইর মতো তক্তা-পিটানো মানুষের সাথে সাহিত্য নিয়ে আলাপ চলে না; তাই চেপে গেলাম। উল্টা সুভেনিরে লিখতে চাওয়ার জন্য দেখলাম কয়েকজন ত্যাড়া করে হাসল। মনে মনে ভাবলাম- হালারা আমার প্রতিভায় হিংসা করে; একদিন দেখাব নে...
ততদিনে পার্টির চাঁদা তোলায় বেশ দক্ষ হয়ে গেছি। দল বেঁধে দোকানে গিয়ে ঢুকে পড়লে লোকজন মোটামুটি টাকা দিয়ে দেয়। কিন্তু এই বিজ্ঞাপন তুলতে হবে একা একা...। কী আর করা? গেলাম। কিন্তু যেখানেই যাই লোকজন আমার আগায় মাথায় তাকায়- নাটক? টিভিতে?
- না মঞ্চে
- ও বুঝছি। নিজেরা করে নিজেরাই দেখবে
- না না। কমপক্ষে দুই- তিনশোজন লোক তো অবশ্যই দেখবে
আমার কথা শুনে প্রথমে লোকজন হাসে। তারপর কাকুতি মিনতি করলে ধমকায়- যাও যাও। এইসব যাত্রাফাত্রায় আমরা বিজ্ঞাপন দেই না। সঙ্গে নাটক ছেড়ে লেখাপড়ায় মন দেবার জন্যও কেউ কেউ ফাও উপদেশ দেয়
একটাও বিজ্ঞাপন জোগাড় করতে পারলাম না। কিন্তু অন্যরা টাপাটপ করে জমা দিচ্ছে। টাকা জমা দেয়ার শেষ দিনে আক্তার ভাইর হাতে টাকা দিলাম...
- বিজ্ঞাপন কই?
- বিজ্ঞাপন নাই
- এই টাকা তুমি পকেট থেকে দিচ্ছ?
- তো আর কী করব?
- তুমি ডাবল অপরাধ করছ। প্রথমটা বিজ্ঞাপন তুলতে না পারা। আর দ্বিতীয়টা পকেট থেকে টাকা দেয়া
- কিন্তু বিজ্ঞাপন পাই না তো
- টেকনিক জানলে ঠিকই পেতে। আর ওটা না শিখলে নাটক করতে পারবে না
- কিন্তু দুই তিনশোজন দর্শকের জন্য লোকজন টাকা দিতে চায় না
- দুই তিনশোজন লোকের কথা বললে কার ঠেকা পড়েছে তোমাকে বিজ্ঞাপন দিতে?
- তো?
- যেভাবে বললে লোকজন টাকা দেবে সেভাবেই বলতে হবে
- মিথ্যা বলব?
- মিথ্যা দিয়ে লোকজনের পকেট থেকে টাকা বের করা যায় না; চাপা ঝাড়তে হয়
আক্তার ভাই টাকাটা নিল না। আমাকে আরো তিন দিন সময় দিয়ে বলে দিলো- বিজ্ঞাপন না আনতে পারলে গ্রুপে জায়গা নেই
কথাকলির লোকজনের চাপার বদনাম আছে। কিন্তু চাপা বলতে অতদিন বুঝতাম খালি ‘মুই কী হনুরে’ প্রমাণ করা। কিন্তু চাপার যে ব্যবহারিক মূল্যও আছে সেটা বুঝিনি। ... আইচ্ছা তাহলে; এইবার দেখি...
আমরা করছিলাম রাজনৈতিক নাটক কিন্তু এক নোট বই প্রকাশকের কাছে গিয়ে বললাম দুই মাসে বিশটা স্কুল-কলেজে আমরা নাটকটা করব। হাজার দশেক ছাত্রছাত্রীর জন্য দশ হাজার কপি সুভেনির ছাপাব আমরা। ইস্কুল কলেজের নাম তো বললামই; সাথে সাথে নাটকেরও একটা ইস্কুল উপযোগী নাম বলে দিয়ে কড়কড়ে পাঁচশো টাকার দুইটা নোট পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম- আক্তার ভাইরে পাঁচশো টাকার একটা নোট দিলে কী সমস্যা?
বিজ্ঞাপন দেবার জন্য আরো একদিন বাকি আছে। অর্ধেক টাকা পকেটে রেখে অর্ধেক আক্তার ভাইকে দিতে গিয়েও শুধু বিজ্ঞাপনের টেক্সটটা দিলাম- টাকা কাল দেবে বলেছে
আক্তার ভাই কাগজটা রেখে বলল- টাকা না দিলে কিন্তু বিজ্ঞাপন ছাপা হবে না
পরেরদিন বললাম- আজকেও দেয়নি; বলেছে কাল...
পরেরদিন আক্তার ভাই জানিয়ে দিলো- টাকা বাকি রেখে বিজ্ঞাপন ছাপা সম্ভব না তার পক্ষে। কিন্তু আমাকে গ্র“প থেকে বের করা না করার বিষয়ে আর কিছু বলল না। আমিও চেপে গেলাম। আরো দুয়েকজন দেখলাম বিজ্ঞাপন জোগাড় করতে পারেনি। তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে তারা বলল- দুর। গ্র“প থেকে বের করে দেয়া অত সোজা নাকি? ওইসব ভয় দেখায়...
আইচ্ছা তাহলে। ভয় দেখালে ভয় পামু কিন্তু টেকা দিমু না। ৮৯ সালে এক হাজার টাকা আমার প্রায় দু মাস গ্রুপে যাওয়া আসার গাড়ি ভাড়ার সমান...
নোট বই প্রকাশককে নাটকের আমন্ত্রণপত্র আর দশ কপি সুভেনির দেবার কথা ছিল। তার কাছে গিয়ে বললাম স্কুলে পরীক্ষার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় নাটক পিছিয়ে দিয়েছে। পরীক্ষার পরে আরো অনেকগুলো স্কুলে একসাথে নাটকটা হবে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমাদেরকে বোধহয় প্রায় পনেরো হাজার সুভেনির ছাপাতে হবে...
নাটক হয়ে গেলো। সুভেনিরও ছাপা হলো। যারা বিজ্ঞাপন তুলতে পারেনি তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হলো এবার রেহাই পেলেও পরবর্তীতে বিজ্ঞাপন তুলতে না পারলে গ্রুপে জায়গা নেই। লিটন ভাই একটা লেকচার দিয়ে বুঝিয়ে দিলো- খালি বুদ্ধিজীবীগিরি করে নাটক করা যাবে না; বুদ্ধিকে নাটকের জন্য কাজে লাগাতে হবে। আর এটা না পারলে যেন নাটক ছেড়ে অন্য রাস্তা দেখি...
পুরো এক হাজার টাকা পকেটে রেখে আমি মুখ কাঁচুমাচু করে বসে থাকলাম। আর মনে মনে বললাম- হ। বুদ্ধি কইরাইতো শুক্রবারীবাজার থেকে সিলেট শহরে দুইমাস রিহার্সেলে আসা যাওয়ার ভাড়াটা কামই করে ফেললাম; এইবার দেখা যায় নাটকে কে থাকে আর কে না...
২০১১.১০.০৬ বিষুদবার
কথাকলি।০৭। বিট এন্ড হিট
কথাকলি।০৬। আমি একটা দল
কথাকলি।০৫। অচেনা সেতার
কথাকলি।০৪। কী যেন ডাকে
কথাকলি।০৩। বাঙালের বাংলা শিক্ষা
কথাকলি।০২। এ্যানার্জি পয়েন্ট
কথাকলি।০১। প্রেমিক পাগল আর কবি
মন্তব্য
মজা পেলাম
আইচ্ছা
দেখছনি অবস্থা? হাজার টাকা মেরে খেয়েছে বেটায়, তাও গ্রুপের! আর আমি তার পকেটের ৩ টাকা দামের একটা কলম মেরে দিয়েছিলাম বলে এখন পর্যন্ত খোটা দেয়। পাষান
(পরের পর্বের জন্য আর কতদিন অপেক্ষা করবো জনাব? ঘুমটা কত লম্বা হবে যদি একটু বলে যেতেন)
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আমি চুরি করলাম বলে চোর ধরতে পারব না এইটা কী ধরনের কথা?
০২
ভাবছি আবার শুরু করব। বিশ পর্যন্ত গিয়ে হয়তো বিরতি নেবো আবার
একটা বিজ্ঞাপন জোগাড় করতে গেলে যে নরক দেখতে হয় তাতে একেশো বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়! আমার কিছু দারুণ অভিজ্ঞতা আছে, লিখব দেখি!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
লিখ্যা ফালাও
আমি কিন্তু বিজ্ঞাপন সংগ্রহে শেষ পর্যন্ত খুব একটা সুবিধা কর্তে পারি নাই
চমৎকার
দারুন
ধন্যবাদ
লীলেন ভাই, আবার আসতে হল।
আপনার এই সিরিজের শেষ লেখাঃ
আর ৮ নম্বর আসল আজকে । আপনি বড়ই বিপদজনক লোক, মানুষরে গাছে তুইল্লা মই লইয়া যানগা। এত চমৎকার লেখা আমাগো পড়তে না দিয়া আপনি ঘুমান কেমনে? জবাব চাই, দিতে হবে।
কথাকলি সিরিজে
শেষ পর্ব লেখার এক বছর পর আমারে একজন বিয়া করে শিক্ষার্থী স্বামী বানিয়ে বাধ্যতামূলক সংসারী কোর্সে ভর্তি করে দিলো
তারপর সেই পরীক্ষায় পাশ করার জন্য নিয়মিত গুঁতাগাত্তি দিয়ে পড়া মুখস্থ করাতে লাগলো
অবশেষে এক বছরের কোর্স দুই বছর পর্যন্ত করে দুইবার পরীক্ষায় ফেল করে আবার ফিরে আসলাম কথাকলিতে
যদিও সেই কোর্স এখনও শেষ হয়নি। কিন্তু পরীক্ষা পাশের আশা নাই বলে আর হয়তো পরীক্ষায় বসতে হবে না। তাই কথাকলির জন্য কিছুটা সময় পাব
০২
জবাটা দিলাম কিন্তু
এই কোর্স শেষ হওয়ার না লীলেন ভাই। আর পাশ করার আশা তো সুদূরপরাহত। আমারতো মনে হইতাছে কোর্স একবার শুরু করছেন যখন তখন মরার আগ পর্যন্ত পরীক্ষা চালু থাকব, সুতরাং পরীক্ষকরেও সচলে এডিক্ট কইরা দেয়ার একটা মহাপরিকল্পনা লন, কাম হয়া যাইতে পারে কি কন ?
লীলেনদা,আরো কয়েকজন নোট বই প্রকাশকের কাছে গেলেই পারতেন!
গেছিলাম তো। তবে বিজ্ঞাপন আনতে না। নোট বই লিখতে
ওইটাতে খাটনি কম পয়সা বেশি
বাজার থেকে একটা নোট বই কিনে উপরের প্যারা নিচে আর নিচের প্যারা উপরে দিলেই হয়
শেষে অধ্যাপক ছলিমুল ইসলাম নামে ওইটা ছাপা হলে প্রকাশকের বেশ লাভ হয়। আমার নগদ পাওনা পাঁচ হাজার টাকা প্রতি বই
নোট বই প্রকাশক কি এখনও অপেক্ষা করে আছেন? সুদাসলে তো ওঁর প্রধান অতিথি হবার কথা!
হা হা হা, আপনার পোষ্টটি বেশ মজাদার! আবার চাঁদা নিবেন না তো?
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
না সে ভুলে গেছে। কিংবা নাটকের লোক বাটপার হয় মনে করে বাদ দিয়ে দিয়েছে
মজারু। কচু গাছ কাটতে কাটতে ডাকাত হয় শুনেছি, আপনি সম্ভবত বেশি গাছ পান নি
ডাকাত আর হলাম কই? শেষ পর্যন্ত কচুগাছে দড়ি বেঁধে ঝুলে পড়তে হলো যে?
আমি ভাবসিলাম কথাকলি সিরিজটা বুঝি আর এলো না।
নিয়মিত লিখে শেষ করেন। জানি ব্যাপারটা আপনার জন্যে একটু কষ্টের তারপরো। একবার মাঝখানে ছেদ পড়লে সেটা আবার শুরু করাটা অনেক কষ্টের। অনেক ক্ষেত্রেই সেটা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না।
চলুক। লেখাটা ভালোলাগছে।
নাহ। আটকে থাকলেও এটা বন্ধ হবে না আশা করি
নোটগুলা মোটামুটি নেয়া। দেখা যাক কয়েকটা নামানো যায় কি না
মারহাবা!
মজা পাইলাম। সাথে কিছু মারিং কাটিং ফর্মুলাও শিখে গেলাম।
ফর্মুলা বুইঝা ব্যবহার কইরেন কিন্তু
লীলেন ভাই, চেনা যায়? লেখায় হিউমারের উপস্থিতি ভালো লাগলো। পরিচ্ছন্ন ভাষা আর সাবলীল বর্ণনা। ভালো থাকুন।
পরিচয় সংকটে আছেন মনে হয়? চেনা যায় কি না সেটা আরো দুয়েকজনকে করেছেন দেখলাম অন্য কোথাও?
লেখকের পরিচয় লেখা আর কমেন্টকের কমেন্ট। এর বাইরে আদৌ কি চেনার কোনো দরকার আছে?
facebook
আহারে ভাইজান। এই বুড়ো আঙুলগুলো কেমনে ব্যবহার করে জানি না বলে পারি না। না হলে আপনার ভ্রমণকাহিনী পুরোটাই বুড়ো আঙুল দিয়ে ভরে দিতাম
০২
আপনারটা যেমন জাতি ভ্রমণ। আমার এই সিরিজটা নিজের জীবন ভ্রমণ
০১
আপনার ল্যাখা পইড়া আরাম। ক্যামন ছলবলাইয়া আগায়।
০২
স্কুলে থাকার সময় আমিও একটা ছোট কাগজ সম্পাদনা করতাম। বহুত লোকের কাছে বিজ্ঞাপনের জন্য গেছিলাম। কমবেশি সবাই খ্যাদায় দিছে। পরে আমার প্রাইভেট টিউটর ২০০ টাকা দিছিল। এখন লেখা প্রকাশের কত সুবিধা - ছোট কাগজের ভাত কইম্যা গ্যাছে। লেখার চেয়ে কাইজ্যাও হয় বেশি। তয় "থিয়েটারওয়ালা" ভাল পাইতাম।
০৩
আপনে মন্তব্যে নাম্বারিং করেন ক্যান? এমনি জিগাইলাম
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
বিজ্ঞাপন তোলা টেকনিক না পুরা একটা টেকনোলজি
কেউ কেউ এই কাজে রীতিমতো বৈজ্ঞানিক
০২
নম্বরিং কেন যে করি কে জানে
তয় মনে হয় পড়তে সুবিধা। একসাথে বিশাল খাতা পড়তে হয় না
লেখা নিয়ে এবার আর কমেন্ট করবো না।তবে বুঝতে পারলাম - কোন সিরিজ ভাল লাগলে সেটা চালানোর জন্য কক্ষনো ভুলেও অনুরোধ করতে নেই। এতে লেখকের ভাব বেড়ে যায়। কিছু না বললে ই ভাল।
খালি ভাবটাই দেখলেন। অভাবের কথা ভাবলেন না
লেখার অভাবে না পড়লে কি আর লেখকেরা ভাব ধরে?
আপনার আবার লেখার অভাব! বিষয়ের অভাব নাই তো লেখার অভাব হয় কী করে? যাক এসব হাংকি পাংকিতে চিঁড়ে ভিজবে না।
বহুতদিন পরে লীলেন'দা
অ্যাজ প্রমিজড - কথাকলি সিরিজ নিয়মিত চাই - ২০ পর্বে থামলে হবেনা।
দেখা যাক। কদ্দুর যায় আর কদ্দুর নিতে পারি
হা হা হা হা...
মানুষের দুর্গতি দেখে হাসেন?
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
হ
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
যাক, আপনে আবার আইলেন তাইলে... ওয়েল্কামব্যাক...
এবার নিয়মিত লিখতে থাকেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
লিখতেই পারি না আবার নিয়মিত
নাটকের স্যুভনির প্রকাশনী।
অনেক কথা মনে করিয়ে দিলেন বস্। ২০০৬ এ আমরা একটা করেছিলাম। রাত নাই দিন নাই। কী খাটুনী যে গেছে...উফ্।
মনে আছে আম্বরখানার এক প্রেসের রাতে কাজ করতে করতে ঐ এলাকার সব মশার পুষ্টি আমরা যোগাইসিলাম।
মাত্র তো মশা
কুত্তার পুষ্টিও জুগিয়েছে অনেকে
"যদিও কৃষ্ণকাল" নামের একটা নাটকে অভিনয় করেছিলাম আজ থেকে একুশ, বাইশ বছর আগে, ছোট্ট ছেলের ভুমিকায়- যার দুটি হাত ছিলনা, সেটাই আমার প্রথম ও শেষ অভিনয় কথাকলি'তে। নাটকটা বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। ১৯৯১ এর জানুয়ারী মাসে সেই নাটক ঢাকায় মহিলা সমিতি মঞ্চেও মঞ্চস্ত হয়েছিল। শিমুল ইউসুফ,নাসিরুদ্দিন ইউসুফ, বিপাশা, শমী এদেরকে মঞ্চে দাঁডিয়ে দর্শক সারিতে দেখে রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম। নাজমা আনোয়ারের মেয়ে ছিলেন সেই নাটকের ডিরেক্টর। উনার নামটা ঠিক মনে পড়ছেনা, শুধু মনে পড়ে তিনি সিগারেট ফুঁকতেন ব্যাটা-ছেলেদের মত। আমি অবাক চোখে দেখতাম তার এই সিগারেট ফুঁকা। আর এনাম ভাই, শের ভাই, লিটন ভাই, মালিক আকতার, আরেকজন মোঁচ ওয়ালা মোটা ভাই (ফাজিল চিস্ত/ সুবিদ বাজারের দিকে বাসা) উনার কথা মনে পড়ে। মনেপড়ে প্রান্তিকের টিনওয়ালা হলুদ বিল্ডিংটার কথা, মনেপড়ে রিহার্সেলের ফাঁকে ঐ জানালা দিয়ে বিকেলের রোদ্দুরে স্কাউট ভবনের সামনে দিয়ে যাওয়া রিকাবীবাজারের রাস্তা। মনেপড়ে, মোঁচোওয়ালা ছোট্ট-খাট্ট একজন মানুষ যিনি চা-নাস্তা নিয়ে আসতেন আমাদের জন্য। সিলেটি-শুদ্ধ মিশ্রিত করে একদিন বলেছিলেন, চম্পাত তি চা নিয়ে আসছি-(তাড়াতাড়ি চা নিয়ে আসছি) সে কথা শুনে কি হাসি সবার!
কথাকলি আমার হৃদয়ে সব সময় থাকবে, কথা দিলাম।
হাতের কাছে ভরা কলস, তবু তৃষ্ণা মিটেনা।
----------------------------------------------------------------------------
মেরেছে রে
আলাল চরিত্র করা কিমের সেই পিচ্চি ভাই এখন সেনা কর্মকর্তা এইটা অনুমান করা কীভাবে সম্ভব?
০২
যদিও কৃষ্ণকাল নাটকে আলাল চরিত্রের ওই পিচ্চিপোলা যার পোলা তার বাপের চরিত্রটি ছিল আমার। যে আবার হানাদারে বেয়নেটের গুতায় মারা যায়....
০৩
যদিও কৃষ্ণকাল নাটকটার রচনা আর নির্দেশনা দুটোই ছিল ইশরাত নিশাতের। এখন নিশাত আপার সাথে একই সাথে দেশ নাটকে কাজ করি আমি। এখনও ভুসভুস করে বিড়ি ফোঁকেন তিনি
০৪
ফাজিল চিস্তের দিকের বাসার মোচওয়ালা ভাই হলেন লায়েক ভাই। জহির খান লায়েক। সাধারণভাবে বড়ো লায়েক নামে পরিচিত। এখনও তেমনি আছেন
০৫
চম্পত্তি চা নিয়ে আসা মোচওয়ালা ছোটখাট ওই লোকটা ছিল মুর্শেদ। তার বাড়ি সম্ভবত ছিল কুমিল্লায়। কিন্তু দীর্ঘদিন সিলেটে থাকার কারণে সে এক শংকর ভাষায় কথা বলত
০৬
১৯৯১ সালে মঞ্চায়িত যদিও কৃষ্ণকালের কথকের চরিত্রটা আক্তার ভাই করত। শুনে শুনেই আমার মুখস্থ হয়ে গেছে অনেকটুকু। প্রসঙ্গ যখন আসলো স্মৃতি থেকে নাটকের প্রথম কিছু অংশ দেখি দেয়া যায় কি না:
বলি ভাইরে ভাই বইলা যাই আজব এক ঘটনা
সত্য কথার ভাত নাই ভবে তবু এ রটনা...
তবু সত্য বলি...
তবু সত্য বলি মিথ্যা বলি মুখে না আনিয়া
দশজন যারা বইসা আছেন শোনেন মনো দিয়া
দশজন বড়ো ছোট...
দশজন বড়ো ছোট লম্বা খাটো কত রকম আকার
পৃথিবীতে আছে রে ভাই কত কিছু দেখার;
স্বাধীনতা যুদ্ধ....
স্বাধীনতা যুদ্ধ সবশুদ্ধ কাইড়া নিছে যাদের
এই দেশেরই সন্তান মোরা কি বা দিছি তাদের
দেখেন হিসাব করে
দেখেন হিসাব করে যুদ্ধের পরে কয়জন রাজাকারে
ভইরা দিলো দেশটারে ভাই নতুন আলবদরে
তারা রগও কাটে
তারা রগও কাটে মাঠেঘাটে ইসলামি জলসায়
মানুষ মারিয়া আল্লার পথ কোনটা শেখায়
তাদের এক ঘটনা
তাদের এক ঘটনা আছে জানা নাম তার কুসুম বিবি
চইলা ফিরা বেড়ায় যখন লাগে রুপের ঢিবি
বাপের নাম সিকন্দর
বাপের নাম সিকন্দর সচ্ছল সুন্দর আছিল সংসার
তিন দিনেরও কালা জ্বরে বই মইরাছে তার
সিকন্দরের কাছে
সিকন্দরের কাছে পড়শি আসে বিয়া করতে বলে
সিকন্দর মিয়ার মনও তাতে নাহি টলে
তারো সোজা কথা
তারও সোজা কথা মনে ব্যথা বড়ই পাইলাম ভাই
বউ হারানোর মতন দুঃখ দুইন্যাতে আর নাই
কুসুম একটাই সন্তান
কুসুম একটাই সন্তান সোনাভান সইপা গেছে হাতে
কইয়া গেছে কুসুমেরে দুঃখ না দেই যাতে
আমার দুঃখ কিসের?
আমার দুঃখ কিসের রহিম নাসের তোমরা যে দশ জনা
বিয়ার কথা আর কোনোদিন আমারে কইও না
আমি তারে লইয়া
আমি তারে লইয়া গাঙ পার হইয়া
বাসনা পুরের হাটে
ঘর বানামু বর্গা চাষও করুম যাইয়া মাঠে
আমার দুঃখ কিসের...
তখন যুদ্ধের বছর
তখন যুদ্ধের বছর কুসুম বছর পনেরোও মাইয়া
জোয়ান মাইয়া লইয়া বাপ তার গেলো যে ভয় খাইয়া...
[যদিও কৃষ্ণকাল/রচনা ও নির্দেশনা ইশরাত নিশাত]
০৭
যদিও কৃষ্ণকাল নাটকটি বাংলাদেশে প্রথম নারী নাট্যকার ও নির্দেশকের নাটক। মুক্তিযুদ্ধের দুই দশক পূর্তি উৎসবে শিল্পকলার জাতীয় উৎসবে প্রদর্শিত হয় ১৯৯২ সালে....
যুবরাজ স্যার, গ্রুপেতো আপ্নে আমার সিনিয়ার হন...
লায়েক ভাইরে গান্ডু লায়েক ডাকা হয়। লীলেন ভাই বড় লায়েক বলে ভদ্রতা দেখাচ্ছে। উনি এখন দাড়িতে লাল রং করেন। লাস্ট নাটকে তার সাথে আমার একটা ইম্প্রভাইজেশন ছিলো, আমি ধাম করে সিগারেট ধরালাম,দুইটা টান দিলাম,তারপর সেটা আগায়া দিলাম... তিনি মুখে বিগলিত হাসি নিয়া একেবারে জাহ্ণবি করুণা... কিন্তু গলা নামায়া বলতেছেন, হারামজাদা বাইর হ স্টেজ থেকে, দেখ তোরে কি করি, তার বকাবকি দেখে আমাদের সাথের আরেকজন ওদুদ, সে সিগারেটটা নিয়ে নিলো, এবং এয়সা টান... লায়েক ভাইর অবস্থা তখন এই ইমোটিকনের মতো
মুর্শেদ চম্পত্তি বলতো না, বলতো চপ্পাত্তি... মুর্শেদ না থাকলে আমি চা আনতাম সামসুদ্দিন ছাত্রবাসের সামনের স্টল থেকে। পরে স্বপন এসে আমারে উদ্ধার করেছিলো।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আহারে অপু
ছোট মানুষ থেকে আর বড়ো হৈতে পারলি না
০২
- ওই তোর জন্ম কত সালে?
- ১৯৭২ সালে
- ১৯৭০ সাল থেকে গোঁফে কলপ দিয়া হাঁটি। কথাবার্তা বলতে হলে বুঝে বলবি...
....এইটা ছিল লায়েক ভাইর সাথে আমার প্রথম প্রাকটিক্যাল পরিচয় পর্ব....
০৩
কোনো কাজে ঢাকায় আসলে আমরা কম্পিটিশন করতাম লায়েক ভাইয়ের শপিং এসিস্ট্যান্ট হবার জন্য
আমাদের কাজ ছিল উনার পছন্দ করা জিনিস দরদাম করা আর ব্যাগ বহন করা
কিন্তু ওই শপিংয়ে লায়েক ভাই হয়তো কিনতেন একটা বা দুইটা। আর তার পয়সায় আমরা নিজেদের জন্য কিনে ফেলতাম একাধিক জিনিসপত্র। সঙ্গে খাওয়া দাওয়া তো বোনাস
কয়েক মাস আগে ইডিপাসের শো করতে এসে লায়েক ভাই আমাকে বললেন- তার মেয়েদের জন্য কিছু কাপড় কিনে দিতে। বললাম- গুরু; ঘণ্টা হিসেবে এখন তো আমার রেট বেশি; কুলাতে পারবেন না। অন্য কাউরে নিয়া যান
লায়েক ভাই একটা হাসি দিয়ে বলল- ঘণ্টা হিসেবে রেট কেন? বউসহ তোরে কিনতে হলে কত লাগবে সেটা বল?
দেখলাম তর্ক করে সুবিধা হবে না। শেষে ভাতিজিদের জন্য বাজার করতে গিয়ে ফি নেয়া নীতি বিরুদ্ধ বলে এনাম ভাইরে গছিয়ে দিলাম....
আপ্নে ত মিয়া লুক ভালু না!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
আরে না। টাকা মেরে দিলেও চুরি কিন্তু করি নাই
হ ইডা মিথ্যা না, চাপার জোড়!!! লেখা ঝরঝরে আর মজার।
০২
বহুদিন পর বসের লেখা পড়লাম............মাঝে মাঝে লেইখেন বস, আমরা বসে থাকি........
০৩
আম্গো ডিপার্টমেন্ট থিকা নভেম্বরে একখান সুভেনির বাইর করুম, ফেস্টিভ্যালও আছে একখান, বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি লাগবে, মাঠে নামতে হবে শীঘ্রই............এরকম অভিজ্ঞতা হলে তো চিন্তার বিষয়..............
_____________________
Give Her Freedom!
হ। চাপা বিজ্ঞান না হলেও কিন্তু রীতিমতো প্রযুক্তি। আমি কয়েকজনরে চিনি যাদের একমাত্র ক্যাপিটাল চাপা
০২
লিখতে তো চাই। কিন্তু বের যে হয় না কিছু
_____________________
Give Her Freedom!
মজার সিরিজ...
ধন্যবাদ
লিখা মজারু হয়েছে লীলেন্দা। আমার বোন করতো কবিতার গ্রুপ, ওদের প্রোগ্রাম থাকলে টিকেট ধরায়ে দিতো, বিক্রি না করতে পারলে নিজের পকেট থিকা দেয়া লাগতো
টিকিট বিক্রির কথা আর বলেন না
প্রথম প্রথম কী যন্ত্রণা যে গেছে
আমাদের প্রত্যেককে বাধতামূলকভাবে কমপক্ষে ১০টা টিকিট বিক্রি করতে হতো
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অর্ধেক বিক্রি করে বাকিটার টাকা পকেট থেকে দিতে হয়েছে
পরে অবশ্য ২০ টাকার টিকিট ৫০ টাকায় বিক্রি করে খচ্চাপাতি আর পরিশ্রম দুইটাই উসুল করে নেয়ার টেকনিক শিখে ফেলছিলাম
নিজেদের বের করা "ছোট কাগজ", ছড়া কার্ড; নিজেদের করা গান-আবৃত্তি-নাচের কম্বিনেশন অনুষ্ঠান; নিজেদের করা (নিয়মিত দলবিহীন) নাটক; নিজেদের করা বিতর্ক কর্মশালা/প্রতিযোগিতার জন্য কত যে চাঁদাবাজি থুক্কু বিজ্ঞাপনবাজি করেছি! তবে স্বীকার করতেই হয় এই ব্যাপারে আমার দক্ষতা শূন্যের কোঠায়। করুণা করে কিছু লোক বিজ্ঞাপনের আড়ালে ভিক্ষা দিয়ে আপদ বিদায় করেছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পরে আমি আবিষ্কার করেছি। খুচরা বিজ্ঞাপন থেকে বড়ো বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা সোজা
আইচ্ছা
এ্যাত্তো বুদ্ধি!
সত্যি, নাটকের গ্রুপের এ্যাড জোগাড় করার চে নোত বই লেখা অন্নেক সহজ।
যাহ, কি কি সব পুরোনো কথা মনে করিয়ে দিলেন লিলেন দা'
নতুন মন্তব্য করুন